Monday, October 6, 2025







বর্ষণের সেই রাতে ❤ পর্ব- ৪২

বর্ষণের সেই রাতে ❤
পর্ব- ৪২
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

.
আদ্রিয়ানের খুব বেশি অসস্তি হচ্ছে। কিছুতেই শান্তি পাচ্ছেনা। আজ ফিনালে বাট কন্টেসস্টেন্ডদের গানের প্রতি কনসেন্ট্রেট করতে পারছেনা ও। ওর মন বলছে অনিমা ভালো নেই বাট শো ছেড়ে ওঠাও সম্ভব না। পাশ থেকে অন্য একজন জাজ বেশ কয়েকবার আদ্রিয়ানকে জিজ্ঞেস করেছে ‘আর ইউ ওকে?’ উত্তরে আদ্রিয়ান শুধু জোরপূর্বক একটা মুচকি হাসি দিয়েছে। কিন্তু ওর টেনশনে অবস্হা এতোটাই খারাপ যে ঠিকভাবে বসতে অবধি পারছেনা। কোনোমতে শো টা কম্প্লিট করে আদ্রিয়ান সেট থেকে একপ্রকার দৌড়ে বেড়িয়ে গেলো, বাকিরা একটু অবাক হলেও ভাবলো যে আর্জেন্ট কিছু হয়তো। রুমে গিয়ে পকেট থেকে ফোনটা বের করে অনিমার নাম্বারে কল করল। কিন্তু অনেক্ষণ ফোন বাজার পরেও কেউ ফোনটা রিসিভ করলোনা। আদ্রিয়ান চারপাঁচ বার একটানা কল করার পরেও ফোন রিসিভ হলোনা ওপাশ থেকে। আদ্রিয়ান এবার ওর বাড়ির সার্ভেন্টকে কল করলো। ফোন বাজার কিছুক্ষণের মধ্যেই কল রিসিভ করলো। কল রিসিভ করতেই আদ্রিয়ান উত্তেজিত কন্ঠে বলল,

— ” তোমার ম্যাম কোথায়?”

মেয়েটি স্বাভাবিক ভাবেই বলল,

— ” স্যার সকালে ব্রেকফাস্ট দিয়ে আসার সময় তো দেখলাম ম্যাম রুমেই ছিলো। আর এখন লাঞ্চ ও নিয়ে যাচ্ছি।”

আদ্রিয়ান একটা শ্বাস ফেললো তবুও মানসিকভাবে শান্তি পেলোনা তাই বলল,

— ” রুমে গিয়ে ম্যামকে বলো আমার ফোনটা রিসিভ করতে আর খাবারে সাথে ঔষধগুলো ঠিকভাবে মনে করে মেশাচ্ছো তো?”

মেয়েটা নিচু কন্ঠে বলল,

— ” জ্বী স্যার।”

আদ্রিয়ান গম্ভীর কন্ঠে বলল,

— ” হুম যাও।”

ফোনটা রেখেই আদ্রিয়ান পায়চারী করতে লাগল কিছুক্ষণ পর ঐ সার্ভেন্ট আদ্রিয়ানকে আবার ফোন করলো। ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে মেয়েটি বলল,
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
— ” স্যার ম্যাম সারাবাড়িতে কোথাও নেই।”

আদ্রিয়ান অবাক হয়ে চড়া আওয়াজে বলে উঠলো,

— ” নেই মানে কী? ছাদ গার্ডেন এরিয়া সব চেইক করেছো?”

মেয়েটি কাঁদোকাঁদো গলায় বলল,

— ” স্যার আমরা সবাই মিলে সব জায়গায় খুজেছি কিন্তু ম্যাম নেই।”

আদ্রিয়ান চিৎকার করে বলল,

— ” নেই মানে কী ড্যাম ইট? তোমরা কী করছিলে? যদি ওর কিছু হয়না তাহলে একটাকেও বাঁচতে দেবোনা আমি মাইন্ড ইট।”

বলেই ফোনটা কেটে দিলো আদ্রিয়ান তারপর আরেকটা কল করলো। কলটা রিসিভ করতেই আদ্রিয়ান বললো,

— ” আপনাদের দুটো নাম্বার পাঠাচ্ছি রাইট নাও আমাকে নাম্বারগুলোর লোকেশন টা সেন্ট করুন।”

বলেই ফোনটা রেখে সোফায় বসে পরলো আদ্রিয়ান। কিছুক্ষণ পর আদ্রিয়ানের ফোনে মেসেজ এলো। মেসেজটা দেখেই আদ্রিয়ান অবাক হয়ে গেলো কারণ অনিমার লাস্ট লোকেশন আশ্রমের দিকেই ডেডিকেট করছে। আর রিকের নাম্বারের লোকেশনটা রিকের বাড়িতেই। আদ্রিয়ান দুইহাতে মুখ চেপে ধরে বলল,

— ” বারবার বলেছিলাম বাড়ি থেকে বেরিয়োনা কিন্তু মেয়েটা… কিন্তু ও তো আমার কথা অমান্য করার মেয়েনা? তাহলে কী এমন হয়েছিলো?”

কিছু একটা ভেবে আদ্রিয়ান আবার একটা কল করলো। তারপর বলল,

— ” রিক চৌধুরী কখন বেড়িয়েছে বাড়ি থেকে?”

ওপাশ থেকে একটা লোক বলে উঠলো,

— ” সকালে বেড়িয়েছেন আর তো ফেরেনি স্যার।”

আদ্রিয়ান আর কিছু না বলে ফোনটা কেটে সোফায় একটা পাঞ্চ মারলো। তারমানে রিক ওর ইউসিয়াল সিমটা বাড়িতেই রেখেছ যাতে আদ্রিয়ান ট্রাক করতে না পারে। আদ্রিয়ান আবার সেই প্রথম লোকটাকে ফোন করে বলল,

— ” প্রথম যেই নাম্বারটা দিয়েছি তার লাস্ট কার সাথে কথা হয়েছে কী কথা হয়েছে ইমিডিয়েটলি জানাও আমাকে।”

ফোনটা রেখে আদ্রিয়ান চড়া আওয়াজে ওর ট্যামপোরারি সেক্রেটারি কে ডাকল। লোকটা হন্তদন্ত হয়ে এসে বললো,

— ” ইয়েস স্যার।”

আদ্রিয়ান ব্যাগ গোছাতে গোছাতে বলল,

— ” আমি আজকেই ফিরছি। ইমারজেন্সি ফ্লাইটের ব্যাবস্হা করো, ফাস্ট!”

লোকটি ইতোস্তত করে বললো,

— ” কিন্তু স্যার রাতে পার্টি আছে।”

আদ্রিয়ান অগ্নিদৃষ্টি নিয়ে লোকটার দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বললো,

— ” গো টু হেইল উইথ ইউর পার্টি স্টুপিড।”

লোকটা হকচকিয়ে গিয়ে বলল,

— ” ও্ ওকে স্যার আমি যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব এরেঞ্জমেন্ট করছি।”

বলেই একপ্রকার পালিয়ে গেলো। আদ্রিয়ান পাগলের মতো করছে একেকটা মুহূর্ত ওর কাছে বিষের মতো লাগছে। হোটেল রুমের সবকিছু ভাঙতে শুরু করলো ও। দুএক এসছিলো ওকে শান্ত করার চেষ্টায় কিন্তু ব্যর্থ হয়ে ফিরে গেছে। আদ্রিয়ানের এখন নিজের ওপর রাগ হচ্ছে যে কেনো এলো ও এখানে?

_____________________

একটা ফাঁকা রুমের ফ্লোরে বসে নিরবে কাঁদছে অনিমা। ওর হাত মুখ এখনো বাঁধা। ঘন্টাখানেক আগে রিক ওর ফার্ম হাউজের একটা রুমে বসিয়ে রেখে গেছে ওকে। কী হতে চলেছে ও নিজেও জানেনা। রিকের মাথায় কী চলছে ও সেটাও বুঝতে পারছেনা। আদ্রিয়ান ওকে বারবার বারণ করেছিলো না বেরোতে, কেনো শুনলোনা ও? ওই বা কী করতো যাকে নিজের মায়ের মতো ভালোবাসে সেই মানুষটার বিপদের কথা শোনার পর ওর মাথায় আর কিছুই ছিলোনা শুধু মাদারের কথাই মাথায় ঘুরছিলো ওর। আদ্রিয়ানকে কী ও আর দেখতে পাবে কোনোদিন? নাকি সারাজীবন ওকে এই নরকেই কাটিয়ে দিতে হবে? এসব চিন্তা করতে করতে দরজা খোলার আওয়াজে চমকে উঠলো ও। রিক এসে অনিমার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো। অনিমা চোখ নামিয়ে নিলো তারপর ওর সামনে হাটু ভেঙ্গে বসে বলল,

— ” তোমার বাবা খুব বুদ্ধিমানের মতো কাজ করে গেছেন তোমার পাসপোর্ট করে রেখে গিয়ে।”

অনিমা ভ্রু কুচকে তাকালো রিকের দিকে রিক হঠাৎ এই কথা কেনো বললো সেটাই বুঝতে পারছেনা ও। রিক অনিমার মুখের কাপড় টা নামিয়ে দিয়ে বলল,

— ” কিছু বলবে?”

অনিমা কিছু না বলে শুধু তাকিয়ে আছে রিকের দিকে চোখ দিয়ে ধীর গতিতে পানি পরছে ওর। রিক ওর চোখ থেকে পানি নিজের আঙ্গুলে নিয়ে বলল,

— ” এটা দেখতে যে আমার খুব বেশি ভালোলাগে তা কিন্তু না। কিন্তু কী করবো বলো? তুমি এমন সব আজ করো যে আমি নিজেকে ঠিক রাখতেই পারিনা, মাথা গরম করে দাও। এইযে এখন যেভাবে শান্ত হয়ে বসে আছো এভাবে থাকলে আমি তোমার গায়ে হাত তোলা তো দূরের কথা ধমক পর্যন্ত দেবোনা। প্রমিস!”

অনিমা মুখ ঘুরিয়ে নিলো। ওর কেমন জানিনা ইরেটেশন হচ্ছে। ভয়ের চেয়ে বেশি বিরক্ত লাগছে ওর। ওর মাথাটা কেমন যেনো ঝিম ধরে আছে, অদ্ভূত লাগছে। রিক অনিমার ফেস এক্সপ্রেশন দেখে ভ্রু কুচকে ফেললো। ব্যাপারটা কী হলো সেটাই বুঝলোনা ও, এরকম করার তো কথা না। তবুও রিক সেদিকে পাত্তা না দিয়ে ওর একজন লোককে ডাকতেই লোকটা একটা ইনজেকশনে সিরিঞ্জ হাতে নিয়ে এলো। অনিমা সেটা দেখে একটু ঘাবড়ে গেলেও কোনো রিয়াক্ট করলোনা কারণ ও জানে যে রিক যেটা করার সেটা করবেই। রিক ইনজেকশন পুশ করতে অনিমার হাতের খুলে হাতটা ধরে সামনে আনতেই অনিমা চোখ খিচে বন্ধ করে নিলো। রিক আরো একবার অবাক হলো অনিমার রিয়াকশন দেখে, ওর সবকিছু এতোটা ইজিলি মেনে নেওয়াটা ওর নরমাল লাগছেনা। ও অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো অনিমার দিকে। তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে কাঁপাকাঁপা হাতে খুব ধীরেই ইনজেকশনটা পুশ করলো অনিমার হাতে। অনিমার বন্ধ করে রাখা চোখ দিয়ে একফোটা জল গড়িয়ে পরলো। রিক শুধু দেখছে অনিমাকে কিছুতো গন্ডগোল আছে কিন্তু সেটা কী? রিক এসব ভাবতে ভাবতেই অনিমা ঢলে পরলো। রিক তাড়াতাড়ি ধরে ফেললো ওকে। ও জানতো এমন কিছুই হবে কারণ ইনজেকশনটা এইজন্যেই দিয়েছে। সবকিছু ওর মামার প্লান মতই হচ্ছে কিন্তু রিক শান্তি পাচ্ছেনা। অনিমার আজকের আচরণ বেশ ভাবাচ্ছে ওকে। এমন কিছু কী আছে যেটা ও জানেনা? হঠাৎ এতো শান্ত কেনো হয়ে গেলো মেয়েটা?

_____________________

রাতে বাংলাদেশে এসে ল্যান্ড করলো আদ্রিয়ান। ও আদিব, আশিস , তীব্র, অরু, স্নেহা সবাইকে বলে রেখেছে ওরা এয়ারপোর্টে বসে আছে গাড়ি নিয়ে। আদ্রিয়ান ওর সিকিউরিটি গার্ডদের অন্যগাড়িতে পাঠিয়ে দ্রুতপদে তীব্ররা যেই গাড়িতে আছে সেই গাড়ির কাছে আসতেই তীব্র ড্রাইভিং সিট ছেড়ে ফ্রন্ট সিটে বসে পরলো আর আদ্রিয়ান ড্রাইভিং সিটে বসে সাথে সাথেই গাড়ি স্টার্ট দিলো। আদ্রিয়ানের চোখ মুখ ভীষণ লাল হয়ে আছে, যে কেউ ওর মুখ দেখলে এখন ভয় পাবে ।অরু আর স্নেহা কেঁদেই যাচ্ছিলো কিন্তু আদ্রিয়ানের চেহারা দেখে ওদের কান্না বন্ধ হয়ে গেলো। আদ্রিয়ান গাড়িটা সবার আগে মাদারের আশ্রমে নিলো। আশ্রমের ভেতরে গিয়ে দেখলো ওখানে পুরো নিরব পরিবেশ, সবকিছুই থমথমে হয়ে আছে আদ্রিয়ান হনহনে পায়ে ভেতরে ঢুকলো পেছন পেছন ওরাও গেলো। ভেতরে গিয়ে দেখে মাদার ওনার চৌকিতে মাথা নিচু করে বসে আছে। আদ্রিয়ান সোজা ওনার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে চেচিয়ে বলল,

— ” মাদার শব্দের অর্থ মা হয় তাইনা? কোন মা এরকম করতে পারে? যে মেয়েটা আপনাকে মায়ের মতো ভালোবাসে তার সেই ভালোবাসার এরকম একটা সুযোগ কীকরে নিলেন?”

আদ্রিয়ানের কথায় মাদার স্হির দৃষ্টিতে তাকালো ওর দিকে তারপর কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলল,

— ” আমার কাছে আর কোনো উপায় ছিলোনা। আমি জানি আমি যা করেছি সেটা পাপ কিন্তু আর কোনো পথই খোলা ছিলোনা আমার কাছে।”

সকলেই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো মাদারের দিকে। মাদার সবটা খুলে বলতেই আদ্রিয়ান ওখানের দেয়াল ধরে দাঁড়িয়ে জোরে একটা পাঞ্চ মারলো দেয়ালে। তারপর ঝাঝালো কন্ঠে বলল,

— ” সব দোষ আমার। আমি যদি ফোনটা না দিতাম ওকে তাহলে এসব হতোনা। আমার মাথায় কেনো এলোনা যে এরকম কিছু হতে পারে? এতোটা ডাফার আমি?”

আদিব আদ্রিয়ানকে থামিয়ে দিয়ে বললো,

— ” এখানে তোর কোনো দোষ নেই। সব কিছু সবসময় সবার মাথায় আসেনা। তুই তো ওকে বলেছিলি বাড়ি থেকে না বেড়োতে এমনকি গার্ডদেরও বলে গেছিলি ওকে যাতে বেড়োতে না দেয়। তুই তো সবরকম ব্যবস্হাই করে গেছিলি কিন্তু অনিমা যে বেড়িয়ে যাবে সেটা কীকরে জানবি তুই? তুই তো মানুষ রোবট নস যে সবকিছু পার্ফেক্ট হবে, ভূল হতেই পারে এটা অস্বাভাবিক কিছু না।”

মাদার কান্নাজরিত কন্ঠে বললেন,

— ” অনির দোষ নেই এখানে। ও ওর মাকে দেখেনি কিন্তু আমাকে দেখেছে। ও আমাকে ততোটাই ভালোবাসে যতোটা একজন তার মাকে ভালোবাসে। আমার কিছু হয়েছে এটা শোনার পরেও ও নিজের কথা কিংবা বসে বসে ঠিক ভুল বিবেচনা করবে এটা ভাবাও চরম বোকামী। কারণ ও স্বার্থপর নয়। নিজের মায়ের বিপদ এটা শুনে কোন সন্তান ভাবতে বসে বলোতো? যদিও আজকালকার স্বার্থপর সন্তানদের কাছে সবই সম্ভব কিন্তু অনিমা সেরকম নয়।”

তীব্র চিন্তিত মুখ করে বলল,

— ” কিন্তু ভাইয়া যদি গার্ডদের অনিমাকে বেরোতে দিতে বারণ করে থাকে তাহলে অনি বেরোলো কীকরে ওদের ওকে আটকে রাখার কথা তাইনা?”

আদ্রিয়ান এবার কিছু না বলে ওখান থেকে বেড়িয়ে গেলো। ওরাও আদ্রিয়ানের পেছন পেছন ছুটলো। আদ্রিয়ান গাড়িতে বসে ড্রাইভ করছে সাত আট জায়গায় ফোন করে সম্ভাব্য প্রত্যেকটা জায়গায় রিকের ফার্মহাউজ, ফ্লাট, গোডাউন ,বাড়ি সব জায়গায় টিম বাই টিম খোজ চালাতে ওর্ডার দিয়ে দিলো। আদিব,আশিস অবাক না হলেও তীব্র অরুমিতা আর স্নেহা বেশ অবাক হলো যে একজন রকস্টার এর এতো সোর্স আর কানেকশন কীকরে?

_______________________

গোটা রাত পার হয়ে গেলো আর ঐ একরাতের মধ্যেই শহর অলমোস্ট চিরুনী তল্লাশি হয়ে গেছে বাট অনিকে পাওয়া যায়নি। গোট দেশের সম্ভাবো জায়গাতেও আদ্রিয়ান লোক লাগিয়েছে আজকে সারাদিনের মধ্যে সেখান থেকেও খবর চলে আসবে। পাগল পাগল অবস্হা হয়ে গেছে আদ্রিয়ানের এখন যেই ওর দিকে তাকাবে সেই ভয় পেয়ে যাবে। অরুমিতা আর স্নেহাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে, তীব্র আদ্রিয়ানের সাথেই ছিলো কিন্তু একটু আগে ওকেও বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে। আদিব আর আশিস অন্যসব জায়গায় গেছে খুজতে। আদ্রিয়ান এবার ওর ঐ বাড়িতে এলো। সাথে সাথে আদিব আর আশিস এসেও ঢুকলো। ওকে বাড়িতে আসতে দেখে গার্ডরা সবাই চমকে উঠলো কারণ আদ্রিয়ানের আজ রাতে আসার কথা ছিলো। আদ্রিয়ান আদিব আর আশিসকে নিয়ে সোজা ওর সিকরেট রুমে গেলো, তারপর ল্যাপটপ অন করে কালকের পুরো সিসি টিভি ফুটেজটা দেখলো আর যা দেখলো তাতে ওর কপালের রগ ফুলে উঠলেও মুখে ফুটে উঠলো এক ভয়ংকর হাসি। এই হাসি যতোটা রহস্যময় তার চেয়েও বেশি হিংস্র। আশিস অবাক হয়ে বলল,

— ” কতোবড় বেইমান? চল দুটোকে গিয়ে ধরি আগে।”

আদ্রিয়ান স্হির কন্ঠে বলল,

— ” লাভ নেই। পালিয়ে গেছে ওরা।”

বলেই আদ্রিয়ান আবার কোথাও একটা ফোন করে বলল,

— ” দুটো লোকের ডিটেইলস পাঠাচ্ছি। আজ রাতে ওদের আমি আমার সিকরেট হাউসে চাই।”

বলে ফোন কেটে দিলো। আদিব আর আশিস একে ওপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে একটা ঢোক গিললো কারণ ওরা জানে আজ ওই দুটোর কী ভয়ংকর পরিণতি হতে চলেছে।

_____________________

সন্ধ্যা হয়ে গেছে কিন্তু অনিমার কোনো খোজ পায়নি আদ্রিয়ান। এটুকু বুঝে গেছে যে অনিমা বাংলাদেশে নেই। ব্যাপারটা অনেকটাই জটিল হয়ে গেছে এবার। সোফায় বসে দুইহাতে মুখ চেঁপে ধরে বসে আছে ও। কী করবে কিচ্ছু বুঝতে পারছেনা। সবকিছু অসহ্য লাগছে। বারবার অনিমার মুখ ভেসে উঠছে। ওর ভীত চেহারা, মুখ ফুলিয়ে বসে থাকা, আবার ফিক করে হেসে দেওয়া, বাচ্চামো সব খুব বেশিই মনে পরছে। বরবার অনিমার বলা ‘ না গেলে হয়না?’ কথাটা কানে বাজছে। নিজের ওপরেই রাগ হচ্ছে ওর। চোখ দিয়ে নিরব ধারায় এক ফোটা জল গড়িয়ে পরলো। মুখ চেপে ধরেই অস্ফুট স্বরে বলে উঠলো,

— ” জানপাখি হয়ার আর ইউ?”

হঠাৎ কিছু মনে হতেই আদ্রিয়ান তাড়াতাড়ি সেই সাইকার্টিস্ট কে কল করলো যে অনিমার ট্রিটমেন্ট করছিলো। ফোন রিসিভ করতেই আদ্রিয়ান বলল,

— ” হ্যালো ডক্টর। আচ্ছা অনিমাকে যেই মেডিসিনগুলো দিয়েছিলেন যেগুলো খাবারের সাথে মিক্সট করে দেই আমি সেগুলো যদি হঠাৎ দেওয়া বন্ধ হয়ে যায় তো?”

ডক্টর অবাক হয়ে বললেন,

— ” হঠাৎ এই প্রশ্ন?”

আদ্রিয়ান বিরক্ত হয়ে শক্ত গলায় বলল,

— ” আনসার মি ডক্টর”

ডক্টর একটু গলা ঝেড়ে বললেন,

— ” দেখুন ওনি ভীষণভাবে ট্রমাটাইজড আর বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে উনি খুব স্কেয়ারড ও। যেই ঔষধ উনি নেওয়া শুরু করেছেন সেগুলো খুব পাওয়ারফুল তাই মাঝপথে সেটা একদিনের জন্যেও বন্ধ হয়ে গেলে ওনার মধ্যে চেঞ্জেস দেখা দেবে। উনি মেন্টলি অনেকটাই ডিসটার্বড হয়ে যাবেন, সমস্যাও দেখা দেবে অনেক। লাইক কখনো রিয়াক্ট করা বন্ধ করে দেবেন আবার কখনো ওভার রিয়াক্ট করবেন , কখনো শান্ত থাকবেন আবার কখনো ভাইলেন্ট হয়ে‍ যাবেন। ”

আদ্রিয়ান কিছু না বলে ফোন কেটে দিলো। মাথা টেনশনে ছিড়ে যাচ্ছে। কী করবে সেটাই বুঝতে পারছেনা। আদ্রিয়ান সামনের টি-টেবিলে জোরে একটা বাড়ি মেরে বলল,

— “রিক চৌধুরী তোমাকে অনেকবার সাবধান করেছিলাম আমি। তোমার লোকেরা আমাকে আঘাত করেছিলো কিচ্ছু বলিনি মুখে হাসি রেখেই শুধু একটু আহত করেছি, তুমি আমার দিকে শুট করেছিলে তবুও হাসতে হাসতেই তোমাকে সাবধান করেছিলাম। কিন্তু সেটাকে আমার দুর্বলতা ভেবে খুব বড় ভুল করে ফেলেছো তুমি। কারণ তুমি এটা জানোনা যে আদ্রিয়ানকে কেউ আঘাত করলে ও মুচকি হাসে কিন্তু সেই আঘাত যদি কেউ ওর জানপাখির ওপর করে তাহলে ও কতোটা ভয়ংকর হতে পারে। এবার আমার সেই রূপ দেখবে তুমি যেটা আমি কাউকে দেখাতে চাইনি।”

#চলবে…

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ