প্রিয়দর্শিনী পর্ব-৪৫

0
765

#প্রিয়দর্শিনী🧡
#প্রজ্ঞা_জামান_তৃণ
#পর্ব__৪৫

বিকালে আবিদ থানায় গিয়ে দেখে ছেলেগুলোকে সেলে বন্দি করে রাখা হয়েছে। অফিসারের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা বলে নেয় আবিদ। পরবর্তীতে অফিসার তাকে কনস্টেবল সহ সেলে প্রবেশ করতে বলে। নাহলে হঠাৎ করে তারা আঘাত করে বসতে পারে। তবে আবিদ অফিসারকে নিষেধ করে দেয়। ছেলেগুলোর সঙ্গে সে ব‍্যক্তিগত কথা বলতে চায়। আবিদ চায়না সেগুলো অন‍্যকেউ জানুক। সে সেলে ঢুকে দরজা লক করে দেয়। সিনিয়র অফিসার সহ পুলিশ সবাই সবটা দেখল। তারা আবিদের উপর কিছু বলতে পারবে না, তাই চুপ থাকা শ্রেয় মনে করল। জেলের মেঝেতে ছেলেগুলো পরে ছিল। তাদের হাতে মুখে মারের দাগ রয়েছে। তাদের ভীতস্থিত মুখয়ব দেখে স্পষ্টত বোঝা যাচ্ছে কথা বের করতে তাদেরকে বেধড়ক মারা হয়েছে। আবিদ পুলিশকে সেলের ভেতরে একটা চেয়ার দিতে বলে। কিছুক্ষণ পরে একজন কনস্টেবল চেয়ার দিয়ে গেলে আবিদ সেখানে আরাম করে বসে। খুব শান্ত স্বরে লিডার ছেলেটাকে জিগ্যেস করে,

‘তোমাকে কে অর্ডার করেছিল? কার কথায় আমাকে অ‍্যাটাক করেছিলে?’

ছেলেটি চুপ ছিল অন‍‍্য ছেলেদের মতো সে মার খেয়ে দমে যায়নি। নির্ভয়ে আবিদের প্রাণে তাকিয়ে ছিল। ছেলেটিকে দেখে দৃঢ়চেতা মনে হলো আবিদের। আবিদ তার দিকে পূর্ণ দৃষ্টি মেলে তাকায়। কোনো জবাব না পেয়ে আবিদ আবারো বলে,

‘তুমি এখন আমার হাতে বন্দি। তোমাদের ধারণা নেই আমি কী করতে পারবো! আমি জানি তোমরা এই প্রফেশনে শখের বসে আসোনি এজন্যই সুযোগ দিতে চাইছি। আমাকে সবটা বলো আমি তোমাদের সাহায্য করবো কথা দিচ্ছি।’

ছেলেটি নির্বিকারভাবে তাকিয়ে ছিল। হয়তোবা ভাবছিল আবিদকে বলবে কী না? আবিদ সময় দিলো কিন্তু ছেলেটার উত্তর না পেয়ে আবারো বলে,

‘তোমাকে সময় দিচ্ছি আমাকে সবটা খুলে বলো। তাহলে তোমরা হয়তো বেঁচে যাবে। তাছাড়া আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারবো। ভয় নেই তোমাদের সবার ফ‍্যামেলীতে পুলিশ প্রটেকশনের ব‍্যবস্হা করে দিবো।’

লিডার ছেলেটাকে এবার নড়েচড়ে বসতে দেখা গেলো। সে আড়চোখে সবার দিকে তাকিয়ে দেখল একবার। সবাই ইশারায় সম্মতি দিতেই আবিদকে ইশারা করে কিছু বলে। আবিদ কিছুটা আন্দাজ করে তাদের বেলের ব‍্যবস্থা করে। পুলিশগুলো অবাক হয়ে যায় আবিদের সিদ্ধান্তে। যারা আবিদকে মারতে চেয়েছিল তাদের বেল করানো সবার কাছে বোকামি! কিন্তু আবিদের কাছে বড় অস্ত্র আসল কালপ্রিটকে ধরার জন‍্য। সবার বেল করানোর পরে আবিদ সর্বপ্রথম ছেলেগুলোর চিকিৎসার ব‍্যবস্থা করে। হসপিটালে তাদের চিকিৎসা শেষে নিজের সিক্রেট প্লেসে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে পাঁচ-ছয়জন ছেলে একটু ভয় পায়। আবিদকে দেখে বোঝা যাচ্ছিলো না, তার এমন সিক্রেট প্লেস থাকতে পারে। ছেলেগুলো জানে সিক্রেট প্লেস কিসের জন‍্য ব‍্যবহার করা হয়। এজন্যই মূলত ভয় পাচ্ছিল। তবে আবিদ তাদের আস্বস্ত করে, সে কোন ক্ষতি করার জন‍্য আনেনি। সন্ধ্যা হয়ে গেছে! এমন সময় আবিদের কাছে দর্শিনীর ফোন আসে বেশ কয়েকবার। আবিদ ছেলেগুলোর জন‍্য খাবারের ব‍্যবস্থা করছিল। মার খাওয়ার পর তাদের অবস্থা খারাপ ছিল। জেলে খেতে দেয়নি সম্ভবত। খাবার পেয়ে তারা হামলে পড়েছে। আবিদ তাদের নিয়ে ব‍্যস্ত থাকায় ফোনটা রিসিভ করতে পারেনি। পরবর্তীতে আরেকদফা ফোন পেয়ে সবার অগোচরে রিসিভ করলে দর্শিনী বলে,

‘আবিদ আপনি কোথায়?’

দর্শিনীর গলার স্বর একটু অন‍্যরকম লাগছিল। আবিদ হঠাৎ-ই ভয় পেলো মনে হয়। সহসা চিন্তিত হয়ে জিগ্যেস করে,

‘একটু কাজে ব‍্যস্ত আছি! কিছু হয়েছে কী?’

‘আপুর লেবার পেইন উঠেছে! আমাকে ম‍েডিপ‍্যাথে যেতে হবে। উজান ভাইয়া আপুকে মেডিপ‍্যাথে নিয়ে গেছে। মা আমাকে এইমাত্র ফোন দিয়ে জানালো। আপনি কী তাড়াতাড়ি আসতে পারবেন? তাহলে আপনার সঙ্গে যেতে পারতাম। আমার আপুর জন‍্য বেশ চিন্তা হচ্ছে।’

আবিদ আশ্চর্য হয়ে গেলো। প্রজ্জ্বলিনীর নয়মাস এখনো সম্পূর্ণ হয়নি। এখনো দুইমাস বাকি আছে অথচ এতোদ্রুত লেবার পেইন উঠেছে! বিষয়টি অবাক করার মতো। আবিদ হাতের পৃষ্ঠে ঘড়িতে সময় দেখে বলে,

‘এতো তাড়াতাড়ি লেবার পেইন কীভাবে কী, দর্শিনী?’

‘সব সম্ভব আবিদ! মন হচ্ছে প্রি-ম‍্যাচুয়ার বেবি হবে। আপু দূর্ঘটনা থেকে বেঁচে গেছিলো তখনই ডাক্তার বলেছিল বেবির জন্মের সময় কম্পলিকেশন থাকতে পারে। জানেন আপু উজান ভাইয়া প্রায় ভে’ঙ্গে পড়েছে। যদি কম্পলিকেশন থাকে তবে সিজার করতে হতে পারে। আমার খুব দুশ্চিন্তা হচ্ছে!’

দর্শিনীর দূর্বল কন্ঠস্বর শুনে আবিদের খারাপ লাগে। সে দর্শিনীকে বলে,

‘মন খারাপ করোনা। আদিবাকে সঙ্গে নিয়ে যাও! আমি ডাইভার চাচাকে বলে দিচ্ছি।’

‘আপনি আসবেন না?’

‘নয়টা-দশটাই পৌঁছে যাবো! আপাতত তুমি আদিবাকে সঙ্গে নিয়ে যাও।’

দর্শিনী আর কথা না বাড়িয়ে আবিদকে সাবধানে থাকতে বলে ফোন রেখে দেয়। পরপরই আবিদ ছেলেগুলোর কাছে ফিরে আসে। ছেলেগুলো ইতিমধ্যে খাওয়া শেষ করেছে। গার্ডদের একজন আবিদকে চেয়ার এগিয়ে দেয় বসতে।

.

আদিবা দর্শিনী দুজনেই আবিদের পারমিশন পেয়ে রেডি হয়ে নিচে নেমে আসে। দর্শিনী খবরটা সবাইকে জানিয়েছে। অনুসা বেগম দর্শিনীর মাথায় হাত বুলিয়ে চিন্তা করতে নিষেধ করেন। অবশেষে আদিবা দর্শিনীকে গাড়িতে তুলে দিয়ে তিনি বাড়ির ভেতরে চলে আসেন। পুরোটা রাস্তা দর্শিনী টেনশনে হাঁসফাঁস করছিল। আদিবা তাকে বারবার সান্ত্বনা দেয়। দর্শিনী জোর করে হাসার চেষ্টা করে কিন্তু পারেনা।

মেডিপ‍্যাথে পৌঁছাতেই নিহালের সঙ্গে আদিবা দর্শিনীর দেখা হয়ে যায়। আজকে প্রজ্জ্বলিনীর ওটিতে নিহাল উপস্থিত থাকবে। প্রজ্জ্বলিনীর বেবি যেহেতু সিজারে হবে। এজন্যই ওটিতে ঢোকানোর আগে যাবতীয় ফরমালিটি পূরণ করে নেয় উজান। দর্শিনী কেবিনে গিয়ে দেখে প্রজ্জ্বলিনী পেটের ব‍্যথায় কাঁদছে। পাশেই উজানকে খুব চিন্তিত দেখাচ্ছে। চোখগুলো ছলছলে তার। দর্শিনীর মা-বাবা তার বোনকে সাহস রাখতে বলছে। অন‍্যদিকে উজানকে সামলাতে উজানের বাবা আজকে উপস্থিত আছেন। দর্শিনী বোনের পাশে বসে হাত আঁকড়ে ধরে। প্রজ্জ্বলিনী কাঁদতে কাঁদতে বোনকে বলে,

‘প্রিয়, যদি আমার আর বেবির কিছু হয়ে যায় উজানের কী হবে? আমার তাকে নিয়ে দুশ্চিন্তা হচ্ছে। আমি আর বেবি দুজনে সারভাইব করতে পারবো তো?’

প্রিয়দর্শিনী বোনের হাত শক্ত করে আঁকড়ে ধরে বলে,

‘অবশ‍্যই পারবে। উজান ভাইয়ার জন‍্য তোমাকে পারতে হবে আপু। একটু কষ্ট সহ‍্য করে নেও। নিজের মনোবল শক্ত রাখো। আল্লাহর নাম নেও, ইনশাআল্লাহ সব ঠিক হয়ে যাবে।’

উজানের চোখ ছলছল করছে। প্রজ্জ্বলিনীর সামান‍্য কষ্ট সহ‍্য করতে পারেনা সে। সেখানে প্রসবকালীন বেদনা কতোটা মারাত্মক খুব ভালো মতো বুঝতে পারছে। এজন্যই উজানের আরো বেশি খারাপ লাগছে। পারিপার্শ্বিক অবস্থা বুঝে আশরাফ সাহেব তাকে সান্ত্বনা দিতে থাকেন। উজান নিজের বাবাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে। এমন সময় দুজন নার্স এসে প্রজ্জ্বলিনীকে স্টেচারে করে ওটির উদ্দেশ্যে নিয়ে যায়। যাওয়ার আগে প্রজ্জ্বলিনী বারবার উজানের দিকে তাকাচ্ছিল। উজান ওটির দরজা পর্যন্ত তার হাত ধরে রেখেছিল।

কিছুক্ষণ পরে অপেক্ষা শেষে নিহালের সঙ্গে আরো একজন সিনিয়র ডাক্তার, ইন্টার্নসহ, নার্স ওটিতে ঢুকে পরে। সবাই ওটির বাইরে অপেক্ষা করতে থাকে। টেনশনে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত হসপিটালেও উজানের শরীরে ঘাম ছুটে গেছে। দর্শিনী আর প্রিয়মা বেগম পাশে থাকা বেঞ্চে বসে আল্লাহকে ডাকতে থাকে। একেই তো প্রি ম‍্যাচিয়ুর বেবি! অন‍্যদিকে বাচ্চার পজিশন উল্টো হয়ে গেছে। আদিবা দর্শিনীর পাশে বেঞ্চে এসে বসে। নিহালের সঙ্গে কথা হয়েছে তার। বেবির পজিশন উল্টে যাওয়ার ফলে কম্পলিকেশন তৈরি হয়েছে। তবে নিহাল বলেছে নিজের সবটা দিয়ে চেষ্টা করবে।

দেড়ঘন্টা হয়ে গেছে। প্রজ্জ্বলিনীর কোন খবর নেই! উজান ভয়ে জড়সড় হয়ে ছটফট করতে থাকে। পরিবারের সবার একই অবস্থা। কিছুক্ষণ পর ওটি থেকে নিহাল বের হয়। নিহালের চিন্তিত মুখ দেখে উজানের শ্বাসরোধ হয়ে আসছে। কিছু জিগ্যেস করার আগেই নিহাল সবাইকে তাড়া দিয়ে বলে,

‘আরো দুব‍্যাগ রক্তের প্রয়োজন। দ্রুত ব‍্যবস্থা করুন। তিন-চার ব‍্যাগে হয়ে যাবে ভেবেছিলাম। কিন্তু শর্ট পড়েছে। অপারেশন চলছে দ্রুত ব্লাডব‍্যাংকে গিয়ে আরো দুব‍্যাগ রক্তের ব‍্যবস্থা করুন।’

নিহালের কথায় উজান দৌঁড়ে হসপিটালের ব্লাডব‍্যাংকে চলে যায়। ভাগ‍্য ভালো ছিল সেখানে বেশি বড় লাইন ছিলনা খুব সহজেই দুব‍্যাগ ও পজেটিভ ব্লাড পেয়ে গেছে। উজান যত দ্রুত সম্ভব ওটিতে গিয়ে ব্লাড পৌঁছে দেয়। ব্লাড পেতেই ওটির দরজা দ্বিতীয়বারের মতো বন্ধ হয়ে যায়। উজান ওটির কাচ থেকে প্রজ্জ্বলিনীকে দেখতে থাকে। প্রজ্জ্বলিনীর শরীর অবশ করে জ্ঞান সচল রাখা হয়েছে। উজানের চোখে পানি জমতে শুরু করে। সে বারবার বলতে থাকে,

‘আল্লাহ আমার স্ত্রী-সন্তানকে সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে আমার কাছে ফিরিয়ে দেও।’

.

দশটার দিকে আবিদ মেডিপ‍্যাথে চলে আসে। গার্ডদের রেখেই এসেছে। আবিদকে আসতে দেখে দর্শিনী আদিবা উঠে দাঁড়ায়। আবিদ দর্শিনীর হাত ধরে বলে,

‘সব ঠিক আছে তো? ভয় পাচ্ছো কেনো তুমি?’

দর্শিনী আবিদের দিকে অশ্রুসিক্ত চোখে তাকায়। কান্নার জন‍্য চোখমুখ ফুলে গেছে। ফর্সা চেহারায় হালকা লাল আভা। আবিদ দর্শিনীর গাল আলতো করে ছুঁয়ে বলে,

‘ওটিতে কখন ঢোকানো হয়েছে?’

দর্শিনী নাক টেনে বলে,

‘আটটার দিকে।’

‘এখন দশটা বাজছে! এতো দেরি কেনো হচ্ছে?’

‘জানিনা! আমার খুব ভয় করছে।’

‘হুশশ! কিছু হবে না ভয় পেয়ো না।’

আবিদ উপস্থিত শ্বশুর-শাশুড়ি সহ সবাইকে সালাম জানায়। অবশেষে উজানের কাঁধে হাত রেখে ইশারায় বোঝায় সব ঠিক হয়ে যাবে। উজান কাঁধের কাছে আবিদের হাত আঁকড়ে ধরে। ছেলেদের কাঁদতে হয়না। উজান চাইছে না কাঁদতে তবুও নিরবে কাঁদতে হচ্ছে। আবিদ তাকে জড়িয়ে ধরে পিঠে হাত রেখে বলে,

‘সব ঠিক হয়ে যাবে, ভাই! ভরসা রাখুন আল্লাহর উপর।’

আবিদের আসার কিছুক্ষণ পরে হঠাৎ-ই শব্দ করে ওটির দরজা খুলে যায়। ভেতর থেকে বাচ্চার কান্নার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। পুরোপুরি দুঘন্টা পরে ওটি থেকে বের হলো নিহাল। সবাই চাতক পাখির ন‍্যায় তার দিকে চেয়ে আছে। নিহাল সবার চোখেমুখে আতঙ্ক দেখে বলে উঠে,

‘অপারেশন সাকসেস ফুল! কনগ্রাচুলেশন উজান ভাই আপনি ফুটফুটে এক পুত্র সন্তানের জনক হয়েছেন।’

নিহালের চোখেমুখে প্রাণখোলা হাসি। উপস্থিত সবার মুখে ত‍ৎক্ষণাৎ হাসি ফুঁটে উঠে। উজান এখনো স্বাভাবিক হয়নি। প্রজ্জ্বলিনীর খবর না পাওয়া পযর্ন্ত শান্ত হতে পারছেনা। পরবর্তীতে একটা নার্স এসে তোয়ালে পেঁচানো ফুটফুটে এক বাচ্চাকে উজানের কোলে দেয়। সবাই মুগ্ধ হয়ে মাশআল্লাহ বলে উঠে। অপারেশন সাকসেসফুল করতে পেরেছে বলে নিহালের চোখে মনোমুগ্ধকর হাসি! ওটি থেকে সিনিয়র ডক্টর আর ইন্টার্ন বেরিয়ে যায়। উজান ছেলেকে কোলে নিয়েই প্রজ্জ্বলিনীর কথা জিগ্যেস করে। নিহাল হাস‍্যজ্জ্বল মুখে বলে,

‘প্রজ্জ্বল ভালো আছে। প্রথমে অবশ‍্য অবস্থা খারাপই ছিল। আমি টেনশনে পড়ে গেছিলাম কী করবো ভেবে? যেহেতু কারণবশত বেবির পজিশন উল্টে গেছিলো। বাধ‍্য হয়ে নরমাল ভাবেই বেবির পজিশন ঠিক করতে চেষ্টা করেছি। সবচেয়ে বড় কথা প্রজ্জ্বলিনী মারাত্মক ভয় পাচ্ছিলো। কান্নাকাটি করছিলো। পরবর্তীতে বাচ্চার পজিশন ঠিক করতে সফল হই। এজন্যই অপারেশনে এক্সট্রা দুইব‍্যাগ রক্তের প্রয়োজন পড়েছিল। এখন সব ঠিক আছে। প্রজ্জ্বল ভালো আছে জ্ঞান নেই তার। কিছুক্ষণ পরে ফিরে আসলে সবাই দেখা করতে পারবেন।’

উজানের চোখ খুশিতে চিকচিক করছে। পরবর্তীতে উজান বাচ্চার কানে মিষ্টিমধুর সুরে আজান দেয়। সবাই তাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বাচ্চাকে প্রাণভরে দোয়া দিল। নিহালের অবদান অনেক ছিল এখানে। সবাই তাকে কনগ্রাচুলেট করে ভালো করে। নিহাল চেন্জ করার জন‍্য সবাইকে বলে নিজের কেবিনের দিকে এগিয়ে যায়। সবাই যখন বাচ্চা আর প্রজ্জ্বলিনীকে নিয়ে ব‍্যস্ত। আদিবা তখন সবার অগোচরে নিহালের কেবিনের দিকে এগিয়ে যায়। নিহাল নিজের কেবিনে এপ্রোন, মাস্ক খুলে বেসিনে হ‍্যান্ডওয়াশ দিয়ে হাত ধৌঁত করছিল। ঠিক এমন সময় পেছন থেকে, একটা ছোট শরীর তাকে জড়িয়ে ধরে। তৎক্ষণাৎ নিহালের হাত থেমে যায়। বুঝতে পারে তার কেবিনে বিনা পারমিশনে কে এসেছে। আয়নায় প্রেয়সীর দিকে তাকিয়ে ঠোঁটে মিষ্টিমধুর হাসে নিহাল। আদিবা তাকে এখনো জড়িয়ে আছে। নিহাল তোয়ালে দিয়ে হাত মুছে আদিবার হাত ধরে সামনে নিয়ে আসে। আদিবা মিষ্টি করে হেসে বলে,

‘অনেক অনেক শুভেচ্ছা ডাক্তার সাহেব! আজকে আপনি আমাকে সবচেয়ে বেশি খুশি করেছেন। আপনি আর আপনার প্রফেশন আমার কাছে সবচেয়ে সম্মানের।’

নিহাল বাঁকা হেসে আদিবাকে জড়িয়ে ধরে। মূহুর্তেই আদিবা ফ্রিজড হয়ে যায়। নিহাল তার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিশফিশ করে বলে,

‘আপনি যদি খুশি হয়ে থাকেন, তাহলে এবার আমাকে খুশি করুন রানি সাহেবা!’

নিহালের এহেন কথায় আদিবা ঈষদুষ্ণ লজ্জায় লাল, নীল হয়ে যায়। নিহাল যে এমন নির্লজ্জ হতে পারে আদিবা আন্দাজ করেনি কখনো। তাকে লজ্জা পেতে দেখে নিহালের ঠোঁটে আবারো হাসি ফুটে ওঠে।

#চলবে

[ সবাই ভুলত্রু’টি মানিয়ে নিবেন প্লীজ ]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে