#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_৩৬
,
“রাগ করেছো?
” নাতো
“তাহলে অভিমান হয়েছে?
” হুম
“কতটা?
” এক সমুদ্র।
শশীর শেষের কথাটা শুনে নিঃশব্দে হেসে উঠল সমুদ্র। বিছানা নামক মাটিতে বিছিয়ে রাখা শক্ত তক্তার উপর পাতলা চাদর পাতা। সেখানে গাঁ এলিয়ে দিয়ে মাথার নিচে নিজের বাম হাত রেখে ফোনের ওপাশে হাজারো অভিমান নিয়ে বসে থাকা নিজের অর্ধাঙ্গীনির উদ্দেশ্য বলল।
“তাহলে তো আমাতে এসেই শেষ হবে। যেহেতু অভিমান এক সমুদ্র সেহেতু চাঁদ থেকে সমুদ্র অবধি এসেই থেমে যাবে। তা এই অধম কি করলে আপনার অভিমান কমবে যদি বলতেন।
“এই চারদিন কোথায় ছিলেন আপনি? আর ফোন দিননি কেনো? জানেন কতটা চিন্তায় ছিলাম। একদিন দুদিন না পরপর টানা চারদিন আপনি নিখোঁজ। এভাবে আমায় কষ্ট দিতে আপনার খুব ভালো লাগে?
” ম্যাডাম মিসেস সমুদ্র আপনার বর একজন আর্মি অফিসার। সে এসি রুমে বসে কম্পিউটার চালানোর কাজ করে নাহ। রোদে পুড়ে বৃষ্টির মধ্যে জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরে দেশ থেকে মানুষ নামক কিছু আবর্জনা গুলোকে ছাফ করে। এই জন্য মাঝে মাঝে তাকে নেটওয়ার্ক এর বাইরেও যেতে হয়। এখন থেকে অভ্যাস করে নাও। এটা তো কিছুই নাহ কখনো কখনো এই সময়টা আরো বাড়তে পারে তখন কী করবে।
“মরেই যাবো আমি।
” এটা কি ধরনের কথা শশী। তোমাকে আসার আগে আমি কি বলে এসেছিলাম? তোমার উপর এখন অনেক দায়িত্ব এভাবে বাচ্চাদের মতো কথা বললে হবে?
“আমি কোনো দায়িত্ব কাঁধে নিতে চাই নাহ। আমি সব দায়িত্ব সব চিন্তা আপনার উপর সঁপে দিয়ে। আপনার বুকের মধ্যে লুকাতে চাই। আবার সেই উত্তাল সমুদ্রে ডুবে যেতে চাই।
” আমার বউ মনে হচ্ছে বড় হয়ে গেছে। কতবড় বড় বড় কথা বলতে শিখে গেছে। কাছে থাকলে তো লজ্জায় নিজের মুখটাই দেখাতে চাও নাহ৷ আর এখন দূরে আছি বলে এভাবে আমায় পোড়াবে?
সমুদ্রের কথাশুনে শশীর হুঁশ ফিরলো। খানিক পূর্ব নিজের বলা কথাগুলো মনে উঠতেই লজ্জায় রক্তিম হয়ে গেলো। আর কোনো কথা বড়ালো নাহ। চুপ করে ফোনটা কানে ধরে সমুদ্রের কথা বলার অপেক্ষায় থাকলো। খানিক সময় পর সমুদ্র নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে বলল।
“কেউ এসেছিলো?
সমুদ্রের কথাটা শুনতেই শশীর মনে পড়ল। চারদিন পূর্বে মালবিকার বলা কথাগুলো। ওপাশে সমুদ্র কথাটা বলে শশীর জবাবের আশায় চুপ করে আছে। শশী বাম কান থেকে ফোনটা ডান কানে নিয়ে সমুদ্রের বালিশে শরীর টা এলিয়ে দিয়ে বলল।
” আসলেই বা কি আমি পরের কথায় কান দিই নাহ। আমি আমার ঘরের মানুষ কে বিশ্বাস করি। যদি আমার বিশ্বাস এতোই ঠুনকো হয় তাহলে আমি কীভাবে তার অর্ধাঙ্গীনি হলাম। বাইরের কেউ এসে কয়েকটা বাজে কথা বলে যাবে আর আমি চোখ বন্ধ করে সেটা বিশ্বাস করে নেবো এতোটাও বোকা আমি নই।
শশীর কথায় সমুদ্রের ঠোঁটের কোনায় হালকা হাসির রেশ দেখা গেলো। ফোনটা কানে চেপে পুনরায় শশীর উদ্দেশ্য দুষ্টুমীর কন্ঠে বলে উঠল।
“বাহ আমার বউতো দেখি মানুষ চিনতেও শিখে গেছে। এই জন্য তোমাকে কিছু দিতে হবে দেখছি। তবে ফোনের মধ্যে সেটা দিতে পারছি নাহ। প্রথম বার আমার কাজে ফিরে এসে আফসোস হচ্ছে কেনো এলাম। এখন যদি তুমি কাছে থাকতে না তাহলে তোমার ওই নরম নরম ঠোঁট জোড়াকে একদম লাল করে দিতাম। সাথে গলায় থাকা কালো তিলটাও। আর সবশেষে বুকের,,,
সমুদ্রের পুরো কথা শেষ হওয়ার আগেই শশী থামিয়ে দিয়ে বলল।
” কি করছেন?
সমুদ্র বেশ বুঝতে পারলো ওর কথায় শশী লজ্জা পেয়েছে। শশীকে আরো বেশি লজ্জায় ফেলতে সমুদ্র পুনরায় বলল।
“এই কথা পাল্টালে কেনো থাকতে পারছো নাহ বুঝি।
” ছিঃ আপনার কথার কী ধরণ। দিনদিন কথার এতো অধঃপতন হচ্ছে কেনো?
“কি করবো বলো বিয়ের পরেই তো এই অধঃপতনটা শুরু হয়েছে।
” কবে আসবেন?
“এখনি এই কথা বললে হবে? কেবল তো আসলাম আবার কবে যাবো সেটার ঠিক নেই। আচ্ছা শোনো এখন আর সময় নেই পরে সময় পেলে কথা বলব। আর ফোন বন্ধ পেলে চিন্তা করো নাহ। সময় হলে আমি নিজেই কল করে নেবো। মায়ের সাথে আমার কথা হয়েছে। সবার খেয়াল রেখো আর সাথে তোমার শরীলে থাকা আমার জিনিসগুলোর ও।
কথাগুলো বলে সমুদ্র ফোন কেটে দিলো। শশী ফোনটা বুকের সাথে চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে রইল কিছুক্ষণ। সেদিন ওই মহিলার কথাশুনে কষ্ট হয়েছিলো। মনের মধ্যে প্রশ্নেরাও হানা দিয়েছিলো। কিন্তু পরক্ষনেই মনে আসলো বাইরের অচেনা অজানা কারোর কথায় সে তার ভালোবাসার উপর প্রশ্ন তুলতে পারে নাহ। কে কি বলল তাতে কান না দিয়ে ঠান্ডা মাথায় সমুদ্রের থেকে শুনলেই তো হয়।
,,,,,,,,,,,,,
“হ্যাঁ স্যার আমি আপনার কথামত শাহীন এর পিছু নিয়েছিলাম। আর তার থেকে যেটা জানতে পেরেছি সেটা যদি আপনি জানেন তাহলে আপনর মাথায় ঘুরে যাবে স্যার।
” ইমরান আমার সময় কম যেটা বলার যলদি বলো।
“স্যার শাহীন হলো মালবিকার ছেলে। মানে সতীনের ছেলে। মালবিকা নিজের সার্থের জন্য টাকার লোভ দেখিয়ে ওই চেয়ারম্যান কে বিয়ে করে। যেনো হিজলতলী গ্রামে সবার অগোচরে ওর কাজ সাড়তে পারে। তবে সবাই কানাঘুষা জানে যে চেয়ারম্যান এর দ্বিতীয় বউ আছে তবে সেটা কে এটা কেউ জানে নাহ। আর গ্রামের যারা গরীব পরিবার আছে তাদের টাকার লোভ দেখিয়ে মেয়েদের চাকরির কথা বলে শহরে এনে অন্য দেশে পাঁচার করে। আর সেটাও ওই চেয়ারম্যান এর সাহায্য। ওই গ্রামের পুলিশ ও এর সাথে জড়িত। মানে ওই মহিলার কোথায় কোথায় যে এমন জাল বিছানো আছে কে জানে। খুবি ভয়ংকর মেয়ে মানুষ।
শাহীন এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে থামলো। তার নিজেকে অনেক বড়কিছু মনে হচ্ছে। কতগুলো সংবাদ সে সংগ্রহ করেছে। তারতো সাংবাদিক হওয়া উচিত ছিলো। শাহীনের এসব ভাবনার মাঝেই সমুদ্র গম্ভীর স্বরে বলল।
” এইসব কিছু আমি জানি নতুন কিছু বলো শাহীন।
সমুদ্রের এই কথাটা শুনতেই শাহীন এর মুখটা চুপসে গেলো৷ মানে ওনি যদি সবটা জানেই তাহলে আমাকে এসব করতে কোনো বলল? খামোখা কত খাটনি করে এই তথ্যগুলো যোগাড় করা লাগল।
“শাহীন তোমাকে এক কথা কতবার বলতে হয়।বললাম তো আমার সময় কম যা বলার যলদি বলো।
” ওহ হ্যাঁ। আর একটা কথা গত চারদিন আগে ওই মহিলা আপনার বাসায় গিয়েছিলো। তবে সেখানে গিয়ে কি করেছ সেটা জানি নাহ। ওনি বেরিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরে আমিও গিয়েছিলাম। আন্টির থেকে শুনলাম ওনি নাকি শশী ম্যামের সাথে একা কথা বলেছে। তবে কি বলেছে সেটাও জানি নাহ। মহিলাটা যাওয়ার পর আমি সেখানে অনেকক্ষন ছিলাম। কিন্তু ম্যাম তার ঘর থেকে আর বের হয়নি।
“আচ্ছা ঠিক আছে। তোমাকে যেই কাজটা দিয়ে এসেছি সেটা করো। রাখছি এখন।
” স্যার আমার একটা প্রশ্ন ছিলো।
“বলো।
” কথা হচ্ছে আপনি জানতেন যে শাহীন আপনার গায়ে হলুদের রাতে ইচ্ছে করে ক্লাবঘরে ছিলো যেনো আপনি ওকে ধরতে পারেন। ও জানতো যে আমরা ওর খোঁজেই গিয়েছি।
“হুম।
” আর আপনি এটাও জানতেন যে শাহীন চাইছে যে আমি ওকে ফলো করি এই জন্য আপনি ওকে ছেড়ে দিয়েছিলেন?
“হুম।
“তারমানে এটা দাঁড়ালো যে আপনি বুঝে গিয়েছিলেন যে শাহিন জানে যে আপনি আমাকে বলেছেন যে ওকে যেনো ফলো করি?
” হুম।
“তারমানে আপনি চেয়েছিলেন মালবিকা আর শাহীন মিলে যে প্লান করছে সেটা ওরা করবে আর আপনি সব জানা সত্বেও না জানার ভান করে ওদের ফাঁদে পা দিয়েছেন। এতে ওরা ভাবছে আপনি কিছুই জানেন নাহ। অথচ আপনি সবই জানেন। আর শাহীন ও ভেবেছ আপনি কিছুই জানেন নাহ। এই জন্যও নিজের মতো সবটা করেছে আর আমি ওকে ফলো করছি সেটা ও জানতো। মানে আপনি সব জেনে বুঝে এসব করেছেন। আর শাহীন কেও ছেড়ে দিয়েছেন অথচ ওরা ভাবছে আপনি কিছুই জানেন নাহ। যেমনটা আমি ভাবছিলাম যে আপনি কিছু জানেন নাহ।
” হ্যাঁ। তোমার আর কোনো প্রশ্ন আছে? আর থাকলেও আর এই মুহুর্তে উত্তর দেবো না আমার সময় নেই।
কথাটা বলে সমুদ্র ফোন রেখে দিলো। এদিকে ইমরান হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আপাতত তার মাথা ঘুরছে। কী একটা অবস্থা এতো কিছু হয়ে গেলো আর ও ভাবছে সমুদ্র কিছু না জেনেই বোকার মতো শাহীনকে ছেড়ে দিয়েছে। অথচ তার স্যার সব জানে। মানে ওনি চোরকে বলেছে চুরি করতে আবার এদিকে বাড়ি ওয়ালাকে বলেছে সজাগ থাকতে। ওরে বাপরে মাথা ঘুরছে আমার কেউ পানি ঢালো।
#চলবে?
#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_৩৭
,
“ম্যাডাম এখান থেকে বাকি পথটুকু আপনাকে হেঁটেই যেতে হবে।
হেলিকপ্টার থেকে নেমে এসি গাড়িতে বেশ আরামেই এসেছিলো মালবিকা। হঠাৎ গাড়ি থেকে নামার পর এমন কথা শুনে বেশ বিরক্ত হলো। সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে বাজার মতো কিছু একটা। দুপাশে সবজি থেকে শুরু করে মাছ, কাপড় সবকিছুর দোকান আছে। দুপাশে দোকান মাঝখান দিয়ে ছোট রাস্তা। তবে সেখানেও মানুষের ভিড়। বিকেল পরে গেছে এই জন্য সবাই বাড়ির জন্য আনাজ কিনতে ব্যাস্ত। মালবিকা কে দেখে সবাই কেমন আড় চোখে তাকাচ্ছে। কেননা ওখানে থাকা প্রায় সব মহিলাই বোরকা পড়া। আবার কেউ কেউ শুধু হেজাব করা। আর সেখানে মালবিকা পাতলা একটা শাড়ি পড়ে দাঁড়িয়ে আছে। এভাবে সবার তাকানো দেখে মালবিকার তেমন কিছুই যায় আসলো নাহ। বরং এতো মানুষের ভিড়ে সবার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে এটা ভাবতেই বিরক্ত আর রাগ দুটোই লাগছে।
” ভালো করে দেখো আর কোনো রাস্তা আছে কিনা। আমি এই পথ দিয়ে কখনোই যাবো নাহ। নোংরা পরিবেশ।
লোকটা বেশ নম্রভাবে মাথা নিচু করে বলল।
“ম্যাম আমি সব খোঁজ নিয়েই বলছি। এখান থেকে সামনে গেলে একটা মাজার পড়বে। ওটার পিছনেই আর কিছুদূর গেলেই আমাদের গন্তব্য। আর সেখানে যাওয়ার জন্য আমাদের এই রাস্তা দিয়েই যেতে হবে ম্যাডাম অন্য রাস্তা সেভ নাহ।
মালবিকার যেনো বিরক্তের সীমা রইল নাহ। ডান হাতে শাড়ির কুঁচি ধরে ধুপধাপ পা ফেলে সামনে যেতে লাগলো। পাশ থেকে একজন রাস্তাতে পানি ফেলতেই। পানিটা গড়িয়ে মালবিকার পায়ের নিচে দিয়ে গেলো। রাগী চোখে সেদিকে তাকাতেই বৃদ্ধা লোকটি অনুতপ্ত হয়ে মাথা নিচু করে বলল।
“মাফ করবেন আমি দেখতে পায়নি।
” হ্যাঁ হ্যাঁ হয়েছে এরপর থেকে দেখেশুনে কাজ করবে নয়ত বিপদে পড়ে যাবে। আপনি চলুন ম্যাম।
মালবিকা আর কিছু বলল নাহ। খানিকক্ষণ যাওয়ার পর সামনেই পড়লো সেই মাজারটা। মাজারের সামনের পুরোটা জুড়ে হরেক রকমের ছোট্ট ছোট্ট দোকান। এখানে মানুষের আনাগোনা বেশ বেশি। মালবিকা সেদিকে পাত্তা না দিয়ে তার গন্তব্যের দিকে এগিয়ে গেলো। মাজার পেড়িয়ে বেশ কিছুদূর যাওয়ার পরেই সামনে জঙ্গলের মাঝ দিয়ে ছোট রাস্তা। মালবিকা হাঁটা থামিয়ে পাশে তাকাতেই বডিগার্ড কারো কাছে ফোন দিলো। বেশকিছু সময় কথা বলার পর মালবিকার উদ্দেশ্য বলল।
“ম্যাম এখান থেকেই রাস্তা শুরু। আমরা প্রায় চলে এসেছি।
মালবিকা কুঁচি ধরে রাখা হাতটা ছেড়ে দিয়ে বাঁকা হেসে অন্য হাতে থাকা সানগ্লাস টা চোখে পড়ে নিলো। অতঃপর সাথে থাকা বডিগার্ড কে সেখানে দাঁড়াতে বলে ও সামনের দিকে চলে গেলো।
,,,,,,,,,,,,,,,
” আমার মতে দুইটা জায়গায় কখনোই নিজের অধিকার ক্ষমতা ছেড়ে চলে আসা উচিত নয়।
জোসেফ এর কথাশুনে ছবি আঁকতে থাকা রোদ্রের হাতটা থেমে গেলো। ঘাড় বাঁকিয়ে জোফেস এর দিকে তাকিয়ে বলল।
“আমি ঠিক তোর কথাটা বুঝতে পারলাম নাহ।
” না বোঝার কি আছে মেরি দোস্ত। শোন যুদ্ধ ক্ষেত্রে নিজের শত্রু পক্ষ কে আর ভালোবাসার মানুষ কে কখনোই ছাড়া উচিত নয়।
জোসেফ এর কথাশুনে রোদ্র মুচকি হেসে পুনরায় নিজের কাজে মন দিলো। জোসেফ এবার রোদ্রের কাছে গিয়ে একটা চেয়ার নিয়ে বসে বলল।
“আরে আমি কি কোনো হাসির কথা বললাম যে তুই এভাবে হাসতেছিস। মানলাম যে ভালোবাসায় ত্যাগ করা যায় কিন্তু সেই ত্যাগটা কেনো এক পক্ষ করবে অপরপক্ষ ও তো করতে পারে।
জোসেফ এর কথায় রোদ্র তেমন পাত্তা না দিলেও এবার রোদ্রের হাতটা থেমে গেলো। ঘাড় ঘুরিয়ে জোসেফ এর দিকে তাকিয়ে বলল।
” কি?
ঘা টা জায়গা মত দিতে পেরে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুঁটে উঠল জোসেফ এর। মালবিকার কাছ থেকে পুরো কাহিনি টা শুনে তারপর নিজের প্লানটা সাজিয়েছে। রোদ্রের কথায় পুনরায় বলা শুরু করলো।
“হ্যাঁ আমিতো ঠিকি বলেছি। ভাই আমি কখনো নিজের ভালোবাসা ছাড়বো নাহ।
” যাকে ভালোবাসবি সে যদি তোকে না ভালোবেসে অন্য কাউকে ভালোবাসে তখন কি করবি?
রোদ্রের কথা শুনে জোসেফ সঙ্গে সঙ্গে কিছু বলল নাহ। মনের মধ্যে পরপর কথাগুলো সাজিয়ে নিয়ে বলা শুরু করলো।
“ওতোকথা জানি নাহ। আমি যে তাকে ভালোবাসি এই কথাটা আগে তাকে জানাবো তারপর দেখবো সে কি বলে। কেননা আমি কিছু না জেনেশুনে নিজে নিজে এতো বুঝতে যাবো কেনো? ভালো বেসেছি কোনো পাপ তো করিনি। এই জন্য আগে নিজের ভালোবাসার কথা তাকে জানাবো এরপর বাকি কথা। আরে আমি যদি তাকে আমার মনের কথা নাই বলি তাহলে সে জানবে কীভাবে?
জোসেফ এর কথাশুনে রোদ্র ভাবনায় মগ্ন হয়ে গেলো। নিজের কাছে নিজেই প্রশ্ন করলো। সত্যিতো আমিতো কখনো শশীকে নিজের মনের কথা জানায়নি তাহলে ও জানবে কীভাবে? রোদ্রকে ভাবতে দেখে জোসেফ বাঁকা হেসে রোদ্রের কাঁধে হাত রেখে বলল।
” তবে তুই কিন্তু আমাকে তোর লাভ স্টোরিটা এখনো বলিসনি। যদি বলতি তাহলে হয়ত বলতে পারতাম আসলে ত্যাগ টা কার করা উচিত ছিলো।
জোসেফ এর কথাশুনে রোদ্র ওর থেকে একটু সরে এসে জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। বাইরে থেকে ঠান্ডা বাতাস গাঁয়ে লাগতেই আরাম অনুভব করলো। লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে সবটা বলতে শুরু করলো। শশীকে প্রথম দেখা থেকে সমুদ্রের সাথে বিয়ে হয়ে যাওয়া সবটা। সবটা শুনতেই জোসেফ হা হয়ে গেলো। এতো কিছু হয়ে গেছে আর ওরা একটুও টের পায়নি। তবে যেটা ও করতে পারেনি সেটা রোদ্র কে দিয়ে ঠিক করিয়ে নেবে। কথাগুলো ভেবে নিজেই নিজেকে বাহবা দিলো। চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে রোদ্রের পিছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল।
“হুম বুঝলাম। তবে সবটা শুনে আমার এটাই মনে হচ্ছে যে তুই আসলেই একটা গাধা। নয়ত এমন বোকামী কেউ করে?
” মানে?
“মানে হলো তুই কখনো তোর মনের কথা তাকে বলেছিস?
” নাহ। কীভাবে বলবো ওতো আমাকে সেই নজরে দেখতোই নাহ।
“আরে দেখবে কীভাবে তুই জানালেই নাহ তোকে ভালোবাসার নজরে দেখবে।
” কিন্তু ওতো ভাইয়াকে ভালোবাসে।
“বাসবেই তো এখানে তার কী দোষ। তুই যদি তখনি বিয়েটা করে নিতি তাহলে তো এতো কিছু হতোই নাহ। বিয়েটা করে বিদেশে আসলে এতো সম্যসাই হতো নাহ। আর তুই বলছিস তোর ভাই ওই মেয়েটাকে পছন্দ করতো নাহ। মেয়েটাও তোর ভাইকে পছন্দ করতো নাহ। মেয়েটা কিন্তু আগে তোকে পছন্দ করেছে। তারপর তুই ওদের দুজনকে একা ছেড়ে এখানে চলে আসলি। আরে দুজন কাছাকাছি পাশাপাশি থাকলে তো তাদের মধ্যে কিছু একটা তৈরি হবেই। তবে এটা দেখতে হবে যে সেটা আদেও ভালোবাসা নাকি মোহ।
” কিসব কথা বলছিস তুই আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে নাহ।
“আচ্ছা ঠিক আছে। একবার তুই নিজেই ভাব তুই যদি শশী মানে মেয়েটার কাছে থাকতি এখানে না এসে আর তোর ভাই যদি না থাকতো। মানে তোর ভাই জবে চলে যেতো তাহলে কি তাদের মাঝে কিছু হতো?
জোসেফ এর কথাশুনে রোদ্র এবার ভাবতে শুরু করলো। সত্যিই যদি ভাইয়ার জায়গায় আমি থাকতাম তাহলে শশীর সাথে কী ভাইয়ার সম্পর্ক হতো? নিশ্চয়ই হতো না কারণ ভাইয়া তো ওকে পছন্দই করে নাহ। কিন্তু পরক্ষণেই আবার ভাবলো না না এসব আমি কী ভাবছি এখন তো দুজন দুজনকে ভালোবাসে বিয়েও হয়ে গেছে এখন এসব ভেবে কী লাভ। কথাগুলো ভেবে রোদ্র বলল।
” কিন্তু এখন আর এসব ভেবে কী লাভ যা হবার তাতো হয়েই গেছে। ওদের বিয়ে হয়ে গেছে আর ওরা সুখেও আছে।
“আদেও সুখে আছে তো?
” মানে?
“মানে হলো ক্ষনিকের দেখায় যেটা হয় সেটা ভালোবাসা নয় মোহ,আবেগ।
“তাহলে তুই আমাকে কি করতে বলছিস এখন?
” আমি শুধু এটাই বলতে চাইছি যে তুই তোর মনের কথা ওকে বলে দে।
“পাগল হলেছিস তুই? ওর বিয়ে হয়ে গেছে। আমার ভাই এর সাথে মানে ও এখন সম্পর্কে আমার ভাবি হয়।
“তো? আমিতো আর তোকে বলছি না যে ওকে তুলে নিয়ে আয়। আমি শুধু এটাই বলছি তোর মনের কথা ওকে জানা। ওর ও তো জানার প্রয়োজন কেউ ওকে কতবেশি ভালোবাসে।
“এটা অসম্ভব।
” ভালোবাসায় সবি সম্ভব বন্ধু অসম্ভব বলে কিছুই হয় নাহ। আচ্ছা তাহলে থাক তুই আমি এখন যাই আবার পরে কথা হবে।
কথাগুলো বলে জোসেফ চলে গেলে। তবে যাওয়ার আগে রোদ্রকে ধাঁধার মধ্যে রেখে গেলো। এখন যা করার ওই করবে।
,,,,,,,,,,
“আচ্ছা আমার মধ্যে কি কমতি ছিলো। তুমি আমাকে বিয়ে না করে ভাইয়া কে বিয়ে করলে কেনো?
#চলবে?