ফুলশয্যা_সিজন(০৩) পর্ব- ১৮

14
5901

ফুলশয্যা_সিজন(০৩)
পর্ব- ১৮
লেখা- অনামিকা ইসলাম।

কলটা কেটে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় হিয়া। বড়সড় একটা নিঃশ্বাস ফেলে এদিকওদিক তাকায়। দু’হাতে বেশ শক্ত করে চেপে ধরে মাথা।
বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় বাকি সবাই। হৃদয় স্ত্রী হিয়ার কাছে গিয়ে কাঁধে হাত রাখে। মাথা থেকে দু’হাত সরিয়ে পিছু তাকায় হিয়া। চোখের কোণে জমে থাকা জলগুলো অশ্রুবিন্দু হয়ে ঝরে পরে নিচে।
‘আমি এখন কি করব? কি জবাব দেবো আমি এখন?’ শব্দ করে কেঁদে উঠে হিয়া।
বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় শুভ। কন্ঠকে স্বাভাবিক করার বৃথা চেষ্টা করে।’ ফুপ্পি! আমার মনে হয় নীলিমা আন্টিকে তোমার সবটা খুলে বলা উচিৎ।’
শুভ’র সাথে তাল মিলিয়ে হৃদয়ও জানায়, হ্যাঁ! আমার মনে হয় শুভ ঠিক’ই বলেছে। তোমার এখন’ই ওনাদের সবটা জানানো উচিৎ।
এরকম’ই সাতপাঁচ নানান কথা ভাবছিল ওরা। তার’ই মধ্যে নীলিমার ৬,৭টা কল এসে আপনাআপনি কেটে যায়।
তারপর অতিবাহিত হয়ে যায় দু’মিনিটেরও অধিক সময়। আর কোন কল আসেনি। এদিকে এরই মাঝে বুকে অদম্য সাহস সঞ্চয় করে ফেলেছে হিয়া। আর সেই সাহসিকতার জোরে’ই কল করে প্রাণপ্রিয় বান্ধবী নীলিমা’কে।
তারপরের কথোপকথনঃ-

– হ্যাঁলো…(হিয়া)
– হ্যাঁ, শুনছি! কোথায় আদিরা?(নীলিমা)
– আমি আসলে নিচে’ই এখন দাঁড়ি….
– আপনি উপরে নাকি নিচে সেটা তো আমি
জানতে চাইনি মিসেস হিয়া। আমি যেটা
জানতে চাচ্ছি সেটা হলো- কোথায়
আমার মেয়ে আদিরা?
– নীলিমা তুই আমার সাথে এভাবে কেন
কথা বলছিস?
– মিসেস হিয়া! আমি আপনাকে কল
করিনি কথা বলার আদব কায়দা
শিখার জন্য। আমি কল করেছি
আমার মেয়ের সাথে কথা বলার জন্য।
– নীলিমা প্লিজ আমার কথা’টা তো শুন…
– মিসেস হিয়া, আমি স্পষ্ট বাংলা’য়
জানতে চাচ্ছি কোথায় আমার মেয়ে?
– নীলিমা তুই আমার ক….
– আমি কোন কথা শুনতে চাচ্ছি না মিসেস
হিয়া। আপনি শুধু এটা বলেন যে,
কোথায় আমার মেয়ে?
– নীলিমা ও’তো…
– হ্যাঁ, বলুন! ও কি…?
– ঘুমিয়ে আছে।
– কিহ?
– ও আসলে ঘুমিয়ে আছে…
– ঘুমিয়ে আছে?
– হ্যাঁ, ও ঘুমিয়ে আছে। আসলে আজকে
কলেজে তেমন ক্লাস হয়নি তো তাই
বেশীক্ষণ পড়তে হয়নি। ডিনার করে
একটু তাড়াতাড়ি’ই ঘুমিয়ে পরেছে।
– ওহ, আচ্ছা! তাই নাকি…?
– হ্যাঁ…
– হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ

অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে নীলিমা। ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় হিয়া। ফোন কানে চুপসে দাঁড়িয়ে থাকে। ওপাশে নীলিমা’র হাসি থামানোর আপ্রাণ চেষ্টা চলছে। চেষ্টা করছে আবির। কিন্তু কিছু’তেই নীলিমা’র হাসি থামছে না। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে নীলিমা’র গালে জোরে একটা থাপ্পর মারে আবির। নীলিমা ছিটকে পড়ে যায়। সেই সাথে ফোনটাও। হিয়া তখনো লাইনে’ই ছিল। ফোনের লাউডস্পিকার জানান দিচ্ছিল ওপাশে ঠিক কি হচ্ছে…!
ফোন হাতে আবির দেখতে পায় লাইন’টা এখনো কাটেনি। আর তাই ফোনটা কানে ধরে। তারপর কোন রকম সালাম কুশল বিনিময় ছাড়া’ই একটা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় হিয়া’র উদ্দেশ্যে- ‘ বড্ড ভরসা করে মেয়ে’টাকে তোমার কাছে রেখেছিলাম। বিনিময়ে এই তার প্রতিদান দিলে তুমি…?’
ঢোক গিলে হিয়া। প্রশ্নের জবাবে কিছু একটা বলতে চায়। তার আগেই ফোন কেটে দেয় আবির। বন্ধ করে দেয় ফোন।
পরে অনেক বার ট্রাই করেছে কিন্তু প্রতিবার’ই ফোনটা বন্ধ দেখিয়েছে….!
উত্তেজিত আঁখি কোন কথা ছাড়া’ই মায়ের থেকে ফোনটা এনে নিলয়ের নাম্বারে কল দেয়।
তারপরের কথোপকথনঃ-

– হ্যাহ্যাহ্যাঁলো…(আঁখি)
– জ্বি, কে বলছেন?(নীলয়)
– নীলয় আমি আঁখি। চিনতে পারছো?
– ওহ, আঁখি আপু!!!
– হ্যাঁ, তোমার আপু কেমন আছে?
– এতক্ষণে আপুর কথা মনে হলো?
– নীলয় বাদ দাও না! কোথায় নুহা?
– হসপিটালে…
– কিহ?
– হ্যাঁ, হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে আপু।
– কিকিকি হয়েছিল ওর?
– কি হয়েছিল, নাহ?
– হ্যাঁ, বলো নীলয়। কি হয়েছিল?
– কি হয়েছিল সেটা তো আমি জানি না।
কারণ আমি কলেজে ছিলাম। কলেজ
থেকে যখন ফিরি তখন পুরো বাড়ি জুড়ে
মানুষের উপস্থিতি ছিল দেখার মতো।
আব্বু আম্মু বিদেশ থেকে ফিরছে
এজন্য যতটা না মানুষ এসেছিল তার
থেকেও বেশী মানুষ এসেছিল এটা শুনে,
বাবা মা’য়ের সাথে মেয়ের লাশও
এসেছে।
– মানে কি নীলয়?
– তোমাদের বাসার অদূরে’ই আপুর
এক্সিডেন্ট হয়েছিল। বাবা যখন
এয়ারপোর্ট থেকে সরাসরি তোমাদের
বাসায় যাচ্ছিল সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য
আপু তখন রাস্তার পাশে মুমূর্ষু অবস্থায়
পরে ছিল। কাকতালীয় ভাবে আব্বু
আম্মু সেখানে’ই পৌঁছে এবং তখন’ই
আপুকে নিকটস্থ হসপিটালে নিয়ে যায়।
আপুর অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় ছিল।
ওরা আপুকে ফিরিয়ে দেয়। তারপর
আপুকে প্রাইভেটে নিয়ে গেলে
সেখানকার ডাক্তার জানায় আপু মারা
গেছে। সাথে সাথে আপুকে বাড়িতে নিয়ে
আসার ব্যবস্থা করা হয়। বাড়িতে কান্নার
রুল পড়ে গিয়েছিল। কেউ কেউ তো
কবর খুঁড়ার কাজও শুরু করে
দিয়েছিল। গোসল করাতে নিয়ে যাওয়া
হয় আপুকে। ছোট্ট দেহের প্রাণটা তার
অস্তিত্ব জানান দেয়ার জন্য হয়তো বা
ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠে। নড়ে উঠে আপু।
আপুর হৃদস্পন্দন একটু একটু করে
উঠানামা করতে থাকে। আপুকে তখন’ই
নিকটস্থ হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়…

পুরো ঘটনা শুনে যেন স্তব্ধ হয়ে গেছে আঁখি। ওর মুখ দিয়ে কোন কথা’য় সরছে না। চোখ দিয়ে অনর্গল অশ্রু গড়িয়ে পরছে। কাছে যায় শুভ। আঁখির হাত থেকে ছুঁ মারা’র ন্যায় ফোন’টা নিয়ে নিজ কানে ধরে। ওপাশে ক্লান্ত গলায় নীলয় তখনো বলে’ই চলছে- “শুনেছি কিছুক্ষণ আগে জ্ঞান ফিরেছে আপু’র। তবে মা আমাদের কাউকে আপুর কেবিনে যেতে দেয়নি। আপুর এ অবস্থার জন্য নাকি দাদীমা, আমি, ফুপ্পি, আদিত্য ভাইয়া, সবাই, সবাই দায়ী। তাই মা আব্বু ছাড়া আমাদের কাউকে ঢুকতে দেয়নি ভিতরে। দেখতে দেয়নি আপুকে। আপু এখন আমাদের গ্রামের হসপিটালে’ই আছে। দোয়া করো। রাখছি….!”
ফোনটা কান থেকে নামিয়ে সোফায় বসে পড়ে শুভ। চোখ মুখ শক্ত করে উপরের দিকে তাকিয়ে আছে সে।
পাশে এসে বসে হিয়া। ‘শুভ! বাবা কি হয়েছে? কোথায় নুহা? জানতে পেরেছিস কিছু?
কিচ্ছু জবাব দেয়নি শুভ। হিয়া এবং হৃদয় দু’জনে’ই ছুটে যায় মেয়ে আঁখির কাছে। আঁখি ওর বাবা মা’কে সবটা জানালে তবে’ই ওরা আশস্ত হয়।
তবে টেনশন দুর হয়নি। হিয়া কিংবা তার পরিবার কেহ’ই জানে না নুহার বর্তমান অবস্থা…

সেই রাতে’ই হিয়া রওয়ানা দেয় নুহার গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে। সাথে আছে শুভ, আঁখি এবং হৃদয়। বাসা থেকে বেশ ক্ষাণিকটা দুরে গিয়ে হৃদয়ের মনে পড়ে অত্যাধিক তাড়াহুড়ায় বাড়ির মেইন গেইট’টাই বন্ধ করতে ভুলে গেছে। মাঝ রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে হৃদয় শুভকে পাঠায়। মেইন গেইট’টা বন্ধ করে চাবিটা সাথে নিয়ে আসার জন্য।
শুভ চটজলদি বাসায় গিয়ে হাজির হয়। হিয়া’র রুম থেকে চাবি আনার এক পর্যায়ে কি মনে করে যেন উঁকি দেয় নিজের রুমের দিকে। তারপর যা দেখলো তাতে শুভ’র চক্ষু ছানাবড়া হয়ে গেল। প্রচন্ড রাগে গর্জে উঠে শুভ।
” ছোট্ট আদনান খাটে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেছে। তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে ফারহানা এবং তার মা। দুজনে’ই আদনানের হাত থেকে কিছু একটা খুলার আপ্রাণ চেষ্টা করছে।”
প্রচন্ড রাগে দু’হাত মুঠো করে করে দরজা’র সামনে দাঁড়িয়ে থাকা শুভর মনে পড়ে নুহা’র বলা সেই কথা- ‘রাগ আসে শয়তানের থেকে! রাগ’কে প্রশ্রয় দিতে নেই….!’

শান্ত হয়ে যায় শুভ। অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে। ঘটনার আকস্মিকতায় চমকে উঠে পিছনে তাকায় মা-মেয়ে। শুভ’র চোখে মুখে তখনো তাচ্ছিল্যের হাসি ছিল।
” হা, হা! শেষে কি না তুমি নিজের ছেলের হাতের আংটি চুরি করলে….!”

চলবে…

14 মন্তব্য

  1. 19 নাম্বার পর্ব দেন না কেনো….. প্লিজ পর্বটা দেন অনেক দিন ধরে অপেক্ষা করছি…. প্লিজ

  2. 19 নাম্বার পর্ব দেন না কেনো….. প্লিজ পর্বটা দেন অনেক দিন ধরে অপেক্ষা করছি…. প্লিজ

  3. 19 নাম্বার পর্ব দেন না কেনো….. প্লিজ পর্বটা দেন অনেক দিন ধরে অপেক্ষা করছি…. প্লিজ

  4. 1 year hoye gelo plz plz plz next part din plz plz it’s an request to writer plz …so many peoples are waiting for that I had searched it on YouTube too on you guys channel but I couldn’t get it PlZ give next part it’s an request ???

  5. Please please please please next part ta din na???? please amder dik ta ekbar vabun golpo majh pora bondho hole kichu valo lage na khub kharap lagche please golpo ta interesting time chilo eta please ? ???????? din please

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে