বসের সাথে প্রেম
পর্ব- ০৮
লেখা- অনামিকা ইসলাম।
ছেলেটির ডায়েরী_
মায়াকে রাগের বশে থাপ্পরটা মেরেছিলাম, হঠাৎ করে কোথা থেকে এই রাগ’টা চলে আসল বুঝতে পারিনি। বুঝতে পারিনি কেন’ই বা ওর গায়ে হাত তুললাম। আর যখন বুঝতে পারলাম তখন মনে হলো খুব বেশী অন্যায় করে ফেলেছি। ও না হয় অচেনা, অজানা ছেলেদের সাথে কথা বলছে, তাই বলে আমি কেন ওকে মারলাম? ওকে মারার তো আমার কোনো অধিকার নেই। ও যার সাথে কোনো তার সাথেই কথা বলবে, হাসাহাসি করবে। তাই বলে আমি ওকে মারব কেন? তাও আবার অনেক মেহমানের সামনে। কি রকম অপমানিত’ই না হলো মেয়েটি। দৌঁড়ে গেস্টরুমে, মায়াকে খুঁজলাম। নাহ, ও এখানে নেই। তারপর দৌঁড়ে গেলাম সাইমার রুমে। নাহ, ও এখানেও নেই। মা-বাবা সবার রুমে গিয়েও ওকে খুঁজে পেলাম না। হঠাৎ’ই মনে সাইমার রুমের বিছানায় কি যেন একটা দেখে এসেছি। দৌঁড়ে গেলাম সেখানে। গিয়ে দেখি বিছানায় একটা নূপুর পরে আছে। খেয়াল করে দেখলাম মায়াবতীর নূপুর। হয়তো ওর অজান্তেই পা থেকে পরে গেছে, ও খেয়াল করেনি। নূপুর’টা হাতে নিলাম। নূপুরের গায়ে হাতের স্পর্শ বুলিয়ে দিলাম। তারপর সেটা আমার পকেটের ভিতর রেখে দিলাম। রুম থেকে বের হওয়ার সময় আরো একটা জিনিস চোখে পরে। সেটা হলো বোনের ফোন। ফোন’টা দিতে গিয়ে দেখি বোন’টার কাছে গে’ষার তিল পরিমাণ জায়গা নেই। সবাই ওকে নিয়ে ব্যস্ত এখন। কন্যা সমর্পণের শেষে ওকে গাড়িতে তুলে দেওয়া হলো। ভীর ঠেলে ওর কাছে গেলাম। ফোন’টা এগিয়ে দিত যাব, তখন’ই আবির বলল। ভাইয়া মাথা খারাপ হয়েছে আপনার? এই মেয়েকে এখন ফোন হাতে দিবেন তো দেখবেন সারারাত ফেবুতে গুঁতাগুঁতি করছে। আপনি বরং ফোন’টা আপনার কাছে রেখে দেন। ৬টা Y প্রেস করে আনলক বাটনে চাপ দিবেন। ব্যস, হয়ে যাবে।
বোনকে আর ফোন’টা দেওয়া হলো না।
ফোন’টা হাতে নিয়ে বন্ধুকে সাথে নিয়ে রুমে ঢুকলাম। টেবিলের উপর ফোনটা রাখতে যাব ঠিক তখন’ই দেখি মেসেজ ফর্ম মায়া….
লকটা খুলে মেসেজটা ওপেন করলাম। লিখা—
‘ সাইমা….
রাগ করিস না।
শরীর’টা একদম ভালো লাগছিল না, তাই চলে এলাম। আফসোস, বিদায় বেলায় তোর ঐ চাঁদবরণ মুখটা দেখতে পারলাম না। সে যায় হোক।
শোন, তোর ফোনে আমার যে ছবিগুলো আছে সব চোখ বোজে ডিলিট করে দিস। ছবিগুলো খুব বাজে হয়েছে…. “
মায়ার মেসেজ পরে তাড়াতাড়ি অতি আগ্রহ নিয়ে গ্যালারীতে ঢুকলাম। গ্যালারীতে ঢুকে হাজারখানেক ছবি দেখলাম। এর মধ্যে মায়ার একক ছবি শ’খানেক। বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ড্রেসে তোলা। নববধূর মত লাজে রাঙা মুখে একটা ছবি তুলেছে, সেটা বোধ হয় আজকেরই। ছবিগুলো দেখে কেন যেন মায়া সামলাতে পারলাম না। আমার ফোনের শেয়ারইট’টা চালু করে নিয়ে গেলাম শত এর অধিক ছবি। তারপর বোনের ফোন’টা রেখে দিলাম আলমারিতে…
ছবিগুলো যতই দেখছিলাম ততই দূর্বল হয়ে পরছিলাম ওর প্রতি। কেন জানি, ছবিগুলো না দেখলে আমার ঘুম আসতো না রাত্রে। মায়ার ঐ মায়াবী মুখটা দেখেই রাত্রে ঘুমুতে যেতাম, ভোরে ঘুম থেকে উঠলাম। অফিস থেকে গুটিয়ে নিয়েছিলাম নিজেকে। কারন, খুব বেশী দুর্বল হয়ে পরছিলাম। বাবাকে সব দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে আমি সারাদিন একলা রুমের মধ্যে শুয়ে থাকি। ধীরে ধীরে শরীরটা দুর্বল হয়ে যেতে থাকে। ব্যপার’টা বাবা-মা লক্ষ করল। লক্ষ করল ওনার ছেলে একটা চাঁপা কষ্টের মধ্যে আছে। সেদিন বন্ধুর সাথে রুমে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম।
আড্ডার টপিক ছিল ‘মায়া’।
আতিক আমার বাল্যকালের একমাত্র বন্ধ হওয়ায় তার সাথে সবকিছু শেয়ার করতাম। সেদিন রুমে শুয়ে কান্না করছিলাম আর হাতে জোরে জোরে আঘাত করছিলাম। ঘটনাক্রমে আতিক এসে উপস্থিত হয় এবং আমার হাত’টা ধরে ফেলে। আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে কান্না করতে করতেই বলি,
বাধা দিস না তুই…
আমি এ হাত দিয়ে ওকে আঘাত করেছিলাম, এ হাত আমি রাখব না। রাখব না আমি এ হাত।
শেষ করে ফেলব আমি আজ….
আতিক আবারো আমার হাতটা ধরে ফেলে। তারপর আমাকে শান্ত করে জিজ্ঞেস করে….
‘ কাকে আঘাত করেছিস?’
আমি মায়া বলতে গিয়ে আতিকের দিকে চেয়ে থেমে গেলাম। আতিক বলল__
” মা বলে থেমে গেলি কেন? বল। বলে ফেল মায়া’কে আঘাত করেছি। তার জন্য কষ্ট পাচ্ছি। আরে ইয়ার! ঐ মেয়েটার সাথে না তোর কোনো সম্পর্ক নেই? তবে কাঁদছিস কেন?!!! নিজেকেই বা কষ্ট দিচ্ছিস কেন? আতিকের কথা শুনে বলে ফেললাম, আছে সম্পর্ক। আছে…
মায়ার সাথে আমার সম্পর্ক আছে। আতিক চোখ বড় বড় করে বলল,
তাই?! তা কিসের সম্পর্ক আছে শুনি? জানি না, আমি কিচ্ছু জানি না। চোখ বোজে উত্তর দিলাম। আতিক আমার মুখটা ওর দিকে ঘুরালো। আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি…
ও বলছে-
এবার বলতো?!!!
সত্যি’ই কি তুই কিছুই জানিস না? আমি এবার আতিকের থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে বললাম,
না…
আতিক রেগে গিয়ে আমায় বললো বলবি না তো?!!!
এবার আর সত্যি গোপন করতে পারলাম না। বলে দিলাম মায়াকে আমি ভালোবাসি। ভিষণ রকম ভালোবাসি। ওকে ছাড়া আমার চলবে না।
বলেই হু হু করে কেঁদে দিলাম। কান্না’টা এত জোরেই করে ফেলেছিলাম যে, আমার কান্না শুনে বাবা-মা ছুটে আসল রুমে।
কি হয়েছে, কি হয়েছে বলে পাগল করে ফেলল।
আমি কান্না থামিয়ে চুপ করে আছি। ওদের প্রশ্নের জবাব দেওয়ার সাহস আমার নেই। আমি ভয়ে চুপসে আছি। ঠিক তখন’ই আতিক এর উপযুক্ত জবাব দিয়ে দেয়।
আতিকের উপস্থিত বুদ্ধির কাছে আমি সেদিন বেঁচে গিয়েছিলাম। আতিক বলেছিল, সাইমাকে ভিষন রকম মিস করি আমি। বোনের শূন্যতায় আমার ভেতর’টা হাঁহাকার করে। বাবা-মা চুপ করে রুম থেকে বের হয়ে গেল। সেদিন আমার জন্মদিন ছিল…..
সবাইকে ইনভাইট করলেও মায়াকে করিনি। করিনি বললে ভুল হবে করতে পারিনি। কেক কেটে সবাইকে খাইয়ে দিয়ে বাবা’কে যখন বললাম, বাবা! আমার এবারের সারপ্রাইজ কি?!!! বাবা আমায় চোখ বেধে উপরে নিয়ে গেলেন। উপরে আমার জন্য এত বড় সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে আমি বুঝতে পারিনি। আমার জীবনের সেরা সারপ্রাইজ বাবা আমায় সেদিন দিয়েছিল। আমার সামনে মায়া দাঁড়িয়ে…..
মেয়েটির ডায়েরী_
অসুস্থ্যতার জন্য ছুটি নিয়েছিলাম অফিস থেকে। বাসায় শুয়ে শুয়ে ছুটি কাটাচ্ছি আর একদৃষ্টিতে দুরের ঐ জানালার দিকে তাকিয়ে আছি। জানি জানালাটায় দেখতে পাব মানুষটাকে নয়। ভাবতে ভাবতেই চোখ’টা ঝাপসা হয়ে এলো, চোখের জল মুছতে যাব ঠিক তখনি ভালো আংকেলের কল। রিসিভ করে সালাম দিতেই ওনি আমায় ২ঘন্টার মধ্যে ওনার বাড়িতে যেতে বললেন। কেন জানি স্যারের সামনে যেতে মন সাই দিচ্ছিল না, তাই অসুস্থ্যতার অজুহাত দেখিয়ে না যাওয়ার কথা বলছিলাম। কিন্তু ওনার কড়া নির্দেশ ওনার ছেলের জন্মদিনে আমায় উপস্থিত থাকতেই হবে। ভালো আংকেল আমার জীবনের আশীর্বাদসরুপ। তিনি আছেন বলেই হয়তো আমি এখনো বেঁচে আছি। তাই ওনার কথা অমান্য করার মত দুঃসাহস আমার ছিল না। ছুটে গেলাম ওনার বাসায়।
আজ সিয়াম স্যারের জন্মদিন। অনেক সুন্দর করে বাড়িটা সাজানো হয়েছে। স্যারকেও আজ অনেক সুন্দর লাগছে নীল পাঞ্জাবীতে। ওনার চোখের নিষ্পাপ চাহনী যেন কাউকে খুঁজছে। একবার ঘড়ি আরেকবার বাইরের দিকে তাকাচ্ছেন ওনি।
যায় হোক….
যথাসময়ে কেক কাটা শুরু হলো। সবাই হাত তালি দিয়ে ওনাকে ওয়িশ করলেন।আমি দুর থেকে মনভরে শুভকামনা করলাম।
অনেক অনেক সুখী হোন স্যার, অনেক অনেক সুখী।
শুভকামনা নিরন্তর……..
আমি ঠিক এভাবেই আপনার জন্য দুর থেকে দোয়া করব।
কাছে কখনো পাব না জানি,তাই দুর থেকেই ভালোবেসে যাব। নিরবে ভালোবেসে যাব।
চোখের পানি মুছতে মুছতে রুমে চলে গেলাম। ক্ষাণিক বাদেই ভালো আংকেলের গলার স্বর শুনতে পেলাম।মনে হচ্ছে এদিকেই আসছে। বসা থেকে উঠে দাঁড়ালাম। সামনের দিকে এগিয়ে যেতেই থমকে দাঁড়ালাম। একি?!!!
ভালো আংকেল স্যারের চোখ বেঁধে নিয়ে আসছে কেন? আমার রুমে এনে স্যারের চোখের বাঁধনটা খুলে দেওয়া হলো। স্যার হা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমিও স্যারের দিকে….
কি?!!! চমকে গেলেন বাপজান? স্যার কাঁপা গলায় জবাব দিলেন-
” এসবের মানে কি বাবা?”
আংকেল হেসে বলে উঠল-
” এটুকুতেই চমকে গেলে?
——————
বাবা, এসবের মানে কি?!!!
দাঁড়া বলছি বলে আমাকে
আংকেল ওনার সামনে নিয়ে গেল। আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি। আংকেল আমার একটা হাত ধরে আরেক হাতে সিয়াম স্যারের একটা হাত ধরলেন।
তারপর আমাকে ওনার হাতে তুলে দিলেন। অবাক হওয়ার মাত্রাটা এবার বহুগুনে বেড়ে গেল। আমি চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছি, আর আমার হাত স্যারের মুঠোবন্দি। স্যার এভাবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে বলল,
এবার কি করতে হবে বাবা?
আংকেল বললেন-
তুই না বোন হারিয়ে বিহ্বল হয়ে গিয়েছিলে? উদাসী হয়ে গিয়েছিলি? বোনের চিন্তায় চিন্তায় খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলি? তার জন্য এই ব্যবস্থা। আজ এখন থেকে তোরা দু’জন ভাই-বোনের সম্পর্কে আবদ্ধ হইলি। মায়া তোর বোন। সাইমার মত’ই আরেক বোন। এখন থেকে ও এ বাড়িতেই থাকবে। কি বলো সিয়ামের মা?
রুমে ঢুকতে ঢুকতে আন্টির মিষ্টি জবাব,
সে আর বলতে হয়?
আমার মেয়ে হয়ে সে কি ভাড়া বাসায় থাকতে পারে?
কখনো না…..
আর তাই ও এখানেই থাকবে।
-‘ সিয়াম-মায়া…….
তোরা ভাই-বোন কথা বলা শেষ করে নিচে আয়।
নিচে সবাই অপেক্ষা করছে। আংকেল-আন্টি চলে গেল। আমি চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছি মাথা নিচু করে। আর ভাবছি কি থেকে কি হয়ে গেল….
ভাবনাচ্ছেদ ঘটে স্যারের ‘মায়া’ ডাকে।
জি স্যার বলে স্যারের দিকে তাকালাম।
————+++++————–
ওনি রেগে গিয়ে বললেন,
স্যার নয়, ভাইয়া ডাকবা…..
ভাইয়া……………..
বুঝছ মায়া পরি???
আমি তোমার ভাই হয়……
ভাই………..✌✌
– মাথা নিচু করে মনে মনে মুখস্থ করতে লাগলাম—
ভাইয়া…………??
চলবে।