#প্রণয়_ডোরে_বেঁধেছি
#পর্ব_১১
#নাজিয়া_শিফা ( লেখনীতে )
_______________________________
” ইরাবতী দাঁড়ান তো। ”
ইরা ক্যাম্পাসে পা রাখা মাত্র ই পেছন থেকে কেউ ডেকে উঠলো তাকে। এই সম্বোধন যে করেছে ইরা একটু আধটু চেনে তাকে। ডাক শুনে ইরা পেছনে ঘুরে তাকায়, সূচনা আজকে ভার্সিটি তে আসেনি, গত রাত হতে তার জ্বর। গত সপ্তাহেই তারা তাদের নতুন বাসায় উঠেছে। টানা কাজ করায় ধকলে হয়তো জ্বর উঠেছে সূচনার। এদিকে সামনের সপ্তাহে ই ইনকোর্স পরীক্ষা। এই সময়ে দুজনই যদি ভার্সিটি না আসে তাহলে তো হয় না।
ইরা লক্ষ্য করেছে এই লম্বাটে, সুদর্শন মুগ্ধ নামের ছেলেটা কিছুদিন যাবৎ তার পিছু নিয়েছে। ছেলেটা অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ছে, এই ভার্সিটিতেই। ইরার আশেপাশে যখন সূচনা না থাকে ছেলেটা ও তখনই ইরার সামনে আসে। যেমন এখন। ইরাকে এক দৃষ্টি তে তাকিয়ে থাকতে দেখে মুগ্ধ এগিয়ে আসে তার দিকে। চুলে হাত বুলিয়ে সামনের চুলগুলো পেছনে ঠেলে দিয়ে পকেটে হাত পুরে সটান হয়ে দাঁড়ায়। ইরা মনোযোগের সহিত সব খেয়াল করে৷
” হা করে তাকিয়ে থাকবেন না, আশেপাশের মানুষ মনে করবে মেয়েটা নির্ঘাত নির্লজ্জ যে চোখ দিয়েই ছেলেটা কে গিলে খাবে। ”
এহেন বাক্যে ইরার টনক নড়ে ওঠে, মুগ্ধর মুখের দিকে তাকায়। মুগ্ধর ঠোঁট জুড়ে বিস্তৃত হাসি, ইরা লক্ষ্য করেছে ছেলেটা যখন ই তার সামনে এসেছে হাসিমুখে এসেছে। হাসলে তাকে দারুন লাগে।
” এখনো তাকিয়ে আছেন! ”
ইরা দ্রুত গতিতে চোখ জোড়া সরিয়ে নেয়, ভারি লজ্জা লাগছে তার। সে এমন হা করে তাকিয়ে ছিল কেন! আশ্চর্য! ইরা এদিক ওদিক তাকিয়ে বললো,
” আপনি এভাবে ডাকা ডাকি কেন করেন! মানুষ কী মনে করবে! ”
” আমি আমার মুখ দিয়ে, কণ্ঠ দিয়ে আপনাকে ডাকি, মানুষের কী তাতে! ”
গা ছাড়া ভাব নিয়ে বললো ছেলেটা, ইরা ইতস্তত করে বললো,
” আমার থেকে কী চাই আপনার? রোজ রোজ না ডেকে একদিন বলে দিলেই হয়। ”
মুগ্ধ ভ্রু জোড়া কুঞ্চিত করে বললো,
” বলে দিব! ”
” বলে দিন, এভাবে আর ডাকাডাকি করবেন না। ”
” ওকেহ। শুনুন তাহলে..
ইরা চোখ জোড়া এবার ভালো করে মুগ্ধ তে নিবদ্ধ করে, মুগ্ধ মুখ গম্ভীর করে বলে,
” শুনুন, ভালো করে, কান খাড়া করে..
ইরা মনোযোগ দিল ভালো করে, মুগ্ধ মুখটা গম্ভীর করে কিছু বলতে নিয়েও সেই কথা আর বললো না। দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে হেয়ো স্বরে বললো,
” নাহ বলব না আপনি নিতে পারবেন না ছোট মানুষ। ”
কথাটা ইরার গায়ে লাগলো, মুগ্ধ কে এক প্রকার জোর করলো,
” আমি ছোট মানুষ না, যা বলার স্পষ্ট ভাবে বলুন। কী চাই আমার থেকে! ”
” আপনাকে ই চাই। ”
মুগ্ধ সাবলীলভাবে বলে দেয়, ইরা সত্যি সত্যি তব্দ খেয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। টু শব্দ ও করতে পারে না কোনো। মুগ্ধ ইরার ওপর খানিক ঝুঁকে ফিসফিসিয়ে বলে,
” আগেই বলেছিলাম নিতে পারবেন না, বাচ্চা মেয়ে। ”
ইরা এবার ও কোনো কিছু বলার মতো খুঁজে পায়না। মুগ্ধ তাকে পাশ কা টি য়ে চলে যায়। সেদিন আর সব গুলো ক্লাস করা হয়না ইরার। দুইটা ক্লাস করেই তাড়াহুড়ো করে বাড়ি ফিরে। তার অস্বস্তি হচ্ছে, অস্থির অস্থির লাগছে। মুগ্ধর ঐ কথার পৃষ্ঠে প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারলো না কেন তা ভেবে আশ্চর্য হচ্ছে। গ্রামে তো কেউ চোখ তুলে তাকালেও কত কথা শুনিয়ে আসতো তাহলে আজকে পারলে না কেন!
ইরা বাসায় ফিরে দেখলো সূচনা রান্নাঘরে নুরাইয়ার সাথে দুপুরের রান্নায় সাহায্য করছে। নুরাইয়া বারবার নিষেধ করেছেন জ্বরের শরীরে কাজ করতে হবেনা, শুয়ে থাকো। সূচনা যায়নি, তার নাকি একা একা রুমে পরে থাকতে ভালো লাগেনা। নুরাইয়া বাধ্যঁ হয়ে বলেছেন, তাহলে এখানে ই বসো পিড়ি পেতে। বসে থাকতে বললে ও মেয়েটা খালি বসে থাকেনা। ধ ম ক খেয়েও টুকটাক কাজ করছে। শাশুড়ী কাজ করছে আর ছেলের বউ হাতে হাত তুলে বসে আছে ব্যাপারটা সূচনার কাছে মোটেও ভালো লাগছিল না।
ইরা বাসায় ফিরে সোজা নিজের রুমেই চলে যায়। তার মুখ দেখে সূচনার কিছুটা সন্দেহ হয়, এমনিতেও গত কয়েকদিন ধরে সে একটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছে। ইরাকে জিজ্ঞেস করবে করবে করেও করা হয়নি। হোস্টেলে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যায়না, তন্মধ্যে হোস্টেল থেকে আবার এই বাসায় এসেছে। সব ঝামেলায় আর জিজ্ঞেস করা হয়নি। এক সপ্তাহ ধরে সূচনা পড়াতেও যাচ্ছে না অন্তিমদের বাসায়।
রান্নাঘরের কাজ টাজ সব সেড়ে সূচনা নিজের রুমে আসে৷ প্রণয় অফিসে, এহতেশাম সাহেব গিয়েছেন চট্টগ্রামে। চট্টগ্রামে যে ছোট ব্যবসা টা আছে সেটা সামলানোর দায়িত্ব ওনার ভাগ্নে কে দিয়েছেন। তাকে সব দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়ার জন্য ই গিয়েছেন। প্রণয়কে বলেছিলেন কিন্তু প্রণয় সাফ জানিয়েছে, নিজে পড়াশোনা করেছি কষ্ট করে, নিজেই কিছু করব।
রুমে এসে সূচনার মনে পরে, তার ইরার সাথে কথা বলা দরকার। সেই উদ্দেশ্যেই ইরার রুমে যায়। ইরা গোসল সেরে বেরিয়েছে সবে। সূচনাকে দেখেই জিজ্ঞেস করলো,
” ভাবি তুমি এখানে যে! ”
” কথা ছিল একটু। ”
” জরুরি কিছু? তোমার না শরীর খারাপ! ”
” হ্যাঁ জরুরি। বসো। ”
ইরা বিছানায় সূচনার কাছে যেয়ে বসে, সূচনা ঠান্ডা মাথায় সুন্দর করে ই জিজ্ঞেস করে ,
” মুগ্ধ নামের ছেলেটা কে তুমি চেনো ইরা? ”
ইরা আঁতকে ওঠে, এমনিতেই মুগ্ধর বলা কথা নিয়ে সে ভীত ছিল। ভীত হলেও সে মিথ্যা বলে না, সত্যি কথাই বলে,
” আমি তেমনভাবে চিনিনা ভাবি, এতটুকু জানি যে উনি আমাদের ভার্সিটিতে পড়েন, অনার্স ফাইনাল ইয়ারে, অরিন আপুদের সাথে। তুমি যখন আমার সাথে না থাকো উনি তখনই আমার সামনে আসেন। আজকে ও এসেছিলেন। আমি বলেছি যে রোজ রোজ এভাবে বিরক্ত না করে যা বলার একদিন বলে দিলেই হয়। তারপর.. তারপর উনি বললেন যে…
” তোমাকে পছন্দ করে! ”
ইরা বিস্ময় নিয়ে তাকায়, থেমে থেমে বলে,
” তু..তুমি জানো! ”
” আমার সাথে কথা হয়েছে । ”
” কবে? ”
” সপ্তাহ দুয়েক হবে, আমার সাথে কথা বলেছিল ভার্সিটি তে। ”
” ওহ। ”
” তুমি তাকে পছন্দ করো? ”
ইরা চকিত নয়নে তাকালো, এই প্রশ্নের উত্তর তার জানা নেই। উত্তর দিতে ও পারেনা। সূচনা উত্তরের অপেক্ষা করেনা, হয়তো বুঝতে পারে ইরার অবস্থা।
।
।
সময় খুব দ্রুত ই কে টে যায় এটা জানা থাকলেও সূচনার কাছে মন হয় বিয়ের পর দেড় মাস খুব দ্রুত কে টে গেছে। তার এখনো মনে হয় সেদিন ও সে ছোট্ট একটা মেয়ে ছিল। যারা দুনিয়া ছিল তার মা, সব দায়িত্ব, ভালোবাসা সব তার জন্য ই ছিল। অথচ এখন তার আরও একটা পরিবার আছে, শশুড়-শাশুড়ি, ননদ। আর সবচেয়ে বড় দায়িত্ব, স্ত্রী হওয়ার দায়িত্ব। সে এখন কারো স্ত্রী, জীবন সঙ্গী। হুট করে বিয়ে হলেও এই দেড় মাসে মনের দূরত্ব ঘুচেছে বেশ। শুধু শরীরেরই দূরত্ব। সূচনা যতবার ই ভেবেছে সেই দূরত্ব কমানোর কথা ততবারই ঘাবড়ে গিয়েছে। অস্থিরতা, অস্বস্তিতে মন মস্তিষ্ক বি ষি য়ে উঠেছে। অতঃপর সেই ভাবনা বাদ দিয়েছে। সে বাদ দিলেও প্রণয় কেন বাদ দিয়ে রেখেছে! প্রণয় নিজ থেকে ও এগিয়ে আসেনি। এক বিছানায় থাকা স্বত্তেও তেমনভাবে কখনো স্পর্শ করেনি। এই দেড় মাসে হাত ধরা আর জড়িয়ে ধরা ছাড়া কিছু ই হয়নি৷ কী আজব! সূচনার ভীষণ বিরক্ত লাগলো নিজের ওপর৷
গোসল সেরে এসে ব্যালকনিতে এসে বসেছিল সে। দুইতলা বিশিষ্ট বাড়ি, সূচনারা দোতলাতে থাকছে। একতলার একটা ফ্ল্যাট ভাড়া দেয়া হয়েছে, আরেকটা এখনো খালি। সূচনার নিজের রুমের সবচেয়ে পছন্দের জায়গা এই ব্যালকনি টাই। তার ভীষণ পছন্দ হয়েছে। সূচনা ঠিক করেছে ব্যালকনিতে কিছু গাছ রাখবে। কয়েকটা ফুল গাছ, মানি প্ল্যান্ট। প্রণয়কে বলেছে এনে দিতে। প্রণয়ের কথা মনে হতেই সূচনার মনে আবারও সেই চিন্তারা এসে হানা দিল।
বসা থেকে উঠে সূচনা রুম হতে নিজের ফোন টা নিয়ে আসলো। ভাবলো প্রণয়কে কল করবে কিন্তু করলো না। তার এই মুহূর্তে মনে হতে লাগলো, দোষ তো প্রণয়ের ই। এত ভদ্র হতে কে বলেছে! সূচনা কল লিস্টে যেয়ে প্রণয়ের নাম্বার টা খুঁজে বের করলো। প্রণয়ের নাম্বার সে সেভ করেছে বাজে ছেলে নাম দিয়ে। নামটা দেখে মৃদু হাসে। মেসেজ অপশনে যেয়ে ছোট একটা বার্তা পাঠালো,
” এত ভদ্র হতে কে বলেছিল বাজে ছেলে! বাজে ছেলে তো বাজে কাজ করবে আর আপনি বউ রেখে ভদ্র হ’য়ে ঘুরছেন! ”
মেসেজ পাঠিয়ে সূচনা খানিক ভীত হলো, বিব্রত হলো। এমন মেসেজ পাঠানো টা কী তার ঠিক হয়েছে?
” ওখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন! ”
ভাবনার মধ্যে ই নুরাইয়ার কণ্ঠ কানে আসে সূচনার। নুরাইয়া ব্যালকনির দরজায় দাঁড়িয়ে শাসনের স্বরে বলেন,
” এমনিতেই জ্বর উঠেছে তার মধ্যে ভেজাঁ চুল নিয়ে ঠান্ডা বাতাসের মধ্যে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছো কেন! ঘরে আসো। ”
নুরাইয়ার কথা শুনে সূচনার হাত আপনা আপনি তার চুল স্পর্শ করলো৷ হ্যাঁ চুল ভেজাঁ, ভালো করে মোছা হয়নি। জ্বর বাড়ছে বোধহয়, মাথাটা ও কেমন ঝিমঝিম করছে। সূচনা ব্যালকনি থেকে তখনই রুমে আসলো। নুরাইয়া সাথে করে নিয়ে গেলেন খাওয়ার জন্য। দুপুরে অল্প একটু ই খেল সে, ঔষধ খাওয়ার কথা বললেও মেয়েটা ভুলে গেল। বিছানায় পিঠ লাগাতেই চোখ জোড়া ঘুমে বন্ধ হয়ে আসলো।
সন্ধ্যার খানিক আগে রুমে কারো উপস্থিতি টের পেলে তার ঘুম ভাঙলো। চোখ পিটপিট করে মেললে দেখা গেল ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে টাই খুলতে ব্যস্ত প্রণয়। সূচনা উঠে বসলো কষ্ট করে, মাথা ভার হয়ে আছে তার। জ্বর কমেনি উল্টো বেড়েছে। তাকে উঠতে দেখে নিজের কাজ করতে করতে ই প্রণয় বললো,
” মা বললো তোমার জ্বর উঠেছে! ”
সূচনা নিরুত্তর রইলো, প্রণয় জিজ্ঞেস করলো,
” ঘুমিয়েছো কখন? ”
” দুপুরে। ”
মৃদুস্বরে জবাব দিল সূচনা, প্রণয়ের কাছে মনে হলো মেয়েটা ফিসফিসিয়ে জবাব দিয়েছে। প্রণয় খানিক রুক্ষ গলায় জিজ্ঞেস করে,
” ঔষধ খেয়েছো? ”
” উহু। ”
ব্যস এতটুকু যথেষ্ট ছিল রা গে র মাত্রা বাড়ানোর জন্য। প্রণয় ড্রেসিং টেবিলের সামনে থেকে চোখের পলকেই যেন সূচনার সামনে এসে দাঁড়ালো। দাঁতে দাঁত নিষ্পেষণ করে বললো,
” তা খাবে কেন! আস্তে কথা বলো কেন আজকে! গলায় জোর নেই! থাকবে কীভাবে অসুখ হয়েছে। অসুখ হলে ঔষধ যে খেতে হবে তা জানোনা! ”
সূচনা ভারি বিস্ময় নিয়ে তাকায় তার দিকে, কী বলবে বুঝে উঠতে না পেরে করুন চাহনি নিক্ষেপ করে। তাতে কাজ ও হয়, প্রণয় খানিক নরম হয়। কণ্ঠ খাদে নামিয়ে বলে,
” ওঠো, হাত মুখ ধুয়ে ভারি কিছু খাবার খেয়ে তারপর ঔষধ খাও। ”
সূচনা হাফ ছাড়ে, মাথা দুইদিকে নাড়িয়ে, গা থেকে কাথাঁ সরিয়ে উঠতে নিলে বিপত্তি বাঁধে। ঘুমালে শাড়ির অবস্থা নিশ্চয়ই খুব ভালো থাকেনা। তার বিব্রতবোধ দূর হয় প্রণয়ের বাক্যেই,
” লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই আমি ই, পাশের বাড়ির আন্টির ছেলে না। ওঠো তাড়াতাড়ি। ”
প্রণয় সোজাসাপটা কথা বলে ইদানীং যে কথাগুলো সূচনাকে ভীষণ লজ্জায় ফেলে দেয়৷ সূচনা অবশ্য অভ্যাস করছে প্রণয়ের সোজাসাপটা কথা গুলো সহজ ভাবে হজম করে নিতে।
সূচনা হাত-মুখ ধুয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হ’য়ে এসে দেখলো প্রণয় ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে। সূচনা হাতের তোয়ালে টা নিয়ে ব্যালকনিতে যায়। প্রণয়ের পাশে যেয়ে দাঁড়ায়, সেখানে দাঁড়ালে সাথে সাথে ই দমকা হাওয়া সমস্ত শরীর ঠান্ডা করে দিয়ে যায় যেন। সূচনার শরীরে কাঁপন ধরে, নাহ ঔষধ বোধহয় খেতে ই হবে। জ্বর ভালোই আছে। প্রণয় কথা শেষে ফোন কান থেকে নামিয়ে সূচনার দিকে তাকালো। সূচনার মুখ শুকনো দেখাচ্ছে, প্রণয় জিজ্ঞেস করে,
” এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন আবার! কিছু খেয়ে আসো। ”
সূচনা কথা শুনে প্রণয়ের মুখোমুখি হয়ে দাঁড়ায়৷ অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবেই প্রণয়ের চোখ জোড়া সূচনার মুখ হতে নেমে আসে সূচনার উদরে। শাড়ি সরে গিয়ে সেখানটা খানিক উন্মুক্ত। প্রণয় সাথে সাথে দৃষ্টি সরিয়ে নিতে চাইলেও পারেনা। দৃষ্টি অন্য রকম হয় তার, কেমন ঘোর লেগে যায়। সূচনা খেয়াল করতেই সাথে সাথে শাড়ি ঠিক করে নেয়। প্রণয়ের ঘোর কা টে, চোখ সরিয়ে নেয়। সূচনা মুখ বাঁকিয়ে মৃদু স্বরে আওড়ায়,
” বা জে ছেলে আমি শুধু শুধু বলেছি! ”
নিচু স্বরে বললেও প্রণয়ের কানে পোঁছায়, সে সূচনার আরেকটু গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বলে,
” তুমি দেখালে দোষ না আমি দেখলেই দোষ! ”
” আমি কী ইচ্ছে করে দেখিয়েছি! ”
” আমি কী ইচ্ছে করে দেখেছি! ”
” কে জানে, পুরুষ মানুষের কী বিশ্বাস আছে! তার ওপর আপনি হচ্ছেন বাজে ছেলে। ”
সূচনার এই কথার পৃষ্ঠে প্রণয়ের গলার স্বরে পরিবর্তন এলো। সূচনার মুখোমুখি হয়ে দাঁড়িয়ে বললো,
” বলছো! তাহলে বা জে ছেলের তো বা জে কাজ করতেই হয়। ”
সূচনা খানিক ঘাবড়ে যায়, প্রণয়ের দৃষ্টি একটু আগের ন্যায় ই ঘোর লাগানো। প্রণয়ের দুই হাত সূচনার কোমর স্পর্শ করতেই সূচনার সমস্ত শরীর যেন জমে যায়। হৃদ স্পন্দন বেড়ে দ্বিগুণ হয়। সূচনা আঁখি জোড়া বন্ধ করার আগে দেখে প্রণয় তার মুখটা এগিয়ে আনছে তার দিকে। সূচনা সেই মুহূর্তে ই আঁখি জোড়া খিঁচে বন্ধ করে নেয়। অতঃপর ঠোঁট জোড়ায় উষ্ণ স্পর্শ পেয়ে শরীরে ঝংকার ওঠে। সম্বিত ফিরে যখন তখন দুই হাতে ঠেলে সরিয়ে দেয় প্রণয়কে। খানিক উত্তেজিত হয়ে বলে,
” আপনি আমার অসুস্থতার সুযোগ নিচ্ছেন! অনুমতি নিলে কী আমি সম্মতি দিতাম না! ”
প্রণয়ের যখন খেয়াল হয় তখন নিজের ওপর ঈষৎ রা গ হলেও সূচনার কথাটা যেন আ গু নে ঘি ঢালার ন্যায় কাজ করে। তার প্রচন্ড রা গ হয়, চোখ জোড়া মুহূর্তে ই আরক্তিম হয়। সূচনাকে ছেড়ে দিয়ে বড় বড় কদমে সেই স্থান হতে প্রস্থান করে। পেছনে সূচনা ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে থাকে। বুঝতে পারে না, একটু আগে যা হয়েছিল তা ভুল ছিল নাকি সে যা বলেছে তা ভুল ছিল!
#চলবে।