বর্ষণের সেই রাতে ❤
শেষ_পর্ব
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
.
আদ্রিয়ানের ভেতরে টিপটিপ করছে। কাল ওদের বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো। হ্যাঁ ছিলো ভাবছে কারণ আজ সবটা শোনার পর হয়তো অনিমা নিজেই সবটা শেষ করে দেবে। অনিমা যেরকম চিন্তাধারার মেয়ে তাতে এটা খুব বেশি অস্বাভাবিক হবেনা। সেটার চেয়েও বড় চিন্তা হচ্ছে অনিমার শারীরিক কন্ডিশন, এই সত্যিটা ও হজম করতে পারবে তো? এমনিতেই জীবণে অনেক আঘাত পেয়েছে মেয়েটা, আদ্রিয়ানের সত্যিটা ওর মনে নতুন করে কোনো আঘাত করবে না তো? ও ভেবেছিলো বিয়ের পর একসময় ঠান্ডা মাথায় অনিকে সবটা ক্লিয়ার করে বলবে। এতে অন্তত অনিকে হারানোর ভয় থাকতো না ওর । কিন্তু ওদের আজ বিকেলেই আসার ছিলো? দুটো দিন পরে এলে কী হতো? যদিও দোষটা ওদের না ওরাতো জানতো না যে অনিমা কিছুই জানেনা। এসব চিন্তা করেই আদ্রিয়ান বিকেলের ঘটনাটা ভাবতে লাগল-
________________________
পুরো বাড়িতে রমরমে পরিবেশ। কালকে বাড়ির দুই ছেলের বিয়ে, আর আজ রাতে গায়ে হলুদ। অনিমা আর স্নিগ্ধা দুজনেই দুপুরে স্নান করে লাল পাড়ের হলুদ শাড়ি পরেছে। সবাই গায়ে হলুদের বিভিন্ন আয়োজন করছে। অনিমা আর স্নিগ্ধা বড় সোফায় বসে আছে। আদ্রিয়ান সিঙ্গেল সোফায় বসে ফোন স্ক্রল করছে আর রিক আদ্রিয়ান যেই সোফায় বসেছে সেই সোফারই হেন্ডেলের ওপর বসে ফোন স্ক্রল করছে। আদিব, আশিস, তীব্র, অভ্র ওরা ডেকোরেশন এর বিভিন্ন কাজ দেখছে। অরুমিতা আর স্নেহা হলুদ,ফল, মেহেদী এসব কিছুর ব্যবস্হা করছে। হঠাৎ করেই কেউ দরজায় নক করতেই সবার দৃষ্টি দরজার দিকে গেলো। মধ্যবয়স্ক একজন পুরুষ আর মহিলা দাঁড়িয়ে আছে। ওখানে উপস্হিত আর কেউ না চিনলেও অনিমা, আদ্রিয়ান আর রিক খুব ভালো করেই চিন্তে পারলো ওনাদের কারণ ওনারা আর কেউ নয় অনিমার মামা আশরাফ মৃধা আর মামী রাহেলা বেগম দাঁড়িয়ে আছেন। ওদের দেখেই অনিমা অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে গেলো আর আদ্রিয়ানের বুকের মধ্যেও ধক করে উঠল। ও ভাবেও নি এরা এখনই আসবে। আর অনিমা ভাবছে হঠাৎ মামা মামী কেনো এলো এখানে? সবাই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওনাদের দিকে। মানিক আবরার ভ্রু কুচকে বলল,
— ” জ্বী? কাকে চাই?”
আদ্রিয়ান একটা শ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
— ” ওনারা অনির মামা মামী।”
আদ্রিয়ানের কথা শুনে উপস্থিত সবার মুখের হাসি মিলিয়ে গেলো। কারণ ওখানে উপস্থিত সবাই জানে অনিমার অতীত সম্পর্কে। আদ্রিয়ান আশরাফ মৃধা আর মিসেস রাহেলা এর দিকে তাকিয়ে বললেন,
— ” কেনো এসছেন আপনারা এখানে?”
অনিমা এখোনো নিচের দিকে তাকিয়ে আছে ছলছলে চোখে। আশরাফ মৃধা নিচু কন্ঠে বললেন,
— ” নিজেদের করা পাপের জন্যে ক্ষমা চাইতে এসছি।”
এটা শুনে অনিমা মাথা তুলে তাকালো ওনাদের দিকে। আদ্রিয়ান কিছু বলবে তার আগেই মানিক আবরার বললেন,
— ” আসুন ভেতরে এসে বসে কথা বলুন।”
অনিমা কিছু বলছেনা ওর চোখ দিয়ে ও না চাইতেও জল পরছে। বারবার সেই অতীত ওর চোখের সামনে ভেসে উঠছে। ওনারা ভেতরে আসার পর আশরাফ মৃধা বললেন,
— ” আমরা বসতে আসিনি। এই বাড়িতে বসার যোগ্যতা আমাদের নেই। শুধু এই মেয়েটার কাছে ক্ষমা চাইতে এসছি। ওর ক্ষমা না পেলে যে মরেও শান্তি পাবোনা।”
অনিমা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে নিঃশব্দে কেঁদে চলেছে। আশরাফ মৃধা অনিমার সামনে এসে ওর সামনে হাত জোর করে বলল,
— ” আমরা জানি রে মা তোর সাথে অনেক অন্যায় করেছি আমরা। জেনে বুঝে অনেক কষ্ট দিয়েছি তোকে। মামা হিসেবে যেই সময় তোকে ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখার কথা ছিলো সেই সময় আমরা তোর সাথে পশুর মতো ব্যবহার করেছি অনেক কষ্ট দিয়েছি।”
মিসেস রাহেলাও বললেন,
— ” টাকা পয়সার লোভে অমানবিক আচরণ করেছি। কোনো কারণ ছাড়াই তোর গায়ে হাত তুলেছি। জানি আমরা যা করেছি তার ক্ষমা হয়না কিন্তু একবার আমাদের ক্ষমা করে দে?”
অনিমা কিছু বলছেনা শুধু একদৃষ্টিতে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। আশরাফ মৃধা আবার বললেন,
— ” সেদিন যদি আদ্রিয়ান এসে আমাদের ওভাবে না বোঝাতো তাহলে তো আমরা জানতেই পারতাম না যে টাকার চেয়েও বড় কিছু হয়। ”
এতোক্ষণ নিচের দিকে তাকিয়ে থাকলেও অনিমা এবার অবাক হয়ে ওনাদের দিকে একবার তাকালো আর একবার আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান সাথে সাথেই চোখ সরিয়ে নিলো।
মিসেস রাহেলা বললেন,
— ” হ্যাঁ রে মা। তোর সাথে যে কতোবড় অন্যায় করেছি সেটা আদ্রিয়ানই বুঝিয়েছে আমাদের।”
অনিমা কিছু বলার আগেই অাদ্রিয়ান বলল,
— ” এসব কথা এখন থাক না?”
অনিমা আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,
— ” আপনি মামা মামীর কাছে গেছিলেন?”
আদ্রিয়ান কিছু না বলে চুপ করে আছে। আশরাফ মৃধা বললেন,
— ” ভাগ্যিস গেছিলো নইলে আমরা কোনোদিন মানুষ হতে পারতাম না।”
অনিমা ভ্রু কুচকে বলল,
— ” মানে?”
এরপর আশরাফ মৃধা আর মিসেস রাহেলা সেদিনের সব খুলে বললেন অনিমাকে। সবশুনে রিক,আদিব, আশিস আর অভ্র বাদে সবাই বেশ অবাক হলো। অনিমা তো অবাকের চরম সীমায় পৌছে গেছে যে আদ্রিয়ানও এমন করতে পারে সেটা ওর ভাবনারও বাইরে ছিলো। হঠাৎই মিসেস রাহেলা অনিমার হাত ধরে বললেন,
— ” কী রে মা ক্ষমা করবিনা আমাদের?”
আশরাফ মৃধাও বললেন,
— ” হ্যাঁ তুই আমাদের ক্ষমা করে দিলেই আমরা চল যাবো মা। আর কোনোদিন তোর সামনে আসবোনা।”
অনিমা ওনাদের দিকে না তাকিয়েই বলল,
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
— ” তোমাদের ওপর আমার কোনো অভিযোগ নেই। তোমরা তোমাদের কাজ করেছো। শুধু একটা কথাই বলবো তোমাদের যদি প্রপার্টির দরকার ছিলো, একবার বলে দেখতে আমাকে আমি এমনিই সব দিয়ে দিতাম। আমারতো প্রপার্টির দরকার ছিলোনা, ঐসময় আমার শুধু একটু ভালোবাসার দরকার ছিলো, তোমাদের কাছে এরচেয়ে বেশি কিছু চাওয়া ছিলোনা আমার। কিন্তু তোমরা তো আমাকে শুধু টাকার জন্য নিজের চরিত্রহীন ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চেয়েছিলে, এরপর অন্য একজনের কাছে বিক্রি করে দিয়েছিলে শুধু টাকার জন্যে । যাই হোক এখন এসব পুরোনো আবর্জনা ঘাটলে শুধু দুর্গন্ধই বেরোবে। তোমরা ক্ষমা চাইছো তো? তবে প্লিজ আমার সামনে হাত জোড় করোনা আমার অসস্হি হয়। তোমরা যেমনি হও আমিতো আর তোমাদের কাতারে নামতে পারবোনা।”
আশরাফ মৃধা আর মিসেস রাহেলা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। অনিমাও যে এইভাবে কথা বলতে পারে তারা ভাবতে পারেনি। যেই মেয়েটা এতো টর্চার এর পরেও মুখ দিয়ে টু শব্দও করেনি তার মুখে এত করা কথা ভাবেওনি তারা। তবুও নিজেদের সামলে নিলো। আশরাফ মৃধা বলল,
— ” আরেকজনও এসছে তোর কাছে ক্ষমা চাইতে।”
অনিমা ভ্রু কুচকে তাকাতেই মাথা নিচু করে অর্ক এলো। অর্ককে দেখেই আদ্রিয়ান আর রিক দুজনেরই মাথা গরম হয়ে গেলো। রিক তেড়ে যেতে নিলেই স্নিগ্ধা ওর হাত ধরে আটকে নিলো। আদ্রিয়ান এগিয়ে গিয়ে বলল,
— ” ও এখানে কেনো এসছে? সেদিন জীবিত ছেড়েছি ভালো লাগেনি না? আজতো ওকে আমি..”
আদ্রিয়ান অর্কর দিকে এগোতে নিলেই অনিমার ‘আদ্রিয়ান’ বলে ডাকতেই অাদ্রিয়ান থেমে গেলো। নিজেকে বহু কষ্টে সামলে নিলো ও। অনিমা নিজেও অর্কর দিকে তাকাচ্ছেনা মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে রেখেছে। অর্ক অনিমার সামনে গিয়ে মাথা নিচু করে বলল,
— ” আমাকে ক্ষমা করে দে প্লিজ।”
অনিমা এতোক্ষণ অন্যদিকে তাকিয়ে থাকলেও এবার অর্কর দিকে তাকালো। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে কষিয়ে একটা থাপ্পড় মেরে দিলো অর্কর গালে। ঘটনার আকষ্মিক ঘটনায় সবাই অবাক হয়ে গেছে। অর্ক গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছে অনিমার দিকে। অনিমা শক্ত গলায় বলল,
— ” আচ্ছা? ক্ষমা চাইছো? কীসের জন্যে? চারবছর ধরে আমার অসহায়ত্ত্বের সুযোগ নিয়ে সুযোগ পেলেই আমাকে বাজে ভাবে ছোঁয়ার জন্যে? নাকি বাড়িতে একা আমাকে রেপ করার চেষ্টায় করার জন্যে? বলো?”
অর্ক কিছু বলবে তার আগেই অনিমা একটা শ্বাস নিয়ে বলল,
— ” যদি সেদিন আমি তোমার হাত থেকে নিজেকে না বাঁচাতে পারতাম তাহলে? কীসের জন্যে ক্ষমা চাইতে আর কার কাছে ক্ষমা চাইতে বলো?”
অর্ক মাথা নিচু করে আছে । সত্যিই এই প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই ওর কাছে। অনিমা চোখ মুছে বলল,
— ” রেপ করা আর রেপ করার চেষ্টা করা দুটোই সমান অপরাধ। আর দুটো অপরাধের কোনো ক্ষমা হয়না এক মার্ডার আর দুই রেইপ। ”
আদ্রিয়ান আস্তে আস্তে দুকদম পিছিয়ে গেলো অনিমার কথা শুনে। ওর ভেতরে এখন অন্য আশঙ্কা বাসা বাধছে। অনিমা বলল,
— ” তাই তোমাকে আমি ক্ষমা করতে পারবোনা। তবে নতুন করে আর কোনো শাস্তিও দেবোনা কারণ যেই শাস্তি তুমি পেয়েছো শুনলাম তারপর আর কোনো শাস্তি দেওয়ার প্রয়োজন নেই।”
কথাটা আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়েই বলল অনিমা। উপস্থিত কারো আর কিছুই বলার নেই। এরপর অনিমার মামা মামী আর অর্ক চলে গেলো। আদ্রিয়ান বলেছিলো অনুষ্ঠান পর্যন্ত থাকতে তবে ওনারা রাজী হননি। অনেক জোরাজোরিতে কালকে আসবে বলে ঠিক করেছে। ওনারা চলে যেতেই আস্তে আস্তে গোটা পরিবেশ স্বাভাবিক হয়ে গেলেও স্বাভাবিক হলোনা অনিমার মন। কয়েকটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে ওর মনে অনেক সংশয় তৈরী হয়েছে। আর আদ্রিয়ানের মনের মধ্যে বাসা বেধেছে ভয় নিজের জানপাখিকে হারিয়ে ফেলার ভয়।
______________________
— ” কী হলো বলুন?”
অনিমার ডাকে হুস এলো আদ্রিয়ানের ও নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,
— ” অনি আমি জানি তুমি অন্যরকম মেন্টলিটির মেয়ে। তুমি কখনোই খুন খারাপি, মারামারি এসব মোটেও পছন্দ করোনা। এসব ঘৃণা করো তুমি। হয়তো আজকের পর আমাকেও ঘৃণা করবে। ভেবেছিলাম সঠিক সময় এলে সবটা ধীরে ধীরে বুঝিয়ে বলব, তবে আজ সবটা তোমাকে বলতেই হবে। আগে তোমার বাবার সাথে আমার কীসের সম্পর্ক ছিলো সেটি বলি। তোমার বাবা মারা যাবার সাত মাস আগে পাঁচদিনের জন্যে চট্টগ্রাম গিয়েছিলেন কিন্তু একসপ্তাহ পর ফিরেছিলেন মনে আছে?”
অনিমা হ্যাঁ বোধক মাথা নেড়ে বলল,
— ” হ্যাঁ সেখানে সেই ড্রাগ সেলারদের একটা গ্যাং কে এক্সপোস করেছিলেন উনি তবে ওখানে গুলি লাগে ওনার।”
আদ্রিয়ান একটা শ্বাস ফেলে বলল,
— ” এক্সাক্টলি। সেদিন তোমার বাবা গুলি লাগা অবস্হায় রোডে পরে ছিলো। আমিই ওনাকে ওখান থেকে হসপিটালে নিয়ে যাই। বাকি দুদিন উনি আমার কাছেই ছিলেন। ওই দুদিন আমি আমার বুক করা হোটেল রুমেই ওনাকে রেখেছিলাম। আমাদের মধ্যে খুব ভালো একটা বন্ডিং তৈরি হয়ে গেছিলো। এরপরে ওখান থেকে আমরা একসাথেই ফিরি। ওখান থেকে আসার পরেও আমাদের দুজনের যোগাযোগ হতো। মাঝেমাঝে দেখা করেও কথা বলতাম। উনি আমাকে জুনিয়র বলে ডাকতো কারণ উনি নাকি আমার মধ্যে নিজেকে দেখতে পেতেন। আর আমিও তাই ওনাকে মিস্টার সিনিয়র বলতাম। আর জানো আমাদের আলোচনা মূল বিষয়বস্তু ছিলে তুমি।”
অনিমা অবাক হয়ে তাকালো আদ্রিয়ানের দিকে, আদ্রিয়ান হালকা হেসে বলল,
— ” উনি সবসময় তোমার কথাই বলতো। তুমি কী করো? তুমি কী খেতে ভালোবাসো? কী করতে ভালোবাসো? প্রতিদিন রাতে ফোন করে আমার কাছে তোমার গল্প বলতো। তবে সেটা আমারই ইচ্ছেতেই। প্রথম দিন তোমার গল্প শুনার পর খুব ইনটারেস্টিং লেগেছিলো। তাই খুব মনোযোগ দিয়ে শুনতাম মাঝেমাঝে নিজেও যেচে তোমার ব্যাপারে জানতে চাইতাম। ভালোলাগতো। তবে তোমার কখনো তোমার নাম জিজ্ঞেস করিনি আর আঙ্কেল ও তোমাকে মামনী বলেই সম্বোধন করতো। অদ্ভুত শোনালেও এটাই সত্যি। ”
অনিমা অবাক কন্ঠে বলল,
— ” তারপর?”
আদ্রিয়ান কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবারও বলতে শুরু করল,
— ” একদিন মিস্টার সিনিয়র ফোন করে বলল যে উনি এমন একটা আর্টিকেল তৈরী করছেন যাতে ওনার প্রাণ সংশয় হতে পারে। উনি ছাড়া তোমার এই পৃথিবীতে কেউ নেই। ওনার কিছু হয়ে গেলে যাতে আমি তোমাকে দেখে রাখি। আমি কোনোকিছু না ভেবেই ওনাকে কথা দিয়েছিলাম যে আমি তোমাকে দেখে রাখব। কিন্তু তার দুদিন পর আমাকে ইউ কে যেতে হয়েছিল। একদিন আঙ্কেল কল করে বলল যে এটাই নাকি ওনার সাথে আমার শেষ কথা। আমি জেনো তোমাকে দেখে রাখি। আমি কিছু বলার আগেই ফোন কেটে গেছিলো তারপর অনেকবার ট্রায় করেও আমি পাইনি ফোনে।”
অনিমা কিছু একটা ভাবতে ভাবতে বলল,
— ” সেদিন রাতে আব্বু আমাকে একটা কাগজ দিয়েছিল যেটাতে হয়তো কারো নাম্বার ছিলো। তাহলে কী ওটা আপনারি..”
আদ্রিয়ান একটু হেসে বলল,
— ” হুমম হতে পারে। এরপর আমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দেশে এসছিলাম কিন্তু তোমাদের বাড়ি গিয়ে তোমাদের পাওয়া যায়নি।তালাঝুলে ছিলো। নিউস দেখে জানতে পারলাম মিস্টার সিনিয়র নাকি সুইসাইড করেছে। এটা শুনে আমার পুরো জগৎ টাই যেনো অন্ধকার হয়ে গেছিলো। বুঝতে পেরেছিলাম যে ওরাই মেরে ফেলেছে। আমি প্রতিজ্ঞা করে নিয়েছিলাম ওদের কাউকে ছাড়বোনা কিন্তু তার আগে তোমাকে খুজতে হতো। কিন্তু অনেক খুজেও তোমাকে পাইনি। বেশি সমস্যা হয়েছিলো কারণ তোমার নামটাই জানতাম না আমি। অনেক খোজ চালিয়েছি তোমার কিন্তু পাইনি। এরপর দুই বছরের জন্যে ইউকে তে যেতে হয়েছিলো আমায় পড়াশোনার কাজেই। আমার লোক দিয়ে তবুও খোজ করেছি কিন্তু পাইনি, পাবো কীকরে নামটাই তো জানতাম না। নিজেকে খুব অপরাধী মনে হতো। মিস্টার সিনিয়রকে কথা দিয়েও তার দেওয়া কথা রাখতে পারিনি আমি। এভাবে কটা বছর চলে গেলো। একদিন একটা বিপদে পরে তোমার ফ্লাটেই এসে পরলাম আমি। একটা গোটা রাত তোমার সাথে কাটানোর পর আমার মনে খটকা লেগেছিলো কারণ মিস্টার সিনিয়রের বলা কথাগুলোর সাথে তোমার সবকিছু মিলে গেছিলো। আচার আচরণ, হাসি, কথার ধরণ, দুষ্টুমি সব। তাই সিউর হওয়ার জন্য লোক লাগিয়ে তোমার খোজ লাগিয়ে জানতে পারি যে তুমিই সেই মেয়ে যাকে আমি সাত বছর যাবত খুজছি।”
অনিমা অবাক হয়ে গেছে সব শুনে, ও অবাক হয়েই বলল,
— ” এইজন্যই আপনি আমার সব পছন্দ অপছন্দ জানতেন? আর এই ডাইরীতে আব্বুকে নিয়ে অনেক কথা এইজন্যই লেখা আছে? ”
আদ্রিয়ান একটু চুপ থেকে বলল,
— ” হ্যাঁ। তবে এটা ভেবোনা যে আমি তোমাকে নিজের দ্বায়িত্ব ভেবে বিয়ে করছি তোমার আসল পরিচয় জানার আগে থেকেই কিন্তু আমি তোমাকে ভালোবাসতে শুরু করেছি।”
অনিমা ভ্রু কুচকে বলল,
— ” তাহলে এটা কেনো বললেন সব শুনলে আমি আপনাকে ঘৃণা করবো? আর কী শোনা বাকি আছে?”
আদ্রিয়ান নিজেকে শক্ত করে অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল,
— ” কারণ আমি নিজেও একজন খুনি।”
অনিমা চমকে তাকালো আদ্রিয়ানের দিকে। সাথে সাথে দুকদম পিছিয়ে পরে রেলিং ধরে দাঁড়ালো। ও নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছেনা। ওর পা কাপছে কী বললো আদ্রিয়ান? ও ঠিক শুনছে তো? এসব সমীকরণ মেলাতে মেলাতেই আদ্রিয়ান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তারপর বলল,
— ” হ্যাঁ আমি একজন খুনী। তুমি কী এরপরও কোনো এক্সপ্লেনেশন শুনতে চাও?”
অনিমা চুপ করে আছে। আদ্রিয়ানের বলা কথাটার ধাক্কা এখনো সামলাতে পারছেনা ও। কী বলবে, কী বলা উচিত সেটাই বুঝতে পারছে না। শুধু রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে, আর ওর চোখ দুটোও ছলছল করছে । কিছুসময় পরেও আদ্রিয়ান অনিমার কাছ থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো। এটাই হয়তো হওয়ার ছিলো। হয়তো আজকেই সব শেষ হয়ে যাবে। এসব ভেবে ও চলে যেতে নিলেই অনিমা বলে উঠল,
— ” না চাইনা কোনো এক্সপ্লেনেশন।”
আদ্রিয়ান থেমে গেলো। একটু হেসে পেছনে তাকিয়ে বলল,
— ” এরপর কোনো এক্সপ্লেনেশন শুনতে চাওয়ার কথাও না।”
অনিমা চোখ মুছে বলল,
— ” হ্যাঁ কারণ আমি জানি আমার আদ্রিয়ান কোনো ভুল করতেই পারেনা। আপনি যদি খুন করেও থাকেন সেটা আর যাই হোক ভুল হতে পারেনা।”
আদ্রিয়ানের চোখ দিয়ে ওর অজান্তেই একফোটা জ্বল গড়িয়ে পরল। না এটা কষ্টের জল নয় আনন্দের জল। ও গিয়ে অনিমাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো অনিমাকে ।অনিমাও আদ্রিয়ানের পিঠ আকড়ে ধরল। কিছুসময় পর আদ্রিয়ান বলল,
— ” শুনবেনা বাকিটা?”
অনিমা আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,
— ” প্রয়োজন নেই আমার। আমার কাছেতো আপনিই সত্যি। শুধু আব্বু রিলেটেড বলে জিজ্ঞেস করেছিলাম। সেটাতো জেনেই গেছি। কিন্তু আপনার ইচ্ছে হলে বলতে পারেন।”
আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বলল,
— ” এডিজে মাফিয়া গ্রুপ এর নাম শুনেছো?”
অনিমা একটু ভেবে বলল,
— ” হ্যাঁ শুনেছিতো। ঐ মাফিয়া গ্রুপ নিয়ে বেশ কয়েকটা আর্টিকেলও করেছিলাম। ওটা একটা সিকরেট টিম ওরা সিকরেটলি বেশ কয়েকটা ইলিগাল কম্পানি, গোডাউন এরকম অনেক টিম কে ধরিয়ে দিতো। তারমধ্যে বেশির ভাগ কম্পানির মালিকদের আর খুজে পাওয়া যায় না।”
আদ্রিয়ান হালকা হেসে বলল,
— ” ঐ টিমের লিডার কে জানো?”
অনিমা একটু বিরক্ত হয়ে বলল,
— ” আরেহ না। কতো খুজেছি বেটাকে। কতো চেষ্টা করেছিলাম ওই লোকটাকে খুজে নিউস করবো। বাট এতো চেষ্টা করেও পান্ডা শালাকে খুজেই পেলাম না। কোথায় ঘাপটি মেরে থাকে আল্লাহ জানে। ”
আদ্রিয়ান এটা শুনে শব্দ করে হাসল। হাসতে হাসতেই বলল,
— ” সেই মাফিয়া তোমার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে। তবে সে তোমার শালা না বর।”
অনিমা অবাক হয়ে তাকালো তারপর বড়সর একটা ঢোক গিলে বলল,
— ” সিরিয়াসলি?”
আদ্রিয়ান একটু গলা ঝেড়ে বলল,
— ” জ্বী হ্যাঁ। আর আমি তাদেরকেই মারি পুলিশ যাদের কিচ্ছু করতে পারেনা। ”
অনিমা চোখ ছোট করে হাত ভাজ করে বলল,
— ” কবে থেকে চলছে এসব?”
আদ্রিয়ান একটু ইতস্তত করে বলল,
— ” আট বছর।”
অনিমা একটা হতাশ নিশ্বাস নিয়ে বলল,
— ” মানে স্টুডেন্ট লাইফ থেকেই? ”
আদ্রিয়ান মাথা চুলকে বলল,
— ” ঐ আরকি।”
অনিমা দুটো ক্লাব বাজিয়ে বলল,
— ” বাহ! আমার নিজের উড বি এতো বিশাল একজন আন্ডারওয়ার্ল্ড মাফিয়া অথচ আমি নিজেও জানি না? ওয়াও? এক মিনিট! আট বছর মানেতো আব্বুও জানতো? কিছুই বলেনি আপনাকে? ”
আদ্রিয়ান একটু হেসে বলল,
— ” তোমার বাবা তো।”
হঠাৎ রিক আসতে আসতে বলল,
— ” ঐ টিমে কিন্তু এখন আমিও আছি, নিউ মেম্বার আরকি।”
অনিমা তো অবাকের শেষ পর্যায়ে। ও হতাশভাবে দুজনের দিকে তাকিয়ে বলল,
— ” একজন রকস্টার, একজন ডক্টর অথচ আন্ডারওয়ার্ল্ডে এরা দুজনেই মাফিয়া। আর কী লাগে? স্নিগ্ধা জানে এসব?”
— ” হ্যাঁ সবটাই জানে।”
বলতে বলতে স্নিগ্ধা এসেও হাজির। অনিমা এবার কোমরে হাত দিয়ে বলল,
— ” খুব ভালো। সবাই সব জানে অথচ আমিই কিচ্ছু জানতাম না। বাহ। ”
আদ্রিয়ান বলল,
— ” হ্যাঁ তাইতো পান্ডা শালা আরো কতো কি বানিয়ে দিচ্ছিলে। আদিব আশিস ওরাও কিন্তু এই টিমের ই সদস্য।”
অনিমা হাত ভাজ করে বলল,
— ” হুমম তাইতো বলি একজন রকস্টার হয়েও এতো কান্ড কীকরে ঘটায় এই ছেলে।”
স্নিগ্ধা হেসে বলল,
— ” যাই হোক অনি। আমাদের কিন্তু এখন একটু ভাব নিয়ে চলতে হবে বল? আফটার অল ওয়াইফ অফ মাফিয়া তাইনা?”
বলেই অনিমা আর স্নিগ্ধা একসাথে হেসে দিলো। আদ্রিয়ান আর রিক বোকার মতো কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ওরাও হেসে দিলো।
________________________
সেদিন রাতে খুব সুন্দরভাবে ওদের গায়ে হলুদের প্রোগ্রামটা শেষ হলো।
আজ ওদের বিয়ে। প্রথমে রিক স্নিগ্ধা আর পরে অনিমা আদ্রিয়ানের বিয়ে হলো।আশিস আর অরুমিতা একসাথে দাঁড়িয়ে আছে। ওদের বিয়ে দেখতে দেখতে আশিস বলল,
— ” কবে যে আমাদের বিয়েটা হবে।”
অরুমিতা মুখে হাসি রেখেই দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
— ” তার জন্যে আগে তোমার বাবাকে বলতে হবে তাইনা?”
আশিস মুচকি হেসে বলল,
— ” বলে দেবো। একটু সময় দাও।”
অরুমিতা একটা মেকি হাসি দিয়ে বলল,
— ” এক সপ্তাহ ধরে একি কথা বলছো, কাওয়ার্ড একটা।”
বলে অরুমিতা রেগে চলে গেলো আর আশিস ও পেছন পেছন ছুটলো ওকে মানাতে। হ্যাঁ ওদের সম্পর্কটাও ঠিক হয়ে গেছে এই কয়েকদিনে। সেদিন আশিস সত্যিই অরুমিতার সামনে কানে ধরে ওসব বলেছিলো আর অরুমিতার অভিমানটাও এরপর আস্তে আস্তে কেটে গেছে।
আর এদিকে তীব্র স্নেহাকে পেছন থেকে হালকা করে জরিয়ে ধরে বলল,
— ” নেক্সট মান্থে কিন্তু আমাদের পালা।”
স্নেহা একটা খোচা মেরে সরিয়ে বলল,
— ” কী করছো দেখছে সবাই।”
তীব্র হেসে বলল,
— ” দেখুক আমার বউকে আমি ধরেছি কার কী?”
স্নেহা বিরক্তি নিয়ে বলল,
— ” বউ হবো হইনি এখনো।”
বলে ওখান থেকে চলে গেলো আর তীব্রও মুখ ফুলিয়ে মাথা চুলকাতে চুলকাতে নিজের কাছে গেলো।
বিয়ের অনুষ্ঠান খুব সুন্দর করেই মিটে গেলো এবার বাসর ঘরে ঢোকার সময় হলো আরেক বিপদ। আদিব,আশিস,তীব্র,স্নেহা, অরু, রাইমা, অভ্র সবাই পথ আটকে আছে আদ্রিয়ান আর রিক দুজনেরই। দুজনের রুম পাশাপাশি তাই সুবিধা হয়েছে আটকাতে। করিডর এরিয়াতেই আটকেছে ওদের দুজনকে। টাকা না দিলে ওরা ছাড়বেনা। আদ্রিয়ান বিরক্ত হয়ে বলল,
— ” তোরা কী ছোট নাকি রে এসব উদ্ভট বায়না করছিস?”
কিন্তু ওদের কোনো বাহানাতেই কোনো লাভ হলোনা। ওদের একটাই কথা বউ পেতে হলে টাকা দিয়ে তবেই ঢুকতে হবে। আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে বলল,
— ” কতো চাই?”
তীব্র হেসে বলল,
— ” বেশিনা দুজনে পঞ্চাশ পঞ্চাশ করে একলাখ দাও।”
রিক ভ্রু কুচকে বলল,
— ” আব্বে বাসর ঘরে ঢোকার বকসিস নিচ্ছিস নাকি কিডনি বেঁচে দাম চাইছিস?”
স্নেহা হেসে বলল,
— ” কী বলো ভাইয়া? এইটুকু টাকা তো তোমাদের কাছে পানি ভাত দিয়ে দাও?”
আদ্রিয়ান বলল,
— ” এতো টাকা ক্যাস নিয়ে ঘুরি নাকি আমরা? কালকে পেয়ে যাবি।”
আশিক মাথা নেড়ে বলল,
— ” নাহ ভাই বাকির নামই ফাঁকি। তো নগত না পেলে ঢুকতে দেবোনা।”
রিক বিরক্ত হয়ে বলল,
— ” এখন পাবো কোথায়?”
অরুমিতা হেসে বলল,
— ” কার্ড দিয়ে দাও আর পিন বলে দাও।”
আদ্রিয়ান হাত ভাজ করে বলল,
— ” হ্যাঁ সেই। আর তোরা পরে আমাদের ভিখারী বানিয়ে দে আরকি।”
তীব্র বলল,
— ” তাহলে এখানেই থাকো। যেতে হবেনা ভেতরে।”
আদ্রিয়ান আর রিক একে ওপরের দিকে তাকিয়ে চোখে চোখে কিছু একটা ইশারা করে একসাথে বলল,
— ” রেডি, ওয়ান, টু, থ্রী..”
বলেই ওদের হাতের নিচ দিয়ে পার হয়ে একপ্রকার দৌড়ে নিজের নিজের রুমে গিয়ে ঢুকে দরজা ঠাস করে আটকে দিলো। ওরা সবাই অবাক হয়ে গেলো। অরুমিতা হা করে তাকিয়ে থেকে বলল,
— ” এটা কী হলো?”
আদিব একটা শ্বাস ফেলে বলল,
— ” জানতাম দুটোই হাই লেভেলের চালাক। ঠিক টপকে গেলো।”
কী আর করার সবাই মুখ ফুলিয়ে ওখান থেকে কেটে পরলো।
_________________________
রিক খাটে হেলান দিয়ে বসে আছে আর ওর বুকে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে স্নিগ্ধা। স্নিগ্ধা মুচকি হেসে বলল,
— ” জানো কখনো ভাবিই নি যে তোমাকে নিজের করে পাবো। তুমিও কোনোদিন ভালোবাসি বলবে আমায়।”
রিক মুচকি হেসে বলল,
— ” আমিও ভাবিনি। যখন তোমার প্রপোজাল রিজেক্ট করেছিলাম। ভাবতেই পারিনি যে তুমিই আমার বউ হবে। আমি একদিন তোমাকে ভালোবাসবো।”
স্নিগ্ধা মাথা তুলে ভ্রু কুচকে বলল,
— ” হঠাৎ তুমি বলছো যে?”
রিক স্নিগ্ধার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
— ” নিজের বউকে তুই করে বলবো নাকি?”
স্নিগ্ধা হেসে বলল,
— ” হ্যাঁ বলবে। সবার সামনে তুমি করে বলবে কিন্তু যখন একা থাকবো তখন তুই করেই বলবে তোমার মুখে তুই শুনতে খুব ভালোলাগে।”
রিক হেসে বলে দিয়ে বলল,
— ” আচ্ছা বলবো হ্যাপি?”
স্নিগ্ধা আবার রিকের বুকে মাথা রেখে বলল,
— ” হুমম। তো এটা বলো কখন বুঝলে যে তুমিও আমাকে ভালোবাসো?”
রিক একটা শ্বাস ফেলে বলল,
— ” যেদিন তোকে অন্যের সাথে দেখে জেলাস ফিল করতে শুরু করলাম সেদিন থেকে।”
স্নিগ্ধার মাথা তুলে বলল,
— ” বাবাহ বাবু জেলাস ও হয়?”
রিক কিছু না বলে স্নিগ্ধা থুতনি ধরে ঠোঁটের দিকে এগোতে গেলেই স্নিগ্ধা বাধা দিয়ে বলল,
— ” উমহুম একদম না।”
রিক ভ্রু কুচকে বলল,
— ” মানে কী কেনো?”
স্নিগ্ধা নিজেকে ছাড়িয়ে সোছা হয়ে বসে বলল,
— ” কয়েকবছর ধরে তোমার পেছনে ঘুরেছি পাত্তাও দাওনি সো একবছর তুমি আমায় টাচ করবেনা এটাই তোমার শাস্তি।”
রিক কিছুক্ষণ চোখ ছোট করে তাকিয়ে রইলো স্নিগ্ধার দিকে তারপর নিচের ঠোট কামড়ে একটু হেসে বলল,
— ” এক বছর? তাইনা? ওয়েট!”
স্নিগ্ধাকে ধরতে গেলেই ও উঠে দাঁড়িয়ে গেলো আর এদিকে ওদিক ছুটতে লাগল কিন্তু রিকের হাত থেকে ছুটে পালানো কী এতোই সোজা তাই স্নিগ্ধাও পারলোনা। রিক সোজা স্নিগ্ধাকে কোলে নিয়ে বলল,
— ” এবার যাতে একবছরের মধ্যেই একটা ছোট্ট স্নিগ্ধা চলে আসে সেই ব্যাবস্হা করবো সুইটহার্ট।”
_________________________
বাইরে ঝুম বৃষ্টি আর বজ্রপাত হচ্ছে। যদিও এখন বর্ষাকাল নয় কিন্তু তবুও বাংলাদেশে আজকিল আর ঋতুভেদে কিছুই হয়না। তবে এখন আর অনি ভয় পায়না। নিজের সব ভয়কেই কাটিয়ে উঠেছে ও আর সবটাই আদ্রিয়ানের জন্যে। ব্যালকনির দোলনায় আদ্রিয়ানের কাধে মাথা রেখে বসে আছে অনিমা। আদ্রিয়ানের গায়ে শেরওয়ানি নেই শুধু একটা সাদা চিকন স্লিভস এর গেঞ্জি। অনিমার চুলগুলো খোলা আদ্রিয়ানই এসে ওর চুল খুলে দিয়েছে। অনিমার খোলা চুলই আদ্রিয়ানের বেশি ভালো লাগে। দুজনেই চুপচাপ বৃষ্টি দেখছে। নিরবতা ভেঙ্গে আদ্রিয়ান বলল,
— ” কাল রাতে খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম জানো? ভেবেছিলাম হয়তো আমার সত্যিটা জেনে চলে যাবে তুমি আমাকে ছেড়ে।”
অনিমা মুচকি হেসে আদ্রিয়ানকে জরিয়ে ধরে বলল,
— ” ছাড়তাম কীকরে? আপনিতো আমার অন্ধকার জীবণের আলো হয়ে এসেছেন। আমার জীবণের সব অন্ধকার দূর করে দিয়েছেন। আমার একা জীবণে সঙ্গী হয়ে এসছেন আপনি। আপনি না থাকলে হয়তো রিক ওর ভুল বুঝতে পারতো না। হয়তো চিরকাল ঐ রঞ্জিত চৌধুরী আর কবির শেখ এর খাচায় আটকে থাকতে হতো। নরক হয়ে যেতো আমার জীবনটা। যে আমার জীবণটাকে নিজের দ্বায়িত্বে এতো সুন্দর করে দিয়েছেন তাকে কীকরে ছাড়বো আমি? তবে একটা কথা রাখবেন?”
আদ্রিয়ান অনিমার মাথায় একটা চুমু দিয়ে বলল,
— ” বলো?”
অনিমা একটু ইতস্তত করে বলল,
— ” মামা মামীকে ওদের সব প্রপার্টি ফিরিয়ে দিন ওরাতো বুঝেছে নিজের ভুলটা।”
আদ্রিয়ান একটু হেসে বলল,
— ” দেবো। সঠিক সময় এলে ঠিক দেবো।”
অনিমা আর কিছু না বলে চুপচাপ বৃষ্টি দেখতে লাগল। কিছুক্ষণ পর আদ্রিয়ান বলল,
— ” কী ভাবছো?”
অনিমা বৃষ্টি দেখতে দেখতেই বললো,
— ” আজ আব্বু আম্মু থাকলে কতো খুশি হতেন তাইনা?”
আদ্রিয়ান একটু হেসে বলল,
— ” হুমম। আর ওনারা যেখানেই আছেন আমাদের দেখে খুব খুশি হয়েছেন আর আমাদের দোয়াও করছেন।”
অনিমা আবারও চুপ করে রইল। আদ্রিয়ান বুঝতে পারলো অনিমা কাঁদছে। আদ্রিয়ান অনিমার মাথা উচু করে ধরে চোখ মুছে দিয়ে কপালে একটা চুমু দিয়ে বলল,
— ” প্লিজ আজকে অন্তত কেঁদো না। নিজের কালো অতীতকে ভুলে যাও। আমার জীবণে পাওয়া সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ তুমি। আমার সৌভাগ্য আমার খুশি সব তুমিই। আর আমি কথা দিচ্ছি তোমার ভবিষ্যৎ যতোটা অন্ধকার তোমার ভবিষ্যৎকে ঠিক ততোটাই আলোকিত করে তুলবো আমি। আই প্রমিস।”
অনিমা কিছু না বলে আদ্রিয়ানকে জরিয়ে ধরল। অনিমাও আদ্রিয়াকে শক্ত করে জরিয়ে ধরল। আদ্রিয়ানও জাপটে ধরলো ওকে। কিছুক্ষণ এভাবে থাকার পর আদ্রিয়ান অনিমার কানের কাছে মুখ এনে কানে একটা কিস করে বলল,
— ” আজকে আমার ভালোবাসার রং সম্পূর্ণ রাঙিয়ে দিতে চাই তোমাকে। আমার প্রত্যেক অনুভূতির চরম সীমার সাথে পরিচয় করাতে চাই। তোমাকে সম্পূর্ণ নিজের করে নিতে চাই। সো জানপাখি, মে আই?”
অনিমা কিছু না বলে আদ্রিয়ানের গেঞ্জিটা খামচে ধরে ওর বুকে মুখ লুকালো। আদ্রিয়ান কিছু না বলে মুচকি হেসে ওকে কোলে তুলে নিলো ওকে। লজ্জায় অনিমা মাথা তুলে তাকাতে পারছেনা। আদ্রিয়ান ওকে কোলে নিয়ে রুমের দিকে হাটা দিলো।
আজ সমস্ত অন্ধকার কেটে গিয়ে নতুন আলোয় ভরে উঠলো ওদের জীবণ। সত্যিই বর্ষণ আশির্বাদ। হ্যাঁ বর্ষণে মাঝে মাঝে বজ্রপাত, তোলপার , চারপাশে ভয়ংকর পরিবেশের সৃষ্টি হতেই পারে। তবে তার পরের সকালটা ততোটাই সুন্দর, সচ্ছ, আলোকিত হয়। কে বলতে পারে ভয়ংকর বর্ষণের রাতে হয়তো কারো জীবণে এমন কিছু ঘটতে পারে যেটা তার জীবণের মোড়ই ঘুড়িয়ে দেবে? জীবণে নতুন আলো নিয়ে আসবে। প্রত্যেক অন্ধকার আর ভয়াবহতাই যে আলোকিত সুন্দর কিছু বয়ে আনতে পারে তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ হয়তো বর্ষণের রাতগুলোই হয়।
সমাপ্ত___
( অবশেষে শেষ হলো গল্পটি। জানি অনেকেই চেয়েছিলেন এটাকে আরো বাড়াই তবে সত্যি বলতে আমার কাছে এটাই শেষ করার উপযুক্ত সময় মনে হয়েছে তাই এখানেই ইতি টানলাম। গল্পটাতে আপনাদের অনেক অনেক ভালোবাসা পেয়েছি তারজন্যে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশাকরি গল্পটা সবার ভালোলেগেছে আর তাই গল্পশেষে আপনাদের সকলেরই একটা করে সুন্দর রিভিউ আশা করছি। সকলেই ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ।)
Very nice story.. hope you will give us many more stories like this one…it is a fully emotional story.. love this..
খুব সুন্দর গল্প। এরকম আরো গল্প চাই
Odvut shundor golpo.
amazing..
Season 2 chai
সেই বর্ষনের রাতে সিজন ২ টা দেন প্লিজ