Monday, October 6, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"প্রিয় অর্ধাঙ্গীনিপ্রিয় অর্ধাঙ্গীনি পর্ব-৪০+৪১

প্রিয় অর্ধাঙ্গীনি পর্ব-৪০+৪১

#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_৪০
,
“আপনার সাহস তো কম নাহ। আপনি একজন সিনিয়র আর্মি অফিসার এর বউয়ের শরীরে হাত দেন। আপনাকে তো পুলিশ এ দেওয়া উচিত।

শশীর কথা শুনে সমুদ্র ভ্রু কুঁচকে তাকালো। নিজের হাতটা শশীর হাতের মুঠো থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে। একটু নিচু হয়ে শশীর কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে উঠে দাঁড়িয়ে শার্ট এর বোতাম খুলতে খুলতে বলল।

” আচ্ছা তাই নাকি। জেলে যখন যেতেই হবে তখন আরো কিছু করে তারপর যাওয়া উচিত নয় কি?

সমুদ্রের কথাশুনে শশী কিছু বলল নাহ। বিছানা থেকে নেমে সমুদ্রের থেকে শার্টটা নিয়ে রেখে দিলো। সমুদ্রের পিছনে দাঁড়িয়ে বলল।

“আসলেন কেনো না আসলেই পারতেন। আপনি তো বোধহয় ভুলেই গিয়েছিলেন যে আপনার জন্যও কেউ পথ চেয়ে বসে আছে। আর ভুলে তো যাবেনই নিষ্ঠুর মনের মানুষ তো এই জন্য।

” হুম বুঝলাম অভিমান হয়েছে আমার বউ এর। তবে আমি খুবি দুঃখিত এই মুহূর্তে তোমার অভিমান ভাঙাতে পারছি নাহ। রাত পযন্ত অপেক্ষা করো সোনা। এখন ফ্রেশ হয়ে আসি তারপর লম্বা একটা ঘুম। আসলে রাতে জাগতে হবে তো এই জন্য।

কথাটা বলে সমুদ্র শশীর হাত থেকে টাওয়াল টা নিয়ে ওর মাথায় একটা চাটি মেরে ওয়াশরুমে চলে গেলো। মাথা ডলতে ডলতে সমুদ্রের যাওয়ার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে শশী।

“হুম আইসেন রাতে একদম চৈত্র মাসের ঠাঁডা পড়া তপ্ত সূর্য দেখিয়ে দেবো।
,,,,,,,,,,

“তুমি আমার হাতে কাঁমড় দিলে কেনো এখন আমাকে চৌদ্দটা ইনজেকশন নিতে হবে।

হাত ডলতে ডলতে কথাটা বলল জয়। জোনাকি প্রতিশোধ নিতে পেরে মনে মনে ভীষণ খুশি। আগের বার জয় নাকের উপর কাঁমড়ে দিয়েছিলো। কথাটা সবাইকে বললেও কেউ তেমন রাগ করেনি ওকে শুধু শাহানারা আন্টি ব্যাথিত। কাঁমড়ের কথাটা মনে মনেই রেখে ছিলো। আজকে সুযোগ বুঝে জয় এর হাতে বেশ জোরে সোরেই কাঁমড়টা দিয়েছে। কিন্তু ইনজেকশন কেনো নেওয়া লাগবে সেটাই বুঝতে পারছে নাহ। জয়ের দিকে তাকিয়ে অবাক কন্ঠে বলল।

” কেনো কেনো ইনজেকশন কেনো নিতে হবে। আমার কি সাপের মতো বিষ আছে নাকি যে ইনজেকশন নিতে হবে। তুমিও তো আমায় কাঁমড় দিয়েছিলে কই আমিতো ইনজেকশন নেইনি।

“আরে আমি কাঁমড়ালে ইনজেকশন নিতে হবে কেনো আমিতো মানুষ। আর তুমিতো জঙ্গলি। বনে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াও। বলা যায় বিষ থাকলেও থাকতে পারে।

জয়ের কথাশুনে জোনাকি বেজায় রেগে গেলো। দুইহাতে জয়ের চুল ধরে টানতে টানতে বলল।

” তুমি আমায় জঙ্গলি বললে কেনো আমি আন্টিকে বলে দেবো। আমিতো আর থাকবোই নাহ। এক্ষুনি বাড়ি চলে যাবো।

“আরে পঁচা মেয়ে আমার চুল ছাড়ো বলছি৷ একটু আগেই ভাইয়ার ঘর থেকে জেল মেখেছি চুলে সবতো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ছাড়ো আমার চুল।

” আমি চুল ছাড়বোই নাহ। আজকে তোমায় টাক বানায় দেবো। আমাকে জঙ্গলি বলা।

“কি ভেবেছো আমি ছেড়ে দেবো? হাত আমারও আছে।

কথাটা বলেই জয়ও জোনাকির ঝুঁটি করে রাখা চুল ধরে টানতে লাগলো। দুজনে দুজনের চুল টানছে আর কাঁদছে। শশী সমুদ্রের উপর রাগ করে রুম থেকে বেরিয়ে এসেছে। খাবার গরম করতে হবে। সিঁড়ি বেঁয়ে নিচে নামতেই ডয়িং রুমে দেখলো জয় আর জোনাকি মারামারি করছে। দুজনেরই বেহাল দশা। জোনাকির চুল খুলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। জয়েরও স্টাইল করে রাখা চুলগুলোর অবস্থা পুরাই কাহিল। কাঁধ দিয়ে গেঞ্জি খুলে পড়বে পড়বে ভাব। শশী দৌড়ে গিয়ে দুজনকে থামালো। দুজনেই হাঁপাচ্ছে। শশী জয়কে জিগাস করলো।

“এসব কি? এভাবে মারামারি করছো কেনো দুজনে?

জয় কান্না করতে করতে বাম হাতে চোখ মুছে। গেঞ্জি টেনে কাঁধের উপর উঠায়ে বলল।

” ও আমার হাতে কাঁমড় মারলো কেনো?

“আর তুমি যে আমায় জংলী বললে তার বেলায়?

জোনাকি কাঁদছে আর নাক মুছতেছে। কথাটা বলে আবার শশীর দিকে তাকিয়ে বলল।

” ও আগে আমায় কামড় মেরেছে। সেই জন্যই তো আমিও ওকে কাঁমড় দিয়েছি। আবার আমাকে জংলী ও বলেছে। আমি থাকবোই না। আব্বাকে কল দে আপা আমি চলেই যাবো।

নাক টানছে আর কথা বলছে জোনাকি৷ জয় এর কান্না থেমে গেছে তবে কান্না করার দরুন নাক চোখ লাল হয়ে আছে। শশী পড়েছে বিপাকে কাকে কি বলবে সেটাই খুঁজে পাচ্ছে নাহ। কিছুক্ষণ পর জোনাকির দিকে তাকিয়ে শাসন এর সূরে বলল।

“তো তুই ওর হাতে কাঁমড় দিলি কেনো? সব সময় শুধু অকাজ করা। এক জায়গায় এসে যে একটু স্থির হয়ে থাকতে মন চাই নাহ?

শশীর বকা শুনে জোনাকি আবার কান্না শুরু করে দিলো। সমুদ্র টিশার্ট পড়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে নিচের দিকে তাকিয়ে বলল।

” কি হয়েছে?

সমুদ্রের কথাশুনে কেউ কিছু বলল নাহ৷ জোনাকির কান্নাও বন্ধ হয়ে গেলো৷ শুধু থেকে থেকে হেঁচকি তুলছে৷ সমুদ্র কে দেখে শশী একবার তাকিয়ে রান্না ঘরে চলে গেলো। সমুদ্র শশীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আবার জয় আর জোনাকির দিকে তাকালো। দুজনের হাত ধরে সোফায় বসে জিগাস করলো।

“এবার বলো কি হয়েছে?
,,,,,,,,,,
আকাশে তখন বিশাল বড় চাঁদ উঠেছে৷ বেশ ভালো ঠন্ডা বাতাসও বইছে। চাঁদের আলোয় চারপাশটা আলোকিত। শশী ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে গ্রীল এর ফাঁক দিয়ে চাঁদ দেখছে। সমুদ্র বাড়িতে নেই বিকালে এসে ঘুমানোর কথা বললেও ঘুমায়নি। কোথায় গেছে কে জানে৷ এতোরাত হয়ে গেলো তবুও তার কোনো পাত্তা নেই। শশী মন খারাপ করে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল।

” তুইও একা আর আমিও। তোর আজকে মন ভালো হলেও আমার আজকে মোটেও মন ভাল নেই। কি জানি কি খায়ে ওই গম্ভীর পাষাণ লোকটাকে ভালোবেসে ছিলাম। আমার তো মনে হয় ওনি আমায় ভালোইবাসে নাহ।

“এটা তোমার মনের সম্যসা। তোমার মন সব সময় ভুলভাল কথা বলে। এই জন্যই তো তোমার এসব মনে হয়।

কথাটা শুনতেই শশী ঘাড় বাঁকিয়ে পিছনে দেখতে গেলো। কিন্তু পারলো নাহ। কারণ ওর পিছনে শক্ত বুকের প্রাচীর। সমুদ্র পিছন থেকে শশীর কমর জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। শশী পুনরায় সামনের দিকে তাকিয়ে বলল।

” আমার মন সব সময় সঠিক কথায় বলে। আর এখনোও সঠিক কথায় বলছে।

“আমার তো মনে হয় তোমার মন ডাহা মিথ্যা কথা বলছে।

” কীভাবে?

“ওই যে তোমার মন বলছে আমি তোমায় ভালোবাসি নাহ। এটা মিথ্যা নয়?

” ঠিকি তো আপনি আমায় ভালোবাসেন নাকি?

শশীর কথাশুনে সমুদ্র শশীকে নিজের দিকে ফিরায়ে। ওর দুইকাঁধে হাত দিয়ে একটু ঝুঁকে শশীর চোখের দিকে তাকিয়ে বলল।

“তোমরা মেয়েরাও নাহ। সব জানো অথচ তোমাদের মুখ থেকে শুনতেই হবে।

কথাটা বলে সমুদ্র শশীকে নিজের বুকের মধ্যে নিয়ে। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিজের শক্ত বুকের সাথে শশীর নরম শরীরটাকে মিলিয়ে নিলো অতঃপর ফিসফিস করে শশীর কানে বলল।

“শুনেছি মানুষ নাকি হাসির প্রেমে পড়ে কিন্তু আমিতো তোমার অশ্রু ভেজা ওই টলটলে দুটো মায়াবী চোখের প্রেমে পড়েছিলাম।

সমুদ্রের কথা শশী বুঝতে না পেরে বলল। মানে?

শশীর কথা শুনে সমুদ্র নিজের মাথা দিয়ে শশীর মাথায় হালকা গুঁতা দিয়ে বলল।

“বোকা মেয়ে কিছুই বোঝে নাহ। মনে আছে তোমার তুমি পেয়ারা হাতে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে পেয়ারা খাচ্ছিলে। ছোটখাটো গড়নের পিচ্চি একটা মেয়ে। চুরি করছে আবার অন্যকে ইন্সট্রাকশন দিচ্ছে কীভাবে চুরি করতে হয়। আমি তোমাকে ভালো ভাবে জিগাস করলাম জামশেদ মাস্টার এর বাড়ি কোনটা আর তুমি বললেও নাহ। অথচ তোমার বাপের বাড়িটাই আমি খুঁজতে ছিলাম।

সমুদ্রের কথাশুনে শশী নাক উঁচিয়ে বলল। তো ভালো করে জিগাস করতেন তাহলে অবশ্যই বলতাম। কীভাবে গুন্ডার মতো ফাঁটা বাঁশের কন্ঠে কথা বলছিলেন। একটা বাচ্চা মেয়ের সাথে এভাবে কথা বলতে হয়?

শশীর কথায় সমুদ্র মুচকি হেসে ওর নাকটা টেনে দিয়ে বলল।

“তাহলে কি প্রথম দেখায় কোনো মেয়ের সাথে গম্ভীর কন্ঠে কথা বলবো নাতো লুতুপুতু কন্ঠে কথা বলবো?

সমুদ্রের কথায় শশী আর কিছু বলল নাহ। পরক্ষণেই সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল।

” তাহলে ওইদিন সালিশে আমায় বিয়ে করতে বললে বিয়ে করলেন না কেনো? যদি শাহিন এর সাথে বিয়ে হয়ে যেতো তখন?

“ওতোই সোজা? তখন পরিস্থিতি খারাপ ছিলো। আমার কারণে তোমরা বিপদে পড়তে। তখন তোমায় বিয়ে করলে মালবিকা তোমাদের পরিবারের পিছনে লাগত। আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য। এই জন্য তোমার বাপকে বলেছিলাম। তোমায় যেনো দেখে রাখে আমি সময় সুযোগ বুঝে তারপর বিয়ে করবো৷ আর তখন তো তোমায় ভালোও বাসতাম নাহ এই জন্য তোমার বাপকে ভুংভাং বুঝ দিয়ে ছিলাম।

সমুদ্রের কথাশুনে শশী রেগে সমুদ্রের বুকে কিল ঘুষি দিতে দিতে বলল।

” ভালোবাসেন না তাহলে বিয়ে করলেন কেনো বদ লোক একটা।

“আরে করছো কি মেরে ফেলবে নাকি। এই জন্যই বলে মেয়ে মানুষের বুদ্ধি কম আরে পুরো কথাটা তো শেষ করতে দিবা। তোমায় ভালোবাসতাম না ঠিক কিন্তু একটু একটু পছন্দ করতাম। কি সুন্দর ছোট খাটো নাদুসনুদুস একটা বাচ্চা।

সমুদ্রের এমন কথাশুনে শশী চোখ পাঁকিয়ে তাকাতেই সমুদ্র সিরিয়াস মুখ করে বলল।

” আচ্ছা আর মজা করছি নাহ। তোমায় নিয়ে যেদিন প্রথম আমাদের বাড়ি আসছিলাম। ওইদিন তুমি গাড়িতে বসে কাঁদছিলে। ব্যাস ওইদিন তোমার কন্দনরত মুখের দিকে তাকিয়েই আমার সর্বনাশটা হলো।

কথাটা বলেই সমুদ্র শশীর কপালে চুমু দিলো। শশীও লজ্জা মাখা মুখে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে আবার মাথা নিচু করে নিলো। কিছুক্ষণ পর সমুদ্র কিছু একটা মনে পড়ার ভঙ্গিতে বলল।

“আরে আমার তো মনেই ছিলো নাহ। ইস কীভাবে যে ভুলে গেলাম।

সমুদ্রের কথা শুনে শশী চিন্তিত মুখে বলল।

” কী হয়েছে?

“আরো রাত তো বেড়েই যাচ্ছে অথচ আমার বউকে আদর করার কথা মনেই ছিলো নাহ। কেমন বেমালুম ভুলে বসে আছি৷ কেমন ধারা স্বামী আমি তোমার বলতো?

সমুদ্রের কথা শুনতেই শশী লজ্জায় মুখ ঢেকে বলল।

” ছিঃ কীসব ভুলভাল কথা বলেন ছাড়ুনতো আমায়।

সমুদ্র শশীকে কোলে তুলতে তুলতে বলল।

“কিসের ছাড়াছাড়ি এখন শুধু ধরাধরি হবে।

#চলবে?

#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_৪১
,
“ভালোবেসেছি বলেই যে তাকে পেতে হবে এটা কোথায় লেখা আছে? বরং আমি তাকে ভালোবাসতে পেরেছি এটাই আমার কাছে অনেক। সব ভালোবাসাই যে পূর্ণতা পেতে হবে এমনটা তো নয়। কিছু কিছু ভালোবাসা দূর থেকেও সুন্দর। আর আমি সেই ভালোবাসাটা নিয়েই ভালো থাকতে চাই।
আমি তাকে তার অনুমতি বিহীন ভালোবেসেছি। তাই তার অজানায় আস্তে আস্তে হারিয়ে যাবো। তাকে পাওয়ার জন্য তো আর তাকে ভালোবাসিনি। সে আমার ভাগ্যে নেই। ও শুধু আমার হৃদয়ে থাকবে আর অন্যকারো ভাগ্যে। এই জন্য আমিও আর তাকে পাওয়ার আশা করি নাহ। এখন আর এসব কথার কোনো ভিত্তি নেই জোসেফ।

রোদ্রের কথা শুনে জোসেফ এর ভীষণ রাগ হলো। এতো চেষ্টা করেও কিছু হচ্ছে নাহ। এই ছেলেটা তো আমার কোনো কথায় বুঝতে পারছে নাহ। দেবদাস এর মতো বড় বড় কথা বলতে পারে শুধু। ফুপি তুমি আমায় এ কেমন কাজ দিলে। না না হারলে চলবে নাহ। যে করেই হোক কাজটা আমায় করতেই হবে। মনে মনে কথাগুলো বলে পুনরায় রোদ্রের উদ্দেশ্য বলল জোসেফ।

” কি সব বুড়ো লোকদের মতো কথা বলে যাচ্ছিস। এসব কথাশুধু শুনতেই ভালো লাগে। আর আমি তো একবারও বলছি নাহ যে তুই ওকে বিয়ে কর। তোর ভাইয়ের সংসার ভাঙ্গ। আরে আমিতো শুধু এটাই বলছি যে তোর উচিত তাকে সবটা জানানো। তারও তো অধিকার আছে কথাটা জানার। তুই একবার জানিয়ে তো দেখ।

“তারপর?

” মানে?

“মানে আমি ওকে জানালাম তারপর কি? এখন ওকে এসব কথা ঘটা করে জানানো কি আছে আমি এটাই বুঝতে পারছি নাহ জোসেফ। অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে। ভাইয়া আর শশী ভালো আছে। আমি কেনো এখন ওদের মাঝে কাঁটা হয়ে যাবো। তুই বুঝতে পারছিস নাহ তাই এমন বলছিস। ঠান্ডা মাথায় ভাব তাহলেই বুঝতেই পারবি।

কথাগুলো বলে রোদ্র জোসেফ এর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে চলে গেলো। জোসেফ রোদ্রের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বিরক্তিকর ভাবে বলল।

” একে তো বোকা ভেবে ছিলাম। কিন্তু এখন দেখছি ততোটাও বোকা নয়। হুম অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে দেখছি। কিন্তু যে করেই হোক সমুদ্রের বিরুদ্ধে রোদ্রকে উষ্কে দিতেই হবে। কিন্তু কীভাবে? এই রোদ্র তো আমার আর কোনো কথায়ই কান দিচ্ছে নাহ। হুম ফুপিকে সবটা জানাতে হবে।
,,,,,,,,,,,,,,

“তুমি আমায় সত্যি করে বলোত হয়েছে টা কি? সেদিন ফোনে আমায় শশীকে এখানে নিয়ে আসতে বললে কেনো? আমার কিন্তু সন্দেহ হচ্ছে। সত্যি সত্যি বলে কি হয়েছে? আর আমি কিন্তু তোমাকে আগেও বলেছি আমার মেয়ের কিছু হলে তোমাকে আমি ছাড়বো নাহ৷ তোমার জন্য ওর চোখে একটু পানি আসলে আমি কিন্তু ওকে আমার কাছে নিয়ে আসবো।

“এই লোকটা কথায় কথায় এভাবে আমার বউকে নিয়ে টানাটানি কেনো করে বুঝলাম নাহ। যেদিন নিজের বউ চলে যাবে সেদিন বুঝবে বউয়ের থেকে দূরে থাকার কী জ্বালা।

মনে মনে কথাগুলো বলে সমুদ্র ওর শশুরের দিকে তাকালো। কালকে রাতেই ওরা হিজলতলী এসেছে। সাথে জয় আর জোনাকিও এসেছে। সকাল হতেই জামশেদ মাস্টার সমুদ্র কে ডেকে তার ঘরে নিয়ে গিয়ে কথাগুলো বলছিলো। সমুদ্র কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল।

” আপনার কি মনে হয় আমি খারাপ লোক? বউকে দিনরাত মারধর করাই আমার কাজ? আরে ভাই

সমুদ্র কথাটা বলতেই ওর শশুর ওর দিকে তাকাতেই থেমে গেলো। গলা ঝেঁড়ে একটু কেঁশে বলল।

“না মানে আমি বলতে চাইছি যে ওহ আমার অর্ধাঙ্গীনি। ওর অর্ধেক আর আমার অর্ধেক জুড়েই আমরা এক। ওর উপর কোনো বিপদ আসার আগে আমার সাথে তাকে লড়াই করতে হবে।

সমুদ্রের কথাশুনো মনে মনে বেশ খুশি হলো জামশেদ। তবে মুখে সেটা প্রকাশ করলো নাহ৷ খানিকক্ষণ পর যখনি ওনি সমুদ্র কে কিছু বলতে যাবেন তখনি বাইরে থেকে পারভিন এর গলার আওয়াজ শোনা গেলো। তিনি আতংকিত গলায় বলছে।

“তোমরা তারাতাড়ি সবাই এসো। আমার শশী অঙ্গান হয়ে গেছে।

পারভিন এর চিৎকার শুনে সমুদ্ররা দুজনেই উঠে দাঁড়িয়ে গেলো। জামশেদ সমুদ্রের হাত ধরে বড় বড় চোখে তাকিয়ে বলল।

” কি করেছো তুমি আমার মেয়ের সত্যি করে বলো?

শশুরের কথায় সমুদ্রের এবার বেজায় রাগ হলো। তবুও কোনোমতে নিজেকে ঠিক রেখে দাঁতে দাঁত চেপে বলল।

“আপনিও যেখানে আমিও সেখানেই। আমার নিশ্চয়ই কোনো অলৌকিক শক্তি নাই যেটার মাধ্যমে আমি এখানে বসে কিছু করবো। এবার দয়া করে আপনার সন্দেহ টা রেখে আমার সাথে চলুন। না জানি আমার বউটার আবার কি হলো।
,,,,,,,,,,,,

চশমাটা নাকের মধ্যভাগে রেখে খুবি মনোযোগ দিয়ে শশীকে পরিক্ষা করছে বিধান ডাক্তার। তার মুখটা এই মুহুর্তে খুবি সিরিয়াস। শশীর পাশেই চিন্তিত মুখে বসে আছে পারভিন। খাটের পাশে সবাই দাঁড়িয়ে আছে। সবার মুখেই চিন্তার ছাপ। সমুদ্র ওর শশুরের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। এখানে শশুর শাশুড়ীসহ বাড়ির গুরুজনেরা আছে বিধায় বউ এর কাছে যেতে পারছে নাহ। বেশ কিছুক্ষণ শশীকে দেখার পরে ডাক্তার নিজের জিনিসপত্র ব্যাগে রাখতে রাখতে বলল।

” ভাবছি তোমার সাথে এখন আমার আদেও কথা বলা উচিত হবে কিনা মাস্টার।

বাবার বয়সী ডাক্তারের মুখ থেকে এমন কথাশুনে জামশেদ মাস্টার খুবি চিন্তিত হলো। সমুদ্রের দিকে একবার গরম চোখে তাকিয়ে পুনরায় ডাক্তারের দিকে তাকালো। অতঃপর নরম কন্ঠে জবাব দিলো।

“জি কাকা আপনার কথা ঠিক বুঝতে পারলাম নাহ। কি হয়েছে আমার মেয়ের? ও এভাবে অঙ্গান হয়ে গেলো কেনো? সিরিয়াস কিছু হলে বলুন আমি এখনি সদরে নেওয়ার ব্যাবস্হা করছি।

” হয়েছেই তো অনেক বেশি সিরিয়াস কিছু হয়েছে। তুমি নানা হতে চলেছো আর আমি কিনা সুধোমুখে এই খবরটা দিচ্ছি। এখন বলো এরপরেও কী তোমার সাথে কথা বলা ঠিক?

ডাক্তারের কথা বুঝতে সবারই বেশ কিছুক্ষণ সময় লাগলো। যখনি সবাই বুঝতে পারলো সাথে সাথে সব হইহই করে উঠলো। পারভিন নিচু হয়ে শশীর কপালে চুমু দিয়ে আদর করে দিলো। জামশেদ মাস্টার খুশিতে হাসতে হাসতে ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে বলল।

“আমি আপনাকে বাজারের সেরা মিষ্টি খাওয়াবো কাকা।

কথাটা শুনে আবারও সবাই হেসে উঠলো। জামশেদ হাসতে হাসতে পাশে তাকিয়ে দেখে সমুদ্র ওর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। সমুদ্রের এভাবে তাকানো দেখে ওনি ঘাবড়ে গিয়ে বলল।

” কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো? তুমি বাবা হচ্ছো এটা শুনে খুশি হওনি?

“হবো নাহ কেনো। তবে একটা কথা বলার আছে আপনাকে।

” কিহ?

“তখন নাহ বললেন আমি আপনার মেয়েকে কি করেছি। এভাবে অঙ্গান হয়ে গেলো কেনো? এবার তাহলে বলি আপনার মেয়েকে কি করেছি। কিসের জন্য এভাবে অঙ্গান হয়ে গেলো।

সমুদ্রের এমন ধারা কথাশুনে জামশেদ মাস্টার এর কান গরম হয়ে গেলো। বড় বড় চোখে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নিলো।তিনি ভাবতেও পারেননি ছেলেটার এতো মুখ পাতলা। দেখে অন্তত সেটা মনে হয় নাহ। তিনি কাশতে কাশতে সবাইকে বলল মিষ্টি আনতে যাচ্ছে এটা বলেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। পারভিন একবার সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে এবার সবাইকে নিয়ে আস্তে আস্তে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। সবাই যেতেই সমুদ্র খাঁটের পাশে এসে দাঁড়ালো। শশী টুকুর টুকুর চোখে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে দেখে সমুদ্র শশীর দিকে বড় বড় চোখে তাকিয়ে আছে। শশী কিছু বলার আগেই সমুদ্র বলল।

” এটা কী হলো? আমি তোমাকে নিষেধ করেছিলাম নাহ? বার বার করে বললাম তুমি আর একটু বড় হও তারপর না হয় এসব ব্যাপারে ভেবে দেখবো। কিন্তু তুমি আমার কথা শুনলে না কেনো?

সমুদ্রের কথা শুনে শশী ঠোঁট উল্টে বলল।

“আসলে এক্সিডেন্টলি হয়ে গেছে। আমার কি দোষ আমি বড় হতে হতে তো আপনি বুড়ো হয়ে যাবেন। তখন বেবি নিলে দেখা যাবে বেবি আপনাকে বাবা না ডেকে দাদু ডাকছে। তাই আপনার কথা ভেবেই তো এটা করলাম। আর আপনি এখন আমায় বকা দিচ্ছেন।

শশীর এমন কথাশুনে সমুদ্রের বেশ হাসি পেলো। তবে হাসলো নাহ। শশীর কাছে বসে নিচু হয়ে ওর কপালে নিজের ঠোঁট ছোঁয়ালো। অতঃপর শশীর বুকের উপর মাথা রেখে বলল।

” আমার ছোট্ট ভালোবাসাটা আরেকটা ছোট্ট প্রাণকে আনার জন্য তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসা। আমি অনেক খুশি হয়েছি। অনেক ভালোবাসি তোমায়। তুমি নিজেই এখনো ছোটো সেই জন্যই তো আমি এটার কথা ভাবতে গিয়েও ভাবিনি।

সমুদ্রের কথাশুনে শশী ভীষণ খুশি হলো। লোকটা বিয়ের এতোদিন পরে আজকে মুখ ফুঁটে ভালোবাসি বলল। সত্যিই ছেলেরা বাবা হওয়ার কথা শুনলে এতোটা খুশি হয়? শশী সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল।

“তাহলে আমায় কোলে নেন।

সমুদ্র মাথায় উঠিয়ে শশীর দিকে তাকিয়ে হেসে উঠল। শশী এবার লজ্জা পেয়ে দুইহাতে নিজের মুখ ঢেকে বলল।

” হুট আমি আর কিছু বলবোই নাহ। আপনি শুধু আমায় লজ্জা দেন।

#চলবে?

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ