Sunday, October 5, 2025







বর্ষণের সেই রাতে ❤ পর্ব- ৫৮

বর্ষণের সেই রাতে ❤
পর্ব- ৫৮
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

.
আদ্রিয়ান অনিমাকে সুপ খাইয়ে দিচ্ছে আর অনিমা মুখ ফুলিয়ে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে। আজকেও আদ্রিয়ান ওর সাথে কোনো কথা বলছে না। অনিমা এবার মনে মনে ভেবে নিয়েছে যে কিছু একটা করতেই হবে, এভাবে চলতে পারেনা। আদ্রিয়ান অনিমার দিকে সুপভর্তি চামচ এগিয়ে দিলো কিন্তু অনিমা হা করছে না, অন্যদিকে মুখ করে বসে আছে। অনিমাকে হা করতে না দেখে ওর দিকে ভ্রু কুচকে তাকালো আদ্রিয়ান। কিন্তু অনিমার সাথে তো কথা বলবেনা তাই ঠোঁটে ঠেকিয়ে ধরল কিন্তু অনিমা মুখ খুললো না। আদ্রিয়ান এবার সুপের বাটিটা টি-টেবিলে শব্দ করে রেখে ভ্রু কুচকে হাত ভাজ করে বসে আছে। অনিমা আড় চোখে একবার তাকিয়ে আবার মুখ ঘুরিয়ে নিলো। কিছুক্ষণ দুজনেই চুপ ছিলো। হঠাৎ করেই আদ্রিয়ান অনিমা মুখ ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলো তারপর মুখে হালকা চাপ দিয়ে হা করিয়ে সুপটা খাইয়ে দিলো কিন্তু কিছু বললোনা। অনিমা মুখ ছোট করে বলল,

— ” এমন করছেন কেনো? সরি তো।”

আদ্রিয়ান কিছু না বলে অনিমাকে খাইয়ে দিতে লাগল। অনিমাও আর কিছু বললোনা কারণ ও জানে যে কোনো লাভ হবেনা। খাবার খাইয়ে মেডিসিন দিয়ে চলে গেলো আদ্রিয়ান। আর অনিমা অসহায়ভাবে তাকিয়ে রইলো আদ্রিয়ানের যাওয়ার দিকে। পাঁচদিন যাবত অনেকরকম ট্রিকস ইউস করে যাচ্ছে কিনতু কোনো লাভ হচ্ছেনা। কী করবে বা ওর কী করা উচিত সেটাই বুঝতে পারছেনা। এসব ভাবতে ভাবতে মুখ ফুলিয়ে দাঁত দিয়ে নখ কার্তটতে লাগলো। হঠাৎ করেই কেউ দরজায় নক করে বলল,

— ” আসবো ম্যাডাম?”

অনিমা দরজায় তাকিয়ে দেখলো যে স্নিগ্ধা দরজার সাথে হেলান দিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। অনিমাও একটা হাসি দিয়ে বলল,

— ” আরে আয়না। আমার রুমে ঢুকতেও তোর পার্মিশন নেওয়া লাগে নাকি।”

স্নিগ্ধা দুষ্টু হেসে হেলেদুলে আসতে আসতে বলল,

— ” নাহ মানে আজকাল তো আর তোর রুমে তুই একাই থাকিস না অন্যকেউও থাকে।”

অনিমা হালকা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেলল। স্নিগ্ধা খাটের এক কর্ণারে বসে বলল,

— ” খাইয়ে দিচ্ছে, ঔষধ দিচ্ছে, না জানি আর কী কী করে। তাই একটু নক টক করেই আসতে হয়। শত হলেও একটু প্রাইভেসির দরকার আছেতো তাইনা?”

অনিমা এবার স্নিগ্ধার দিকে একটা বালিশটা ছুড়ে মেরে বলল,

— ” রাখ তোর প্রাইভেসি। মহারাজ তো আমার সাথে কোনো কথাই বলছে না।”
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
স্নিগ্ধা একটা শ্বাস ফেলে বেডে হেলান দিয়ে বলল,

— ” হুমম। মান অভিমান চলছে তাহলে?”

অনিমা মুখ ফুলিয়ে বলল,

— ” শুধু কী অভিমান? একটা কথাও বলছেনা আমার সাথে। ইচ্ছে করেই কষ্ট দিচ্ছে আমাকে। ভাল্লাগেনা কিছু।”

— ” ও কথা বলবেনা ওর ঘাড় বলবে।”

এটা শুনে অনিমা আর স্নিগ্ধা দুজনেই দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো রিক দাঁড়িয়ে আছে। এই কয়েকদিনে অনিমা আর রিকের সম্পর্কটাও বদলে গেছে। রিক অনিমাকে বলেই দিয়েছে আগে ওদের মধ্যে কী ছিলো? কী হয়েছে? সব ভুলে গিয়ে যাতে এখন সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ব্যবহার করে ওর সাথে, আদ্রিয়ানের ভাই হলে যেমন ব্যবহার করতো ঠিক সেরকম। প্রথম দুই একসদিন অনিমার একটু আনইজি লাগলেও আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়ে গেছে রিকের সাথে । এটা ঠিক যে রিক অনিমাকে এখনও ভালোবাসে হয়তো সারাজীবন বাসবে কিন্তু সেটার বহিঃপ্রকাশ রিক কোনদিন করে নাহ রিক ভেতরে এসে বেডে বসে অনিমার দিকে বলল,

— ” তো শরীর এখন কেমন আছে ম্যাম?”

অনিমা হাত ভাজ করে মুখে হেসে বলল,

— ” শরীর খারাপ কীকরে থাকবে বলো? আফটার অল ডক্টর রিক চৌধুরী আমার ট্রিটমেন্ট করছে।”

রিক হেসে দিলো আর স্নিগ্ধা মুখ বাঁকিয়ে বলল,

— ” হ্যাঁ সেই দুদিনের ডক্টর।”

রিক ভ্রু কুচকে বলল,

— ” ঐ দুই দিনের ডক্টর মানে কী হ্যাঁ? এক সপ্তাহে আমার কী ইমেজ তৈরী হয়েছে জানিস তুই? দুইবছর যাবত ডক্টরি করেও তো আমার ধারেকাছে আসতে পারিস নি?”

স্নিগ্ধা মুখ ফুলিয়ে বলল,

— ” আমারও কম ইমেজ নেই হ্যাঁ? জানো পেশেন্ট রা কতো প্রশংসা করে আমার?”

রিক হাসতে হাসতে বলল,

— ” পেশেন্টরা তোর চিকিৎসার না চেহারারই প্রশংসা করে।”

স্নিগ্ধা বিরক্তি নিয়ে রিকের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” রিক দা তুমি কিন্তু আমাকে ইনসাল্ট করছো।”

অনিমা এবার দুজনকে থামিয়ে বিরক্ত হয়ে বলল,

— ” চুউউউউপ। তোমরা থামবে? কী শুরু করেছো বলোতো? কোথায় আমার ঝামেলা মেটানোর একটা আইডিয়া বলবে না নিজেদের মধ্যে ঝগড়া শুরু করে দিয়েছো।”

স্নিগ্ধা আর রিক দুজনেই চুপ হয়ে গেলো। স্নিগ্ধা আর রিক দুজনেই চুপ করে কিছুক্ষণ ভাবার পর রিক বলল,

— ” আমার কাছে একটা প্লান আছে।”

অনিমা এক্সাইটেড হয়ে বলল,

— ” কী সেটা?”

রিক কিছু ভাবতে ভাবতে বলল,

— ” আজ কতো তারিখ?”

স্নিগ্ধা ভ্রু কুচকে বলল,

— ” থার্টি ফার্স্ট আগস্ট। কেনো?”

স্নিগ্ধাও কৌতুহল নিয়ে তাকালো রিকের দিকে। রিক ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে একটা বাঁকা হাসি দিলো।

_________________________

আদ্রিয়ান বসে ল্যাপটপে কাজ করছে। আদিব পাশে বসে টুকটাক হেল্প করছে। কিন্তু আশিস মুখ কালো করে বসে আছে। আদ্রিয়ান পরপর দুবার আড়চোখে দেখেছে। আদ্রিয়ান কাজ করতে করতেই ভ্রু কুচকে আশিসের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” এখন এভাবে বারবার মুখ কালো করে রেখে কী লাভ? তোকে বারবার বলেছিলাম আমি সাবধানও করেছিলাম কিন্তু আমার কথা শুনিসনি তুই।”

আশিস কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,

— ” আমি জানি আমি অন্যায় করেছি। কিন্তু নিজের ভুলটা তো বুঝতেও পেরেছি তাইনা? কতোবার ক্ষমা চেয়েছি ওর কাছে। আমি জানি যে ও আমাকে এখনো ভালোবাসে, হয়তো ক্ষমাও করে দিয়েছে কিন্তু কাছে টানতে পারছেনা ।”

আদ্রিয়ান একটু হেসে বলল,

— ” তোর ওকে দিয়ে কী কাজ। এতো সুন্দর সুন্দর হট হট গার্লফ্রেন্ড আছে তোর ওদের দিয়ে চলেনা।”

আশিস বিরক্ত হয়ে বলল,

— ” প্লিজ ভাই.. আর কতো লজ্জা দিবি বলতো? এবার থাম দয়া করে। আর কোনো একটা উপায় তো বল?”

আদিব বিরক্ত হয়ে বলল,

— ” অকাজ কুকাজ তুমি করবে আর সামলাবো আমরা? নিজে ঝামেলা পাকিয়েছিস এবার নিজেই সমাধান কর যা ভাগ।”

অাশিস অসহায়ভাবে একবার আদ্রিয়ান একবার আশিসের দিকে তাকিয়ে রইল। অভ্র তিন বন্ধুর কান্ড দেখছে আর মিটমিটিয়ে হেসে যাচ্ছে। কিছু একটা ভেবে ও বলল,

— ” স্যার। আমি বলি কী? আশিস স্যার যখন এতোকরে বলছে তখন একটু হেল্প করে দিন?”

অভ্রর কথা শুনে আশিস অসহায় কন্ঠে বলল,

— ” দেখেছিস ওরও আমাকে দেখে মায়া হচ্ছে। আর তোরা আমার বন্ধু তবুও একটু মায়া হচ্ছে না?”

আদ্রিয়ান আর আদিব একে ওপরের দিকে ভ্রু তাকালো, কিছু ভাবার পর দুজনের মুখেই হাসি ফুটে উঠলো। আদ্রিয়ান আশিসের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” আচ্ছা চল হেল্প করবো তোকে তবে সেটাও একটা শর্তে।”

আশিস হতাশার একটা শ্বাস ফেলে বলল,

— ” হয়ে গেলো! তোর দেওয়া শর্ত মানেতো আমার পুরোদমে বাশ এই আরকি।”

আদিব হেসে বলল,

— ” কিছু করার নেই ভাই। কেষ্ট পেতে গেলে একটুতো কষ্ট করতেই হবে।”

আশিস মুখ গোমড়া করে দুজনের দিকে তাকিয়ে একটা শ্বাস ফেলে বলল,

— ” আচ্ছা ঠিকাছে। বল কী করতে হবে?”

আদ্রিয়ান এবার ল্যাপটপ অফ করে আশিসের দিকে টার্ন নিয়ে বলল,

— ” কানে ধর।”

আশিস অবাক হয়ে বলল,

— ” হোয়াট? আমি পারবোনা।”

আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে আশিসের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” আচ্চা ঠিকাছে তাহলে নিজের রাস্তা নিজেই দেখ।”

আশিস হকচকিয়ে বলল,

— ” ভাই ভাই ভাই। ধরছি তো রেগে যাচ্ছিস কেনো?”

আশিস দাঁড়িয়ে নিজের কান ধরলো। আদ্রিয়ান এবার গলা ঝেড়ে বলল,

— ” বল আমি প্রতিজ্ঞা করছি যে, অরুমিতা ছাড়া আর অন্যকোনো মেয়ের দিকে অন্য নজরে তাকাবো না। ওকে কখনো কষ্ট দেবোনা সবসময় ভালো রাখবো আর ও যা বলবে সব অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলবো।”

আশিস অবাক প্লাস বিরক্ত হয়ে বলল,

— ” জোক মারছিস? আমিকি এসএমবিলি তে দাঁড়িয়ে আছি নাকি?”

আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে বিরক্ত হয়ে বলল,

— ” তুই বলবি না আমি উঠবো?”

আশিস অসহায়তা মুখ করে তাকিয়ে বলল,

— ” আচ্ছা বলছি…আমি প্রতিজ্ঞা করছি যে, অরুমিতা ছাড়া আর অন্যকোনো মেয়ের দিকে অন্য নজরে তাকাবো না। ওকে কখনো কষ্ট দেবোনা সবসময় ভালো রাখবো আর ও যা বলবে সব অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলবো।”

আদ্রিয়ান হেসে বলল,

— ” গুড। এবার এই কথাটাই ঠিক এইভাবে কান ধরে অরুমিতার সামনে হাটু ভেঙ্গে বসে বলবি।”

আশিস মুখ ফুলিয়ে বলল,

— ” আর কোনো উপায় নেই?”

আদিব হাত ভাজ করে বলল,

— ” আচ্ছি তাহলে ভুলে যা অরুমিতাকে। সিম্পল।”

আশিস এবারেও মুখ ফুলিয়ে বলল,

— ” আচ্ছা বলব বলব হ্যাপি?”

আদ্রিয়ান, আদিব, অভ্র তিনজনেই শব্দ করে হেসে দিলো আর আশিস মুখ ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।

__________________________

রাত সাড়ে এগারোটায় বাড়িতে ফিরে অনিমার রুমে উকি দিয়ে ওকে দেখতে না নিজের রুমে ঢুকে গিটারটা রাখতে গিয়ে দেখলো যে টেবিলের ওপর একটা কাগজ রাখা। আদ্রিয়ান টেবিলের ওপর থেকে কাগজটা নিয়ে খুলে দেখলো তাতে লেখা আছে, ” ১১: ৫৫ তে ছাদে চলে আসবেন প্লিজ।” হ্যান্ডরাইটিং দেখেই আদ্রিয়ান বুঝে গেলো এটা অনিমার লেখা। গিটারটা রেখে রাগে গজগজ করতে করতে ছাদের দিকে যেতে নিলেও কিছু একটা ভেবে থেমে গেলো যেহেতু ১১:৫৫ তেই যেতে বলেছে তখন তার আগে যাওয়া ঠিক হবেনা। ফ্রেশ হয়ে বেডে বসলো ও। মেজাজ খুব খারাপ হয়ে গেছে ওর। এমনিতেই শরীর এখনো ঠিক হয়নি, রুম থেকে বেরোতে বারণ করার পরেও বেরিয়েছে। মোবাইল টাও বন্ধ চার্জ নেই। ফোন চার্জ দিয়ে আবারও বেডে বসল ও। ভাবছে যে কী জন্যে ডাকতে পারে এতো রাতে? ১১: ৫৫ বাজতেই ছাদে গিয়ে একদফা অবাক হলো আদ্রিয়ান কারণ পুরো ছাদ অন্ধকার। আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে চারপাশে চোখ বুলাতেই লাইট জ্বলে উঠল। আদ্রিয়ান অবাক গেলো কারণ সারা ছাদ বেলুন, আর মোমবাতি দিয়ে সাজানো সুন্দর করে সাজানো আছে। মাঝখানে একটা টেবিলও রাখা আছে। আদ্রিয়ান এগোতে নেবে তার তখনই একটা শব্দ হলো আর ওপরে বিষ্ফোরণের মতো করে হ্যাপি বার্থডে আদ্রিয়ান ইংলিশ ফন্টে লেখা উঠলো । আদ্রিয়ান তো অবাক ও ভুলেই গেছিলো আজ ওর বার্থডে ফোন অফ থাকায় আরও মনে নেই। কেউ ওকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরে বলল,

— ” হ্যাপি বার্থডে।”

আদ্রিয়ানের ঠোঁটের কোণে হালকা হাসি ফুটে উঠলো। কিন্তু অনিমার করা কাজের কথা মনে পরতেই আদ্রিয়ান ছাড়াতে নিলেই অনিমা শক্ত করে ধরে বলল,

— ” আপনি আজ সরাতে চাইলেও আমি সরবোনা। এতোসুন্দর এরেঞ্জমেন্ট করলাম একটা থ্যাংকস তো বলুন?”

আদ্রিয়ান অনিমাকে ছাড়িয়ে নিজের দিকে ঘুরিয়ে শক্ত করে দুই বাহু ধরে বলল,

— ” কী ভেবেছো? হ্যাঁ? এসব করে আমাকে কথা বলাতে পারলেই আমার রাগ কমে যাবে?”

অনিমা মুখ ছোট করে নিচু কন্ঠে বলল,

— ” সরি বলেছিতো কতোবার।”

আদ্রিয়ান বিরক্ত হয়ে বলল,

— ” হ্যাঁ এখন সরি বলছো নেক্সট কোনোদিন এমন পরিস্থিতি এলে ঠিক একই কাজ করবে।”

অনিমা মাথা নিচু করে কাঁদোকাঁদো গলায় বলল,

— ” আমার জায়গায় থাকলে আপনি কী করতেন?”

আদ্রিয়ান রেগে বলল,

— ” তুমি ছাড়া বাঁচা আর না বাঁচা আমার কাছে সমান অনি।”

অনিমা মুখ ফুলিয়ে অভিমানী গলায় বলল,

— ” ও আর আমি আপনাকে ছাড়া কীকরে বাঁচতাম?”

আদ্রিয়ান কিছু না বলে চুপ করে রইলো এর উত্তর ওর নিজের কাছেও নেই। অনিমা আদ্রিয়ানকে জরিয়ে ধরে বলল,

— ” প্লিজ আমার ওপর এভাবে রাগ করে থাকবেন না। কষ্ট হয় আমার, সব সহ্য করতে পারলেও আপনার ইগনোরেন্স সহ্য করতে পারিনা আমি।”

আদ্রিয়ান ও অনিমাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে বলল,

— ” কতোটা ভয় ফেয়ে গেছিলাম জানো? একমুহূর্তের জন্যে মনে হয়েছিলো তোমাকে চিরকালের মতো হারিয়ে ফেলবো আমি। কতোটা অসহায় লেগেছে নিজেকে জানো?”

অনিমা আদ্রিয়ানকে আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরে বলল,

— ” আই লাভ ইউ।”

আদ্রিয়ান চমকে উঠলো। হ্যাঁ এটা ঠিক যে ও জানে যে আনিমাও ওকে খুব ভালোবাসে কিন্তু আজ অনিমার মুখ থেকে কথাটা শুনে আদ্রিয়ানের মনে খুশির শিহরণ বয়ে গেলো। ও অনিমার কাধে থুতনি রেখে কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে বলল,

— ” আবার বলো?”

অনিমার লজ্জামিশ্রিত কন্ঠে বলল,

— ” আই লাভ ইউ।”

আদ্রিয়ান অনিমাকে এতো শক্ত করে জরিয়ে ধরলো যেনো নিজের মধ্যে ঢুকিয়ে ফেলবে। এভাবে কতোক্ষণ ছিলো ওদের নিজেদেরই খেয়াল নেই। হঠাৎ করেই কারো কাশির আওয়াজে ওরা দুজন দুজনকে ছেড়ে দূরে সরে দাঁড়ালো। রিক আর স্নিগ্ধা ছাদের দরজার এক কোণে দাঁড়িয়ে মিটমিটিয়ে হাসছে। ওরা ভেতরে আসার পর রিক আদ্রিয়ান কে খোঁচা মেরে বলল?

— ” আরে ভাই রোমান্স এর জন্যে সারাজীবন পরে আছে আপাদত সেলিব্রেশন হোক? হ্যাপি বার্থডে।”

বলে রিক আদ্রিয়ানকে জরিয়ে ধরলো। স্নিগ্ধাও উইস করলো আদ্রিয়ান। এরপর মিসেস আবরার, মিস্টার আবরার, মিসেস লিমা এসে একে একে আদ্রিয়ানকে উইস করে কেক কেটে বিভিন্নভাবে মজা করে আপাদত ঘরোয়াভাবে সেলিব্রেট করল। তবে কালকে আদ্রিয়ানের বার্থডে উপলক্ষে পার্টি আছে আর ঐ পার্টিতেই আদ্রিয়ান আর অনিমার বিয়ের ডেট এনাউস হবে।

_______________________

স্নিগ্ধা একটু তাড়াতাড়িই নিজের হসপিটালের কাজ সেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে কারণ আজ বাড়িতে অনুষ্ঠান আছে তাই দ্রুত যেতে হবে। সব শেষ করে বেড়োতে নেবে হঠাৎ ওর কেবিনে ওর সেই ক্লাসমেট প্লাস কলিগ এসে বলল,

— ” স্নিগ্ধা ফ্রি আছিস।”

স্নিগ্ধা হেসে বলল,

— ” হ্যাঁ কাজ এমনিতে শেষ বাড়ি ফিরছিলাম কিছু বলবি?”

এদিকে রিক ওর কাজ শেষ করে স্নিগ্ধাকে ওর কেবিনে ডাকতে এসছিলো একসাথে যাবে বলে। কিন্তু ভেতরে এসে যা দেখলো তাতে ওর রক্ত গরম হয়ে গেলো। কারণ স্নিগ্ধাকে ঐ ছেলেটা ফুল দিয়ে প্রপোজ করছে। যদিও স্নিগ্ধা কিছু বলছেনা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। রিককে দেখে স্নিগ্ধা বলল,

— ” রিক দা তুমি?”

রিক দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

— ” ডিসটার্ব করলাম নাকি?”

ঐ ছেলেটা স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” স্নিগ্ধা আমি..”

স্নিগ্ধা শক্ত গলায় বলল,

— ” তুই এখন যা তোর সাথে পরে কথা বলবো।”

ছেলেটা কিছু বলতে চেয়েও বললনা চলে গেলো ওখান থেকে। রিক স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে ঠান্ডা গলায় বলল,

— ” বাড়ি যাবি তো? চল”

রিকের এই ঠান্ডা গলাও স্নিগ্ধার স্বাভাবিক লাগলো না। তবুও কিছু না বলে চলে গেলো রিকের সাথে সারারাস্তা একটাও কথা বলেনি রিক স্নিগ্ধার সাথে। রিক যতো চুপ করে আছে স্নিগ্ধার মনের ভয় ততোই বাড়ছে।

সন্ধ্যায় খুব বড় করে আদ্রিয়ানের বার্থডে সেলিব্রেট হলো। সকল প্রেস মিডিয়ার সামনে আদ্রিয়ান আর অনিমার বিয়ের দিন পনেরো দিন পর ঠিক করা হলো। সব ঠিক ই ছিলো কিন্তু স্নিগ্ধা ঝটকা খেলো তখন যখন ঐ একই দিনে ওর আর রিকের বিয়ের এনাউসমেন্ট করলো মানিক আবরার আর তাও স্নিগ্ধার বাবা মায়ের সামনে। কারো চোখ মুখেই অবাক হওয়াল ছাপ নেই মানে সবাই সবটা জানে।স্নিগ্ধা অবাক হয়ে রিকের দিকে তাকাতেই রিক ওর দিকে তাকিয়ে একটা বাঁকা হাসি দিলো। স্নিগ্ধার খুশি হওয়ার কথা হলেও ও খুশি হতে পারছেনা কারণ ওর মাথায় অন্যকথা ঘুরছে।

______________________

রাতে রিক ওর রুমে বসে কাজ করছে হঠাৎ স্নিগ্ধা ওর রুমে এসে বলল,

— ” কেনো করলে এটা?”

রিক স্বাভাবিকভাবেই কাজ করতে করতে বলল,

— “কোনটা?”

স্নিগ্ধা বিরক্ত হয়ে বলল,

— ” রিকদা আমি বিয়ের কথা বলছি!”

রিক ভ্রু কুচকে স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” বিয়ে কেনো করে মানুষ?”

স্নিগ্ধা একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,

— ” তুমিতো আমাকে ভালোবেসে বিয়ে করছোনা? করছো নিজের জেদ রাখতে। আমার ওপর অধিকার খাটাতে, আমি তুমি ছাড়া অন্য কোনো ছেলের কাছে যাই সেটা তোমার সহ্য হয়না জাস্ট সেইজন্যে করছো।”

রিক এবার রেগে স্নিগ্ধার দুই বাহু ধরে বলল,

— ” হ্যাঁ আমার সহ্য হয়না। অন্যকাউকে তোর সাথে দেখতে পারিনা আমি কারণ আমি ভালোবাসি তোকে। ইয়েস! আই লাভ ইউ। এতদিন বুঝতে পারলেও স্বীকার করতে চাইতাম না বাট আজ আমি বলতে বাধ্য যে আই লাভ ইউ।”

স্নিগ্ধা তো নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছেনা। সবকিছু সপ্ন মনে হচ্ছে। রিক নিজে ওকে বলছে এসব। রিক স্নিগ্ধার কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলল,

— ” তুইতো ভালোবাসিস আমাকে তাইনা? এটা জেনেও যে আমি অনিকে ভালোবাসি। হ্যাঁ বাসি ওকে ভালো এখনও বাসি তবে সারাজীবন বাসবো। তবে সেটা আর পাওয়ার আশায় না। প্রথম ভালোবাসা কেউ ভুলতে পারেনা, আমিও পারবোনা ও আমার মনে থাকবে ওর নিজের জায়গায় কিন্তু তুই তোর নিজের জায়গা করে নিয়েছিস আমার মনে। আর তোর সাথেই আমি আমার বাকি জীবণটা কাটিয়ে দিতে চাই। দিবিনা আমাকে সেই সুযোগ?”

স্নিগ্ধা কিছু না বলে জরিয়ে ধরলো রিককে। রিকও নিজের সাথে জরিয়ে ধরলো স্নিগ্ধাকে। আজ আরেকটা নতুন ভালোবাসার সূচনা হলো, নতুন সম্পর্ক, নতুন অনুভূতি, বহু কাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত।

______________________

এভাবেই পনেরো দিন কেটে গেলো। অনিমা আর আদ্রিয়ানের সম্পর্ক আরো গভীর হয়েছে এই কয়েকদইনে। রিকও নিজের অতীতকে পাশে রেখে শুধু স্নিগ্ধাকে নিয়েই নিজের জীবণ সাজানোর চেষ্টায় আছে আর পারছেও।

আজ অনিমা আদ্রিয়ান আর রিক স্নিগ্ধার গায়ে হুলুদ। সন্ধ্যা হয়ে গেছে। অনিমা একাই ব্যালকনির রেলিং ধরে শূন্য আকাশে তাকিয়ে আছে স্হির দৃষ্টিতে । পরোনে হলুদ শাড়ি, খোলা চুল, হাতেল লাল কাঁচের চুড়ি মুখে হালকা সাজ। কিন্তু মনে একটুও শান্তি নেই। বাতাসে উড়ছে ওর উন্মুক্ত চুল। আদ্রিয়ান ধীর পায়ে এসে দাঁড়ালো ওর পাশে। সব ঠিকই ছিলো কিন্তু বিকেলের ঘটনাটাই সব এলোমেলো করে দেওয়ার জন্যে যথেষ্ট। ভয় হচ্ছে আদ্রিয়ানের খুব বেশি ভয় হচ্ছে। সত্যিই কী সব এলোমেলো হয়ে যাবে? আদ্রিয়ান কাঁপা কাঁপা হাতে অনিমার কাধে হাত রাখতেই অনিমা হাতটা সরিয়ে আদ্রিয়ানের হাতে একটা ডাইরী ধরিয়ে দিলো। ডাইরীটা দেখে আদ্রিয়ান চমকে উঠলো। অনিমা আদ্রিয়ানের চোখে চোখ রেখে বলল,

— ” ভেবেছিলাম কোনোদিন জিজ্ঞেস করবোনা আপনাকে। বলার হলে আপনি নিজেই বলবেন। তবে আজ আমি জিজ্ঞেস করতে বাধ্য হচ্ছি। কে আপনি? আব্বুর সাথে আপনার কী সম্পর্ক ছিলো? আপনি কী শুধুই একজন রকস্টার? নাকি অন্যকিছু? আপনার আসল পরিচয় কী?”

আদ্রিয়ান চোখ বন্ধ করে একটা শ্বাস নিলো আর চাইলেও কিছু লুকানো সম্ভব না। বিকেলের ঘটনাটা তো আছেই তারওপর এই ডাইরী। আজ ওকে সব বলতেই হবে। তবে দেখার এটাই যে সব শুনে অনিমা কী করবে? কী হবে এরপর? সব শেষ হয়ে যাবে? নাকি নতুন করে সব শুরু হবে।

#চলবে…

( রি-চেইক হয়নি। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ