Monday, October 6, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"প্রণয়াসক্ত পূর্ণিমাপ্রণয়াসক্ত পূর্ণিমা পর্ব-৩১+৩২

প্রণয়াসক্ত পূর্ণিমা পর্ব-৩১+৩২

#প্রণয়াসক্ত_পূর্ণিমা
#Writer_Mahfuza_Akter
পর্ব-৩১

অরুণীর কপাল বেয়ে ঘামের সরু রেখা গাল ছুঁয়ে গড়িয়ে পড়ছে। হাত-পা থরথর করে কাঁপছে। ভীত দৃষ্টিতে আশেপাশে তাকাতে তাকাতে নিজেকে ধাতস্থ করার ব্যর্থ চেষ্টা করছে সে। হঠাৎ পাশে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে চমকে লাফিয়ে উঠলো অরুণী। ভয় ভয় চোখে তাকালো পাশের মানুষটার দিকে। সৌহার্দ্য হঠাৎ করে অরুণীর পাশে বসায় চমকে গিয়েছিল সে। একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো অরুণী। সৌহার্দ্য জহুরি দৃষ্টিতে পরখ করলো অরুণীর ভীত ও কম্পিত মুখটাকে। ছোট করে একটা শ্বাস ফেলে বললো,

“এখনো এই ভয়টা কাটেনি তোমার? অভ্যস্ত হতে পারছো না সার্জারীতে? এতো সময় কেন লাগছে তোমার?”

অরুণী টলমলে চোখে তাকালো। বললো,

“সব ভয় কে’টে যেত আমার! আমি সবটা নিজের চোখে দেখতে পারি, কিন্তু নিজের হাতে সার্জারী করার সাহস আমার নেই। তোমার মনে আছে, সৌহার্দ্য? আগে যখন আমি প্র্যাক্টিক্যালি সার্জারী দেখে ভয়ে কুঁকড়ে যেতাম, তখন তোমার বুকে মাথা রেখে শান্তি পেতাম। হয়তো জোর করে তোমায় জড়িয়ে ধরতাম! কিন্তু আমার একমাত্র ওষুধ তো এটাই ছিল!”

সৌহার্দ্য বিরক্ত হলো। চোয়াল শক্ত করে বললো,

“শাট আপ, অরুণী! তুমি সবসময়ই আমার কাছে আসতে চাইতে। আমি দূরে ঠেলে দিতাম। এখন এসব কথা টানছো কেন? তোমাকে এভাবে বসে থাকতে দেখে এখানে এসে বসেছি। তুমি কি চাও যে, এখন তোমায় আমার লাইফের অপরিচিত মানুষদের তালিকায় ফেলে দেই?”

অরুণী বিমর্ষ ভঙ্গিতে তাকালো সৌহার্দ্যের দিকে। মুখ খুলে আর কিছু বললো না। সৌহার্দ্য অরুণীর দিকে দৃষ্টিপাত না করে বললো,

“সার্জারি জিনিসটাকে নরমালি নেওয়ার চেষ্টা করো। তুমি একজন ডক্টর! এখনও এসবে অভ্যস্ত হতে না পারলে এটা হাস্যকর। তোমার ব্যর্থতা।”

সৌহার্দ্য উঠে দাঁড়াতেই অরুণী বললো,

“নিজের চাঁদকে নিজের করে পেয়েই গেলে! মেয়েটা আসলেই ভাগ্য নিয়ে জন্মেছে। তোমাকে আমার থেকে কেড়েই নিলো অবশেষে।”

সৌহার্দ্য শক্ত কন্ঠে বললো,

“অরুণী, ভুলে যেও না ও তোমার বোন!”

“এমন বোনের চেয়ে শত্রুও অনেক ভালো। ওর ব্যাপারে তো তুমি জানতে না, সৌহার্দ্য! তাহলে তুমি আমার সাথে কেন নাটক করলে? কেন আমাকে ঠকালে? আমি তো তোমাকে সত্যি সত্যিই ভালোবেসেছি। বিশ্বাস করো, সৌহার্দ্য! আমার ভালোবাসায় বিন্দু মাত্র খাদ নেই।”

সৌহার্দ্য তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,

“তোমার জীবনে করা পাপের শাস্তি এটা!”

৩৮.
ভেজা ঘাসের ওপর দিয়ে বেশ আনন্দ নিয়ে হাটছে মধু। আজ বেশ সকালে ক্লাস থাকায় তাড়াতাড়ি এসেছে তরী। বাসায় একা একা ভালো লাগবে না বলে মধুও চলে এসেছে ওর সাথে। তরীর ক্লাস এখনো শেষ হয়নি। মধু তাই একা একা-ই হাঁটছে।

“তোমাকে না নিষেধ করেছি একা একা থাকতে! আমার কথা শোনো না কেন, ল্যাভেন্ডার?”

মধু হোঁচট খেল। পড়তে পড়তে কোনো রকমে নিজেকে সামলে নিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। প্রহর মিটমিট করে হেসে বললো,

“এখনও হুটহাট পড়ে যাওয়ার রোগটা গেল না? আমার কথা না শুনলে এমন-ই হবে!”

মধু মুখ ভেঙিয়ে বললো,

“তোমার কথা কেন শুনবো আমি? তুমি কি খুব ভালো মানুষ নাকি? খারাপ লোক একটা! আমি তো পড়েই যাচ্ছিলাম! একবার ধরতেও এলো না।”

“তুমি কী চাও? আমি এখন ক্যাম্পাসে সবার সামনে তোমার প্রতি প্রেম দেখাই! ছেলেমেয়েরা দেখে কী বলবে? ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে টিচার ও স্টুডেন্টের মধ্যে প্রকাশ্যে প্রেম’- দারুণ না ব্যাপারটা? তারপর এটা নিয়ে জানাজানি হবে আর সবশেষে তুমি আর আমি ভাইরাল। হাহ্!!”

মধু প্রহরের কথা শুনে শব্দ করে হেসে দিলো। প্রহর ওর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। মধু খিলখিল করে হাসতে হাসতে বললো,

“আইডিয়াটা খারাপ না। যা-ই বলো! হা হা হা!!”

প্রহর হাতে হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে বললো,

“আচ্ছা? তাহলে এসো! কাছে এসো! জড়িয়ে ধরি তোমায়। সবাই দেখুক আমাদের মাঝের প্রেম।”

“জড়িয়ে ধরায় প্রেম আছে নাকি? মানুষজন তেমন পাত্তা দিবে না। এটা তো নরমাল ব্যাপার! একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরতেই পারে!”

প্রহর অবাক হয়ে বললো,

“তাহলে?”

মধু অদ্ভুত ভঙ্গিতে হেসে বললো,

“কেন? চু*মু খাবা! তুমি জানো না? প্রেম প্রকাশের জন্য এর থেকে ভালো আর কোনো উপায় হয় না! হা হা হা!”

প্রহর চোখ কপালে তুলে তাকালো। মধু এখনো হাসছে প্রহরের দিকে তাকিয়ে। প্রহর চোখ বড়বড় করে বললো,

“আস্তাগফিরুল্লাহ্!! তুমি তো অনেক খারাপ! কী বলছো ভেবে দেখেছো একবার? মধু, আ’ম ওয়ার্নিং ইউ! এরকম মানসিক অত্যাচার করো না আমার ওপর। পরে সামলাতে কষ্ট হবে তোমার।”

প্রহর তড়িৎ গতিতে পা চালিয়ে স্থান ত্যাগ করলো। মধু ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাসছে। প্রহরের সাথে মজা নিতে আজও অদ্ভুত তৃপ্তি পায় সে। এটার আর কোনো তুলনা-ই হয় না!

তরী ক্লাস থেকে বেরিয়ে হাতে থাকা ঘড়ির দিকে একবার নজর বুলিয়ে নিলো। মধুর ক্লাস শুরু হতে আরো এক ঘন্টার মতো সময় আছে। তরী তাই মধুর কাছে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো। ফোন বের করে মধুর নাম্বারে ডায়াল করতে নিতেই ওর কানে ভেসে এলো,

“হাই, অরিত্রী! কেমন আছো?”

হুট করে কারো মুখে নিজের নাম শুনে চমকে উঠলো তরী। সামনে তাকিয়ে দীপ্তের হাসি মুখ দেখে মনে মনে বিরক্ত হলো তরী। কিন্তু সেটা বুঝতে না দিয়ে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বললো,

“ভালো। আপনি ভালো আছেন?”

“ছিলাম না। কিন্তু এখন আছি। আর তুমি আমাকে আপনি করে বলছো কেন? তুমি করে বললেই তো পারো!”

তরী মুখে কৃত্রিম হাসির রেখা ফুটিয়ে বললো,

“আমি অপরিচিত মানুষদের তুমি বলে সম্বোধন করি না। দুঃখিত!”

দীপ্ত অবাক হয়ে বললো,

“অপরিচিত? অরিত্রী, আমি এখনো তোমার অপরিচিত? আমাদের মধ্যে তো পরিচয় হলো-ই! যদিও তেমন ভাবে আমরা একে অপরকে চিনি না।”

তরী ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো,

“শুনুন! আপনি বার বার আমার সাথে এভাবে অপ্রয়োজনে কথা বলার চেষ্টা করবেন না। আমার থেকে দূরে থাকবেন!”

“কেন? তুমি আমাকে ইগনোর করতে চাইছো কেন, অরিত্রী? আমার দেওয়া চিঠিটা দেখেছিলে? ঐটা নিয়ে ভেবো না। আমি তো জাস্ট….. ”

দীপ্ত আর কিছু বলতে পারলো না। কথা শেষ হওয়ার আগেই ওর গালে সশব্দে চড় একটা চড় পড়লো। দীপ্ত হতভম্ব হয়ে তরীর দিকে তাকিয়ে দেখলো, তরী অবাক হয়ে মুখে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার মানে তরী চড়টা দেয়নি। তরীর পাশে মধু দাঁড়িয়ে দীপ্তের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মধুকে দেখে দীপ্ত ভয়ে ঢোক গিললো। মধু দীপ্তের চোয়াল একহাতে চেপে ধরে বললো,

“তোর সাহস হয় কী করে ওকে ডিস্টার্ব করার? কী ভেবেছিলি? আমার থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে ওর মন জয়ের চেষ্টা চালাবি? গেটআপ পাল্টেছি, বস! ক্যারেক্টার না। হাত-পা আগের মতোই চলে এখনও!”

মধু দীপ্তকে ছেড়ে দিলো। দীপ্ত তড়িঘড়ি করে চলে যেতে নিলে মধু বললো,

“শোন! তরীর পেছনে ঘুরঘুর করে লাভ নেই। ও বিবাহিত, আমার ভাবী। তার মানে এই না যে, তুই অন্য মেয়েদের পেছনে ঘুরঘুর করবি। আরেক বার এরকম কিছু করতে দেখলে হাত-পা ভেঙে গলায় ঝুলিয়ে দেবো।”

দীপ্ত হাতাশার নিঃশ্বাস ফেলে চলে গেল। তরী মধুর দিকে তাকিয়ে বললো,

“এতো হাত চলে কেন তোর? আমি বুঝিয়ে কথা বলতাম ওর সাথে! ”

“হ্যাঁ দেখলাম তো! কত বুঝাচ্ছিলে তুমি! তোর কথা কানে নিতো এই ছেলে? এই ছেলে তোকে লাভ-লেটার দিয়েছে, সেটা আমি ভালো করেই জানি। এতো দূর ভেবে ফেলেছে, আর তুই বলছিস তুই বুঝালে ও বুঝতো? আজব পাবলিক মাইরি!”

মধু তরীর ওপর বিরক্ত হয়ে সামনের দিকে হাঁটতে লাগলো। তরীও কোনো উপায় না পেয়ে মধু পিছে পিছে হাটা দিলো।

সারাদিন ক্যাম্পাসেই কাটলো তরীআর মধুর। সন্ধ্যার দিকে প্রহর জোর করে ওদের ডিনার করাতে দিয়ে গেল। সব কিছু স্বাভাবিক লাগলেও প্রহরের জহুরি নজর তরীর চোখ এড়ায়নি। প্রহর বারবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তরীকে পর্যবেক্ষণ করছে। হয়তো কিছু বোঝার চেষ্টা করছে, কিন্তু বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। তরী আনমনে হাসলো, মনে মনে রহস্যের হাসি দিয়ে ভাবলো,

“অরিত্রী সেহরীশ কখনো কাঁচা কাজ করে না, প্রহর সাহেব। সাক্ষ্য-প্রমাণহীন কাজ করতেই অভ্যস্ত সে। শুধু শুধু তার পেছনে লেগে সময় নষ্ট করছেন। তবুও মনের শান্তি-ই বড় শান্তি। সেজন্য যা খুশি করতে পারেন। তবে অরিত্রী আপনার ধরা-ছোয়ার বাইরে। সে তো র*ক্ত ঝরাবে-ই! র*ক্তের প্লাবন বইয়ে দেবে। আটকাতে পারবেন না আপনারা! কেউ আটকাতে পারবেন না।”

-চলবে……

#প্রণয়াসক্ত_পূর্ণিমা
#Writer_Mahfuza_Akter
পর্ব-৩২

ঘড়ির কাটায় রাত বারোটা! কুয়াশাচ্ছন্ন এই অন্ধকার রাতে বাইরের পরিবেশ অস্বাভাবিক নীরব। সেই নীরবতা ভেদ করে দ্রুত গতিতে গেইট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো আরমান সাহেবের গাড়িটি। সারাজীবন মাঝরাতে বাড়ি ফিরলেও এখন আর বেশি রাত বাইরে থাকেন না তিনি। মনের ভেতর একটা অদ্ভুত ভয় কাজ করে। কেন যেন মনে হয় তার মৃত্যু আসন্ন! তাই যত দ্রুত পারেন, বাড়ি ফেরার চেষ্টা করেন। তবুও দেরী হয়েই যায়!

ড্রয়িং রুমে বসে অরুণী পড়ছে। ইদানীং মেয়েটা নিজের পড়াশোনার বাইরেও অতিরিক্ত বই পড়ে। বিষয়টা চোখে পড়েছে আরমান সাহেবের। তিনি এ ব্যাপারে তেমন মাথা ঘামান না। মেয়েটার জীবন তো তিনি-ই নিজ দায়িত্বে শেষ করে দিয়েছেন! এখন তারা সামান্য ভালো লাগায় হস্তক্ষেপ করার ইচ্ছে নেই তার। সময়ও নেই। আরমান সাহেব নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ালেন।

“এতো রাত করে বাড়ি ফেরার কী দরকার, বাবা? এমনিতেই তো মৃত্যু পিছু পিছু তাড়া করে বেড়াচ্ছে! কে জানে? কেউ হয়তো তোমার শ*রী*রের সমস্ত র*ক্ত দিয়ে নিজের গা ধোয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে ঘুরছে। বলা তো যায় না!”

আরমান সাহেবের পা থেমে গেল মুহুর্তেই। পুরো শরীর শিরশিরিয়ে উঠলো যেন! মৃ*ত্যু! শব্দটা অদ্ভুত ভ*য়ং*ক*র। আর নিজের মেয়ের হাতে প্রাণ যাওয়াটা তো আরো বেশি মা*রা-ত্ম*ক! না, এটা ঘটতে দেওয়া যাবে না। অরুনীর দিকে তাকালেন তিনি। মেয়েটা কেমন শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে! অরুণীকে তো তিনি জানাননি কিছুই! সে এখনও জানে না যে, তার মায়ের খু*নী তার-ই প্রিয় বাবা। কিন্তু এখন অরুণীর কথা গুলো আরমান সাহেবের গায়ে কা*টা দিয়ে উঠছে। তিনি কিছু মুহুর্ত ভাবলেন। নিজের তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তাকে সূক্ষ্মভাবে কাজে লাগালেন। চিন্তিত ভঙ্গিতে বললেন,

“আমাকে ধ্বংস করা এতো সহজ না। আমার দিকে হাত বাড়ানো মানে আ*গু*নে ঝাপ দেওয়া। আর অরিত্রী সেটাই করেছে। এখন ওকে পু*ড়*তে হবে। জ্ব*লে, পু*ড়ে ছা*র-খা*র হয়ে যাবে ও।”

অরুণী শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,

“ও তো তোমার মেয়ে, বাবা! ওর ক্ষতি কীভাবে করবে তুমি?”

“যেভাবে ও আমাকে শেষ করার কথা ভাবছে, ঠিক সেভাবে! অরিত্রীকে ম*র*তে হবে, এছাড়া আর কোনো উপায় নেই।”

অরুণী অবাক চোখে তাকালো তার বাবার নি*ষ্ঠু*র সত্তার দিকে। বললো,

“নিজের মেয়েকে মে*রে ফেলবে তুমি? কীভাবে এটা করতে পারবে তুমি, বাবা?”

আরমান সাহেব অদ্ভুত হাসি দিলেন। বললেন,

“মা*র*বে তো তুমি! আমি শুধু ছক কষবো।”

অরুণীর বিস্ময় বাড়লো যেন। অবাক হয়ে বললো,

“মানে?”

“মানেটা তো খুব সিম্পেল, মাই ডিয়ার! অরিত্রীকে খু*ন করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। ওর সাথে লাগতে লেগে আমাদের ম*র*তে হবে। এতে কোনো সন্দেহ নেই। ওর সাধারণ মু*খো*শে*র আড়ালে লুকিয়ে রাখা রূপটা সবার অজানা থাকলেও তুমি আর আমি সেটা জানি।”

“হ্যাঁ, সেটা জানি। আর জানার পর থেকে ওর বিরুদ্ধে কিছু করার সাহস বা ইচ্ছে আমার নেই। এতো দিন তোমার কথায় অনেক কিছু করেছি। এখন আর কিছু করে নিজের বিপদ বাড়াতে চাই না।”

“করতে হবে। যা যা করেছি, তার জন্য অরিত্রী আমাদের ছাড়বে না। নিজেদের বাঁচানোর জন্য হলেও এবার কিছু একটা করতে হবে। আর এতেই অরিত্রীকে সম্পূর্ণ ধ্বং*স করা সম্ভব! ”

অরুণী সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,

“কী করতে চাইছো তুমি, বলো তো!”

আরমান রহস্যময় একটা হাসি মুখে বললেন,

“বি*ষ*ধর সাপের বি*ষ দাঁত ভেঙে দিলে সে আর কারো ক্ষতি করতে পারে না। অরিত্রীর ক্ষেত্রেও সেটাই করতে হবে। ওর সবচেয়ে দূর্বল জায়গায় আ*ঘা*ত করতে হবে আমাদের যেন ও মানসিক ভাবে ম*রে যায়।”

“সেটা কীভাবে? ”

“বলবো! বলবো!! ওকে তো নিজ হাতে মে*রে ফেলতে পারবো না, যতই হোক আমার মেয়ে। কিন্তু বাচিয়ে রেখেও মৃত্যু দেওয়া যায়! সবচেয়ে কষ্টকর মৃত্যু। জীবন্মৃত বলে একটা কথা আছে না? অরিত্রীকে সেটাই দেবো আমি। ”

৩৮.
বিছানায় মাথা ঠেকিয়ে হেলান দিয়ে বসে আছে প্রহর। হাতে থাকা কিছু কেসের ফাইলে নজর বুলাচ্ছে সে। কিন্তু মাথায় ঘুরছে অন্য চিন্তা। কেন যেন সবকিছু এলোমেলো মনে হচ্ছে! ওর অভিজ্ঞ দূরদৃষ্টি বলছে, এই সুন্দর বাস্তবতার আড়ালে একটা কুৎ*সি*ত সত্য আছে। ওর সব জানা সত্যের পেছনে অজানা কিছু বাস্তবতা আছে। একটা ভ*য়ং*ক*র ঝড় ধেয়ে আসছে যেন! সবকিছুতে ধ্বংস করার জন্য এই একটা ঝড়-ই যথেষ্ট। কিন্তু প্রহর এখনো সেটা ধারণা করতে পারছে না যে, ঝড়টা আসবে ঠিক কোন দিক থেকে। মস্তিষ্ক শূন্য শূন্য লাগছে ওর।

ফোনটা ক্রমাগত বাজছে। প্রহর হাত দিয়ে ফোনটা নিয়ে দেখলো মধু কল দিয়েছে। রাত প্রায় দুটো বাজে। এতো রাতে হঠাৎ কী হলো? প্রহরের কপালে ভাজ পড়লো। কল রিসিভ করতেই মধু বললো,

“তিনবার কল করার পর রিসিভ করলে? এতোক্ষণ কোথায় ছিলে, হ্যা? নতুন কোনো প্রেমিকা জুটিয়েছো নাকি?”

প্রহর ভ্রু কুঁচকে বললো,

“এতো রাতে কল করেছো কেন?”

“ঘুম আসছে না এজন্য কল দিয়েছি। কেন তোমার প্রেমে বাঁধা দিয়ে দিলাম নাকি বাসরে?”

প্রহর হতাশার নিঃশ্বাস ফেলে বললো,

“হ্যাঁ, নতুন প্রেমিকা জুটেছে একটা। প্রেমে আপাতত ভালোই বাঁধা দিয়েছো। বাসরেও দিবে, সেটায় কোনো সন্দেহ নেই!”

মধু মুখ ভেঙিয়ে বললো,

“হুম, আমি তো পুরনো! তাই এখন আমাকে ভালো লাগবে কেন?”

“পুরনো জন-ই নতুন হয়ে ফিরেছে। এজন্যই বললাম নতুন প্রেমিকা। তবে এই উপাধি বেশি দিন থাকবে না। মাধুর্য রায়হান থেকে মিসেস অভীক শাহরিয়ার হয়ে যাবে শীঘ্রই!”

মধু লাজুক ভঙ্গিতে হাসলো। প্রহর সেটা দূর থেকেই বুঝতে পেরে হেসে বললো,

“হয়েছে! তোমার আবার লজ্জাও আছে নাকি! আমার সামনে একটু লাজলজ্জা রেখো। আমি দেখে নিজের চোখ জুড়াতাম!”

“কিসের লজ্জা? তোমাকে আমি বিয়ে করলে তো! আমর বিয়ে করতে দেরী আছে!”

প্রহর অবাক হয়ে বললো,

“আচ্ছা? কত দেরী?”

“এই তো! ছয় বছরের মতো তো লাগবেই!”

“হোয়াট? এতো দিনে আমার চুল-দাড়ি পেকে যাবে। পরে লোকে তোমায় বলবে যে, তোমার বর বুড়ো।”

মধু ভাব নিয়ে বললো,

“যে বলবে, তার নাক ফাটিয়ে দিবো। তুমি তো জানোই আমি কেমন!”

প্রহর অসহায় কন্ঠে বললো,

“এতো বছর বউ ছাড়া থাকবো কীভাবে আমি? সৌহার্দ্যকে দেখেছো? ওর আর আমার বয়স সেইম। ও বিয়ে করে ফেলেছে, ওর বউ আছে। এদিকে আমি এখনও কুমার। তুমি বিয়ে না করতে পারলে সমস্যা নেই। আমি মেয়ে খুঁজছি কালকে থেকে। দাঁড়াও! আমার দ্রুত বিয়ে করতে হবে।”

মধু রাগে ফোসফোস করতে করতে বললো,

“কী বললি? মেয়ে খুঁজবি? অন্য মেয়েকে বিয়ে করবি? কালকে তোকে সামনে পাই! দেখিস কী করি!”

বলেই মধু খট করে কলটা কে*টে দিলো। প্রহর মিটমিট করে হাসছে। এই মেয়ের এতো রাগ! আজও বড় হলো না মেয়েটা। ভেবেই ছোট করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো প্রহর।

এদিকে,
তরী সবে মাত্র ঘরে ঢুকলো। এতোক্ষণ দাদী আটকে রেখেছে ওকে। কীসব অকারণ বকবক করে এতোক্ষণ বসিয়ে রাখলো ওকে ভেবেই বিরক্ত হলো তরী! তরীর মনে হয়েছে দাদী উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে ওকে আটকে রেখেছে। ঘুমে চোখ দুটো বুজে আসছে ওর।

ঘরে ঢুকতেই দেখলো পুরো ঘর অন্ধকার। সৌহার্দ্য কখনো ঘর অন্ধকার করে ঘুমায় না। তাহলে এখন অন্ধকার কেন? সৌহার্দ্য কী ঘরে নেই?

চিন্তিত ভঙ্গিতে আশেপাশে তাকালো তরী। কিন্তু কিছু দেখা যাচ্ছে না। চোখ থেকে ঘুম উড়ে গেল মুহুর্তেই। অন্ধকারে হাত দিয়ে হাতড়ে ঘরে আলো জ্বা*লা*তে যাবে এমন সময় পেছন থেকে হলুদ আলোর আভা চোখে লাগলো তরীর। কানে ভেসে এলো,

“আলো জ্বা*লিও না, চাঁদ! আজ তোমার আলোয় আলোকিত হবো আমি। শুধু তুমি, চাঁদ আর প্রকৃতি থাকবে এখানে! সাক্ষী হয়ে।”

-চলবে….

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ