বসের সাথে প্রেম
পর্ব- ২৫
লেখা- অনামিকা ইসলাম।
সিয়াম মায়ার নরম ঠোঁটে নিজের ঠোঁট চেপে ধরে। তারপর……(….)….
সেই মুহূর্তে মায়াকে একান্তভাবে পাবার প্রচন্ড ইচ্ছা জেগে উঠল মনে। কাছে পাবার এত তীব্র নেশা এর আগে কখনো জাগেনি সিয়ামের। সিয়াম মায়ার কাছে গেল,
কাছ থেকে খুব কাছে….
তারপর মায়াকে জড়িয়ে ধরল। মায়াও সিয়ামের নিবিড় আলিঙ্গনে সাড়া দিল। অতঃপর_
অতঃপর এক হয়ে যায় দুটি দেহ….
ভোর রাত্রে জেগে উঠে মায়া। গোসল করার জন্য ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ায়। মনে হলো কাপড় আনেনি। ছুটে যায় ওর রুমের দিকে।
কিন্তু একি?!!!
রুমের দরজা যে ভেতর থেকে লক করা….
কিন্তু কে এই রুমে?!!!
সাইমা নইতো?
মায়া নক করে দরজায়…
দু’তিন বার নক করার পর ঘুমে ঢুলুঢুলু চোখে দরজা খুলে সাইমা….
ঘুম চোখে জিজ্ঞেস করে, কি হয়ছে?
মায়া লজ্জায় অবনত হয়ে মাথা নিচু করে বলে, আলমারি থেকে একটা থ্রী-পিস দিবি???
_ আচ্ছা, দিচ্ছি বলে চলে যাচ্ছিল সাইমা! হঠাৎ হুশ হয় ওর। ঘুমের ঘোর’টা কেটে যায় সাইমার। মায়ার দিকে তাকিয়ে কিছু একটা বলতে গিয়ে চুপসে যায় সাইমা। অনেক কষ্টে হাসি চেপে রেখে বলল_
” ওহ, এই অবস্থা?!!!”
মায়া শাড়ি ঠিক করতে করতে বলল,
” ইয়ে মানে কি বলতে চাচ্ছিস?”
– সাইমা মিষ্টি হেসে বলে-
” আজকের রাত’টা তাহলে ভালো’ই কাটল?!!!”
__ কিসের রাত? ইনোসেন্ট ভাব নিয়ে কথাটা মায়া বলে।
সাইমা হাসি দিয়ে বলল__
” সেটা তো তোর’ই ভালো জানার কথা…”
__ সাইমা আমি তোকে কাপড় চাইছি, তারমানে এই নয় আমাদের মধ্যে তেমন কিছু হয়ছে। আমি শাড়ি পরে ঘুমাতে পারি না, জাস্ট সেই জন্য’ই আসছি জামা নিতে….”(মায়া)
– ????(সাইমা)
– কি হলো হাসছিস কেন???(মায়া)
__ ওহ, স্যরি….
এই নে তোর জামা। সাইমা মায়ার দিকে জামা’টা এগিয়ে দিলে, মায়া জামাটা হাতে নেই। হাতে নিয়ে গোসলখানার দিকে পা বাড়াবে ঠিক তখন’ই পিছন থেকে সাইমা ডেকে উঠে।
মায়া দাঁড়িয়ে পরে….
– কিছু বলবি?(মায়া)
– হুম…(সাইমা)
– বল….(মায়া)
~ তোর কপালে নাকে মুখে কিসব লেগে আছে, এগুলো পরিস্কার করে নিস…..☺☺☺(সাইমা)
__ ???(মায়া)
__ মন খারাপ কেন?
আমি অন্যকিছু তো মিন করিনি পাগলী!আমি জাস্ট রাজটিকাগুলো মুছে ফেলতে বলছি….??(সাইমা)
_ ??(মায়া)
__ ????(সাইমা)
– আসলে…(…..)….(মায়া)
– ওরে পাগলী আযান দিয়ে দিচ্ছে তো! তাড়াতাড়ি যা, গোসলটা সেরে আয়…
পরে সব গল্প শুনব……..
সব….
(A to Z)….??(সাইমা)
মায়া লজ্জায় মুখ খানা লাল করে ছুটে চলল ওয়াশরুমের দিকে….
ততক্ষণে আবিরও এসে সাইমার পাশে দাঁড়ালো। সাইমা পেছনে ফিরে আবিরকে দেখে হতভম্ব হয়ে গেলেও ক্ষাণিক’বাদেই হুহু করে হেসে দিল দু’জনে….
এদিকে সকালবেলা সিয়াম ঘুম থেকে উঠে চমকে যায়। ওর এভাবে বিছানায় ঘুমানো, খালি গা আর বুকের ঐ লাল লাল দাগগুলো দেখে বিস্মিত সিয়াম। ???
শরীরের কোনো জামা’ই ঠিক নেই সিয়ামের।??
সিয়াম পরনের কাপড় ঠিকঠাক মত পরে জলদি গেল আয়নার সামনে। বিস্ময় কমার পরিবর্তে অতি মাত্রায় বেড়ে যায় সিয়ামের। বুকের মত নাক মুখেও ছিল লাল দাগ…
_ সিয়াম মনে মনে ভাবছে মানে কি এসবের?
আর এভাবে বিছানায়…
আচ্ছা, গত রাত্রে তো আমি পার্টিতে ছিলাম। আমায় কে বা কারা বাসায় নিয়ে আসছে….
বিস্ময়ের ঘোর কাটতে না কাটতে’ই মায়া চা নিয়ে রুমে প্রবেশ করে। সিয়ামের দিকে তাকাতে’ই গতরাত্রের কথা মনে পড়ে যায় ওর, লজ্জায় লাল হয়ে যায় মায়া। এই মুহূর্তে কিছু বলতে পারছে না মায়া লজ্জায় নিচের দিকে তাকিয়ে চাঁয়ের কাপটা খাটের পাশে রেখে রুম থেকে বের হয়ে চলে যায় মায়া….
__ সিয়াম আয়না দেখে ঘুরে তাকাতে’ই দেখে গরম গরম চা। এবারো ও আশ্চর্য না হয়ে পারল না। কোনো কথা নাই বার্তা নাই, মানুষও নাই। হঠাৎ করে’ই চা….
কিভাবে এলো এই চা….
যায় হোক….
শাওয়ার’টা সেরে এসে চাঁয়ের কাপটা হাতে নিয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায় সিয়াম।
আশ্চর্য!!!
আজ সবকিছু এমন লাগতেছে কেন?!!!
বড়’ই অদ্ভুত এবং আজব লাগতেছে…
বারান্দা থেকে রুমে এসে পরে সিয়াম। রুমে এসে টিভি’টা ছেড়ে সোফায় বসে চাঁয়ের কাপে চুমুক দেয় সিয়াম।
একি?!!!
টিভি’তে মায়া…
আর ওর পাশে কে এটা?!!!
আমি’ই তো…
আমি ওকে কখন কোলে নিলাম আর ওর সাথে আমার….(…..)….???
না, না…
এ হয় না, হতে পারে না।
টিভিটাই মনে হয় নষ্ট হয়ে গেছে।
ধূর,ভাল্লাগে না….
সিয়াম বন্ধ করে দেয় টিভি……!!!
এদিকে মায়া লজ্জায় কিছুতে’ই সিয়ামের সামনে যেতে পারছে না। এমনকি সিয়াম যখন টেবিলে খাবার খেতে বসতো, তখনও সে পালিয়ে পালিয়ে বেড়াতো। সারাক্ষণ কোনো না কোনো কাজে ডুবিয়ে রেখেছে নিজেকে, যাতে সিয়ামের সামনে যেতে না হয়। সেদিন বিকেলে শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার আগে সাইমা ডেকে নেয় মায়াকে। শুনে যায় কিভাবে একে অপরের কাছে এসেছিল, কি হয়েছিল কালকে রাত্রে….
সাইমা চলে যায়,
চলে যাওয়ার আগে অবশ্য ভাইয়াকে খুঁজেছিল ড্রিক করার কুফল নিয়ে বিষদ লেকচার দেওয়ার জন্য। কিন্তু ভাইয়াকে পাইনি, তাই এ ব্যাপারে কোনো কথাও বলতে পারে নি…
সারাদিন পালিয়ে পালিয়ে বেড়ালেও রাত্রে ঠিক ধরা দিতে হবে এটা মায়া জানত। কিন্তু কিভাবে সামনে যাব মানুষটার? আমার যে খুব লজ্জা পাচ্ছে।
আচ্ছা, আজকে না হয় আলাদা রুমে’ই ঘুমাই…?!!!
মায়া আগে যে রুমে থাকত সে রুমে গিয়ে শুয়ার বন্দোবস্ত করছে ঠিক তখনি দরজায় নক। নক করছে তো করে’ই যাচ্ছে…..
মায়া তাড়াতাড়ি গিয়ে দরজা খুলে। সামনে এসে দাঁড়ায় সিয়াম। সিয়ামকে দেখে মায়া ভয়ে এবং লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে।
না জানি সে কি বলে বসে….
কিন্তু নাহ!!!
সিয়াম কিচ্ছু বলেনি।
মায়ার মত সিয়ামও চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল বেশ কিছুক্ষণ….
তারপর মুখ খুলে সিয়াম__
আস্তে করে জিজ্ঞেস করে তুমি এই ঘরে?!!!
মায়া মাথা নিচু করে’ই আছে। সিয়াম আবারো জিজ্ঞেস করল__
ঘুমোবে না?
মায়া মাথা নিচু করে’ই বলে_
হুম….
সিয়াম:- তুমি কি আজকে এই রুমে ঘুমোবে?
মায়া:- হুম।
সিয়াম:- আচ্ছা, তাহলে দরজা’টা লাগিয়ে ঘুমিয়ে পরো।
মায়া:- আচ্ছা…..
সিয়াম:- এই শুনো__
মায়া :- জি…..
সিয়াম:- কাল রাত্রে কি আমার কিছু হয়ছিল…?!!!
মায়া- (চুপ)
সিয়াম- কি হলো? চুপ কেন? বলো….
মায়া:- হুম।(মাথা নেড়ে)
সিয়াম- কি হয়ছিল আমার?
মায়া-………….
সিয়াম:- বলো……
মায়া:- জানি না__
সিয়াম:- ???
মায়া:- ?????
সিয়াম:- ঠিক আছে, ঘুমিয়ে পরো….
মায়া:- আচ্ছা…..
সিয়াম চলে গেলে মায়া সেদিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকে। মনে মনে__
‘ কি স্বার্থপর! একটা বারের জন্যও বলে নি রুমে চলো আমার সাথে….’
মায়া রুমের দরজা লাগিয়ে দেয়। আচ্ছা, আমাদের এই সম্পর্ক কখনো’ই কি ঠিক হবার নয়???
কখনো’ই কি ওকে আমি ওর কাছে যেতে পারব না স্বইচ্ছায়…
আচ্ছা, আমি কি ওকে জাপটে ধরে কান্নাও করতে পারব না? বলতে পারব না খুব ভালোবাসি…!!!
আচ্ছা, ও কি আমায় একটুও ভালোবাসে না আর? কাল রাত্রের সবটুকু’ই কি নেশার ঘোরে? আমার প্রতি কি ওর কোনো আকর্ষন নেই? নেই কোনো টান??? আচ্ছা, ওর কি ইচ্ছে হয় না আমার মত’ই আমাকে জড়িয়ে ধরতে???
ওর কি ইচ্ছে হয় না আমাকে একান্তভাবে কাছে পেতে…???
হয়তো না….
সারা রাত বিছানায় ছটফট করে শেষ রাত্রে ঘুমিয়ে পরে মায়া। চোখ’টা যখন প্রায় লেগে আসছিল ঠিক তখন’ই একটা ফোন কলে মায়ার ঘুম’টা ভেঙে যায়। এত রাত্রে কে ফোন দিয়েছে???
আর এটা তো পুরনো সিম, ২বছর পর লাগানো হয়েছে। ২বছর পর কে আমায় স্মরণ করল….???
মায়া ফোন’টা হাতে নিয়ে নাম্বার’টা কিছু’তেই চিনতে পারছে না। এর’ই মধ্যে ২বার কল বেজে গেছে। ৩য় বারের মাথায় কলটা রিসিভ করে মায়া।
” আসসালামু আলাইকুম”
অচেনা:- ওয়ালাইকুম আসসালাম, কেমন আছিস মায়া….
মায়া:- জি, ভালো আছি। আপনি কে বলছেন???
অচেনা:- একসময়ের চেনাজানা কেউ। আচ্ছা, এখন কোথাও আছিস???
মায়া- বাসায়….
অচেনা:- কোন বাসায়? গাজীপুর নয়তো???
শিউরে উঠে মায়া গাজীপুর নাম’টা শুনলে….
মনে পড়ে যায় ভয়ানক অতীতের কথা। যে অতীতে বাবা-মাকে হারিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল বাবার পুলিশ বন্ধুর বাসায়। ঐখানে ওনার স্ত্রী আর ওনার তত্ত্বাবধানে শিশু থেকে মায়া হয়ে উঠে কিশোরী। বাবার বন্ধুর একটা ছেলে ছিল। নাম বিজয়। বিজয় ছিল মায়ার খেলার সাথী, আর আদর-ভালোবাসা শাসনের সময় বড় ভাইয়া….
মায়াকে খুব আদর করত। পুতুল খেলার সময় হাসত আর বলত, এটা আমার মিষ্টি বোনটা আর এটা তার জামাই….
বিজয় প্রায়’ই বলত,
তুই দেখে নিস, তোকে বিয়ে করতে দুর দেশ থেকে রাজপুত্র আসবে….
এটুকু’ই মায়া ভাবে, তারপর গুমড়ে কেঁদে উঠে….
অচেনা:- কি হলো? কথা বলছিস না কেন? নাকি গাজীপুরে হারিয়ে গেছিস???
মায়া অস্ফুট স্বরে বলে উঠে,
ওরা আমার আংকেল আন্টিকে বাঁচতে দিল না, ওরা বাঁচতে দিল না আমার ভাইয়াটাকে….
অচেনা:- মায়া….
কি হয়েছে তোর???
কি সব আবোলতাবোল বকছিস???
মায়া:- কে আপনি? আর গাজীপুর! গাজীপুরের কথা আপনি জানলেন কিভাবে???
অচেনা:- হা হা হা…
শুধু কী গাজীপুর???
গাজীপুরের সেই ভালো আংকেল, ভালো আন্টির কথাও আমি জানি….
মায়া- কে আপনি???
অচেনা- আচ্ছা, তোর ঐ হাদারাম ভাইয়া’টা কইরে??? যে সবসময় তোকে জ্বালাতো…!!!
মায়া:- কি???
অচেনা:- বুঝতে পারছিস না? আমি বিজয়ের কথা বলছি…..
মায়া এবার কেঁদে কেঁদে বলে, জানি না! আমি জানি না ও কোথায়…???
অচেনা:- আমি কিন্তু জানি….
মায়া:- কি জানেন?
অচেনা:- সেই ইতিহাস…
মায়া:- কোন ইতিহাস???
অচেনা- আংকেল আন্টিকে খুন, ছোট্ট মায়াকে মাথায় আঘাত করে ফেলে দেওয়া, ভাই বিজয়কে সন্ত্রাসীর তুলে নিয়ে যাওয়া, মায়ার মামার বাড়িতে যাওয়া, বিজয়ের পালিয়ে আসা, চাচার সাথে সাথে চলে যাওয়া, পড়াশোনা করে ডাক্তার হওয়া, দেশে আসা সব….
মায়া- কি?!!!
বিজয় ভাইয়া বেঁচে আছে?
অচেনা:- জি, আছে…
আচ্ছা, রাখি….
মায়া:- হ্যালো, শুনেন…
ওপাশ থেকে টুটটুট শব্দে কলটা কেটে দেয়…..
মায়া সাথে সাথে ঐ নাম্বারটা ডায়াল করে। রিং হয় কিন্তু কেউ কল রিসিভ করে না…
মায়া পাগলের মত হয়ে যায়। কলের পর কল দিতে থাকে। কিন্তু কল আর কেউ রিসিভ করে না। সেদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে মায়া নামাজ’টা আদায় করে সবার জন্য চা বানিয়ে দিয়ে আসে যার যার রুমে। সকালে ব্রেকফাস্ট টেবিলে বসে খাচ্ছে, কিন্তু কেমন যেন আনমনা দেখাচ্ছে ওকে। সিয়াম সেটা লক্ষ্য করে….কিন্তু কিচ্ছু বলে নি….
ব্রেকফাস্ট করে সিয়াম তাড়াতাড়ি অফিসে চলে যায়, কারন আজকে অফিসে নতুন পি.এ জয়েন করবে। এদিকে মায়াও যেন চাচ্ছিল সিয়াম বাসা থেকে চলে যাক, তারপর কোনো রকম বাবা-মাকে ম্যানেজ করে বাইরে যাবে। বাইরে গিয়ে যে করে’ই হোক লোক’টার সাথে যোগাযোগ করবে…
সিয়াম চলে গেলে বিশেষ দরকারের কথা বলে মায়া বাইরে চলে যায়। কিন্তু বিশিষ্ট শিল্পপতির পুত্রবধূ বলে কথা। মায়ার শ্বশুর মায়াকে একা ছাড়ল না। মায়ার সাথে ড্রাইভারকেও পাঠিয়ে দেয়। মায়া ড্রাইভারকে বলে গাড়িটা রাস্তার একপাশে দাঁড় করিয়ে গাড়ি থেকে নেমে যায়। ড্রাইভারকে রাস্তার পাশে দাঁড় করিয়ে মায়া পার্কে চলে যায়। ঐখানে গিয়ে ঐ নাম্বার’টায় কমপক্ষে শতেক বার কল করল….
কিন্তু কল আর কেউ রিসিভ করে নি।
মায়া চলে যায় ওখান থেকে….
সেদিন রাত্রেও মায়া সিয়ামের সাথে সিয়ামের রুমে ঘুমাইনি, ঘুমিয়েছে ওর রুমে। গতকালকে লজ্জার কারনে ঘুমোতে পারে নি, কিন্তু আজ?!!!
আজ ঘুমোতে পারছে না যদি ঐ লোকটা কল দেই তাই….
তাহলে যে সিয়ামের সামনে কথাও বলা যাবে না। সিয়াম যে বড্ড রাগী হয়ে গেছে আজকাল….
যদি রেগে গিয়ে কোনো কথা শুনিয়ে দেয় তাই মায়া সিয়ামের রুমে থাকে নি।
এভাবে এক সপ্তাহ চলে যায়….
সিয়াম লক্ষ্য করে আসছে মায়া কেমন যে আনমনা হয়ে থাকে। আচ্ছা, ওর এই উদাসীন মনোভাবের কারন আমি নই’তো???
আচ্ছা, ও কি তাহলে আমায় এখনো ভালোবাসে???
আগের মত’ই ভালোবাসে??? কিন্তু বলতে পারছে না?!!!
আচ্ছা, ও এখন কি করছে? আমার জন্য কাঁদছে না তো? দেখার জন্য সিয়াম মায়ার জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়…
এদিকে মায়া প্রতিনিয়ত লোক’টাকে কল দিয়ে’ই যাচ্ছে। বিরক্ত হয়ে লোক’টা কখনো কখনো ফোন’টা অফ করে রেখে দেয়, চালু করতে না করতেই আবার ফোন।
সেদিন লোক’টা মায়াকে কল দেই। সমস্যা কি জিজ্ঞেস করতে’ই মায়া বলে দেয়- আপনার সাথে আমি দেখা করতে চাই। ঠিক আছে, কোথায় যেতে হবে বলো লোকটা মায়াকে প্রশ্ন করে….
মায়া ওর চিরচেনা সেই পার্কটার কথা বলে….
সময়:- বিকেল ৫টা….
লোকটা কল কেটে দিলে মায়াও ফোন’টা কান থেকে নামিয়ে ফেলে….
মায়ার ফোনে অচেনা লোকের সাথে কথোপকথন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরো’টা শুনে সিয়াম। সরে যায় জানালার কাছ থেকে….
মনে মনে ভাবে,
কার সাথে কথা বলল মায়া,
আর কেন’ই বা দেখা করবে?
কি এমন দরকার?!!!
আচ্ছা, ও আমার অজান্তে….(….)….???
ছি!সিয়াম,ছি!
এসব কি ভাবছিস তুই?
এই তোর ভালোবাসা….!!!
ধিক্কার তোকে….
মনে মনে নিজেকে হাজার ধিক্কার দিল সিয়াম…..
পরদিন মায়া অচেনা সেই লোকটির সাথে দেখা করার জন্য পার্কে অপেক্ষা করল, বিকেল থেকে সন্ধ্যে অবধি। কিন্তু লোকটি আসল না। মন খারাপ করে মায়া বাসায় ফিরে যায়….
দুদিন পর লোকটি কল দেয়….
এ দু’দিন মায়া একদম নিস্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। একদম কথা বলে নি কারো কাছে। আজকাল এ ঘর, এ সংসার নিয়েও এতটা ভাবে না মায়া যত’টা ভাবে ওর হারিয়ে যাওয়া ভাই বিজয়কে নিয়ে….
অচেনা লোকটি কল দিলে মায়া ছো মেরে কলটা রিসিভ করে। সেদিন অচেনা লোক’টি স্যরি বলে আর এও বলে সে’ই বিজয়…
প্রথমদিকে বিশ্বাস না করলে পরে মায়া বিশ্বাস করে। বিশ্বাস করে লোকটি যখন বলে_
” আচ্ছা, তোর ঐ কাটা দাগটা কি এখনো আছে? নাকি মুছে গেছে???”
বিজয়’ই সেই একমাত্র ব্যক্তি যে মায়ার ডানার কাটা দাগের কথা জানত। কারন, খেলার সময় কূপটা বিজয়’ই দিয়েছিল। এই কূপের কথা মায়া কিংবা বিজয় কেউ কাউকে বলেনি ভয়ে….
যায় হোক!
পরদিন মায়া পার্কে যায় আবারো….
দেখা করে বিজয়ের সাথে।
সেই যে কৈশরে শেষ দেখেছিল ওরা একে অপরকে, তারপর আজ এতটা বছর পর আবার দেখা হয়ছে। মায়া তো ভাই বিজয়কে জড়িয়ে ধরে কান্নায় করে দিয়েছে। সেকি কান্না!!! কান্না যেন থামতে’ই চাই না….
এদিকে সিয়াম অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে রাস্তার পাশে গাড়ি নিয়ে বাড়ির দারোয়ানকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নেমে যায় গাড়ি থেকে। জানতে পারে, মায়া পার্কে আসছে।
সিয়াম মনে মনে__
অনেক কষ্ট দিয়েছি তোমাকে, আর নয়…!!!
আজ স্যরি বলে কাছে টেনে নিব। শুরু করব একটা নতুন জীবন।
গাড়ি থেকে ফুলের তোড়া’টা হাতে নিয়ে দৌঁড়ে যায় পার্কের ঐ জায়গাটাই। সিয়াম জানে মায়া ঐখানেই আছে। কিন্তু একি?!!!
মায়া এটা কার সাথে গল্প করছে হেসে হেসে???
এগিয়ে যায় সিয়াম….
ওদের খুব কাছাকাছি যেতে’ই শুনে__
বিজয়:- আমি তো ভাবছি পাগলী’টা আমায় ভুলে’ই গেছে। এখনো যে পাগলী’টা আমায় মনে রেখেছে সেটা আমি দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি…
মায়া- ভালবাসি,
খুব ভালোবাসি যে তোকে!!!
ভুলব কি করে???
জানিস, খুব খুউব মিস করছি তোকে….
কত জায়গায় খুঁজেছি, পায়নি তোকে।(জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে দেয় মায়া)
বিজয় মায়াকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলাতে বলছে-
” পাগলী একটা! আমি কি হারিয়ে গেছি নাকি? আমি তো প্রতিনিয়ত তোর মধ্যে’ই বসত করেছি।”….
মায়া বিজয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে ছোট্ট বাচ্চাদের মত করে বলে-
কোথাও হারিয়ে যাবে না তো? আমায় ছেড়ে আর কোথাও যাবে নাতো?!!! বিজয় হেসে হেসে বলে, এ জীবন থাকতে আর কোনোদিন তোর থেকে দুরে যাব না, কোথাও যাব না। এই তোকে ছুঁয়ে কথা দিলাম।”
মায়া একটা মিষ্টি হাসি দেই বিজয়ের দিকে তাকিয়ে।
সিয়াম কাছ থেকেই এ দৃশ্য অবলোকন করছে।
ওদের মধ্যকার কথোপকথন শুনে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে নি। ফুলগুলো দুরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে পিছুহটে সিয়াম। গাড়িতে উঠে যায় সে। এই মুহূর্তে নানান প্রশ্ন সিয়ামের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। সিয়াম সেগুলোর কোনোটার সঠিক উত্তর খুঁজে পাচ্ছে না। বার বার কানের মধ্যে মায়ার বলা কথাগুলো প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। সিয়াম গাড়ি’টা এতটাই অনমনস্ক হয়ে চালাচ্ছিল যে একটা সময় গাড়িটা আরেকটা গাড়ির সাথে ধাক্কা লাগে। গাড়ির কাঁচ ভেঙে সিয়ামের গায়ে গিয়ে লাগে। ছিটকে পরে গাড়ি থেকে সিয়াম। গুরুতর আহত অবস্থায় লোকজন রাস্তা থেকে ওকে ধরে নিয়ে যায় হসপিটালে।
খবর চলে যায় সিয়ামের বাড়িতে। খবর পায় মায়া….
দৌঁড়ে যায় হসপিটালে……
চলবে….