#প্রেয়সীর_শব্দপ্রেম
#ফারজানা_মুমু
[৯]
মৃদু টিমটিমে আলোয় গোলাকার জলাশয়ে মুক্তোর মত পানির সৌন্দর্য চাঁদের আলোতে দ্বিগুণ বেড়েছে। সিমেন্টের বাঁধা সিঁড়ি ধাপে-ধাপে সাজানো। জলাশয়ের মধ্য সাদা শাপলা চাঁদের আলোতে মুক্তোর মতো চোখে বিঁধছে। বেগুনি রঙের কচুরিপানা চতুর্দিক ঘিরে ধরেছে। আষাঢ় এক পলক জলাশয়ে দৃষ্টি বুলিয়ে ঝুমঝুমিকে দেখতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ল। আজ ওর মনে অন্যায় একটি আবদার চেপে বসল। ঝুমঝুমির হাত মুঠোয় নিয়ে জলাশয়ে পা ভিজিয়ে প্রিয় মানুষটিকে আলিঙ্গন করে রোমাঞ্চকর মুহূর্ত অনুভব করতে চায় কিন্তু সে নিরুপায়। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা রমণী তার অবাধ্য ইচ্ছেকে সায় দিবে না বরং উল্টো হৃদয়ে প্রেমের দগ্ধ সৃষ্টি করবে। মনেমনে গোপন নিঃশ্বাস ছেড়ে ঝুমঝুমির মুগ্ধকর মুখশ্রী দেখে ইশারায় সামনে এগুতে লাগলো।
বিমোহিত চোখজোড়া এখনও নির্লিপ্তভাবে জলাশয়ের দিকে চেয়ে আছে। আকাশের চাঁদের প্রতিচ্ছবি জলাশয়ের পানিতে। দেখে মনে হচ্ছে এই বুঝি আকাশের চাঁদ তার সামনে, যাকে ছোঁয়া যায়,স্পর্শ করা যায়। আষাঢ়ের পিছন-পিছন সেখানে গেল। সিঁড়ির লাস্ট ধাপে আষাঢ় জলাশয়ে পা ডুবিয়ে বসল। ইতস্তত করে ঝুমঝুমি দু-সিঁড়ি উপরে বসে শুভ্র রাঙা পা দুটো নিচের সিঁড়িতে রাখল। আষাঢ় থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পড়ায় অসুবিধে হলো না বসতে। ঝুমঝুমির চোখে-চোখ না রাখলেও পানিতে ভেসে উঠা প্রতিচ্ছবিতে ঠিকই চেয়ে রইল। সাদা জামাতে অপ্সরীর মত লাগছে প্রিয় মানুষটিকে। চোখ ঝলসে যাচ্ছে আষাঢ়ের। এরূপ সৌন্দর্য কাছ দেখে দেখার ফলে নিজেকে সুভাগ্যবান মনে হচ্ছে।
আষাঢ় প্রশ্ন করল, কী বলতে চাও?
অপ্রস্তুত হয়ে মাথা ঘুরিয়ে কপালে তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে চেপে ধরল। মনের ভিতরে জমানো কথাগুলো বেরিয়ে আসতে চাইছে বারংবার। সন্দেহর বশে কথাগুলো বলা আদৌ ঠিক হবে কিনা চিন্তা করছে। চিন্তার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসলো আষাঢ়ের প্রজ্বলিত কন্ঠস্বর শুনে।
-” চুপ না থেকে নির্দ্বিধায় বলে ফেলো।
ঝুমঝুমি মানসপটে বলে ফেলল, আমায় ফলো করেন কেন?
-” ভালো লাগে তাই।
আষাঢ়ের সহজ উত্তরে থমকালো ঝুমঝুমি। কিছুক্ষণ ভেবে আবারও বলল, আপনার আসল পরিচয় জানতে পারি?
ঠোঁট কামড় হাসলো আষাঢ়। আগেই বুঝতে পেরেছে ঝুমঝুমি ওকে আজ এসব কথাই বলবে। মেয়েটার চোখে ফাঁকি দেওয়া অসম্ভব ব্যাপার।
-” এমপি আসাদুল্লাহ জেওয়াদ চৌধুরীর ছোট ছেলে আষাঢ় জেওয়াদ চৌধুরী।
ঝুমঝুমি বিস্ময় ভাবে তাকিয়ে রইল। আষাঢ় প্রভাবশালী পরিবারের কিছুটা আন্দাজ করতে পারলেও এমপির ছেলে ভাবেনি। কন্ঠস্বর শুকিয়ে কাঠ হলো। মেঘের ব্যাবহারে অসন্তুষ্ট এখন আবার এমপির ছেলে।
-” আমার টিউশনির খোঁজ আপনি ঠিক করেছেন তাই তো? বাসাও আপনি খোঁজে দিয়েছেন।
-” হুম। তোমার ভালোর জন্যই করেছি। খারাপ করার জন্য নয়।
আষাঢ়কে প্রথম যেদিন দেখেছিল সেদিন থেকেই সন্দেহ হয়েছিল ঝুমঝুমির।
তৃতীয় বর্ষে ভর্তি হবার দিন চটপটি খাওয়ার জন্য তিনজন খোলা জায়গায় চেয়ারে বসে ফুচকা মামাকে দু’প্লেট চটপটি,এক প্লেট ফুচকা দিতে বলল। হোস্টেলের জন্য আবেদন তখনও করা হয়নি। তৃষ্ণা বলেছিল ভাড়া বাসা খোঁজবে। তাদের উল্টো পাশে চেয়ারে হেলান দিয়ে সানগ্লাস টেবিলের উপরে রেখে বন্ধুদের সাথে আড্ডায় মেতেছিল আষাঢ়। সানগ্লাসে বিষাদ মুখের রমণীকে দেখে ঘাড় পিছনে ঘুরিয়ে এক পলক দেখে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। কান খাঁড়া করে শুনে পাশের টেবিলে বসা তিন রমণীর কথপোকথন। বুঝতে পারে আর্থিক সমস্যার কথা। মেয়েটির খোঁজ নেওয়ার জন্য নিজেই পিছু নেয়। কলেজ থেকে ইনফরমেশন জোগাড় করে বন্ধুদের সাহায্য নিয়ে ভাড়া বাসা ঠিক করে। বাসার আঙ্কেলকে জানিয়ে দেয় ওরা যত বলবে রাজি হতে বাকি টাকা সে দিবে। কথামত কাজ হয়। ঝুমঝুমিরা মাসের শুরুতেই থাকতে শুরু করে ভাড়া বাসায়। আষাঢ়ের দুর সম্পর্কের মামাতো বোনের ছেলেদের জন্য টিচার খোঁজ ছিল। আষাঢ়ের কাছ থেকে ডিটেলস জেনে ঝুমঝুমির খবর দেওয়া হয়। ব্যাস তারপর থেকেই ঝুমঝুমির অবস্থা আগের থেকে ভালো হতে শুরু করে। দূর থেকে প্রতিদিন ঝুমঝুমিকে দেখত আষাঢ়। তৃতীয় তলার ভাড়াটিয়া চলে যাবার পর চার বন্ধু ওই বাসায় থাকতে শুরু করে। আষাঢ় ঝুমঝুমির সব কথা জানলেও ধ’র্ষ’ণ কিংবা পারিবারিক অবস্থা জানে না। মূলত সে ওসব ব্যাপারে আগ্রহী নয়। ওর আগ্রহ, আকর্ষণ শুধুই ঝুমঝুমি। এই মেয়েটাকে পেলে ওর কিছু চাইনা, কিছুই না। পরিবার যেমন ইচ্ছে তেমন থাক তাতে ওর যায়-আসে না। কিন্তু আষাঢ়ের একটি কথা মাথায় আসছে না ঝুমঝুমি এসব কথা জানলো কি করে। ও তো সব লুকিয়ে-লুকিয়ে করেছে যেন ঝুমঝুমি জানতে না পারে। আবারও মেয়েটির বুদ্ধিমত্তায় মুগ্ধ হয়ে প্রশ্ন করল,
-” তুমি জানলে কী করে?
ঝুমঝুমি হাসলো। বলল, আমার আশেপাশে হুটহাট একটি ছেলেকে দেখতে পাওয়া, দূর থেকে তাকিয়ে থাকা, সামনে আসলেই মাথা নিচু করে চলে যাওয়া। সমস্যায় পড়ার সাথে-সাথেই সাহায্যর হাত বাড়িয়ে দেওয়া। পিছন থেকে কেউ একজন আমায় সাহায্য করছে, ফলো করছে আমি বুঝব না? যতটা বোকা আমায় ভাবেন আমি কিন্তু ততটা বোকা নই।
আষাঢ় মাথার চুল টেনে ধরে লাজুক হাসলো। ইচ্ছে করেই ঝুমঝুমির নাগের ডগায় ছুঁয়ে দিয়ে বলল, তারমানে আমায় প্রথম দেখায় চিন্তে পেরেছিলে?
-” না চিনার কারণ দেখছি না।
-” বুঝলে কি করে বাসা কিংবা টিউশনি আমি খোঁজে দিয়েছি। অনুমান মিথ্যে হতে পারতো।
প্রসারিত হাসলো ঝুমঝুমি। প্রশ্নের উত্তরে বলল,টিউশনির আপুটা একদিন হুট করেই ওনার দু-ছেলেকে বলে ফেলেছিল, তোমাদের আষাঢ় মামা চকলেট এনেছিল সব খেয়ে ফেলেছে? ছেলে দুটো মাথা দুলিয়ে বুঝায় খেয়েছে। আপুকে দেখতাম সবসময় আমাকে কেমন করে দেখত, কি লাগবে, সমস্যা হচ্ছে কিনা অধীর আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞাসা করতো। প্রেম করছি কিনা, বিয়ের কথা চলছে কিনা খুঁটিয়ে-খুঁটিয়ে জানতে চাইতো। প্রথম-প্রথম সন্দেহ না হলেও আপনার নাম আচমকা বলার পর সন্দেহ হলো। একদিন বাচ্চা দুটো জিজ্ঞাসা করল ‘ভাইয়া’ স্যার কিনা। ভাইয়া শব্দ উচ্চারণ করার পর দেখলাম ওরা দুজন জিভে কামড় দিয়ে মুখ চেপে ধরেছে। মনে হয় বড় ভুল করেছে আপনাকে ভাইয়া ডেকে। সন্দেহ গাঢ় হয়।
থামলো ঝুমঝুমি। স্যাঁতস্যাঁতে সিঁড়িতে দুহাত রেখে আবারও বলল, আপনারা যা কিছু করেন না কেন বাসার আন্টি-আঙ্কেল কিছু বলত না বরং উৎফুল্লতা মুখশ্রী বানিয়ে মেনে চলত। আমাদের বিরক্ত করা নিয়ে একবার আন্টিকে বিচার দেওয়ার পর আন্টি আপনাদের কিছু না বলে বরং আপনার সম্পর্কে সুনাম করতে ব্যাস্ত হয়ে পড়েন এমনকি মুখ ফসকে বলে ফেলেন আমার কপাল রাজকপাল। সন্দেহর মাত্রা তীব্র থেকে তীব্র হলো। আজ তৃষ্ণা-নীরার কাছ থেকে জানতে পারলাম আমাদের ডিপার্টমেন্টের প্রধান সরাসরি যুক্ত। ইচ্ছে করেই আমাদের এখানে আনা হয়েছে। দুয়ে-দুয়ে চার করতে সময় লাগলো না। সেজন্যই আপনার পরিচয়টা জানতে উৎসুখ হলাম।
আষাঢ়ের মুখ হা হয়ে গেল। মুগ্ধ হলো আবারও। ইশ মেয়েটার মাথায় কত বুদ্ধি মনেমনে কপালে চুমু দিয়ে লজ্জিত হলো। লজ্জাটা ওর খুব বেশি কিনা।
-” হুমায়ূন স্যার বলেছেন,.” অতিরিক্ত রূপবতীরা বোকা হয়, এটা জগতের স্বঃতসিদ্ধ নিয়ম। ” কিন্তু আজ আমার মনে হলো কথাটা সম্পূর্ণ ভুল। প্রমাণস্বরূপ তুমি নিজে। রূপবতী মেয়েরা বোকা হয় না বরং ওরা হয় দারুন বুদ্ধিমতী।
ঝুমঝুমি হাসলো। আষাঢ়ের প্রতি কৃতজ্ঞ সে। অসময়ে আড়ালে থেকে বন্ধুত্বের হাত বাড়ানোর জন্য কিন্তু বিবেক বারবার বলছে অন্যর দয়া নিয়ে,অনুভুতি নিয়ে খেলে ঠিক করছে না। সামনের পথটা ওর জন্য খুবই ভয়াবহ। এগিয়ে যাওয়ার জন্য না আবার পিছিয়ে যেতে হয়। দাঁড়িয়ে পড়ল ঝুমঝুমি। গম্ভীর কণ্ঠে বলল, আপনকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করব না। আমাকে সাহায্য করার জন্য আপনার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। ঋণি হয়ে থাকবো। ঋণ পরিশোধ করার যোগ্যতা আমার নেই। আমাকে নিয়ে আপনার মনে থাকা অনুভুতি মুছে ফেলুন। এভাবে বলার জন্য আমি সত্যিই ক্ষমাপ্রার্থী।
দ্রুত হেঁটে চলে গেল ঝুমঝুমি। আষাঢ়ের হতাশ মুখশ্রী তখনও চেয়ে আছে পাথর রুপি মেয়েটির পানে। গোপনে দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে বলল, অনুভুতি মুছা যায়না প্রিয়তমা। বরং আমি তোমার মনে আমার জন্য নতুন অনুভূতি সৃষ্টি করব। আমার ভালোবাসার পূর্ণতা আমি লাভ করবই। মন জয় করতে তো হবেই আমাকে মিস তেজপাতা।
___________________
নীরাকে দেওয়ালের সাথে ঠেসে দাঁড়িয়ে আছে হিরণ। চোখেমুখে দুষ্টুমিতে ভরপুর। নীরা চোখ মেলে তাকাতে পারছে না। বুকের ভেতর হাতুড়িপেটা শব্দ উচ্চশব্দে বেজে চলেছে। হিরণ অনৈতিক এক কাজ করে বসল। নিজেকে কন্ট্রোল করতে গিয়েও পিছিয়ে পড়ল। নীরার গালে টুপ করে চুমু খেয়ে বসলো। বড় বড় চোখে তাকালো নীরা। পুরো শরীর থরথর করে কাঁপছে। পূর্বের ঘটনায় চমকিত সে।
হিরণ বলল, নিজ ইচ্ছে করতে চাইনি মনকে অনেকবার নিষেধ করেছি কিন্তু মন শুনেনি। আমাকে দোষারোপ না করে বেয়াড়া মনকে দোষারোপ কর। আমি ভালো নিষ্ঠাবান সুচরিত্রের ইনোসেন্ট ছেলে। ধোঁয়া তুলসী পাতায় ময়লা থাকতে পারে কিন্তু হিরণের চরিত্রে এক ফোঁটা ময়লা নেই। হিরণ ছেলের চরিত্র ফুলের থেকেও পবিত্র। তবে হিরণ ছেলেটার মন বেয়াড়া। কন্ট্রোলে থাকে না। বুঝেছ নীরু পাখি?
লজ্জায় দৃষ্টি নিচুতে রাখল। হিরণের কথাগুলো ওর দারুন ভালো লেগেছে। ওদের রোমান্টিক সময়ে কাবাবের হাড্ডি হয়ে নিজাম হাজির হলো। ঠোঁটজোড়া একত্র করে গাল ফুলিয়ে বলতে লাগলো,
-” হিরণ তুমি একলা হলে, দিও আমায় ডাক,
তোমার সঙ্গে বিড়ি খেয়ে, নাচবো সারা রাত।
##চলবে,,
[১৮+ এলার্ট]
#প্রেয়সীর_শব্দপ্রেম
#ফারজানা_মুমু
[১০]
ভোর না হওয়ার পূর্বেই ঘুম থেকে উঠে পড়ল তিনজন। এখনও আলো ফুটেনি। পুরো বাড়ি জুড়ে নিস্তব্দ,নির্জন,শূন্য-শূন্যে অনুভুতি। মৃ’ত্যু’পু’রী থেকে কম লাগছে না। ঝুমঝুমি কপালে হাত রেখে চিন্তায় ব্যাস্ত। কারণ,ওদের রুমের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ। পরবর্তী সমস্যার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। নীরার মাঝে কোনো প্রকার হেলদোল নেই। নদীর ঢেউ যেখানে থামবে সে সেখানেই যাবে নিজ ইচ্ছে সাঁতরিয়ে নদী পার হবে না এমন হাবভাব। তৃষ্ণা চটে আছে নীরার উপরে। রেগে যাওয়ার কারণ আছে বৈ’কি। হিরণ নাকি ওকে বলেছিল তোমাদের জন্য সকালে সারপ্রাইজ আছে। দূর্বল মন সবল করার কথা বলেছে কিন্তু এ মেয়ে কিছুই বলেনি রাতে, মাত্র বলেছে। রাতে বললে হয়তো সতর্ক থাকতো। তৃষ্ণা মুখ খুলল এবার।
-” এখন কী হবে ঝুমি?
-” আমাদের হাতে কিছু নেই। যা হবে দেখা যাবে। এখান থেকে যেতে হলেও টাকার প্রয়োজন যা আমাদের কাছে এখন এই মুহূর্তে নেই। বাসায় বললে চিন্তা করবে সবাই তার থেকে ভালো দেখ ওদের প্ল্যান।
গোপনে নিঃশ্বাস ছেড়ে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো তৃষ্ণা। বাথরুম চেপেছে। জমিদার বাড়িতে লাগোয়া ওয়াশরুম না থাকায় নীরার পানে কড়মড় দৃষ্টিতে চেয়ে বলল, ইচ্ছে করছে তোকে ওয়াশরুম ভেবে চালিয়ে দিই।
নাকমুখ ছিটকে অন্যদিকে ফিরে তাকালো। তৃষ্ণা দরজার কাছে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে কাঁদো-কাঁদো মুখ করে বলল, প্লিজ দরজা খুলে যা। আলী বাবা ও চল্লিশ চোরের গল্পের মতো চিচিং ফাঁক বলার সাথেসাথে খুলে যা প্লিজ। ধৈর্য খুলাচ্ছে না আর।
তৃষ্ণার দুআ কবুল হলো কিন্তু সমস্যা বাঁধলো তৃষ্ণা দরজার সাথে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ছিল দরজা খোলার পর পরেই সামনে ঝুঁকে পড়তে যাবে শক্ত একটি হাত চেপে ধরলো। কিন্তু তাল সামলানোর আগেই তৃষ্ণা মেঝেতে ধপাস করল সাথে-সাথে যে তাকে ধরেছিল সেও পড়ল। আচমকা ঘটনায় বাকি ছয়জন বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখা ছাড়া উপায় পেলো না। মিরাজ হাত যারা দিয়ে উঠে দাঁড়াল। তৃষ্ণা কোমরে হাত রেখে উঠল। রক্তিম নজরে মিরাজকে ভস্ম করার জন্য ওর চোখের দৃষ্টিই যথেষ্ট। মুখ ফুটে শব্দ বের না করেই ছুটল ওয়াশরুমে। তৃষ্ণার এরূপ ব্যাবহারে ছেলে চারজন একজন আরেকজনকে চোখাচোখি করে হেসে দিল। আষাঢ় ঝুমঝুমির সামনে অপরাধ মুখ নিয়ে বলল, দুঃখিত। ভুলে গিয়েছিলাম এখানে ওয়াশরুম নেই। তোমাদের কষ্ট দেওয়ার জন্য আমরা সত্যিই দুঃখিত।
_
ঝুমঝুমি বুঝতে চাইলো আষাঢ় মজা নিচ্ছে নাকি সত্যিই ক্ষমা চাচ্ছে। আষাঢ়ের চেহারায় বিন্দুমাত্র তাকিয়ে থেকে বুঝতে না পেরে বলল, আমরা এখান থেকে চলে যাব। বাসের কন্ট্রাক্টর মামা কোথায়?
হিরণ দাঁত পাতি বের করে হেসে দিল। নীরার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল, ওরা তো রাতেই চলে গেছে ভাবী।
দুজনে চমকে তাকালো। হিরণ ঠোঁটের কোণায় দুষ্টু হাসির রেখা টেনে আবারও বলল, কেমন হলো সারপ্রাইজ?
ঝুমঝুমির পুরো শরীর রাগে ফেটে যাচ্ছে। কিন্তু কন্ঠস্বর থেকে শব্দরা আসছে না। কি করবে বুঝতে পারছে না, মাথার ভিতরে সব এলোমেলো হয়ে গেছে। অসহায় দৃষ্টিতে আষাঢ়কে দেখল। বলল, প্লিজ যেতে দিন আমাদের, অনুরোধ করছি অযথা বাড়াবাড়ি করবেন না।
-” যদি ভালোবাসো তাহলে যেতে দিবো।
-” আমার পক্ষে কাউকে ভালোবাসা কিংবা বিয়ে করা সম্ভব নয়।
ঝুমঝুমির গম্ভীর হয়ে বলা বাক্যটিকে নাজিম অন্যকিছু ভেবে বসলো। চোখ বড়-বড় করে বলল, তুমি তৃতীয় লি*ঙ্গে*র মানুষ?
নাজিমের মুখ ফসকে বলা কথাখানি শুনে নীরা রেগে উঠল। তৃষ্ণা সবে মাত্র দাঁড়িয়েছে নাজিমের কথা শুনে জুতো খুলতে ব্যাস্ত হলো। মিরাজ ও হিরণ থামালো তৃষ্ণাকে। আষাঢ় নাজিমকে শান্ত চোখে পর্যবেক্ষণ করল। নাজিম ভয়ে চুপসে গিয়ে মিরাজের পিছনে লুকালো।
মিরাজ বলল, বলোদটাকে ধরে বাইরে নিয়ে জুতো পেটা করছি তুই প্রেম কর।
-” মুখের ভিতরে ফেভিকল লাগাতে ভুলবেন না।
তৃষ্ণার কড়া বাক্য। মিরাজ সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করে বলল, তোমার হাতে হ্যান্ডকাফ পড়াতে হবে। যখন-তখন ছুড়াছুড়ি করতে চাও।
ঝুমঝুমির মধ্য হেলদোল নেই। সে চুপচাপ শুনে যাচ্ছে সব। ঠোঁটের কোণায় ফুটলো নিরাশ হাসি। তিক্ততা জীবন বয়ে নিতে হিমশিম খাচ্ছে।
সকালের নাস্তা শেষ করে ঝুমঝুমিরা জমিদার বাড়ির পিছনের দিগটায় হাঁটতে বের হলো। নীরা বকে যাচ্ছে অনগত। তৃষ্ণা রাগ ঝারছে নীরার উপর। ঝুমঝুমি ব্যাস্ত জঙ্গলের শেষ মাথায় বট গাছ দেখতে। অনেক বছরের পুরনো বট গাছ।
-” গ*লা*য় দ’ড়ি দেওয়ার জন্য পারফেক্ট গাছ এটা। ভাবছি মা-বোনকে সুন্দর একটি জীবন উপহার দিয়ে আমি আবার এখানে চলে আসবো তারপর মৃ*ত্যু*পু*রী*তে মৃ*ত্যু বরণ করব।
ঝুমঝুমির এহেন কথা শুনে ওরা দুজন জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিল। কান্নার অবশ্য একটি কারণ আছে। কিছুক্ষণ আগে মেঘের ম্যাসেজ এসেছিল। সুন্দর ম্যাসেজ নয় বরং হাড় কাঁপানোর মত ম্যাসেজ।
‘ ভালোই তো ইনজয় করছিস ঝুমি। মনের সাথে-সাথে শরীরেরও। টাকা কামানোর নতুন ধান্দা। এক ঢিলে দুই পাখি শিকার করার মতো। শরীরের চাহিদার পাশাপাশি টাকার চাহিদা দুটোই মিটবে। আমাকে একবার বলতে পারতি যত টাকা দরকার আমি দিবো। অন্যরা তোকে র’ক্ষি’তা রাখবে আমি নাহয় বউ হিসেবে রাখতাম। ও হ্যাঁ বুঝতে পেরেছি। তোর তো আবার এক পুরুষে মন উঠে না। নিত্যনতুন পুরুষ লাগবে। ঝর্ণাকে সাথে নিতে পারিস, ইনকাম ভালো হবে। কচি মেয়েদের ডিমান্ড বেশি।”
নিজেকে নিয়ে বাজে কথা শুনতে-শুনতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে কিন্তু ঝর্ণাকে নিয়ে এসব বলার পর বিষিয়ে উঠে ঝুমঝুমির মন। মনে-মনে মৃ’ত্যু কামনা করে। আর পারছে না সে কিছুতেই পারছে না। নষ্ট জীবন বয়ে বেড়াতে হাঁপিয়ে উঠেছে।
ঝুমঝুমির পিছন-পিছন এদিকে আসছিল আষাঢ় হঠাৎ ঝুমঝুমির মৃ’ত্যু কামনা শুনতে পেয়ে বুকের ভিতরে ধক করে উঠল। কাঁপা কণ্ঠে বলে উঠল,
-” আরেকবার বাজে বকলে আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না ঝুমি।
ঝুমঝুমি আষাঢ়কে দেখল। বিবেক জাগ্রত হলো। এই ছেলেটা ওর জন্য লুকিয়ে-লুকিয়ে অনেক সাহায্য করেছে। ছেলেটা যাইহোক প্রতারক নয়। মনকে বুঝাল, ছেলেটাকে সব সত্য কথা বলে দিবে। সত্য জানার পর হয়তো আষাঢ়ের হৃদয়ে প্রেম পাখিটা ছলাৎ করে উড়ে যাবে। তবে তাই হোক উড়ে যাক প্রেমের পাখি। তবুও তো আশায় থাকবে না। আষাঢ়ের চোখে তাকালে বুঝা যায় ছেলেটা তাকে কত ভালোবাসে। এই ভালোবাসার যোগ্য ও নয়। প্রথমে কষ্ট পেলেও পরবর্তীতে নিজেকে শুধরাতে পারবে। তিলে-তিলে গড়ে উঠা ভালোবাসা শুরুতেই ধ্বংস করা উচিত তানাহলে সব শেষ হয়ে যাবে।
নীরা-তৃষ্ণাকে চলে যেতে বলে আষাঢ়কে বলল, আপনার সাথে আমার ব্যাক্তিগত কথা আছে। আমি চাইনি আমার ব্যাক্তিগত কথা এখানের কেউ জানুক কিন্তু বাধ্য হয়ে বলতে হচ্ছে। আপনার অনুভূতি নিয়ে খেলা আমার ঠিক হচ্ছে না। আমার কালো রাতের ঘটনা আপনাকে আজ বলব। সব শুনার পর আপনি নিজ থেকেই আমাকে ঘৃনা করবেন। আমাদের দুজনের ভালোর জন্য আজ আপনাকে সত্য কথা বলতে বাধ্য হচ্ছি।
ঝুমঝুমির এহেন কথাবার্তা শুনে আষাঢ় ভয়ার্ত চোখে তাকালো। বলল,
-” আমি শুনতে চাই না তোমার ব্যাক্তিগত কথা। আমি জানি তুমি আমাকে কষ্ট দিতে চাচ্ছো। আমার ভালোবাসার পূর্ণতা না দিয়ে শূন্যতা দিতে চাইছে।শুনো মেয়ে আমার ভালোবাসায় খাদ নেই। তোমাকে আমি অসম্ভব ভালোবাসি। তোমার অতীতের কথা আমি শুনতে চাই না। আমি বুঝতে পেরেছি তুমি আমাকে খুব ভালো কথা বলবে না। অতীত না জেনে তোমায় ভালবাসি তোমার অতীত যতই আঁধার হোক আমার কাছে তুমি নামক মানুষটিই আলো। আঁধারকে সরিয়ে আলোর দেখা। জানি না তোমায় পাব কিনা তবুও আমার কল্পনায় তুমি শুধু আমার। বাস্তবে না হোক কল্পনায় সুখী থাকি আমি। প্রতিদিন আশায় নিয়ে থাকি এই বুঝি তুমি আমাকে ভালোবাসি বলবে এই আশাকে নিরাশাকে করো না। আমার হৃদয়ে কাল বৈশাখী ঝড় তুলতে চাইছ তুমি? আমি হতে দিবো না। ভালো না বাসো অন্তপক্ষে পুড়াতে এসো না। আমি খুব দূর্বল মনের মানুষ। অল্পতেই অভিমান করে বসি। যে দুটো শব্দ ছেলেদের মাঝে বেমানান সেইগুলোই আমার মধ্য বিদ্যমান। তোমাকে হারানোর কথা ভাবলে আমার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়,দম বন্ধ হয়ে আসে,চারদিকে শূন্যতা-শূন্যতা লাগে। তোমাকে ছাড়া আমি মৃ’ত। তোমাকে আমি কি পরিমান ভালোবাসি তুমি জানো না ঝুমি। নির্ভেজাল , সহজ সরল মানুষটি কি করে তুমি নামক পাথরের প্রেমে মজেছ জানি না। তোমার অতীত আমার কাছ থেকে দূরে রাখ। যে অতীত তোমাকে আমার কাছ থেকে দূরে নিতে চাইবে সেই অতীত ধামাচাপা থাকুক। বর্তমান-ভবিষ্যত্ সুন্দর থাকায় যথেষ্ট। তোমার আমার মাঝে অতীত নামক কাল বৈশাখী ঝড়ের তান্ডব আনতে যেও না।
ফিচেল হাসলো ঝুমঝুমি। অকপটে বলে ফেলল, আমি ধ’র্ষি’তা আষাঢ়।
##চলবে,