ফাগুনের নবধারা
পর্ব-৭
শাহাজাদী হুমাশা
বারান্দায় বসে বৃষ্টি দেখছে রুকু চৈত্রের শেষের দিকে।ফাগুণ আগুন লাগিয়ে কবেই চলে গিয়েছে।এখন ঝড় উঠছে, চারদিক লন্ডভন্ড করছে।টুং করে শব্দ হলো।পাশের ঘরে আবিদের লেপটপে হলো আওয়াজটা।রুমে গিয়ে লেপটপের সামনে বসতেই দেখলো মেইল এসেছে।ওপেন করতেই বুঝতে পারলো এটা সুমুর মেইল। মেইলের উত্তর দিয়ে আবার বারান্দায় গিয়ে বসলো রুকু।আজ ২ বছরের মত হয়ে গিয়েছে সে রাতের ঘটনার পর।এরপর ২ টো বসন্ত পার হলো।ফাগুনের নবধারা বয়ে গিয়ে চৈত্রের রুক্ষতা, বৈশাখী ঝড়, জৈষ্ঠ্যের খরতাপ গেলো।কিন্তু আজও রুকু সে রাত ভুলতে পারেনি।
রাত ৯টা থমথমে পরিবেশ পুরো হাসপাতাল জুড়ে।নাভিদ এর অপারেশন শেষ তবে জ্ঞান ফেরেনি।সে আপাদত ইন্টেন্সিভ কেয়ারে আছে।ডাক্তার বলেছেন নাভিদের জ্ঞান ফিরতে সময় লাগবে।তবে হয়তো ব্রেইন হ্যাম্পার্ড হবে।চোট টা গভীর।সুমুর জ্ঞান ফিরেছে। কিন্তু সে ভীষণ চুপচাপ হয়ে গিয়েছে।রুকু ঘুমাচ্ছে তার পাশে আবিদ বসে আছে।রুকুর একপাশে নীহা গুটিসুটি মেরে ঘুমাচ্ছে।
আবিদের মা আবিদের এহেন কর্মকান্ডে রেগে বোম হয়ে আছেন।আবিদের বাবা আবিদের মাকে বুঝানোর অনেক চেষ্টা করেছেন লাভ হয়নি।এক পর্যায়ে আবিদের মা উঠে সরাসরি ইলমার মায়ের কাছে গিয়েই ইলমা আর আবিদের বিয়ের কথা বললেন।ইলমার মা ইতস্তত করেছিলেন।কারণ আবিদ রুকুকে বিয়ে করতে চেয়েছে।কিন্তু নিজের মেয়ের জন্য এত ভালো সম্বন্ধে আর বেশিক্ষণ গাঁইগুঁই করতে পারলেন না।
হাসপাতালে ৩ দিন থাকার পর রুকু আর মেঘ কে নিয়ে সবাই বাসায় চলে এলেন।নাভিদের জ্ঞান ফিরেছে।তবে তাকে হাসপাতালেই থাকতে হবে তাই সুমুও ওর কাছেই রয়ে গিয়েছে।তবে একটাই সমস্যা।নাভিদ পুরোনো কিছুই মনে করতে পারছেনা।স্মৃতি শক্তি চলে গিয়েছে।এবং এক কানেও শুঞ্চছে না।বেশ ব্যাথা পেয়েছে।
রুকুর নতুন বাবুকে যখন ব্যস্ত সবাই তখন আবিদের মা আবিদ আর ইলমার বিয়ের কথা তোলেন সবার সামনে। আবিদ অবাক হয়ে যায়।ইলমা আর রুকুও।কিন্তু রুকু মুচকি হেসে মেনে নেয়।আবিদ রুকুর হাসি দেখে রেগে যায়।
বাসায় এসে আবিদ তার মাকে জেরার মুখে ফেলে।কিন্তু তার মা এবার জেদ ধরেছেন তিনি ছেলেকে ইলমার সাথেই বিয়ে দিবেন।
নাভিদকে বাসায় আনা হয়েছে। ২ মাস কেটে গিয়েছে।নাভিদ আর সুমুর মাঝে বন্ধুত্বও হয়েছে বেশ।নাভিদের কোনো কাজই সুমু ছাড়া হয়না।তাই সবাই তাদের এবার জোড়া বেঁধে দিতে চাইছেন পাকাপোক্ত ভাবেই।সামনের শুক্রুবার বাদ জুম্মা তাদের বিয়ে ঠিক হয়।কে জানতো সেদিন একসাথে কতগুলো জীবন পালটে যাবে।সবাই সবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।কেউ পাবে কেউ হারাবে।
চলবে….