বর্ষণের_সেই_রাতে ❤
পর্ব- ২
#লেখিকা: অনিমা
.
আমি একটা বড়সর ঢোক গিললাম। উনি একটু একটু করে এগিয়ে আসছেন আমার দিকে, আর আমি নিজের অজান্তেই পিছিয়ে যাচ্ছি। পেছাতে পেছাতে দেয়ালে লেগে গেলাম। মনে মনে প্রচুর ভয় হচ্ছে। শুনেছি এইসব সেলিব্রিটিদের ক্যারেকটার একেবারেই খারাপ হয়। যদি সত্যিই উল্টোপাল্টা কিছু করে? কেউ তো আমার কথা বিশ্বাস ও করবেনা যে দ্যা রকস্টার এডি আমার বাড়িতে এসে আমার সাথে এসব করেছেন। এমন কী কারণ থাকতে পারে ওনার এখানে আসার? এসব ভাবতে ভাবতে উনি একদম আমার কাছে এসে দেয়ালে হাত রাখল। ভয়ে আত্মা শুকিয়ে যাচ্ছে আমার। উনি একটু ঝুকতেই আমি খিচে চোখ বন্ধ করে নিলাম। লোকটার নিশ্বাস আমার মুখে পড়তেই আমি নিজেকে আরো গুটিয়ে নিলাম। হৃদস্পন্দন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে, নিশ্বাস ভারী হয়ে আসছে। হঠাৎ করেই ফিক করে হেসে দেবার শব্দ পেলাম। আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকিয়ে দেখি হাসছেন উনি। উনি হাসতে হাসতে খাটে গিয়ে বসলেন। আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম ওনার দিকে। উনি হাসি থামিয়ে বলল
— সরি! সরি! আই ওয়াজ জাস্ট কিডিং। বাট আপনিতো ভয়ে পুরো জমে গেছেন।
বলেই আবারো হেসে দিলেন। আমি চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছি ওনার দিকে। এরকম মজার কোনো মানে হয়? আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে হাসি থামিয়ে বললেন
— আচ্ছা সরি বললাম তো! মজা টা একটু বেশি হয়ে গেছে বুঝতে পারছি।
আমি এবার হাত দুটো ভাজ করে দেয়ালে হেলান দিয়ে বললাম
— রকস্টার এডির এখানে এসে টপকানোর কারণটা কী?
এটা শুনে আদ্রিয়ান এক ভ্রু উচু করে তাকালো আমার দিকে। তারপর বাকা হেসে বলল
— আরেহ বাহ। ভয়েজ টোনে এতো পরিবর্তন? একটু আগে তো আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারছিলেন না। কেনো বলতে গিয়ে ক তেই আটকে যাচ্ছিলেন। কী এমন হলো যে ভয়েজে এতো জোর?
— ভোকাল কর্ডের চার্জ শেষ হয়ে গেছিলো রিচার্জ করে নিয়েছি, এখানে কেনো এসছেন সেটা আগে বলুন।
আদ্রিয়ান একটা মেকি হাসি দিয়ে বলল
— খিদে পেয়েছে।
আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম ওনার দিকে। ইয়ারকি পেয়েছে নাকি? মানে কী এসবের? বিরক্তিকর কন্ঠে বললাম
— আপনি আমার ফ্লাটে খেতে এসছেন?
— হ্যা বাড়িতে আজ খাবার ছিলোনা তাই আরকি।
বলেই মিটমিটিয়ে হাসতে লাগল। আমি কিছু না বলে মুখ ফুলিয়ে খাটে গিয়ে বসে ওনার দিকে হতাশ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। ওনার সব ইন্টারভিউ তে দেখেছি যে উনি ভীষণ মজার মানুষ। রিপোর্টারদের সাথেও বেশ মজা করে। পাবলিক ইনফরমেশন অনুযায়ী উনি যতটা ফানি, মাঝে মাঝে ততোটাই এগ্রেসিভ। বেশ কয়েকটা ইন্টারভিউতে ক্যামেরার সামনেই রিপোর্টারের ওপর রেগে যেতে দেখা গেছে তাকে উল্টোপাল্টা প্রশ্ন করার জন্যে। বাট পার্সোনালিও যে উনি ঠিক একইরকম সেটা বেশ বুঝতে পারছি। কিন্তু এই মুহূর্তে এতো কৌতুহল আর উত্তেজনার মধ্যে ওনার এই রসিকতা আমার বেশ বিরক্ত লাগছে। আমার এই হতাশ দৃষ্টি দেখে উনি হাসি মুখেই বললেন
— ওকে ফাইন। বলছি সব। বাট তার আগে আপনার সেল ফোনটা দিন তো একটু আমাকে।
— কেনো আমারটা দিয়ে কী কাজ? আপনার টা নেই নাকি?
উনি এবার রাগান্বিত কন্ঠে বললেন
— আপনার কী মনে হয়? আমার ফোন আমার সাথে থাকলে আমি এখানে অন্ধকারে বসে বসে মশা মারতাম এতোক্ষণ?
আমি এবার বিরক্তির চরম পর্যায়ে গিয়ে বললাম।
— আপনার কী মনে হয়? আমার সেলফোনে চার্জ থাকলে আমি একটা অপরিচিত লোককে রুমে দেখে ফোন করে লোক জরো না করে ওখানে ঠ্যাটার মতো দাড়িয়ে থাকতাম? চার্জ নেই ফোনে।
উনি বেডের ওপর একটা ঘুষি মেরে বললেন
— সিট! এখনতো কারেন্ট ও নেই।
— আমার ফোনে না হয় চার্জ নেই। আপনার ফোনটা কী হাওয়া খেতে গেছে?
উনি রেগে তাকালো আমার দিকে। আমি একটু ভয় পেয়ে গেলাম। তাই হালকা গলা ঝেড়ে ওনার থেকে একটু দূরে সরে বসলাম। দুজনেই কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করার পর আমিই বললাম
— বললেন না তো কী এমন হলো যে এতোবড় একজন সেলিব্রিটি, যার সাথে একটা সেলফি তোলার জন্যে ফ্যানসরা হুমরি খেয়ে পরে সে একটা সাধারণ মেয়ের ফ্লাটে চোরের মতো ঢুকলো?
আদ্রিয়ান অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল
— হোয়াট আমি চোর?
আমিও অবাক হওয়ার ভান করে বললাম
— সেটা কখন বললাম?
— দেন হোয়াট ডু ইউ মিন বাই চোরের মতো ঢুকলেন?
— নাহ মানে আপনি যেভাবে ঢুকেছেন পুরো চোরের মতোই লাগছিলো আরকি।
বলেই মিটমিটিয়ে হাসছি। উনি এবার চোখ ছোট ছোট করে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন
— তাই না?
আমি হাসি থামিয়ে সিরিয়াস মুখ করে বললাম
— হুম তাই তো!
উনি রাগান্বিত হয়ে আমার দিকে একটু ঝুকতেই আমি মাথাটা একটু পিছিয়ে নিলাম, উনি শান্ত কন্ঠে বললেন
— কী যেনো বলছিলেন? কীসের মতো লেগেছে আমাকে?
আমিও একটা ঢোক গিলে বললাম
— অব্ আমিতো মজা করছিলাম, আপনি এতো সিরিয়াসি কেনো নিচ্ছেন? আপনাকে একটুও চোরের লাগছিলো না বিশ্বাস করুন আপনাকে ড্ ডা হ্যা ডাকাতের মতো লাগছিলো।
— হোয়াট?
নিজেই চমকে গেলাম। কী সব বলছি? দিলামতো আগুনে ঘি ঢেলে। আমার এই এক সমস্যা ভয় পেয়ে গেলে কি বলি না বলি নিজেই বুঝতে পারিনা। উনি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে আমার দিকে, সেটা দেখে আমি একটু মেকি হেসে বললাম
— ন্ না মানে আপনাকে আপনাকেতো হ্যা মনে পড়েছে, আপনাকে পুরো..
কিন্তু কথাটা শেষ করার আগেই উনি আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন
— থাক। আপনাকে আর কিছু মনে করতে হবেনা। চোর ডাকাত অবধি হজম করে নিয়েছি, এরপর কিছু হজম করতে গেলে বদহজম হয়ে যাবে ম্যাডাম।
এটুকু বলেই সোজা হয়ে বসলেন। আর সাথে আমি একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে সোজা হয়ে নিজেকে ঠিকঠাক করে নিলাম। উনি এবার ভ্রু কুচকে নিজের ঘরির দিকে তাকালো। সেটা দেখে আমিও টেবিল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি 11.30 বাজে। আমি একটু ইতোস্তত করে বললাম
— আপনি কিন্তু এখোনো বললেন না এখানে কেনো এসছেন?
উনি হালকা হেসে বললেন
— আরেহ বলছি বলছি এতো অধৈর্য কেনো আপনি?
আমি একবস্তা বিরক্তি নিয়ে তাকালাম লোকটার দিকে। আমার এখন প্রচুর রাগ লাগছে এরকম সাসপেন্স ক্রিয়েট করার কোনো মানে হয়? উনি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে শব্দ করে হেসে দিলেন। আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম ওনার দিকে। উনি হাসি থামিয়ে বললেন
– আচ্ছা বলছি, রেগে যাচ্ছেন কেনো? আসলে দুপুরে একটা কাজ ছিলো সেটা সারতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যায়, কাজটা সারার পর লংড্রাইভ এ যেতে ইচ্ছে করছিলো। এটা আমার অভ্যাস, স্ট্রেস দূর করতে মাঝে মাঝেই লং ড্রাইভে বেড়িয়ে যাই। আর সেটাও কমপ্লিটলি একা এবং নিড়িবিলি। তাই ড্রাইভার গার্ডস সবাইকে পাঠিয়ে দিয়ে নিজেই ড্রাইভ করছিলাম। প্রায় ঘন্টা তিন ড্রাইভ করার পর এখানকার একটা রোডে এসে পৌছাই। কারণ এলাকাটা নিড়িবিলি ভালো লেগেছে আমার। আর তখনি খেয়াল করি যে কিছু লোক ফলো করছে আমাকে, কারণ অনেকক্ষণ ধরেই তাদের আমার পেছনে আসতে দেখছিলাম।
আমার কাছে বেশ ইন্টারেস্টিং লাগল ব্যাপারটা তাই গালে হাত দিয়ে বললাম
— তারপর?
— তারপর আমি গাড়িটা সাইডে রেখে আমার ম্যানেজারকে কল দিতে যাবো তার আগেই আমার গাড়ির কাচ ভেদ করে একটা গুলি আসে। আমি ঝুকে গেছিলাম তাই গুলিটা একটুর জন্যে আমার মাথায় লাগেনি। আমার হাত থেকে ফোনটা পরে যায়, আর তারপর চার্জ শেষ হয়েছে না কী হয়েছে জানিনা ফোনটাও আর অন হয়নি।
— এরপরে কী করলেন?
— যেহেতু ফোনটা অন হচ্ছিলো না। আর আমি কম্প্লিটলি একাই বেড়িয়েছি তাই আমি গাড়ি স্টার্ট করে বিভিন্ন ভাবে গাড়ি চালিয়ে ওদেরকে ডিসট্রাক করি, তার
ওপর এই বৃষ্টি। আমি ওদের কে একটু পিছে ফেলে ওদের আড়াল হয়ে গাড়ি থেকেই নেমে যাই কারণ ওদের কাছে গান ছিলো, আর গাড়ির সংখ্যা দেখে বুঝলাম লোক ও অনেক ছিলো, তাই আমি একা নিজেকে সেভ করতে পারতাম না। তাই ওখানে গাড়িটা রেখেই ওখান থেকে বেশ অনেকটা দূরে চলে যাই। এসবের মধ্যে ফোনটা আনতেই ভুলে গেছি, ফোনটা বন্ধ ছিলো তাই এনেও আহামরি কোনো লাভ লাভ হতোনা। কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারছিলাম না আর না কাউকে ডাকতে, সো এইরকম বৃষ্টি তারপর ওরা যেকোনো সময় এসে যাবে, রাস্তায় থাকা রিস্কি হয়ে যেতো। তাই কারো বাড়িতে আশ্রয় নিতেই হতো।
— বাট আপনি ঢুকলেন কীকরে ভেতরে?
— ব্যালকনি দিয়ে।
— হোয়াট?
— হুম। বাইরের আলোতে যেটুকু দেখেছি তাতে এই ফ্লাটেরই ব্যালকনির দরজা খোলা ছিলো। তাই এই ফ্লাটেই উঠলাম।
— আমি ব্যালকনির দরজা খোলা রেখে গেছিলাম?
— আমিও সেটাই ভাবছিলাম। যখন ভেতরে ঢুকে বাড়িটা ফাকা পেলাম। যে এতোটা ইরেস্পন্সিবল কেউ কীকরে হয়। এখন আপনাকে দেখে বুঝতে পারছি কীকরে হয়। বুঝতে পারছি কীকরে হয়।
আমি ওনার দিকে তাকিয়ে একটু মুখ ভেংচি দিলাম। উনি হেসে দিলেন। কিছুক্ষণ চুপ থেকে আমি বললাম
— কিন্তু আপনাকে কারা মারতে চায়? আর কেনো?
— মারতে তো অনেকেই চায়, আর কারণেরও অভাব নেই। কিন্তু এট্যাক টা কারা করেছে সেটা কালকের মধ্যেই জানতে পারবো, একবার বেরোই। এগুলো খুব ক্রিটিকাল ব্যাপার তুমি এসব বুঝবেনা।
ওনার শেষ কথাটায় হালকা হাসলাম তবে সেটা ওনার দৃষ্টির আড়ালে।
— সো এইজন্যেই আজ এখানে থাকতে হবে আমাকে। আর আপনি আমাকে চোর ডাকাত কী সব বানিয়ে দিলেন।
বলেই উনি হেসে দিলেন আর আমিও হেসে দিলাম। উনি হাসি মুখেই বললেন
— আপনি আমার বেশ ছোট দেখেই বোঝা যাচ্ছে। আর এমনিও আমি বেশিক্ষণ কাউকে আপনি বলতে পারিনা। সো অামি তোমাকে তুমি করেই বলছি। ওকেহ?
— আপনি পারমিশন চাইলেন নাকি জানিয়ে দিলেন?
— যেটা মনে করো।
আমি মুচকি হাসলাম।
— কারেন্ট কখন আসবে?
আমি শব্দ করে হেসে দিয়ে বললাম
— আজ কারেন্টের কথা ভূলে যান। সকালের আগে আসবেনা।
— ড্যাম!
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
আমি হেসে দিলাম। বাইরে এখোনো অবিরাম ধারায় বৃষ্টি পরে চলেছে। সেইসাথে চারপাশটা আরো সিগ্ধ লাগছে। বাতাসে কেপে কেপে ওঠা মোমের হলদে আলোয় আড় চোখে দেখছি ওনাকে। উনি খাটে দুইহাটু গুটিয়ে হাটুর ওপর দুই হাত রেখে বসে আছে। কিন্তু উনি অাড়চোখে না সরাসরিই তাকিয়ে আছে আমার দিকে একদৃষ্টিতে বেশ কিছুক্ষণ ধরে। সেটা দেখে আমি ভ্রু নাচালাম। এতে ওনার ধ্যান ভাঙলো বোধ হয়। উনি মুচকি হেসে মাথা নাড়লেন। তারপর সামনে তাকিয়ে বললেন
— ভয় ছিলাম এখানে ঢোকার সময় কার না কার বাড়িতে গিয়ে পরি আমাদের তিল কে তাল বানিয়ে প্রচার করতে তো মিডিয়া দুবার ভাবেনা। এই জার্নালিস্টরাও না, এদের খালি মাসলাদার খবর তৈরী করতে হবে যাতে বেশি ইনকাম হয়। কিন্তু ওনাদের এসব ভূলভাল খবরের জন্যে যে আমরা যে বিপদে পরি সেটা তাদের দেখার বিষয় না।
— সব জার্নালিস্ট কিন্তু এক না? আই মিন সবাই টাকার জন্যে এসব করে না, কেউ কেউ প্যাশন হিসেবেও নেয় পেশাটাকে।
— হয়তো। কিন্তু আমি এখোনো এমন কাউকে পাইনি। ইমোশন বোঝেনা যা খুশি প্রশ্ন করে দেয়। আরে ভাই আমরাও তো মানুষ নাকি? যতোগুলো জার্নালিস্ট দেখেছি আমার ক্যারিয়ারে সেই মোতাবেক আই জাস্ট হেইট দেম।
আমি এবারেও মুচকি হাসলাম। হঠাৎ উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন
– খিদে পেয়েছে। খাওয়ার কিছু আছে নাকি? আসলে দুপুরে বেরিয়েছি এখোনো পেটে কিছু পরেনি, বাড়ি ফিরবো তার আগেই এই ঘটনা।
আমি বেশ অবাক হলাম, আদ্রিয়ান আবরার জুহায়ের আমার ফ্লাটে এসে আমার কাছে ডিনার করতে চাইছে? সিরিয়াসলি? এই দিনটাও দেখার ছিলো আমার? কিন্তু ওনাকে কীকরে বলবো যে আমিতো ম্যাক্সিমাম রাত কফি আর বিস্কুট খেয়েই কাটিয়ে দেই। এতো রাত করে ফিরে রান্না করার এনার্জি থাকে না। ব্রেকফাস্ট ও নুডুলস বা পাস্তা করে খেয়ে নি। লান্চটা সবসময় বাইরেই করি। তাই ঘরে রান্না করার মতো নডুলস, পাস্তা ছাড়া কিছুই নেই। কিন্তু ওনাকে এসব কীকরে দেবো? তাই একটু ইতোস্তত করে তাকালাম ওনার দিকে। উনি আমার তাকানো দেখে কী বুঝলেন জানিনা শুধু মুচকি হেসে বললেন
— খেতে চেয়েছি বলে পোলাও বিরিয়ানী আনতে হবে তার কোনো মানে নেই। জাস্ট খেয়ে পানি খাওয়ার মতো কিছু দিলেই হবে।
আমি মুখ ছোট করে ওনার দিকে তাকিয়ে হাত কচলাতে কচলাতে বললাম
— লডুলস, পাস্তা আর বিস্কুট ছাড়া কিছুই নেই।
উনি এবারেও হেসে দিয়ে বললেন
— আর কী চাই? নুডুলস রান্না করে নিয়ে এসো তাতেই হবে।
— ওকেহ
বলে উঠতে নিলেই উনি বললেন
— কফি আছে তো?
আমি হেসে দিয়ে বললাম
— হ্যা সেটা আছে ওটাও করছি ওয়েট।
উত্তরে উনি শুধু মুচকি হাসলেন। আমি গুটিগুটি পায়ে কিচেনে ঢুকে গিয়ে দাড়ালাম। কিছুক্ষণ চুপচাপ দাড়িয়ে থেকে আমি মুচকি হেসে পেছন ঝুকে উকি দিয়ে দেখলাম উনি আসছে নাকি। কিন্তু যখন দেখলাম আসছে না তখনি খুশিতে লাফিয়ে উঠলাম। এতোক্ষণ বহু কষ্টে নিজের ইমোশনটা চেপে রেখেছিলাম
— ইইইইই। আই কান্ট বিলিভ। আমার আদ্রিয়ান আমার ফ্লাটে এসছে? আমার সাথে আজ রাত থাকবে? আমার ক্রাশ? আমার জান? যাকে নিয়ে শুধু কল্পনাই করতাম। সে আজ এই বর্ষণের রাতে আমার কাছে আছে? ওর সাথে কথা বলেছি আমি? ওর জন্যে ডিনার বানাচ্ছি? ওয়াও! আমি জাস্ট ভাবতে পারছিনা।
এসব বলেই এলোপাথাড়ি নাচতে শুরু করলাম। পাগলের মতো লাফিয়ে লাফিয়ে নাচছি। যেনো হাতে চাদ পেয়েছি। আশেপাশে কোনোকিছুর খেয়াল নেই আমার, নাচতে নাচতে পেছন ঘুরে আমি পুরো চমকে গেলাম, নাচ অটোমেটিক বন্ধ হয়ে গেলো আমার।
#চলবে…