বসের সাথে প্রেম
পর্ব- ২৩
লেখা- অনামিকা ইসলাম।
রাত প্রায় মধ্যরাত….
মায়া উঠে বসে বিছানা থেকে। নিচে তাকালো যেখানে সিয়াম শুয়ে আছে অন্যদিকে মুখ করে।
খাট থেকে নেমে যায় মায়া। ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় সিয়ামের কাছে। সিয়ামের পাশে গিয়ে চুপটি করে বসে থাকে। দেখছে….
মায়া দেখছে, পলকহীন ভাবে তাকিয়ে দেখছে সিয়ামের ঘুমন্ত মুখটা….
কি সুন্দর এবং নিষ্পাপ বাচ্চার মত দেখাচ্ছে। মায়া সিয়ামের দিকে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ’ই মায়ার মনে হলো সিয়াম যেন শীতে কাঁপছে। মায়া বসা থেকে দাঁড়িয়ে পরে। তারপর খাট থেকে কম্বল’টা এনে সিয়ামের সারা গায়ে জড়িয়ে দেয়। শীতের প্রকোপ এতটাই বেশী ছিল যে কম্বল গায়ে জড়িয়ে দেওয়ার পরও সিয়াম কাঁপছিল। সাথে ঠান্ডা ফ্লোর’তো আছে’ই। মায়া কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।
আচ্ছা, আমি কি ওনাকে ডাক দিব?!!!
দিয়ে’ই দেয়…
ওনা’কে উপরে থাকতে বলি। মায়া ডাক দিতে গিয়ে দিল না।
– না, না….
শুধু শুধু ডেকে ওনার ঘুম’টা ভাঙানোর দরকার নেই। তার চেয়ে বরং বিছানায় যে অবশিষ্ট কাথা আছে, সেটাও দিয়ে দেয়।
– মায়া বিছানা থেকে ওর জন্য রাখা কাথা’টা এনে সিয়ামের শরীরে জড়িয়ে দেয়।
ব্যস, হয়ে গেল…..
মায়া বিছানায় গেল। বিছানার একপাশে হাতে ভর দিয়ে শুয়ে সিয়ামের দিকে তাকিয়ে আছে। তাকিয়ে আছে তো আছে’ই….
শীতে নিজের শরীরটা যে একদম ঠান্ডা হয়ে আছে সেদিকে একটুও খেয়াল নেই ওর। মায়া সিয়ামের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন যে ভাবনা জগতে হারিয়ে যায় একটুও টের পায়নি।
মায়ার ভাবনায় চ্ছেদ ঘটে সিয়ামের কাঁপা কাঁপা গলার আওয়াজে। সিয়াম কাঁপছে আর অস্ফুট স্বরে কি সব বলছে। মায়া বিছানা থেকে নেমে সিয়ামের পাশে গিয়ে বসে। সিয়াম তখনও কাঁপছে। ডাকতে গিয়েও ডাকতে পারছে না মায়া। একটা সংশয় কাজ করছে ওর মনে, আবার সিয়ামের এই অবস্থা সহ্যও করতে পারছে না। হঠাৎ করে’ই মায়া একটা ছোট্ট হাসি দেয়। তারপর_
তারপর সিয়ামের পিছন দিক দিয়ে ওর কম্বলের ভিতর ঢুকে পরে। জড়িয়ে ধরে সিয়াম’কে….
শক্ত করে জড়িয়ে ধরে,
খুউব শক্ত করে….
এদিকে মায়ার ঠান্ডা হাত-পায়ের ছোঁয়া পেয়ে সিয়ামের পুরো শরীর কেঁপে উঠে। ঘুমের ঘোরে’ই মায়ার দিকে মুখ করে শুইল….
তারপর মায়াকে জড়িয়ে ধরে। মায়াও সিয়ামকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। তারপর__
তারপর ঘুমিয়ে পড়ে মায়া…
ভোরে ফজরের আযানের সময় কিছু একটার আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায় মায়ার…..আওয়াজ’টা কিসের দেখার জন্য চোখ মেলে তাকিয়ে হতবাক হয়ে যায় মায়া…..
সিয়াম জোঁরে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে খাটের ফুলগুলো ছিড়তেছে। মায়া ফ্লোরে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। অকস্মাৎ হাত দিয়ে চেঁপে ধরে সিয়ামের মুখ…..
__ কি করছেন এসব?শুনবে তো কেউ…. (মায়া)
___ একটানে মুখ থেকে হাত’টা সরিয়ে নেয় সিয়াম। একদম আমার কাছে আসবা না তুমি। একদম কাছে আসবা না….বলে’ই ফুলগুলো ছিড়তে লাগে সিয়াম…..
– কি হয়েছে, আপনার?!!!
এমন করছেন কেন???(মায়া)
সবগুলো ফুল ছিঁড়ে পুরো বিছানা এলোমেলো করে মায়ার দিকে তাকালো সিয়াম। মায়া সিয়ামের রক্তবর্ণ চোখ দেখে ভয় পেয়ে যায়। পিছিয়ে যায় সিয়ামের থেকে….
এদিকে সিয়াম মায়ার দিকে এগুচ্ছে আর বলছে__
বুঝতে পারছ না তুমি?!!!
বুঝতে পারছ না কেন আমি এমন করছি?
– কেন? (মায়া)
– তোমায় রাত্রে কোথায় শুইতে বলছিলাম?!!!(সিয়াম)
– আসলে তখন আপনি…(…..)….(মায়া)
__ আমি কি? নেশার ঘোরে তোমায় জড়িয়ে ধরছিলাম নাকি জ্বরে কাঁপছিলাম? যার জন্য খাট রেখে আমার পাশে শুইতে হলো….!!!!(সিয়াম)
_ আসলে…আপ….(মায়া)
সিয়াম শুনেনি পুরো কথা তার আগে’ই বলা শুরু করে, আর কখনো, আর কখনো আমার সাথে ফ্লোরে শুইবা না। মনে রাখবা, তোমার জন্য খাট বরাদ্দ…. আর আমার জন্য সোফা-ফ্লোর….
কি!!!
মনে থাকবে তো?!(সিয়াম)
_ আপনি আমার কথা’টা শুনোন….(মায়া)
_ তোমার কোনো কথায় শুনতে চাই না আমি।(সিয়াম)
– আপনি রেগে যাচ্ছেন শুধু শুধু….আমি আসলে…(মায়া)
– মায়া! আমি তোমার কোনো কথায় শুনতে চাই না। আমার কথা তুমি শুনো। আমি এ বিয়ে বাবা-মায়ের জন্য করেছি, বাবা-মায়ের মন রক্ষার্থে করেছি। এ ছাড়া আমার বিয়ে করার কোনো ইচ্ছে’ই ছিল না। তাই প্লিজ বাবা-মায়ের মন রক্ষা করে চলো, এতেই আমি হ্যাপি….
আর প্লিজ কখনো আজকের মত এমন করো না…..বিছানা রেখে ফ্লোরে আমার সাথে শুয়ার চেষ্টা করো না…..
_ মায়ার চোখ দুটো জলে টলমল করছে…..
জল ছলছল চোখে মায়া সিয়ামের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। সিয়ামও যেন কিছু একটা বলতে গিয়ে মায়ার মুখের দিকে তাকিয়ে চুপ হয়ে গেল। এই মুহূর্তে সিয়ামের মুখ কথা’য় বেরুচ্ছে না। কেন তা সে নিজেও জানে না….
_ সিয়াম চলে যায় রুম থেকে বের হয়ে, এদিকে মায়া চুপটি করে অনেকক্ষণ খাটের এককোণায় দাঁড়িয়ে থাকে। অনেকক্ষণ খাটের এককোণায় চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলেও চোখের জল কিন্তু থেমে ছিল না। অনবরত চোখ থেকে জল গাল গড়িয়ে পরছিল। তারপর_
মায়া চোখে জল নিয়ে’ই ছোট্ট একটা হাসি দেয়। মনে মনে বলে-
‘ আপনি যদি আমায় ছেড়ে থাকতে পারেন, তবে আমি কেন নয়? আপনি যেহেতু বাবা-মায়ের জন্য’ই বিয়েটা করেছেন সেহেতু আজ থেকে বাবা-মায়ের সাথে’ই থাকব।ওদের সাথে গল্প করব, আমার সময় কেটে যাবে…”
মায়া এসব ভাবতে ভাবতে’ই সিয়াম এসে উপস্থিত হয় রুমে। তুমি এখনো এখানে দাঁড়িয়ে আছ?
যাও, ফ্রেশ হয়ে নাও….
__ বিছানা’টা একটু গুছিয়ে নেয়? বলেই মায়া বিছানায় হাত লাগাচ্ছিল তখনি সিয়াম বলল, একদম বিছানায় হাত দিবে না…..
_ এগুলো তো পরিস্কার করতে হবে। না হলে কেমন দেখা যায়….(মায়া)
_ দেখা যাক। আর থাকুক এমন, তুমি হাত লাগাবে না। সিয়ামের কথা শুনে মায়া সরে যায় বিছানার কাছ থেকে……
__ এবার চেঞ্জ করে ফ্রেশ হতে যাও।(সিয়াম)
__ মায়া চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে তবুও….সিয়াম ধমক দিয়ে জিজ্ঞেস করে,
কি হলো? দাঁড়িয়ে আছ যে? যাও….
মায়া আস্তে করে জবাব দেয়, আলমারিতে কাপড়…
সিয়াম আবারো বলে, আলমারিতে কাপড় বের করে আনো….
__ এই আলমারিতে…(মায়া)
,
– এই আলমারিতে??
কখন রাখলা???(সিয়াম)
,
– আমি রাখিনি, সাইমা জোর করে রেখে গেছে কালকে….(মায়া)
ও রেখে গেছে আর তুমিও রেখে দিলে?
– নাও, এখনি এখান থেকে কাপড়গুলো বের করে নাও। তোমার রুমের আলমারিতে রেখে আসো…
সিয়াম আলমারি খুলে কাপড়গুলো বিছানায় ছুঁড়ে দিয়ে আলমারি লক করে দেয়। মায়া কোনো কথা না বলে চুপ করে সবগুলো কাপড় বুকে জড়িয়ে ও রুম থেকে চলে যায়…..
__ সিয়ামও ফ্রেশ হতে চলে যায়।
__ মায়া কাপড়গুলো আলমারিতে রাখতে’ই পারছে না কান্নার জন্য। কান্না করছে আর বহু কষ্টে আলমারিতে কাপড়গুলো তুলে রাখছে মায়া। তারপর দরজা’টা বন্ধ করে অনেকক্ষণ কান্না করে মায়া। কান্না শেষে চোখ মুখ মুছে শাড়ি’টা চেঞ্জ করে নিল সে। তারপর ফ্রেশ হওয়ার জন্য চলে যায়….
_ মায়া সাইমার বাথরুমে আর সিয়াম ওর বাথরুমে। দু’জনেই ফ্রেশ হওয়ার নাম করে কান্না করছে। কিন্তু কেউ কারো কান্না শুনতে কিংবা বুঝতে পারে নি। মায়া কান্না করছে ঐদিনের ব্যবহারের জন্য, যার জন্য সিয়াম এমনটি করছে। মায়া জানে সিয়াম এককথার মানুষ, একবার যা বলে তাই করে। আর এও জানে, সিয়াম যা বলেছে সেটাই করবে। বাহ্যিক দিক দিয়ে ওদের সম্পর্কের একটা নাম থালেও অভ্যন্তরিন দিক থেকে তার কোনো নাম নেই। নেই কোনো ভিত্তি এই সম্পর্কের…..
একটা ভুলের জন্য কি নিদারুণ সাজা পেলাম। মায়া কাঁদছে। সাওয়ার ছেড়ে দিয়ে কাঁদছে…..
এদিকে সিয়াম?!!!
সিয়ামও কাঁদছে। যাকে নিয়ে এত্ত স্বপ্ন, এত্ত আশা ছিল আজ তার সাথে’ই এমন ব্যবহার করলাম, কটু কথা শুনালাম….
এটা তো আমি চাইনি…..
কেন এমন হলো? সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেল। কেন ও আমায় এভাবে ভালোবাসার পরিবর্তে একবুক ঘৃণা ফিরিয়ে দিল…
সিয়ামের চোখ থেকেও গড়িয়ে জল পরছে….
– ব্রেকফাস্ট টেবিলে দু’জনেই চুপচাপ সবার সাথে বসে খাচ্ছে। আজ মায়া সাইমার সাথে একটা কথাও বলেনি, সাইমার হাজারো প্রশ্নের একটা রিপ্লাইও দেয়নি। চুপচাপ খেয়ে’ই যাচ্ছে। হঠাৎ’ই__
– বাবা! আমার অফিসে যেতে হবে আজকে….(সিয়াম)
_ অফিসে মানে? কিসের অফিস?!!!(বাবা)
___ আমার অফিস…..(সিয়াম)
_ আজ কোনো অফিসে যেতে হবে না। বাড়ি ভর্তি মেহমান থাকবে, ওদের সাথে গল্প-টল্প করবে…..(বাবা)
_ কিন্তু বাবা আমার তো কাজ ফেলে বাড়িতে থাকতে ভালো লাগছে না। আর তাছাড়া এই কয়দিনে তো অফিসের কাজে কর্মচারীরা অনেক ফাঁকি দিয়েছে বিয়ের ওসিলায়, আজ না হয় যায় বাবা…..(সিয়াম)
তোর কোথাও যেতে হবে না….(বাবা)
_ বাবা আমার বোরিং লাগছে…..(সিয়াম)
__ বোরিং লাগছে মায়াকে নিয়ে বেরিয়ে আয় কোথাও থেকে, কি ঠিক বলিনি বাবা?!!!(সাইমা)
_ হ্যাঁ, মায়া তো ঠিক’ই বলছে….(মা)
__ হ্যাঁ, তুই মেয়েটাকে নিয়ে ঘুরে আয়…..(বাবা)
__হ্যাঁ, ভাইয়া যাও…
মায়ারও ভালো লাগবে।(আবির)
_ বাবা! আমার কাজ আছে বললাম তো…(সিয়াম)
– সিয়ামের বাবা রেগে বলে তুই যাবি। এটাই ফাইনাল।
__ ঠিক আছে, ওকে রেডি হতে বলেন…..
কথাটা বলে সিয়াম চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায় ঠিক তখনি_
__ বাবা! আমি যেতে পারব না। আমার কাজ আছে একটা….(মায়া)
সিয়াম ঘুরে তাকাই মায়ার দিকে। টেবিলে বসা সকলেই মায়ার দিকে তাকাই…..
চলবে…..