বর্ষণের সেই রাতে ❤
পর্ব- ৪১
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
.
আদ্রিয়ান সকাল বিভিন্নভাবে অনিমার মন ভালো করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। কারণ অনিমার মনটা কাল রাত থেকেই খুব খারাপ হয়ে আছে। আদ্রিয়ানের আজ সন্ধ্যায় ফ্লাইট সেই নিয়েই মন খারাপ অনিমার। আদ্রিয়ান আজ আর কোথাও বের হয়নি সারাদিন আজ অনিমার সাথে থাকবে তাই। কিন্তু অনিমা কিছু বলছেনা একদম চুপচাপ এককোনায় বসে আছে। আদ্রিয়ান গার্ডেন এরিয়াতে একটু কাজের জন্যে গেছিলো ফিরে এসে দেখে অনিমা রুমে নেই। আদ্রিয়ান একটা ছোট্ট নিশ্বাস ফেলে ছাদে চলে গেলো কারণ ও জানে যে অনিমা এখন ওখানেই আছে। ছাদে গিয়ে দেখলো যে ওর ধারণাই ঠিক অনিমা দোলনায় বসে আছে আর শূণ্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সামনের দিকে। আদ্রিয়ান মুচকি হেসে অনিমার পাশে গিয়ে বসলো। অনিমা আদ্রিয়ানের উপস্থিতি বুঝতে পেরেও বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। অাদ্রিয়ান অনিমার মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল,
— ” তুমি যদি এরকম মুখ করে রাখো তাহলে আমি কীকরে যাবো বলোতো?”
আদ্রিয়ানের কথায় অনিমা কোনো পতিক্রিয়া দেখালো না একই ভঙ্গিতে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। আদ্রিয়ান এবার একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কিছুক্ষণ চুপ থেকে নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল,
— ” জানপাখি?”
অনিমা হালকা নড়ে উঠলো। আদ্রিয়ানে এই ডাক উপেক্ষা করার ক্ষমতা নেই ওর মধ্যে। ও ছলছলে চোখে তাকালো আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান অনিমাকে এক হাতে জরিয়ে ধরে বলল,
— ” কাল রাত থেকে মুড অফ করে রেখে দিয়েছো। তোমাকে এভাবে দেখতে আমার ভালো লাগে বলোতো? এক সপ্তাহেরই তো ব্যাপার, তাছাড়া আমি যতোটুকু সময় ফ্রি থাকবো তোমাকে কল করবো, ভিডিও কলেও কথা বলবো। দেখবে একদম একা লাগবেনা।”
অনিমা আদ্রিয়ানকে আলতো হাতে জরিয়ে ধরে আবারও নিঃশব্দে কেঁদে দিলো। আদ্রিয়ান অনিমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
— ” আবার কাঁদে! এভাবে কান্না করলে আমার খারাপ লাগে তো।”
অনিমা মাথা তুলে আদ্রিয়ানের হাতেল বাহু দুই হাতে জরিয়ে ধরে বলল,
— ” না গেলে হয়না?”
আদ্রিয়ান স্হির দৃষ্টিতে তাকালো অনিমার দিকে। ওর এমনিতেই অনিমাকে ছেড়ে যেতে মোটেও ইচ্ছে করছেনা তার ওপর মেয়েটার করুণ অনুরোধ যে ওর মনে আরো ঝড় তুলে দিচ্ছে কিন্তু ও তো নিরুপায়। ওকে যেতেই হবে। এমন নয় যে ও না গেলে কেউ ওকে জোর করে নিতে পারবে কথাটা হলো ও না গেলে প্রডিউসারের প্লাস চ্যানেলের অনেকটা লস হয়ে যাবে। মাত্র একসপ্তাহের জন্যে কারো এতো বড় ক্ষতি করতে চায়না ও। অনিমার চোখের জল মুছে দিতে দিতে মুচকি হেসে বলল,
— ” দেখো কনট্রাক্ট টা অনেক আগের সাইন করা, আমি চাইলেই এটা ক্যান্সেল করতে পারবোনা। হয়তো আমার তেমন কিছু করতে পারবে না ওনারা, কিন্তু ওনারা এডভারটাইস করে ফেলেছেন। এখন যদি আমি না যাই তো ওনাদের অনেক বড় লস হয়ে যাবে। তুমি কী চাও সেটা?”
অনিমা আদ্রিয়ানের কাধে মাথা এলিয়ে দিয়ে চুপচাপ বসে রইলো আদ্রিয়ানের অনিমাকে এভাবে মন খারাপ করতে দেখে খুব বেশিই খারাপ লাগছে তাই কিছুক্ষণ ভেবে আদ্রিয়ান বলল,
— ” আমার কাছে তোমার চেয়ে বেশি ইম্পর্টেন্ট কিচ্ছু না। তাই যদি তুমি না চাও আমি যাবোনা। আমি ক্যান্সেল করে দিচ্ছি।”
বলে ফোনটা হাতে নিতেই অনিমা ওকে আটকে দিয়ে বললো,
— ” নাহ প্লিজ। সাতটা দিন তো আমি ঠিক কাটিয়ে দেবো। কিন্তু শুধু শুধু কারো ক্ষতি হলে সেটা ভালো হবেনা।”
আদ্রিয়ান মুচকি হেসে অনিমার মাথায় একটা চুমু দিলো। অনিমা চুপচাপ আদ্রিয়ানের বুকে মাথা রেখে বসে রইলো।
বিকেল বেলা আদ্রিয়ান রেডি হচ্ছে আর অনিমা আদ্রিয়ানের লাগেজ চেক করছে। আদ্রিয়ান রেডি হয়ে এসে বললো,
— ” সব ঠিক আছে?”
আদ্রিয়ান মাথা নিচু করেই নিচু আওয়াজে বলল,
— ” হুম।”
আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বলল,
— ” তাহলে চলো?”
আদ্রিয়ান আর অনিমা নিচে নেমে এলো। আদ্রিয়ান বাড়ির মেইন ডোর এর কাছে এসে অনিমার দিকে তাকিয়ে দেখলো অনিমা মুখ অন্ধকার করে দাড়িয়ে আছে। আদ্রিয়ান অনিমার দুই বাহু ধরে বলল,
— ” এখনো মন খারাপ করে থাকবে?”
অনিমা কিছু বলছেনা মাথা নিচু করে আছে চোখ ছলছল করছে ওর। আদ্রিয়ান অনিমার মুখটা তুলে উঁচু করে ধরল। আর সাথে সাথেই চোখ থেকে জল গড়িয়ে পরল। আদ্রিয়ান অনিমার চোখ মুছে দিতে দিতে বলল,
— ” যাওয়ার আগে তোমার এমন মুখ দেখে গেলে আমার জার্নিটাও খারাপ যাবে আর এই সাতটা দিনও। যাওয়ার আগে তোমার হাসি মুখটা দেখে যেতে দেবেনা আমাকে?”
অনিমা কোনোরকমে হাসার চেষ্টা করলো। আদ্রিয়ান মুচকি হেসে অনিমার কপালে বেশ সময় নিয়ে একটা চুমু দিয়ে বলল,
— ” বাই। সাবধানে থাকবে। আর বাড়ির বাইরে একদম বেড়োবেনা যা লাগবে সার্ভেন্টদের বলবে ওরা এনে দেবে, কিন্তু তুমি ভুলেও বাইরে যাবেনা। ”
অনিমা মাথা নেড়ে কাঁপা গলায় বাই বলল। আদ্রিয়ান অনিমাকে শক্ত করে নিজের সাথে জরিয়ে ধরে রেখে গালে আরেকটা চুমু দিয়ে বেড়িয়ে গেলো। অনিমা ফিরে সিড়ি পার করে দোতালায় উঠেও কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে আবার দৌড়ে নিচে নেমে ছুটে বাইরে চলে গেলো। গিয়ে দেখলো অাদ্রিয়ানের গাড়ি অলরেডি স্টার্ট হয়ে গেছে। অনিমা হতাশ ভাবে দাড়িয়ে রইলো। হঠাৎ আদ্রিয়ান গাড়ি থেকে মাথা বেড় করে হাত নেড়ে বাই বললো অনিমাকে। অনিমাও মুচকি হেসে হাত নেড়ে বিদায় নিলো ওকে ।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
এভাবেই তিনটা দিন কেটে গেলো। আদ্রিয়ান আর অনিমা দুজনেই দুজনকে ভীষণ মিস করেছে। প্রতি সেকেন্ডে একে ওপরকে মনে পরেছে। খেতে, শুতে সব কাজেই একে ওপরকে ভীষণভাবে মিস করে। তবে ফোনে যোগাযোগ হয় ওদের। আর এরমধ্যে রিক আগেই খবর পেয়েছে আদ্রিয়ানের বিদেশ যাওয়ার কথা টানা দুদিন চেষ্টা করেও আদ্রিয়ানের ঐ বাড়ির খোজ পেলেও ওখানে ঢুকতে পারেনি ও। এতটাই কড়া সিকিউরিটি যে ওর পক্ষেও ঢোকা সম্ভব নয়। রিক গম্ভীর ভাবে বসে ভাবছিলো এটাই সুযোগ অনিকে নিজের কাছে আনার কিন্তু কীকরে? ও তো ঢুকতেই পারছেনা ঐ বাড়িতে। পাশ থেকে কবির শেখ বলে উঠলেন,
— ” অনিকে কীকরে তুলে আনবে সেটাই ভাবছো তো?”
রিক ওর মামার দিকে স্হির চোখে তাকালো অর্থাৎ হ্যাঁ। কবির শেখ বললেন,
— ” দেখো বাবাই আমরা ঐ বাড়িতে ঢুকতে পারবোনা ঠিকি কিন্তু ওকে তো বেড় করতেই পারি তাইনা?”
রিক একটা শ্বাস ফেলে বলল,
— ” সেটা সম্ভব না মামা অনেক গার্ড আছে। এতোগুলো গার্ডকে কেনা সম্ভব নয়।”
কবির শেখ বললেন,
— ” এতোজনের কী দরকার দুই একজন যথেষ্ট।”
রিক অবাক হয়ে বললো,
— ” কীভাবে? মানে কী করে বের করবো ওকে?”
কবির শেখ বাঁকা হেসে রিকের দিকে তাকালেন আর রিক জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো কবির শেখ এর দিকে। কবির শেখ রিককে এমন একটা প্লান বললেন যাতে রিকের মুখেও হাসি ফুটে উঠলো। এরপরেই ওনাদের প্লানমাফেকই কেটেছিলো আরো তিনটে দিন।
______________________
অনিমা খাটে হেলান দিয়ে কানে হেডফোন গুজে গান শুনছে আর ফোনে গেইম খেলছে। আদ্রিয়ানকে এই ছয়দিন ভীষণভাবে মিস করেছে ও এখনও করছে। তাই যতোটা সম্ভব ব্যাস্ত রাখার চেষ্টা করে থাকে নিজেকে। আদ্রিয়ানের সাথে একটু আগেই কথা হয়েছে ওর কিন্তু ফোন রাখার পর আরো বেশি মিস করছে তাই গেইম খেলে মন অন্যদিকে নিতে চাইছে। হঠাৎ করেই ওর ফোন বেজে উঠলো। ফোন হাতে নিয়ে আশ্রমের নাম্বার দেখে অনিমার ভ্রু কুচকে গেলো। হঠাৎ এই সময় মাদার কেনো ফোন করবে? কাল রাতেই তো কথা হলো? অনিমা ফোনটা রিসিভ করে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে একটা বাচ্চা মেয়ের কন্ঠস্বর ভেসে এলো। মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে বলল,
— ” আপি!”
বলে আবারো শব্দ করে কাঁদতে শুরু করল মেয়েটি। অনিমা কন্ঠ শুনেই বুঝতে পারলো এটা তিন্নির কন্ঠ। তিন্নি ঐ আশ্রমেরই একজন মেয়ে। অনিমা যেই দেড় বছর ওখানে ছিলো তখন ওর সাথে বোনের মতোই সম্পর্ক হয়ে গেছে। অনিমা অবাক হয়ে বলল,
— ” তিন্নি কী হয়েছে সোনা? এভাবে কাঁদছিস কেনো?”
তিন্নি হিচকি দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল,
— ” আপি মাদার.. মাদারের..”
অনিমা উত্তেজিত হয়ে বলল,
— ” মাদারের কী হয়েছে? মাদার ঠিক আছেতো? হ্যাঁ? এই তিন্নি?”
তিন্নি এবারেও কাঁদতে কাঁদতে কোনোরকমে বললো,
— ” মাদার অনেক অসুস্হ হয়ে পরেছে প্লিজ আপি তুমি তাড়াতাড়ি এসো প্লিজ।”
অনিমা অবাক হয়ে বলল,
— ” তোরা মাদারকে হসপিটালে কেনো নিচ্ছেস না? আশ্রমে কেউ নেই?”
অনিমার কথার কোনো উত্তর না দিয়েই তিন্নি বললো,
— ” আপি তুমি প্লিজ তাড়াতাড়ি এসো। প্লিজ।”
অনিমা বেশ ঘাবড়ে গেলো, তারপর নিজেকে কোনোমতে সামলে বলল,
— ” তুই কান্না করিস না। মাদারকে তোরা দেখে রাখ আমি এক্ষুনি আসছি।”
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
অনিমা ফোন কেটে দিয়ে যেভাবে আছে ওভাবেই শুধু পার্স আর ফোনটা নিয়ে দৌড়ে বেড়িয়ে গেলো। ঐমুহূর্তের জন্যে ও ভুলে গেলো আদ্রিয়ানের সতর্কবার্তা, রিকের কথা। ওর মাথায় এখন শুধু মাদারের কথাই চলছে। আজ ও বেঁচে আছে শুধু মাদারের জন্যেই সেদিন যদি মাদার ওকে রাস্তা থেকে তুলে নিজের কাছে না নিতো তাহলে সেদিন ওর সাথে কী হতো সেটা কল্পনা করলেও কেঁপে ওঠে ও। আর আজ সেই মাদারের বিপদে ও কীকরে বসে থাকবে? গেইটের কাছে যেতেই ঐ দুজন গার্ড বলল,
— ” ম্যাম কোথাও যাবেন?”
অবাক করা বিষয় অনিমা জায়গার নাম বলতেই তারা অনিমাকে আটকালো না বরং ওকে দাঁড়াতে বলে একজন ড্রাইভার ডেকে গাড়িতে উঠিয়ে দিলো। অনিমার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। ও শুধু ভাবছে কতোক্ষণে আশ্রমে পৌছাবে। মাদারকে খুব বেশিই ভালোবাসে ও, ওনার কিছু হয়ে গেলে ও সেটা নিতে পারবে না। আশ্রমের সামনে গাড়ি থামতেই গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে ভেতরে চলে গেলো অনিমা। ভেতরে গিয়ে দেখে তিন্নি আর কিছু বাচ্চারা বসে বসে কাঁদছে। অনিমা দৌড়ে ওদের কাছে গিয়ে বলল,
— ” কী হয়েছে? মাদার কোথায় বল? মাদার ঠিক আছে তো?”
কিন্তু ওরা কেউ কিছু বলছেনা শুধু কেঁদে যাচ্ছে। সেটা দেখে অনিমা রেগে গিয়ে বলল,
— ” চুপ করে আছিস কেনো? মাদার কোথায়? বল?”
তিন্নি কাঁদতে কাঁদতে অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল,
— ” সরি আপি।”
অনিমা কিছুই বুঝলোনা যে কী হচ্ছে এখানে।টেনশনে অনিমা কেঁদেই দিয়েই। এরমধ্যেই মাদার ভেতর থেকে মাথা নিচু করে বেরিয়ে এলেন। মাদারকে দেখেই অনিমা চোখ মুছে উঠে দৌড়ে মাদারের কাছে গিয়ে ওনাকে ধরে বলল,
— ” মাদার তুমি ঠিক আছো তো? কি হয়েছিলো তোমার? ওরা কাঁদছে কেনো?”
মাদার মাথা নিচু করে আছে ওনার চোখ দিয়ে নিরবে জল পরছে। অনিমা অধৈর্য হয়ে বলল,
— ” তোমার সবাই চুপ করে কেনো আছো? প্লিজ কিছু বলো?”
হঠাৎ পেছন থেকে কেউ বলে উঠল,
— ” ওরা কিছু বলতে পারবেনা। আমাকে জিজ্ঞেস করো বেইবি সবটা বলছি।”
কন্ঠস্বর শুনেই অনিমা চমকে উঠলো। কন্ঠটা চিনতে ওর একটুও দেরী হয় নি। একরাশ ভয় নিয়ে পেছনে তাকিয়ে ওর রুহ কেঁপে উঠল কারণ রিক বাঁকা হাসি দিয়ে জিন্সের পকেটে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে। আর এখন সবটাই পরিষ্কার হয়ে গেলো ওর কাছে, ঐ ফোন, গার্ডদের না আটকানো সব কিছুই একটা প্লান ছিলো? অনিমা কান্নাভেজা চোখে করুণদৃষ্টিতে মাদারের দিকে তাকালো। যেই দৃষ্টি এটাই জিজ্ঞেস করছে যে কেনো করলে এটা? মাদার অনিমার দিকে তাকিয়ে হাত জোর করে বললেন,
— ” আমাকে ক্ষমা করে দে মা। আমি এটা না করলে ওরা এই বাচ্চাগুলোর ক্ষতি করে দিতো। দেখ প্রথমে রাজি হয়নি বলে বৃষ্টির হাতে গুলি করে দিয়েছে। হসপিটালেও নিতে দিচ্ছেনা।”
অনিমা চমকে তাকালো বৃষ্টির দিকে সাত বছরের বাচ্চা মেয়েটা যন্ত্রণায় ছটফট করছে। অনিমা রিকের দিকে তাকাতেই দেখলো রিক পকেটে হাত ঢুকিয়েই ওর দিকে এগিয়ে আসছে। অনিমা ভয়ে পেছাতে পেছাতে বলল,
— ” প্লিজ বৃষ্টিতে হসপিটালে নিয়ে যেতে দিন। অনেক রক্ত বেড়োচ্ছে, ও একটা বাচ্চা।”
রিক হালকা হাসলো অনিমার কথায় তারপর লোক দিয়ে ইশারা করতেই কিছু লোক বৃষ্টিকে নিয়ে চলে গেলো সাথে মাদারকেও নিতে গেলে মাদার রিকের দিকে তাকিয়ে বলল,
— ” দয়া ওকে যেতে দাও। ওর সাথে কিছু করোনা।”
রিকের লোকগুলো আর কিছু বলতে না দিয়েই নিয়ে গেলো মাদারকে। রিক অনিমার দিকে এগিয়ে যেতে নিলেই অনিমা দৌড়ে পালাতে শুরু করল। রিক হেসে পেছন থেকে বলল,
— ” শুধু শুধু এনার্জি লস করছো সুইটহার্ট বেশিদূর যেতে পারবেনা তুমি।”
হলোও ঠিক তাই। বেশিদূর যেতে পারলোনা অনিমা তার আগেই রিকের লোকেরা ওর পথ আটকে ফেললো সবদিক দিয়ে। অনিমা তাড়াতাড়ি পার্স খুলে ফোনটা বের করতে নিলেই রিক এসে ওর হাত ধরে ফেললো। তারপর হাতে চাপ দিয়ে ধরে বলল,
— ” আজ আদ্রিয়ান কেনো? কেউ তোমাকে আমার হাত থেকে বাঁচাতে পারবেনা।”
বলে অনিমার হাত থেকে ফোন আর পার্স দুটোই ছুড়ে ফেলে দিলো। অনিমা হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে কান্না করছে। রিক অপর হাতে ওর চুলের মুঠি ধরে বলল,
— ” কী ভেবেছিলে? ঐ রকস্টারের সাথে থাকলেই আমার হাত থেকে বাঁচতে পারবে তুমি? হ্যাঁ?”
বলে আরো জোরে টান মারলো ওর চুলে ব্যাথায় কুকিয়ে উঠলো অনিমা। রিক হেসে বলল,
— ” লাগছে হুম? সবে শুরু করলাম বেইবি। দেখো তোমার সাথে আর কী কী হয়। চলো!”
অনিমা চমকে গিয়ে শব্দ করে কেঁদে দিয়ে বলল,
— ” নাহ প্লিজ ছেড়ে দিন আমাকে। আমি যাবোনা কোথাও।”
রিক বাঁকা একটা হাসি দিয়ে অনিমার চুল ধরে আরো কাছে এনে বললো,
— ” তোমাকে ছাড়ার জন্যে এতো কিছু করিনি আমি। তোমাকে আমার কাছে আনতে কতোটা কাঠ খর পোড়াতে হয়েছে আমাকে কোনো ধারণা আছে তোমার?”
অনিমা অসহায়ভাবে তাকিয়ে আছে রিকের দিকে। রিক সেদিকে পাত্তা না দিয়ে অনিমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগল। অনেকটা যেতেই অনিমা হাত ধরা অবস্হাতেই বসে পরে বললো,
— ” প্লিজ আমি যাবোনা।”
রিক ওকে টেনে তুলে জোরে একটা থাপ্পড় মারলো অনিমার গালে। রিকের থাপ্পড়টায় বরাবরের মতো এবারেও অনিমার ঠোঁট কেটে রক্ত বেড়িয়ে গেলো। কিন্তু রিক হাত ধরে রাখায় মাটিতে পরে যায়নি ও। রিক ওকে টেনে হিচড়ে আশ্রমের পেছনের বিশাল মাঠটায় নিয়ে গেলো। আর ওখানে গিয়েই চমকে উঠলো অনিমা। কারণ ওখানে একটা হেলিকপ্টার রাখা। অনিমা শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে গিয়ে বলল,
— ” নাহ প্লিজ।”
কিন্তু রিক অনিমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই টেনে নিয়ে হেলিকপ্টারে তুললো। আর ওরা সবাই উঠতেই হেলিকপ্টার ওপরে উঠে গেলো। অনিমা চেচামেচি করছে বলে রিক ওর মুখ বেঁধে দিলো। আর ওর দুই হাত নিজের দুইহাতের মুঠোয় ধরে রেখেছে। অনিমা নিঃশব্দে কেঁদে যাচ্ছে কারণ চাইলেও শব্দ করতে পারছেনা ও। শুধু রিকে হাত থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্যে ছটফট করে যাচ্ছে। রিক বিরক্ত হয়ে আবারও থাপ্পড় মারলো অনিমাকে তারপর দড়ি দিয়ে হয় হাতটাও বেধে দিয়ে বলল,
— ” এবার তুমি খুব ভালোভাবে বুঝবে অামার হাত থেকে পালাতে চাওয়ার কতটা ভয়ানক হতে পারে। সারাজীবন আফসোস করবে এই কাজের জন্যে।”
অনিমা মাথা নিচু করে কেঁদে যাচ্ছে। রিকের বলা প্রত্যেকটা কথা ওর মনে তীব্র ভয়ের সৃষ্টি করছে। ও নিজেও আন্দাজ করতে পারছেনা যে এবার ঠিক কী হতে চলেছে ওর সাথে। শুধু আদ্রিয়ানের কথাই মনে পরছে বারবার।
#চলবে…