প্রেয়সীর শব্দপ্রেম পর্ব-০৩ (দ্বিতীয় খন্ড)

0
601

[ ১৮+ এলার্ট]
#প্রেয়সীর_শব্দপ্রেম (দ্বিতীয় খন্ড)
#ফারজানা_মুমু
[৩]

অন্ধকার বৃষ্টি স্নাত রাত। স্ট্রিট লাইটের আবছা আলোয় জনমানবহীন রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে আছে একটি মেয়ে। গায়ে জড়ানো ধূসর রঙের বোরখা, বাম হাতে কাপড়ের ব্যাগ, ডান হাতে ছাতা মেলে ধরা। দূর থেকে ছিমছিমে নারীর অভয়া দেখে ভ্রু কোঁচকাল শামীম, কপালে তর্জনী আঙ্গুল চেপে ধরলো। গভীর রাত এখন, একজন মেয়ে একা দাঁড়ানো আবার বৃষ্টি হচ্ছে আকাশ কাঁপিয়ে। মনে-মনে ভয় জাগ্রত হলো। মেয়েটি মানুষ নাকি অন্যকিছু। চিন্তা ভাবনার মাঝেই গাড়ি এসে থামলো মেয়েটির সামনে। শামীম দেখতে পেল পুরো মুখ ঢাকা মেয়েটির তবে চোখজোড়া খুবই মোহণীয়, আকর্ষণীয়। গ্লাস গলিয়ে মুখটা এগিয়ে দিতেই নাকে ঠেকল মোহনীয়,মিষ্টি সুবাস। শামীমের দৃষ্টি আটকালো মেয়েটার বোরখার ভাঁজে শরীরের বিভিন্ন খাঁজ পানে। ছাতা থাকা সত্বেও হাওয়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে মেয়েটির শরীর ভিজে জবজবে। বোরখা লেপ্টে আছে অঙ্গ জুড়ে। শরীরের প্রতিটি ভাঁজ স্পষ্ট ধরা দিচ্ছে চোখের পাতায়। শামীমের লো’লু’প দৃষ্টি সেখানেই চেয়ে রইল ক্ষীণ সময়। হারিয়ে গেল কল্পনার জগন্য শহরে। চিকন সুরেলা কণ্ঠ কানে বাজতেই মেয়েটির মুখের দিকে তাকালো আবারও। মুখ দেখা না গেলেও চোখজোড়া দেখেই বুঝা যাচ্ছে মেয়েটির বয়স বেশি নয়। ভদ্রতার মুখোশ এঁটে বলল, ম্যাম বলুন আপনার জন্য কী সাহায্য করতে পারি?
-” আমায় বড় রাস্তায় নামিয়ে দিতে পারবেন প্লিজ? একচুয়ালি আসার পথে বাস নষ্ট হয়ে যায়। যাত্রী সবাই নেমে পরে। আমিও নেমে পরি কিন্তু কোথাও গাড়ি খোঁজে পাচ্ছি না। সাহায্য করলে খুবই উপকৃত হতাম।

শামীমের খুৎসিত চিন্তা ভাবনা জেগে উঠল। হিংস্র মনুষ্যত্ব মনে-মনে নিজেকে বাহবা দিয়ে বলল, শিকার নিজ থেকেই ধরা দিচ্ছে আমি বারণ করার কে? অনেকদিন হলো নতুন শরীরে হাত দিচ্ছি না,ঘ্রাণ পাচ্ছি না। আজকের ওয়েদার রোমাঞ্চকর সেই সাথে উত্তেজনাময় সঙ্গী। জমবে ভালো।
-” জি উঠে আসুন।

মেয়েটি এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে পাশ ঘুরে ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটে বসে পড়ল। হিজাব সামনে ধরে ঝারার সময় শামীম আবারও চোখ দিল সেখানে; মেয়েটি তখন ব্যাস্ত শরীরের পানি মুছতে। শামীমের চোখ চকচক করল যেন চোখের দৃষ্টিতেই গিলে খাবে। উত্তেজনায় বেদিশা হয়ে হিন্দি রোমান্টিক গান বাজিয়ে দিল শামীম। বড় রাস্তায় যেতে এখনও সময় লাগবে দু’ঘন্টা। যা করার আগেই করতে হবে। নিজেকে ধরে রাখা যাচ্ছে না একেবারেই, প্রথম দেখবে মেয়েটার ইচ্ছে যদি নিষেধ করে তখন না হয় জোরজবরদস্তি করবে। রাত বেশি,নির্জন রাস্তা চেঁচালেও কেউ শুনবে না। মনে-মনে হিংস্র হয়ে উঠল শামীম। হিংস্রতা বাড়লো দ্বিগুণ গতিতে।

প্রথম মেয়েটিই প্রশ্ন করল, আপনার ঠিকানা কোথায়?
-” বড় রাস্তার পাশেই। আচ্ছা আপনার বিয়ে হয়েছে?

শব্দ করে হাসলো মেয়েটি। হাত নাচিয়ে বলল, মনের মত কাউকে খোঁজে পাইনি তাই বিয়েটা এখন অব্দি হয়নি।
-” কেমন চাচ্ছেন?
-” এই যেমন আপনার মত। বিয়ে-শাদী করেছেন আপনি?

শামীমের ঠোঁটের কোণায় দুষ্টু হাসি ফুটলো। মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, আজ্ঞে নয় ম্যাম। আপনার মত আমিও মনের মত কাউকে খোঁজে পাচ্ছি না।

মেয়েটি জোরে হেসে দিল। শামীম সাড়া পেয়ে গাড়ি থামিয়ে মেয়েটির কাছে একদম ঘেঁষে ফিসফিস করে বলল,তাহলে চলুন না আজ আমরা হারিয়ে যাই দুজনে নির্জনে,কেউ জানবে না, দেখবে না। বিয়ের আগে নিজেদের চাহিদা সম্পর্কে জানা অন্যায় নয়। ওয়েদার কিন্তু আজ দারুণ।

মোহনীয় চোখজোড়া দুবার উঠানামা করে হাসলো। শামীম আরেকটু আশকরা পেয়ে বলল, হবে নাকি কিছু? বৃষ্টিময় রাত দুজন একসাথে। রাস্তা নির্জন কেউ আসবে না। জানেনই তো শরীর চাঙ্গা তো মন চাঙ্গা। যেভাবে চাইবেন সেভাবেই।

মেয়েটি দুহাত বৃষ্টির মধ্য নাচিয়ে বলল, সুযোগ হাত ছাড়া করতে চাচ্ছি না। আজকের রাত আমাদের জীবনে দ্বিতীয়বার আসবে না। প্রস্তুতি নিন।

শামীম অবাক হওয়ার পাশাপাশি খুশি হলো। মেয়েটি যে সহজেই রাজি হয়ে যাবে কল্পনা করেনি। শার্টের বোতাম খুলে জোরেজোরে বিশ্রী গালি দিয়ে বলল, আজকের রাতের কথা সত্যিই ভুলার নয় জানেমন।

মেয়েটির হাত ধরে হিজাব টান দেওয়ার আগেই মেয়েটি ধরে বলল, খালি মুখে মজা নেই। চলো খাওয়া যাক কিছু। আমার আবার মিষ্টি মুখ ছাড়া কিছু ভালো লাগে না।

শামীমের তর সইছে না যেন। ধৈর্য্য হারা কণ্ঠে বলল, এখানে দোকান নেই। খাওয়া-দাওয়া পরে হবে।

-” সবুরে মেওয়া ফলে মিস্টার। আপনার জায়গায় সুন্দর করে বসুন আমি নিয়ে এসেছি।

শামীম বিরক্ত হয়ে দুরত্ব রাখল। ঝামেলা করতে চাইলো না মেয়েটা যেহেতু নিজ থেকেই চাইছে তাহলে অযথা বাড়াবাড়ি করে খেপানো উচিৎ না। জোরজবরদস্তিতে মজা নেই।

মেয়েটি দুটো বোতল বের করে শামীমের সামনে ধরল। শামীম ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করল, কি এইগুলো?
-” বিদেশি মা’ল। পুলিশ ধরবে বলে নরমাল বোতলে রেখেছি।

শামীমের মুখে হাসি ফুটলো। মেয়েটির হাত থেকে কেড়ে নিলো একটি বোতল। ঘ্রাণ শুকেই বলল, তুই তো দেখছি এক নম্বরের মা**। সত্যি করে বল তো ব্যাবসা কতদিনের? থাকিস কই? আজকের রাতটা আমার ভালোই কাটবে দেখছি। রে’ট কত তোর? তাছাড়া বাহিরে যেভাবে চলিস তোকে দেখে উপায় নেই তুই যে এক নম্বরের খা***। পোশাক আশাকে সাধু কিন্তু ভিতরে পুরাই বে*** ।

মেয়েটা রিনরিন করে হেসে দিল। কণ্ঠে তীব্র আবেগ মিশিয়ে নিজের বোতলটা খুলে বলল, আপনিই প্রথম। দরের কথা পরে হবে আগে চলুন ইনজয় করি।

মেয়েটার বলার আগেই শামীম ঢকঢক করে গলায় ঢেলে দিল। বোতল গাড়িতে ফেলেই নেশালো কণ্ঠে মেয়েটির মুখের হিজাব সরাতে চমকে উঠল। শক খাওয়ার মত পিছিয়ে বলল, ঝুমঝুমি তুমি?

ঝুমঝুমি হাসলো। বৃষ্টির শব্দের সাথে হাসির শব্দ মিলিয়ে নির্জন রাস্তায় অশরীরী মায়াজালে জড়ালো। ভয়ঙ্কর সুন্দর চোখজোড়া চিকচিক করে উঠল প্রতিশোধের নেশায়। দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষার প্রহর আজ অবসান ঘটবে। নজর রেখেছিল শামীমের উপর। অনেকবার চেষ্টা করেছিল কিন্তু সুন্দর মুহুর্ত পায়নি। ফাঁকা রাস্তা ছাড়া খু’ন করা একেবারে অসম্ভব ঝুমঝুমির। সুযোগ ছিল না ওর, তবে আজকের রাতটা ওর খুবই দরকার ছিল। নির্জন রাস্তা,বৃষ্টি,গভীর রাত। ঝুমঝুমি জানতো প্রতি মঙ্গলবার শামীম এ রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফিরে। একটা থেকে তিনটার ভিতর। সুযোগ হাতছাড়া করল না আজ তাইতো ছদ্মবেশে দাঁড়িয়ে রইল মাঝ রাস্তায়।
-” আজ তোর বাঁচার উপায় নেই।

শামীমের মনে হলো যে জোকস শুনছে। ঝুমঝুমির কোমরে দুহাত চেপে ধরতেই ঝুমঝুমি দুহাত দিয়ে চেপে ধরল শামীমের হাত। বলিষ্ঠ পুরষের সাথে পেরে উঠল না ঝুমঝুমি। শামীম ওকে জড়িয়ে নিজের একদম কাছে নিয়ে ফিসফিস সুরে বলল, অনেক বছর আগে একবার ভো’গ করেছি। ভেবেছিলাম আর হবে না কিন্তু তুমি বড্ড অবোঝ শালীকা ঠিকই ধরা দিলে। সেদিন ছিল ভয় আমার মনে কিন্তু আজ আর ভয় নেই। মনের স্বাদ ইচ্ছেমত পূরণ করব।

ছটফট করতে ব্যাস্ত ঝুমঝুমি। নোংরা হাত দুটো বিচলন করছে ঝুমঝুমির দেহে। শরীরের সর্বশক্তি প্রয়োগ করার আগেই শামীমের হাত শীতল হলো। ঝুমঝুমি হাসলো। শামীমের বোতলে হুইস্কির সাথে‘ট্রা*ঙ্কু*লা*ই*জা*র’ নামক ঘুমের ওষুধ মেশানো ছিল। হাত সরিয়ে উল্টো ঘুরে শামীমের গালে জোরে-জোরে দুটো থাপ্পড় বসিয়ে ব্যাগ থেকে ছু’রি’টা বের করল। তারপর শুরু হলো প্রতিশোধের আগুন। মনের মাধুরী মিশিয়ে আজ শেষ করবে। দীর্ঘদিনের লালিত ইচ্ছা পালন করবে। কালো রাতে মুচোন ঘটল একজন পাপীর জী’ব’ন। নিজের মনে তৈরি থাকা তীব্র ক্ষো’ভ মিটালো আপন মনে।

_______________________

ভোরের আলো ফুটলো। ঝুমঝুমি ওয়াশরুম থেকে বের হতেই হালিমা বেগম দাঁড়ালো সামনে। সন্দিহান কণ্ঠে প্রশ্ন করল, আমি জানি তুমি অনেক ভালা মাইয়া। তোমারে অবিশ্বাস করার কারণ খোঁজে পাইনা। অনেক বছর ধরে দেখতাছি তোমারে। কিন্তু আইজ আমার মনে একখান কথা ঘুরতাছে।

ঝুমঝুমি চুল মুছতে-মুছতে বলল, বলো খালা কী বলবে?

বলবে কি বলবে না করেও বলল হালিমা, মাইয়াগো জামাই থাকাকালীন সকালে গোসল করলে মানুষ সন্দেহ করে না কিন্তু আবিয়াত্তা কিংবা বিধবা মাইয়ারা সকালে গোসল করলে মানুষের চোখে বিঁধে।
-” কি বলতে চাও খালা?

ফুরফুরে মেজাজে আগুন জ্বালিয়ে দিল হালিমা। চরিত্রের ক’ল’ঙ্ক শুনতে-শুনতে এখন আর ভালো লাগে না। ঝুমঝুমির কঠিন গলায় প্রশ্ন শুনে চুপসে যায় হালিমা।

-” তুমি খারাপ কাজ করবে না এইডা আমি জানি। আচ্ছা মা হুনো তোমার বয়স আর কত? একলা জীবন ভীষন কষ্ট। তুমি চাইলে আবার বিয়া করতে পারো।
-” খালা বাজে না বকে যাও তো দেখো ঝিনুক ঘুম থেকে উঠল কিনা। আমি রান্না ছড়াই।

হালিমার কথায় পাত্তা দিলো না ঝুমঝুমি। হালিমা বেদনাদায়ক ফিল করে ঝিনুকের কাছে ছুটে গেল।

____________________
ঝিনুককে নিয়ে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে ঝুমঝুমি। বোরখার হাতায় লাগানো বড় বড় স্টোনে আঙ্গুল গলিয়ে ঝিনুক বলল, মাম্মা এইগুলো কী মুক্তোর?
-” না মা।
-” আমি বড় হয়ে তোমায় মুক্তোর মালা বানিয়ে দিবো বুঝছো মাম্মা।
-” তাই! আচ্ছা বানিয়ে দিও।

ওদের কথার মাঝেই উপস্থিত হলো আষাঢ়। আজ গাড়ি নেই সাথে। ফরমাল ড্রেসআপ। ঝুমঝুমি কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকেও চোখ সরিয়ে নিলো।
-” নিজের মানুষকে লুকিয়ে দেখার কি আছে তেজপাতা? চোখ না সরিয়েই পলকহীন দেখে যাও। তোমার নজর আমার লাগবে না।

ঝিনুক গালে হাত দিয়ে আষাঢ়ের পেটে গুতো দিয়ে বলল, তুমি আমার মাম্মাকে তেজপাতা কেন বললে?

দুপায়ে ভাঁজ করে বসল আষাঢ়। ঝিনুকের সমান-সমান হয়ে বলল, তুমি বুঝবে না মামুনি। বলো তো মামুনি আমায় দেখতে কেমন লাগছে? খুব বাজে?
-” একদমই না তোমায় দেখতে খুব সুন্দর লাগছে আঙ্কেল। তোমার গাড়ি কোথায়?

ভাবুক হয়ে বলল আষাঢ়, তুমি না বললে গাড়িতে চড়তে মজা নেই রিক্সায় মজা। আজ আমরা রিক্সায় ঘুরব।
-” কিন্তু আমার স্কুল,মাম্মার অফিস।
-” আজকের জন্য সব অফ।

ঝিনুক খুশিতে লাগিয়ে উঠল। ঝুমঝুমি রাগী দৃষ্টিতে আষাঢ়কে দেখে মুখ খুলতে যাবে তখনই আষাঢ় ফিসফিস করে বলল, বেশি কথা বললে মা মেয়ে দুজনকেই তুলে নিয়ে যাব। আমার ফ্রেন্ডসরা সব লুকিয়ে আছে। ওদের উদ্দেশ্য ডাইরেক্ট কাজী অফিস।

ঝুমঝুমি থমথমে ভাব ফুটিয়ে তুলল। আশ্চর্য হয়ে বলল, আমায় রাগাবেন না।
-” তোমার রাগকে আষাঢ় ভয় পায় না। ভুলে যেও না আমি সেই আগের আষাঢ় নই। আমাকে তুমি পঁচা আষাঢ় বানিয়েছ। আমার দ্বারা সব সম্ভব এখন। উদাহরণস্বরূপ বলছি ,আমার এই মুহূর্তে ইচ্ছে করছে তোমার চোখে টুপ করে চুমু খেয়ে ফেলি। তুমি চাও আমি চুমু খাই? জানি চাও না। পাষাণ প্রেয়সী আমার। চুমু হজম করতে না চাইলে আমার সাথে আজ ঘুরাঘুরি করো। তিন পর্যন্ত গুনবো। এক,দুই,….!
-” রিক্সা ডাকুন।

আষাঢ় হেসে দিল। ঝিনুককে কোলে নিয়ে শক্ত হাতে ঝুমঝুমির হাত চেপে ধরে আকাশের পানে তাকিয়ে বলল, বউ-বাচ্চা নিয়ে ঘুরার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে যাচ্ছি। যদিও এখনও বাচ্চার মাকে বিয়ে করতে পারিনি কিন্তু তাতে কি বিয়ে আমি বাচ্চার মাকে করবই। ফ্রীতে বাচ্চার বাবা হয়ে যাব। সুন্দরী বউয়ের সাথে আদরী মেয়ে পাব তাতেই জীবন চলবে আমার।

##চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে