#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
.
অনিমা আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকানোর পর ফিল করলো যে কেউ ওর হাত ধরে রেখেছে। হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো আদ্রিয়ান ফ্লোরে বসে ওর হাত ধরেই বেডে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পরেছে। অনিমা একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল যে আদ্রিয়ান ঠিক আছে। কিন্তু ওরা যদি আদ্রিয়ানকে তুলে নিয়ে গিয়ে থাকে তাহলে আদ্রিয়ান কীকরে ফিরে এলো? ওরা ওকে ছেড়ে দিলো কেনো? এসব নানারকমের কথা ভাবতে ভাবতে আদ্রিয়ানের দিকে তাকাতেই অনিমার চোখ আটকে গেলো। বেডের ওপর শুধু মাথাটা কাত করে শুয়ে আছে আদ্রিয়ান, সিল্কি চুলগুলো কপালে পরে আছে, বাচ্চা বাচ্চা লাগছে পুরো কিউটনেস উপচে পরছে একেবারে। অনিমার ঠোঁটের কোণে ওর অজান্তেই হাসি ফুটে উঠলো। আদ্রিয়ানের চুলগুলো নিজের হাত দিয়ে নেড়ে দিলো অনিমা, এরপর নিজের হাত আস্তে করে আদ্রিয়ানের হাত থেকে সরিয়ে একটু এগিয়ে গিয়ে আদ্রিয়ানের দিকে ঝুকে আদ্রিয়ানের চুলগুলো নাড়তে নাড়তে বলল
— ” এতোটা ভালো কেনো বাসেন আমাকে? সত্যিকি এতোটা ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য আমি? আপনি কী সত্যিই আমার ভাগ্যে আছেন? আমার ভাগ্য কি সত্যিই এতোটা ভালো হতে পারে?”
আদ্রিয়ান হঠাৎ করেই একটু নড়ে উঠলো। অনিমা সাথে সাথেই হাতটা সরিয়ে ফেললো। আদ্রিয়ান উঠে বসে চোখ পিটপিট করে অনিমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,
— ” উঠে পরেছো তুমি।”
অনিমা কিছু না বলে চুপ করে রইলো। আদ্রিয়ান ফ্লোর থেকে উঠে বেডে বসে অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল,
— ” কী হয়েছে তোমার? তখন ওভাবে হাইপার হয়ে গেছিলে কেনো?”
অনিমা মাথা তুলে আদ্রিয়ানের দিকে ছলছলে চোখ তাকিয়ে বলল,
— ” আপনাকে ওরা..”
আদ্রিয়ান অনিমার দুই বাহুতে হাত রেখে বলল,
— ” কাম অন অনি। আমি তোমাকে বলেছিলাম না আমার কিচ্ছু হবেনা। তবুও তুমি?”
অনিমা মাথা নিচু করে চোখের জলটুকু ছেড়ে দিয়ে বলল,
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
— ” আসলে নিউসটা দেখে আমি ভয় পেয়ে গেছিলাম।”
অনিমাকে কাঁদতে দেখে আদ্রিয়ান আর কিছু না বলে ওকে আলতো করে জরিয়ে ধরে বলল,
— ” আচ্ছা ওকে ডোন্ট ক্রাই। যা হওয়ার হয়েছে। বাট আমি তো তোমাকে প্রমিস করেছি তাইনা? তবুও এতো ভয় কেনো পাচ্ছো? ইউ ট্রাস্ট মি না?”
অনিমা অস্ফুট স্বরে বলল,
— ” হুম”
আদ্রিয়ান অনিমাকে ছেড়ে উঠে দাড়িয়ে দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,
— ” আটটা বেজে গেছে। যাও হাত মুখ ধুয়ে এসো ডিনার করবো।”
অনিমা মাথা নেড়ে উঠে ওয়াসরুমে চলে গেলো। আদ্রিয়ান অনিমার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,
— ” আমার ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যতা তুমি ছাড়া আর কারোর নেই। ওই জায়গাটা শুধুই তোমার। অার ভাগ্য? কারো ভাগ্যে কী আছে সেটা কেউ না জানলেও আমি জানি যে তুমি শুধু আমার আর আমারই থাকবে।”
____________________
নিজের রুমে বেডে বসে হিসেব মেলানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে রিক। কিছুই মেলাতে পারছেনা শুধু এটুকু বুঝতে পারছে যে আদ্রিয়ান সম্পর্কে এমন কিছু আছে যা ও জানে না। কিন্তু সেটা কী? যদি ধরেও নেই যে ও গান চালাতে জানে। তাই বলে এতোটা পার্ফেক্ট? যে ছয়জন মানুষকে একাই ধরাসাই করে দিলো, যেখানে সবার হাতেই গান ছিলো? এটা যে কারো পক্ষে করা সম্ভব না। এসব কথা ভাবতে ভাবতেই ওর ঘরে একটা মেয়ে এলো হাতে খাবারের ট্রে নিয়ে। দরজার কাছ থেকে বলল,
— ” আসবো রিক দা।”
রিক মেয়েটাকে দেখে বেশ অবাক হলো সাথে বিরক্ত ও হলো, ভ্রু কুচকে বলল,
— ” তুই কখন এসছিস?”
মেয়েটা মাথা নিচু করে নিচু কন্ঠে বলল,
— ” আজকেই এসছি সন্ধ্যায় ।”
রিক বিরক্ত হয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে স্ক্রল করতে করতে বলল,
— ” তো এখানে কী?”
মেয়েটি করুণ চোখে একবার তাকালো রিকের দিকে তারপর ইতোস্তত করে বলল,
— ” তোমার ডিনারটা নিয়ে এসছিলাম।”
রিক ফোন থেকে চোখ সরিয়ে ভ্রু কুচকে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলল,
— ” তো কী বাড়িতে মেড সার্ভেন্ট ছিলোনা তুই কেনো?”
মেয়েটা অসহায়ভাবে রিকের দিকে তাকিয়ে বলল,
— ” তুমি আমার সাথে এভাবে কেনো কথা বলো?”
রিক এবার উঠে দাঁড়িয়ে রাগী গলায় বলল,
— ” দেখ সিগ্ধা আমি তোকে আগেও বলেছি আমার থেকে দূরে থাকবি। তবুও আমার পেছনে ঘুরঘুর কেনো করিস বলবি?
সিগ্ধা এবার নিজেও রেগে গেলো। রেগে গিয়ে খাবারের ট্রে টা টি টেবিলে শব্দ করে রেখে বলল,
— ” কী সমস্যা কী তোমার আমাকে নিয়ে বলোতো? কী করেছি আমি যে এখন আমাকে সহ্যই করতে পারোনা? আগেতো এমন করতে না? প্রপোজ করেছি বলে? সে তো আরো আগেই করেছিলাম। তখন না করে দিলেও এরকম ব্যবহার তো করতে না? এখন কেনো করো এরকম?”
রিক মুখ ঘুরিয়ে শক্ত গলায় বলল,
— “তোকে উত্তর দিতে বাধ্য নই আমি।”
সিগ্ধা গিয়ে রিকের কলার ধরে বলল,
— ” অবশ্যই বলতে হবে। কী দোষ করেছি আমি। আমার অপরাধটা কী?
রিক নিজের কলার ছাড়িয়ে সিগ্ধার দুই বাহু চেপে ধরে বলল,
— ” সবসময় মুখে মুখে কথা। একটুও ভয় পাস না আমাকে? হ্যাঁ? এতো সাহস কে দেয় তোকে? ”
সিগ্ধা ঝাড়া দিয়ে রিককে ছাড়িয়ে বলল,
— ” তোমাকে ভয় পাওয়ার কোনো কারণই নেই। কারণ আমি জানি যে তুমি মানুষটা বাইরে দিয়ে বদলে গেলেও মনের দিক দিয়ে তুমি ঠিক সেই ছোটবেলার রিকদাই আছো। আর আমি জানি তুমি আবার আগের মতো হয়ে যাবে। তোমাকে আগের মতো হতেই হবে।”
রিক হাত মুঠো করে চোখ বন্ধ করে একটা শ্বাস নিয়ে বলল,
— “গেট লস্ট।”
সিদ্ধা রিকের হাত ধরে করুণ স্বরে বলল,
— ” রিকদা।”
রিক সিদ্ধার হাত ধরে ওকে টেনে রুম থেকে বের করে দরজা বন্ধ করে দিলো। সিদ্ধা চোখের জল মুছে চলে গেলো ওখান থেকে। সিদ্ধা হলো রিক এর মায়ের বান্ধুবীর মেয়ে। ও ছোটবেলা থেকেই ভালোবাসে রিক কে। কিন্তু রিক এর মধ্যে তেমন কোনো অনুভূতি নেই। সিগ্ধা ওকে প্রোপজ করার পর ও সুন্দর ভাবেই না করে দিয়ছিলো তবে কখনো খারাপ ব্যবহার করেনি সিগ্ধার সাথে। কিন্তু অনিমা পালিয়ে যাবার পর থেকেই স্নিগ্ধাকে সহ্য করতে পারেনা ও। কারণ অনিমার সাথে সিগ্ধার চেহারার কোনো মিল না থাকলেও দুটো জিনিসের অদ্ভূত মিল আছে। ডান গালে পরা টোল আর বাম গালের তিল। যার কারণে হাসলে দুজনকে একি রকম লাগে। সেই হাসিটাই সহ্য করতে পারেনা রিক। তাই সবসময় ওর থেকে দূরে থাকতে বলে সিগ্ধাকে। কিন্তু সিগ্ধাও নাছড় বান্দা। যখনি এই বাড়িতে আসে সারাক্ষণ রিকের পেছনেই লেগে থাকে। কোনো বকা,ধমক এফেক্ট করেনা ওর ওপর। কারণ ও রিককে ভয়ই পায় না।
__________________
অনিমা বেডে শুয়ে আছে আর আদ্রিয়ান সোফায় শুয়ে ফোন টিপছে। কিছুক্ষণ পর আদ্রিয়ান তাকিয়ে দেখলো অনিমা ঘুমিয়ে পরেছে। অনিমার ঘুমিয়ে পরার অপেক্ষাই করছিলো আদ্রিয়ান। অনিমার কাছে গিয়ে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ফোন নিয়ে সোজা ব্যালকনিতে চলে গেলো আদ্রিয়ান। তারপর অনিমার মামার নাম্বারটা বের করলো। ওর লোক দিয়ে ওর মামা মামীর সব ইনফরমেশন ই যোগার করে নিয়েছে, এড্রেস ফোন নাম্বার সব। কল লাগিয়ে মোবাইলটা কানে নিলো আদ্রিয়ান। কিছুক্ষণ পর ওপাশ থেকে আওয়াজ এলো,
— ” হ্যালো কে?”
আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বলল,
— ” আসসালামু আলাইকুম মামা।”
ওপাশ থেকে আশরাফ মৃধা অবাক কন্ঠে বললেন,
— ” মামা? কে কার মামা? আমার একটাই বোন ছিলো আর সেই বোনের একটাই সন্তান তাও মেয়ে। আপনি কে?”
আদ্রিয়ান একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দেয়ে বলল,
— ” কাম অন মামা। আপনার কোনো ভাগ্নী টাগ্নী আছে নাকি?”
আশরাফ মৃধা বিরক্ত হয়ে বলল,
— ” আজব কথা? থাকবেনা কেনো? না থাকলে কী আমি এমনি এমনি বলছি নাকি?”
আদ্রিয়ান রেলিং এ ভর দিয়ে বলল,
— ” আচ্ছা বলুন তো আপনার ভাগ্নী বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে?”
আশরাফ মৃধা চমকে গেলেন এরপর তুতলিয়ে বললেন,
— ” অব্ জ্ জানিনা আমি।”
আদ্রিয়ান এবার শব্দ করে হেসে দিলো হাসতে হাসতেই বলল,
— ” আরে বাহ। নিজের আপন একমাত্র ভাগ্নি বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে আপনি সেটাই জানেনা। গ্রেট না?”
আশরাফ মৃধা রাগী গলায় বলল,
— ” ভাগ্নিটা আমার, আমার ব্যাপার। তুমি এসব বলার কে? কে তুমি?”
আদ্রিয়ানের চোখ মুখ এবার শক্ত হয়ে এলো। রেগে গিয়ে রেলিং এ একটা বারি মেরে চেঁচিয়ে বলল,
— ” লজ্জা করেনা আপনার? ভাগ্নি বলছেন ওকে? যে মুহূর্তে ওর আপনাদের সবচেয়ে বেশি দরকার ছিলো সেই মুহূর্তে পশুর মতো আচরণ করেছিলেন আপনারা ওর সাথে। মানসিক শারীরিক সবরকম ভাবে কষ্ট দিয়েছেন ওকে। আপনাদের সেই অন্যায়ের চিন্হ ওর শরীরে আজও আছে। এমনকি টাকার জন্যে ওকে বিক্রি করতেও আপাদের বিবেকে বাধেনি আর মামা বলে দাবী করছেন আপনি নিজেকে?”
আশরাফ মৃধা কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
— “কে আপনি?”
আদ্রিয়ান এবার রাগ ছেড়ে মুচকি হেসে বলল,
— ” আপনাদের জামাই রাজা। আর আমি খুব তাড়াতাড়ি আসছি। আসলে কি বলুনতো শশুর শাশুড়ি নেই আমার। জামাই আদর তো আপনারাই করবেন না? তৈরী হয়ে থাকুন এই জামাই খুব স্পেশাল আছে কিন্তু। ”
আদ্রিয়ানের কথা শুনে আশরাফ মৃধা একটা ঢোক গিলে বললেন,
— ” মানে?”
আদ্রিয়ান এবার খুব ঠান্ডা গলায় বলল,
— ” মানে হলো পালান। যেখানে পারেন পালান। আমি এসে পরার আগেই যদি পালাতে পারেন তো। কারণ অনির শরীরের প্রত্যেকটা আঘাতের চিন্হ গুনে নিয়েছি আমি, যেদিন আসবো সেদিন ঐ প্রত্যেকটা আঘাতের গুনে গুনে শোধ তুলবো। আর আপনার ছেলে যা করেছে তাতে ওকে জ্যান্ত অবস্হায় পিসপিস করে কাটলেও আমার শান্তি হবেনা। তাই নিজের বউ আর ছেলেকে নিয়ে পালিয়ে যান। তবে হ্যাঁ এমন জায়গায় পালাবেন যেখানে মাটি পানি বায়ু আর আকাশ নেই। কারণ এই চারটের মধ্যে যেখানেই পালাননা কেনো আমি খুজে নেবোই। আমি সবাইকেই সুযোগ দেই আপনাদেরকেও দিলাম, যদি পারেন তো বাঁচিয়ে নিন নিজেদের আমার হাত থেকে। এন্ড ইউর টাইম স্টার্ট নাও। টিকটিক টিকটিক টিকটিক।
বলেই আদ্রিয়ান সিটি বাজাতে বাজাতে ফোন কেটে দিলো। অপাশে আশরাফ মৃধার তো জান গেলো গেলো অবস্হা। আদ্রিয়ান এর কথাগুলোই ওনার হার্ট অ্যাটাক করানোর জন্যে যথেষ্ট ছিলো। ঘেমে একাকার হয়ে গেছেন উনি। আদ্রিয়ান ফোন কেটে পেছনে ঘুরতেই চমকে গেলো কারণ অনিমা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ান এর দিকে। আদ্রিয়ান এর মনে হালকা ভয় ঢুকে গেলো যে কিছু শোনেনিতো? আর শুনলেও কী আর কতোটা শুনেছে অনিমা?
#চলবে…