Monday, October 6, 2025







বর্ষণের সেই রাতে ❤ পর্ব- ৩৪

বর্ষণের সেই রাতে ❤
পর্ব- ৩৪
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

.
স্বাভাবিকভাবেই সকাল বেলা ঘুম ভাঙলো আদ্রিয়ানের। ভোরবেলা রিকের সাথে কথা বলে এসে আবারও ছোট্ট একটা একটা ঘুম দিয়েছিলো ও। চোখ কচলে সোফায় বসে সোজা তাকালো বেডে শুয়ে থাকা অনিমার দিকে। মুচকি হেসে উঠে গিয়ে অনিমার সামনে গিয়ে হাটু ভেঙ্গে বসলো এরপর ওর মুখের ওপর পরে থাকা চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে ওর গালের তিলটাতে আলতো হাতে ছুয়ে দিলো, অনিমা ঘুমের মধ্যেই হালকা কেঁপে উঠল, আদ্রিয়ান হেসে দিয়ে উঠে ওয়াসরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে। ফ্রেশ হয়ে এসে অনিমার দিকে তাকিয়ে দেখে অনিমা হালকা ভ্রু কুচকে একটু নড়াচড়া করছে। আদ্রিয়ান পেছন ঘুরে দেখলো সকালের মৃদু রোদের আলো সম্পূর্ণ গিয়ে পরছে অনিমার মুখের ওপর, যার কারণে ওর ঘুমের একটু ডিস্টার্ব হচ্ছে, বারবার নিজের ভ্রু কুচকে সেই বিরক্তি প্রকাশ করছে অনিমা। আদ্রিয়ান হালকা হেসে একটু দূরে সরে অনিমার মুখের বরাবর দাড়ালো। মুখের ওপর ছায়া পরায় অনিমার ঘুমের ডিস্টার্ব হলো না কিন্তু একটুপর এমনিতেই ওর ঘুম ভেঙ্গে গেলো। আস্তে আস্তে চোখ খুলে ওর চোখ সোজা আদ্রিয়ানের দিকেই গেলো। আদ্রিয়ান মুচকি হাসলো অনিমার দিকে তাকিয়ে। অনিমা উঠে বসে একটা হাই তুলে ভালোভাবে তাকালো আদ্রিয়ানের দিকে, একটা চিকন স্লিভস এর ব্লু পাতলা গেঞ্জি আর কালো টাওজার পরে আছে, হালকা ভেজা এলোমেলো চুলগুলো মাথার সাথে কপাল ভর্তি হয়ে ছড়িয়ে আছে, সুঠাম দেহে হালকা ভেজা ভেজা ভাব এখোনো আছে। আজ আবার নতুন করে ক্রাশ খেলো আদ্রিয়ানের ওপর । আর তার সাথে নিজের ওপরেই নিজে বিরক্ত হলো। এই এক ছেলের ওপর কতোবার ক্রাশ খাবে ও? ছেলে মানুষদের এতো সুন্দর হতে হয়? কিন্তু আদ্রিয়ানের চেহারার সাথে রিকের চেহারার বেশ খানিকটা মিল খুজে পায় অনিমা, কিন্ত সেটাকে বকওয়াস ভাবনা ভেবে উড়িয়ে দেয়। কিন্তু আজ যেনো মিলটা একটু বেশিই লক্ষ্য করছে অনিমা। নিজের দিকে একবার তাকিয়ে দেখলো যে লাল একটা শার্ট পরা, শার্টের সাইজ দেখেই বুঝলো এটা আদ্রিয়ানের। তারপরেই অনিমার কালকের রাতের কথা মনে পরলো। আদ্রিয়ান অনিমার সামনে বসে মুচকি হেসে বলল,

— ” গুড মর্নিং।”

অনিমা আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,

— ” মর্নিং।”

আদ্রিয়ান অনিমাকে একবার স্কান করে বলল,

— ” কী ব্যাপার? আমিতো ভেবেছিলাম তুমি ঘুম থেকে উঠেই একশোটা প্রশ্ন করবে। আমি এরকম কেনো করলাম? কে চেঞ্জ করিয়েছে? আমি উল্টোপাল্টা কিছু করেছি কী না? এক্সেক্ট্রা,এক্সেক্ট্রা।”

অনিমা খাটে হেলান দিয়ে হেসে বলল,

— ” আমি কখনো ইউসলেস প্রশ্ন করি না।”

আদ্রিয়ান মুখে হাসি রেখেই বলল,

— ” এগুলো ইউসলেস প্রশ্ন?”

অনিমা হাত ভাজ করে বলল,

— ” অফকোর্স। আপনি এরকম কেনো করেছেন সেটা আমি কালকে আপনার প্রতিটা কথাতেই বুঝেছি। আর পোশাক বদলানোর কথা যদি বলেন তো বাড়িতে এতো মেয়ে মেড সার্ভেন্ট থাকতে আপনি করবেন না সেটা আমি জানি । আর উল্টোপাল্টা করার কথা জিজ্ঞেস করে জোকস মারার শখ আমার নেই।”

আদ্রিয়ান অনিমার কথায় হেসে দিয়ে বলল,

— ” আরে ওয়াহ। সো ট্যালেন্টেড।”

অনিমা মেকি হেসে বলল,

— ” ছোটবেলা থেকেই। বাই দা ওয়ে আমার পোশাক কী এনেছেন নাকি আপনার এই শার্টস পরেই থাকতে হবে?”

অাদ্রিয়ান এবার দুষ্টু হেসে অনিমার দিকে অনেকটা ঝুকে বলল,

— ” চেঞ্জিং এর কী দরকার? তোমাকে এভাবেই খুব সুন্দর লাগছে। ইউ নো..!”

অনিমা হালকা গলা ঝেড়ে দূরে সরে গেলো আদ্রিয়ানের থেকে। তারপর কপালের চুলগুলো সরিয়ে নিয়ে ইতস্তত গলায় বলল,

— ” এনেছেন কী না সেটা বলুন?”

আদ্রিয়ান নিচের ঠোঁট কামড়ে একটু হাসলো, অনিমাকে লজ্জা পেতে দেখতে ওর অদ্ভূত রকম ভালোলাগে। তাই ইচ্ছে করেই মাঝে মাঝে লজ্জা দেয় ওকে। অনিমা আদ্রিয়ানকে অভাবে হাসতে দেখে আরো লজ্জায় পরে গেলো। মাথা নিচু করে হাত কচলাতে শুরু করলো। আদ্রিয়ান হেসে দিয়ে বলল,

— ” কাবার্ডে সব আছে যেটা ইচ্ছে পরে নাও।”

অনিমা কিছু না বলে উঠে দাড়ালো তাও চাদর গায়ে জরিয়ে। তারপর কাবার্ড খুলে দেখলো সব রকমের পোশাকই আছে। টি-শার্ট, টপস, কুর্তি সব। অনিমা একটু অবাক হলো এতোকিছুর কী দরকার ছিলো? তবুও কিছু না বলে একটা শর্ট কুর্তি আর টাওজার নিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেলো। আদ্রিয়ান অনিমার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা সস্হির নিশ্বাস ফেললো। অনিমা যে এখন ওর সাথে স্বাভাবিক আচরণ করছে এটাই অনেক। ঘন্টাখানেক পর অনিমা বেরিয়ে এলো ওয়াসরুম থেকে। আদ্রিয়ান সোফায় বসে ফোন টিপছিলো দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে একবার তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিয়ে আবারও তাকালো অনিমার দিকে। আজকে ওকে সেই প্রথম দিনের মতোই স্নিগ্ধ লাগছে। সেদিন মোমের আবছা আলোতে দেখেছে আর আজ দেখছে ভোরের নরম উজ্জ্বল আলোতে।অনিমার চুল দিয়ে ফোটা ফোটা পানি পরছে। অনিমা টাওয়েল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে আসলো, আদ্রিয়ান মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অনিমার দিকে, একেই শাওয়ার নেওয়ায় এতো ফ্রেশ লাগছে তরওপর শার্ট কলারের পাতলা সাদা কুর্তি ওর সিদ্ধতা আরো বারিয়ে দিচ্ছে, কুর্তির সামনের দুটো বোতাম খুলে গলার দিকটা হালকা সরিয়ে রেখেছে, রোদের আলো চুলে পরায় চুলগুলো সোনালী আভা ধারণ করেছে। চুল থেকে টাওয়েল সরিয়ে সামনে থেকে সব চুলগুলো পেছনের দিকে ছুড়ে দিতেই অনিমার চুল থেকে পানির ছিটাগুলো সোজা আদ্রিয়ানের মুখে গিয়ে পরল যেটা অনিমা খেয়াল করেনি কিন্তু আদ্রিয়ান চোখ বন্ধ করে অনুভব করছে সেই অনুভূতি। অনিমা আলতো হাতে চুলগলো ঝেড়ে যাচ্ছে। আদ্রিয়ান উঠে দাড়িয়ে অনিমার কাছে গেলো, অনিমা চুল ঝাড়ায় ব্যাস্ত তাই খেয়াল করছে না। আদ্রিয়ান অনিমার চুলে হাত দিতেই অনিমা কেঁপে উঠলো, পেছনে ঘুরতে চাইলেই আদ্রিয়ান শক্ত গলায় বলল,

— ” নড়বেনা একদম চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকো।”

অাদ্রিয়ানের এমন শক্ত কন্ঠ শুনে আনিমা স্টাচু হয়ে দাঁড়িয়ে গেলো। আদ্রিয়ান বেশ অনেকখানি চুল হাতে নিয়ে সেই চুলে নিজের নিজের নাক ডুবিয়ে ঘ্রাণ নিতে লাগল। অনিমা তো পুরো জমে আছে, নড়বে যে সেই শক্তিও যেনো নেই ওর মধ্যে কুর্তি খামছে ধরে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আদ্রিয়ান চোখ বন্ধ করে নিজের মনমতো চুলের ঘ্রাণ নিয়ে অনিমার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,

— ” তোমার ভাগ্য ভালো যে আমাদের বিয়ে হয়নি। যেই চোখ ধাধানো রুপ নিয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়িয়েছো, যদি আমাদের বিয়ে হতো তো আজ তোমার কপালে ভীষণ দুঃখ ছিলো।”

আদ্রিয়ানের কথা শুনে অনিমার বন্ধ চোখজোড়া সাথে সাথে খুলে গেলো চোখ বড় বড় হয়ে গেলো ওর। বুকের ভেতরে ধকধক শব্দটা যেনো ও বাইরে থেকেও শুনতে পাচ্ছে। এই ছেলে সবসময় ওর হার্টবিট বারিয়ে দিয়ে যায়। অনিমার অবস্হাটা বুঝতে পেরে আদ্রিয়ান হেসে বলল,

— ” নিচে চলো ব্রেকফাস্ট করবো।”

আদ্রিয়ান যেতে নিলেই অনিমা বলল,

— ” শুনুন?”

আদ্রিয়ান ঘুরে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো। অনিমা নিচের দিকে তাকিয়ে ইতস্তত করে বলল,

— ” আমার ল্যাপটপটা আনার দরকার ছিলো।”

আদ্রিয়ান মুচকি হেসে অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” ওয়াড্রপ এর ফার্স্ট ড্রয়ারে আছে।”

এটুকু বলে চলে গেলো আদ্রিয়ান। অনিমা একটু অবাক হলো যে কীভাবে আর কখন আনলো কিন্তু কিছু বললোনা আদ্রিয়ান পেছন পেছন চলে গেলো নিচে।

_____________________

খাটে হালকা হেলান দিয়ে শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে রিক। কিচ্ছু ভালোলাগছে না ওর। সকালে আদ্রিয়ানের সাথে কথা বলার পর থেকেই মনটা অস্হির হয়ে আছে ওর।

আসলে সকালে সবে পার্টি শেষ করে রিক বেরোবে তখনি আদ্রিয়ানের ফোন এলো। কলটা আদ্রিয়ান ঐ বাংলো থেকে বেড়িয়ে বেশ অনেক দূরের একটা গ্রাউন্ডে গিয়ে, ওর কমন সিমটা ইনসার্ট করে তারপর করেছে । রিক স্ক্রিনে আদ্রিয়ানের নাম্বারটা দেখে বেশ অবাক হলো। কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে রিক ফোনটা রিসিভ করে বলল,

— ” আজ নিজেই ফোন করলে আমাকে? হার মেনে নিলে নাকি?”

আদ্রিয়ান বাঁকা হেসে বলল,

— ” হার বা জিত এখনো অনেক দূরের প্রশ্ন। তার আগে আপনি এটা বলুন যে অনিকে পেলেন?”

রিক দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

— “মজা নিচ্ছো?”

আদ্রিয়ান এবার একটু শব্দ করে হেসেই বলল,

— ” মজা? মজা কেনো করবো? আসলে কী জানেন তো আপনার জন্যে করুনা হয় আমার। সত্যিই বলছি।”

আদ্রিয়ানের কথায় রিক ভ্রু কুচকে বলল,

— ” কী বলতে চাইছো?”

আদ্রিয়ান এবার সিরিয়াস হয়ে বলল,

— ” আচ্ছা একটা কথা বলুনতো জীবণে কোন সিদ্ধান্তটা আপনি নিজে থেকে নিয়েছেন? এইযে রাজনীতি করেন সেটাতে কী আদোও আপনার কোনো ইন্টারেস্ট আছে? আপনার বাবার সব কাজে আপনি তাকে সাহায্য করলেও সেগুলোকে মন থেকে সত্যিই কী সাপোর্ট করেন।”

রিক খানিক চমকে উঠলো, ওর নিজের মনেও অনেকবার এই প্রশ্নগুলো উঠতে চাইলেও ও ধামাচাপা দিয়ে রেখেছে। কিন্তু আদ্রিয়ান এসব কেনো বলছে। রিক কে চুপ থাকতে থেকে আদ্রিয়ান বলল,

— ” কী হলো চুপ করে আছেন কেনো?”

রিক ইতস্তত গলায় বলল,

— ” অ্ আমি যা করি নিজের ইচ্ছেতেই করি আর সজ্ঞানেই করি। আপনার এডভাইস এর কোনো প্রয়োজন নেই আমার।”

আদ্রিয়ান একটা শ্বাস ফেলে বলল,

— ” আমি এডভাইস দেই নি। কিন্তু আমি কী বলতে চাইছি সেটা আপনি ততোক্ষণ বুঝতে পারবেন না যতোক্ষণ না বুঝতে চাইবেন।”

রিক আর কিছু না শুনেই ফোনটা কেটে দিলো। আর হনহন করে বেড়িয়ে এলো ওখান থেকে। আর তারপরেই বাড়ি ফিরে ঐসব কথা বলে রুমে চলে এসছে। অস্হিরতা কিছুতেই কমছেনা। কিছক্ষণ পর কবির শেখ এসে ওর পাশে বসে বললেন,

— ” কী ভাবছো বাবাই?”

নিজের মামার গলার আওয়াজ পেয়ে চোখ খুলে তাকালো রিক। তারপর উঠে বসে বলল,

— ” ভালো লাগছেনা কিছু। অস্হির লাগছে।”

কবির শেখ একটু অবাক হলেন। রিক এরকম ভাবে কথা বলছে? উনি অবাক হয়েই বললেন,

— ” কিছু কী হয়েছে?”

রিক অস্হির এক শ্বাস নিয়ে বলল,

— ” কিছুনা মামা একটু একা ছেড়ে দাও।”

কবির শেখ রিকের কাধে হাত রেখে বলল,

— ” দেখো বাবাই। জগৎ টাই এখন আমাদের না চাইতেও খারাপ হতে হয়। ওনেক সময় অনেক কিছু পেতে আমাদের একটু খারাপ হতেই হয়।”

রিক কবির শেখ এর দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” সবকিছু পাওয়া কী খুব জরুরি মামা?”

কবির শেখ একটু ভ্রু কুচকালেন। তারপর কিছু একটা ভেবে নিজেকে স্বাভাবিক করে হেসে বললেন,

— ” অনিমাকে ছাড়তে পারবে?”

রিক কবির শেখ এর দিকে তীক্ষ্ম চোখে তাকালো অর্থাৎ কখনো না। কবির শেখ হেসে বলল,

— ” ঠিক সেভাবেই আমাদের জীবনে এমন অনেক কিছু থাকে যা আমরা ছাড়তে পারিনা। সেটা পেতে আমাদের খারাপ হতেই হয় তাইনা?”

রিক মাথা নেড়ে উঠে ওয়াসরুমে চলে গেলো আর কবির শেখ বাঁকা হাসলেন। উনি জানেন অনিমাই রিকের একমাত্র দুর্বলতা আর সেটাকে কাজে লাগিয়েই উনি ওনার খেলাটা খেলে যাচ্ছেন। কবির শেখ হেসে নিজের মনেই বললেন,

— ” দাবা খেলায় খুব পটু আমি। আমার একেকটা অ্যাটাক সবাইকে কাঁপিয়ে রেখে দেয়। ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন আমি। আমাকে এই খেলায় হারানোর মতো দাবাড়ু এখোনো বাংলাদেশে জন্মায়নি।”

_____________________

এদিকে অরুমিতা দিন একেবারেই বাজে কাটছে। একে অনিমার টেনশন। আর দুই হলো আশিস আগের মতো ফোন করে আর জ্বালায়না ওকে। আগে ফোন করলে বিরক্ত হতো এখন করেনা বলে বিরক্ত হচ্ছে সত্যিই খুব অদ্ভুত। কিন্তু ওর এখন আর এসব সহ্য হচ্ছে না। এই কয়েকদিনে ও বেশ বুঝে গেছে ও আশিসের প্রতি যথেষ্ট দূর্বল, দূর্বল কী ভালোও বেসে ফেলেছে । অথচ এই ছেলে ভাব নিয়ে বসে আছে, তাই বিরক্ত হয়ে কল করেই ফেলল আশিস কে। বিছানায় হেলান দিয়ে গেম খেলছিলো আশিস ফোন বেজে উঠতেই স্ক্রিনে অরুমিতার নাম্বারটা দেখে বেশ অবাক হলো ও। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর মুখে হাসি ফুটে উঠল ওর। ও জানতো এটাই হবে। গলা ঝেড়ে একটু সিরিয়াস করে ফোনটা রিসিভ করে বলল,

— ” হ্যালো।”

অরুমিতা কিছু না বলে চুপ করে আছে। ওকে চুপ করে থাকতে দেখে আশিস বলল,

— ” কী হলো ফোন করে চুপ করে আছেন কেনো? আমিতো ডিসটার্ব করি আপনাকে। তো হঠাৎ করে আমাকে মনে করার কারণ?”

অরুমিতা নিচু কন্ঠে বলল,

— ” আই এম সরি।”

আশিস ভ্রু কুচকে বলল,

— ” সরি ফর হোয়াট?”

অরুমিতা কিছুক্ষণ চুপ থেকে নিজেকে সামলে বলল,

— ” সেদিনের ব্যবহারের জন্যে। আসলে একটু আপসেট ছিলাম তাই..”

আশিস অরুমিতাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,

— ” ইটস ওকে। আর কিছু?”

অরুমিতা এবারেও নিচু গলায় বলল,

— ” আপনার কিছু বলার নেই?”

অাশিস মুচকি হাসলো তারপর বলল,

— ” আর কী বলার থাকবে?”

অরুমিতা গোমড়া মুখ করে বলল,

— ” কিচ্ছু বলার নেই?”

আশিস এবার একটা নিশ্বাস নিয়ে হেসে বলল,

— ” আই লাভ ইউ।”

অরুমিতা কিছু না বলে ফোনটা কেটে হেসে দিলো। কেমন এক অদ্ভূত অনুভূতি হচ্ছে ওর যেটা এর আগে ওর কখনোই হয়নি। একেই হয়তো ভালোবাসার অনুভূতি বলে। আশিস ও হাসলো কারণ আগে যখন এই কথাটা বলতো তখন একশ কথা শুনিয়ে দিতো অরুমিতা তবে আজ কিছু না বলে কেটে দেওয়াটাই অনেককিছু বলে দিয়েছে ওকে।

_____________________

রাতে খাটে পা ঝুলিয়ে বসে আছে অনিমা আর আদ্রিয়ান সোফায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছে। কিন্তু এই মুহুর্তে অনিমার মাথায় একটা কথাই ঘুরছে সেটা হলো আদ্রিয়ান আর রিকের চেহারার মিল। খুব বেশি মিল নেই তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বেশ মিল আছে। যেটা এতোদিন ওর মাথায় না আসলেও আজকে সকালে আদ্রিয়ানকে অতো গভীরভাবে দেখার পর হঠাৎ করেই মাথায় এলো। কেনো তা নিজেও জানেনা। কিছুক্ষণ পর অনিমা আদ্রিয়ানকে উদ্দেশ্য করে বলল,

— ” একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?”

আদ্রিয়ান ল্যাপটপের দিকে তাকিয়েই বলল,

— “একশটা করো জানপাখি।”

অনিমার একটু রাগ হলো কথায় কথায় জানপাখি ডাকার কী আছে? আদ্রিয়ান কী বোঝেনা এই নামটা শুনলে অনিমার বুকের মধ্যে গিয়ে ধাক্কা লাগে। তবুও ও নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,

— ” আচ্ছা আপনি দেখতে কার মতো হয়েছেন?”

এটা শুনে আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে ল্যাপটপ থেকে চোখ সরিয়ে অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল,

— “এটা কেমন প্রশ্ন হলো? আমি দেখতে আমার মতোই হয়েছি।”

অনিমা একটা শ্বাস ফেলে বলল,

— ” না মানে আপনার ফ্যামিলিতে আপনার সাথে কার চেহারার মিল আছে?”

আদ্রিয়ান অবাক হয়ে বলল,

— ” হঠাৎ এই প্রশ্ন?”

— ” বলুন না?”

আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বলল,

— ” আমার মায়ের সাথে। ওনার আর আমার চেহারা বেশ মিল। এমন মনে হয় উনি এই চেহারার ফিমেল ভার্সেন আর আমি মেল।”

বলেই হেসে দিলো ও সাথে অনিমাও হেসে দিলো। আর মনে মনে ভাবলো অযথাই ভাবছিলো ও। একজনের সাথে অন্যএকজন মানুষের চেহারা মিল থাকতেই পারে আর ওদের দুজনের তো এক্কেবারেই সামান্য মিল। অনিমা হেসে বলল,

— ” তারমানে আপনার মা অনেক সুন্দরী দেখতে।”

আদ্রিয়ান ও মুচকি হেসে বলল,

— ” হ্যাঁ তাইতো ড্যাড মমের প্রেমে পরেছিলো।”

অনিমা অবাক হয়ে বলল,

— ” লাভ ম্যারেজ?”

— ” হ্যাঁ। এবার শুয়ে পরো অনেক রাত হয়েছে।”

বলে আদ্রিয়ান আবার ল্যাপটপে চোখ দিলো আর অনিমাও শুয়ে পরল। কিছুক্ষণ ল্যাপটপ ঘাটাঘাটির পর মিস্টার রঞ্জিত এর একটা টিম ফটো ভেসে উঠলো স্ক্রিনে, ওনার পাশে কবির শেখ ও আছেন। কবির শেখ এর ছবির দিকে তাকিয়ে ছবিটা জুম করে নিয়ে আদ্রিয়ান বাঁকা হাসলো আর ভাবলো এতো বড় দাবাড়ু হয়েও দাবা খেলার ‘ট্রাক্সলার কাউন্টার অ্যাটাক’ টা সম্পর্কে জানেনা উনি? যেখানে ব্লাকের রুফ, নাইফ, বিষপ সব হোয়াইট ক্যাপচার করে ফেলে। হোয়াইট ভাবে সে জিতে যাচ্ছে কিন্তু ও জানেইনা যে ও ক্যাপচার করতে পারছে কারণ ব্লাক ওকে ক্যাপচার করতে দিচ্ছে। এখানেই তো আসর খেলা। জিতছি জিতছি ভেবেও শেষে গিয়ে হোয়াইট এর কপালে জোটে চেকমেট। ভেবে নিজের মনেই হাসলো আদ্রিয়ান।

#চলবে…

( এইকয়েকদিন চারদিন একটু অনিয়মিত গল্প দিয়েছি কারণ অনেকদিন পর সব কাজিনস রা একজায়গায় হয়েছিলাম তাই একটু ব্যাস্ত হয়ে পরেছিলাম ওদের নিয়ে। কাল থেকে নিয়মিত দেবো।
ধন্যবাদ।)

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ