ফাগুণের নবধারা
পর্ব-৯
শাহাজাদী হুমাশা
রুকুর ফোন টা বেজেই চলেছে। কেউ ধরছেনা। সবাই যার যার কাজে বাহিরে।বাসায় শুধু রুকু আর মেঘ।২ বছরের মেঘকে ঘুম পারিয়ে রেখে রুকু গোসলে গিয়েছে।মেঘ সম্পূর্ণই তার বাবার মত হয়েছে।শান্ত আর ঘুম কাতুরে।গোসল শেষে বারান্দায় কাপড় নেড়ে রুকু আবার রুমে এলো। ফোনটা হাতে নিয়ে মুচকি হেসে আবার ডায়াল করলো।অপর পাশে হ্যালো বলতেই রুকুর বিরক্ত ভাব দেখিয়ে বললো
– এতো বার কল করতে হয়? তোদের জন্য যদি বাবু ঘুম থেকে উঠে যেতো??
অপর প্রান্ত থেকে সবাই চিৎকার করে সরি জানালো।রুকু আবার রাগ হয়ে বললো –
আস্তে।সবাই চুপ?।
কলাপাতা রঙের শাড়িতে রুকুকে দারুণ মানিয়েছে।শাড়িটা আবিদের পছন্দের।আজ ২ সপ্তাহের ফ্লাইট শেষ করে আবিদ আসবে।১ সপ্তাহের ছুটিতে।তাই সবাই মিলে এবার একটা ট্যুর প্ল্যান করলো।সবাই ঠিক করলো তারা কক্সবাজার যাবে।নিঝুমের কাছে।নিঝুম কে চমকে দিবে।বিসিএসের পর নিঝুমের পোস্টিং চট্টগ্রামেই হয়েছে।তাই ওকে সারপ্রাইজ দেয়া যাবে ভালো।নাভিদ ফোনের অপর পাশ থেকেই সুমুকে বকা দিচ্ছে।
– তুমি সাবধানে হাটতে পারো না? সারাক্ষণ দৌড়ানোর দরকার আছে?? আপাতো কোথাও চলে যাচ্ছেনা।
-তুমি কথা থামাও।আমাকে কেনো ডাকলেনা আপাকে কল করার সময়? তোমার এত সাহস।আজ তুমি আমায় ফুচকা খেতে নিয়ে যাবে কোলে করে তোমার শাস্তি।
– নাভিদের মুখটা চুপসে গিয়েছে।এ মেয়েটার সাথে কেন জেনো সে পেরে ওঠেনা।না শাস্তিতে, না শাসনে, আর না ভালোবাসায়।
রুকু দেখলো সুমু ফুলে ঢোল।এত্ত বড় একটা পেট নিয়ে দৌড়ে আসছে।রুকুও বকা দিলো।
– আস্তে হাটঁ পরে যাবিতো।
– আপা কেমন আছো?? দেখো তুমি নিজেই দেখো তোমার ভাই আমার কি অবস্থা করেছে। আমি ওকে মাফ করবো না।ওর জন্য আমি শান্তিতে কিচ্ছু করতে পারিনা।মানুষ একটা নিয়ে হিমশীম খায় সে আমায় ট্রিপল করার ট্রায় করেছে।বদ লোক।
নাভিদ লজ্জায় কাচুমুচু হয়ে গিয়েছে।এই মেয়েটা এত্ত বেফাঁস কথা বলে।
রুকু ওদের কান্ড দেখে হাসছে।সাথে ইলমা, ফাহিম আর নিধিও হাসছে।
ফাহিম আর ইলমা বিয়ের পর হ্যাপি কাপল লাইফ লিড করছে।ফাহিম একটা মাল্টিন্যাশনালে জব করে।ইলমা ব্যাংকে। দুজনের সুখি পরিবার।প্রথমে ফাহিমের মা মেনে না নিলেও ধীরে ধীরে সবাই মেনে নিয়েছে। নিধি একটা সনামধন্য স্কুলের শিক্ষিকা।চোখে চশমা দেয়াতে ওকে আরেকটু আলাদা লাগছে আগের চাঞ্চল্যতা নেই।
রুকু ভাবছে সবাই সবার জীবনে সুখী। কত ঝড়ঝাপটা পার করে আজ সবাই এখানে।
এবার শুধু নিঝুম আর নিধির একটা গতি করে দিলেই রুকুদের দায়িত্ব শেষ।
সবাই মিলে ঠিক করলো আবিদের জন্মদিন উপলক্ষে সবাই কক্সবাজার যাবে আর নিঝুম কেও সারপ্রাইজ দেয়া হবে।
আর আবিদের জন্য আরো একটা সারপ্রাইজ রেখেছে রুকু।
রাতের ১০ আবিদ বাসায় ফিরে দেখে সবাই টিভি দেখছে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে।নীহারিকা বাবাকে দেখে দৌড়ে এলো। আবিদ মেয়েকে জড়িয়ে ধরলো।রুকু রান্নাঘর থেকে এসে আবিদের ব্যাগ বেডরুমে রেখে আসলো।সবার সাথে গল্প শেষ হতেই রুকু বললো ফ্রেশ হয়ে আসতে খাবার দিচ্ছে।আবিদ ও চলে গেলো।
খাবার টেবিলে রুকু ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যানটা বললো। আবিদ রাজি হলো।বহুদিন সবার সাথে দেখা হয়না। নাভিদ আর সুমু আসতো আগে বাবুকে দেখতে তবে এখন তো সুমুর ও ৮ মাস চলছে।তবে আবিদ প্রশ্ন করলো সুমুর এই অবস্থায় জার্নি ঠিক হবে কি?? রুকু বললো প্ল্যান্টা ওরই।সবাই বারণ করেছিলো তবুও সে যাবেই। তার নাকি ওখানের কাকড়া ভাজা খেতে ইচ্ছে করেছে।আবিদ সহ সবাই হাসছে।সুমু সত্যিই পাগলী।তাই আবিদ ট্রেন এ সিট বুক করলো ৬ টা কেবিন।আগামীকাল রাতের ট্রেনে যাবে সবাই।
রাত ২ টা বাজে সুমু আর নাভিদ ছাদে বসে আছে।নাভিদ চেয়ে আছে সুমুর দিকে। সুমু মনোযোগ দিয়ে ফুচকা খাচ্ছে আর উম্ম করে শব্দ করছে।নাভিদ হাসছে।
সে এক উদ্ভট দৃশ্য।সন্ধ্যায় নিয়ে আসা ফুচকা সে রাত দুটায় খাচ্ছে।এমন পাগলামি একমাত্র ওকে দ্বারাই সম্ভব।নাভিদ মনে মনে ভাবছে ২ বছর আগের কিছুই ওর মনে নেই।কিন্তু এই দুবছরে সুমু ওর জন্য যা করেছে তা মনে আছে ওর।এই মেয়েটাকে সুখী করতে সে যেকোনো কিছু করতে পারে।সে তার প্রেয়সী, স্ত্রী, আর সবচেয়ে বড় বিষয় সে তার সন্তানদের মা।সন্তানদের বলার কারণ সুমুর টুইন্স হবে।আর এ নিয়ে সুমু নাভিদ কে বকা দেয়ার শেষ নেই।কারণ সে জেনেছে টুইন্স ডিলভারি করাটা কঠিন কাজ।আর পালাটা আরো কঠিন।তাই।সে যদি মারা যায় তবে বাচ্চাগুলা কে দেখবে? নাভিদ এসব কথায় রাগ করে কিন্তু কিছু বলতে পারে না।এক জীবনে সুমুর থেকে আর কিছু চায়না সে।সুমুকে ভালোবাসাই তার মোক্ষম উদ্দেশ্য।
ভোরের সূর্য জানালা দিয়ে উকি দিচ্ছে। নামাজ পড়ে নিধি বাহিরে চেয়ে আছে।নিধি ভাবছে কালকের সূর্যটা সে নিঝুমের সাথে দেখবে।তার অপেক্ষার অবসান হতে চলেছে এবার।গত দুবছর যাবত সে নিঝুমের সামনে যায়নি।এবার সব অভিমান ভুলে নিঝুমের কাছে নিজেকে সমর্পণ করবে।নিঝুম কি তাকে মেনে নিবে? নাকি সে এখনো ইলমাকে ভুলতে পারেনি??
চলবে….