ফাগুণের নবধারা
পর্ব-৩
-শাহাজাদী হুমাশা।
এই হিরহিরে ঠান্ডা মেঘ বৃষ্টির লুকুচুরি খেলায় ও রোকসানার গরম লাগা শুরু করলো আর কিছুক্ষণের মধ্যে সে বিরক্ত হয়ে গেলো।দুপুরের পর সবাই হালকা বিশ্রাম নিচ্ছে।বাসাটা নিরব হয়ে আছে।অবাক রোকসানা, বাংলা গান অপছন্দ করা নাভিদ-নিঝুমের রুম থেকে গানের শুর ভেসে আসছে –
“এসো করি স্নান নবধারা জলে,
এসো নীপবনে,
ছায়াবীথি তলে…”
বিস্ময়ের সীমা রইলোনা রোকসানার…
ছাদে উঠে এসেছিলো লিফটে একাই।এই অবস্থায়। কারণ ঘরে তার দম আটকে আসছিলো। কিন্তু ছাদে এসে আরো কেমনজানি লাগলো রুকুর।তারও ইচ্ছে করলো বৃষ্টিতে ভিজি তাকে উপভোগ করার,যেভাবে এখন তার সামনে থাকা অত্যন্ত সুদর্শন, সুপুরুষটি করছে।দুহাত মেলে দিয়ে ভিজছে আর গান গাইছে।রুকু আর স্থীর থাকতে না পেরে ছাদে গিয়েই আবিদ কে জিজ্ঞেস করলো-
আমি কি আপনার সাথে ভিজতে পারি??
– আবিদ কিছুক্ষণের জন্য মনে হয় বেক্কল হয়ে গেলো।সে একজন গর্ভবতী, ২৪ কি ২৫ বছর বয়সী মেয়ের শান্ত কিন্তু প্রাণোচ্ছল চোখের দিকে তাকিয়ে।
সম্মত ফিরে পেয়ে আবিদ একটা হাসি দিলো তার অর্থ হ্যাঁ।আবিদ আর রুকু বৃষ্টিতে মাত্র ৮ মিনিট ভিজলো। গুণে গুণে।তারপরই আবিদ বলে উঠলো গম্ভীর স্বরে-
মিসেস রহমান আমাদের এখন নিচে নামা উচিৎ। হতভম্ভ হয়ে রুকু চাইলো আবিদের দিকে-
মাত্রইতো এলাম।আমার চুলগুলোও ভিজেনি।আর চলে যাবো?
– হ্যাঁ কারণ আপনি এখন কোনোভাবেই ভেজার স্টেট এ নেই।আর আমি আপনার এই ক্রুশিয়াল মুমেন্টে অসুস্থ তা আফোর্ড করতে পারবোনা।রুকু অবাক হয়ে আবিদের কন্সার্ণ দেখলো তার প্রতি,বিব্রতও হলো।অপিরিচিত পরিচিত লোকটি কেনো এটা বললো?
আবিদ একপ্রকার জোর করে রুকু কে নিয়ে নিচে নামলো ফ্ল্যাটে ঢোকার আগে ওকে মাথা মুছতে বলতে ভুললোনা।রুকুকে অবাক করে দিয়ে পাশে বাড়িওয়ালাদের ফ্ল্যাটে ঢুকে গেলো।
রাতে রুকু শুয়ে শুয়ে ভাবছে আবিদ এর নামটাই মিলে শুধু বাকি সবকিছু ই আলাদা।যেমন – আবিদ বাঁচাল ছিলো,এত কেয়ারিং ছিলোনা,মুডি ছিলো, তবে গম্ভীর্যও ছিলো ডিফেন্সে ছিলো যে তাই,তার হাসব্যান্ড কে নিয়ে তার একটু নাক উঁচু হলো তার বর আর্মি অফিসার হওয়ায়।আর এই আবিদ বেশি হলে নিশ্চই কোনো কর্পোরেট জব করে।কি অদ্ভুত এক ব্যাপার সে কি ভাবছে আজ এগুলো?? ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে গেলো রুকু।
নাভিদ সুমুকে দেখে চমকে উঠলো। দুদিনের জ্বর তাকে কাবু করে ফেলেছে।সে খুব সুন্দর করে চোখে কাজল পড়েছে। তবুও তাকে আজ নিস্তেজ লাগছে।বাগদান হবার পরে তারা আর রাখঢাক করে দেখা করেনা।তবে তারা শালীন আর সচেতন তাদের সম্পর্ককে নিয়ে।
ভালোবাসা হয়তো এমনই হয়।রুকুর ডিলেভারির পরেই তাদের বিয়ের আয়োজন হবে
।নাভিদের বুকে মুখ গুজে থাকা সুমুর কপালে আলতো করে চুমু খেলো। সুমু ঘাড় সোজা করে তাকাতেই নাভিদ শুষ্ক ঠোঁট গুলোতে গভীর ভাবে চুমু খেলো। নাভিদ হঠাৎ বলে উঠলো –
সুমু তুমি কি জানো তোমার নামের সাথে একটা জিনিসের খুব মিল! নাভিদের কথায় সুমু প্রশ্ন বোধক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালো।
নাভিদ উত্তর দিলো-
সু মু, চু মু
নাভিদ কথাটা বলেই হাহা করে হেসে ফেললো সুমু লজ্জায় বেগুনী হয়ে তেড়ে গেলো নাভিদের দিকে।
নিঝুমের এহেন কান্ডে বিস্মিত নিধি। তার চোখ বেয়ে পানি চলে এলো।নিঝুম ঝোকের মাথায় বলতে গেলে রাগের বসে নিধিকে একটা বিরাশি সিক্কার চড় মেরেছে।নিধি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো।
নিঝুমের হাতে ইলমাকে দেয়ার জন্য একটা সুন্দর ফ্লাওয়ার ভাজ।
কিছুক্ষণ আগের ঘটনা-
নিঝুম একটা মাটির ফুলদানি কিনেছে,ইলমার জন্মদিনের উপহার হিসেবে।কথা হলো ভাজ গুলো মাটির ছিলো সেখান থেকে সুন্দর একটা বেছে নিয়েছে।নিঝুম সেটা শুধু খবরের কাগজ দিয়ে পেঁচিয়েছে আর কিছুইনা।তারপর রাস্তা পার হতে যাচ্ছিলো।জ্যাম ছোটার আগেই সে পার হবার জন্য হাটতে লাগলো হঠাৎ একটা প্রাইভেট কার তার গা ঘেষে চলে যেতে নিলেই নিধি তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় যেনো গাড়িটাতে তার ক্ষতি নাহত কিন্তু ভুল বসত নিঝুমের হাত থেকে সদ্য কেনা ফুলদানি টা পরে ভেঙ্গে গিয়েছে।নিঝুম রাগে হিতাহীত জ্ঞান ভুলে নিধিকে চড় দিয়েছে।নিধি প্রথমে ভেবেছে হয়তো তার নিজের ক্ষতির ভয়ে নিঝুম কাজটা করেছে মনে মনে এতজোরে চড় খেয়েও খুশি হচ্ছিলো কিন্তু তার আশায় জল ঢেলে দিয়ে নিঝুম রাস্তার সবার সামনে তাকে গায়ে পড়া মেয়ে বলে অপমান করেছে।আর ইলমার জন্য আনা ফুলদানিটার জন্য আফসোস করছে।নিধি সহ্য করতে না পেরে চলে গেলো পালালো বলা চলে। ভিড় থেকে কেউ একজন নিঝুমকে বললো আপনার জান বাঁচাতে মেয়েটা নিজেকে বিপদে ফেলতে যাচ্ছিলো।কথাটা শুনে নিঝুমের হুঁশ ফিরলো সে এতক্ষণে পিছনে ফিরে তাকিয়ে নিধিকে খুজলো কিন্তু পেলোনা।সে হয়তো আর কখনো পাবেনা নিধিকে।তার হয়তো ক্ষমা চাওয়া আর পাওয়াটা কোনোদিনই হবেনা।
চলবে….