Monday, October 6, 2025







প্রাণের পুষ্পকুঞ্জ পর্ব-০৯

#প্রাণের_পুষ্পকুঞ্জ
লেখনীতে : তামান্না বিনতে সোবহান
পর্ব – ৯

মেহেরপুর থেকে ওরা যখন ঢাকায় এলো তখন রাত সাড়ে নয়টা। একটানা অনেকক্ষণ ধরে ড্রাইভ করাতে যথেষ্ট ক্লান্ত অনির্বাণ। প্রথমে গাড়িটা অ্যাপার্টমেন্টে ঢুকিয়ে, একপাশে পার্কিংয়ে রেখে, ব্যাগপত্র বের করে দুটো লাগেজ প্রাণেশার হাতে ধরিয়ে দিয়ে, তাকে লিফটের সামনে দাঁড় করিয়ে রাখল। এরপর গাড়ি গ্যারেজে রেখে, বাকি লাগেজ ও ছোট্ট পার্সসহ সমস্ত ব্যাগপত্র হাতে ও পিঠে তুলে নিয়ে লিফটে পা রেখে সুইচ টিপে দিল। ছ’তলায় আসতে বেশি সময় লাগল না। ফ্লাটের সামনে দাঁড়িয়ে চাবি বের করে লক খুলে, ডোর মেলে দিয়ে বলল,

‘একদম ছোট্ট, সাদামাটা একটা ঘর। থাকতে পারবি?’

প্রাণেশা উত্তর না দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে চাইল, অনির্বাণ তাকে ওখানেই দাঁড় করিয়ে রেখে, সবগুলো লাগেজ ভেতরে ঢুকিয়ে দৌড়ের ওপর রান্নাঘরে গেল। প্রাণেশা দূর থেকে বলল,

‘আশ্চর্য! এতক্ষণ জার্নি করে এলাম, কোথায় একটু বিশ্রাম নিতে দিবে। তা না করে, দরজার সামনে দাঁড় করিয়ে রেখেছ! এটা কী ধরনের নিষ্ঠুরতা?’

দু’মিনিটের মধ্যেই ছুটে এলো অনির্বাণ। হাতে ট্রে। তাতে একগ্লাস জুস। ছোট্ট পিরিচে চারটে মিষ্টি। সোজা প্রাণেশার সামনে দাঁড়িয়ে জুসের গ্লাস বাড়িয়ে দিয়ে বলল,

‘বধূবরণ করছি।’

প্রাণেশা তাজ্জব বনে বলল,
‘বধূবরণ! তুমি?’

‘হ্যাঁ, আমি। আমার ঘরে আর কেউ নেই। তাই আমার বউকে আমিই স্ব-সম্মানে বরণ করে ঘরে তুলছি। নে, ঝটপট জুস খা। এরপর অল্প একটু মিষ্টিমুখ করবি।’

হাতের ঠ্যালায় সব দূরে সরিয়ে জোরপূর্বক ভেতরে প্রবেশ করতে চাইল প্রাণেশা। তার ভীষণ ক্লান্ত লাগছে। প্রচণ্ড ঘুমে ধরেছে। শান্তির একটা ঘুম না হলে চলছেই না। কিন্তু কে বুঝে, কার কথা? ঠেলেঠুলেও লাভ হলো না। পালোয়ানের শরীর নিয়ে অনির্বাণ তার পথ আটকে বলল,

‘এমন করছিস কেন? নতুন বউ না তুই? নতুন বউকে বরণ করে ঘরে তুলতে হয়। এটাই নিয়ম। নিয়মের অবহেলা করা যাবে না।’

‘গুল্লি মারি তোমার এসব নিয়মে।’

‘গুল্লি পরে মার। আগে অল্প একটু মুখে দে। প্লিজ… প্রাণ। আমার গুলুমুলু, নাদুসনুদুস, দুষ্টুমিষ্টি বউ না তুই? সবসময় এত ঘাড়ত্যাড়ামি করতে হয় না তো, জান।’

এ কেমন বধূবরণ বুঝল না প্রাণেশা নিজেও। কোনো স্বামী তার বউকে বরণ করে ঘরে তুলে? তা-ও বিয়ের দু’সপ্তাহ পর? মেজাজ খারাপ হলেও অনির্বাণের এই পাগলামি সহ্য করে নিল। প্রথমে অল্প একটু জুস মুখে দিল, এরপর কাঁটা চামচের সাহায্যে খুব সামান্য মিষ্টি। এইটুকু খাইয়ে অনির্বাণ তাকে ইশারায় ভেতরে প্রবেশ করার অনুমতি দিয়ে বলল,

‘ওয়েলকাম মিসেস্ অনির্বাণ সৈকত। ওয়েলকাম টু ইউওর হোম।’

এরপর আবার ছুটে গেল ডাইনিংয়ে। ট্রে রেখে রুম থেকে খুঁজে খুঁজে হাতপাখা নিয়ে এলো। যদিও এটার প্রয়োজন হয় না, তবুও নিজের ঘরে দুটো হাতপাখা কিনে রেখেছিল সে। প্রাণেশা সবে ডোর বন্ধ করে ড্রয়িংরুমের সোফায় বসেছিল। তখুনি অনির্বাণ হাতে থাকা হাতপাখা দিয়ে উরাধুরা বাতাস শুরু করল। বিড়বিড় করল,

‘প্রাণের মাথা ঠাণ্ডা হোক। বরফ-শীতল মেজাজ হোক। সব শয়তানি, বদ বুদ্ধি, তিড়িংতিড়িং মাথা থেকে বের হয়ে যাক। হে আল্লাহ, আমার বউয়ের মন-মেজাজকে সবসময় ফ্রিজের বরফের মতোই ঠাণ্ডা রেখো। কু-বুদ্ধি, কূটনামি, রাগারাগি, ঝগড়াঝাটি সবকিছু থেকে তাকে দূরে সরিয়ে রেখো। আর আমাকে, এই ঘাড়ত্যাড়া মেয়েটাকে সামলানোর মতো প্রচুর ধৈর্য্যশক্তি দিও। পাশাপাশি রোজ একশোটা চুমুর মাধ্যমে ঠোঁটে স্কচটেপ মারার সুযোগ করে দিও। যেন, ওর বেয়াদবি বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে গেলে ওকে শাসন করতে পারি। সবশেষে, তোমার অশেষ মেহেরবাণীর মাধ্যমে আমার বউটাকে একগাদা আণ্ডাবাচ্চার মা হওয়ার সুযোগ করে দিও। আমীন…।’

দোয়া শেষ করে তড়িঘড়ি প্রাণেশাকে বলল,
‘আমীন বল, নয়তো দোয়া কবুল হবে না।’

প্রাণেশা হতবাক দৃষ্টি নিয়ে বলল,
‘এটা দোয়া?’

‘হ্যাঁ, দোয়া। কেন, খারাপ কিছু বলেছি?’

জোরেশোরে নিঃশ্বাস নিয়ে, হাতের ধাক্কায় অনির্বাণকে সোফায় ফেলে দিয়ে, দু’দিকে দু’পা ছড়িয়ে দিয়ে, তার গলা টিপে ধরল প্রাণেশা। খুনে দৃষ্টি মেলে বলল,

‘আমার মাথায় শয়তানি, কূটনামি, কুবুদ্ধিতে ভরা? আমি রাগারাগি করি, ঝগড়াঝাটি করি, ঘাড়ত্যাড়ামি করি? আর তুমি? তুমি কী করো? হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকো? আমার সাথে পায়ে-পা দিয়ে ঝগড়া করে কে? অকারণ বউ বউ বলে জ্বালায় কে? আর কী বললে? চুমু, আণ্ডাবাচ্চা, খুব শখ না? বাচ্চার বাবা হওয়ার খুব শখ?’

যেভাবে গলা টিপে ধরেছে প্রাণেশা, সেভাবেই প্রাণেশার হাতের ওপর নিজের দুটো হাত রাখল অনির্বাণ। সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা না করে, একইভাবে চেপে রেখে দুষ্টুমি করে বলল,

‘হবে না কেন? বিয়ে করেছি, বউ এনেছি, ঘর-সংসার শুরু করব। আণ্ডাবাচ্চা তো দরকারই। ওসব ছাড়া কি সংসার পরিপূর্ণ হয়?’

এই কথা শুনে প্রাণেশা আরও জোরে গলা টিপে ধরতে গেল। অনির্বাণ হাত আটকে বলল,
‘এখুনি মারিস না। এত তাড়াতাড়ি মরতে চাই না, প্রাণ। তোর হাত ধরে বৃদ্ধ হতে চাই। শুধু একগাদা আণ্ডাবাচ্চা কেন, আমি তো একগাদা নাতি-নাতনীও চাই। বউকে নিয়ে, বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে, নাতি-নাতনীদের নিয়ে আমার তো শখ-আহ্লাদের শেষ নেই রে, প্রাণ। এসব পূরণ না করে এত অল্প বয়সে মৃত্যুকে গ্রহণ করি কী করে বল?’

হঠাৎ করেই প্রাণেশার মনটা খারাপ হয়ে গেল। সে হাত সরিয়ে এনে ঝটপট সোফা ছেড়ে নেমে যেতে চাইল। অনির্বাণ তার হাত ধরে আটকে ওখানেই দাঁড় করাল। এরপর নিজে সোজা হয়ে বসে হাতের টানে প্রাণেশাকে হাঁটুর ওপর বসিয়ে দু’হাতে কোমর পেঁচিয়ে ধরে বুকে মাথা রেখে বলল,

‘রাগ করলি?’

দু’দিকে মাথা নেড়ে প্রাণেশা বলল,
‘না…।’

‘তাহলে? দূরে যাচ্ছিস কেন?’

‘ফ্রেশ হওয়া দরকার। ক্ষিধে লাগেনি তোমার? রান্নাবান্না কিছু কি আছে ফ্রিজে? কী খাবে?’

অনির্বাণ মুচকি হেসে ঠোঁটের স্পর্শ দাবিয়ে দিল স্ত্রীর গলায়। ফিসফিসিয়ে বলল,
‘টেনশনের কিছু নেই। কাছেই একটা রেস্টুরেন্ট আছে। ওখানে কল করলে, ডিনার নিয়ে আসবে।’

‘ও… তোমার বুয়া আসে না?’

‘সকালে আসবে। আজকে তার ছুটি ছিল।’

‘সে কী রান্নাবান্না করে?’

‘হ্যাঁ, সব করে।’

‘আমি তো রান্নাবান্না কিছু করতে পারি না।’

‘তোকে কিছু করতে হবে না, প্রাণ। তুই শুধু চব্বিশঘণ্টা আমাকে ভালোবাসবি।’

‘হ্যাঁ, প্রেমের দোকান দিয়ে বসেছি। চব্বিশঘণ্টা সার্ভিস দেব।’

‘স্বামীকে শুধু চব্বিশঘণ্টা কেন, দিনে আটচল্লিশঘণ্টাও সার্ভিস দেয়া যায়।’

‘আটচল্লিশঘণ্টায় দিন?’

‘ডাবল সার্ভিস দিবি। এজন্যই বললাম। একদিনে যতটা ভাব-ভালোবাসা হয়, ডাবল সার্ভিসে তার দ্বিগুণ হবে। দ্বিগুণ ভালোবাসা দিয়ে আটচল্লিশঘণ্টার ভালোবাসা চব্বিশঘণ্টাতেই পুষিয়ে দিবি।’

প্রাণেশার মনে হলো, অনির্বাণ আস্তেধীরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে। তাকে এই অবধিই আটকে দিতে সে ছটফটিয়ে উঠে বলল,
‘ফ্রেশ হও, কিছু খাও। টায়ার্ড না তুমি?’

‘উঁহু… এত নড়াচড়া করিস না। চুপ করে বোস। আমি কি তোকে বিরক্ত করছি? শুধু একটু আদর করছি। আদর করতে না দিলে আণ্ডাবাচ্চা কি গুগল থেকে ডাউনলোড করব?’

লজ্জায় সারাশরীর কেঁপে উঠল প্রাণেশার। ধুম করে কিল বসাল অনির্বাণের পিঠে। বলল,
‘তোমার মুখে সত্যি সত্যিই স্কচটেপ দেয়া উচিত।’

ব্যথা পেয়ে অস্ফুটস্বরে শব্দ তুলে, পিঠে একটু হাত বুলিয়ে, প্রাণেশাকে আরও চেপে ধরে অনির্বাণ বলল,

‘হাতদুটো বেঁধে রেখে দেব, প্রাণ। একদম শয়তানি করবি না। তোর সমস্যাটা কী? আমি আমার বউকে আদর করছি। তুই এত ক্ষ্যাপছিস কেন, ভূতনী?’

কোথা থেকে কোথা কোনদিকে ঘুরায়, ভেবে পায় না প্রাণেশা। হার মেনে নিয়ে শান্তস্বরে বলল,
‘এখন ফ্রেশ হও। খাবার অর্ডার দাও। আমার কিন্তু সত্যিই খুব ক্ষিধে পেয়েছে। না খেলে ঘুম হবে না। প্লিজ একটাকিছু করো।’

প্রাণেশার লজ্জা, অস্বস্তি ও অনিচ্ছা সবকিছুই বুঝতে পারল অনির্বাণ। সে চাইছিল, মেয়েটা একটু সহজ হোক। বাড়ির সবার সাথের এই দূরত্ব খুব সহজে মেনে নিয়ে সম্পর্কটাকে সহজেই গ্রহণ করে নিক। তা-ই একটু জ্বালাচ্ছিল। এখন ক্ষিধের কথা শুনে হাত ঢিলে করে, দুটোহাত মুঠোবন্দী করে মুচকি হেসে বলল,

‘মন খারাপ করিস না। তুই মন খারাপ করে থাকলে আমার নিজেরও খারাপ লাগবে। মনে হবে, তোকে ইচ্ছের বিরুদ্ধে ফোর্স করে এখানে টেনে এনেছি। প্রাণ, আমাদের সম্পর্কটা কেবলই দায়বদ্ধতার না হোক, প্লিজ…। আমি চাই, সম্পর্ক ও মানুষটাকে তুই পর্যাপ্ত মূল্য দিতে শিখ। বিয়ে ও স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কটা নিছকই কোনো ছেলেখেলা নয়। চাইলেই এই সম্পর্ক গড়া যায় না, আবার ভাঙা যায় না। তুই যতক্ষণ না সবকিছু মন থেকে গ্রহণ করতে পারবি, ততক্ষণ আমি তোর ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে কিচ্ছু করব না। প্রমিস…। এখানে যথেষ্ট স্পেস তুই পাবি। সবকিছু তুই তোর নিজের মতো করে গুছিয়ে নিতে পারিস। আয়, আমি তোর রুম দেখিয়ে দিচ্ছি।’

***

প্রাণেশা রুম দেখছিল। রুমগুলো খুবই ছোটো ছোটো। একজন মানুষ অনায়াসে এখানে হাত-পা ছড়িয়ে থাকতে পারে। সে ফার্ণিচারগুলো দেখতে দেখতে বলল,

‘একা মানুষের এত ফার্ণিচার লাগে?’

লাগেজগুলো ভেতরে এনে অনির্বাণ বলল,
‘আরেহ্ না, আগে ছিল না। এগুলো গতকালকেই এনেছি।’

এরপর হেঁটে হেঁটে বুকশেলফ, ওয়ারড্রব, ড্রেসিংটেবিল, কেবিনেট সব দেখিয়ে বলল,
‘তোর সব প্রয়োজনীয় জিনিস এখানে সাজিয়ে নিবি। তুই সাজাতে পারবি তো? না পারলে অসুবিধা নেই, আমি হেল্প করব। এখন ফ্রেশ হয়ে একটু বিশ্রাম নে। আমি খাবার অর্ডার দিচ্ছি।’

লাগেজের চাবি অনির্বাণের প্যান্টের পকেটেই ছিল। সেটা বের করে প্রাণেশার হাতে দিতেই প্রাণেশা বলল,
‘সবসময় ইয়ার্কি না? তুমি ইচ্ছে করেই আমাকে বিপদে ফেলেছ, যেন ননস্টপ ঝগড়া করতে পারো?’

অনির্বাণ হাত বাড়িয়ে প্রাণেশার চুলগুলো এলোমেলো করে বলল,
‘তোর সাথে ইয়ার্কি না মারলে, ঝগড়া না করলে পেটের ভাত হজম হয় না রে, প্রাণ।’

‘হয়েছে আর ঢং করতে হবে না, যাও।’

অনির্বাণ সরে এলে কান্ত শরীরটাকে একটু বিশ্রাম দিতে বিছানায় বসলো প্রাণেশা। ফোন বের করে রূপকথার নম্বরে ভিডিওকল দিল। রিসিভ হতেই একগাদা ভাই-বোনের কিচিরমিচির শুনতে পেল সে। সবাই তার ফোনের অপেক্ষায় ছিল। সবার সাথে অল্পস্বল্প কথা বলল। এরপর মা-চাচীদের সাথে কথা বলে মনের ভার হালকা এলে একটু স্বস্তি পেল। লাগেজের লক খুলে কালো রঙের একটা টি’শার্ট ও সি গ্রিনের ট্রাউজার বের করে টাওয়েল হাতে নিয়ে ওয়াশরুমে প্রবেশ করল। তার এতসব ব্যস্ততার ভীড়ে অনির্বাণ খাবার অর্ডার দিয়ে সেই খাবার টেবিলে সাজিয়ে প্রাণেশাকে ডাকল। গোসল সেরে ডাইনিংয়ে এসে সব প্রস্তুত দেখে একগাল হেসে প্রাণেশা বলল,

‘সোনায় বাঁধানো কপাল আমার। এমন বর কয়জনার কপালে জুটে?’

অনির্বাণও একইভাবে হেসে বলল,
‘আমি তো এসব তোর জন্য করছি না, আমার বউয়ের জন্য করছি। আমার বউ তো আমার জান, প্রাণ, হার্ট, কিডনি, ফুসফুস, লিভার, কতকিছু। তাই তারজন্য আমি সব করতে পারি।’

প্রাণেশা মুখ ভেঙচিয়ে চেয়ারে বসে গালমুখ ফুলিয়ে বলল,
‘বউপাগল লোক।’

খাওয়ার সময় আর কোনো ঝগড়াঝাটির দিকে গেল না কেউ। দু’জনেই চুপচাপ খেল। অনির্বাণের খাওয়া শেষ হওয়া মাত্রই তার ফোন বেজে উঠল। স্ক্রিনে তার প্রাণপ্রিয় বন্ধু আরিফের নম্বর দেখে রিসিভ করে কথা বলতে বলতে রুমে চলে গেল। আরিফ তার বিজনেস পার্টনার। পড়াশোনা শেষ করে যখন একটা কোম্পানিতে অটোমোটিভ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকরিজীবনের শুরু করেছিল, সেই চাকরি দিয়ে পোষায়নি বলে, নিজ চেষ্টা ও দক্ষতায় দুই বন্ধু মিলে নিজেরাই একটাকিছু করতে চাইছিল। লক্ষ্যে পৌঁছাবার জন্য বাড়ি থেকে ঢাকায় এসে গাড়ি নিয়ে রংঢং শুরু হলো অনির্বাণের। এখন তো সে একজন দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার। যে নিমিষেই ভাঙাচোরা গাড়িকে ঠিকঠাক করে ফেলতে পারে। নিজের বুদ্ধি ও মেধা দিয়ে অত্যাধুনিক ডিজাইন ও সৌন্দর্য দিয়ে গাড়ির বেশভূষা পালটে দিতেও ওস্তাদ। বর্তমানে তার এই কর্মক্ষেত্রে তার বন্ধুর পাশাপাশি আরও অনেক বেকার তরুণেরা কাজ করে রুজিরোজগার করছে। নিজের এই দক্ষতা দিয়ে কিছু করা, কিছু বেকার মানুষের হাতে কর্ম তুলে দেয়ার মাধ্যমেই তৃপ্তি ও শান্তি খুঁজে পাচ্ছে অনির্বাণ। সে যখন দরকারী আলাপে ব্যস্ত ছিল, প্রাণেশা এরমধ্যেই সম্পূর্ণ ডাইনিং পরিষ্কার করে নিল। বাড়তি খাবার ফ্রিজে তুলে রেখে দু’কাপ কফি করতে চাইল। এটা বদভ্যাস বৈ কিছু না। ঘুমের আগে কেউ কীভাবে মগ ভরে চা-কফি খায়? কিন্তু তাদের দু’জনেরই এই বদভ্যাস আছে। যেহেতু অনির্বাণ ব্যস্ত, তাই প্রাণেশা ভাবল নিজেই কাজটা করে নেবে। সেই চেষ্টাতেই রান্নাঘরে এসে গ্যাস অন করে চুলোয় পানির পাতিল বসিয়ে কাছেপাশে কফির বৈয়াম খুঁজছিল। হাতের নাগালে কিছুই ছিল না। যা কিছু প্রয়োজনীয় মশলাপাতি সব উপরের কেবিনেটে সাজানো। তবুও হাত লম্বা করে ওপর থেকে কফির বৈয়াম আনার চেষ্টা করল। ব্যর্থ হলেও হাল ছাড়ল না। উঁকি দিয়ে আঙুলের ঠ্যালায় যখন একটু একটু করে বৈয়ামটা নাগালের মধ্যে আনল, পিছন থেকে অনির্বাণ বলল,

‘ওমা! আমার বউ রান্নাঘরে! কী রান্না করছে? দেখি, দেখি।’

আচমকা আওয়াজে সামান্য ভয় পেল প্রাণেশা। বৈয়াম হাতে নিতে গিয়ে পা স্লিপ খেল। উলটে না পড়লেও শক্ত মেঝেতে লেগে পায়ের আঙুলে যথেষ্ট ব্যথা পেল। বলল,

‘হয়েছে, সরো। আর দেখতে হবে না। পাঁচ মিনিট সময় দাও, দেখবে আমি তোমাকে স্পেশাল কফি খাওয়াব।’

অনির্বাণ চেহারায় বিস্ময় ধরে রেখে বলল,
‘স্পেশাল কফি? গিলতে পারব তো?’

‘লেগপুল করছ?’

‘একদমই না।’

‘তাহলে চুপচাপ দেখো।’

অনির্বাণ ওখানেই দাঁড়িয়ে রইল। প্রাণেশার কাজকর্ম দেখে তার প্রচণ্ড হাসি পাচ্ছিল। তবে রান্না করতে না জানলেও তার এই চেষ্টাটা উপভোগ্য ছিল। সবশেষে গরম গরম কফি তৈরী করে, এক কাপ তার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে প্রাণেশা বলল,

‘বাড়িতে কাজ করার প্রয়োজন পড়ত না। তাই শেখা হয়নি। এতগুলো মানুষ, আমি কী কাজ করব? এই কারণে কখনও রান্নাঘরের ধারেকাছেও যাইনি। তাইবলে এক কাপ কফি বানাতে পারব না? এতটাও অকর্মা নই, যতটা তোমরা ভাবো।’

চমৎকার করে হেসে কফির কাপ হাতে নিয়ে তাতে চুমুক দিল অনির্বাণ। প্রশংসাসূচক বাক্য আওড়াল,
‘আসলেই তো। কে বলে আমার বউ অকর্মা? আমার বউ যে কত গুণী, সেটা একদিন সবাই জানবে। শুধু ধৈর্য্য ও মনের জোর নিয়ে শেষপর্যন্ত তোকে লড়তে হবে, প্রাণ।’

কফি হাতে নিয়েই নিজের রুমে গেল অনির্বাণ। ল্যাপটপ মেলে গুরুত্বপূর্ণ একটা মেইলে চোখ বুলালো। প্রাণেশাও রুমে এসে কফি খেতে খেতে বুকশেলফ গুছিয়ে নিল। যতক্ষণ ঘুম না আসছে, ঘরের টুকিটাকি কাজগুলো করছিল সে। একটা সময় জানালা দিয়ে বাইরের দিকে দৃষ্টি পড়ল। পাশের বিল্ডিংয়ে বিয়ের তোরজোড় চলছে। ডিজে গান বাজিয়ে একদল কিশোর-কিশোরী ছাদে এসে নাচছে। পর্দা সরিয়ে বেশ কিছুক্ষণ সবার এই নাচানাচি দেখল প্রাণেশা। সময় কত হলো খেয়াল করল না। সময়ের সাথে সাথে চারপাশের আলো নিভে গেল। গান বন্ধ করে কিশোর-কিশোরীও চলে গেল। চারদিক কেমন শুনশান ও ভীষণ শান্ত মনে হলো। ভাই-বোন নিয়ে জীবনটাকে হেসেখেলে, হৈ-হুল্লোড় করে কাটিয়ে দেয়া মেয়েটি হঠাৎ আবিষ্কার করল, এই শহরে সে প্রচণ্ড একা। চেনা মানুষ, চেনা পরিবেশ কিছুই নেই। এসব ভাবতে গিয়ে খুবজোর কান্না পেল। জানালায় মাথা ঠেকিয়ে বাড়ির সবার কথা মনে করে অনেকক্ষণ নীরব কান্নায় গাল ভাসাল। কান্না থামলে নিজেকে মানিয়ে-বুঝিয়ে, জোরপূর্বক ঘুমানোর চেষ্টায় বিছানায় পিঠ ঠেকাল। তাতেও ঘুম এলো না। উলটে দুঃস্বপ্নেরা ভীড় জমাল চোখে। আবার উঠে বসলো। রুমের ভেতর পায়চারী করতে করতে, ঘড়িতে চোখ দিয়ে দেখল, রাত তিনটা। রুমের দরজা খুলে শব্দহীন পায়ে বেরিয়ে এসে, অনির্বাণের রুমের দিকে উঁকি মেরে দেখল, তখনও একইভাবে কাজ করছে। তাকে উঁকিঝুঁকি মারতে দেখে অনির্বাণ বলল,

‘ঘুমাসনি?’

প্রাণেশা দু’দিকে মাথা নেড়ে বলল,
‘ঘুম আসছে না।’

নতুন জায়গায় ঘুম না হওয়াটা স্বাভাবিক। প্রাণেশার অসুবিধা বুঝতে পেরে অনির্বাণ বলল,
‘এখানে আয়, আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।’

শুধু ঘুম আসছিল না, এটা নয়। অকারণ দুঃশ্চিন্তা ও দুঃস্বপ্ন তার স্বস্তি কেড়ে নিচ্ছিল। একা ঘুমাতে ভয় হচ্ছিল, আবার নতুন জায়গায় মানিয়ে নিতেও অসুবিধা হচ্ছিল। ডাক শুনে ধীরস্থির পায়ে হেঁটে হেঁটে সামনে এসে বলল,

‘তোমার অসুবিধা হবে না তো?’

অনির্বাণ ল্যাপটপ বন্ধ করে, চোখের চশমাও খুলে রাখল। রুমের দরজা আটকে লাইট অফ করে একপাশে প্রাণেশাকে ঘুমানোর জন্য যথেষ্ট স্পেস দিয়ে অন্যপাশে নিয়ে শুয়ে পড়ল। হাত বাড়িয়ে প্রাণেশার মাথার চুলের ফাঁকে আঙুল নেড়েচেড়ে বলল,

‘খুব হবে। তোকে আদর না করে ঘুমাতে হবে। অসুবিধা না হয়ে পারে?’

‘ছিঃ, সারাক্ষণ এসব কী কথা বলো? তোমার লজ্জা করে না?’

‘আমি এত লজ্জা দেখিয়ে কী করব? খাব না কি মাথায় দেব? লজ্জা তো তোর হওয়া উচিত। বিবাহিত পুরুষটাকে দূরে দূরে রেখে শাস্তি দিচ্ছিস।’

চট করে অনির্বাণের ঠোঁটের ওপর আঙুল রেখে কিছু একটা ভাবল প্রাণেশা। তারপর বলল,

‘আমি কোথায় শাস্তি দিচ্ছি? তুমি নিজেই তো এই শাস্তির ব্যবস্থা করেছ।’

অনির্বাণ জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালে ফটাফট তার টি’শার্টের সবকটা বোতাম খুলে, টি’শার্ট সামান্য মেলে ফাঁক দিয়ে নিজের মাথা গলিয়ে দিল প্রাণেশা। কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলল,

‘বিবাহিত পুরুষটা তো জানে, তার প্রাণ তাতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। তাহলে দূরে সরিয়ে রাখল কেন?’

মুচকি হেসে প্রাণেশাকে কাছে টেনে নিল অনির্বাণ। সম্পূর্ণ মুখজুড়ে ছোটো ছোটো চুমু এঁকে বলল,
‘আমি তো তোর সুবিধার জন্যই স্পেসটা দিলাম।’

‘উঁহু, তুমি স্পেস দাওনি। আমাকে শাস্তি দিচ্ছিলে। ডিভোর্সের কথা বলেছিলাম বলেই…।’

কথার ফাঁকে ফাঁকে প্রাণেশার ঠোঁটদুটো অনবরত কাঁপছিল। আঙুলের আলতোস্পর্শে কম্পনরত ঠোঁট ছুঁয়ে ছুঁয়ে অনির্বাণ বলল,
‘হুস্…। সময় ও সম্পর্কটা কাছে আসার, ভালোবাসার, প্রাণ। ভাঙন কিংবা বিচ্ছেদের নয়।’

‘দুরে সরিয়ে এখন আবার ভালোবাসা দেখানো হচ্ছে। তোমার এই দুই নম্বরি ভালোবাসার কোনো দরকার নেই আমার। কী করব এই ভালোবাসা দিয়ে? দুইবেলা পানি খাব?’

এরকম একটা সিচুয়েশনে এসে, প্রাণেশার মুখে এই কথা শুনে হতভম্ব হয়ে গেল অনির্বাণ। গোলগোল চোখে তাকিয়ে থেকে বলল,

‘কী বললি তুই? দরকার নেই?’

‘ঠিকই তো বলেছি। এত ভালোবাসা দিয়ে কী হবে?’

‘কিছু হোক বা না হোক দশবারোটা আণ্ডাবাচ্চা হবে।’

‘দশবারোটা! আমার এইটুকু পেটকে কি তোমার পানির টাংকি মনে হচ্ছে? একসাথে আমি এতজনকে জায়গা দেব কী করে? আশ্চর্য! এ কেমন আবদার? কেউ কীভাবে একসাথে এত বাচ্চাকাচ্চা চাইতে পারে? জানের মায়া নেই? এইটুকুন মেয়ে আমি…।’

প্রাণেশার কথা শুনে হো হো শব্দে হেসে উঠল অনির্বাণ। হাসতে হাসতে হাতের বাঁধন আরও ধীর করে প্রাণেশাকে রাগাতে বলল,
‘চাইতে দোষ কী? বাচ্চাকাচ্চা আল্লাহর অশেষ রহমত। আমি এই রহমত থেকে বিতাড়িত হতে চাই না, বউ। তাইতো সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কোনো ধরনের পরিবার-পরিকল্পনা করব না। ‘দুটি সন্তানের বেশি নয়, একটি হলে ভালো হয়’ এই স্লোগানের দিকে ফিরেও তাকাব না। আমার স্লোগান হবে, ‘দশটি সন্তানের কম নয়, বিশটি হলে বেশি ভালো হয়।’ আর তারজন্য, প্রতি বছর টুইন বেবি নিয়ে গিনেসবুক অফ ওয়ার্ল্ডরেকর্ডসে নিজের নাম লেখাব। রাজি…?’

যেভাবে আহ্লাদী হয়ে টি’শার্টের ফাঁক দিয়ে ঢুকেছিল, সেভাবেই বেরিয়ে এলো প্রাণেশা। শব্দ করে দুটো হাতজোড় করে বলল,

‘মাফ চাই…। তোমার বউকে দিয়ে এ কাজ হবে না। আমি এ পথে নাই। বাচ্চাকাচ্চা ও গিনেসরেকর্ড নিয়ে কোনো স্বপ্ন আমার নাই। দূরে যাও…। দূরে গিয়ে তুমি আরেকটা বিয়ে করো। বিশটা নয়, একশোটা আণ্ডাবাচ্চা দিয়ে ওয়ার্ল্ডরেকর্ড করো। তাতে আমার কোনো আপত্তি নাই।’

***

চলবে…

মাহাশাদ | ই-বুক

⚫ খণ্ডাংশ –

-‘এ্যাই ভ্রমর, ভ্রমর! কোথায় তুমি?’

হাতে একটা ছোট্ট প্যাকেট নিয়ে বাসায় প্রবেশ করল শাদাব। রান্নাঘর ও রুম খুঁজে মাহদিয়াকে না পেয়ে, রুমের বারান্দা ও বসার ঘর বাদ রাখছে না। সব জায়গাতেই অর্ধাঙ্গিনীকে খুঁজছে আবার গলা উঁচিয়ে ডাকছে। কণ্ঠে হাজারও মুগ্ধতা, আকুলতা। হৃদয়ের স্পন্দন মাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার ন্যায়। তবুও প্রাণপ্রিয় মানুষটা দু’চোখের বাইরে। অস্থির মন নিয়ে রুমে প্রবেশ করে আবারও মাহদিয়াকে ডাকতে চাইল শাদাব। তক্ষুণি কুট করে একটা শব্দ হলো। আধভেজা শরীর নিয়ে ওয়াশরুমের দরজা সামান্য ফাঁক করে তাকাতেই শাদাব বলল,

-‘এ্যাই, তুমি ওয়াশরুমে কী করছ এখন? এতক্ষণ ধরে গলা ফাটিয়ে ডাকছি। মহারানীর হুঁশবুদ্ধি কোথায় উড়ে গেল?’

-‘শাওয়ার নিচ্ছি তো। এজন্য তোমার ডাক শুনতে পাইনি।’

শাদাব তীক্ষ্ণ চোখে তাকাল। হাতের প্যাকেট বিছানায় রেখে হাওয়ার বেগে দরজার সামনে গিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলল,

-‘রাত দশটায় কীসের শাওয়ার? তা-ও এই কনকনে শীতে, ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা কুল কুল মেজাজে!’

শাদাবের বলার ধরন দেখে ফিক করে হেসে ফেলল মাহদিয়া। বলল,
-‘আর বোলো না। রান্না করতে গিয়েছিলাম, হাত থেকে গরম তেলসমেত কড়াইটা উপরে পড়ে গেল। পুরো ড্রেস তো নষ্ট হলোই, সাথে…।’

কথা শেষ করার আগেই ওয়াশরুমের দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করল শাদাব। মাহদিয়া ভরকে গিয়ে বলল,

-‘কী হলো? তুমি আবার এখানে আসলে কেন? পাঁচ মিনিট অপেক্ষা কোরো আসছি।’

শাদাব শুনল না। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে মাহদিয়ার হাত-পা, পেট-পিঠ সবকিছু চেক করতে লাগল। দুঃশ্চিন্তাগ্রস্থ, মলিন চেহারা নিয়ে বলল,

-‘কোথায় পুড়েছে, দ্যাখাও। রান্নাঘরে যাবে কেন তুমি? রান্নার কাজ তো রেহনুমা সামলে নিতে পারত। কে বলেছে কাজ দ্যাখাতে গিয়ে অকাজ করতে?’

-‘পুড়েনি কোথাও। তুমি যাও। তেল খুব বেশি গরম ছিল না।’

-‘তবে শাওয়ার নিতে আসলে যে!’

প্লাজো খানিকটা উপরে তুলল মাহদিয়া। পুরো পা তেলে মাখামাখি। হাতেও। পেটে যতটুকু লেগেছে, সেটুকু আবার জামায় মাখামাখি হয়ে শরীরের সাথে লেপটে গেছে একদম। বড়ো অসময়ে মাহদিয়াকে এমন তৈলাক্ত শরীরে আবিষ্কার করে শব্দ করে হেসে ফেলল শাদাব। আঙুলের ভাঁজে আঙুল আটকে কানের নিচে অধর দাবিয়ে বলল,

-‘আজ তো তোমাকে একদম অন্যরকম লাগছে।’

-‘তোমার বউ বোধহয় পালটে গেছে, এজন্যই আজ তাকে অন্যরকম লাগছে।’

-‘উঁহু, প্রশ্নই আসে না। আমার বউ একেক সময় একেক রূপে আমার সামনে নিজেকে প্রেজেন্ট করে। আমি তখন তার ওইসব ভিন্ন ভিন্ন রূপ দ্যাখতে দ্যাখতে মাতাল হতে থাকি। এইযে, তোমাকে এইভাবে দ্যাখে নিজেকে এখন বড্ড উন্মাদ মনে হচ্ছে আমার। এটা কি আমার দোষে? না-কি তোমার এই ভিন্ন রূপে?’

-‘ইন্না-লিল্লাহ্। এখন মাতাল হইয়ো না প্লিজ। হুঁশে ফিরো।’

-‘কীসের হুঁশ? কোনো হুঁশ-টুঁশে ফেরা হবে না আজ। মাতাল আমি হবই। দারুণ এক অভিজ্ঞতা হবে আজ। চলো না, একটু রোমান্স করি!’

মাহদিয়া জোরপূর্বক শাদাবকে ধাক্কা মেরে ওয়াশরুম থেকে বের করে দিয়ে বলল,
-‘হয় এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নেশা দূর কোরো, নয় কাঁথা-বালিশের সাথে রোমান্স কোরো। আমি গোসল শেষ করে আসি। এরপর তুমি ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং-এ আসবে।’

কথা শেষ সঙ্গে সঙ্গে ওয়াশরুমের দরজা আটকে দিল মাহদিয়া। শাদাব রুম থেকে চিৎকার দিয়ে বলল,
-‘এ্যাই, তুমি এত বেরসিক কেন গো? কোথায়, বর বাইরে থেকে এসেছে, তাকে একটু আদর-যত্ন করবে, কিছু খাবে কি-না জিজ্ঞেস করবে। তা না করে তুমি তাকে ধাক্কা দিয়ে বাইরে ফেলে দিলে! ঠিক আছে। রাত গভীর হোক। তখন দ্যাখব, হাড়কাঁপানো শীতে আমার বুকের ভেতর কে এসে ঘাপটি মারে। সুযোগ আসলে আমিও এমন বেরসিক বউকে জোরসে একটা ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিব।’

***

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ