ফাগুণের নবধারা
পর্ব-২
-শাহাজাদী হুমাশা
ফাহিম কে অনেক্ষণ ধরে ফোন দিয়েও ব্যর্থ ইলমা।ফোন রিসিভ করছেনা।গত একসপ্তাহ ধরে কারো সাথে কোনো যোগাযোগ নেই ওদের। ইলমার কাছে ফাহিমদের ল্যান্ডফোনের নাম্বার আছে কিন্তু সে কল দিতে পারছেনা।ফাহিমের মাকে সে ভয় পায়।তিনি খুব সহজসরল হলেও অত্যন্ত রাগী। তার মতে তার ছেলে খুবই শান্তশিষ্ট তাকে ছাড়া সে কিছু বোঝেই না।কোনোদিন কোনো মেয়ের দিকে চোখ তুলে তাকায়ও নি।এইসব ভাবতে ভাবতেই ইলমা হঠাৎ একটা ধাক্কা খেলো।চোখ তুলে তাকিয়ে দেখে নিঝুম।এই ছেলেটাকে সে সহ্যই করতে পারেনা সারাক্ষণ তার পিছু পিছু ঘুরে তাই সে তার ভাবির বাসায় আসতে চায়না।কিন্তু তবুও আসে।ভাবিকে একা ছাড়তেও পারেনা।ভাই থাকলে হয়তো ও আসতো না।ভাইয়ের কথা মনে পড়লেই ইলমার মন খারাপ হয়ে যায়।নিঝুম ইলমার চেহারার দিকে তাকিয়ে থেকে জিজ্ঞেস করলো-
কি হয়েছে?? মন খারাপ? আচ্ছা তুমি আমাকে দেখলেই ওমন পালাতে চাও কেনো?
– নিঝুমের প্রশ্নের উত্তরে ইলমা বললো-
আমি বেশি কথা বলা পছন্দ করিনা।বলেই সেখান থেকে চলে গেলো।
রোকসানা আজ ৭ মাস পর তার বাবার বাড়িতে এসেছে।আমিনা বেগম মেয়েকে কাছে পেয়ে তার খাতিরের কোনো ত্রুটি রাখছেন না।রোকসানার শাশুড়ি ও বেশ ভালো।আমিনা বেগম আর রোকসানার শাশুড়ি মায়মুনা ড্রয়িংরুমে বসে গল্প করছেন।আমিনা বেগম রোকসানার মাথায় তেল দিয়ে দিচ্ছেন আর মায়মুনা বেগম চা পান করছেন।রোকসানার বাচ্চা হওয়া পর্যন্ত তারা এখানেই থাকবেন।রোকসানার শাশুড়ি তার ছেলের ছোটবেলার কথা বলছিলেন সবাইকে আর তিনজনে হাসছিলেন।
রোকসানার স্বামী নাসির রহমান আবিদ।আর্মি অফিসার ছিলেন।রোকসানা যখন দুমাসের প্রেগন্যান্ট তখন মিশনের জন্য কল আসে তার আর মিশনে চলে যায় সে।কিন্তু জীবিত অবস্থায় আর ফিরতে পারেনি।তার লাশ এসেছিলো বাড়িতে।রোকসানা বেশ শক্ত সে তার স্বামীকে দুঃখ নিয়ে মনে করতে চায়না তাই হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করে।গর্ভাবস্থার শেষ দিকে প্রায় সে।
আজ মিষ্টি রোদ উঠেছে মায়মুনার সাহায্য নিয়ে গোসল করার পর রোকসানা রোদ পোহাতে নিঝুমের সাথে ছাদে যায়।নিঝুম রোকসানাকে ছাদে রেখে নিচে নামে। রোকসানা ছাদের দোলনাটায় বসে।এ বাড়ির মালিক বেশ সৌখিন। তার প্রমাণ এ বাড়ির ছাদ দেশি বিদেশী গাছ,দিয়ে সাজিয়েছে মন ভালো করার মত পরিবেশ। হঠাৎ ছাদে কেউ একজন উঠে এলো।হাতে একটা সিগারেটের প্যাকেট। হয়তো বিদেশি সিগারেট। সে রোকসানা কে দেখতে পায়নি।কিছুক্ষণ আকাশের দিকে চেয়ে থেকে সিগারেট ধরালো এক টান দিয়েই পিছন ফিরে তাকালো প্রথম বার খেয়াল করেনি পরমুহূর্তেই তাকানোর সাথে সাথে চমকে উঠলো। রোকসানা মৃদু হেসে ফেললো। লোকটা রোকসানার দিকে এগিয়ে এসে বললো-
আপনি কিছু মনে করেননিতো?
-না ঠিকাছে আপনি আমাকে লক্ষ করেননি তাই হয়তো।
-হ্যা আসলে। আগেতো আপনাকে দেখিনি এখানে।তাই একটু চমকে গিয়েছিলাম।
– আমি বাপের বাড়ি বেড়াতে এসেছি।আর ২ সপ্তাহ বাকি তাই।
-একা ছাদে বসে আছেন যে আজতো শুক্রুবার আপনার হাজব্যান্ডের তো আপনার পাশে থাকা উচিৎ এখন।
– হি এক্সপায়ার্ড এইট মান্থ এগো।
রোকসানার কথা শুনে খুব মায়া নিয়ে তাকালো তার দিকে লোকটি।
– ওহ আই এম স্যরি মিসেস -?
-রোকসানা। রোকসানা রহমান।
-হ্যাঁ। মানে আমার নাম আবিদ।রেদওয়ানুল হোসেন আবিদ।
নামটা শুনেই রোকসানার বুকটা ধক করে উঠলো।সে আবিদ কে বললো -আমি নিচে যাবো। ভালো থাকবেন।আবিদ রোকসানাকে ধরে উঠালো। লিফটে উঠিয়ে দিয়ে তার সাথেই নিচে নামলো রোকসানাকে ফ্ল্যাটের দরজার সামনে রেখে সে বিদায় নিয়ে নিচে নামলো।আর সে লক্ষ করলো রোকসানা যে ফ্ল্যাট এ যাচ্ছে সেটা নাভিদদের ফ্ল্যাট।
ইলমা অবশেষে অনেক কষ্টের পর ফাহিম কে কলে পেলো।ফাহিম উদাসীন ভাবে কথা বলায় রাগে ইলমা ওকে কতক্ষণ গালিগালাজ করলো বারান্দায় দাঁড়িয়ে।নিঝুম পিছন থেকে এগুলো শুনছিলো।কল কাটার সাথে সাথেই সে ইলমার উদ্দেশ্যে বলল-
বেশিদিন টিকবেনা।
– কি?
– তুমি যাকে এত মিষ্টি বকা দিচ্ছিলে সে।
বিরক্তভরা চোখে ইলমা নিঝুমের দিকে তাকালো-
তাতে আপনার কি? লুকিয়ে কথা শুনতে লজ্জা করে না?
– এতজোরে বললে তা আর লুকানো কথা হয় নাকি?
যাইহোক এই নাও আচার।আপুর জন্য এনেছিলাম ভাবলাম তোমার জন্যও নিয়ে আসি।
– নো থ্যাংকস আমি আচার খাইনা।
– খাওনা খাবে।আর একটা সময় প্রায় সব মেয়েরাই খায় আচার।
নিঝুমের কথা শুনে রাগে,লজ্জায় ইলমার কান গরম হয়ে যায়।কতবড় অসভ্যের মত কথাটা বলে ফেললো লোকটা।ইলমা তখনি নিঝুমকে পাশ কাটিয়ে চলে যায়।
পাশের বারান্দা থেকে নিধি সবই আড়চোখে খেয়াল করে।সে ভেবে পায়না সে কেনো কষ্টপায় নিঝুমকে মেয়েটার সাথে দেখলে আর নিঝুমেরইবা কি দরকার ওই মেয়েটার পিছনে ঘুরার!! রাগে নিধি তার শখের গোলাপের টব টা হালকা উঠিকে নিঝুমের বারান্দায় ছুড়ে মারতে গিয়ে থেমে যায়।দৌড়ে নিজের ঘরে চলে যাওয়ার সময় ধাক্কা লাগে সুমুর সাথে
চলবে….
( ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন।)