Monday, October 6, 2025







বর্ষণের সেই রাতে ❤ পর্ব- ৪৬

বর্ষণের সেই রাতে ❤
পর্ব- ৪৬
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

.
আদ্রিয়ান সকালের ব্রেকফাস্ট করে বেরোনোর জন্যে সবে প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমন সময় কেউ পেছন থেকে বলে উঠল,

— ” স্যার।”

ডাকটা শুনে চমকে উঠলো আদ্রিয়ান। দ্রুত পেছনে ঘুরে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যাক্তিটিকে দেখে মুখে হালকা হাসি পুটে উঠলো ওর। বেশ খুশি হয়েই বলল,

— ” তুমি?”

অভ্র মুচকি হেসে বলল,

— ” কেনো স্যার? আশা করেননি তাইনা ?”

আদ্রিয়ান অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আর অভ্র অভিমানী কন্ঠে বললো,

— ” এতোটা পর করে দিলেন স্যার? এরকম একটা সময়ও আমাকে একটু ডাকার প্রয়োজন মনে করলেন না?”

আদ্রিয়ান একটু শ্বাস নিয়ে বললো,

— ” নাহ আসলে তুমি তোমার ফ্যামিলি ম্যামবার দের কাছে ছিলে তাই ভেবেছিলাম..”

অভ্র আদ্রিয়ান দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” আপনি হয়তো আমাকে আপনার পিএ ছাড়া আর কিছু ভাবেন না কিন্ত আমি আপনাকে আমার বড় ভাই ভাবী। তাইতো খবরটা কানে যেতেই চলে এলাম।”

আদ্রিয়ান নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে কোমরে হাত দিয়ে বলল,

— ” বেশি কথা শিখে গেছো আজকাল।”

তারপর আদ্রিয়ান হেসে অভ্রর দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। অভ্র সাথেসাথেই এসে জরিয়ে ধরলো আদ্রিয়ানকে। কিছুক্ষণ পর আদ্রিয়ান অভ্রকে ছেড়ে বলল,

— ” কিন্তু আমিতো আজ সুইডেন যাচ্ছি। তুমি..”

আর কিছু বলার আগেই অভ্র বলল,

— ” জানিতো, আমি সব ব্যবস্হা করে নিয়েছি স্যার। আমিও যাচ্ছি আপনার সাথে।”

আদ্রিয়ান অভ্রর কাধে হাত রেখে বলল,

— ” চালু আছিস খুব।”

অভ্র একটু ভাব নিয়ে বলল,

— ” সবই আপনার সাথে থাকার ফল।”

কিছুক্ষণ একেওপরের দিকে তাকিয়ে থেকে হেসে দিলো দুজনেই। এরপর আদ্রিয়ান, অভ্র আর আদিব রওনা দিলো সুইডেন এর উদ্দেশ্যে। আশিস দেশেই থেকে গেলো কারণ আদ্রিয়ানের এখানে কিছু কাজকর্ম সামলানোর দ্বায়িত্ব আদ্রিয়ান ওকেই দিয়ে গেছে।

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

অনিমা চুপচাপ জানালার কাছে বসে নিরবে চোখের জল ফেলছে। আদ্রিয়ানের কথা খুব বেশি মনে মরছে ওর। খুব বেশি মিস করছে ওকে। আদ্রিয়ানের শাসন, ভালোবাসা, খুনসুটি এসব কিছুই বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। ইচ্ছে করছে ছুটে চলে যেতে আদ্রিয়ানের কাছে। কিন্তু ওর কোনো উপায় নেই, ওর ইচ্ছে অনিচ্ছের ওপর কোনো কিছুই নির্ভর করছে না এই মুহূর্তে। ওর শব্দ করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে কিন্তু কোনো এক কারণে সেটা পারছেনা। হঠাৎ কেউ ওর কাধে হাত রাখতেই অনিমা ঘুরে তাকিয়ে দেখলো যে স্নিগ্ধা ওর পাশে এসে বসেছে। অনিমা স্নিগ্ধাকে জরিয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে দিলো। এই অল্প সময়েই বেশ ভালো বন্ডিং তৈরী হয়ে গেছে ওদের দুজনের । স্নিগ্ধা অনিমায পিঠে হাত বুলিয়ে বলল,

— ” কীরে? কাঁদছিস কেনো? আমি জানি তোর এখানে থাকতে ভালোলাগছেনা। আমি বলছি তো সব ঠিক হয়ে যাবে। একটু ধৈর্য ধর ”

অনিমা কাঁদতে কাঁদতে বললো,

— ” আদ্রিয়ান..”

এটুকু বলেই আবার কেঁদে দিলো ও। স্নিগ্ধা অবাক হয়ে গেলো। কার নাম বললো অনিমা? আর তার কথা ভেবে কাঁদছেই বা কেনো? অনিমাকে সোজা করে ওর দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” কে আদ্রিয়ান? কী হয়েছে এক্সাক্টলি বল তো?”

অনিমা প্রথমে কিছু না বললেও পরে স্নিগ্ধার জোরাজোরিতে সব খুলে বলল, স্নিগ্ধা কিছু না বলে অনিমাকে জরিয়ে ধরে বসে রইলো। আর মনে মনে ভাবতে লাগল,

— ” এটা তুমি কী করেছো রিক দা? আমি তো ভেবেছিলাম অনিমা তোমাকে ভালো না বাসলেও ওর মনে অন্য কেউ নেই। তাই আমি ভেবেছিলাম তোমাকে কোনোভাবে শুধরে নিয়ে অনিমাকে কন্ভেস করে নেবো। কিন্তু যেখানে ও অন্য একজনকে এতোটা ভালোবাসে সেখানে তুমি কীকরে এটা করতে পারো? তোমাকে ভালোবেসেও নিজের করে পাইনি আমি কিন্তু এই মেয়েটাকে ওর ভালোবাসার কাছ থেকে আলাদা হতে দেবোনা আমি। কিছুতেই না।”

অনিমার কান্না থেমে গেলেও শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছে। স্নিগ্ধা ওকে সরিয়ে অনিমার চুলগুলো ঠিক করে দিতে দিতে বলল,

— ” চুপ। অনেক কান্নাকাটি হয়েছে। এবার চল তো একটু কিচেনে গিয়ে কোনো একটা স্নাকস করে দুজন মিলে খাবো হুম? আর এসব নিয়ে ভাবিস না। সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি প্রমিস করছি ”

অনিমা চোখ মুছে মুচকি হেসে মাথা নাড়ল। তারপর স্নিগ্ধা ওকে নিয়ে কিচেনে চলে গেলো। স্নিগ্ধা এরকমি করে, বিভিন্ন কিছুর মাধ্যমে ব্যাস্ত রাখে অনিমাকে। কখনো ওকে নিয়ে রান্না করে, কখনো কিছু একটা খেলে, কখনো অনলাইনের বিভিন্ন ভিডিও দেখে। এরকম নানা রকম কিছু করে খুশি রাখার চেষ্টা করে অনিমাকে। দুজনের বাস্তবিক স্বভাব এক হওয়ার কারণেই ওদের বন্ডিং তৈরী হতে সময় লাগে নি। অনিমা আর সিগ্ধা মিলে চা আর পাকোরা বানাচ্ছে। হঠাৎ রিক কিচিনে এলো। রিক কে দেখে অনিমার মুখের হালকা হাসিটুকুও মিলিয়ে গেলো। গোমড়া মুখ করে পাকোরা ভাজায় মন দিলো। যেটা রিকের চোখে পরলো আর ওর খারাপ ও লাগলো। স্নিগ্ধা ভ্রু কুচকে বললে,

— ” কী হলো রিক দা? মেয়েদের এখানে তোমার কী কাজ? আমরা রান্না করছি সো ডোন্ট ডিস্টার্ব।”

রিক উকি দিয়ে কী রান্না হচ্ছে সেটা দেখে বলল,

— ” হুমম। তো আমি কী একটু ভাগ পাবো? নাকি তোরা দুই রাক্ষুসী মিলেই খাবি।”

রাক্ষুসী বলাতেও অনিমার মধ্যে কোনো ভাবান্তর হলো না বরং ও ওর মতো করে কাজ করে যাচ্ছে। স্নিগ্ধা রেগে বলল,

— ” কীহ? আমাদের রাক্ষুসী বলা হচ্ছে?”

রিক একটা শ্বাস ফেলে বলল,

— ” আচ্ছা বাবা সরি। এবার পাবোতো একটু?”

স্নিগ্ধা মুখ ঘুরিয়ে খানিকটা ভাব নিয়ে বললে,

— ” হ্যাঁ যাও যাও পেয়ে যাবে।”

রিক ভ্রু কুচকে বলল,

— ” সিউর তো?”

স্নিগ্ধা বিরক্ত হয়ে বলল,

— “আরে বাবা বললাম তো পেয়ে যাবে। যাও তো এখন। এমন খাদক জীবণে দেখিনি বাবা।”

রিক হেসে দিয়ে চলে গেলো ওখান থেকে। স্নিগ্ধা কিছু একটা ভেবে অনিমার দিকে তাকিয়ে একটি হাসি দিয়ে বলল,

— ” তুই দেখতে থাক আমি একটু আসছি।”

বলেই কিচেন থেকে বেরিয়ে গিয়ে সোজা রিকের কাছে গিয়ে স্নিগ্ধা বলল,

— ” রিক দা?”

রিক সোফায় বসে স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” কিছু বলবি?”

স্নিগ্ধা রিকের পাশে বসে বলল,

— ” সাইক্রাটিস্ট এর সাথে কথা বলেছো?”

রিক একটা শ্বাস ফেলে বলল,

— ” এখানকার বেস্ট যিনি তিনি নেই এখন। কদিন পর আসবেন। তখনি দেখাবো ওকে।”

স্নিগ্ধা আর কিছু না বলে উঠে চলে গেলো অনিমার কাছে। কী আর বলবে এখন নতুন করে। এখন শুধু ডক্টর আসার অপেক্ষা। আরো একটা কাজও করা বাকি আছে ওর। সেটাও খুব গুরত্বপূর্ণ।

_______________________

এইদিকে কিছুক্ষণ আগেই সুইডেনে ল্যান্ড করলো আদ্রিয়ানরা। এখন আপাদত এখানে আদ্রিয়ানের পরিচিত একজনের একটা বিল্ডিং আছে। সেই বিল্ডিং এরই একটা এপার্টমেন্টে উঠেছে ওরা। আজকে দিনটা বেড়বেনা ওরা আর। আজ আগে রুমে বসেই রিক কোথায় থাকতে পারে এরকম জায়গা গুলোকে মার্ক করবে । আদ্রিয়ান, আদিব, অভ্র সোফায় বসে কফি খাচ্ছে। অভ্র ল্যাপটপে কাজ করছে। আদ্রিয়ান কফি মগে চুমুক দিতে দিতে বলল,

— ” রেয়ার যেসব জায়গা গুলো। মানুষ যেখানে কম থাকে। সেইসব জায়গাগুলোতেই ওদের থাকার চান্স বেশি।”

অভ্র থুতনিতে হাত রেখে বলল,

— ” হুম এইদেশে এরকম জায়গা মানে হলো আইসল্যান্ড। এরকম জায়গা আইসল্যান্ডেই আছে। ”

আদিব ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” তাহলে তো খুজে পাওয়াটা সহজ হবে।”

আদ্রিয়ান মগটা সাইডে রেখে বলল,

— ” এটা সুইডেন আদিব। এখানে দ্বীপের অভাব নেই।”

অভ্র আদ্রিয়ানের কথায় সম্মতি জানিয়ে বলল,

— “এক্সাক্টলি। সবগুলো খুজতে অনেকটা সময় লাগবে।”

আদ্রিয়ান সোফায় হেলান দিয়ে বলল,

— ” দ্বীপগুলোতে যাওয়ার জাহাজ আর এয়ারলাইন গুলোতে খোজ নিলেই পাওয়াটা সহজ হয়ে যাবে।”

ওরাও আদ্রিয়ানের কথা অনুযায়ী নিজেদের কাজে লেগে পড়লো আর আদ্রিয়ান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কফির মগে চুমুক দিলো। যা করার খুব তাড়াতাড়ি করতে হবে ওকে।

_____________________

আরো দুইটা দিন পার হয়ে গেলো। এর মধ্যে রিক অনিমার সাথে কোনোরকম খারাপ ব্যবহার করেনি। আর স্নিগ্ধার সাথে অনিমার সম্পর্কটাও অনেক বেশি ভালো হয়ে গেছে। কিন্তু হঠাৎ করেই মুড চেঞ্জ হয়ে যাওয়ার সমস্যাটা এখোনো অনিমার মধ্যে আছে।

রিক ওর রুমে বসে একমনে ভেবে চলেছে যে স্নিগ্ধা আসার পর অনিমার মধ্যের পরিবর্তন গুলো। খুব বেশি না হলেও এখন মাঝেমাঝে হালকা হাসি ফোটে ওর মুখে। একটু হলেও ভালো থাকে। আচ্ছা সত্যিই কী তাহলে ওই ভুল? ও নিজেই ইচ্ছাকৃতভাবে অনিমার জীবণ থেকে ওর খুব খুশি কেড়ে নিচ্ছে? তবে যাই হোক ও মনে মনে ঠিক করেই নিয়েছে যে অনিমার সাথে কোনো খারাপ ব্যবহার ও আর করবেনা। এসব চিন্তা করতে করতেই ওর ফোন বেজে উঠলো। স্ক্রিনে একবার তাকিয়ে ফোনটা রিসিভ করে বলল,

— ” হ্যাঁ মামা বলো?”

কবির শেখ রাগী কন্ঠে বললেন,

— ” কী আর বলব? আমার কোনো কথা শোনো তুমি? নাকি শোনার প্রয়োজন মনে করো?”

রিক ভ্রু কুচকে বলল,

— ” কীসব বলছো মামা? ”

কবির শেখ ঝাঝালো কন্ঠে বললেন,

— ” ভুলটা কী বলেছি? তোমাকে বললাম কতোবার যে স্নিগ্ধাকে ওখানে নিয়ে যেও না। কিন্তু না তুমিতো ঐ মেয়ের প্রেমে অন্ধ হয়ে গেছো তাইনা? তাই ওর ভালোর জন্যে আমার বারণ সত্যেও স্নিগ্ধাকে নিয়ে গেলে।”

রিক বিরক্ত হয়ে বলল,

— ” হয়েছে কী বলবে?”

কবির শেখ হতাশার একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললো,

— ” ঐ স্নিগ্ধা আদ্রিয়ানকে জানিয়ে দিয়েছে যে তোমারা কোন আইসল্যান্ডের কোথায় আছো?”

রিক অবাকের চরম সীমায় পৌছে বলল,

— ” হোয়াট?”

কবির শেখ বিরক্তি ঝেড়ে বললেন,

— ” এখন আর হোয়াট বলে কী হবে? যা করার তো করেই ফেলেছো। বারবার বলেছিলাম যে ঐ মেয়ের প্রেমে এতো গদগদ হয়ে যেওনা। এবার দেখলেতো আমার কথা না শুনে কী হলো? এখন পারলে আদ্রিয়ান আসার আগেই অনিমাকে ওখান থেকে সরাও। এবার অন্তত বুঝেছো তোমার খারাপের জন্যে বলিনা কিছু? তাই পারলে আমার কথাটাই শোনো।”

রিক রাগী স্হির কন্ঠে বলল,

— ” রাখছি।”

মানুষ ছোটবেলা থেকে যেরকম পরিবেশ আর পরিস্হিতে বেড়ে ওঠে স্বভাবত সে সেইরকমি তৈরী হয়, সাইকোলজি সেটাই বলে। আর কিছু ক্ষেত্রে ছোট বেলা থেকেই কিছু মানুষের দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার স্বভাব থেকে যায় অনেকের। যেমন কারো কাছে নিজের মায়ের কথাই চিরন্তন সত্য মনে হয়, আবার বাবার উপদেশই সবচেয়ে সঠিক মনে হয়, নিজে থেকে একবার বিবেচনা করার ইচ্ছেই জাগেনা। রিকের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা সেরকমি হয়েছে, ছোটবেলা থেকেই ওর মামার দ্বারা একটু বেশিই প্রভাবিত ও। যা চাইলেও হুট করে ছাড়া সম্ভব না। রিক হনহনে পায়ে অনিমার রুমে গিয়ে দেখে যে স্নিগ্ধা অনিমার সাথে বসে কথা বলছে। রিক সোজা গিয়ে স্নিগ্ধার হাত ধরে দাড় করিয়ে বলল,

— ” তুই আদ্রিয়ানকে জানিয়েছিস আমরা কোথায় আছি?”

স্নিগ্ধা অবাক হয়ে তাকালো রিকের দিকে। ও বুঝতে পেরে গেছে যে রিক সব জেনে গেছে আর এখন মিথ্যে বলে কোনো লাভ নেই। তাই কাঁপা কন্ঠে বলল,

— ” হ্যাঁ বলেছি।”

রিক স্নিগ্ধার গালে জোরে একটা থাপ্পড় মেরে দিলো। অনিমা চমকে গেলো পুরো। স্নিগ্ধা গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। রিক দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

— ” তোকে বিশ্বাস করাটাই আমার ভুল ছিলো।এতোবড় সাহস তোর। যাই হোক…”

বলে অনিমার কাছে যেতেই অনিমা পিছিয়ে গেলো। রিক ওর কাছে গিয়ে হাত ধরে বলল,

— ” চলো এখান থেকে।”

অনিমা শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদোকাঁদো গলায় বলল,

— ” আমি কোথাও যাবোনা।”

রিক রাগে গজগজ করতে করতে বলল,

— ” দেখো এই মুহূর্তে মেজাজ খুব খারাপ আছে আমার। তাই আমাকে রাগীও না তোমার জন্যেই খারাপ হবে। চলো!”

অনিমা এবারেও জেদ ধরে বলল,

— ” অামি কোথাও যাবোনা। যদি পারেন তো আদ্রিয়ান আসার পর ওর সামনে দিয়ে নিয়ে যান। আমি জানি আদ্রিয়ান খুব তাড়াতাড়ি চলে আসবে।”

রিকের রাগ এবার সীমা পার হয়ে গেলো। রাগে অনিমার হাত মুচড়ে ধরে কাছে এনে চেঁচিয়ে বলল,

— ” আদ্রিয়ান, আদ্রিয়ান, আদ্রিয়ান। সারাক্ষণ শুধু ওর নাম যপতে থাকো তাইনা? হ্যা? কেনো বলো? কেনো? ”

অনিমা কাঁদতে কাঁদতে বলল,

— ” হ্যাঁ আর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত যপে যাবো। কারণ আমি ওকে ভালোবাসি খুব ভালোবাসি।”

রিক অনিমার ভালোবাসি কথায় আরো রেগে গেলো। ও ধাক্কা দিয়ে অনিমাকে ফেলে নিজের বেল্টে হাত দিতেই স্নিগ্ধা চেঁচিয়ে বলল,

— ” নাহ রিক দা। একদম না।”

রিক গিয়ে স্নিগ্ধার হাত ধরে টেনে রুমের বাইরে ধাক্কা দিয়ে পাঠিয়ে দরজা লক করে দিলো। স্নিগ্ধা দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে বলল,

— ” রিক দা প্লিজ ওর কোনো দোষ নেই এখানে। প্লিজ মেরোনা ওকে।”

রিক বেল্ট খুলতে খুলতে অনিমার দিকে এগোতে এগোতে বলল,

— ” সারাদিন আদ্রিয়ান নাম যপবে তাইনা? আজকে আদ্রিয়ানের নামটাই ভুলিয়ে দেবো তোমাকে।”

অনিমা বসা অবস্হাতেই কাঁদতে কাঁদতে হালকা পিছিয়ে যেতে লাগল। কিছু বলবে সেই শক্তি নেই ওর মধ্যে। কেমন যেনো মাথা ঝিম ধরে আসছে ওর। সব ঝাপসা লাগছে। স্নিগ্ধা সমানে দরজা ধাক্কিয়ে যাচ্ছে। রিক বেল্ট দিয়ে আঘাত করতে যাবে তখনি খেয়াল করলো অনিমার নাক দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। সেটা দেখে রিকের হাতের বেল্ট পরে গেলো। রিক তাড়াতাড়ি অনিমার সামনে বসে ওকে ধরে বলল,

— ” এই অনি কী হয়েছে তোমার? দেখো ত্ তুমি ভয় পেয়োনা। মারবোনা আমি তোমাকে। আই সোয়ার।”

কিন্তু অনিমার নাক দিয়ে রক্ত বেড়িয়েই যাচ্ছে। আর শরীর ছেড়ে দিচ্ছে ও । রিক তাড়াতাড়ি উঠে দরজা খুলে স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” স্নিগ্ধু অনি..”

স্নিগ্ধাকে আজ এতোবছর পর রিক স্নিগ্ধু বলে ডেকেছে কিন্তু স্নিগ্ধার সেটা নিয়ে ভাবার সময় নেই। ও তাড়াতাড়ি ভেতর গিয়ে অনিমার অবস্হা দেখে চেচিয়ে বলল,

— ” কী করেছো তুমি ওর সাথে?”

রিক কাঁপাকাঁপা গলায় বলল,

— ” আমি জ্ জানিনা ও কীভাবে, কী হ্ হয়েছে ওর? ”

স্নিগ্ধা অনিমাকে চেক করছে এরমধ্যেই অনিমা আস্তে করে চোখ বন্ধ করে ফেলল। রিকের বুকের ভেতরে ধক করে উঠল সেটা দেখে । রিক দ্রুত গিয়ে অনিমার মাথাটা কোলে নিলো। নাক থেকে বের হওয়া রক্তে অনিমার মুখ রক্তাক্ত হয়ে গেছে, রিক অনিমার গালে হাত দিয়ে ঝাকিয়ে বলল,

— ” অনি? এই অনি? ত্ ত্তাকাও? দেখো বেল্ট কিন্তু এখানেই আছে আমি রেগে গেলে কিন্তু সত্যিই মারবো। ওঠো ড্যাম ইট? আচ্ছা ফাইন তুমি যা চাইবে তাই হবে। আমি আর আটকে রাখবোনা তোমাকে। যেখানে খুশি যেতে পারো তুমি। আই প্রমিস। তবুও তাকাও প্লিজ…।”

কিন্তু অনিমা কোনো রেসপন্স করছেনা। স্নিগ্ধাতো কেঁদেই দিয়েছে। আর এরমধ্যেই কেউ চিৎকার করে উঠল,

— ” অনি..”

চিৎকারটা শুনে রিক স্নিগ্ধা দুজনেই চমকে তাকালো পেছনের দিকে।

#চলবে…

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ