Monday, October 6, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"প্রণয়াসক্ত পূর্ণিমাপ্রণয়াসক্ত পূর্ণিমা পর্ব-৩৭+৩৮

প্রণয়াসক্ত পূর্ণিমা পর্ব-৩৭+৩৮

#প্রণয়াসক্ত_পূর্ণিমা
#Writer_Mahfuza_Akter
পর্ব-৩৭

প্রেগন্যান্সি রিপোর্টের পৃষ্ঠাগুলোতে একবার চোখ বুলিয়ে আপনমনেই মলিন মুখে হাসলো তরী। এমনটা তো হওয়ারই ছিল! শুধু কনফার্মেশনের জন্য টেস্টগুলো করানো। শাড়ির আঁচল মাথা পর্যন্ত টেনে বেরিয়ে গেল সে হসপিটাল থেকে।

পেছন থেকে অরুণী তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো তরীর চলে যাওয়ার দিকে। কিছু একটা মনে হতেই রিসিপশনে গিয়ে বললো,

“এক্সকিউজ মি! কিছুক্ষণ আগে একটা মেয়ে রিপোর্ট কালেক্ট করে গেল যে, নাম অরিত্রী সেহরীশ! ওনার কী প্রব্লেম?”

“খুন সম্ভবত উনি প্রেগন্যান্ট। শিওরলি বলতে পারছি না, ম্যাম!”

কথাটা শুনে অরুণীর মুখ মলিন হয়ে গেল। চোখের কোণে জল জমতে সময় নিল না। আঙুল দিয়ে পানিটুকু মুছতে মুছতে ভাবলো, এমনটা তো হওয়ারই ছিল!

৪১.
সৌহার্দ্য ডিউটি শেষে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে এলো। গাড়িতে ওঠার সময় সামনে তাকাতেই অদূরে অরুণী আর অর্ণবকে কথা বলতে দেখতে পেল। সৌহার্দ্য ভ্রুকুটি করে তাকিয়ে রইলো ওদের দুজনের দিকে কিছুক্ষণ। ‘ওরা দুজন এখন, এখানে, একসাথে কী করছে?’- প্রশ্নটা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে সৌহার্দ্যের। ওদের দিকে এগোতে গিয়েও এগোলো না। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে থেমে গেল। আজ তরীকে একটু বেশি সময় দেবে বলে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরছে সৌহার্দ্য। এমনিতেই তরীর কালকের আচরণে সে বেশ চিন্তিত। তাই আগ বাড়িয়ে অরুণীর কাছে যাওয়ায় মন সায় দিল না। ফোন বের করে ওদের দুজনের একটা ছবি তুলে নিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো সৌহার্দ্য।

অরুণী আর অর্ণবের একসাথে থাকাটা সৌহার্দ্যকে ভাবাচ্ছে বেশ। কেন যেন মনে হচ্ছে, ওদের দুজনের উদ্দেশ্য খুব একটা ভালো না! অর্ণব তরীকে ভালোবাসতো, এখনো বাসে হয়তো! ভয়টা এখানেই! সৌহার্দ্য গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে এসব ভাবছিল, এমন সময়ই প্রহর কল দিলো।

“আজকে দেখা করিস যদি তোর সময় হয়!”

সৌহার্দ্য দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, “আজকে সম্ভব না। হঠাৎ দেখা করার কথা বলছিস কেন? বাসায় চলে আয় আমার!”

“বাসার সবার সামনে এসব বলা গেলে তো চলেই আসতাম! তোর বউয়ের সামনে এসব বললে কখন দেখবি আমাকেই আকাশের তারা বানিয়ে দিবে!”

সৌহার্দ্য বিরক্ত হয়ে বললো, “স্টপ টকিং ননসেন্স!”

“সৌহার্দ্য, আ’ম সিরিয়াস! মজা করছি না আমি তোর সাথে। তরীর আচরণ আমার কাছে সন্দেহজনক লাগলেও এখন আমি নিশ্চিত যে, খু*ন*গুলো তরী-ই করেছে। এই সত্যিটা তুইও জানিস। আর খুব শীঘ্রই এটা প্রকাশ পাবে সবার সামনে। তখন….”

সৌহার্দ্য ওকে থামিয়ে দিয়ে বললো,

“কিছু প্রকাশ করবি না তুই। যা হওয়ার, তা হয়ে গেছে! চাঁদকে আমি আমার থেকে দূরে সরতে দিবো না। তোর সন্দেহ সত্যি বলে প্রমাণিত হলে তুই কিছু প্রকাশ করবি না। সব কেইস ক্লোজ করে দিবি। আমি চাঁদকে নিয়ে অনেক দূরে চলে যাবো।”

“সৌহার্দ্য, তুই পাগল হয়ে গিয়েছিস। তোর চাঁদের প্রেমে উ*ম্মা*দ হয়ে তুই ন্যায়-অন্যায় ভুলে গিয়েছিস!”

“হ্যাঁ, তোর যা মনে করার করে নে। কিন্তু আমি যা বলেছি, তুই সেটাই করবি। নয়তো আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।”

প্রহরকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সৌহার্দ্য ফোন কেটে দিলো। প্রহর হতাশ চোখে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে রইলো।

সৌহার্দ্য বাড়ি ফিরলো বিকেলে। হাতে একগোছা লাল গোলাপ আর মুখে হাসি নিয়ে নিজের ঘরে ঢুকতেই দেখলো, ঘরে কেউ নেই। সারাঘরে একবার চোখ বুলিয়ে হাত থেকে এপ্রোন আর স্টেথোস্কোপটা টেবিলে রাখলো। বারান্দা, ওয়াশরুম চেক করেও তরীকে না পেয়ে তার মাকে ডাকলো। সুজাতা কফি নিয়ে ঘরে ঢুকতেই সৌহার্দ্য বললো,

“মা! চাঁদ…. ”

“নিজের বাবার কাছে গেছে। দুপুরে বেরিয়ে ছিল, পরে আমাকে কল দিয়ে বললো, বাবার বাসায় কয়েকদিন থেকে আসবে। আমি আর কী বলবো?”

সৌহার্দ্য রাগী কন্ঠে বললো, “ও যেতে চাইলো, আর তুমি ওকে পারমিশন দিয়ে দিলে!”

সুজাতা অবাক হয়ে বললো,

“তো আমি ওকে আটকাবো কেন? আর তুই এমন করছিস কেন? তুই জানিস না? তোকে বলে যায়নি ও?”

“আমায় না জানালে জানবো কী করে? এমনটা কেন করলো ও? আমাকে একবার জানানোর প্রয়োজন মনে করলো না! ও জানে না, ওকে ছাড়া থাকতে পারি না আমি?”

সৌহার্দ্য গাড়ির চাবি নিয়ে আবার বেরিয়ে গেল। সুজাতা পেছন থেকে ডাকলেও শুনলো না। ড্রয়িংরুমে আসতেই দেখলো, প্রহর ভেতরে আসছে। সৌহার্দ্য অবাক হয়ে বললো,

“তুই? তুই আবার এখানে কেন এসেছিস?”

প্রহর মুখ বাকিয়ে বললো,

“তোরা বাপ-ভাই-বোন মিলে শান্তিতে থাকতে দিলে তো আর আসতাম না! কাছ দিয়েই যাচ্ছিলাম। মধু ফোন করে বললো, তোর বাবা নাকি দেখা করতে চেয়েছে আমার সাথে। তাই আসতেই হলো।”

সৌহার্দ্য কিছু না বলে দ্রুত গতিতে পা চালিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল। প্রহর হতভম্ব হয়ে ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,

“এই ছেলে আবার কই যাচ্ছে? মাত্র-ই না বাসায় ফিরলো!”

সৌহার্দ্য কয়েক মিনিটের মধ্যেই গাড়ি নিয়ে তরীর বাড়ির সামনে পৌঁছালো। কলিং বেল বাজানোর কিছু মুহুর্ত পর মোহনা দরজা খুলে দিলেন। সৌহার্দ্যকে দেখে হাসি মুখে বললেন,

“আরেহ্ বাবা, তুমি! এসো, ভেতরে এসো! তরী, দেখ কে এসেছে?”

সৌহার্দ্য কোনো রকমে হাসার চেষ্টা করে ভেতরে প্রবেশ করলো। ড্রয়িং রুমে তরী আর অর্ণবকে পাশাপাশি বসে থাকতে দেখে রাগের মাত্রা বেড়ে গেল সৌহার্দ্যের।

“কে এসেছে, মা?”

বলে সামনে তাকাতেই সৌহার্দ্যকে দেখে চোখ কপালে তুলে ফেললো তরী। অবাক কন্ঠে বললো,

“তুমি এখানে…”

সৌহার্দ্য রাগী দৃষ্টিতে একবার তরী আর একবার অর্ণবকে দেখে হনহনিয়ে তরীর রুমে চলে গেল। তরী হতভম্ব হয়ে সৌহার্দ্যের পিছু পিছু গেল। সৌহার্দ্য গম্ভীর হয়ে বিছানায় বসে আছে। তরী দরজা চাপিয়ে দিয়ে সৌহার্দ্যের সামনে এসে দাঁড়াতেই সৌহার্দ্য দ্রুত গতিতে উঠে দাঁড়িয়ে তরীর বাহু চেপে ধরলো। রাগী কন্ঠে বললো,

“প্রথমত, আমাকে না জানিয়ে এ বাসায় থাকতে এসেছো! দ্বিতীয়ত, অর্ণবের সাথে পাশাপাশি বসেছো আমি অপছন্দ করা সত্ত্বেও! এখন তোমায় কী শাস্তি দেওয়া উচিত, তুমিই বলো।”

তরী অবাক চোখে তাকিয়ে বললো,

“শাস্তি? ক্… কিসের শাস্তি? সৌহার্দ্য, আমার কথা শোনো। আমি তোমাকে রাতে জানাবো ভেবেছিলাম। তুমি তখন ফ্রী থাকতে, তাই তখন কল করবো ভেবেছিলাম।”

“শাট আপ! অজুহাত বানানো বন্ধ করো। তুমি ভালো করেই জানো, তোমার কল আমি এক রিংয়েই রিসিভ করি। সার্জারী থাকলে অন্য ব্যাপার! আমার থেকে দূরে থাকার জন্যই আজকে তুমি এখানে চলে এসেছো। কালকে রাতে তোমার কান্না দেখেই কিছুটা আন্দাজ করেছি আমি। নিশ্চয়ই কিছু একটা ঘটেছে! কী হয়েছে আমায় বলো?”

তরী ভীত দৃষ্টিতে সৌহার্দ্যের দিকে তাকালো। নিজেকে সামলে আশে পাশে তাকাতে তাকাতে বললো,

“কিছু হয়নি, সৌহার্দ্য! তুমি বেশি ভাবছো। বাবা আমার সাথে দেখা করতে চেয়েছিল, তাই ভাবলাম কয়েকদিন এখানে থেকে যাই।”

সৌহার্দ্য ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো তরীর দিকে। কেন যেন চেয়েও তরীকে ওর বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হচ্ছে না! তবুও বললো,

“তাহলে দেখা করে চলে যাই, চলো। এখানে থাকতে হবে না। এই অর্ণবের সাথে এক বাড়িতে তো আমি তোমাকে থাকতে দেবোই না!”

তরী আমতা আমতা করে বললো,

“অর্ণব ভাই তো এ বাড়িতে শুধু রাতে থাকে। সারাদিন তো থাকে না। তুমিও থাকো আজকে। আমি শুধু দুদিন থাকবো। পরশু চলে যাবো বাসায়!”

অনিচ্ছা সত্ত্বেও সৌহার্দ্য মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। তরী খুশি হয়ে বললো,

“আমি কফি নিয়ে আসছি তোমার জন্য।”

“নিজের জন্যও এনো। একা একা কফি খাই না আমি তোমাকে ছাড়া।”

তরী শাড়ির আঁচল কোমরে গুঁজে রান্নাঘরে চলে গেল। কয়েক মিনিটের মধ্যেই দুই কাপ গরম গরম কফি এনে একটা সৌহার্দ্যের হাতে দিলো। দুজনে কফি খেতে খেতে গল্প করলো অনেক। সৌহার্দ্য কফি খাওয়া বাদ দিয়ে তরীর হাসি মুখের দিকেই তাকিয়ে রইলো। এই একটা জায়গায়ই তার সকল সুখ, আনন্দ, আবেগ, অনুভূতি।

হঠাৎ গা গুলিয়ে উঠতেই তরী চমকে বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেল। ছুটে ওয়াশরুমে চলে গেল সে। এই ভয়টা-ই সে পাচ্ছিল। এখন সৌহার্দ্যের হাতে ধরা না পড়লেই হয়। সৌহার্দ্য হন্তদন্ত হয়ে তরীর পিছু পিছু এলে তরী সৌহার্দ্যের মুখের ওপর দরজা লাগিয়ে দিলো। ব*মি করে ফ্রেশ হয়ে দশ মিনিট পর ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো তরী। শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখ মুছতেই দেখলো, সৌহার্দ্য ওর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তরীর বুক কেঁপে উঠল এই ভয়ে যে, সৌহার্দ্য সবটা বুঝে ফেললো কি না!

সৌহার্দ্য এগিয়ে এসে তরীর চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। ওর হাতের কব্জি চেপে ধরে মনযোগী ভঙ্গিতে কিছু একটা পরখ করলো। পরমুহূর্তেই অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তরীর ভীত মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে বললো,

“প্রেগ্ন্যাসি টেস্ট করতেই অরুণীর হসপিটালে গিয়েছিলে, তাই না?”

-চলবে…….

#প্রণয়াসক্ত_পূর্ণিমা
#Writer_Mahfuza_Akter
পর্ব-৩৮

“এতো বড় একটা নিউজ তুমি আমার থেকে লুকিয়ে রেখেছো? আমাকে এটা বলো যে, তোমার মাথায় আসলে চলছেটা কী?”

সৌহার্দ্য চোখ-মুখ শক্ত করে তাকিয়ে আছে তরীর দিকে। তরী অস্থির হয়ে উঠছে। তার চোখে-মুখে শঙ্কা, অস্বস্তি স্পষ্ট। সৌহার্দ্যের সামনে থেকে সরে দাঁড়িয়ে হুট করে বিছানায় বসে পড়লো। সৌহার্দ্য ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো তরীর দিকে। কেন যেন সবকিছু ঠিকঠাক লাগছে না! তরী হাতে হাত ঘষছে, ছটফট করছে। সৌহার্দ্য বললো,

“এমন ছটফট করছো কেন? তোমার হাবভাব দেখে কেন যেন স্বাভাবিক লাগছে না!”

“না! তেমন কিছু না।”

“তুমি কি টেনশন করছো কিছু নিয়ে? আমাদের বেবি আসছে, এতে তুমি হ্যাপি নও? তুমি তো দুইদিন আগে জেনেছিলে প্রেগ্ন্যাসি নিয়ে! আমাকে একবারও বললে না কেন? আর সবচেয়ে বড় কথা হলো তুমি টেস্ট করাতে গিয়েছিলে? তাও আবার অরুণীর হসপিটালে? কেন? আমি থাকতে তোমার এতো কিছুর কী প্রয়োজন? আমাকে একবার বললেই পারতে তোমার প্রব্লেমগুলো। এছাড়া তুমি আমার হসপিটাল বাদ দিয়ে অন্য হসপিটালে গিয়েছো। সবদিক বিবেচনা করে আমার ধারণা এক জায়গায় গিয়েই দাঁড়ায়। আর সেটা হলো, তুমি আমার থেকে সবটা লুকাতে এতো কিছু করেছো!”

তরী চকিত দৃষ্টিতে তাকালো সৌহার্দ্যের দিকে। সৌহার্দ্যের চোখে সন্দেহ। তরী তড়িৎ গতিতে মাথা নাড়িয়ে বললো,

“না! না!! তুমি… তুমি আমাকে ভুল বুঝছো।”

“তাহলে ঠিক কোনটা? বুঝাও আমাকে!”

“আসলে… আমি আসলে তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম! এজন্যই এতো কিছু করতে হলো।”

সৌহার্দ্য ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো তরীর দিকে। অবিশ্বাসের হাসি হেসে বললো,

“আর ইউ শিয়র?”

তরী মুখ ছোট করে বললো, “হুম! কিন্তু আমার প্ল্যানে তো পানি ঢেলে দিলেন আপনি। এজন্য দূরে চলে এসেছিলাম আমি। তোমার ডাক্তারি চোখ থেকে তো কিছু লুকোনো সম্ভব নয়! হুহ!!”

সৌহার্দ্য হেসে তরীকে নিজের বাহুতে জড়িয়ে নিয়ে বললো,

“তো এই ছিল আমার ম্যাডামের প্ল্যান! আচ্ছা, যাও। তোমার প্ল্যান অনুযায়ী কিছু হয়নি তো কী হয়েছে? তুমি আমায় সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলে না? আমি সত্যি-ই অনেক সারপ্রাইজড্ হয়েছি, অনেক খুশিও! আমি ভাবতেও পারছি না, চাঁদ! আমি বাবা হবো, তুমি মা হবে। আমার পরিচয় পাবে। আমি ওকে নিজে কথা শেখাবো। আমার আঙ্গুল ধরে ও হাটা শিখবে। আমি সত্যি-ই অনেক এক্সাইটেড এটা নিয়ে! ইট’স দ্য বেস্ট ফিলিং ওফ মাই লাইফ।”

সৌহার্দ্য তরীর মাথায় গভীরভাবে ওষ্ঠ স্পর্শ করলো। তরী হাসার চেষ্টা করেও পারলো না। মাথা তুলে সৌহার্দ্যের দিকে তাকিয়ে দেখলো, ওর চোখের কোণে জল টলমল করছে। তরী মলিন মুখে বললো,

“বাচ্চা এতো পছন্দ আপনার? আগে তো কখনো বলেননি!”

সৌহার্দ্য হেসে বললো, “আসলেই! অনেক পছন্দ আমার। আমার চোখের সামনে কোনো বেবি পড়লেই ওকে আমি কোলে নেই। সেই ছোট ছোট হাত, একটা নিষ্পাপ মুখ, চাহনি অসাধারণ সুন্দর। আমার চোখে দেখা সেরা সৌন্দর্য!”

তরী থমথমে মুখে হাসার চেষ্টা করলো। সৌহার্দ্য নিজের ফোন হাতে নিয়ে বারান্দার দিকে যেতে যেতে বললো,

“ডিনারের ব্যবস্থা করো। এমনিতেও খিদে পেয়েছে প্রচুর। আমি সবাইকে গুড নিউজটা জানাই ততক্ষণে। সবাই অনেক খুশি হবে।”

ঘড়ির কাটা রাত দুটোর ওপারে। বাইরে থেকে ডাহুকের শব্দ কানে ভেসে আসছে। এই মধ্যরাতে সবাই ঘুমে বিভোর। তরী সৌহার্দ্যের বুক থেকে মাথা তুলে ওর মুখের দিকে তাকালো। আবছা আলোয় সৌহার্দ্যের ঘুমন্ত মুখটা আর ঘন ঘন নিঃশ্বাসের শব্দে তরী নিশ্চিত হলো সৌহার্দ্য গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন। তরী ধীর গতিতে সৌহার্দ্যের বাহু বন্ধন ছাড়িয়ে নিয়ে শোয়া থেকে উঠে দাড়ালো। চোখের কোণে জমে ওঠা অশ্রু মুছে ফেলে নিজের ব্যাগটা ড্রয়ার থেকে বের করে নিঃশব্দে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।

পাঁচ মিনিটের মাথায়ই বাসার গেইটের মাথায় এসে দাঁড়ালো। কয়েক সেকেন্ড পর একটা কালো গাড়ি তরীর সামনে এসে দাঁড়ালো। তরী ড্রাইভিং আর ফ্রন্ট সিটে বসা দু’জনের দিকে রোষিত চোখে তাকিয়ে বললো,

“বলেছিলাম না গেইটের সামনে আগে আগে এসে দাঁড়াতে? আমি আসার পর কেন তোমাদের দেখলাম না কেন? স্টুপিড!”

তরী রেগেমেগে গাড়িতে উঠে বসলো। গাড়ির ডোর লাগানোর সময় দেখতে পেল, মিস্টার আফনাদ নিজের ঘরের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে তরীর দিকেই তাকিয়ে আছেন। তরী গাড়ির ডোর লাগাতেই মিস্টার আফনাদের কল এলো। তরী রিসিভ করলো কল,

“হ্যাঁ, বাবা।”

“যা করার ভেবেচিন্তে করো। জানি না কেন আজ রাতেই তোমার কী প্রয়োজন পড়লো! কিন্তু এতো বছর তোমার পাশে ছিলাম, তোমায় সাপোর্ট দিয়েছি, তোমার নির্ভরতার খুঁটি ছিলাম। আমি এক্সপেক্ট করছি, তুমি কোনো অন্যায় করবে না। আমার তরী কোনো অপরাধ করবে না। এটা আমার বিশ্বাস তোমার প্রতি। আশা করি তুমি আমার বিশ্বাস ভাঙবে না।”

তরী চোখ খিঁচে বন্ধ করে বসে রইলো। কেউ তার ভেতরের র*ক্ত*ক্ষ*র*ণ দেখতে পাচ্ছে না। আজকের মতো অসহায় পরিস্থিতিতে তরী আজ পর্যন্ত কখনো পড়েনি। মা হওয়া সহজ নয়। আর একজন মায়ের বুকের হাহাকারের চেয়ে বড় কষ্ট এই পৃথিবীতে আর কিছু নেই। তরী নাক টেনে চোখ মুছে বললো,

“আমি অতোটাও ভালো নই, বাবা! আর আজ আমি একটা অন্যায় করার পথেই পা বাড়িয়েছি। আমার জীবনের প্রথম খু*ন করতে যাচ্ছি। তোমার বিশ্বাস ভঙ্গের জন্য আমি ক্ষমা চাইবো না, বাবা। কারণ আমি কারো ক্ষমার যোগ্য-ই থাকবো না আজকের পর থেকে।”

তরী ফোন কেটে সিমকার্ড খুলে ফেললো। ড্রাইভারকে তাড়া দিয়ে বললো, “আর এক ঘন্টা সময় পাবে তুমি। এর মধ্যে আমাকে পৌঁছে দেবে।”

ড্রাইভার ভীত দৃষ্টিতে তাকিয়ে গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে দিলো। সুনশান রাস্তায় ঝড়ের গতিতে ধুলো উড়িয়ে নিশ্চুপ শহরের বাইরের দিকে চলতে লাগলো গাড়িটি।

ফজরের আজান আশে পাশে ধ্বনিত হচ্ছে। তরী গাড়ি থেকে বেরিয়ে সোজা নিজের ডুপ্লেক্স বাড়ির ভেতরে চলে গেল। দারোয়ান সালাম দিলেও তরী শুধু উত্তর দিলো, কিন্তু কোনো দিকে তাকালো না। সিড়ি বেয়ে নিজের বেডরুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলো তরী। বিছানার উপরের দেয়াল জুড়ে নিজের মায়ের ছবির দিকে তাকিয়ে মুখে হাত চেপে কেঁদে উঠলো সে।

“মা, আমি অনেক খারাপ একটা কাজ করতে যাচ্ছি, তাই না? নিজের প্রতি ঘৃণা লাগছে আমার। কিন্তু আমি কী করবো, বলো? তুমি তো জানো সব! এই পৃথিবীতে কেউ কিছু না জানলেও তোমাকে তো আমি সবটা বলি। তুমি-ই বলো, আমার কাছে এটা ছাড়া আর কোনো উপায় আছে কি না? নেই তো। একটা নিষ্পাপ প্রাণকে পৃথিবীর আলোই দেখতে দিতে পারবো না আমি। এর চেয়ে আমার নিজের মরণও ভালো ছিল।”

হঠাৎ দরজায় কারো কড়া নাড়ার শব্দে চমকে উঠলো তরী। চোখ মুছতেই বাহির থেকে আওয়াজ ভেসে এলো,

“অরিত্রী, দরজা খোল, মা! ভেতরে বসে আবার কান্নাকাটি লাগিয়েছিস!”

দারোয়ান আজাদের স্ত্রী এসেছেন। তরী দরজা খুলে দিয়ে ওনাকে জড়িয়ে ধরলো। কাঁদতে কাঁদতে বললো,

“আমাকে তুমি কোনোদিনও ক্ষমা করো না, চাচী। আমার জন্য আজাদ চাচা মারা গেছেন। আমার জন্য আজ তুমি স্বামীহারা। তোমার এতো এতো কষ্টের জন্য শুধু আমি দায়ী, চাচী।”

“এসব কী বলছিস তুই, চাঁদ? তুই নিজেকে কেন দোষী ভাবছিস সব কিছুর জন্য? তোর দারোয়ান চাচার যতদিন পৃথিবীতে থাকার ছিল, তিনি থেকেছেন। এটার জন্য তুই দায়ী কেন হবি? তোর চাচাকে তো তুই খু*ন করিসনি, তাই না?”

“আমি আজ পর্যন্ত কাউকে খু*ন করিনি, চাচী। আমি তো শুধু মিস্টার আরমানের কাছ থেকে প্রতিশোধ নিতে চাই। এছাড়া কোনো অপরাধ করার কথা ভাবতেও পারি না আমি। কিন্তু আমার ভাগ্যটা-ই না অদ্ভুত! সবসময় আমার সাথে নিষ্ঠুরতা করে। আমার কপালে সুখ নেই, জানো চাচী? শুধু সৌহার্দ্যের ভালোবাসা পেয়েছিলাম। কিন্তু শেষ মুহুর্তে ওকেও ঠকাতে হচ্ছে আমায়!”

“সৌহার্দ্যকে ঠকাচ্ছিস মানে? আচ্ছা, তুই এতোদিন পর এখানে এলি! তোকে একটা কথা বলা হয়নি আমার। সৌহার্দ্য এসেছিল এখানে।”

তরী অবাক চোখে তাকিয়ে বললো, “কী? সৌহার্দ্য এসেছিল? ও কেন আসবে? চাচার মারা যাওয়ার পর ওর আসার তো কথা না!”

“এসেছিল। তোর চাচা মারা যাওয়ার আগে ওকে নিজের সিন্দুকের চাবি দিয়ে গিয়েছিল। যেই সিন্দুকে আমি বা তুই কোনোদিন হাত লাগাতে পারিনি, সেটার চাবি। ওতে কিছু কাগজপত্র আরো কী কী যেন ছিল! ওগুলো নিয়ে গেছে।”

তরী হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিচ্ছে ধীরে ধীরে। দিগ্বিদিক শূন্য হয়ে তরী বললো,

“তার মানে তো, সৌহার্দ্য আমার ব্যাপারে সব জানে! সব জেনে গেছে ও আগেই।”

“না, আমি এখনো কিছু জানি না! কিন্তু আজ আমি সবটা জানবো। আর তুমি যেই উদ্দেশ্য নিয়ে এখানে এসেছো, সেটা আমি কোনোদিন পূরণ হতে দেব না। আমার অনাগত সন্তানের মৃত্যু এই ড. সৌহার্দ্য রায়হান পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে সম্ভব নয়!”

তরী বিস্ফোরিত চোখে পেছনে তাকাতেই দেখলো সৌহার্দ্য ওর দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

-চলবে…..

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ