#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_১৬
,
গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরের রাস্তায় চলা গাড়ির দিকে এক মনে তাকিয়ে আছে শশী। গাড়ি তার নিজ গতিতে সামনের দিকে এগিয়ে চলছে। একটা মানুষ যে কিনা তার থেকে অনেক অনেক দূরে তবুও কত সহজ ভাবে একটুও বিচলিত নাহ হয়ে আমাকে বোঝালো। এই সাহস টা ওর প্রয়োজন ছিলো এমন একটা মানুষ প্রয়োজন ছিলো যে কিনা সব সময় ছায়া হয়ে পাশে থাকবে। কাছে না থেকেও অনুভব করাবে তুমি এগিয়ে যাও আমি তোমার পাশেই আছি। এতোসব ভাবনার মাঝেই গাড়ি গেট দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলো। শশী শাহানারার হাত ধরে আস্তে আস্তে ভিতরে নিয়ে গেলো। রাত তখন প্রায় শেষের দিকে, এতো সব কিছু হওয়ার পরে ওখানে থাকার কোনো মানেই হয় নাহ এই জন্য রাতেই বেরিয়ে পড়েছে। সমুদ্র আর ফোন দেয়নি শাহানারা কয়েকবার ফোন দিয়েছিলো কিন্তু অপর পাশ থেকে বন্ধ আসছে। এমনটা যে এই প্রথম তা নয় শাহানারা একটা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে ফোন কেটে সেই রাতেই শশী আর জয় কে নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে। বাসায় ঢুকে শশী শাহানারাকে তার রুমে দিয়ে এসে নিজেও রুমে চলে গেলো। মাথাটা ভীষণ বেথ্যা করছে।
সকালে নিচে কথার আওয়াজ পেয়ে ঘুম ভেঙে গেলো শশীর। আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো, সিঁড়ির উপর থেকেই দেখলো শাহানারা কারো সাথে ফোনে কথা বলছে। শশী সেই পযন্ত যাওয়ার আগেই কথা শেষ হয়ে গেলো। শাহানারা ফোন রেখে শশীর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলল, রোদ্র ফোন দিয়েছিলো তোর কথা জিগাস করলো কিন্তু তুই ঘুমিয়ে ছিলি বিধায় ডাকতে নিষেধ করলো ও। আয় এখানে এসে আমার কাছে বসতো। শশী গিয়ে শাহানারার পাশে বসতেই ওনি শশীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন শশী কিছু একটা ভেবে শাহানারাকে জিগাস করলেন।
আচ্ছা আন্টি ওই যে সেদিন যে মহিলাটা এসেছিলো ওনি কে?
শশীর কথায় শাহানারার মুখটা মলিন হয়ে গেলো তিনিও শুকনো হেসে বলল, সে অনেক কথা তোকে একদিন সময় করে বলবো না হয় এখন হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নে আমি দেখি রান্নাঘরে যাই।
,,,,,,,,,,,,,,,,
তুমি কি আমার সাথে এক জায়গায় যেতে পারবে?
বইঘরে বসে শশী একটা বই পড়ছিলো তখনি জয় এসে কথাটা বলল শশী মাথা উঁচু করে জয়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে জিগাস করল, কোথায়?
এইতো সামনেই আমার একটা বন্ধুর বাসায় ও ফোন দিয়ে বলল ওর বাসায় যেতে ওর কাছে আমার একটা জিনিস আছে সেটাই আনতে যাবো তুমি যাবে?
হ্যাঁ যাবো চলো।
শশী জয়ের হাত ধরে রুম থেকে বেরিয়ে শাহানারাকে জানিয়ে দুজনে চলে গেলো। যেহেতু বাড়িটা পাশেই তাই ওরা আর গাড়ি নেয়নি। গেট পেরিয়ে মেইন রাস্তায় উঠতেই জয় শশীর হাত ছেড়ে বলল, এই তুমি আইসক্রিম খাবে? দাঁড়াও এখানে আমি তোমার জন্য আনছি।
শশী ভয় পেয়ে জয়ের হাত চেপে ধরে বলল, এই না না তুমি রাস্তা পাড় হয়ে ওদিকে যেও না। দেখছো না কত গাড়ি চলছে তুমি এতো লাফালাফি না করে চলো তোমার বন্ধুর বাড়ি যায়।
তুমি এতো ভয় পাও কেনো বলোত আর আমি হলাম জয় যেকিনা বড় হয়ে বড় ভাইয়ার মতো অনেক বড় অফিসার হবো তাই এসব ছোটোখাটো বিষয়ে ভয় পেলে চলবে নাহ৷ আর বড় ভাইয়া আমাকে বলেছে বাড়িতে এখন কেউ নেই শুধু আমি আছি তাই আমাকেই সবটা দেখে রাখতে হবে। তুমি ভয় পেয়ো না দেখবে আমি এই যাবো আর এই আসবো।
জয়ের কথা শুনে শশী মুচকি হাসলো জয় শশীর হাত ছেড়ে দিয়ে আইসক্রিম আনতে চলে গিয়েছে আর যাওয়ার আগে বড়দের মতো গম্ভীর স্বরে বলেও গিয়েছে যেনো এখানেই চুপটি করে দাঁড়িয়ে থাকে ভুলেও যেনো রাস্তায় না উঠে। শশীও বাধ্য বাচ্চার মতো মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়েছে। শশী দূরে জয়ের দিকেই তাকিয়ে আছে তখনি ওর পায়ের কাছ ঘেঁষে একটা কার এসে থামলো। শশী ভয়ে খানিকটা পিছিয়ে গিয়ে সামনে তাকাতেই দেখলো কার থেকে সাদা পাঞ্জাবি পড়া একটা সুদর্শন যুবক নেমে আসছে। শশী চোখ ফিরিয়ে আবার জয়ের দিকে তাকালো জয় ততক্ষণে ওখানে দাঁড়িয়েই খাওয়া শুরু করেছে।
আম সরি আমি দেখতে পাইনি আপনার কোথাও লাগেনি তো?
অপরিচিত কন্ঠ শুনে শশী তাকালো দেখলো সেই গাড়ি থেকে নামা লোকটাই। না না আমি ঠিক আছি সম্যসা নেই।
সামনে থাকা লোকটা কিছু বলার পূর্বেই জয় দৌড়ে এসে শশীর সামনে দাঁড়িয়ে বলল, কিছু হয়েছে? যা জিগাস করার আমাকে করুন। আর তুমি তোমাকে না বলেছি অপরিচিত কারো সাথে কথা বলবা নাহ এই নাও তোমার আইসক্রিম আর চলো আমার সাথে।
ডানহাতে আইসক্রিম আর বামহাতে শশীর হাত ধরে চলে গেলো জয়। আগত ব্যাক্তি তার চোখ থেকে চশমাটা খুলে সেদিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবার চেষ্টা করলো। যেনো সে অনেক বড় কিছু ভুলে যাচ্ছে কিন্তু সেটা কী?
,,,,,,,,,,,,
দেখতে দেখতে পেরিয়ে গিয়েছে আরো তিনটে মাস এর মধ্যে সমুদ্র আর আসেনি। রোদ্রেও সাথেও প্রতিদিন কথা হয় আর সমুদ্রের সাথে মাঝে মধ্যে। শশী হাজার কথা বলতে চাইলেও সমুদ্রের গম্ভীর স্বরে হ্যালো শুনলেই সবটা কেমন এলোমেলো হয়ে যায় কথাগুলো সব হারিয়ে যায়। পরিক্ষার রেজাল্ট দিয়ে দিয়েছে আরো মাস দুয়েক আগে, এর মধ্যে গ্রামেও বেশ কয়েকবার গিয়েছে শশী। শাহানারা এখানকার একটা কলেজে শশীকে ভর্তি করিয়ে দিয়েছে। আর আজকে কলেজ থেকে পিকনিকে যাওয়ার দিন, শশী ভেবেছিলো যাবে নাহ কিন্তু শাহানারা বলল যেতে তাহলে সবটা দেখাও হবে আবার ভালোও লাগবে। শাহানারা অবশ্য অনুমতি দেওয়ার আগে সমুদ্রের কাছে শুনেছিলো, সবটা শোনার পর সমুদ্র কিছু বলেনি শুধু জিগাস করেছিলো কোথায় যাবে? প্রতিউত্তরে শাহানারা বলেছিলো খাগড়াছড়ি। ব্যাস এরপর শুধু সমুদ্র একটা কথায় বলেছিলো সেটা ছিলো আচ্ছা ঠিক আছে। শশী বাসের জানালার কাছে বসে বাইরে মুখ দিয়ে বসে আছে। এখনো বাস ছাড়েনি একটু পরেই ছাড়বে। ধপ করে পাশে কারো বসার শব্দে শশীর হুশ ফিরলো তাকিয়ে দেখে ওর ক্লাসমেট। শশী আবার জানালার বাইরে তাকালো তার এসব মোটেও ভালো লাগছে নাহ। বাস ছেড়ে দিয়েছে বেশ
কিছুক্ষণ আগে বাইরে থেকে শো শো করে বাতাস এসে চুল এলোমেলো করে দিচ্ছে। পাশে বসে থাকা মেয়েটার নাম মিলি এতোক্ষণ বকবক করে এখন হা করে ঘুমাচ্ছে। শশী একবার সেদিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে শাহানারা কে কল দিলো।
হ্যাঁ কতদূর রে তোরা?
এই তো আন্টি প্রায় চলে এসেছি সামনে থেকে হয়ত গাড়ি চেঞ্জ করবে পাহাড়ি রাস্তায় এসব বাস উঠবে নাহ। তাই জন্য হয়ত অন্য গাড়ি নিবে সেটাই তো বলল আমি ওতোকিছু জানি নাহ ওরা বলল তাই আর কি।
আচ্ছা সাবধানে থাকিস। ও তোকে তো বলতে ভুলেই গেছি সমুদ্র সপ্তাহ খানিক আগে ফোনে বলেছিলো ওনাকি খাগড়াছড়ি তে আছে। এখনো আছে কিনা জানি নাহ থাকলে ভালোই হতো আমার চিন্তাটা একটু কমতো।
সমুদ্রের কথা শুনতেই বুকের মধ্যে কেমন ধক করে উঠলো, কথা শেষ করে ফোন রেখে শশী মনে মনে ভাবছে সত্যিই সমুদ্র এখনো ওখানে আছে? আর থাকলেই বা কি ওর সাথে দেখা হবে নাকি। পরক্ষণেই আবার মনে মনে বলল ইস যদি দেখা হতো কতদিন লোকটাকে দেখে নাহ। নিজের এমন নিলজ্জ ভাবনায় নিজেরই কেমন রাগ হলো। এসব কিছু ভাবতে ভাবতেই দুচোখে ঘুম নেমে আসলো, তবে কতক্ষণ ঘুমিয়েছি জানি নাহ মিলির ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো। ঘুম থেকে উঠে দেখি বাসের প্রায় সবাই নেমে গেছে এখান থেকে গাড়ি চেঞ্জ করতে হবে। শশীও তড়িঘড়ি করে নিজের ব্যাগটা নিয়ে নেমে গেলো। তারপর ছাঁদ খোলা ছোট ছোট গাড়িতে করে তাদের নাকি যেতে হবে, এই গাড়ি শশী কখনো দেখেনি তাই নামও জানে নাহ। মিলির হাত ধরে গাড়িতে গিয়ে উঠে বসল, দ্রুত বেগে গাড়ি সামনের দিকে চলতে শুরু করলো। ছেলে মেয়েরা বেশ উচ্ছাসিত তাদের সাথে কারো কারো বাবা মা কিংবা ভাই বোনরাও এসেছে। তবে শশী একায় এসেছে শাহানারা এতোদূরে জার্নি করতে পারবে নাহ আবার জয়ের পরিক্ষা চলছে। তবে তিনি কলেজে সকল স্যার ম্যামকে বলে দিয়েছেন শশীর খেয়াল রাখতে। শশী অবাক হয়ে আশে পাশের দৃশ্য দেখতে লাগলো, এক মুহুর্তের জন্য যেনো মনে হলো ও ওদের হিজলতলী চলে এসেছে। দুপাশে কত গাছ জন জঙ্গল আর উঁচু উঁচু পাহাড়ের গাঁয়ে ছোটো ছোটো ঘর। বেশ খানিকক্ষণ চলার পর গাড়ি থেমে গেলো শশী চিন্তিত মুখ করে সামনে তাকাতেই মিলি বলল, এখান থেকে বাকি পথ আর্মিরা দিয়ে আসবে। সামনেই ওদের ক্যাম্প, হয়ত কোনো সম্যসা এই জন্য ওনারা দিয়ে আসবে। আর্মির কথা শুনতেই শশীর হাঁসফাস লাগতে শুরু করল। গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়াতেই দেখলো ওদের মতো আরো অনেকেই গাড়ি থামিয়ে হাঁটাহাটি করছে। শশী একটু এগিয়ে গিয়ে দেখলো আর্মির পোশাক পড়া কয়েকজন সামনে থেকে গাড়ির ড্রাইভারদের সাথে কথা বলছে। শশীর অবাধ্য চোখ দুটো সমুদ্র কেই খুঁজতেছে কিন্তু সে কোথায়? যতটা সময় শশীরা ওখানে ছিলো শশী আশে পাশে দেখার নাম করে শুধু সমুদ্র কেই খুঁজেছে কিন্তু পায়নি৷ হয়ত ওনি এখান থেকে চলে গেছে, হতাশ হয়ে শশী আবার গাড়িতে গিয়ে বসল কে জানে আবার কখন কোথায় সেই গম্ভীর লোকটার সাথে দেখা হবে।
#চলবে?
#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_১৭
,
খুবি আতংক নিয়ে শশী তার জন্য বরাদ্দ রুমটাতে বসে আছে। স্যার সবাইকে রুম থেকে বের হতে নিষেধ করেছে। খাগড়াছড়ি আসার পরেরদিনই যে এমন অবস্থার মুখোমুখি হতে হবে ওরা ভাবেনি। পহাড়ি অঞ্চল গুলোতে বিপদ সংকেত দেওয়া হয়েছে। বড় রকমের ঝড় আসার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস, যদিও ঝড়ের খবর আরো আগেই দেওয়া হয়েছিলো কিন্তু এটা যে এমন রূপ ধারণ করবে সেটা সবারই অজানা ছিলো। যেহেতু পাহাড়ি অঞ্চল তাই ঝুঁকিও বেশি। এই রুমটাতে ওরা তিনজন থাকে, মিলি আর সাথে আরো একটি মেয়ে। বাইরে মেঘের গুড়ুম গুড়ুম শব্দে কেঁপে কেঁপে উঠছে শশী। বাতাস শুরু হয়েছে সাথে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি, ঘড়িতে সময় দেখেই বুঝতে পারলো মাগরিবের আযান খানিক পূর্বেই হয়েছে। রুমের মাঝে টিপটিপ করে মোমবাতির অল্প আলো জ্বলছে, কিন্তু এখনো মিলির কোনো খোঁজ নেই। সেই বিকেলে বের হয়েছে মেয়েটা এখনো ফিরে আসেনি। অনেক ভেবে চিন্তে শশী সিদ্ধান্ত নিলো এবার ব্যাপারটা স্যারকে জানাতেই হবে। আরো আগেই জানানো উচিত ছিলো কিন্তু মিলি বারবার করে নিষেধ করায় বলেনি। শশী রুমের মেয়েরটার সাথে আস্তে করে বাইরে বের হলো, পুরো করিডর অন্ধকারে নিমজ্জিত হাতে টিপটিপ করে জ্বলতে থাকা মোমবাতিটা নিয়ে সামনের দিকে এগোলো। দায়িত্বে থাকা ওদের স্যারের রুমের সামনে গিয়ে নক করতেই ওনি ভিতর থেকে দরজা খুলে বাইরে আসলো। সবটা শোনার পর ওনি ভীষণ রেগে গেলেন কথাটা ওনাকে আরো আগে জানানো হলো না কেনো। কিন্তু এখন তো আর কিছুই করার নেই ঝড় থামা অবধি অপেক্ষা করা ছাড়া। দুজনের জন্য তো আর এখন এতোগুলো জীবন ঝুঁকিতে ফেলতে পারবেন নাহ। দুজনের কথাশুনে শশী চমকে গেলো কিন্তু পরে জানতে পারলো যে মিলি ওদেরই ক্লাসের একটা ছেলের সাথে বেরিয়েছে।
,,,,,,,,,,,,
ঝড় থামলেও গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি এখনো থামেনি রিসোর্ট এর লোকসহ আরো কয়েকজন মিলে মিলিকে খুঁজতে বেরিয়েছে। শশীও তাদের সাথে গিয়েছে যদিও স্যার নিষেধ করেছিলো কিন্তু ও শোনেনি বলল কাছে কোথাও খুঁজে ও ফিরে আসবে। রিসোর্ট থেকে বেরিয়ে প্রায় অনেকটা সামনে গেলো কিন্তু কোথাও খুঁজে পেলো নাহ। আর সামনে যাওয়া যাবে নাহ, গাছ পড়ে রাস্তা ব্লক হয়ে আছে। উপায় না পেয়ে সবাই রিসোর্টের দিকে ফিরে আসতে লাগলো, কাছাকাছি আসতেই দেখলো মিলি আর সাথের ছেলেটা ভিজে কাপড় নিয়ে রিসোর্টের দিকেই আসছে। ওদের দেখে সবার ওদের দিকে এগিয়ে গেলো, প্রথমে স্যার রাগ করলেও পরে ওরা সুস্থ আছে দেখে আর কিছু বললো নাহ পরে ওনি সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,
সবাই তাহলে এখানেই আছে এখন সবাই ভিতরে চলো আর আমাকে না জানিয়ে কেউ বাইরে যাবে নাহ ঠিক আছে?
তখনি ওদের মধ্যে থেকে একটা মেয়ে দৌড়ে এসে বলল, স্যার এখানে তো কোথাও শশীকে দেখতে পাচ্ছি নাহ ও কোথায় গেলো? আমাদের সাথেই তো ছিলো।
ওহ শিট, কি বলছো ভালো করে খুঁজেছো সব জায়গায়? হঠাৎ করে কোথায় চলে গেলো। এখন আবার ওকে কোথায় খুঁজবো?
,,,,,,,,,,,,
কেটে যাওয়া পা চেপে ধরে রাস্তার মধ্যে বসে আছে শশী, তখন অন্ধকারে কিছু একটার সাথে বেঁধে পা কেটে গিয়েছে। পিছন থেকে ওদের ডাকলেও কেউ শোনেনি ক্রমশ বৃষ্টির বেগ বেড়েই যাচ্ছে। শশী ভিজা কাপড়ে কোনো মতে উঠে দাঁড়ালো চারপাশে অন্ধকার মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চমকানোর আলোয় যা একটু দেখা যাচ্ছে। খোঁড়াতে খোঁড়াতে সামনের দিকে এগোতে লাগলো আর সাথের সবাইকে ডাকছে কিন্তু কোথাও কেউ নেই। দুপাশে জঙ্গল আর মাঝের রাস্তা দিয়ে হাঁটছে শশী। এখান থেকে রিসোর্ট কতদূরে সেটাও জানে না, আগে কখনো আসা হয়নি তাই রাস্তাটাও অচেনা। একটু সামনে এগোতেই হঠাৎ পাশ থেকে একটা গাছ ভেঙ্গে শশীর সামনে পড়লো। শশী ভয়ে চিৎকার করে কয়েক পা পিছনে সরে গেলো, মূলত ভারী বৃষ্টির কারণে গাছের গোড়ায় মাটি সরে গাছটা পড়ে গিয়েছে। প্রায় কিছুক্ষণ ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকলো শশী তারপর কোনো রকমে কাঁপা কাঁপা গায়ে গাছটা এড়িয়ে সামনের দিকে গেলো। হাঁটতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে অন্ধকারে পায়ের জুতোজোড়া কোথায় পড়েছে সেটাও অজানা, হাঁটতে গেলে কাঁটা জায়গায় চাপ লাগছে সাথে মাটি কাঁদা ডুকছে এর জন্য বেথ্যাটা অসহনীয়।তবুও কোনো রকমে সামনের দিকে যেতেই দেখলো রাস্তার পাশেই ছোট খুপড়ি মতো একটা ঘড় তবে ঝড়ের কারণে সেটার উপরের চালটা উড়ে গিয়েছে। শশী কোনো রকমে ওই খুপড়ির কাছে গেলো পেতে রাখা বাঁশের বেঞ্চ এ বসে কাঁপতে লাগল। অনেকক্ষণ ভিজার কারণে প্রচন্ড মাথা বেথ্যা করছে, পায়েও জ্বালা করছে। অন্ধকারে নির্জন একটা রাস্তার পাশে বসে আছে। এখনো ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে কখন থামবে কে জানে, তখনি শশী দেখলো দূর থেকে একটা আলো এদিকেই আসছে। হয়ত কেউ গাড়ি নিয়ে আসছে শশী কোনো রকমে তড়িঘড়ি করে রাস্তায় গিয়ে হাত নাড়ালো। গলা দিয়ে কোনো স্বর বের হচ্ছে না। গাড়িটা যত কাছে আসছে ততই মনে হচ্ছে আশে পাশের সবকিছু ঘুরছে। ঝাপ্সা চোখে শশী দেখল গাড়িটা ওর থেকে কিছুটা দূরে এসে থেমেছে গাড়ি থেকে দুইজন লোক বেরিয়ে ওর দিকেই আসছে। ব্যাস আর কিছু চোখে পড়লো নাহ, চারপাশটা অন্ধকার থেকে আরো বেশি অন্ধকার হয়ে আসলো। ফল স্বরূপ কংক্রিটের রাস্তার উপর আঁচড়ে পড়ল।
পাহাড়ি ঢল নেমে গাছ পড়ে রাস্তা ব্লক হয়ে আছে। এতে সাধারণ মানুষ এর যাতায়াত এর অনেক সম্যসা হয়,আবার ঝড়ে পাহাড়িদের ছোট ছোট ঘর বাড়ি ভেঙ্গে পড়ে বিপদজনক অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়। তাদের রেসকিউ করার জন্যই মূলত আর্মিদের এই ঝড় বৃষ্টির রাতেও বের হতে হয়েছে। রাস্তায় গাছ পড়ে রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে সেই খবর পেতেই সমুদ্র ওর টিম নিয়ে সেদিকেই যাচ্ছিলো তখনি দেখলো দূরে রাস্তার মাঝে কেউ একজন দাঁড়িয়ে হাত নাড়াচ্ছে। হয়ত কোনো বিপদে পড়েছে এই জন্য সমুদ্র ড্রাইভারকে বলল গাড়ি থামাতে। গাড়ি থামতেই এক লাফে নিচে নেমে এলো সমুদ্র সাথে আরো দুজনও নামলো। একটু কাছে যেতেই বুঝলো কোনো মেয়ে, কিন্তু সমুদ্র কাছে যাওয়ার আগেই মেয়েটা রাস্তার উপর পড়ে গেলো। টানা পায়ে সমুদ্র কাছে গিয়ে বসে গাড়ির আলোয় দেখলো মেয়েটা আর কেউ নাহ তার খুবি চেনা একটা মুখ। শশীকে এই অবস্থায় এখানে দেখে সমুদ্র অবাক হয়ে সাদা হয়ে যাওয়া শশীর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো।
স্যার মনে হচ্ছে মেয়েটা রাস্তা হারিয়ে ফেলেছে হয়ত অনেক্ক্ষণ বৃষ্টিতে ভিজেছে এই জন্য কেমন ফ্যাকাসে লাগছে।
পিছন থেকে আসা কথার আওয়াজে সমুদ্রের ধ্যান ফিরলো তড়িঘড়ি করে শশীকে কোলে তুলে নিলো। গাড়িতে উঠতেই এক পাশের বেঞ্চ থেকে তিনজন উঠে অন্যপাশে বসল। সমুদ্র শশীকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে রেখেই বসল, শশীর গায়ের উড়না দিয়ে শশীর পুরো শরীলটা ভালো করে ঢেকে দিলো। পুরো শরীল বরফের মতো ঠান্ডা, বাকিরা শশীর দিকে হা করে তাকিয়ে আছে সমুদ্র পরিস্থিতি বুঝতে পেরে বাকিদের বলল, গাড়ি ঘুরিয়ে ক্যাম্প এর দিকে চলো ওকে ওখানে রেখে তারপর সামনে যাবো।
ঠিক আছে স্যার।
চোখে হাজারো প্রশ্ন মনের মধ্যে অনেক কৌতুহল থাকলেও কেউ কোনো প্রশ্ন করলো নাহ। সমুদ্র শশীকে ভালো করে নিজের সাথে জড়িয়ে নিলো যেনো নিজের শরীলের তাপ দিয়ে শশীর ছোট্ট ঠান্ডা শরীলটা উষ্ণতা পায়।
,,,,,,,,,,
বিকট মেঘের গর্জনে ঘুম ভেঙ্গে গেলো আধো আধো চোখটা খুলতেই প্রথমে নজরে আসলো মাথার উপর কাপড় জাতীয় কিছু ঝুলছে। রাতের কথা মনে হতেই চট করে উঠে বসে পড়লাম, তাতেই মাথার মধ্যে ঘুরে উঠল। বেশ কিছুক্ষন চোখ বন্ধ করে রেখে আশে পাশে তাকাতেই বুঝতে পারলাম আমি কারো তাবুর ভেতর আছি। পাশেই দড়িতে আর্মিদের পোশাক ঝুলছে, বাইরে বোধহয় এখনো বৃষ্টি হচ্ছে টিপটপ শব্দ আসছে। কিন্তু এখন রাত নাকি দিন আর আমিই বা কোথায়? এতো এতো প্রশ্ন কিন্তু কোনো উত্তর নেই। পা নাড়াতেই বুঝলাম ব্যাথাটা আগের থেকে কমেছে, পায়ে সাদা কিছু দিয়ে বাঁধা। কিছু একটা মনে হচ্ছেই তড়িঘড়ি করে নিজের দিকে তাকালাম, নাহ কালকে রাতের জামাটাই গায়ে তবে অর্ধেক ভেজা উড়নাটা ভালো করে গায়ে জড়িয়ে নিলাম। মাথাটা এখনো বেথ্যা করছে হয়ত ভিজার কারণে জ্বর এসেছে। যেহেতু বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে তাই আর বাইরে গেলাম নাহ অপেক্ষা করছি যদি কেউ আসে। বেশ কিছুক্ষণ হয়ে গেলো কিন্তু কারো আসার নামগন্ধ নেই আর না পেরে ভাবলাম এবার আমিই বাইরে যায়। কেবলি উঠতে যাবো তখনি কারো আসার আভাস পেয়ে আর উঠলাম নাহ। উড়না ঠিকঠাক ভাবে আছে কিনা সেটা একবার দেখে সামনে তাকালাম, তখনি তাবুর কাপড়টা সরিয়ে মাথা নিচু করে কেউ একজন ভিতরে ঢুকলো। পরনে আর্মি প্যান্ট আর গায়ে সাদা গেন্জি কখনো ভাবিনি এভাবে ওনাকে দেখবো। ওনাকে এখানে দেখে ভিতর থেকে কান্নাগুলো বেরিয়ে আসতে চাইছে। মন চাইছে দৌড়ে গিয়ে ওনাকে জাপ্টে ধরে ওনার বিশাল বুকের মধ্যে আমার ছোট্ট দেহটা লুকিয়ে ফেলি তারপর বাচ্চাদের মতো কান্না করে মনটাকে হালকা করি।
এটা খেয়ে এই ঔষধ টা খেয়ে নাও তাহলে আরাম পাবে।
ঠোঁট কাঁমড়ে কান্না আঁকানোর চেষ্টা করছি, মুখের মধ্যে গরম তরল জাতীয় কিছু অনুভব করলাম হয়ত দাঁত দিয়ে চেপে ধরার জন্য ঠোঁট কেটে গেছে। তবে এতো চেষ্টা করেও কান্না আটকাতে পারলাম নাহ। ডুকরে কেঁদে উঠলাম আমার কান্না দেখেও ওনার কোনো হেলেদুল হলো নাহ, ওনি কয়েক পা এগিয়ে এসে হাতের জিনিসটা আমার সামনে রেখে একটু দূরে গিয়ে বসল। হাত দিয়ে মাথায় থাকা পানিটা ঝেঁড়ে শশীর দিকে তাকিয়ে বলল, এখন কান্না করছো কেনো? এতোকিছু ঘটনানোর সময় মনে ছিলো নাহ?
ওনার কথা শুনে আমি আর কিছু বললাম নাহ মাথা নিচু করে বসে থাকলাম, ভীষণ অভিমান হচ্ছে ওনার উপর কোথায় ওনি জিগাস করবে আমি কেমন আছি পায়ে ব্যাথা করছে কিনা তা না উল্টো সব কিছুর জন্য আমাকেই দায়ী করছে। আমি কি এসব ইচ্ছে করে করেছি নাকি? কিন্তু এই কথাটা ওনাকে বোঝাবে কে। আমি এখানে আসলাম কীভাবে? আর এটা কোন জায়গা? এখন কয়টা বাজে?
শশীর এতো এতো প্রশ্ন শুনেও সমুদ্রের মধ্যে কোনো ভাবাবেগ দেখা গেলো নাহ, যেনো মনে হচ্ছে শশীর প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার কোনো ইচ্ছেই সমুদ্রের নেই। নিজেই তো রাস্তার মাঝে অঙ্গান হয়ে পড়ে ছিলে আর আমাকে জিগাস করছো এখানে কীভাবে আসলে।
তারমানে ওটা আপনাদের গাড়ি ছিলো?
সেটাই তো মনে হচ্ছে। কথাটা বলে সমুদ্র উঠে দাঁড়িয়ে বলল, এটা খেয়ে ঔষধ খেয়ে তৈরি হয়ে থাকো আমি তোমাকে রিসোর্টে দিয়ে আসবো।
আমি যাবো নাহ।
শশীর এমন কথা শুনে সমুদ্র বেরিয়ে যেতে গিয়েও থেমে গিয়ে পিছন ফিরে ভ্রু কুঁচকে শশীর দিকে তাকালো। শশী ততক্ষণে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে মুখ ফসকে নিজের বলা কথায় এখন মনে হচ্ছে মাটি ফাঁক করে মাটির নিচে চলে যায়। সমুদ্র কিছু বলল নাহ কিছুক্ষণ শশীর দিকে তাকিয়ে থেকে বাইরে বেরিয়ে গেলো।
#চলবে?