প্রিয় অর্ধাঙ্গীনি পর্ব-০৬

0
535

#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_৬
,
ভর দুপুর মাস্টার বাড়ি তখন ফাঁকা বাড়ির ছেলেরা নামাজ থেকে ফিরে যে যার কাজে গিয়েছে। বাড়ির মহিলারাও তখন সব এক জোট হয়ে পুকুরে গিয়েছে গোসল করতে। যদিও বাড়িতে গোসল এর ব্যাবস্হা আছে কিন্তু শাহানারা বলল সে পুকুরে গোসল করবে এই জন্যই সব একসাথে গিয়েছে। শশী তার সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে মোল্লাদের বাগান থেকে পেয়ারা পেরে এনেছে। উড়নার একপাশে সেটা বেঁধে নিয়ে আরেকটা খেতে খেতে বাড়ি আসলো। কয়েকবার নিজের মাকে ডাকার পরেও কোনো সাড়া শব্দ পেলো নাহ। তাই পেয়ারাগুলি রান্নাঘরের ঝুড়িতে রেখে নিজের রুমের দিকে গেলো। রুমে যাওয়ার আগে একবার ভাবলো রোদ্রের কাছে গিয়ে জেনে আসবে তার ছবি আঁকা শেষ হয়েছে নাকি৷ কিন্তু রুমে গিয়ে দেখে রোদ্র ঘুমিয়ে আছে। তাকে আর না ডেকে দরজা চাপিয়ে দিয়ে বেরিয়ে আসলো। তখনি ওর রুমের পরের রুমের দিকে চোখ পড়ল সমুদ্রের রুমের দরজা খোলা শশী দরজা আটকানোর জন্য সেদিকে পা বাঁড়ালো। দরজা আটকাবে তখনি ভিতরে তাকাতেই দেখলো সমুদ্র ঘুমিয়ে আছে। শশী কিছু একটা ভেবে গুটি গুটি পায়ে ভিতরে গেলো একবার সমুদ্রের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে আবার অন্যদিকে তাকালো। হঠাৎ টেবিলে রাখা একটা জিনিস এ চোখ পড়তেই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলো। আস্তে আস্তে টেবিলের কাছে গিয়ে ভালো করে তাকাতেই বুঝলো ওটা রিভলবার শশীর চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। জীবনে খেলনা পিস্তল অনেক দেখেছে এমনকি আব্বার সাথে মেলায় গিয়ে নিজের জন্যও কিনেছে। তবে কখনো আসল টা দেখা হয়নি, শশী প্রায় অনেকটা সময় তাকিয়ে থেকে কাঁপা কাঁপা হাতে ওটা ধরতে যেতেই পিছন থেকে সমুদ্র বলে উঠল।

ওটা খেলার কোনো জিনিস নয়, ওটার একটা গুলিই তোমার জন্য যথেষ্ট।

শশী চমকে পিছনে তাকিয়ে দেখে সমুদ্র দাঁড়িয়ে আছে। শশী কি বলবে সেটা ভেবে না পেয়ে দৌড়ে বের হতে গেলে সমুদ্র বলে উঠল, এক পাও নড়বে নাহ দাঁড়াও ওখানে। তোমাকে নিষেধ করেছিলাম না? তার পরেও আমার রুমে কেনো এসেছো?

শশী কি বলবে বুঝতে পারছে নাহ। কোন কুক্ষণে যে এই ঘরে এসেছিলো। শশী আমতা আমতা করছে তবে কিছু বলতে পারছে নাহ সমুদ্র এগিয়ে এসে টেবিল থেকে রিভলবার টা হাতে তুলে নিয়ে শশীর দিকে তাক করতেই। শশীর চোখগুলো বড়বড় হয়ে গেলো ভয়ে চিৎকার করে ওখানে অঙ্গান হয়ে পড়ে গেলো। কারো চিৎকার শুনে রোদ্রের ঘুম ভেঙ্গে গেছে বিছানা থেকে উঠে দৌড়ে রুমের বাইরে এসে দেখলো সমুদ্রের রুমের দরজা খোলা সেদিকে গিয়ে রুমের দরজার সামনে দাঁড়াতেই দেখলো সমুদ্র রিভলবার হাতে দাঁড়িয়ে আছে। আর শশী মেঝেতে পড়ে আছে রোদ্র শশীকে পড়ে থাকতে দেখে অবাক হয়ে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল।

ভাই কি হয়েছে?

এই ইডিয়ট টাকে এখান থেকে নিয়ে যা রিভলবার দেখে ভয়ে ঙ্গান হারিয়েছে।

কথাটা বলে সমুদ্র বিছানায় বসে হাতের রিভলবার টা পরিষ্কার করতে লাগল৷ রোদ্র হতাশ চোখে একবার শশীর দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলল, মেয়েটা যে ঘুরে ফিরে কেনো তার ভাইয়ের সামনে আসে কে জানে।
,,,,,,,,,,
সন্ধ্যা পড়তেই শশীর ধুম জ্বর এলো শরীল কাঁপানো জ্বর। মেয়ের এমন অবেলায় জ্বর দেখে জামশেদ মাস্টার তড়িঘড়ি করে হাট থেকে ফেরার পথে সাথে করে ডাক্তার নিয়ে এলো। এদিকে পারভিন মেয়ের মাথায় হাত বুলাচ্ছে আরেকদিকে রাগে শশীকে বকা দিচ্ছে। এই গরমে এমন টইটই করে রোদে রোদে ঘুরলে জ্বরতো আসবেই। গরমেই এমন জ্বর এসেছে রোদ্র একপাশে দাঁড়িয়ে শশীর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। তখন ভাই ওকে নিয়ে যেতে বললে টেবিল থেকে পানির গ্লাস নিয়ে ওর মুখে একটু পানি ছিঁটাইতে শশীর ঙ্গান ফিরে এসেছিলো। উঠে বসে একবার রোদ্রের দিকে তাকিয়ে আবার সমুদ্র কে দেখেই পড়িমরি করে দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেছে। যাওয়ার সময় দরজার সাথে ধাক্কা খেয়ে কপালের একপাশে আলুর মতো ঢিপ বানিয়েও ফেলেছে। রোদ্র বুঝতে পেরেছে তখন মেয়েটা প্রচন্ড রকমের ভয় পেয়েছে তার দরুনই এমন শরীল কাঁপানো জ্বর। মেয়েটা এতো নাজুক সেটা তার ভাই বুঝতেই চাই নাহ। শাহানারা শশীর পাশেই বসে ছিলো হঠাৎ রোদ্রের দিকে চোখ পড়তেই কিছু একটা ভেবে বিছানা থেকে উঠে রোদ্রের কাছে গেলো। রোদ্র কে টেনে রুম থেকে বাইরে নিয়ে গিয়ে বলল।

সত্যি করে বলতো শশীর হঠাৎ করে এমন জ্বর আসলো কেনো? তোর চোখমুখ দেখেতো মনে হচ্ছে তুইই কিছু করেছিস।

এসব কি বলছো মা আমি কি করবো আমি কিছুই করিনি।

তাহলে মুখটাকে এমন চোরের মতো করে রেখেছিস কেনো? সত্যি করে বল আর সমুদ্র কোথায়?

ভাইয়াতো সেই বিকেলে বের হয়েছে এখনো ফেরেনি।

আচ্ছা ঠিক আছে এখন বল ঘটনা কি?

বিশ্বাস করো মা আমি কিছুই করেনি ভাইয়ার ও এখানে কোনো দোষ নেই আসলে হয়েছে কি ভাইয়া তার রিভলবার টা পরিষ্কার করছিলো তখনি শশী রুমে ঢুকে পড়ে আর ভাইয়ার হাতে রিভলবার দেখে ভয়ে অঙ্গান হয়ে যায়। হয়ত অতিরিক্ত ভয়ের কারণেই এমন জ্বর এসেছে।

মেজো ছেলের মুখে ঘটনা শুনতেই শাহানারা হতাশ চোখে অন্যদিকে তাকালো। সে তার বড় ছেলেকে হাড়ে হাড়ে চেনে নিশ্চয়ই এমন কিছু করেছে যে বাচ্চা মেয়েটা এমন ভয় পেয়েছে। এই ছেলেটাকে নিয়ে আমি আর পারি নাহ।

কি ব্যাপার তোমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো? কিছু হয়েছে?

পিছন থেকে আসা সমুদ্রের গলার স্বর শুনে শাহানারা ছেলের দিকে তাকালো তারপর সমুদ্রের হাত ধরে টেনে ওর রুমে নিয়ে গিয়ে রেগে বলল, তুই কি চাস বলতো আমায়। মানে তুই কি ঠিক করেই রেখেছিস যে আমাকে শান্তিতে থাকতে দিবি নাহ। সমুদ্র আমরা এখানে বেড়াতে এসেছে এখানে এসেও তোকে ঝামেলা পাকাতে হবে?

মায়ের কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারলো নাহ সমুদ্র। পকেট থেকে ম্যানিব্যাগ ফোন আরো বাকি সবকিছু বের করে টেবিলে রেখে বিছানায় মায়ের পাশে বসতে বসতে জিগাস করলো। একটু পরিষ্কার করে বলবে কি হয়েছে। তোমার কথার মাথা মন্ডু কিছুই বুঝতে পারিনি।

শশীকে কি করেছিস?

শশী কে?

ছেলের মুখে এই কথাটা শুনে শাহানারার রাগ আরো বেড়ে গেলো। রেগে দাঁতে দাঁত চেপে বলল, জামশেদ ভাই এর মেয়ে শশী ওকে তুই কি করেছিস সত্যি করে বল। মেয়েটা জ্বরে কাতরাচ্ছে রোদ্র বলল তোর হাতে রিভলবার দেখে নাকি ভয় পেয়েছে কিন্তু আমি জানি কাহিনী অন্যকিছু সত্যি করে বল কি বলেছিস তুই ওকে?

মা তুমি এসব কি ধরনের কথা বলো ওইটুকু একটা বাচ্চা মেয়েকে আমি কি বলবো? মানে তোমার কথাশুনে মনে হচ্ছে আমি ওকে মেরেছি আজব কথাবার্তা বলো।

মারতেও পারিস তোকে আমি এক বিন্দুও বিশ্বাস করি নাহ।

কথাটা বলে শাহানারারা রুম থেকে রেবিয়ে গেলো সমুদ্র মায়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বিছানা থেকে উঠে তার ছোট ব্যাগটা থেকে কিছু একটা বের করলো তারপর সেও রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
,,,,,,,,,,,
খাটে আধশোয়া হয়ে বসে আছে শশী আর তারপাশেই পারভিন বসে ভাত মাখিয়ে লোকমা বানিয়ে মেয়েকে খাইয়ে দিচ্ছে। শাহানারা ও পাশে বসে আছে সে ভিতরে ভিতরে ছেলের করা কাজে ভীষণ চিন্তিত। তখনি দরজা দিয়ে সমুদ্র ঢুকলো সমুদ্র কে দেখে শশী ভয়ে মায়ের দিকে আরো চেপে গেলো। সমুদ্র একটা মলম আর বড়ির পাতা বিছানায় ফেলে বলল।

আন্টি খাওয়ানোর পরে এখান থেকে একটা ট্যাবলেট ওকে খাইয়ে দিয়েন। আর এই মলমটা কপালে লাগিয়ে দিবেন এটা অনেক কার্যকরি আমাদের দেওয়া হয়। মলমটা ঘা শুকাতে অনেক সাহায্য করবে।

কথাটা বলে সমুদ্র রুম থেকে বেরিয়ে গেলো শশী সমুদ্রের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলল, আজকে ওনার জন্যই আমার এই অবস্থা জুতা মেরে গরুদান করতে এসেছে। খারাপ লোক একটা কতবড় সাহস আমাকে মারার হুমকি দেয় তাও আবার আমারি বাড়িতে বসে এর প্রতিশোধ তো নিতেই হবে।
,,,,,,,,,
সমুদ্র নিজের রুমে এসে ওর জামা কাপড় সব ব্যাগে ঢুকাতে লাগল। শাহানারা এসেছিলো সমুদ্র কে খাওয়ার জন্য ডাকতে তবে এভাবে ছেলেকে সবকিছু গুছাতে দেখে সমুদ্রের দিকে এগিয়ে এসে জিগাস করলো। কিরে এভাবে সবকিছু গোছগাছ করছিস কেনো?

আমি চলে যাবো কালকে মা তোমরা থাকো আমার এখানে থেকে কোনো কাজ নেই। তাই বাসায় চলে যাবো অনেক কাজ পেন্ডিং পড়ে আছে জবেও জয়েন করতে হবে অনেক তো হলো ছুটি কাটানো।

কিন্তু তুই এখনো পুরোপুরি সুস্থ হসনি এই অবস্থায় কীভাবে কাজে যাবি। আর বাড়িতে একা থাকবিই বা কীভাবে।

ওসব তোমাকে চিন্তা করতে হবে নাহ আমি ঠিক ম্যানেজ করে নিবো।

না তুই কোথাও যাবি নাহ আরতো মাএ কয়েকটা দিন তার পরেতো চলেই যাবো। তুইও আমাদের সাথে সাথে যাবি এটাই আমার শেষ কথা, খেতে আয়৷

কথাগুলো বলে শাহানারার চলে গেলো সমুদ্র বিছানায় বসে পড়ল এই মুহুর্তে তার যাওয়াটা খুবি দরকার ওদিকে কি হচ্ছে কে জানে। কেনো যে মায়ের কথা রাখতে এখানে আসলাম এসে পুরাই ফেঁসে গেলাম।

#চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে