Monday, October 6, 2025







বর্ষণের সেই রাতে ❤ পর্ব- ২৭

বর্ষণের সেই রাতে ❤
পর্ব- ২৭
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

.
হাসান কোতয়াল ওনার কেবিনে গম্ভীর মুখ করে বসে আছে। আর তার সামনে তার টিমের চারজন বসে আছেন। হ্যাঁ চারজন, কারণ গতকাল সকালেই মিতার লাশ পাওয়া গেছে। গতপরশু ও রঞ্জিত চৌধুরীর এক গোডাউনে স্মাগলিং এর কিছু ছবি তুলতে গেছিলো কিন্তু আর ফিরে আসেনি। ফিরে এসছে কাল সকালে তাও লাশ হয়ে। প্রাথমিক পোস্টমডের্ন রিপোর্ট অনুযায়ী গ্যাং রেপ করে তারপর গলা কেটে মার্ডার করা হয়েছে। হাসান কোতায়াল চারজনের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” মিতার মৃত্যুটা সত্যিই মর্মান্তিক আর দুঃখজনক ছিলো। মিতা ওখানে সিকরেটলি ছবি তুলতে যাচ্ছে সেটা শুধুমাত্র আমরা ছয়জন জানতাম। এটা ওদের জানার কথা ছিলোনা যদিনা ভেতরের কেউ ইনফরমেশন টা লিক করে থাকে।”

ইলিয়াস অবাক হয়ে বলল,

— ” কিন্তু স্যার আমাদের মধ্যেকেউ এরকমটা কেনো করবে?”

মুসফিক ও সায় দিয়ে বলল,

— ” হ্যাঁ স্যার আমরা কেনো নিউসটা লিক করবো?”

হাসান কোতয়াল একটা নিশ্বাস ফেলে বলল,

— ” করার অনেক কারণ থাকতে পারে। তবে একটা কথা মনে রেখো অর্থ আর ক্ষমতার লোভে মীরজাফর সিরাজউদ্দৌল্লাহর সাথে প্রতারণা করেছিলো। এতে সিরাজউদ্দৌল্লাহ মারা গেলেও মীরজাফরের অন্তিম পরিণামটাও জানো নিশ্চয়ই?”

সবাই চুপ করে আছে। হাসান কোতয়াল একটা শ্বাস ফেলে বললেন

— ” তবে যাই হোক। দেশের জন্যে সমাজের ভালোর জন্যে ও ওর প্রাণ দিয়েছে। আর তাই এবার আমরা আমাদের মিশন যেকোনো মূল্যেই কম্প্লিট করবো, মিতার ত্যাগ কে আমারা ছোট করে দেখতে পারিনা। রাইট গাইস?”

সম্পা চিন্তিত গলায় বলল,

— ” কিন্তু স্যার মিতা যেই ছবিগুলো তুলতে গিয়েছিলো ওগুলো ছাড়াতো আমাদের আর্টিকেলটা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।”

হাসান কোতয়াল গম্ভীরমুখে বললেন,

— ” সেটা আমি বুঝে নেবো বাট যাকে যা কাজ দিয়েছি কম্প্লিট করো। পরশু সকালে নিউসপেপারের ফ্রন্ট পেইজে রঞ্জিত চৌধুরীর আসল চেহারা সবাই দেখবে। ”

আতাউর অবাক হয়ে বলল,

— ” স্যার পরশুই?”

হাসান কোতয়াল সবার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” যদি কারো ভয় থাকে তাহলে সে পিছিয়ে যেতেই পারো। মিতার মৃত্যুর পর আমি আর কাউকে জোর করে রাখবোনা। ”

সবাই একসাথে বলল,

— ” নো স্যার উই ওল আর রেডি?”

হাসান কোতয়াল হালকা হেসে বললেন,

— ” ভেরি গুড। গো টু ইউর ওয়ার্ক ওকে।”

— ” ইয়েস স্যার।”

বলেই সবাই চলে গেলো। হাসান কোতয়াল একটা শ্বাস নিলেন। মিতা মারা যাওয়ার আগেই ওনার ফোনে ছবিগুলো পাঠিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এই চারজনের সামনে কিছু বলেন নি কারণ উনি বুঝতে পারছেন এই চারজনের মধ্যেই কেউ নিউস লিক করছে। মানুষ কতোটা স্বার্থপর। কিন্তু এই স্বার্থপর পৃথিবীতে ওনার মেয়েটাকে কীকরে একা ফেলে যাবেন সেটাই ভাবছেন উনি।

___________________

ক্লাবে লাউড মিউসিক চলছে সেই মিউসিকের তালে তালে একটা মেয়ের সাথে ডান্স করছে রিক চৌধুরীর। এটা ওর নিত্যদিনের কাজ। ডান্স করতে করতে একপর্যায়ে রিক মেয়েটার কোমর জরানো অবস্থায় বলল,

— ” ওয়েট সুইটহার্ট আমি আসছি একটু।”

মেয়েটা রিকের গলা জরিয়ে ধরে নেকা কন্ঠে বলল,

— ” সিউর বেইবি।”

রিক মেয়েটার গালে একটা কিস করে বাই বলে ছাড়িয়ে চলে গেলো ওর বন্ধুদের কাছে। বন্ধুদের কাছে গিয়ে একটা হাসি দিয়ে হাইফাইভ করলো একজনের সাথে। ওদের মধ্যে একজন বলল,

— “তোরই লাক ভাই। আমারা নিজে থেকে মেয়েদের কাছে গিয়েও লাইন পাইনা আর তুই ক্লাবে এসে দাঁড়ালে মেয়েরা লাইন দাঁড়ানোর জায়গাও পায়না।”

রিক বাঁকা হেসে ড্রিংকের গ্লাসে ওয়াইন ঢালতে ঢালতে বলল,

— ” সবাই রিক চৌধুরী হয়না।”

বা পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একজন বলল,

— ” তবে একদিন একটা মেয়ের কাছে গেলে দ্বিতীয়বার সেই মেয়ের ধারেপারেও যাসনা, এটা কোন থিউরি?”

রিক গ্লাসে চুমুক দিয়ে বলল

—” এসব সস্তা জিনিস একদিনের ব্যাবহারেরই যোগ্য। দেখছিস না স্কিনে ঘসা মারলে এক সেন্টিমিটার পর্যন্ত মেকাপই পাবি, আর হাত বাড়ানোর আগেই চলে আসে ধরা দিতে, এরা সস্তা ছাড়া আর কী? সাচ আ চিপ গার্ল। এদের নিয়ে আমি জাস্ট টাইমপাস করি নাথিং ইলস।”

ওর বন্ধু এবার হেসে দিয়ে বলল,

— ” আচ্ছা তাহলে বিয়ের পর কী করবি? বিয়ের পর তো একটা মেয়েকে নিয়েই সারাজীবন থাকতে হবে।”

রিক গ্লাসটা টেবলে রেখে বলল,

—” বিয়ে টিয়ে নিয়ে ভাবিনি বাট যদি কখনো করি এসব সস্তা জিনিসকে করবোনা।”

ওদের মধ্যে একজন অবাক হয়ে বলল,

— ” এতো হট হট দামী ড্রেসাপের মেয়েদের তোর সস্তা মনে হয়? তো মামু এক্সপেনসিভ মেয়ের ডেফিনেশনটা বলবে একটু?”

রিক টেবিলে উঠে বসে আলসেমি ঝেড়ে বলল,

— “যাকে দেখেই আমার চোখ আটকে যাবে। এসব মেকাপ সুন্দরী হবেনা। নেচরাল বিউটি থাকবে। নট অনলি দ্যাট সে এইসব মেয়েদের মতো এতো সহজেই আমার হাতে ধরা দিতে চাইবেনা। সি হ্যাস টু হ্যাস হার ওউন পালসোনালিটি। সবার থেকে আলাদা হবে।”

ওরা সবাই অবাক। কোনো মেয়েকে দেখে রিক চৌধুরীর চোখ আটকে যাবে? আবার রিক চৌধুরীকে ধরা দিতেও চাইবেনা? এও সম্ভব? সবাই একসাথে বলল,

— ” এমন জিনিস কোথায় পাবি ভাই?”

রিক হালকা হেসে গ্লাসে চুমুক দিয়ে বলল,

— ” কোথাও তো থাকা উচিত। কিন্তু হ্যা এট লাস্ট তাকে আমার হাতের পুতুল হয়েই থাকতে হবে। নাহলে রিক চৌধুরীর হিংস্রতার পরিচয় ও প্রতি মিনিটে মিনিটে পাবে।”

সবাই একে ওপরের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল অর্থাৎ এ বড় আজব বস্তু। আর ওর নজরে যদি সত্যিই ওরকম কোনো মেয়ে পরে যায় তাহলে সেই মেয়ের কপালে দুঃখ আছে কিন্তু আদোও কী এমন মেয়ে আছে কোথাও?

____________________

অনিমা অনাথ আশ্রমে বাচ্চাদের সাথে মজা করে খেলে যাচ্ছে। কোচিং ক্লাস শেষ করেই এখানে বাচ্চাদের সাথে সময় কাটাতে এসছে। খেলতে থাকা অবস্হায় ওকেও একটা বাচ্চা লাগছে।খেলার মাঝখানে হঠাৎ ওর কাধে কেউ হাত রাখল। অনিমা পেছনে তাকিয়ে দেখলো মাদার দাড়িয়ে আছে। মাদারকে দেখেই হেসে জরিয়ে ধরলো, মাদারও ওকে জরিয়ে ধরল, অনিমা মাদারকে ছেড়ে দিয়ে ওনার গাল টেনে বলল

— ” কেমন আছো আমার সুইট, কিউট, এভার গ্রিন বারবি ডল?”

মাদার অনিমার কান টেনে ধরল, অনিমা এক চোখে বুজে বলল,

— ” আহ মাদার, লাগছে তো আমার।”

মাদার অনিমার কান ছাড়তেই ও মুখ ফুলিয়ে কান ডলতে লাগল। মাদার ওর পিঠে একটা চাপড় মেরে বলল,

— ” ফাজিল মেয়ে, বেশি দুষ্টু হয়ে গেছো আজকাল।”

অনিমা হেসে ওর শার্টের কলার সেট করে বলল,

— ” হামতো এসাই হ্যা ভাইয়া… ও সরি সরি মাইয়া।”

মাদার হেসে দিলো অনিমার কথায় আর অনিমাও হেসে দিলো। এরপর আরো কিছুক্ষণ বাচ্চাদের সাথে খেলে আর মাদারের সাথে গল্প করে সন্ধ্যার দিকে ফিরে এলো ও। বাড়ি দেখলো হাসান কোতয়াল একমনে ল্যাপটপে কাজ করে চলেছে। অনিমা মুচকি হেসে পা টিপে টিপে হাসান কোতয়ালকে পেছনে গিয়ে ‘ভাউ’ বলল। হাসান কোতয়াল আগেই দেখে নিয়েছেন অনিমাকে তবুও মেয়েকে আনন্দ দিতে ভয় পাওয়ার ভান করে বললেন,

— ” বাপরে। মামনী তুমিতো ভয় পাইয়ে দিয়েছো আমাকে।”

অনিমা হেসে দিয়ে সোফায় বসে বলল,

— ” আমি জানি তুমি একটুও ভয় পাওনি। সাচ এ পোর এক্টর।”

হাসান কোতয়াল ল্যাপটপটা রেখে বলল,

— ” সেই। এক্টিং এ যদি ভালো হতাম তো এতোদিনে শাহ রুক খান হয়ে যেতাম। ”

অনিমা একটু এক্সাইটেড হয়ে বলল,

— ” এক্সাক্টলি। ইউ নো হোয়াট আব্বু তুমি না সেই হ্যান্ডসাম আছো। ক্লিন সেভে কী কিউট লাগে তোমাকে। এই বয়সে অনেকেই পেট মোটা হয়ে যায় কিন্তু তোমার হয়নি, নো রিংকেলস, যদিও দুই একটা চুল পেকে গেছে, ও ব্যপারনা। তুমি চাইলে তোমাকে আনমেরিড মেয়েরাও রাজি হয়ে যাবে।”

হাসান কোতয়াল হেসে দিয়ে বলল,

— ” তো কী বলো বিয়ে করে ফেলি?”

অনিমা সোজা হয়ে বসে বলল,

— ” নাহ বাবা থাক নইলে আমার আম্মুর ভূত এসে তোমার ঘাড় মটকে দেবে।”

হাসান কোতয়াল এবার শব্দ করে হেসে দিয়ে বললেন,

— ” যাও ফ্রেশ হয়ে এসো আমি স্নাকস আর চা করছি।”

— ” আমি করছি তুমি বসো।”

— ” নাহ মা তুমি ক্লান্ত হয়ে এসছো রেস্ট করো।”

অনিমা মুখ ফুলিয়ে বলল

— ” সে তো তুমিও এসছো।”

হাসান কোতয়াল হেসে মেয়েকে এক হাতে ঝ
জরিয়ে ধরে বললেন,

— ” আমি থাকতে আমার মেয়ে কেনো কষ্ট করবে?”

অনিমা মুখ তুলে হাসান কোতয়ালের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” একি কথা তো আমিও বলতে পারি।”

হাসান কোতয়াল অনিমার নাক টেনে বলল,

— ” আমি বড় তাই।”

অনিমা উঠে দাঁড়িয়ে বলল,

— ” তোমার সাথে কথায় পারবোনা।”

বলে রুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে হাসান কোতয়াল ও চলে গেলেন কিচেনে।
রাতের বেলা হাসান কোতয়ালে সোফায় বসে কাজ করছেন হঠাৎ ফোন বেজে উঠল, কলটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে রঞ্জিত চৌধুরী বললেন,

— ” মিস্টার কোতয়াল। আমি শেষ বারের মতো আপনাকে বলছি থেমে যান।”

হাসান কোতয়াল বুঝতে পারলেন এটা রঞ্জিত চৌধুরী তাই একটা শ্বাস ফেলে বললেন,

— ” আমি থেমে যাওয়ার মানুষ নই, যেটা একবার করবো বলে ঠিক করি সেটা করেই ছাড়ি। মৃত্যু ছাড়া কোনোকিছুই আমাকে থামাতে পারবেনা।”

মিস্টার রঞ্জিত রাগে গজগজ করে বললেন,

— ” ঠিকাছে তাহলে মৃত্যুর জন্যে তৈরী হয়ে যান। একটা কথা মনে রাখবেন ঐ আর্টিকেল আমি পাবলিসড হতে দেবোনা।”

হাসান কোতয়াল শক্ত গলায় বললেন,

— ” আমি তৈরী আছি। প্রত্যেক মূহুর্ত, প্রত্যেক সেকেন্ড মৃত্যুর জন্যে তৈরী আছি আমি। আপনি যা পারেন করুন।”

মিস্টার রঞ্জিত টেবিলে বাড়ি মেরে বলল,

— ” ভূল করছো হাসান। নিজেতো মরবেই নিজের মেয়ের জীবণটাও শেষ করে দেবে তুমি। আমার রোষের স্বীকার কিন্তু তোমার মেয়েও হবে।”

হাসান কোতয়াল এর মনের ভেতর আশঙ্কা বাসা বাধলেও উনি নিজেকে শক্ত করে বলল,

— ” আমার মেয়ের সুরক্ষার ব্যবস্হা আমি করেই গেছি।”

— ” দেখো হাসান আমি চাইনা তোমার কোনো ক্ষতি করতে বাধ্য করোনা আমায়। মরবে কিন্তু।”

হাসান কোতয়াল মলিন হেসে বললেন,

— ” মরার জন্যে তৈরী আছি আমি, কিন্তু পিছিয়ে যাবোনা। ওল দা বেস্ট।”

এটুকু বলেই ফোন কেটে দিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো হাসান কোতয়াল। পেছনে তাকিয়েই চমকে গেলেন উনি কারণ অনিমা ছলছলে চোখে তাকিয়ে আছে। উনি কিছু বলবেন তার আগেই অনিমা দৌড়ে গিয়ে জরিয়ে ধরলো ওনাকে। ফুপিয়ে কাঁদতে লাগল। হাসান কোতয়াল অনিমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,

— ” কাঁদছো কেনো মামনী? কী হয়েছে?”

অনিমা নাক টেনে টেনে বলল

— ” আব্বু তুমি প্লিজ কোনো আর্টিকেল করোনা প্লিজ, এসবের কোনো দরকার নেই, ওরা মেরে ফেলবে তোমাকে, প্লিজ আব্বু।”

হাসান কোতয়াল অনিমাকে সোফায় বসিয়ে ওর পাশে বসে বললেন,

— ” মামনী তুমি আমার মেয়ে হয়ে এই ধরণের কথা বলছো?”

অনিমা আবারও হাসান কোতয়ালকে জরিয়ে ধরে বলল,

— ” না আব্বু প্লিজ, ওরা খুব খারাপ। তোমার কিছু হয়ে গেলে আমি মরে যাবো।”

হাসান কোতয়াল ওনার মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,

— ” আমি যদি কাজটা না করি তাহলে সবাইতো তোমার বাবাকে কাওয়ার্ড বলবে সেটা ভালো লাগবে?”

অনিমা কাদোকাদো গলায় বলল

— ” কিন্তু…”

অনিমাকে থামিয়ে দিয়ে হাসান কোতয়াল বললেন,

— ” চুপ আর কোনো কথা না অনেক রাত হয়েছে। আজ রুমে যেতে হবেনা আজ তুমি আমার সাথে ঘুমোবে। আজ আমি গল্প বলে ঘুম পারাবো তোমাকে।”

অনিমা হেসে বলল,

— ” আমিকি বাচ্চা নাকি?”

হাসান কোতয়াল অনিমার মাথায় টোকা মেরে বলল,

— ” আমার কাছেতো তুই বাচ্চাই তোর মনে আছে ছোটবেলায় রাজকুমারের গল্প বলে ঘুম পাড়াতাম?”

— “মনে আছে তো। এক রাক্ষস রাজা আর রাণীকে মেরে রাজকুমারীকে বন্দী করে রেখেছিলো। ওই রাক্ষসটা রাজকুমারীকে প্রচুর অত্যাচার করতো। একদিন এক শক্তিশালী রাজকুমার এসে সব দুষ্টু রাক্ষসগুলোকে মেরে রাজকুমারীকে বাঁচিয়ে নিয়েছিলো।”

— “তাহলে চলো আজকেও শোনাবো।”

বলে অনিমাকে নিয়ে গিয়ে একদম ছোটবেলার মতো করে গল্প বলে ঘুম পাড়িয়ে দিলো। আজ অনিমাও যেনো ফিরে গেছিলো ওর ছোটবেলাতে। অনিমা পুরো ছোটবেলার মতোই নানারকম প্রশ্ন করছে আর হাসান কোতয়াল ধৈর্যধরে উত্তর দিচ্ছেন। মেয়ের আড়ালেই নিজের চোখের কোণের জলটা মুছে নিলেন উনি।”

এদিকে রঞ্জিত চোধুরী ফোন রেখে কবির শেখের দিকে তাকিয়ে বললেন

— ” কী করবো এবার?”

কবির শেখ একটা শ্বাস নিয়ে বললেন,

— ” কী আর করার? ওপরে পাঠিয়ে দিতে হবে। আর সাথে মেয়েটাকেও।”

_____________________

বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে হালকা হালকা বাজও পরছে। অফিসের কাজ শেষ করে কার ড্রাইভ করে বাড়ি ফিরছেন হাসান কোতয়াল। হঠাৎই ওনার সামনে দুটো সাদা গাড়ি এসে থামলো, উনি তাড়াতাড়ি ব্রেক করতেই গাড়ি থেকে কিছু লোক নেমে এলো। উনি খুব বুদ্ধিমান আর বিচক্ষণ লোক ছিলেন তাই বুঝতে পারলেন এরা কারা আর কেনো এসছেন। কিন্তু ওনার মাথায় এখন নিজের প্রাণের চিন্তা নেই ওনার মেয়ের চিন্তা ঘুরছে। তাই উনি সাথেসাথেই গাড়ি ঘুরিয়ে শর্টকাট পথে চলে গেলেন ওই দুটো গাড়িও ওনার পেছন পেছন আসছে। উনি খুব দ্রুত ড্রাইভ করছে। ড্রাইভ করতে করতেই কাউকে একটা ফোন দিলেন উনি। ফোনটা রিসিভ করতেই উনি বললেন,

— ” আমার হাতে সময় নেই এটাই হয়তো আমার তোমাকে বলা শেষ কথা, আমার মেয়েটাকে দেখে রেখো ওকে এই পশুদের হাত থেকে বাঁচানোর দ্বায়িত্ব তোমাকে দিয়ে গেলাম। আমার বিশ্বাস তুমি তোমার কথা রাখবে। ভালো থেকো।”

ওপাশ থেকে লোকটা উত্তেজিত হয়ে অনেক কথা বলছে কিন্তু উনি ফোন কেটে আবার ড্রাইভিং এ মনোযোগ দিলেন। বাড়ি পোছেই উনি দৌড়ে ভেতরে ঢুকলেন। ঢুকে দেখলেন অনিমা সোফায় বসে পড়ছে। উনি তাড়াতাড়ি গিয়ে বললেন

— ” মামনী তুমি পালাও এখান থেকে।”

অনিমা অবাক হয়ে দাড়িয়ে বলল,

— ” আব্বু কী হয়েছে?”

মিস্টার রঞ্জিত একটা কাগজ বার করে অনিমার হাতে দিয়ে বললেন,

— ” এটা রাখো, তোমার মামা বাড়িতে চলে যাও। তারপরে এই নম্বরে যোগাযোগ করবে আর লোকটি যা বলবে ঠিক তাই করবে। এখন যাও পালাও।”

অনিমা ব্যাপারটা কিছুটা বুঝতে পেরে বলল,

— ” মানে কী? কী বলছো তুমি এসব? আমি যাবোনা তোমাকে একা রেখে।”

হাসান কোতয়াল জানেন ওনার মেয়ে কতো জেদি তাই বললেন,

— ” মামনী ধরে নাও এটাই তোমার কাছে আমার শেষ চাওয়া প্লিজ যাও।”

অনিমা কাঁদতে কাঁদতে বলল,

— ” আব্বু প্লিজ?”

কারো আওয়াজ পেয়ে হাসান কোতয়াল বলল,

— ” ওরা এসে গেছে তুমি পেছনের গেইট দিয়ে যাও।”

— ” কিন্তু আব্বু…”

হাসান কোতয়াল চেচিয়ে বলল,

— ” মামনী যাও।”

অনিমার ইচ্ছা না থাকলেও বাদ্ধ হয়ে পেছনের গেইট দিয়ে বেড়িতে গেলো। ওর কলিজা ফেটে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে ওর জীবণটাই ও ভেতরে রেখে এসছে। ভীষণ জোরে জোরে বজ্রপাত হচ্ছে। বৃষ্টিতে ভিজে চুপচুপে হয়ে গেছে ও। কিন্তু দুর্ভাগ্যবসত একটু এগোতেই ওর সামনে রঞ্জিতের লোকেরা চলে এলো। সবাই ওর সামনে ওকে ঘিরে দাড়িয়ে আছে। অনিমা অন্যদিকে দৌড়লো ওদের কাছ থেকে বাঁচার জন্যে কিন্তু রাস্তার ইটের সাথে আটকে পরে গেলো ও, উঠতে চেয়েও উঠতে পারলোনা পায়ের চোটের জন্যে। এসবের মধ্যে কাগজটাও পরে গেছে কোথাও। লোকগুলো ওর কাছে এসে ওকে ঘিরে ধরতেই ও হালকা পিছিয়ে ভয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল,

— ” প্লিজ আমাদের ছেড়ে দিন। আমার আব্বুকে মারবেন না প্লিজ।”

ওর কথা শুনে ওরা সবাই অট্টহাসি দিলো, তারপর বলল,

— ” ওর বাপ যতোটা চালাক ও দেখছি ততোটাই বোকা! আরে খুকুমনি তোমাকে ছাড়ার হলে আমরা ধরবো কেনো? আর তোমার বাবার এতোক্ষণে ইহকাল সমাপ্ত হয়ে গেছে।”

অনিমা চমকে গেলো। চিৎকার করে উঠলো ও। কাদতে কাদতে বলল,

— ” প্লিজ আব্বুকে ছেড়ে দিন প্লিজ।”

লোকগুলো ওর কথায় পাত্তা না দিয়ে মিস্টার রঞ্জিতকে ফোন করে বলল,

— ” স্যার মেয়েটাকে পেয়ে গেছি, এখন কী করবো?”

ওপাশ থেকে কিছু বলতেই লোকটা আচ্ছা বলে ফোন রেখে দিলো। তারপর অনিমার হাত ধরে টেনে তুলে বাকিদের উদ্দেশ্যে বলল,

— ” নিয়ে যেতে বলেছে ওখানে।”

ওরা সবাই অনিমাকে টেনে নিয়ে ওদের বাড়িতে সোজা হাসান কোতয়ালের বেডরুমে নিয়ে গেলো। আর ওখানে গিয়ে সামনে তাকাতেই অনিমা স্তব্ধ হয়ে গেলো, ওর পৃথিবী ওখানেই থেমে গেলো, ওর মনে হচ্ছে ওর মাথায় কেউ ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করেছে, একটা লোক ওর হাত ধরে আছে তবুও ফ্লোরে বসে পরলো ও দাড়িয়ে থাকার শক্তি নেই ওর। কারণ ওর সামনে সিলিং ফ্যানে ওর আব্বু অর্থাৎ হাসান কোতয়ালের লাশ ঝুলছে।
.
# চলবে…

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ