Monday, October 6, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"প্রণয়াসক্ত পূর্ণিমাপ্রণয়াসক্ত পূর্ণিমা পর্ব-৩৯+৪০

প্রণয়াসক্ত পূর্ণিমা পর্ব-৩৯+৪০

#প্রণয়াসক্ত_পূর্ণিমা
#Writer_Mahfuza_Akter
পর্ব-৩৯

সৌহার্দ্যকে নিজের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কেঁপে উঠলো তরী। সৌহার্দ্য সবটা জেনে গেছে! ভাবতেই মস্তিষ্ক ফাঁকা ফাঁকা লাগছে তরীর। সৌহার্দ্য ওর দিকে কয়েক পা এগিয়ে এলো। তরীর চোখে চোখ রাখতেই তরী দেখতে পেল, সৌহার্দ্যের চোখ দুটো আজ অস্বাভাবিক লালাভ ও অশ্রুসিক্ত। সেখানে গভীর বেদনার ছাপ স্পষ্ট।

“এতোটা নিচে কীভাবে নামলে তুমি, তরী? কী করতে চাইছিলে তুমি এটা? তুমি এবোরশান করানোর জন্য এভাবে…..”

“নাহ্! তোমাকে এসব কে বলেছে, সৌহার্দ্য? আমি এসব করতে আসিনি। তুমি ভুল ভাবছো, সৌহার্দ্য! ”

বলেই তরী সৌহার্দ্যের হাত ধরতে গেলেই সৌহার্দ্য হাত ঝাড়া দিয়ে সরিয়ে নেয়। তরীর দিকে আঙুল তুলে বললো,

“তোমার ঐ হাত দিয়ে আমাকে স্পর্শ করবে না! তোমার প্রতি ঘৃণা আসছে আমার। আর মিথ্যে বলার চেষ্টাও করো না। নিচে তোমার লোকেরা দাঁড়িয়ে নিজেদের মধ্যে কথা বলছিল। সকাল হলেই নাকি তুমি হসপিটালে যাবে! সব ব্যবস্থা নাকি হয়ে গেছে! ওরা নিজেরা তো মিথ্যে বলবে না! কিন্তু তুমি এখন আমার সামনে দাঁড়িয়ে মিথ্যে বলছো। প্রিটেন্ড করছো যে, তুমি ভালো মানুষ।”

তরী অবাক হয়ে বললো,

“আমি ভালো মানুষীর প্রিটেন্ড করছি?”

“হ্যাঁ, করছো। তোমার এই এলোমেলো চুল, কাঁধ জড়িয়ে মাটি পর্যন্ত ছড়ানো সুতি শাড়ি আবরণ আর নিষ্পাপ মুখের এই সত্তাটা শুধু মাত্র একটা মুখোশ! সেই মুখোশ অনেক আগেই খুলে গেছে আমার সামনে থেকে। তোমার এই মুখোশের আড়ালে থাকা ভ*য়ং*ক*র রুপটা আমি জানতাম আগেই। তবুও আমি তোমাকে কিচ্ছু বলিনি, তোমার প্রতি আমার মন বদলায়নি। কেন জানো? তোমায় আমি ভালোবাসি বলে! আমি তোমায় সত্যি সত্যিই অনেক ভালোবাসি। মনেপ্রাণে ভালোবাসি! কিন্তু তুমি? তুমি কী করতে চেয়েছিলে? তোমার মধ্যে সৃষ্টি হওয়া আমার অংশ, আমাদের ভালোবাসার অংশটাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিলে!”

শেষোক্ত কথা শুনে তরী কেঁপে উঠলো। সৌহার্দ্যের দিকে বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে অস্ফুটস্বরে বললো,

“সৌহার্দ্য! ”

সৌহার্দ্য নিজের চোখের কার্ণিশে জমা পানি গুলো আঙুল দিয়ে মুছতে মুছতে বললো,

“আমি আমার চাঁদকে অনেক ভালোবাসি। চাঁদ ছাড়া যেমন আকাশ অন্ধকার, আমার জীবনটাও আমার চাঁদের অনুপস্থিতিতে তেমনই নিকষ। কিন্তু এই সত্যির উল্টো পিঠে আরেকটা সত্যি আছে। আর সেটা হলো, চাঁদকে আমি যতটা ভালোবাসি, তরীকে আমি ততটাই ঘৃণা করি। এই তরীকে আমি মনেপ্রাণে ঘৃণা করি। এর প্রতি আমার কোনো ভালোবাসা নেই।”

বলেই তরীর দিকে আঙুল তুলে তাকালো সৌহার্দ্য। তরী হতবাক হয়ে একবার সৌহার্দ্যের আঙুল, আরেকবার ওর মুখের দিকে তাকালো। কথা বলতে চাইলেও তরীর মুখ থেকে একটা কথাও বের হলো না। নির্বাক হয়ে চেয়ে চেয়ে দেখলো শুধু!

“তুমি আমার চাঁদ নও। তুমি হতেই পারো না আমার চাঁদ! তুমি একটা স্বার্থপর। নিজের স্বার্থের কাছে পৃথিবীর সবকিছু তুচ্ছ তোমার জন্য। চাঁদ তো খুবই সাধারণ ছিল! সবার হাসিতে হাসতো, কাউকে গোমড়ামুখে দেখলে কান্নাকাটি শুরু করে দিতো। আমি তো সেই সাধারণ মানুষটাকেই ভালোবাসি! তার এই প্রতিশোধপরায়ণ রূপটাকে না।”

সৌহার্দ্য হতাশা মিশ্রিত দীর্ঘশ্বাস ফেললো। তরীর গাল বেয়ে অশ্রু রেখা গড়িয়ে পড়লো। দেয়াল ঘেঁষে ফ্লোরে এলোমেলো ভঙ্গিতে বসে পড়লো সে। ঘরের সামনের এই বারান্দায় এখন ওরা দুজন একে অপরের নিঃশ্বাসের শব্দ-ই শুনতে পাচ্ছে। আশে পাশে আর কেউ নেই। কয়েক মুহূর্ত নীরবতায় কেটে গেল। সৌহার্দ্যের তরীর দিকে কোনো খেয়াল নেই। চশমা খুলে নিজের চোখ দুটো মুছতেই তরীর ওপর চোখ পড়লো ওর। কেমন নির্জীব হয়ে বসে আছে মেয়েটা! তার কথাগুলো কি এতোটাই ধারালো ছিল যে, তরীর মুখ-ই বন্ধ হয়ে গেল? ভেবে পেল না সৌহার্দ্য। রেলিংয়ে দুহাত ভর দিয়ে সামনে তাকাতেই তরীর কন্ঠ স্বর ভেসে এলো,

“তোমার চাঁদ অনেক আগেই মরে গেছে, সৌহার্দ্য! অনেক আগে! যেদিন সে নিজের চোখের সামনে তার মায়ের মৃত্যু দেখেছিল, সেদিন-ই সে মরে গেছে। বয়স কতই বা ছিল আমার! একটা ছোট বাচ্চা ছিলাম আমি। ঐ বয়সে তো সবাই অবুঝ থাকে! আমি কতটা অবুঝ ছিলাম জানি না। নিজের চোখের সামনে নিজের মায়ের মরণ চিৎকার শুনে কতটা অবুঝ থাকা যায়? আমার মায়ের বুকে করা একেকটা ছু*রি*র আঘাত দেখেছি আমি। আমার মা চিৎকার করে কাঁদছিল। কিন্তু নিজে বাঁচার জন্য কাঁদছিল না, বরং আমার জীবন ভিক্ষা চাইছিল। যখন আমার মায়ের শাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিলো, আমি সহ্য করতে পারিনি, জানো? ছুটে যেতে চেয়েছি। কিন্তু আমাকে যেতে দেয়নি। আমার চোখ ফেটে পানি পড়ছিল। সহ্য হচ্ছিল না আমার। অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম আমি। আমাকে তো ম*রা মনে করে ছেড়ে দিলেও পারতো! অন্তত আমার মায়ের শেষ ইচ্ছে ভেবেই ছেড়ে দিতো! কিন্তু না, ছাড়েনি। ঐ অজ্ঞান অবস্থায়-ই রাতের আঁধারে আমাকে পুঁ*তে দিয়েছিল। আজাদ চাচা সবকিছুর সাক্ষী ছিলেন। উনি তো এসবে সাহায্য-ও করেছেন! উনি নিজেও অসহায় ছিলেন। মা যখন বুঝতে পেরেছিলেন যে, ওনার হাতে বেশি সময় নেই, তখন নিজের উইলের কাগজগুলো আজাদ চাচার কাছে দিয়েছিলেন। আমার পালিত বাবা যখন আমায় বাচিয়ে নিয়ে হসপিটালে নিয়ে যাচ্ছিলো, তখন উনি সবটা দেখেন। পরবর্তীতে উনিই বাবাকে সবকিছু খুলে বলেন। এই বাড়িটা দেখছো না? এটা আমার মায়ের দেওয়া বাড়ি। মা মৃ*ত্যুর পর আরো অনেক সম্পত্তি ও ফ্যাক্টরি পেয়েছিলেন। উইল অনুযায়ী, সেগুলোর বর্তমান মালিক আমি। এতো বছর সেসব বাবা সামলাচ্ছে! আমি তো নিজেকে প্রস্তুত করছিলাম! অপরাধীকে নিজের হাতে শাস্তি না দিলে আমার শান্তি নেই। কিন্তু শাস্তি দেওয়ার পর তো আমাকেও শাস্তি পেতে হবে, তাই না? আমিও তো তখন খু*নী হয়ে যাবো! তখন এই বাচ্চাটার কী হবে? ওকে নিজের গর্ভে নিয়ে খু*ন করলে সবাই ওকে-ও খু*নী বলবে। আর যদি কোনোভাবে ওর জন্ম হয়েও যায়, তাহলে ওকে সারাজীবন শুনে যেতে হবে যে, ওর মা খুন করেছিল! আমি কীভাবে আমার সন্তানকে এমন একটা অ*ভি*শ*প্ত জীবন দিবো? বলতে পারো, সৌহার্দ্য? আমার এখন ঠিক কী করা উচিত?”

এক দৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকিয়ে সবটা বলার পর এখন তরী মুখ ঘুরিয়ে সৌহার্দ্যের দিকে তাকালো। সৌহার্দ্যের মুখ জুড়ে অসহনীয় বেদনার ছাপ। বললো,

“এসব ড. আরমান করেছে, তাই না?”

তরী দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, “ওনার চেয়ে নিকৃষ্ট মানুষ আর কেউ আছে নাকি যে, এসব করবে! এরপরও বলবেন, আমি ঠিক করছিলাম না?”

“তুমি অন্যায় করছিলে। আর অন্যায়কে ঠিক বলা যায় না। তুমি কেন নিজের হাতে আইন তুলে নিচ্ছো? তুমি এসব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো। আমার ওপর ভরসা রাখো। আমি ওনার যথাযোগ্য শাস্তির ব্যবস্থা করবো।”

তরী তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,

“সম্ভব না। যখন করার কথা ছিল, তখনই আপনারা কিছু করতে পারেননি। তখন ড. আরমানের কোনো ক্ষমতা-ই ছিল না৷ এতো বছরে তিনি নিজের ভিত অনেক শক্ত করেছেন। এখন ওনার কিচ্ছু বিগড়াতে পারবেন না আপনারা।”

সৌহার্দ্য অবাক হয়ে বললো,

“কেন? তোমার এমন কেন মনে হয়?”

“কারণ উনার শেকড় এখন অনেক মজবুত। আর সেটা আমাকেই উপড়ে ফেলতে হবে। আমি চাইলে ওনাকে শাস্তি দেওয়ার পর নিজেকে বাঁচাতে পারি। সবটা অস্বীকার করতে পারি। আমার ততটুকু ক্ষমতা আছে। কিন্তু সেটা করলে ড. আরমানের সাথে আমার কোনো পার্থক্য থাকবে না।”

সৌহার্দ্য নিজের কপাল চেপে ধরে দিগ্বিদিক শূন্য হয়ে আশে পাশে তাকালো। হতাশ হয়ে বললো,

“তুমি… তুমি সবটা ভুলে যাও। ভুলে যাও তোমার অতীত!”

তরী নির্বাক হয়ে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। বললো,

“কী? আমি সবটা ভুলে যাবো? এসব তুমি কী বলছো?”

“যা বলছি, ভেবেচিন্তে বলছি। তুমি সবটা ভুলে যাও। কারো কোনো শাস্তির দরকার নেই। কারো কাছ থেকে কোনো প্রতিশোধ নিতে হবে না। তুমি আর আমি সাধারণ ভাবেই সারাজীবন কাটিয়ে দেবো। কোনো প্রয়োজন নেই অতীতের জন্য নিজের ভবিষ্যৎ নষ্ট করার। তোমাকে একবার হারানোর পর ফিরে পেয়ে আবার হারানোর কষ্ট সহ্য করার মতো শক্তি আমার নেই। তুমি শুধু আমার দিকটা একবার ভেবে দেখো।”

বলেই এগিয়ে এসে তরীর হাত আকড়ে ধরলো। সৌহার্দ্য কাঁদছে। তরী অবাক চোখে চেয়ে রইলো ওর দিকে। হঠাৎ বলে উঠলো,

“আমি পারবো না, সৌহার্দ্য। আমার মায়ের আর্তনাদ আজও আমাকে ঘুমাতে দেয় না। এতো দূর এগিয়ে এসে আর পিছিয়ে যেতে পারবো না আমি।”

সৌহার্দ্য তরীকে নিজের সাথে চেপে ধরে বললো,

“আমার কি কোনো মূল্য নেই তোমার কাছে? আমি, আমার ভালোবাসা আর আমাদের সন্তানের দোহাই কি যথেষ্ট নয় তোমার জন্য? প্লিজ, ভুলে যাও সব। আমরা অনেক দূরে চলে যাবো। দেখো, অনেক সুখে থাকবো। তুমি শুধু আমার কথাটা মেনে নাও।”

সৌহার্দ্য করুণ দৃষ্টিতে তাকালো তরীর দিকে। তরী সেটা দেখেও নিজের চোখ নামিয়ে ফেললো। সে নিজের সিদ্ধান্তে অনড়। সৌহার্দ্যের কথা মেনে নেওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়। সৌহার্দ্য সেটা বুঝতে পেরে রেগে তরীকে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে ফেললো। চোখের পানি মুছে হতাশ কন্ঠে বললো,

“আমার সবচেয়ে বড় ভুল ছিল, আমি তোমায় ভালোবেসেছিলাম। আর এই ভুলের মাশুল আমায় সারাজীবন গুনতে হবে। আজকের পর থেকে আমি ভেবে নেব, আমার চাঁদ মরে গেছে। তুমি আমার কাছে মৃত! আমার জীবনে ফেরার চেষ্টা কখনো করবে না।”

সৌহার্দ্য পা ঘুরিয়ে চলে গেল তরীর সামনে থেকে। তরী পাথরের ন্যায় এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ওর যাওয়ার দিকে। অপলক সেই চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। কিন্তু তরী নড়লো না একবিন্দুও!

-চলবে….

#প্রণয়াসক্ত_পূর্ণিমা
#Writer_Mahfuza_Akter
পর্ব-৪০

তরী হলরুমের সিঁড়ির শেষপ্রান্তে হেলান দিয়ে বসে আছে। মন ও মস্তিষ্কের দ্বন্দ্বে ক্লান্ত হয়ে এলোমেলোভাবে বসে আছে সে। যতক্ষণ সে এই বাড়িতে থাকে, ততক্ষণ কারো ভেতরে আসার অনুমতি নেই। সকাল পেরিয়ে দুপুর হয়ে এসেছে, কেউ খাওয়ার কথা জিজ্ঞেসও করতে পারেনি ভয়ে। পৃথিবীর কোনো কিছুই এই মুহুর্তে তরীর চিন্তাজগৎকে স্পর্শ করতে পারছে। তার একমাত্র ভাবনা এখন সৌহার্দ্য আর এই অনাগত সন্তানকে নিয়ে। হয় এই দুজনকে একই সাথে আগলে নিতে হবে, নয়তো দুজনকেই ছাড়তে হবে। কিন্তু আগলে নিলে তার বাবাকে ছেড়ে দিতে হবে, যেটা সম্ভব-ই নয়। এতো বছরের শ্রম, প্রচেষ্টা ও প্রতীক্ষা এক মুহূর্তে শেষ করে দেওয়ার কথা ভাবলেই মাথা কাজ করা বন্ধ করে দেয় তরীর। তবে সৌহার্দ্য আর এই বাচ্চাটাকে ছাড়ার কথা ভাবলে ওর নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে।

“ম্যাম! ডিস্টার্ব করার জন্য সরি। আসলে অরুণী নামের একজন আপনার সাথে দেখা করতে চাইছে। নিষেধ করলেও শুনছে না!”

কথাটা শুনে ভ্রু কুঁচকে গেল তরীর। নড়েচড়ে বসে অস্ফুটে বললো,

“পাঠিয়ে দাও!”

লোকটা কিছুক্ষণ অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো। তরী এভাবে অনুমতি দিয়ে দিবে, ভাবতেও পারেনি হয়তো! অবাকতা নিয়েই বেরিয়ে গেল বাইরে।

কয়েক মিনিটের মধ্যে অরুণী ভেতরে এলো। তরীকে এভাবে এলোমেলো হয়ে বসে থাকতে দেখে কৌতুকের হাসি খেলে গেল ওর মুখ জুড়ে। নিজের গায়ে জড়ানো চাদরটা ভালো করে জড়িয়ে নিয়ে বললো,

“এই ঠান্ডায় শীত লাগছে না তোর? অতি শোকে পাথর হয়ে গেলি নাকি? তেমন কোনো শোক তো এখনো আসেইনি!”

তরী বিস্ফোরিত চোখে তাকালো অরুণীর দিকে। অরুণী ভ্রু নাচিয়ে হাসলো। তরী বসা থেকে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললো,

“কেন এসেছো এখানে?”

“কেন এসেছি, এটা জিজ্ঞেস করার আগে ‘কীভাবে এসেছি’ এটা জিজ্ঞেস করা উচিত ছিল তোর।”

তরী তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,

“তুমি আর তোমার বাবা আমার ব্যাপারে সব ধরনের খোঁজ নিয়েই ফেলেছো। এখানে আসাটা তোমার জন্য খুব কঠিন কোনো ব্যাপারই না।”

“বাহ! বুদ্ধি আছে তোর, মানতেই হবে। যাই হোক! সৌহার্দ্যকে তোর প্রেগ্ন্যাসির খবরটা আমিই দিয়েছিলাম। ওর আবার বেবি অনেক পছন্দ। কিন্তু তুই যে বেবিটা রাখবি না, এটাও আমি জানতাম। তবে আমি তোকে বলবো যে, সৌহার্দ্যের কথা শুনিস না। বেবিটা রাখার দরকার নেই। ওকে তো মরতেই হবে! হয় আজকে, নয় তো কাল!”

বলেই বাঁকা হাসলো অরুণী। তরী রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,

“আমাকে কী করতে হবে না হবে, সেটা তোমার থেকে জানতে হবে না আমার। তোমার কথা শেষ হয়ে থাকলে বেরিয়ে যাও!”

“আমি তো তোর ভালোর জন্যই বলছি! যতই হোক, আমার একমাত্র ছোট বোন! তুই সৌহার্দ্যের কথা মেনে নিয়ে তোর অতীতের সবকিছু ভুলে নতুনভাবে জীবন শুরু করতে চাইলেও, তোর অতীত তোর পিছু ছাড়বে না। আমি ছাড়তে দেবো না। তোকে সৌহার্দ্যের জীবন থেকে দূরে সরাবোই আমি, সেটা তোর মৃত্যুর মাধ্যমে হলেও সরাবো। এই বেবিটা না রাখলে তখন নিজেকে প্রটেক্ট করতে পারবি। কিন্তু রাখলে তোদের দুজনকেই মরতে হবে। এখন চয়েস তোর!”

অরুণী হাসতে হাসতে চলে গেল। তরী ঝাপসা চোখে বিমর্ষ ভঙ্গিতে তাকিয়ে রইলো। দুকূলেই তার বিশাল ঢেউ। ঠিক মধ্যখানে দাঁড়িয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছে তরী। অরুণী যা বলেছে, সবই ঠিক। তবে বাচ্চাটাকে না রাখলে সৌহার্দ্যের সামনে গিয়ে আর দাড়াতে পারবে না কোনো দিন। মাথার চুল খামচে ধরে তরী চিন্তা করতে লাগলো এখন তার ঠিক কী করা উচিত! নিজেকে স্বাভাবিক করে অনেকক্ষণ ভাবলো সে। সব পরিস্থিতি বিবেচনা করে একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিলো। এই মুহুর্তে এটা ছাড়া আর কোনো উপায় তার হাতে নেই। তপ্ত শ্বাস ফেলে নিজের ঘরে গিয়ে সৌহার্দ্যকে কল করার জন্য ফোনটা হাতে নিলো তরী।

এইদিকে,
মিস্টার রায়হান সোফায় বসে বসে চা খাচ্ছিলেন। সৌহার্দ্যকে একা বাড়িতে ঢুকতে দেখে মিস্টার রায়হান অবাক হয়ে বললেন,

“তুমি একা এসেছো কেন? আমার বউমা আসেনি? তোমার মা-বোন তো সুখবর পেয়ে কত তোড়জোড় লাগিয়ে দিয়েছে! আর তোমার দাদীর কথা তো বাদ-ই দাও!”

সৌহার্দ্য শুনেও কিছু বললো না। ধীর পায়ে হেঁটে নিজের ঘরের দিকে চলে গেল। হাত দিয়ে মুখ ঢেকে বিছানায় বসে রইলো কিছুক্ষণ। হঠাৎ ফোন বেজে ওঠায় পকেট থেকে ফোন বের করে দেখলো, তরী কল দিয়েছে। না চাইতেও চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়লো সৌহার্দ্যের। ফোন কানে চেপে বললো,

“কেন এমন করছো, চাঁদ? তোমাকে ছাড়া আমার দমবন্ধ লাগছে। এই কয়েকটা মুহুর্ত কিভাবে বেঁচে ছিলাম, আমি নিজেও ভাবতে পারছি না।”

তরীও কেঁদে দিলো কথাটা শুনে। আঁচল দিয়ে মুখ চেপে ধরে কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারলো না। সৌহার্দ্য আবারও বললো,

“একটু স্বার্থপর হও না! আমার জন্য। এই যে দেখো! আমার শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। তুমি ছাড়া আমার সব অনুভূতি ফিকে হয়ে গেছে। কাঁদতে চেয়েও পারছি না। কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না। একবার সব ভুলে চলে এসো। আমার জন্য, আমাদের সন্তানের জন্য। আমার প্রতি কি একটুও মায়া হচ্ছে না তোমার?”

“আমি ভুলতে পারবো না, সৌহার্দ্য। তোমাকেও না, আমার মাকেও না। আমি ভুলতে চাইলেও সবটা সমাধান হয়ে যাবে না।”

“তাহলে তুমি কী করবে এখন? আমার সন্তানকে মেরে ফেলবে? আমি তোমাদের দুজনকে একসাথে চাই, তরী! তোমাদের দুজনকেই!!”

তরী চোখ মুছতে মুছতে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

“আমি এখন তোমার কাছে ফিরতে পারবো না, সৌহার্দ্য। তবে আমি যেদিন ফিরে আসবো, সেদিন তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিতে পারবে না। আমার বিশ্বাস এবং ভালোবাসা তোমার কাছে আমানত রইলো। আশা করছি, তুমি সেটার মান রাখবে।”

তরী কল কেটে দিলো। সৌহার্দ্য হতভম্ব হয়ে গেল তরীর কথা শুনে। তরী ঠিক কী বুঝাতে চাইলো? তরী কি সত্যি সত্যিই এবোরশন করিয়ে ফেললো? সৌহার্দ্যের মাথা কাজ করছে না। এমনসময়ই প্রহর কল দিলো সৌহার্দ্যকে। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে প্রহরের উচ্ছ্বসিত কন্ঠস্বর ভেসে এলো,

“কনগ্রেটস!! এতো বড় সুখবর তোর বোনের কাছ থেকে শুনতে হলো? তোর বোনের সাথে প্রেম না করলে তো আমি কিছু জানতেই পারতাম না মনে হয়। পরে হঠাৎ একদিন আমার কোলে বাচ্চা ধরিয়ে দিয়ে বলতি, ‘এই যে, তোর ভাতিজা!’ আর আমার আত্মা তখন আমার নাকের ডগায় ঝুলতো। কী সাংঘাতিক ব্যাপার!! ”

সৌহার্দ্য কোনো উত্তর দিলো না। নির্জীব হয়ে বসে রইলো। সাড়াশব্দ না পেয়ে প্রহর বললো,

“সব ঠিক আছে? তুই কথা বলছিস না কেন? আমি নিশ্চিত কোনো ঝামেলা হয়েছে।”

সৌহার্দ্য নাক টেনে বললো,

“তরী বাচ্চাটা রাখতে চায় না। এখন বলছে, আমার কাছে ফিরবেও না। আমার সাথে কেন এমন করছে ও? ও কি আমাকে একটুও ভালোবাসে না!”

প্রহর হতভম্ব হয়ে বললো, “হোয়াট? কী বলছিস এসব? আগামাথা কিছু বুঝতে পারছি না।”

সৌহার্দ্য প্রহরকে সবটা খুলে বললো। প্রহরের মুখ হা হয়ে গেল সবটা শুনে। সৌহার্দ্য বললো,

“আমাকে ও হয়তো কোনো দিন ভালোই বাসেনি! আমিই বোকা ছিলাম।”

“সৌহার্দ্য, তুই আসলেই বোকামো করেছিস। ওর কথায় যুক্তি আছে। কিন্তু তুই ওকে নিজের থেকে দূরে সরার সুযোগ দিলি কীভাবে? আজ বুঝতে পারলাম, মেয়েটাকে আমি যতটা খারাপ ভাবতাম, ও ততটা খারাপ নয়। তুই ওকে নিজের কাছে ফিরিয়ে নিয়ে আয়। ওর বাসায় যা! ওকে তোর থেকে দূরে যেতে দিস না। বাচ্চার কথা পরে ভাবা যাবে। কিন্তু একবার ও চলে গেলে, আর ফিরে আসবে না।”

সৌহার্দ্য কিছুক্ষণ অবুঝের মতো বসে থেকে গাড়ির চাবি নিয়ে আবার বেরিয়ে গেল। দ্রুত গতিতে গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে তরীর ডুপ্লেক্স বাড়ির দিকে চলে গেল। বিকেলের দিকে সেখানে পৌঁছতেই দারোয়ান ওকে দেখে বললো,

“আপনি এখন আসছেন? ম্যাডাম তো দুপুরের খাবার খেয়েই চলে গেছে!”

সৌহার্দ্য অবাক হয়ে বললো, “চলে গেছে? কোথায় চলে গেছে?”

“সেটা তো জানি না! বাড়িও এখন খালি। আজাদ ভাইয়ের বউও চলে গেছে সকালে। ম্যাম হয়তো আর ফিরবে না।”

সৌহার্দ্য কিছু ভাবতে পারলো না আর। মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিলো। ধপ করে মাটিতে বসে পড়লো সে। জনমানবহীন বাড়িটার দিকে তাকিয়ে রইলো অপলক।

🍂🍁 বর্তমান 🍁🍂

“এরপর? এরপর কী হয়েছিল, বাবা? তরী কি আর ফিরে আসেনি?”

সৌহার্দ্য চশমা খুলে নিজের চোখ মুছলো। প্রণয়ী উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সৌহার্দ্যের দিকে। সৌহার্দ্য হেসে ওর নাক টেনে বললো,

“এসেছিল তো! কিন্তু এখন ঘুমাতে হবে আমাদের। অনেক রাত হয়ে গেছে। কালকে ক্লাস আছে না? সো, নো মোর ওয়ার্ডস্।”

আরিভা শুয়ে পড়তেই সৌহার্দ্যের অপর পাশ থেকে প্রণয় বলে উঠলো,

“ও আজ আর ঘুমাবে না। সারারাত সৌহার্দ্য আর তার চাঁদকে নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করবে, আর সারাদিন সবাইকে এটা নিয়ে জিজ্ঞেস করবে কাল। দেখিও তুমি, বাবা!”

প্রণয়ী রাগী কন্ঠে বললো,

“ভাই! একদম খোঁচাবে না আমাকে। এখন তোমার সাথে ঝগড়া করার কোনো ইচ্ছে নেই আমার।”

“তোর সাথে ঝগড়া করে কে? তুই-ই তো ঝগড়ুটে!”

“কী বললে?”

সৌহার্দ্য দুই হাতে দুজনের মুখ চেপে ধরে বলে,

“চুপ! আর একটা কথাও না। কালকে আমার ডিউটিআছে হসপিটালে। ঘুমাও দুজন চুপচাপ। প্রণয় নিজের মুখ থেকে সৌহার্দ্যের হাত সরিয়ে বললো,

” আমি কী করেছি, বাবা? প্রণয়ী-ই তো শুধু বেয়াদবি করে। আমি ওর থেকে এক মিনিটের বড়। ও মানেই না সেটা।”

প্রণয়ী অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো প্রণয়ের দিকে। প্রণয় মিটমিট করে হাসছে। সৌহার্দ্য আলো নিভিয়ে দুজনের মাঝে শুয়ে পড়লো। মনে মনে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ভাবলো,

“আমি জানি তুমি ফিরবে আমার কাছে, চাঁদ। আমাদের সন্তানদের জন্য হলেও তোমায় ফিরতে হবে। আমার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত তোমার অপেক্ষায় থাকবো আমি। আর আমার বিশ্বাসের জয় হবেই। তুমি আবার ফিরবে আমার কাছে।”

-চলবে…

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ