Monday, October 6, 2025







বর্ষণের সেই রাতে ❤পর্ব- ২৬

বর্ষণের সেই রাতে ❤পর্ব- ২৬
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

.
একটা চৌকি টাইপ আসনে বসে আছেন মাদার, ওনার বৃদ্ধ চেহারায় কপালের রেখা আরো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে আজ। আর নিচে ফ্লোরে আসাম করে বসে আছে আদ্রিয়ান, আদিব, আশিস, তীব্র, রাইমা, অরুমিতা আর স্নেহা। হ্যাঁ আদিব, আশিস, রাইমা আর স্নেহা কেও কল করে ডেকে নিয়েছে ওরা। সাতজনেই উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মাদারের দিকে। মাদার চিন্তিত কন্ঠে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” অনিমা কোথায় এখন?”

আদ্রিয়ান একটা একটা শ্বাস ফেলে বলল,

— “আমার একটা এপার্টমেন্টেই আছে। আসার আগে দেখে এসছি ঘুমোচ্ছে, আসলে রাতে স্লিপিং পিলস দিয়েছিলাম তাই একটু বেশি সময় ঘুমোবে।”

মাদার কিছুক্ষণ চুপ করে কিছু একটা ভাবল তারপর সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,

— “অনিমার অতীত জেনে তোমাদের কী লাভ?”

আদ্রিয়ান মাদারের পায়ের কাছেই বসে আছে, ও মাদারের কোলের ওপর হাত রেখে বলল

— ” মাদার ওর অতীত ওর বর্তমানের ওপর প্রভাব ফেলছে। এন্ড আই থিংক ওর অতীত ওর বর্তমানে ফিরে এসছে। যার কারণে ও শান্তিতে নিশ্বাস ও নিতে পারছেনা।”

পাশ থেকে তীব্র বলে উঠল,

— ” আপনি ঠিকি ভাবছেন ওর পুরো অতীতটাই ওর বর্তমানে ফিরে এসছে। রিক, অর্ক ওরা সবাই।”

এটা শুনে মাদার চমকে গিয়ে বললেন,

— ” কী? রিক চৌধুরী অনিমাকে খুজে পেয়ে গেছে?”

আদ্রিয়ান মাদারের হাত ধরে বলল,

— ” এইজন্যেই আমি সবটা জানতে চাইছি। কালকে রাতেও ওকে পাগলের মতো ছটফট করতে দেখেছি আমি, ওকে ওই কষ্ট থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্যে ওর অতীতটা জানা খুব দরকার মাদার। তাই সবটা বলুন কী হয়েছিলো আঙ্কেল এর মৃত্যুর পর?”

মাদার এবার ওদের দিকে একবার তাকালেন তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন

— ” তোমরা সবাই অনিমার খুব ভালো বন্ধু। আমার বিশ্বাস যে যদি কেউ ওকে এই নরক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে পারে সেটা তোমরাই পারবে। আমি মোটামুটি সবটাই জানি। কারণ হাসান আমার ছেলের মতো ছিলো, অনিমাকে নিয়ে প্রায় আসতো এখানে। অনিমার বাচ্চা খুব প্রিয় ছিলো। জন্মের পর থেকে মায়ের স্নেহ পায়নি ও, হাসান ওকে খুব বেশি ভালোবেসে বড় করলেও ওকে তেমন একটা সময় দিতো পারতোনা। তাই হয়তো এই অনাথ বাচ্চাদের প্রতি ওর এতো টান ছিলো। আর এই আশ্রমের বাচ্চারাও ওকে খুব ভালোবাসতো। এভাবেই ওদের দিন ভালোই চলছিলো। কিন্তু জিজাস্ হয়তো অন্য কিছুই চাইছিলো। তাই হয়তো হাসান এর মাথায় রঞ্জিত চৌধুরীকে এক্সপোস করার ভূত চড়েছিলো। ”

রাইমা অবাক হয়ে বলল

— ” মিনিস্টার রঞ্জিত চৌধুরী?”

— ” হ্যা এমনিতেতো মিনিস্টার কিন্তু ওনার পাপের শেষ নেই। সবার সামনে ভালো মানুষের মুখোশ পরে থাকে। আর হাসান সেই মুখোশটাই খুলতে চেয়েছিলো। আর এটাই ওর কাল হলো।”

আশিস কৌতুহলি হয়ে বলল

— ” কিন্তু এসবের সাথে অনিমা কীকরে জরালো?”

সবাই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মাদারের দিকে আর মাদার একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ওদেরকে সবটা বলতে শুরু করলো।

__________________

সাত বছর আগে ___

নিজের কেবিনে বসেই ফাইল রেডি করছেন হাসান কোতয়াল। বেশ কয়েকদিন ধরেই একটা আর্টিকেল নিয়ে কাজ করছেন উনি। এবারের আর্টিকেল টা সিকরেটলি কম্প্লিট করছেন।ওনার কম্পানির পাঁচজন সাংবাদিক কে নিয়ে কাজ করছেন। একটু পর ওদেরকে নিয়ে মিটিং করতে হবে। ফাইলগুলো চেক করে একটা একটা শ্বাস ফেললেন হাসান কোতয়াল। জার্নালিসম ওনার কাছে শুধুমাত্র একটা পেশা নয় বরং এটা ওনার সাধনা। উনি ওনার লক্ষের খুব কাছেই, সব ঠিক থাকলে উনি শীঘ্রই সমাজের ভয়ংকর এক পশুকে সবার সামনে তুলে ধরতে পারবেন। অনেক অনেক নিরীহ মানুষ রক্ষা পাবে এই নরপশুর হাত থেকে। এরমধ্যেই বাকি পাঁচজন চলে এলেন ওনার কেবিনে। আতাউর , মুসফিক, মিতা, সম্পা, ইলিয়াস। আতাউরের বয়স পয়তাল্লিস, মুসফিকের তেত্রিশ, ইলিয়াস আর সম্পার ত্রিশ, মিতার আটাশ। ইলিয়াস দরজায় নক করে বলল

— ” মে উই কাম ইন স্যার।”

হাসান কোতয়াল ফাইল থেকে চোখ সরিয়ে বললেন

— ” এসো।”

পাঁচ জনেই এসে বসলো। হাসান কোতয়াল ওদের দিকে তাকিয়ে বলল

— ” যাকে যা যা তথ্য যোগার করতে বলেছিলাম রেডি হয়েছে।”

পাঁচজনেই একসুরে বলল

— ” ইয়েস স্যার ।”

— ” ভেরি গুড। আমরা আমাদের আর্টিকেল টা কম্প্লিট করার প্রায় শেষের পথে। আমাদের অনেকদিনের পরিশ্রমের ফল এটা। এই পর্যন্ত ব্যাপারটা সিকরেট ছিলো, কিন্তু কোনোভাবে রঞ্জিত চ‍ৌধুরীর কানে খবরটা পৌছে গেছে। উনি আমাকে প্রথমে মোটা অঙ্কের টাকা অফার করেছিলেন। না করে দেওয়াতে প্রাণে মারার হুমকিও দিয়েছেন বাট আমি কেয়ার করিনি। খবরটা কীকরে লিক হলো আমি জানিনা। আমার বিশ্বাস তোমাদের মধ্যে কেউ এরকম টা করে নি, তোমারা আমার খুব বিশ্বস্ত। তবে যাই হোক আমি পিছিয়ে যাবোনা, আমার বিশ্বাস তোমরাও তোমাদের কর্তব্য থেকে পিছিয়ে আসবেনা। আর আর্টিকেলটা আমাদের পেপারে ছাপার আগে, এন্ড নিউস চ্যানেলে প্রুভ গুলো দেখানোর আগ পর্যন্ত আমরা থামবো না, গট ইট?

সবাই একসাথে সম্মতি জানালো। এরপর ওনারা আর্টিকেলটার ব্যাপারে কিছুক্ষণ আলোচনা করার পর। মিটিং শেষ করে ওদের পাঁচজনকে বিদায় দিয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলেন হাসান কোতয়াল। উনি জানেন ওনার জীবণ কতোটা সংকোটে আছে। ওনার সেটা নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই কিন্তু ওনার কিছু হয়ে গেলে ওনার মেয়ের কী হবে? মেয়েটার তো উনি ছাড়া কেউ নেই। এসব চিন্তা করে উনি বিড়বিড় করে বললেন

— ” নাহ আমাকে কথা বলতে হবে ওর সাথে। একমাত্র ওর কাছেই আমি আমার মেয়েকে নিরাপদে রেখে যেতে পারবো।”

এটুকুই বলেই উনি বেড়িয়ে পড়লেন সেই কাঙ্ক্ষিত লোকটার সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে।

___________________

এদিকে মিস্টার রঞ্জিত ওনার পার্টির অফিসের মিটিং শেষ করে সবে নিজের চেম্বারে বসে রেস্ট করছেন। হঠাৎ করেই ওনার পিএ এসে বলল কেউ একজন ওনার সাথে দেখা করতে চান। উনি অনুমতি দিতেই একজন লোক এসে কেবিনে ঢুকলো। লোকটাকে দেখেই বাকা হেসে মিস্টার রঞ্জিত বললেন,

— ” তো হাসান কোতয়াল ওনার আর্টিকেলের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে তাইতো?”

লোকটা মাথা নিচু করে বলল,

— ” না স্যার উনি তো ওনার সিদ্ধান্ত থেকে এক চুলও নড়ে নি। উনি তো খুব তাড়াতাড়ি আর্টিকেলটা পাবলিসড করতে চাইছেন।”

এটা শোনার সাথেসাথেই রঞ্জিত চৌধুরীর চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো। এতো হুমকি ধমকি দেওয়ার পরেও একটুও ভয় নেই। কীকরে থামাবে একে? লোকটা মাথা নিচু করে বলল,

— ” স্যার আমার টাকাটা?”

রঞ্জিত চোধুরী বিরক্ত হয়ে ড্রয়ার থেকে একটা টাকার বান্ডিল বের করে লোকটার দিকে দিয়ে বলল

— ” টাকা ঠিক মতো পেয়ে যাচ্ছো, খবরগুলোও জেনো আমি ঠিকমতো পেয়ে যাই।”

লোকটা টাকা নিয়ে হেসে দিয়ে বলল

— ” চিন্তা করবেন না স্যার সব খবর সময়মতো প‍ৌছে দেবো আপনার কাছে।”

— ” হ্যাঁ যাও এখন।”

লোকটা চলে যেতেই মিস্টার রঞ্জিত চিন্তায় মগ্ন হয়ে গেলেন। একটু পরেই কবির শেখ এসে বসলেন ওনার কেবিনে। কিন্তু মিস্টার রঞ্জিত এর এই বিষয়ে কোনো খেয়াল নেই উনি ওনার চিন্তায় মগ্ন। কবির শেখ একটা কাশি দিয়ে বললেন

— ” এতো কী ভাবছেন জিজু?”

মিস্টার রঞ্জিত কবির শেখ এর দিকে তাকিয়ে বললেন,

— ” ঐ জার্নালিস্ট তো মানতেই চাইছেনা। যদি ঐ আর্টিকেল আর প্রুভ যদি একবার পাবলিস্ট হয়তো বরবাদ হয়ে যাবো আমি। আমার এতোদিনের নাম, রেপুটেশন সব শেষ হয়ে যাবে। বুঝতে পারছো?”

কবির শেখ ভ্রু কুচকে বললেন

— ” থামিয়ে দিন ওটাকে?”

— ” কীকরে? টাকার লোভ দেখালাম লাভ হলো না। প্রাণের ভয় দেখিয়েছি তাতেও লাভ হয়নি। আর কী করব?”

কবির শেখ এবার হেসে দিয়ে বলল,

— ” কাম অন জিজু। একটু এগিয়ে ভাবুন। প্রত্যেকটা মানুষেরই একটা দূর্বল জায়গা থাকে। আর হাসান কোতয়ালেরও আছে। আমি সব খোজ খবর নিয়ে নিয়েছি।”

মিস্টার রঞ্জিত অবাক হয়ে বললেন,

— ” কী সেটা?”

কবির শেখ বাকা হাসি দিয়ে বললেন,

— ” ওনার একমাত্র মেয়ে অনিমা কোতয়াল। এবার এইচ এস সি দিয়ে ভার্সিটি এডমিশনের জন্যে প্রিপারেশন নিচ্ছে। একে মেয়ে, বয়স সতেরোর একটু ওপরে হবে। তো বুঝতেই পারছেন?”

এটা শুনে কবির শেখ এর দিকে তাকিয়ে হেসে দিলেন রঞ্জিত চৌধুরী। অর্থাৎ উনি বুঝে গেছেন ওনাকে কী করতে হবে। আর সেই হাসি দেখে কবির শেখ ও হেসে দিলেন।

___________________

রাতে হাসান কোতয়াল বাড়িতে এসে ড্রয়িংরুমে ঢুকে সোফার দিকে তাকিয়ে নিজের অজান্তেই হেসে দিলেন। কারণ ওনার মেয়ে অনিমা এলোমেলোভাবে সোফায় ঘুমিয়ে আছে। বুকের ওপর বই রাখা। উনি বুঝতেই পারছেন যে ওনার জন্যে অপেক্ষা করতে করতে সোফায় শুয়ে বই পড়ছিলো আর পরে ওভাবেই ঘুমিয়ে পরেছে। আস্তে করে বইটা সরিয়ে মেয়েটার কাছে বসে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন

— ” মামনী ওঠো।”

অনিমা চোখ বুজেই ভ্রু কুচকে মোড়ামুড়ি দিলো। হাসান কোতয়াল আবারো ডাকল, কয়েকবার ডাকার পর চোখ ডলে উঠে বসলো অনিমা। তাকিয়ে নিজের আব্বুকে দেখেই মিষ্টি একটা হাসি দিলো । এই হাসিটাই ওনার সব ক্লান্তি দূর করে দেওয়ার জন্যে যথেষ্ট। উনি মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,

— ” তোমাকে না বলেছি মামনী যে আমার জন্যে রাত জেগে অপেক্ষা করবে না? খেয়ে শুয়ে পরবে?”

অনিমা একটা হাই তুলে ঘুমজরানো কন্ঠে বলল,

— ” তুমি খাইয়ে না দিলে খেতে ইচ্ছে করেনা তো।”

হাসান কোতয়াল হালকা হেসে বললেন,

— ” কিন্তু আমি যখন থাকবোনা তখন কী করবে? আমি তো আর সারাজীবন থাকবোনা তোমার সাথে।”

অনিমার ঘুম নিমেষেই উবে গেলো, রেগে গিয়ে বলল,

— ” আব্বু। তুমি সবসময় এরকম বলো। তুমি জানো আমার এসব শুনতে ভালোলাগেনা।”
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
বলেই সোফায় আসাম করে বসে মুখ ঘুরিয়ে রাখল অনিমা। হাসান কোতয়াল অনিমার পাশে বসে বললেন

— ” আমার মামনী রাগ করেছে আমার ওপর?

অনিমা ঘুরে হাসান কোতয়ালকে জরিয়ে ধরে কাদোকাদো বলল,

— ” তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবোনা আব্বু, আম্মুতো আমাকে পৃথিবীতে আনার কাজ সেড়েই আমাকে ফেলে চলে গেছে, তুমি যেওনা প্লিজ।”

হাসান কোতয়াল মনে মনে কষ্ট পেলেও মুখে হাসি টেনে বললেন,

— ” পাগলী মেয়ে। সবাইকী সারাজীবন বেঁচে থাকে নাকি? আর তাছাড়াও বিয়ের পরতো আর আমার সাথে থাকতে পারবেনা। তখন তো শশুর বাড়ি থাকতে হবে।”

অনিমা হাসান কোতয়ালকে ছেড়ে দিয়ে ভ্রু কুচকে বলল

— ” বিয়ে? আমি কোনো বিয়ে ঠিয়ে করছিনা।”

হাসান কোতয়াল অবাক হয়ে বললেন,

— ” এমা এটা কেমন কথা?”

অনিমা মুখ ফুলিয়ে বলল

— ” হ্যাঁ আমি বিয়ে করবোনা। কারণ আমি তোমাকে ছেড়ে থাকতে পারবোনা।”

হাসান কোতোয়াল চিন্তিত মুখ করে বললেন

— ” কিন্তু আমার তো অনেক দিনের সখ নিজের মেয়ে জামাই দেখার। সেই সখ পূরণ করবে না তুমি?”

অনিমা এটা শুনে দাঁত দিয়ে নখ কেটে কিছুক্ষণ ভাবলো তারপর মুখে হাসি টেনে বলল

— ” আইডিয়া। ঘর জামাই নিয়ে আসবে। তাহলেই প্রবলেম সলভব।”

মেয়ের কথা শুনে বিষম খেলেন হাসান কোতয়াল। শেষে কী না ঘর জামাই? তবুও নিজেকে সামলে বললেন

— ” ঘর জামাই?”

অনিমা হেসে বলল

— ” হ্যাঁ ঘর জামাই। যদি বিয়ে দিতে চাও তাহলে সেটাই করতে হবে, নইলে বিয়ে ক্যান্সেল, ব্যাস।”

হাসান কোতয়াল হেসে বললেন,

— “আচ্ছা ঠিকাছে এবার চলো খেতে হবে তো।”

এরপর খাবার বেড়ে হাসান কোতয়াল অনিমাকে খাইয়ে দিতে লাগলেন। খাওয়াতে খাওয়াতে উনি বললেন,

— ” খেয়ে চুপচাপ ঘুমিয়েপড়বে ওকে?”

অনিমা চিবোতে চিবোতে বলল,

— ” পড়া আছে তো আমার পড়বে হবে।”

— ” এখন আর না। অনেক রাত হয়েছে আবার কাল সকালে পড়ো।”

— ” আরে আমাকে আমার পিএডাবলিউ সাবজেক্ট টা পেতে হবে তো। যাতে তোমার মতো বেস্ট জার্নালিস্ট হতে পারি।”

— ” অবশ্যই পারবে বাট আগে সুস্হ থাকতে হবে রাইট?”

অনিমা মাথা নাড়ল। অনিমাকে খাইয়ে আর নিজে খেয়ে হাসান কোতয়াল অনিমার মাথায় হাত বুলিয়ে ওকে ঘুম পারিয়ে দিলো। হঠাৎ করেই ওনার ফোনে কল এলো ফোনটা নিয়ে ব্যালকনিতে গিয়ে রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে রঞ্জিত চৌধুরী বলল

— ” কেমন আছেন মিস্টার কোতয়াল।”

হাসান কোতয়াল গম্ভীর কন্ঠে বললেন,

— ” কেনো ফোন করেছেন?”

— ” তো কী ঠিক করলেন? আর্টিকেল টা ছাপবেনই?”

— ” আমি আমার সিদ্ধান্ত আগেই জানিয়ে দিয়েছি। টাকার লোভ, বা মারার হুমকি কোনোটাই কাজ করবেনা আমার ওপর।”

এবার মিস্টার রঞ্জিত বাকা হেসে বললেন,

— ” শুনলাম আপনার একটা মেয়ে আছে? এই সেতেরো আঠারো বয়সের?”

হাসান কোতয়াল হালকা চমকে উঠলেন তবুও শক্ত গলায় বললেন,

— ” কী বলতে চাইছেন?”

মিস্টার রঞ্জিত হেসে বললেন

— ” তেমন কিছুই না। আজকাল দিনকাল তো এমনিতেই খুব খারাপ যাচ্ছে এখন ধরুন যদি রাস্তায় বেরোলে মেয়েটার সাথে উল্টোপাল্টা কিছু হয়ে যায়। তখন আপনারি খবরের ফ্রন্ট পেইজে আপনারি মেয়ের খবর ছাপতে পারবেন তো?”

হাসান কোতয়াল এবার রেগে গিয়ে বললেন,

— ” মিস্টার চ‍ৌধুরী? ঝামেলাটা আপনার আমার মধ্যে। আমার মেয়ে আপনার কিচ্ছু করেনি তাই ওকে এর মধ্যে টানবেন না।”

— ” সে তো আমিও আপনার কিছু করিনি তাহলে? আপনি কেনো আমার পেছনে পরেছেন?”

— ” কারণ আপনাদের মতো কিটেরা এই দেশটাকে শেষ করে দিচ্ছে আর তাই..”

হাসান কোতয়ালকে বলতে না দিয়ে মিস্টার রঞ্জিত বললেন,

— ” রাখুন আপনার জ্ঞানের কথা। যদি নিজের মেয়েকে বাঁচাতে চান তো ঐ প্রমাণ গুলো আমাদের দিয়ে দিন আর আর্টিকেলের কথা ভূলে যান। নয়তো জাস্ট এক রাতের জন্যে যদি আমার ছেলেরা আপনার মেয়েকে তুলে নিয়ে আসেনা তাহলে পরের দিন সকালের ব্রেকিং নিউস হয়ে যাবে আপনার মেয়ে।”

হাসান কোতয়াল কঠোর গলায় বলল,

— ” এবার তো আর্টিকেল আমি অবশ্যই পাবলিস্ট করবো। আর আমার মেয়েকে কীকরে নিরাপদে রাখতে হবে আমি জানি সেটা।”

এটা শুনে মিস্টার রঞ্জিত রেগে গিয়ে বলল

— ” অনেক বড় ভুল করলে এই ভূলের মাসুল তোমার মেয়েকেই দিতে হবে কিন্তু।”

হাসান কোতয়াল আর কিছু না শুনে ফোনটা রেখে দিয়ে অনিমার কাছে গেলো। কতো নিষ্পাপ লাগছে। রঞ্জিত চৌধুরীকে যাই বলুক মনে মনে ওনারও ভয় হচ্ছে। ওনার জন্যে মেয়েটার বিপদ হবে না তো? মা হারা মেয়েটাকে অনেক কষ্টে বড় করেছেন উনি। উনি থাকতে না হয় বাঁচিয়ে নেবে এই পশুদের কাছ থেকে কিন্তু তারপর? নাহ ওর সাথে আবার কথা বলতে হবে কালকে, কিছু হয়ে যাওয়ার আগেই শেষবার ওর সাথে কথা বলতেই হবে। ওই পারবে ওনার মেয়েকে আগলে রাখতে।
.
#চলবে…
.
(অতীত আর এক পার্ট বা দুই পার্টেই শেষ হবে বেশি বাড়াবোনা। হ্যাপি রিডিং ?)

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ