ফাগুণের নবধারা
পর্ব- ৬
শাহাজাদী হুমাশা
রুকুর অবস্থা বেগাতিক দেখে আবিদ রুকুর হাত শক্ত করে ধরে আছে।হাসপাতালে আসতেই রুকুকে স্ট্রেচারে করে নিয়ে যাওয়া হয় লেবার রুমে।রুকু শেষ বার আবিদকে দেখে তাকে বলে আমার বেবিটাকে বাঁচাবেন প্লিজ।আবিদ রুকুর হাত ধরে বলে আমি তোমাদের দুজনের একজনকেও হারাতে চাইনা রুকু।
ইমারজেন্সি রুমে সুমুকে আইভি ড্রিপ দেয়া হয়।সবাই যখন সুমুর আর রুকুর চিন্তায় অস্থির তখন আরো একটা খারাপ সংবাদে সবার জীবন এলোমেলো হয়ে যায়।
নাভিদ এর জ্ঞান ফিরছেনা।ওর জ্ঞান কবে ফিরবে বা আদৌ ফিরবে কিনা কেউ জানেনা। সুমুর জ্ঞান ফিরেছে কিন্তু সে কারো কথার কোনো জবাব দিচ্ছেনা।বডিতেও কোনো মুভমেন্ট নেই।ডাক্তাররা বলেছেন খুব বড় রকমের শক থেকে এরকমটা হচ্ছে।নাভিদের মাকে নিঝুম সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে ওখান থেকে।সবাই স্তব্ধ হয়ে আছে।আমিনা বেগম মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে এসে ছেলের এক্সিডেন্টের সংবাদ শুনে শোকে কাতর।এদিকে আবিদ রুকুর টেনশনে নিহাকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে।
জীবন খুবই আনপ্রিডিক্টেবল।কখন কি হয়ে যায় তা কারো জানা থাকেনা,জানা নেই।কোথায় নতুন প্রাণের আগমনের খুশির জোয়ার তো কোথায় মৃত প্রায়ের জন্য শোক। আল্লাহ কখন কার ভাগ্যে কি রেখেছেন জানা বড্ড দায়।
অপারেশন থিয়েটার থেকে ডাক্তার বের হলেন।আবিদের সামনে গিয়েই তাকে বাবা হওয়ার অভিনন্দন জানালেন।আবিদ প্রথমে অস্বস্তি বোধ করলেও পরে নিজেকে সামলে নিয়ে ডাক্তার কে বললো –
আমি বেবির বাবা না।
ডাক্তার অবাক হয়ে বললেন তাহলে বাবা কে?
-হি এক্সপায়ার্ড।
– ওহ দুঃখিত।বেবি আর মা দুজনেই সুস্থ আছেন। আপনি চাইলে দেখা করতে পারেন।তাকে কেবিনে শিফট করা হবে।
আবিদ ডাক্তারকে ধন্যবাদ জানিয়ে কেবিনের দিকে গেলো।নরমাল প্রসিজারেই রুকুর বাচ্চা হয়েছে। দুজনেই সুস্থ।আবিদ কেবিনে ঢুকতেই দেখে রুকুর পাশে একটা ছোট্ট পুতুল শুয়ে আছে।আবিদ রুকুর সামনে যেতেই রুকু আবিদকে দেখে মুচকি হাসে। আবিদ বেবিটাকে কোলে নেয়।রুকু আবিদের হাসি দেখে।নিহা রুকুর বিছানার উপরে উঠে রুকুর বুকে শুয়ে জিজ্ঞেস করে-
মামণি এটা ভাইয়া নাকি আপু? রুকু হেসে দেয় নিহার কথায়।
– এটা ভাইয়া নিহা।
নিহার মুখটা উজ্জ্বল হয়ে যায়।
– আমি ওর একটা নাম রেখেছি মামণি।
– কি নাম?
– মেঘ।
– আচ্ছা বেশ।তবে এই নামেই আমরা ওকে ডাকবো কেমন?
– আমি কি ওকে কোলে নিতে পারি?
আবিদ বলে কেনো নয়? অবশ্যই পারো।আবিদ আর রুকু নিহার কোলে ছোট্ট মেঘ কে দেয়।নিহার বিস্ময় জেনো কাটছেইনা।এত ছোট বাবু ও আর কখনোই দেখেনি।
রুকুকে এখনো নাভিদের কান্ডিশন জানানো হয়নি।আবিদ সবাইকে রুকুর ছেলে হবার খবর দিতে বেড়িয়ে যায়।নিহা রুকুর পাশেই বসে থাকে।
আবিদ এর কথা শুনে সবাই খুশি হয়। রুকুর বাচ্চাকে দেখতে যায় সবাই আর সুমুর কাছে নার্সকে রেখে যায়। রুকুর শাশুড়ি তো ভেবেই নিয়েছেন তার ছেলে ফিরে এসেছে তার কাছে।আবিদের মা ইলমার সাথে আবিদের বিয়ের কথা বলতে চাচ্ছিলেন। তবে এ পরিস্থিতিতে তা সম্ভব না।কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে আবিদ রুকুর মাকে অার শাশুড়িকে বলেন –
আন্টি আমি রুকুর আর তার সন্তানের দায়িত্ব নিতে চাই।আবিদের কথা শুনে তার মা হতভম্ব হয়ে যান।কি বলছে তার ছেলে?
চলবে….