Monday, October 6, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"প্রণয়াসক্ত পূর্ণিমাপ্রণয়াসক্ত পূর্ণিমা পর্ব-৫৩+৫৪

প্রণয়াসক্ত পূর্ণিমা পর্ব-৫৩+৫৪

#প্রণয়াসক্ত_পূর্ণিমা
#Writer_Mahfuza_Akter
পর্ব-৫৩

প্রহর গাড়ির গতি ক্রমেই কমিয়ে আনল। নীরবে তাকিয়ে রইলো ফোনের স্ক্রিনের দিকে। এই মুহূর্তে মাথায় অনেক কিছু ঘুরঘুর করছে ওর। অর্থীর এই সময়ে কল করাটা অস্বাভাবিক ঠেকছে। সৌহার্দ্য ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,

-কে কল করেছে? অমন মুখ করে তাকিয়ে আছিস যে!

সৌহার্দ্যের প্রশ্নে ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলো প্রহর। ইতোমধ্যে ফোনের রিংটোন বন্ধ হয়ে গেছে। তার মানে কলটা কেটে গেছে।

প্রহর ঠোঁট গোল করে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। আঙুল চালিয়ে দ্রুত ফোনটা সাইলেন্ট করে পকেটে পুরে নিলো যেন ফোনটা পুনরায় বেজে না ওঠে।

গাড়ি স্টার্ট দিয়ে সৌহার্দ্যের দিকে এক পলক তাকালো প্রহর। সৌহার্দ্য এখনো একইভাবে তাকিয়ে আছে। প্রহর কপট হাসার চেষ্টা করে বললো,

-এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? তেমন দরকারি কোনো ফোনকল ছিলো না। বাসায় পৌঁছে কথা বলে নেবো আমি।

সৌহার্দ্য নির্বিকার ভঙ্গিতে মুখ ঘুরিয়ে বাইরে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো। নিষ্প্রভ কন্ঠে বললো,

-সামনের স্টল থেকে প্রণয়ীর জন্য চকোলেট কিনতে হবে। গাড়ি দাঁড় করাস।

বাকিটা সময় নীরবতায় কাটলো। প্রহর নীরবে ড্রাইভিং-এ মনোনিবেশ করলো আর সৌহার্দ্য অন্ধকারাচ্ছন্ন আকাশে দৃষ্টি মেলে দিলো। যেই দু’টি হৃদয় বন্ধুত্ব নামক গভীর বন্ধনে বাঁধা ছিল, তারা আজ দুই প্রান্তে নিজ নিজ শোকতপ্ত মনের সান্ত্বনা খোঁজায় ব্যস্ত। সেই পুরনো হাসাহাসি, মারামারি ও গালাগালি আজ তাদের টানে না। পুরনো স্মৃতি রোমন্থনে মন সায় দেয় না। দুজনেই সুনশান নীরবতায় প্রিয় ব্যক্তির অনুপস্থিতি অনুভব করে।

বাড়ি পৌঁছাতেই প্রণয়-প্রণয়ী ছুটে এলো প্রহরের দিকে। প্রণয়ী এক ছুটে প্রহরের কোলে ওঠে গেল। প্রহর ওর গালে চুমু দিয়ে বললো,

-আজকে এতো এক্সাইটেড কেন লাগছে আপনাকে?

প্রণয়ী উচ্ছ্বসিত হয়ে বললো,

-আজকে আমার রেজাল্ট দিয়েছে। আমি পুরো ক্লাসে ফার্স্ট হয়েছি।

সৌহার্দ্য প্রসন্নের হাসি দিয়ে প্রণয়ীর মাথায় চুমু দিলো। প্রণয় কোমরে দুই হাত রেখে চোখ ছোট ছোট করে ওদের দিকে তাকিয়ে রইলো। মুখ ফুলিয়ে বললো,

-এখন সব আদর শুধু প্রণয়ীর জন্য? আমাকে সত্যিই কেউ ভালোবাসে না।

সৌহার্দ্য ভ্রু কুঁচকে প্রণয়ের কান চেপে ধরে বললো,

-আগে আপনার রেজাল্ট বলুন! তারপর আপনার প্রতি আমাদের ভালোবাসার কথা ভাবা যাবে।

প্রণয় ঠোঁট উল্টে বললো,

-আমিও ভালোই করেছি। কিন্তু প্রণয়ীর মতো এতো ভালো না।

প্রণয়ী খিলখিল করে হেসে বললো,

-সারাদিন দুষ্টুমি করে বেড়ালে রেজাল্ট ভালো হবে কীভাবে? আবার আমাকে আসে গাধী বলতে! হুহ্!!

প্রণয় রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,

-তুই তো গাধীই! ফার্স্ট হলেই গাধী থেকে মানুষ হয়ে যায় নাকি কেউ? এ্যাহহহ!

প্রণয়ী তেড়ে এসে কিছু বলতে যাবে ওমনি প্রহর ওকে আবার কোলে তুলে নিয়ে বললো,

-এখন দুজনের ঝগড়াঝাটি আর চুল ছেঁড়া-ছেঁড়ি বন্ধ! চলো, দু’জনের জন্য অনেক কিছু নিয়ে এসেছি আমরা।

প্রণয়-প্রণয়ীর সাথে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে প্রহর নিজের ঘরে চলে এলো। মন যতই ভারাক্রান্ত থাকুক না কেন? বুকের ভেতর হাজারো বেদনারা সমস্বরে কোলাহল তুলুক না কেন? এখানে এই দু’টো বাচ্চার নিষ্পাপ মুখ দু’টো দেখলেই ভেতরে অদ্ভুত শীতলতা অনুভব করে প্রহর। হয়তো এই শীতল শান্তির মাধ্যমেই সৌহার্দ্য এদের আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছে। নয়তো এভাবে একা বাঁচতে পারে নাকি কেউ? প্রতিটা মুহুর্তেই তো দম বন্ধ হয়ে আসার কথা!

ভাবনার রাজ্য থেকে বেরিয়ে নিজের ভেতরে থাকা দীর্ঘশ্বাস গুলো বের করলো প্রহর। বারান্দায় রাখা দোলনায় বসতেই মধুর কথা মনে পড়লো। এই ঘরটাও মধুর ছিল। কিন্তু প্রহর এখন এই ঘরের স্থায়ী বাসিন্দা হলেও কোনোকিছুতে কোনো পরিবর্তন আনেনি। এখানে এলে নিজের প্রতিটা নিঃশ্বাসে মধুর অস্তিত্ব অনুভব করে সে। ভালোবাসার অনুভূতি আসলেই অদ্ভুত, অপূর্ব সুন্দর।

পকেট থেকে সিগারেট বের করে সেটা জ্বালাতেই ফোনের কথা মাথায় এলো প্রহরের। দ্রুত ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো, অর্থী নয়বার কল করেছে। এই মেয়েটা বরাবরই এমন। কল রিসিভ না করলে বারবার কল দিতেই থাকে। প্রহর শান্ত হয়ে বসে কল ব্যাক করলো। একবার রিং হতেই অর্থীর গলা শোনা গেল,

-কাজের সময় কোথায় থাকো তুমি? এতোবার কেন কল দেওয়া লাগে?

প্রহর গলা ঝেড়ে বললো,

-কী বলবি তাড়াতাড়ি বল! কোনো সমস্যা হয়েছে নাকি? এই সময়ে তো কখনো কল দিতে দেখি না আমি!

-আসলে কালকের ফ্লাইটে আমি বিডিতে ব্যাক করছি।

প্রহর অবাক হলো। বললো,

-হঠাৎ! কেন? দুই মাস আগেই তো ঘুরে গেলি! আবার কী হলো?

অর্থী হাসার চেষ্টা করে বললো,

-পার্সোনাল কাজে না, প্রফেশনালি আসছি এবার। হসপিটাল থেকে ডক্টরদের টিম আসছে। তাদের সাথে আমিও আসছি। তোমাদের বাড়িতেও উঠবো না, সবার সাথে হোটেলে উঠবো।

প্রহর বিরস কন্ঠে বললো,

-অহ্ আচ্ছা! এসে জানাস আমাকে। এয়ারপোর্টে দেখা করতে যাবো না-হয়!

অর্থী কিছু একটা চিন্তা করতে করতে বললো,

-আচ্ছা, রাখি তাহলে!

-ঠিক আছে।

৪৮.
অরিত্রী বেশ প্রফুল্ল মনে যাওয়ার জন্য তোড়জোড় করছে। অর্থী সবটা বেশ মনযোগ দিয়ে খেয়াল করছে। দরকারী জিনিস পত্র গোছানোর পর অর্থী বললো,

-এতো কম কাপড় নিয়েছিস কেন?

অরিত্রী অবাক চোখে তাকিয়ে বললো,

-এগুলো কম? এক মাসের জন্য এর থেকে বেশি কাপড়চোপড় লাগবে বলে মনে হয় না।

অর্থী বিরক্ত হয়ে বললো,

-আরেহ্, গাধা! যা যা দরকার সবই নিয়ে নে। এখানে আর আসা হবে না তোর।

অরিত্রী ভ্রু কুঁচকালো। অবুঝ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,

-আসা হবে না মানে?

অর্থী হকচকিয়ে গেল। আমতা আমতা করে বললো,

-মানে বলতে চাচ্ছিলাম যে, বাংলাদেশ তো বারবার যাওয়া হবে না! এবারই হয়তো শেষ বার তোর জন্য। তাই ভালোমতো গোছগাছ করে নিলে ভালো।

অরিত্রী মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো। বললো,

-ঠিকই বলেছো তুমি। কিন্তু এবার যদি বাবা, মা আর অর্ণব ভাইয়ের চোখে ধুলো দিতে সাকসেসফুল হই, তাহলে আমি আবারও যাবো। আমাকে কেউ আটকাতে পারবে না। বুঝলে?

অর্থী হেসে বললো,

-বুঝেছি, ম্যাডাম! এবার চলুন। হসপিটালে সবাই আমাদের জন্য ওয়েট করছে।

অরিত্রী লাগেজ গুছিয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। অর্ণব প্রায়ই অরিত্রীদের বাসায় এসে দেখা করে যায়। আজকেও এসেছে। যেহেতু মোহনা আর মিস্টার আফনাদ বাসায় নেই, তাই অরিত্রীর খোঁজখবর ওকেই রাখতে হবে। কয়েক মিনিটের মাথায় অর্ণবের গাড়িকে বেরিয়ে যেতে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো তারা। এরপর অর্থী আর অরিত্রী একসাথে বেরিয়ে গেল।

৪৯.
প্রণয়-প্রণয়ীকে স্কুলে দিয়ে আসায় সৌহার্দ্যের হসপিটালে পৌছাতে বেশ দেরী হয়ে গেল। প্রতিদিনের মতো আজ আর ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডে গেল না সে। এপয়েন্টমেন্ট লিস্টটা চেক করতে গিয়ে দেখলো, সেটা ফাঁকা। সৌহার্দ্যের ভ্রু আপনাআপনি কুঁচকে গেল। তার মানে আজকের শিডিউলে কারো কোনো এপয়েন্টমেন্ট নেই? এমনটা তো কখনো হয় না!

সৌহার্দ্য পিয়নকে জিজ্ঞেস করতেই সে বললো,

-স্যার, আজকে আপনার হসপিটালে কোনো ডিউটি নেই। কানাডা থেকে ডক্টরদের টিম আসছে আজ। বেশ বড়মাপের ডাক্তার তারা। আপনাকে আর ডক্টর শাহেদকে ওনাদের রিসিভ করার জন্য এয়ারপোর্টে যেতে বলা হয়েছে।

সৌহার্দ্যের কাছে বেশ অদ্ভুত লাগলো ব্যাপারটা। ডক্টর আসবে ভালো কথা! তাই বলে সে কেন যাবে ওদের রিসিভ করতে? সৌহার্দ্য বিরক্ত হয়ে সিনিয়র ডক্টরকে কল করলো। অপর প্রান্ত থেকে শোনা গেল,

-ইয়েস! সৌহার্দ্য, মাই বয়! এনি প্রব্লেম?

-স্যার, আমাকে দায়িত্ব দেওয়ার আগে একবার অন্তত জিজ্ঞেস করে নেওয়া উচিত ছিল। আমি তো….

-সৌহার্দ্য, লিসেন! আমি যা করেছি, ভেবেচিন্তে করেছি। তুমি একবার এয়ারপোর্টে গিয়ে সেখান থেকে ডিরেক্ট তোমার বাসায় চলে যেতে পারবে। এতে তোমার ছেলেমেয়েদের আজ সারাদিন সময় দিতে পারবে। ডক্টররা তো ছুটি পায় না বললেই চলে! বাট ইয়র চিলড্রেন নিড ইউ, এটা তো মাথায় রাখতে হবে, তাই না? সব দিক কনসিডার করে ভাবলাম, তোমাকে এই ছোট টাস্ক-টা দিয়ে আজকের মতো ডিউটি শেষ করিয়ে দেই।

সৌহার্দ্যের মাথায় এই ব্যাপারটা আসেনি। তবে আইডিয়া বেশ ভালো লেগেছে ওর। তাই আর কালক্ষেপ না করে বেরিয়ে গেল চেম্বার থেকে। ডক্টর শাহেদকে নিয়ে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলো। রাস্তায় তেমন জ্যামজট না থাকায় তারা বেশ তাড়াতাড়ি-ই পৌঁছে গেল। গাড়ি থেকে নেমে সামনে তাকাতেই সৌহার্দ্য চমকে গেল। এমন কিছুর জন্য সে একদমই প্রস্তুত ছিল না হয়তো!…

-চলবে…..

#প্রণয়াসক্ত_পূর্ণিমা
#Writer_Mahfuza_Akter
পর্ব-৫৪

সৌহার্দ্য বিস্মিত চোখে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। তার সামনাসামনি একটা গাড়ি থেকে প্রহর বেরিয়ে আসছে। অথচ কিছুক্ষণ আগেও প্রহরের সাথে ওর কথা হয়েছে ফোনে। প্রহর জানিয়েছিল, সে সকাল সকাল শহরের বাইরে গিয়েছে একটা কেইস নিয়ে ইনভেস্টিগেট করার জন্য। তার মানে, প্রহর ওকে মিথ্যে বলেছিল! কিন্তু এর পেছনে কারণ কী? কী এমন কারণে প্রহর মিথ্যের আশ্রয় নিয়েছে? আর এয়ারপোর্টে-ই বা কেন এসেছে?

ভাবনার মাঝেই সৌহার্দ্য খেয়াল করলো, প্রহর ঘুরে তাকাতেই ওর দৃষ্টি-ও সৌহার্দ্যের ওপর পড়েছে। কপালে ঈষৎ ভাজের রেখা ফুটিয়ে প্রহর সৌহার্দ্যের দিকে এগিয়ে এলো। জিজ্ঞাসু দৃষ্টি মেলে প্রশ্ন করলো,

“তুই এখানে হঠাৎ? ”

সৌহার্দ্যও পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,

“আমারও একই প্রশ্ন! তুই তো আমাকে বলেছিলি…..

সৌহার্দ্যের কথা শেষ হওয়ার আগেই প্রহর বললো,

“গিয়েছিলাম ঢাকার বাইরে! কাজ শেষ করে ফিরেও এসেছি। মধু আসবে আজ। তাই তাড়াতাড়ি পৌঁছাতে হলো।”

সৌহার্দ্য অবাক হলো। তাড়াতাড়ি হলেও এতোটা দ্রুত আসার তো কথা না! সে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো,

“এতো তাড়াতাড়ি কীভাবে?”

প্রহর মলিন হেসে বললো,

“আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছে না? জেরা করছিস? ট্রেনে এসেছি।”

সৌহার্দ্য নিজের প্রতি নিজেই বিরক্ত হলো। এভাবে এতো প্রশ্ন করা ঠিক হয়নি। প্রহর তো কখনো ওর কাজ নিয়ে মাথা ঘামায় না! তাহলে সে কেন এতো ভাবছে? প্রহরের স্বাভাবিক মুখভঙ্গি দেখেই বোঝা যাচ্ছে, সৌহার্দ্য অহেতুক বেশি বেশি ভাবছে, সন্দেহ করছে। ব্যাপারটা আসলেই দৃষ্টিকটু। প্রহরের ওপর চোখ বন্ধ করে সে ভরসা করতে পারে। হয়তো এটা ভেবেই প্রহর ওকে ভুল বুঝবে না!

চিন্তার জগতে ভাটা পড়লো প্রহরের প্রশ্ন শুনে,

“তুই বললি না তো? কেন এসেছিস?”

সৌহার্দ্য একটু চমকালো। নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো,

“ডক্টরের টিম আসবে আজকে। তাই তাদের রিসিভ করতে আসতে হলো।”

সৌহার্দ্যের চোখেমুখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট। প্রহর ভ্রু কুঁচকে তাকালো। বললো,

“কোত্থেকে আসবে?”

“কানাডা থেকে আসবে শুনলাম।”

প্রহর হালকা হেসে বললো,

“তাহলে তো ভালোই হয়েছে! অর্থীও সেই টিমের সাথেই আসছে।”

সৌহার্দ্য বিরস মুখে হাসার চেষ্টা করলো। প্রহর মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো সেটা। সৌহার্দ্যের এখানে আসার ব্যাপারটা ওর নিজের কাছেও খুব ভালো লাগেনি। তবুও দায়বদ্ধতার জন্য আসা ছাড়া আর কোনো উপায়ও ছিল না। তাই সৌহার্দ্যের কাঁধে হাত রেখে বললো,

“মাঝে মাঝে পার্সোনালিটির চেয়ে প্রফেশনালিজমকে বেশি প্রায়োরিটি দিতে হয়। ওদের সাথে একবার দেখা করেই তুই চলে যাস না-হয়! এখন চল এগিয়ে গিয়ে দেখি।”

দু’জনে দুই পা এগিয়ে আসতেই দেখতে পেল, ডক্টর শাহেদ দশ-বারো জন ডক্টরকে সাথে নিয়ে ওদের দিকে এগিয়ে আসছে। সৌহার্দ্য মুখে কৃত্রিম হাসি ঝুলানোর চেষ্টা করলো। প্রহর সবার বাদামি চুল ও শুভ্র ফকফকে মুখের দিকে একবার চোখ বুলিয়ে কাঙ্ক্ষিত মুখটা দেখতে ব্যর্থ হলো। ভ্রু কুঁচকে ভাবলো, তার মানে কি অর্থী আসেনি?

ডক্টর ক্লারা প্রহরকে আগে থেকেই চিনতেন। অর্থী-ই ওনার সাথে প্রহরকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলো। তিনি এগিয়ে গিয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে প্রহরকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে বললেন,

“হাও’স গোয়িং অন, মাই বয়? কত বছর পর তোমাকে দেখলাম! কানাডা যাওয়া তো বন্ধ-ই করে দিয়েছো! হোয়াট’স দ্য রিজন?”

প্রহর খানিকটা হাসার চেষ্টা করে বললো,

“এমনিতেই! তেমন কোনো ব্যাপার না, ম্যাম। অর্থীকে দেখতে পাচ্ছি না যে! ও কোথায়?”

“আসলে ও ওর এক ফ্রেন্ডের সাথে আসতে চেয়েছিল। বাট আনফরচুনেটলি ওরা ফ্লাইট মিস করেছে। ওদের সাথে কন্ট্যাক্ট করার অনেক চেষ্টা করেছি। ওরা খুব সম্ভবত নেক্সট ফ্লাইটে চলে আসবে। আমি যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি আবার!”

প্রহরের পাশে সৌহার্দ্যকে দেখে সবাই ওর দিকেই উৎসাহিত চোখে তাকিয়ে রইলো। সৌহার্দ্য প্রথমে ব্যাপারটা খেয়াল না করলেও যখন বুঝতে পারলো যে, সবাই ওর দিকে তাকিয়ে আছে, তখন বিব্রত মুখে হাসার চেষ্টা করলো। একটা মেয়ে হাসি মুখে এগিয়ে এসে সৌহার্দ্যের দিকে হাত বাড়িয়ে বললো,

“হ্যালো! আ’ম ডক্টর আনফা, স্পেশালাইজড ইন প্যাথলজি। ইউ আর ডক্টর সৌহার্দ্য রায়হান, রাইট?”

সৌহার্দ্য ভ্রুকুটি করে হাসার চেষ্টা করলো। হাত না মিলিয়ে বললো,

“ইয়েস, আই এ্যাম। গ্ল্যাড টু নৌ এবাউট ইউ!”

ডক্টর ক্লারা এগিয়ে এসে সৌহার্দ্যকেও এক হাতে জড়িয়ে ধরে বললেন,

“তোমার ব্যাপারে ওরা অনেক গল্প শুনেছে। অর্থী সবসময় তোমাদের নিয়েই বকবক করতো। এজন্য এরা দেখেই চিনে ফেলেছে।”

সৌহার্দ্য মলিন হাসলো। কিন্তু প্রহরের মুখে হাসি নেই। অর্থী ফ্লাইট মিস করার মানুষ না। বাংলাদেশে আসার জন্য সবসময় মুখিয়ে থাকে মেয়েটা। কোনো সমস্যা হয়নি তো!

৪৯.
অর্থীর মুখ জুড়ে বিরক্তি। কপাল কুঁচকে দাঁত দিয়ে নখ কাটছে সে। অন্য দিকে অরিত্রী ঘর জুড়ে পায়চারি করছে। ওকে একবার পর্যবেক্ষণ করে নিয়ে অর্থী বিরস মুখে বললো,

“এই ছেলেটা অসহ্য! সব কিছুতে ওর এমন ইন্টারফেয়ারেন্স কেন? তুই ওকে কখনো কিছু বলিসও না!”

অরিত্রী থমথমে মুখে চুপচাপ বেডে বসলো। কালকের আগের দিন এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে বের হতেই পার্কিং এরিয়ায় অর্ণব ওদের ধরে ফেলেছিলো। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে অরিত্রীর দিকে তাকিয়ে বলেছিলো,

“অর্থীর কথায় লাফালাফি বন্ধ কর। আমি আগেই জেনে ফেলেছি যে, তুই আজকে বাংলাদেশে যাচ্ছিস! কোথাও যাওয়া হচ্ছে না তোর। লাগেজ নিয়ে ভেতরে যা।”

কথাগুলো ভাবতেই রাগে মুখ লালাভ বর্ণ ধারণ করলো অরিত্রীর। বিরবির করে বললো,

“বাংলাদেশে যাওয়া আগে আমার শখ ছিল, কিন্তু এখন সেটা আমার জেদ। আমি তো যাবোই! দেখি আমাকে কে আটকায়?”

অর্থীর দিকে তাকিয়ে স্বাভাবিক কন্ঠে বললো,

“আজকে রাতের কোনো ফ্লাইট বুক করে ফেলো। আজকেই আমরা বাংলাদেশ যাচ্ছি!”

অর্থী চমকালো। অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,

“আর ইউ শিয়র? অর্ণব তো তোর এই বাড়ি থেকে বের হওয়াই বন্ধ করে দিয়েছে!”

“এজন্যই এখান থেকে বের হতে হবে আমায়। অর্ণব ভাই কে আমাকে ঘর বন্ধী করে রাখার। উনি আমার কাজিন, ওনার কোনো রাইট নেই আমাকে কোনোকিছু করা থেকে আটকানোর। সো, আমরা আজই যাচ্ছি।”

অর্থী হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। অরিত্রীর এমন রাগী রূপ কখনো দেখেনি ও। সবসময় হাসি-খুশি, প্রাণোচ্ছল একটা মেয়ের এমন রাগী রূপও আছে? ভেবেই অবাক হলো অর্থী। তাই বিস্মিত চোখে তাকিয়ে বললো,

“কিন্তু কীভাবে যাবো?”

অরিত্রী রহস্যময় হাসি দিয়ে বললো,

“তুমি তোমার বাসায় যাও। রাত দশটায় এয়ারপোর্টে থেকো। আমিও পৌঁছে যাবো, ডোন্ট ওয়ারি।”

অর্থী মাথা নাড়িয়ে চলে গেল। রাত একটার ফ্লাইটে টিকিট বুক করে অরিত্রীকে জানিয়ে দিলো সে। অরিত্রী খুশিমনে নিজের দরকারী জিনিসপত্র আরেকদফা গুছিয়ে নিলো। রাত আটটার দিকে অর্ণব এলো। কিন্তু অরিত্রী ওর সাথে দেখাও করলো না। সেদিনের পর থেকে অরিত্রী ওর সাথে একবারও দেখা করেনি, একটা কথাও বলেনি। অর্ণব কষ্ট পেল। কিন্তু অরিত্রীর চাওয়া সে পূরণ করতে পারবে না। তাই দেখা করার চেষ্টা না করেই আবার ফিরে গেল। মোহনাকে এখনো অরিত্রীর এসব কাহিনী জানানো হয়নি। জানানো যাবেও না। এমনি খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য মিস্টার আফনাদকে কল দিলো অর্ণব। এখন তো সেখানে দিন! তেমন ব্যস্ত হয়তো তিনি না!

অরিত্রী দশটা বাজার কিছুক্ষণ আগে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো। কিন্তু গেইটের গার্ড ওকে বাইরে যেতে দিলো না। অর্ণব নাকি নিষেধ করে গেছে। অরিত্রী রাগী চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো। হুট করে কাঁধের ব্যাগ থেকে ক্লোরোফোর্ম বের করে গার্ডের মুখে স্প্রে করে দিলো। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই লোকটা অজ্ঞান অবস্থায় ঢলে নিজের চেয়ারে বসে পড়লো।

এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে অর্থী বারবার অরিত্রীকে কল করছে। দশটায় আসার কথা ছিল। আর এখন এগারোটার ওপরে বাজে। ওর ধারণা, মেয়েটা হয়তো আজ আর আসতেই পারবে না! শুধু শুধু ওকে দিয়ে খাটালো। বিরক্ত হয়ে সামনে তাকাতেই অরিত্রীকে নিজের ব্যাগপত্র নিয়ে এগিয়ে বসতে দেখে হতভম্ব হয়ে গেল। বললো,

“তুই চলেই এলি! কিন্তু কীভাবে?”

অরিত্রী রহস্যময় হাসি দিয়ে বললো,

“ম্যাজিক!”

-চলবে……

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ