Monday, October 6, 2025







প্রাণের পুষ্পকুঞ্জ পর্ব-১০

#প্রাণের_পুষ্পকুঞ্জ
লেখনীতে : তামান্না বিনতে সোবহান
পর্ব – ১০

সম্পূর্ণ অপরিচিত একটা অনুভূতির সাথে পরিচয় অথচ খুবই আকাঙ্ক্ষিত! আবেগ-অনুভূতিকে দূরে ঠেলে দিতে গিয়ে যে মেয়ে কোনোদিন ঘর-সংসারের স্বপ্ন দেখেনি, কাউকে ভালোবাসেনি, সে-ই আজ বিবাহিত জীবনের পরিপূর্ণ একটা সুখকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখেছে। এই অনুভূতি তাকে শুধু সম্পর্কটাই দামী বুঝায়নি, সে-ও যে দামী, আপাদমস্তক এক নারী, সেটাও বুঝিয়ে দিয়েছে। সকাল থেকে একটুকরো সুখকর অনুভূতির ঢেউ খেলে যাচ্ছে তার মনের সমুদ্রজুড়ে। সে-ই ঢেউয়ে দুলছে প্রাণেশার দেহ-মন। সেটুকু লুকাতেই কাজের অজুহাতে বেডরুম ত্যাগ করে অন্যরুমে এসে ঘাপটি মেরেছে প্রাণেশা। রুম-লাগোয়া বেলকনিতে রাখা বেতের সোফাতে বসে ঢাকা শহরের প্রথম সূর্যোদয়কে উপভোগ করছে সে। লাল টুকটুকে রং ধারণ করে সূর্য্যিমামা সবে আকাশের কোণে উঁকি দিয়েছে। ধীরেধীরে আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে ধরনীতে। এই রোদ্দুর যেন নতুন ভোর নিয়ে এলো জীবনে। ঠোঁটের কোণে লাজুক হাসি নিয়ে সোফায় হেলান দিয়ে চোখবুঁজে পড়ে রইল প্রাণেশা। আপাতত অনির্বাণকে ফেইস করা কঠিন। লজ্জার। বেচারা এখনও ঘুম থেকে উঠেনি। হাত বাড়িয়ে কাছে না পেলেই লাফ দিবে। ভাবতেই হাসি পেল তার। গতরাতের কিছু দুষ্টুমিষ্টি খুঁনসুটিময় মুহূর্ত মনে পড়ল। ক্ষণে ক্ষণে রেগে যাবে, গাল ফুলাবে, রাগ দেখিয়ে মুখ ফিরিয়ে নিবে, আবার বলবে –

‘ঝগড়াঝাটি, তর্কাতর্কি যদি সমান-সমান হয়, ভাব-ভালোবাসাও সমান-সমান হবে। কোনো ফাঁকিবাজি নাই।’

অনির্বাণ যে এত রোমান্টিক, এত যত্নে বউকে ভালোবাসতে জানে, সেটুকু জেনে ক্ষণে ক্ষণে ভীষণ লজ্জায় লজ্জাবতী হচ্ছে প্রাণেশা। এত লজ্জা পাচ্ছে যে, নিজেকে আয়নার সামনে দাঁড় করানোর চিন্তা মাথায় এলেই সর্বাঙ্গে কাঁপন সৃষ্টি হচ্ছে। কী যন্ত্রণা! সমস্ত ভাবনার দৌড় থামিয়ে টাওয়েল নিয়ে ওয়াশরুমে প্রবেশ করল। কতক্ষণ পর বের হতেই কলিংবেল বেজে উঠল। এত সকালে কে আসবে? ভেজা চুলে টাওয়েল পেঁচিয়ে, পরিপাটি হয়ে ডোর খুলতেই দেখল, ত্রিশোর্ধ এক নারী দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। তাকে দেখেই দাঁতপাটি বের করে হেসে বলল,

‘ওমা! ভাবী যে। চলে এসেছেন?’

প্রাণেশা একটু অবাক হলো। বলল,
‘আপনি কে? আমাকে চিনেন কী করে?’

মেয়েটা মুখের সুপারি চিবোতে চিবোতে উত্তর দিল,
‘আমি হনুফা। এই অ্যাপার্টমেন্টের সব বাসায় কাজ করি। ভাইজান গতকাল বলছিলেন, আজ থাইক্যা সাতটায় আসতে। তিনি দেশেরবাড়ি থাইক্যা বউ নিয়ে আসবেন। এই ফ্লাটে তো আর কোনো মাইয়া মানুষ নাই। আপনি-ই। তাই মনে হইলো, আপনিই ভাইজানের বউ।’

‘কথায় যুক্তি আছে। ভেতরে আসুন।’

হনুফা ভেতরে প্রবেশ করে ডোর আটকে দিল। প্রাণেশা বলল,
‘আপনি নাশতা বানান রোজ?’

‘না… ভাবীজান। আমি আসি নয়টায়। এর আগেই ভাইজান নিজে নাশতা বানাইয়া খাইয়া ফেলেন। আমি আইলে সবজি কাটাকুটি কইরা ভাত-তরকারি রান্না করি। বাসনকোসন মাজি, কাপড়চোপড় ধুই, আর ঘর পরিষ্কার কইরা তারপর যাই।’

‘ওহ…। আপনি এক কাজ করবেন, আজ থেকে আমাকে কিছু রেসিপি শেখাবেন। আমি একদমই রান্নাবান্না পারি না। যদি কোনোদিন আপনি না আসেন, খাব কী?’

হনুফা একগাল হেসে রান্নাঘরে এসে চা-নাশতার আয়োজন শুরু করল। কোথায় কী রাখা আছে সব তার মুখস্থ। সে চটপটে হাতে কাজ করতে করতে বলল,

‘রেস্টুরেন্টে অর্ডার দিবেন। ভাইজান তো এইটাই করেন।’

‘এখন থেকে আর করবে না। এসব আনহেলদি খাবার খেলে বড়োবড়ো রোগ হয়।’

‘আমিই তো রোজ ভাইজানরে এইসব বলি। উনি আমার কথা কানেই নেন না। এবার আপনি আসছেন, নিশ্চিত সব ঠিক হইয়া যাইব। আপনি আমার পাশে দাঁড়াই থাকেন, আমি দেখাইতেছি ক্যামনে কী করতে হয়! আগে কন, নাশতায় কী খাইবেন? রুটি-সবজি না কি পোলাও-খিচুড়ি?’

আপাতত রুটি-সবজিই যথেষ্ট। ইচ্ছে জানিয়ে হনুফার পাশে দাঁড়িয়ে রইল প্রাণেশা। হনুফা চা বানালো আগে। দু’কাপ প্রাণেশার হাতে ধরিয়ে দিয়ে এককাপ নিজের জন্য রাখল। চা খেতে খেতে রুটি বেলার কাজ সেরে নিবে। প্রাণেশা চা হাতে নিয়ে রুমে প্রবেশ করে দেখল, অনির্বাণ তখনও গভীরঘুমে। ডাকাডাকি করতে লজ্জা লাগছিল দেখে, গরম চায়ের কাপ হাতে নিয়ে অনির্বাণের সবকটা আঙুল ডুবিয়ে দিল চা’তে। গরম ছ্যাঁকা খেয়ে তড়াক করে লাফ দিল অনির্বাণ। ঘটনা কী বুঝতে বেগ পেতে হলো। এরমধ্যেই প্রাণেশা দূরে সরে গিয়ে শব্দ তুলে হেসে উঠল। ভেংচি কেটে বলল,

‘আরও ঘুমাও।’

অনির্বাণ হাই তুলতে তুলতে বলল,
‘তোর মতো একটা বদ বউ জীবনে থাকলে সব পুরুষের জীবন ত্যানাত্যানা হবে নিশ্চিত। আলাদিনের দৈত্য এসেও আটকাতে পারবে না।’

আরও কিছু বলতে চাইছিল অনির্বাণ, পারল না। তার আগেই প্রাণেশা তার দিকে তেড়ে এসে বলল,
‘আমি বদ?’

‘হ্যাঁ… সন্দেহ আছে?’

‘অফকোর্স। আমার মতো একটা মেয়ের সাথে বদ শব্দটা যায়ই না।’

‘কতটা যায় সেটা আমার চেয়ে ভালো আর কেউ জানে না। সর এখন…। কাছে এলে জাপটে ধরব।’

‘একটা সামাল দিতে গিয়ে মেজাজের দফারফা ঘটে যাচ্ছে, উনি না কি আবার বিশটা একসাথে পালবেন। দেখা যাবে, কেমন পারো।’

অনির্বাণ একইভাবে বলল,
‘ওই বিশটার একটাও তোর মতো হবে না। দেখিস…।’

‘হ্যাঁ, বসে বসে স্বপ্ন দেখো।’

‘চ্যালেঞ্জ করছিস?’

প্রাণেশা দাঁতপাটি বের করে হেসে বলল,
‘হ্যাঁ করছি। নেক্সট জেনারেশন এই প্রাণের ফটোকপি হবে।’

এমন হলে অনির্বাণ শেষ! কিন্তু তবুও… আশা রাখতে দোষ কী? এই সুন্দর সকালে অকারণ ঝগড়া ও তর্ক করতে ইচ্ছে হলো না তার। তা-ই ঝটপট ওয়াশরুমে প্রবেশ করল। প্রাণেশা চায়ে চুমুক দিতে দিতে জানালার পর্দা ও কাঁচ সরিয়ে রুমের অন্যপাশের দরজাটাও মেলে দিল। আর সাথে সাথেই চমকে গেল। এই বেলকনিতে অনেকগুলো ফুলের টব। তা-ও নিচে, গ্রিলে, আবার উপরেও। প্রত্যেকটা টবে বিভিন্ন ধরনের ফুলের গাছ। হতবাক দৃষ্টি নিয়ে ফুলের গাছের দিকে তাকিয়ে দু’হাতে তাদের ছুঁয়ে দেখার লোভ হলো ভীষণ। হাত বাড়িয়ে ছুঁয়েও দিল। ছোট্ট একটা বেলি ছিঁড়ে এনে ঘ্রাণ শুঁকে কানের পিছনে গুঁজে দিয়ে রান্নাঘরে এসে হনুফার পাশে দাঁড়াল। হনুফা রুটি বেলা শুরু করেছে। প্রাণেশা একটা রুটি সেঁকতে গিয়ে পুড়িয়ে ফেলে আফসোসের সুরে বলল,

‘ইশ্, পুড়ে গেল তো।’

সেটা দেখে হনুফা বলল,
‘একদিনে এইসব শিখতে পারবেন না, ভাবীজান। সময় লাগব। কোনো টেনশন নাই। আমি সব শিখাইয়া দিমু।’

একচুলোয় রুটি সেঁকতে দিয়ে অন্য চুলোয় আবার চা বসাল প্রাণেশা। আগের কাপ তো নষ্ট করে দিল। হনুফা তাকে চা বানাতে শেখাল। কতটুকু পরিমাণ চা’পাতা ও দুধ চিনি দিতে হয়, সেটাও শেখাল। ভীষণ ধৈর্য্য নিয়ে এককাপ চা বানিয়ে আবারও রুমে এলো। অনির্বাণ বিছানা পরিপাটি করছিল। প্রাণেশা বলল,

‘তুমি চা খাও, আমি রুম গুছাচ্ছি।’

অনির্বাণ গালে হাত দিয়ে বলল,
‘পারবি? পারলে কর দেখি।’

‘আশ্চর্য! সবসময় আমাকে এত অকর্মা ভাবো কেন?’

চা ধরিয়ে দিয়ে বিছানা পরিপাটি করল প্রাণেশা। ঝাড়ু এনে রুমটাও ঝাড়ু দিল। এতটাও অকর্মা সে নয়, যতটা সবাই বলে। বউয়ের এসব কাজকর্ম দেখে অনির্বাণ বলল,

‘তোর কাপড়চোপড় এখানেই রেখে দে। মানুষ একজায়গায়, কাপড় আরেক জায়গায়, কেমন দেখাচ্ছে না বিষয়টা?’

এরপর নিজের রুমের আলমারি দেখিয়ে বলল,
‘এটার ভেতর যথেষ্ট ফাঁকা। রাখতে পারিস।’

প্রাণেশা হাত বাড়িয়ে অনির্বাণের বুকের কাছে পাঞ্চ বসিয়ে বলল,
‘যা আমার, সেটার দখলদারি আমি এমনিতেই নিব। এসব আমাকে বলে দিতে হবে না।’

অনির্বাণ চায়ে চুমুক দিয়ে বলল,
‘হ্যাঁ, আর এজন্যই অনুমতি ছাড়া আমার গাছের ফুল ছিঁড়ে কানে গুঁজিয়েছিস।’

‘বেশ করেছি। আচ্ছা, তুমি তো কখনও গাছ লাগাও না। এখানে এত ফুলগাছ কবে থেকে?’

‘তোর মতো নিয়ম করে গাছ রোপণ করি না, কিন্তু এই জায়গাটার সৌন্দর্যের জন্য কয়েক ধরনের ফুলগাছ লাগিয়েছি। সুন্দর লাগছে না?’

প্রাণেশা বেলকনির দিকে দৃষ্টি দিয়ে বলল,
‘ভীষণ। আমার খুব শখ ছিল, কোনো একদিন একটা চমৎকার পুষ্পকুঞ্জ সাজাব। যেখানে শুধু ফুল আর ফুল থাকবে। আর একটা পর্ণকুটির থাকবে। আমি মাঝেমধ্যে সে-ই কুটিরে যাব আর নিজের মতো করে গাছেদের সাথে সময় কাটাব। এখন আর এই শখটা পূরণ হবে না, ভাবতেই কী খারাপ লাগছে আমার।’

অনির্বাণ কৌতূহলী হয়ে বলল,
‘কেন পূরণ হবে না?’

‘এই ইট-পাথরের শহরে আমি পর্ণকুটির পাব কোথায়?’

‘খুঁজলে পাওয়া যাবে হয়তো।’

‘কী জানি!’

দুষ্টুমিষ্টি খুঁনসুটির ফাঁকে নাশতাপর্ব শেষ হলো। নাশতা শেষ করেই তাড়াহুড়ো করে তৈরী হলো অনির্বাণ। আলমারি থেকে প্রয়োজনীয় কিছু কাগজপত্র বের করে, ওয়ালেট, ফোন ও গাড়ির চাবি হাতে তুলে বলল,

‘ফিরতে একটু দেরী হবে। ওয়ার্কশপ থেকে কোর্টে যাব। কিছু প্রয়োজন হলে দারোয়ানকে ফোন করিস, এনে দিবে।’

প্রাণেশা জানতে চাইল,
‘কেন?’

অনির্বাণ বউয়ের বিস্মিত চোখজোড়ায় ঠোঁট ছুঁইয়ে কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল,
‘একটা ছোট্ট সারপ্রাইজ রেডি করছি। সেটা কী, এখুনি বলা যাবে না। বসে বসে টেনশন কর। ঠিক আছে?’

***

আগামী সপ্তাহে যেহেতু প্রতিযোগিতা, প্রাণেশা স্টাডিটেবিল থেকে নড়ছেই না। হনুফা কাজ শেষ করে চলে যাওয়ার পর সে খাওয়া-দাওয়া বাদ দিয়ে বই নিয়ে বসেছে। একগাদা কুইজের বই তার সামনে। যেগুলো আগের জানা, শেখা সেগুলোও আবার পড়ছে। একেবারে ঠোঁটস্থ করছে, যেন কোনোভাবেই ভুল না হয়। পড়ার মাঝখানেই বাড়ি থেকে কল এলো। ভিডিওকলের ওপাশে সব কাজিনদের দেখে বই রেখে রুমের বেলকনিতে গেল প্রাণেশা। আইশা-মাইশা একসাথে বলল,

‘ঢাকায় গিয়ে তুমি আমাদের ভুলে গেছো, ভাবী। সকাল থেকে একবারও ফোন দাওনি।’

প্রাণেশা বিব্রত হলো। ব্যস্ততায় ভুলেই গিয়েছিল, বাড়িতে ফোন করা হয়নি। সে নিজের দিক স্পষ্ট করে বলল,
‘জানিসই তো, সামনে প্রতিযোগিতা। কাজ শেষ করে আমি পড়তে বসেছিলাম। ওই দেখ, এখনও টেবিলের ওপর একগাদা বই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা।’

ব্যাকক্যামেরা দিয়ে রুমের স্টাডিটেবিল দেখাল প্রাণেশা। ওপাশে সবাই খিলখিলিয়ে হেসে উঠল। নাহিয়ান বলল,
‘তুই তোর মাথাটাকে লাইব্রেরী বানিয়ে ফেল। তাহলে আর একগাদা বইপত্র টেবিলের ওপর রাখতে হবে না। ওগুলো তোর মাথাতেই ঠেসে রাখতে পারবি।’

প্রাণেশা ঝগড়ুটে মেজাজে বলল,
‘দূরে আছি বলে ভাবছিস বেঁচে গিয়েছিস, তাই না? ওইবাড়ি আমি সারাজীবনের জন্য ছাড়িনি। যখন আসব না, ঠ্যাং ভাঙব তোর। দেখে নিস…।’

ওপাশ থেকে রাফিয়ান বলল,
‘আমার দুলাভাই কই, সোনাপু?’

অনির্বাণ বাসায় থাকলে এখন শালা-দুলাভাইতে একদফা যুদ্ধ হয়ে যেত। রাফিয়ানের কথাতে সবার হাসির মাত্রা বেড়ে গেল। সে-ই হাসিতে তাল মিলিয়ে প্রাণেশাও হাসতে হাসতে বলল,

‘তোর দুলাভাই তো বাসায় নেই, রাফি।’

রাদিন-রামিশা, রেদোয়ান কেউ বাদ গেল না। সবাই-ই দুলাভাই শব্দটা নিয়ে মজা করল। সবশেষে ফোন নিল রূপকথা। ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে সিরিয়াস কণ্ঠে বলল,

‘সব ঠিক আছে তো, প্রাণেশা?’

মুচকি হেসে প্রাণেশা উত্তর দিল,
‘হ্যাঁ।’

‘দুই ঝগড়ুটে মানুষ ঠিকঠাকমতো সংসার করতে পারবে কি না, এই নিয়ে আমার তো চিন্তার শেষ নেই। সারাক্ষণ ভয়ে ভয়ে থাকছি।’

‘কেন?’

সবার থেকে দূরে সরে গেল রূপকথা। স্বর খাদে নামিয়ে বলল,
‘এই সম্পর্কটা তো লাভ ম্যারেজ না, আবার অ্যারেঞ্জ ম্যারেজও না। যা হয়েছে সবটাই জোরাজুরি করে চাপানো হয়েছে। এ যাবৎ যা কিছু তোর ঘাড়ে জোর করে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে, সেটাতেই গণ্ডগোল হতে দেখা গেছে।’

‘তেমন কিছু হবে না, ভাবী। আমি সবকিছু মন থেকে মেনে নিয়েছি।’

‘মানিয়ে নিতে পারবি তো?’

‘ধীরেধীরে অভ্যাস হয়ে যাবে। আর অভ্যাস হয়ে গেলে মানিয়ে নেয়া কঠিন হবে না, ভাবী।’

‘অনিচ্ছায় কিছু করিস না আর সম্পর্কটাকেও বোঝা ভাবিস না। একটু যত্ন নিয়ে এটাকে মূল্যায়ন করতে পারলেই সুখী হবি।’

‘জোরপূর্বক যা কিছু চাপানো হয়েছে, সেসবকেও তো যত্ন নিয়ে সফল করতে চেয়েছি। সাকসেস হলাম কই? তবে এটা নিয়ে ভেবো না। যেহেতু বিয়ে ও বন্ধন সারাজীবনের ব্যাপার, আমি অবশ্যই এর ব্যাপারে যথেষ্ট যত্নশীল হব। হয়তো আমাদের মধ্যে তথাকথিত প্রেমিক-প্রেমিকাদের মতো ভালোবাসাটা গড়ে উঠেনি, তবে সম্পর্কের প্রতি অদৃশ্য এক টান ও অধিকারবোধ জন্ম নিয়েছে। আমাদের মধ্যে এতটাও দূরত্ব আর নেই যতটা দূরে থাকলে সম্পর্কে ভাঙন আসতে পারে।’

রূপকথা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে তুলে বলল,
‘তুই যে এটা বুঝতে পেরেছিস, তাতেই আমি শান্তি পাচ্ছি। বিশ্বাস কর, আমার এত খুশি লাগছে। বাড়ি এলে দু’জনকে একটা স্পেশাল গিফট দেব।’

‘তাই? তুমি স্পেশাল গিফট দিবে, আর তোমার দেবর গেল, সারপ্রাইজের ব্যবস্থা করতে। দু’জনে কী প্লান করেছ কিছু?’

‘আরেহ্ না। আমি ওর সাথে নাই। অনি কী করছে আমি জানি না। তবে আমি কী করব সেটা সময় এলেই দেখবি।’

‘আচ্ছা। এখন ফোন রাখি? পড়তে বসব।’

‘ঠিক আছে। ভালো থাকিস।’

পড়তে বসে দুপুর গড়িয়ে বিকেল নেমেছে অথচ দুপুরের খাবার খায়নি প্রাণেশা। কাজের চাপে অনির্বাণও ফোন দেয়নি। ফ্রি হয়ে যখন বিকেলের দিকে কল দিল, প্রাণেশা তখনও বইয়েই মুখ গুঁজে রাখল। ঠোঁট নাড়তে নাড়তে ফোন কানে ঠেকাল। ওপাশ থেকে অনির্বাণ বলল,

‘দুপুরে খেয়েছিস কিছু?’

প্রাণেশা ফ্যাকাসে মুখে বলল,
‘না… খাইনি।’

‘কেন?’

‘একা খেতে ভালো লাগছে না।’

‘বাড়ির সবাইকে মিস করছিস?’

‘একটু-আধটু। ক্ষিধে টের পেয়ে খেতে গেলাম, ওমা খাবার দেখি আমার গলা দিয়ে নামতেই চাইছে না। শেষে এককাপ চা নিয়েই বসে গেছি। এখন ওটাই গিলছি।’

অনির্বাণ হতাশ কণ্ঠে বলল,
‘এমন করলে হবে? নিজের যত্ন নিবি না? তুই যদি ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া না করিস, তাহলে তো দুর্বল হয়ে পড়বি। আর তুই দুর্বল হলে নেক্সট জেনারেশন কী করে আসবে? তোকে তো অলওয়েজ স্ট্রং থাকতে হবে, তাই না?’

সিরিয়াস মোমেন্টে এমন একটা কথা শুনে মেজাজটায় আগুন জ্বলে উঠল প্রাণেশার। ঠোঁটমুখ বাঁকিয়ে বলল,
‘গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল – ব্যাপারটা এমন হয়ে যাচ্ছে না?’

অনির্বাণ উচ্চস্বরে হেসে উঠে বলল,
‘ছাড়… খেয়ে নে। টিপিক্যাল বউদের মতো আচরণ করিস না। বর না খেলে বউ খেতে পারবে না, এমন কোনো নিয়মে আমি বিশ্বাসী নই। তুই খেতে বোস। সময়মতো না খেলে অ্যাসিডিটি বাড়বে। ফিরে এসে একসাথে ডিনার করব।’

‘যদি না খাই?’

‘একটা চড় মারব।’

‘দূরে থেকে চড় মারতে পারবে তুমি?’

‘খুব পারব। ওই মেয়েটা যেভাবে ‘ফ্লায়িং কিস’ ছুঁড়েছিল। সেভাবেই ‘ফ্লায়িং স্ল্যাপ্’ মারব। মার খেতে না চাইলে এখুনি খেতে বোস। যা…।’

‘ছিঃ তুমি এত নিষ্ঠুর হতে পারবে?’

‘খুব পারব। আদর-শাসন দুটোই আমি বুঝেশুনে করব।’

‘তুমি একটা…।’

কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে গেল প্রাণেশা। একা খেতে গিয়ে নিজের অজান্তেই অনির্বাণকে ভীষণ মিস করছিল। তাকে ছাড়া খেতে হবে ভেবেই খায়নি। সত্যিটা স্বীকার না করে বাড়ির সবাইকে টেনে এনে কাটিয়ে দিয়েছে। অথচ না বলা কথা নিমিষেই বুঝে নিয়েছে অনির্বাণ। সে ফোন কানে ঠেকিয়ে লাজুক হেসে বলল,

‘একটু তাড়াতাড়ি এসো।’

‘কোর্টে গেলে দেরী হবে। আমি মাত্র ওয়ার্কশপ থেকে বেরিয়েছি।’

প্রাণেশার কী হলো কে জানে! মন ভীষণ এলোমেলো হলো। চঞ্চল হলো। মনের ভেতর অসংখ্য অনুভূতিরা ডালপালা মেলল। সব অনুভূতিদের মুক্তি দিতে ইচ্ছে হলো। তবুও পারল না। দ্বিধা ও সংকোচ তাকে আটকে দিল। খানিক চুপ থেকে খুবই আস্তে অথচ দৃঢ়কণ্ঠে উচ্চারণ করল,

‘আই মিস ইউ, অনি।’

একহাতে ফোন কানে ঠেকিয়ে রেখে, অন্যহাতে মুখ ঢেকে ফেলল প্রাণেশা। ওপাশে অনির্বাণও থম মেরে থাকল কতক্ষণ। এরপর অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে ড্রাইভ সামলে নিয়ে বলল,

‘দিলি তো মেজাজের বারোটা বাজিয়ে। আমি একদম সিরিয়াস মুডে ছিলাম, প্রাণ। অথচ তোর এই কথা শোনে এখন আমার শুধু প্রেম-প্রেম পাচ্ছে। সিচুয়েশনটা রোমান্সের নয়। এইমুহূর্তে কোর্টে যাওয়াটা ইম্পর্ট্যান্ট। নয়তো আমি এখুনি ব্যাক করতাম। আর আমার লজ্জাবতী বউটার লাজরাঙা মুখ দেখে দু’চোখের তৃষ্ণা মিটিয়ে নিতাম।’

প্রাণেশা উত্তর না দিয়ে চুপ করে রইল। অনির্বাণ বলল,
‘মেজাজের বারোটা বাজানোর সাথে সাথে তুই আমার মনের মধ্যে বিরাট পরিবর্তন এনে দিলি, প্রাণ। চারপাশে শুধু প্রেমের মিউজিক বাজছে। এখন যেহেতু প্রেমের সময় নয়, তাই রাতে এর শোধ আমি অবশ্যই তুলব।’

এই কথায় ভরকে গেল প্রাণেশা। চেয়ার ছেড়ে লাফিয়ে উঠে বলল,
‘কী? কীসের শোধ?’

অনির্বাণ হাসতে হাসতে গানের সুরে বলল,
আদরে আদরে দেব ভালোবাসা।
সোহাগে সোহাগে দেব ভালোবাসা।
আকাশের নীল প্রান্ত ছুঁয়ে…
ভালোবাসা পড়ছে চুয়ে চুয়ে…
মুঠোভরে দেব তুলে…
মাখবে কলিজায়…
নজর না লাগে যেন চাঁন্দেরও গায়…।

***

চলবে…

⚫ খণ্ডাংশ | মনমোহিনী

এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে সড়কের মোড় ধরে হাঁটছে আদনান। কপালে চিনচিনে ব্যথার পাশাপাশি বুকের ভেতরটাও অদ্ভুত যন্ত্রণা হচ্ছে। এই যন্ত্রণা তাকে কাঁদাতে চাইছে। তবুও চিৎকার দিয়ে কাঁদতেও ইচ্ছে করছে না তার। সমস্ত যন্ত্রণাকে দামাচাপা দিয়েই শান্তি পাচ্ছে সে। সমানে বেজে যাচ্ছে ফোন। হাতে তুলে তানভীরের নাম্বার দেখে ফোন কেটে সাইলেন্ট করে পকেটে রেখে দিল সেটা। ভীষণ একা লাগছে আজ! এই একাকীত্বটা কারো সামনে প্রকাশ করতে চায় না সে। তাই এই অকারণ হাঁটাহাঁটিকেই সঙ্গী হিসেবে বেছে নিতে হয়েছে। হাঁটতে হাঁটতেই নোভার বলা কথাগুলো ভেবে চলেছে সে। কীসের পুরনো কথা! কেনই বা বাবা-ছেলে দু’জনকেই খারাপ বললো নোভা? কই, তার তো মনে পড়ে না; কখনো কোনো অবস্থায় নোভার সাথে বাড়াবাড়ি করেছে সে! তবে কেন এসব কথা আসবে?

একে একে নোভার সাথে কাটানো স্মৃতি কল্পনা করছে আদনান। খুঁনসুটি, হাসি-আনন্দ ছাড়াও কতশত কথার বাহানা, সেসব কথায়ও কোনোদিন ভুল করেও বাজে কোনো কথাই সে তুলেনি! তবুও কেন এই অযাচিত কথা উঠে আসলো? কোনো ভাবনাকে মিলাতে পারছে না আদনান। সবকিছু যেন মাথার ভেতর ঘুণপোকার মতো কিলবিল করে মাথাটাকে ভার করে তুলছে। চুলগুলো টেনে ছিঁড়ে ফেলতে ইচ্ছে কর‍ছে তার।

পুরোটা অন্যমনস্ক হয়েই হাঁটছিল সে। খেয়ালই করেনি কখন মাঝরাস্তায় চলে এসেছে। হঠাৎই একটা মোটর সাইকেল ফুল স্পীডে পাশ ঘেঁষে যেতে চাইলেই তড়িঘড়ি করে দূরে সরে গেল। কয়েক মিনিট হাঁটু ভাঁজ করে সড়কের সাইডে বসে রইলো। হঠাৎ করেই মায়ের বলা সেদিনের কিছু কথা, বিচে নোভার বলা গল্প, আর আজকে নোভার আচরণ এমনকি রেদোয়ান হাসানের জানাযায় না আসার কারণ সবমিলিয়ে দ্রুত একটা হিসাব কষলো আদনান। সোজা হয়ে উঠে দাঁড়িয়ে তানভীরকে ফোন করে বলল,
-‘আজ আমি ফিরছি না। নোভাকে সামলে রাখিস।’
-‘আসবি না মানে! কোথায় তুই এখন?’
-‘রাস্তায়।’
-‘রাস্তায় কী করছিস? বাইরে ঠাণ্ডা বাড়ছে আদি, যথেষ্ট কুয়াশাও ঝরছে!’
-‘ঝরুক! রাখছি।’
লাইন কেটে ফোনে নোভার পরীক্ষার রুটিনটা চেক করে নিল। আগামীকাল কোনো পরীক্ষা নেই দেখে একটু নিশ্চিত হলো সে। ঝটপট সেটা পকেটে রেখে টিস্যু বের করে কপালটা মুছে নিল এবার। রক্তটা কপালে বসে গেছে নিশ্চিত! টিস্যুতে উঠে আসছে না। টিস্যু ফেলে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে গাড়ির কাছাকাছি গিয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিল দ্রুত।

***

চলবে।

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ