প্রিয় অর্ধাঙ্গীনি পর্ব-৪২+৪৩

0
537

#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_৪২
,
রাত্রি তখন গভীর। আর এই গভীর অন্ধকারে ডুবে থাকা রাতটাই যেনো কিছু কিছু মানুষের সব থেকে বড় অস্ত্র। আকাশে কালো মেঘ জমেছে। হয়ত ঝড় উঠবে। একরাশ কালো মেঘ এসে গোলাকার চাঁদটাকে ঢেকে রাখায় অন্ধকার এর রাজত্বটা যেনো বেড়েই চলেছে। দূরে কয়েকটা টর্চ লাইটের আবছা আলো দেখা যাচ্ছে। সাথে ফিসফাস করে কথা বলার আওয়াজ। গামছা দিয়ে মুখ আর মাথা বেশ ভালো মতো পেঁচিয়ে রাখায় চোখ দুটো ছাড়া সব কিছুই অস্পষ্ট। মাটিতে বেশ বড়সর গর্ত করা হয়েছে। আর সেখান থেকেই উঠানো হচ্ছে বেশ দামী ব্রান্ডের অস্ত্র সাথে আরো ক্ষতিকর জিনিসপত্র। চেয়ারম্যান সবাইকে বেশ তাড়া দিচ্ছে। রাতের মধ্যেই কাজটা শেষ করার জন্য। একপাশে দাঁড়িয়ে সবাইকে নির্দেশনা দিচ্ছে কীভাবে কি করতে হবে। তখনি পিছন থেকে কেউ চেয়্যারমান এর উদ্দেশ্য বলল।

“কী চেয়ারম্যান সাহেব। আপনার কাজ হলো চাউল চুরি করা। টিপসই নিয়ে মানুষের জমিজমা দখল করা। তা না করে আপনি এইসব বড় বড় কাজ করছেন কেনো। অকালে মারা পড়বেন তো।

কথাগুলো শুনে চেয়ারম্যান চমকে পিছনে তাকালো। ততক্ষনে সবার কাজ থেমে গেছে। অন্ধকার বিধায় পিছনে কে আছে সেটাও বোঝা যাচ্ছে নাহ। এই জন্য হাতের টর্চটার আলো পিছনে মারতেই ইমরান মুখের উপর হাত নিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল।

” আরে করছেনটা কি এভাবে কেউ আলো ধরে নাকি। কিছুই তো দেখতে পাচ্ছি নাহ।

“তুমি কে? আর এখানে কি করছো?

” আমি কে এখানে কি করছি সবটা বলবো। তার আগে মুখের সামনে থেকে আলোটা সরান। আরে আমার এখনো বিয়ে হয়নি এভাবে আলো মেরে চোখ নষ্ট করার মতলব করছেন নাকি।

ইমরান এর কথা শুনে চেয়ারম্যান আলোটা সরিয়ে নিলো। ভয়ে মুখের বেশ কিছু অংশ ঘেমে গেছে। গামছাটা মুখে আরো খানিকটা আঁটোসাটো করে নিয়ে। পিছনে কাজ করতে থাকা লোকদের উদ্দেশ্য বলল।

“এই এটাকে ধর আর এখানেই পুঁতে ফেল। না থাকবে বাঁশ আর না বাজবে বাঁশি।

চেয়ারম্যান এর কথা শুনতেই ইমরান বেশ ঘাবড়ে গেলো। সমুদ্র ওকে বলেছিলো আড়ালে থেকে ওদের কাজ কর্মের উপর নজর রাখতে যতক্ষণ না পুলিশ আসছে। কিন্তু ভুলক্রমে সামনে আসায় এখন বিপদে পড়তে হলো। লোকগুলো মাটির নিচে থেকে উঠানো একটা কাঠের বাক্স খুললো। সেখানে কাগজে মোড়ানো কিছু রয়েছে। সেখান থেকে একটা তুলে নিয়ে কাগজ খুলতেই বেরিয়ে আসলো তরবারী মত ধারালো অস্ত্র। যেটা রাতের আঁধারেও সামান্য আলো পড়ায় চকচক করছে। দুজন হাতে তরবারী টা নিয়ে ইমরান এর দিকে ধেয়ে গেলো। এমন পরিস্থিতি তে ভয়ে হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে ওখানেই দাঁড়িয়ে আছে ইমরান। এমনও অবস্থায় নিজের প্রাণ বাঁচাতে দৌড়াতে হবে এটাও যেনো ভুলে বসে আছে। কিন্তু যতক্ষণে কথাটা মনে আসলো ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে। লোকগুলো অনেকটাই কাছে চলে এসেছে। তবুও প্রাণ রক্ষার্থে যেইনা পিছন ঘুরে দৌড় দিতে যাবে। মাটিতে থাকা শুকনো ডালে বেঁধে হুমরি খেয়ে নিচে পড়ে গেলো। ভয়ে কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। গলাটাও শুকিয়ে কাট হয়ে গেছে। শুধু বার বার একি কথা মনে আসছে৷ কেনো স্যার এর কথামতো লুকিয়ে না থেকে সামনে আসলাম৷ আমিতো জানি এরা ভয়ংকর তবুও কেনো? ইমরান এর ভাবনার মাঝেই প্রথম লোকটা এগিয়ে এসে পেট বরাবর তরবারী টা মারতেই ইমরান হাত দিয়ে সেটা ধরে ফেলল। ধারালো অস্ত্র ধরায় হাত কেটে টপটপ করে তাজা রক্ত পেটের উপর পরছে। কিন্তু আর কতক্ষণ? নিজের সবটা দিয়েও শেষে হাল ছেড়ে দিলো। হাতটা একটু ঢিলে হতেই লোকটি নিজের শক্তি প্রয়োগ করে তরবারী টা পেটে ঢুকাতে চাইলো। কিন্তু তার পরেও ব্যার্থ হলো। কেউ যেনো আবারও শক্ত করে ধরে ফেলেছে। ইমরান মাথা উঁচু করে তাকাতেই দেখলো সমুদ্র নিজের হাত দিয়ে অস্ত্র টা ধরে রেখেছে। ধারালো বিধায় সমুদ্রের হাত ও কেটে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। সমুদ্র ইমরান কে চোখের ইশারা করতেই ইমরান পা দিয়ে আঘাত করতে আসা লোকটার বুক বরাবর লাত্থি মারলো। লোকটা অস্ত্র রেখেই কিছুটা দূরে গিয়ে ছিটকে পড়লো। দ্বিতীয় লোকটা আসতেই সমুদ্র ওটাকেও লাত্থি মারতেই দূরে গিয়ে পড়লো। বাম হাতে ইমরান কে নিচে থেকে তুলতেই ইমরান মাথা নিচু করে বলল।

“সরি স্যার।

কিন্তু সমুদ্র কোনো কথা বলল নাহ। ততক্ষণে ওদের সামনে আরো কিছু লোক চলে এসেছে। চেয়ারম্যান ও তাদের পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। সমুদ্র কে এই সময়ে এখানে দেখে ভয় পেলেও সেটা প্রকাশ করলো নাহ। উল্টো লোকগুলোকে বলল ওদের দুজনকেই শেষ করে দেও। সমুদ্র বুঝলো এতোজনের সাথে ওরা দুজনে মোকাবিলা করতে পারবে নাহ। কিছু একটা করতে হবে। লোকগুলো সামনে আসতেই সমুদ্র পাশ কেটে চেয়ারম্যান এর কাছে চলে গেলো। নিচে থেকে একটা অস্ত্র তুলে চেয়ারম্যান এর মাথা বরাবর ধরে সবাইকে বলল।

” একদম কেউ সামনে আগাবে নাহ। যে যার যার জায়গায় দাঁড়িয়ে থাক।

সমুদ্রের কথাশুনে চেয়ারম্যান বাঁকা হেসে বলল।

“তুই কি ভেবেছিস আমাকে এভাবে ধরিয়ে দিবি? তাতে কি আর এমন হবে। পুলিশ আসবে আমায় ধরে নিয়ে যাবে। কিন্তু আমি ঠিক বেরিয়ে আসবো। আমার ক্ষমতা সম্পর্কে তোর কোনো ধারনায় নাই। আমার হাত অনেক লম্বা। তাই বলছি আমায় ছেড়ে দিয়ে নিজের কাজ কর।

কথাগুলো শুনে সমুদ্র হাসলো। অতঃপর চেয়ারম্যান এর কানে ফিসফিস করে বলল।

“এবার তো তুই শেষ চেয়ারম্যান। এতোদিন যার ইশারায় নেচেছিস। যার নির্দেশ মতো কাজ করেছিস এখন দেখ সে আদেও তোকে বাঁচাতে আসে কি নাহ। আর হ্যাঁ তোর হাত লম্বা হলেও আইনের হাত তার থেকেও বেশি লম্বা।

চেয়ারম্যান সমুদ্রের কথাশুনে ওর দিকে তাকাতেই সমুদ্র বাঁকা হেসে বলল।

” এখনো বুঝিসনি? কার কথা বলছি? তোর একমাত্র আদরের বউ মালবিকা মির্জা।

কিছুক্ষণের মধ্যেই ওখানেই পুলিশ চলে আসলো। আর অব অস্ত্রসহ চেয়ারম্যান আর বাকি লোকদের ধরে নিয়ে গাড়িতে তুলল।
,,,,,,,,,,,,

“সরি স্যার।

ইমরান অপরাধীর ন্যায় আবার কথাটা বলল। তবে সমুদ্র কিছু বলল নাহ। গাড়িতে বসে হাতের কাটা জায়গা পরিষ্কার করতে ব্যাস্ত। ইমরান এর হাতে আগেই ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে। ইমরান আবারও একি কথা বলতেই সমুদ্র বলল।

” কি সেই কখন থেকে কানের কাছে এক কথা বলে যাচ্ছো। তোমাকে এতোবার করে নিষেধ করার পরেও ওখানে গেলে কেনো? একটা কথা মনে রাখবে। আমরা কাউকে আঘাত করতে গেলেও দশবার ভাবি। কিন্তু ওরা তা ভাবে নাহ। ওরা অনায়াসে যে কাউকে শেষ করে দিতে পারে। তোমাকে বলেছিলাম পুলিশ আসা অবধি ওদের উপর নজর রাখো কিন্তু তুমি কি করলে?

“সরি স্যার। আমার ভুল হয়ে গেছে। আসলে তখন কি যে হয়ে গেলো। কেনো যে কাজটা করলাম নিজেও জানি নাহ। কিন্তু স্যার এখন কি হবে?

ইমরান এর কথা শুনে সমুদ্র বাঁকা হেসে। কাঁটা জায়গা মলম দিতে দিতে বলল।

” এবার যা করা ওরা ওরাই করবে। সাথে উষ্কে দেওয়ার জন্য তো মিডিয়ার লোক আছেই।

“তাহলে এখন আমরা কি করবো স্যার?

” কি আর করবো। চলো তাহলে এই রাতে বাড়ি না গিয়ে বনে জঙ্গলে তোমার জন্য মেয়ে খুঁজে বেড়ায়। গাড়ি স্টার্ট করো।

সমুদ্র ধমকে কথাটা বলতেই ইমরান তড়িঘড়ি করে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চালানো শুরু করলো।
,,,,,,,,,,,

“হিজলতলীর রানিং চেয়ারম্যান অবৈধ অস্ত্র সমেত গতরাতে পুলিশের কাছে ধরা পড়েছে। জানা গেছে সেখানে প্রায় কোটি টাকার অবৈধ অস্ত্রসহ আরো নেশা জাতীয় দ্রব্য ছিলো। বিদেশ থেকে কয়েকদিন আগেই বাংলাদেশে এসেছে জিনিসগুলো। কিন্তু এর পিছনে কে আছে? শুধুই কি চেয়ারম্যান নাকি আরো বড় কোনো চক্রের হাত। জানতে হলে আমাদের সাথেই থাকুন। ফিরে আসছি ছোট্ট একটা বিরতির পর।

খবরটা দেখার পর শশী হা করে টিভির দিকে তাকিয়ে আছে। পাশেই সমুদ্র বাম হাতে প্লেট ধরে ব্যান্ডেজ করা হাতে শশীকে খাইয়ে দিচ্ছে। একবার টিভির দিকে তাকিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নিলো। চামচ এর ভাত তুলে শশীর মুখের সামনে ধরে বলল।

“টিভি গিলে না খেয়ে হা করো।

“খবরটা দেখেছেন আপনি? কী সাংঘাতিক। আমরাতো কল্পনাও করতে পারিনি আমাদের গ্রামে এসবও হয়। কী খারাপ চেয়ারম্যান।

শশীর কথা বলার মাঝেই সমুদ্র মুখের মধ্যে ভাত দিয়ে দিলো। মুখ ভর্তি ভাত নিয়েও শশী কথা বলছে তবে কি বলছে সেটা অস্পষ্ট। কাল ভোরের দিকে বাড়ি ফিরেছে সমুদ্র। ঘরে এসে ঘুমন্ত শশীর কপালে চুমু দিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গিয়েছে। ফ্রেশ হয়ে এসে শশীর পাশে শুয়ে পড়লো। প্রায় ছয় মাস চলছে শশীর। পেটটাও বেশ উঁচু হয়েছে। হাঁটা চলা করতেও অসুবিধা হয়। সমুদ্র সেবার শশীর পেগনেন্ট হওয়ার কথা জানার পর সপ্তাহ খানিক থেকে চলে গিয়েছিলো। এই কয়দিন শশী হিজলতলী তেই ছিলো। কেননা এখানে দেখাশোনা করার তেমন কেউ নেই৷ শাহানারা নিজেই অসুস্থ। এই জন্য শশী হিজলতলী তেই ছিলো। কয়েকদিন আগেই সমুদ্র এসেছে। আসার পরে শশীকে এখানে এনেছে। এবার বেশ কয়েকদিনের ছুটি নিয়ে এসেছে। ঘুম ভেঙ্গে সমুদ্রের হাতে ব্যান্ডেজ দেখে বড়সর একটা কান্ডও ঘটে গিয়েছে। বিকেলে ভালো মানুষ বেরিয়ে যদি এভাবে কাঁটা হাত নিয়ে বাড়ি ফেরে চিন্তা তো হবেই। তবুও কোনোমতে শাহানারা আর শশীকে বুঝ দিয়েছে। বিরতি শেষ হতেই আবার ও খবর পড়তে শুরু করলো। তবে এবারের খবরটা শুনে শশীর চোখ বড়বড় হয়ে গেছে। আর সমুদ্রের মুখে বাঁকা হাসি।

” ফিরে এলাম বিরতির পর। তদন্তে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। চেয়ারম্যান কে জিগ্যাসাবাদ করার পর ওনি বলেছেন ওনার সাথে নাকি আরো অনেকেই জড়িত। ওনার ভাষ্যমতে এই অনৈতিক কাজের সাথে মন্ত্রী সাহেব এর বোন মালবিকা মির্জা ও জড়িত। কিন্তু কথা হলো এটা কতটুকু সত্য। নাকি ওনি নিজে বাঁচতে মির্জা বাড়িকে এসবে জড়াচ্ছে। নাকি সত্যিই মন্ত্রী আশফাক মির্জার ও এতে হাত রয়েছে। কোনটা সত্যি কোনটা মিথ্যা। সব কিছুই যেনো গোলকধাঁধার মতো। সত্যি কি ওনারা এসবের সাথে জড়িত? নাকি এর পিছনেও আছে বড় কোনো ষড়যন্ত্র। নাকি আরো বড় কারো হাত আছে। কোনো জঙ্গি? এসব প্রশ্নের কোনোটার উত্তরই আমাদের জানা নেই। আপনারা দেখছেন আমরা এখন মির্জা বাড়ির সামনে আছি। আসলে সত্যিটা কি সেটা মালবিকা মির্জার মুখ থেকেই শুনতে চাই। কিন্তু ওনি বাইরে আসবেন না বলেছে৷ মিডিয়ার সামনে মুখ খুলবে নাহ। কেনো ওনি এভাবে মুখ লুকিয়ে বসে আছে। তাহলে চেয়ারম্যান যেটা বলেছে সেটা সত্যি?

খবরটা শুনে শশী হা করে সমুদ্রের দিকে তাকালো। কিছু বলতে যাবে ওমনি সমুদ্র মুখের মধ্যে ভাত দিয়ে বলল।

“কোনো কথা নয়। আগে খাওয়া শেষ করো নয়ত মাইর দিবো।

সমুদ্রের কথাশুনে শশী মুখ বাঁকিয়ে নিলো। ভাত চিবতে চিবতে কিছু একটা ভাবতে লাগলো। মনে মনে কিছু ভাবতেই টি-টেবিলের উপর থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে মুখের ভাতগুলো গিলে নিয়ে সমুদ্রের দিকে বড়বড় চোখ করে বলল।

“এই আপনি আবার কিছু করেননি তো? আমার কেমন সন্দেহ হচ্ছে। আপনার এভাবে হঠাৎ বেরিয়ে যাওয়া সারারাত বাড়ির বাইরে থাকা। আবার ভোররাতে কাঁটা হাত নিয়ে বাড়ি ফেরা। সত্যি করে বলেন কি করেছেন আপনি?

শশীর কথাশুনে সমুদ্র ভাতের প্লেট টা নিচে রেখে বাম হাতে শশীর মাথায় একটা চাটি মেরে বলল।

“তুমিই প্রথম বউ যে কিনা চোরাকারবারি লোকের জন্য নিজের স্বামী কে সন্দেহ করছো। আরে আমার কি কোনো কাজ নেই আমি এসব করতে যাবো। আর তাছাড়া এগুলো পুলিশের কাজ। ওনারা হয়ত রাতের বেলায় দেখেছে তাই ধরেছে। আমি ছুটিতে আছি বর্তমানে। খামখা এসব করতে যাবো কেনো।

“তবুও আমার কেমন জানি সন্দেহ হচ্ছে।

“তাই তাহলে যাও গিয়ে আমার বিরুদ্ধে তদন্তে নেমে পড়ো। হা করো।

সমুদ্র ধমক দিয়ে কথাটা বলতেই শশী গোমড়া মুখে হা করে ভাত নিয়ে চিবতে লাগলো।

“কেবল তো শুরু এভাবেই আস্তে আস্তে তোমাকে একদম শেষ করে দেবো মালবিকা মির্জা। যতটা অপমান কষ্ট দিয়ে আমার বাবা আর চাচ্চুকে মেরেছো তার থেকেও বেশি যন্ত্রণা দিয়ে।
,,,,,,,,,,,,,,

“এসব কি মালবিকা? তোর নামে মিডিয়া এসব কি বলছে? তোর জন্য পার্টির কাছে আমায় জবাবদিহি করতে হচ্ছে। এতদিন তুই যা ইচ্ছে করেছিস। আমি চুপ করে থেকেছি কিছু বলেনি। কিন্তু এখন মিডিয়া যে ভাবে কাঁদা ছুঁড়ছে এখন তো তোর জন্য আমার নাম খারাপ হচ্ছে । একটা কথা শুনে রাখ পার্টির কাছে যদি আমার নাম কোনোভাবে একটুও খারাপ হয় তাহলে আমি কাউকে ছাড়বো নাহ।

চেয়ারে বসে হাতে পেপারওয়েট নিয়ে ঘুরাচ্ছে মালবিকা। ও খুব বুঝতে পারছে এর পিছনে কোনো না কোনো ভাবে সমুদ্রের হাত আছে। কেননা কালকে রাতে ওর ফোনে অচেনা নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছিল তাতে লেখা ছিলো।

” ইউ আর ফিনিস মালবিকা মির্জা।

তখন অতটা গুরুত্ব না দিলেও এখন বুঝতে পারছে আসলে কী বোকামি টাই না করেছে। ধপ করে চেয়ার থেকে দাঁড়িয়ে গেলো।

“তুমি চিন্তা করো না ভাইজান। আমার জন্য তোমার কোনো ক্ষতি হবে নাহ।

” তাই যেনো হয়। যতদ্রুত সম্ভব এটা শেষ করো।

কথাটা বলে ওনি চলে গেলেন। ওনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মালবিকা দাঁতে দাঁত চেপে বলল।

“সময় এসেছে তোমাকে পাল্টা জবাব দেওয়ার। অনেক ছাড় দিয়েছি তোমায়। অনেক বার বেড়েছো তুমি। তুমি যেই খেলাটা শুরু করেছো সেটা আমিই শেষ করবো সমুদ্র। এবার তোমার অস্ত্রে তোমাকেই বদ করবো। নয়ত আমার নামও মালবিকা মির্জা নয়।

#চলবে?

#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_৪৩
,
মির্জা বাড়ির সামনে তখন অনেক লোকের সমাগম। নিউজ চ্যালেন এর লোকেরা অধীর অপেক্ষায় আছে। টিভিতে দেখানো হচ্ছে বিভিন্ন মশলা মাখানো খবর। যেটা ঘটেছে তার সাথে মনগড়া আরো কিছু লাগিয়ে দিয়ে বেশ রসিয়ে রসিয়ে ছড়াচ্ছে। সবার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে মালবিকা মির্জা বাইরে বেরিয়ে আসলো। ওনি আসতেই সকলে যেনো আরো বেশি ওনার দিকে ঝাঁপিয়ে পড়তে লাগল। পুলিশ অনেক কষ্টে সেগুলো সামাল দিচ্ছে। ক্যামেরার সামনে এসে বেশ আরাম করে দাঁড়ালো মালবিকা। শাড়ির আঁচলটা কমরের নিচে থেকে ঘুরিয়ে সামনে এনে হালকা হাসি দিয়ে মিডিয়ার লোকের উদ্দেশ্য বলল।

“বলুন কি জানতে চান আপনারা।

“হিজলতলী গ্রামের চেয়ারম্যান মকবুল আলী অবৈধ অস্ত্রসহ আরো বেশ কিছু নেশা জাতীয় দ্রব সমেত ধরা পড়েছে। তদন্তে আপনার নাম ও উঠে এসেছে। আমরা জানতে চাই চেয়ারম্যান যা বলেছে সেটা কি সত্যি? নাকি এর পিছনে আরো কোনো কারণ আছে। আর তাছাড়া ওনি এতো মানুষ থাকতে আপনার নাম টাই কেনো নিলো? ওনি নিজেকে বাঁচাতে এমনটা করেছে। নাকি ঘটনা কিঞ্চিৎ হলেও সত্যি?

সবার এমন প্রশ্নে মালবিকা মোটেও বিরক্ত বোধ করলো নাহ। বরং আরো উল্টো মুচকি হাসি দিয়ে বলল।

“দেখুন বাংলায় না একটা প্রবাদ ব্যাক্য আছে। একজন বলল এই তোর কান চিলে নিয়ে গেছে। তো সে আগে কানে না হাত দিয়ে চিলের পিছে দৌড়ায়৷ আপনাদের অবস্থাও ঠিক সেই রকম। কে কী বলেছে আপনারা সেটা নিয়ে আরো রংচং মিশিয়ে প্রকাশ করছেন। আপনাদের কাছে না আছে কোনো প্রমাণ না আছে এই কথায় কোনো সত্যতা।

” আমাদের কাছে আরো একটা খবর এসেছে। ওই চেয়ারম্যান এর সাথে নাকি আপনারা গভীর কোনো সম্পর্ক আছে। মানে আমি বলতে চাইছি যে আপনারা নাকি লুকিয়ে বিয়েও করেছেন। এই কথাটার সত্যতা কতটুকু?

এমন একটা কথা শোনার পরেও মালবিকার মুখে কোনো বিচলিত ভাব দেখা গেলো নাহ। বরং হালকা হেসে বলা শুরু করলো।

“আচ্ছা আপনারা এসব কথা কোথায় পান বলুন তো? মানে কারো সম্পর্কে একটু কিছু শুনলেই সেটাকে তিল থেকে তাল বানানোই আপনাদের কাজ। আচ্ছা আমায় একটা কথা বলুন তো শুনেছি চেয়ারম্যান কে হাতে নাতে ধরতে কেউ একজন সাহায্য করেছে। এখন আপনারা আমায় বলুন সে ওতোরাতে ওখানে কি করছিলো। আর আমার সাথে যে হিজলতলী গ্রামের চেয়ারম্যান এর বৈবাহিক সম্পর্ক আছে এটার প্রমাণ কি? শুনুন কখনো কখনো আমরা খালি চোখে যা দেখি সেটা সত্যি হয় নাহ। অদেখাও কিছু থেকে যায়। আমার জানামতে আমার কারো সাথে কোনো প্রকার শত্রুতা নেই। কেউ হয়ত আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। যাই হোক আশা করি আপনারা আপনাদের
সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছেন।

কথাগুলো বলো মালবিকা উঠে চলে গেলো। তবে যাওয়ার আগে ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসিটা কেউ খেয়াল করলো নাহ।
,,,,,,,,,

হাতের ভারী ট্রলি ব্যাগটা টেনে এয়ারপোর্টের বাইরে আসলো রোদ্র। আশে পাশটা দেখে নিয়ে সামনের দিকে হেঁটে গেলো। আপাতত ওখানের কাজ শেষ মাসখানেক পর একজনের সাথে দেখা করা লাগবে। যার হয়ে কাজ করবে সে এখন অন্য দেশে গিয়েছে। মাসখানেক পর ফিরবে। এই কয়দিন শুধু শুধু ওখানে বসে থাকার কোনো মানেই হয় নাহ৷ এই জন্য দেশে আসতে না মন চাইলেও আসতেই হলো। যদিও লিজা বলেছিলো এই কয়দিন ওর বাসায় থাকতে। কিন্তু রোদ্র থাকেনি, তাছাড়াও বাসা থেকে অনেকদিন দূরে আছে এই জন্য। এভাবে হুট করে চলে আসায় কাউকে জানানো হয়নি। এয়ারপোর্টের বাইরে এসে গাড়ি বুক করেছিলো। কিছুক্ষণ দাঁড়াতেই গাড়ি চলে আসলো। গাড়িতে উঠে সিটে শরীরটা এলিয়ে দিয়ে চোখটা বন্ধ করে বিরবির করে বলল।

“না চাইতেও আবার তোমার মুখটা দেখতে হবে। সারাক্ষণ তুমি আশেপাশে ঘুরে বেড়াবে। ইশ এই যন্ত্রণা আমি সইবো কি করে। এটা যে বড়ই পীড়াদায়ক।
,,,,,,,,,,

বিছানায় বসে চোখ ভর্তি পানি নিয়ে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে শশী। ওর সামনেই তৈরি হচ্ছে সমুদ্র। তৈরি হওয়ার ফাঁকে একবার শশীকে দেখে নিয়ে পুনরায় আয়নার দিকে তাকালো। সকাল থেকে মেয়েটাকে বোঝাতে বোঝাতে ক্লান্ত ও। এতো করে বোঝানোর পরেও এখনো বসে বসে কান্না করছে। সমুদ্র কে চুপ থাকতে দেখে শশী আবার বলা শুরু করল।

” আপনি মিথ্যুক। আমাকে মিথ্যা বলেছেন। যখন থাকবেনই নাহ তখন শুধু শুধু বলেছিলেন কেনো? এভাবে কাউকে মিথ্যা আশা দিতে হয় নাহ। আমি এমন জেনেও আপনি কীভাবে আমায় মিথ্যা আশা দিলেন। বলে কিনা এবার আর তোমাকে ছেড়ে যাবো নাহ। কথা দিচ্ছি বাবুর মুখটা দুজনে একসাথেই দেখবো। তাহলে এখন কি হলো এটা? কথা রাখতে না পারলে দেন কেনো?

কথাগুলো বলে নাক টেনে দুহাতে চোখের পানি মুছলো শশী। সমুদ্র রেডি হয়ে হতাশ চোখে শশীর দিকে তাকালো। মেয়েটা বাবু আশার পর থেকে যেনো একটু বেশিই অবুঝ হয়ে গেছে। এতো করে বোঝানোর পরেও বুঝতে চাইছে নাহ। তবে আমারও কেমন যেনো একটা খটকা লাগছে। এখন যে অবস্থা এই সময় বাড়িতে থাকা খুবি প্রয়োজন। চারিদিকের অবস্থা বেশ একটা ভালো নয়৷ ওই মহিলা অনেক বেশিই রেগে আছে। একটা সুযোগও হাত ছাড়া করবে নাহ। আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য আমার পরিবারের উপর হামলা করবে। সবতো ঠিকি ছিলো তাহলে হঠাৎ পাকিস্তান এর টেরোরিস্ট ওসমান বর্ডার এর এত গড়া সিকিউরিটি ভেদ করে বাংলাদেশে ঢুকলো কীভাবে? নাকি এর পিছনেও অন্যকোনো উপর মহলের হাত রয়েছে? কথাগুলো ভেবে একটা লম্বা শ্বাস নিলো সমুদ্র। শশীর কাছে গিয়ে ওর পায়ের কাছে হাঁটু মুড়ে বসল। শশীর হাতদুটো নিজের হাতের মুঠোয় পুড়ে সেখানে বেশ সময় নিয়ে চুমু খেলো। মাথাটা ওর কোলের মধ্যে রেখে ফুলে যাওয়া পেটটাতে চুমু দিয়ে বলল।

“তোমাকে রাতে কি বোঝালাম শশী। এখন ওখানে আমাকে দরকার। ওই টেরোরিস্ট খুবি বিপদজনক। অনেক এর প্রাণ সংশয় রয়েছে। কে জানি কোথায় কোথায় বোম ফিট করে রেখেছে। এটা আমার দায়িত্ব শশী। আর আমি একজন অফিসার হয়ে কীভাবে নিজের দায়িত্ব কে এভাবে অবহেলা করি।

” আর আমি? আমি কি? ওখানে তো আরো অনেকেই রয়েছে। তারপরেও আপনাকে দরকার। আর আমার কাছে তো কেউই নেই আপনি ছাড়া। আপনাকে যে আমার আরো বেশি দরকার সমুদ্র। আপনি তো ছুটিতে ছিলেন তাহলে কীভাবে আপনাকে এভাবে ডাকে ওনারা৷ এতোবড় টেরোরিস্ট, যদি আপনার কিছু হয়ে যায় তাহলে আমার কি হবে? আর যে আসছে তারই বা কি হবে বলুন? আপনি তো আমায় কথা দিয়েছিলেন যে আমরা একসাথে বাবুকে দেখবো তাহলে?

শশীর কথা শোনার পর সমুদ্র মুচকি হেসে শশীর কপালে চুমু দিলো। শশীর পাশে বসে ওর মাথাটা নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে বলল।

“তুমিতো আমার শক্তি। আমার ভালোবাসা। কিন্তু আমার দায়িত্ব টাও পালন করতে হবে। এতোগুলো মানুষের জীবন হুমকিতে ফেলে আমি কীভাবে ছুটি কাটাতে পারি শশী। তুমিই তো আমাকে বুঝবে আমাকে উৎসাহ দিবে। সেই তুমিই যদি এভাবে কান্না করো তাহলে আমি ওদের সাথে লড়বে পারবো? একেতে মা অসুস্থ এখন যদি তুমিও এভাবে ভেঙ্গে পড়ো তাহলে ওদের সামলাবে কে? আমার অবর্তমানে তুমিই তো ওদের দেখবে শশী। কখনো ভেঙ্গে পড়বে নাহ৷ সবসময় একটা কথা মনে রাখবে তুমি একজন আর্মি অফিসার এর স্ত্রী। তোমার স্বামী দেশের জন্য লড়াই করে। তার অর্ধাঙ্গীনি হয়ে তোমার এতোটা দুর্বল হওয়া কী মানায়?

“আমি কিছুই জানি নাহ। আমি কি আমার স্বামী কি এই সবকিছু আমি জানতে চাই নাহ। আমি শুধু জানি আপনি আমার কাছে থাকবেন। খুব সাধারণ হয়ে কোনো দায়িত্ব কর্তব্য থাকবে নাহ। সবার চিন্তা আপনার মাথায় শুধু আমাদের বাদে। আমি এতোটা বুঝদার হতে চাই নাহ সমুদ্র। যতোটা বুঝদার হলে আপনার থেকে দূরে থাকতে হয়। আমার শুধু আপনাকে চাই।

এতোবার বোঝানোর পরেও যখন শশী বুঝলো নাহ। তখন সমুদ্র হাল ছেড়ে দিলো। এবার ওকে কঠিন হতেই হবে৷ এভাবে হবে নাহ। অনেকটা দেরি হয়ে গেছে এবার বেড়োতেই হবে। উঠে দাঁড়িয়ে গেলো সমুদ্র। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুলো সব দেখে নিয়ে শশীর দিকে তাকিয়ে গম্ভীর স্বরে বলল।

” নিজের খেয়াল রেখো। যাওয়ার পর হয়ত যোগাযোগ করতে পারবো নাহ। এদিকে এসব নিয়ে চিন্তা করতে হবে নাহ। আমি ইমরান কে সবটা বুঝিয়ে দিয়েছি। অকারণে বাইরে যাওয়ার দরকার নেই। আর এই অবস্থায় বেশি হাঁটাহাটি করো নাহ। আসছি আমি।

কথাগুলো বলে সমুদ্র দরজার দিকে যেতে গেলে শশী পিছন থেকে ডেকে উঠল। ভারী পেট নিয়ে অনেক কষ্টে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো। সমুদ্রের পিছনে দাঁড়িয়ে বলল।

“আপনি অনেক নিষ্ঠুর সমুুদ্র। আপনার সবার চিন্তা আছে শুধু নিজের ছাড়া। জানি আপনি শুনবেন নাহ। কারন আপনার কাছে সবার থেকে নিজের দায়িত্ব টাই আগে। শেষ বারের মতো একটা আবদার। যাওয়ার আগে আমাকে একটাবার শক্ত করে জড়িয়ে ধরবেন প্লিজ? অনেক কষ্ট হচ্ছে। জড়িয়ে ধরলে একটু শান্তি লাগতো।

শশীর কথায় সমুদ্র কিছু বলল নাহ। হাতের ব্যাগটা নামিয়ে রেখে পিছন ঘুরে তাকালো। শক্ত মুখেই শশীর দিকে এগিয়ে গিয়ে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। সমুদ্রের বুকে মুখ গুঁজে হাউমাউ করে কাঁদছে শশী। তবে সমুদ্র একবারের জন্যও ওকে থামালো নাহ। শশীর ঘাড়ে মুখ গুঁজে বেশ সময় নিয়ে চুমু খেলো। বেশ কিছুক্ষন পরে শশীকে ছেড়ে দিয়ে যেতে গেলে শশী সমুদ্রের হাত চেপে ধরে বলল।

” আমিও যাবো মানে নিচে অবধি। প্লিজ।

শশীর এই আবদারে সমুদ্র নিষেধ করলো নাহ। পিছন থেকে ওর কাঁধ জড়িয়ে ধরে আস্তে আস্তে ওকে নিচে নামিয়ে আনলো। সেখানে শাহানারা আর জয় বসে ছিলো। শাহানারাও বেশ অসুস্থ তিনি চেয়েও ছেলেকে বাঁধা দিতে পারছে নাহ। তিনি চান না শশীর জীবন টাও ওনার নতো একাকী কাটুক। এমনি এক মিশনে গিয়েছিলো ইকবাল। তারপর কত অপেক্ষা কিন্তু তিনি ফিরে আসেনি। এসেছিলো তার নিথর হয়ে যাওয়া প্রাণহীন দেহটা। তখনো শশীর মতো সেও সন্তান সম্ভাবা ছিলো। এ যেনো চোখের সামনে নিজের অতীতটা দেখছে শাহানারা। পুনরায় সেই একি ঘটনার পুনরাবৃত্ত। শাহানারা চোখের পানি ফেলে অসুস্থ গলায় বলে উঠল।

“এই মিশনটাতে তোর না গেলে হয় নাহ?

শশীকে নিজের মায়ের পাশে বসালো সমুদ্র। মায়ের মুখ থেকে এমন কথা শোনার পর সমুদ্র নিজের মায়ের হাতটা ধরে গম্ভীর স্বরে বলল।

” একজন দায়িত্ববান অফিসার এর স্ত্রী হয়ে এমন কথা কীভাবে বলতে পারো মা? তুমি জানো আমি কোথায় যাচ্ছি কেনো যাচ্ছি তারপরেও একথা কীভাবে বলছো। শশী নাহয় অবুঝ কিন্তু তুমিতো অবুঝ নয় মা তাহলে কেনো এমন বুঝে না বোঝার মতো করছো।

“কি বলতো বাবা ঘড় পোড়া গরু তো সিঁদুরে মেঘ দেখলেও ভয় পাই। জীবনে এক ভয়াবহ অধ্যায় পাড় করেছি তো তাই অল্পতেই ভয় পেয়ে যাই। জীবনে অনেক কিছু হারিয়েছি আর হারাতে চাই নাহ।

” বিশ্বাস রাখো মা আমি ফিরে আসবো ।

সমুদ্রের কথাটা শুনতেই শাহানা ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো। সমুদ্র মাকে সান্ত্বনা দিয়ে শশীর দিকে তাকিয়ে দেখে মেয়েটা কান্না করতে করতে চোখমুখ ফুলিয়ে ফেলেছে। করুন চোখ ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। সমুদ্র দুর্বল হলো নাহ। মাকে ছাড়িয়ে সবার থেকে বিদায় নিয়ে মেইন দরজা খুলতেই দেখলো ওপাশে রোদ্র দাঁড়িয়ে আছে। রোদ্র কেবলি কলিং বেল চাপ দিবে তখনি এভাবে আচমকা দরজা খুলে যাওয়াই বেশ অবাক হলো। সমুদ্রকে এভাবে ইউনিফর্ম এ দেখে অবাক হয়ে বলল।

“ভাইয়া?
,,,,,,,,,,,,

ডয়িং রুমে বেশ গুমোট ভাব। সমুদ্র এই পরিস্থিতি তে রোদ্রকে এখানে মোটেও আশা করেনি। মালবিকা নিজের কাজ হাসিল করতে ওকে না ব্যাবহার করে। তবে সমুদ্র জানে ওর ভাই এতোটাও বোকা নয় ঠিক সবটা সামলে নেবে। আর ওর অবর্তমানে এখানে কারো প্রয়োজন ছিলো। রোদ্র আশায় ভালোয় হয়েছে৷ এখন একটু নিশ্চিত থাকা যাবে। রোদ্রকে সবটা বলে ওর থেকে বিদায় নিয়ে দরজার দিকে পা বাড়াতে পিছন থেকে শশী বলে উঠল।

” আপনি কিন্তু আমায় কথা দিয়েছেন। আমরা একসাথে বাবুর মুখ দেখবো। আশা করি আপনার দেওয়া কথাটা রাখবেন। নয়ত কখনো আপনাকে ক্ষমা করবো নাহ সমুদ্র।

শশীর কথাটা শুনার পরেও সমুদ্র পিছন ফিরে তাকালো নাহ। একটু থেমে পুনরায় বেরিয়ে গেলো। বাইরে ইমরান গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। সমুদ্র গাড়িতে বসে ইমরান কে বলল।

“চলো।

সমুদ্রের আদেশ পেতেই ইমরান গাড়ি স্টার্ট দিলো। রোদ্র করুন চোখে শশীর দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা কান্না করতে করতে কেমন নেতিয়ে পরেছে। শাহানারা নিজের ঘরে চলে গিয়েছে। রোদ্র শশীর দিকে এগিয়ে গিয়ে আস্তে করে বলল।

” চলো তোমাকে ঘরে দিয়ে আসি। এভাবে কান্না করো নাহ। শরীর খারাপ করবে।

শশী কিছু বলল নাহ৷ করুন চোখে রোদ্রের দিকে তাকালো। রোদ্র শশীর মাথায় হাত বুলিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওর হাতটা ধরে আস্তে আস্তে সিঁড়ি বেঁয়ে উপরে উঠে ওকে ওর রুমে দিয়ে আসলো। বিছানায় বসায়ে বলল।

“একটু ঘুমানোর চেষ্টা করো তাহলে ভালো লাগবে।

কথাটা বলে রোদ্র রুম থেকে বেরিয়ে আসতে গেলে শশী পিছন থেকে বলল।

” ওনি ফিরে আসবে তাইনা ভাইয়া? ওনিতো এক কথার মানুষ নিশ্চয়ই আমাকে দেওয়া কথাটা রাখবে।

শশীর এমন কথা শুনে রোদ্র কিছু বলতে পারলো নাহ। কোথাও বুকের বাঁম পাশটায় বেশ বেথ্যা করছে। বেথ্যাটা বেশ পুরানো। নতুন করে বেথ্যাটা জেগে উঠেছে। কোনো কথা না বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো রোদ্র।

#চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে