Monday, October 6, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"প্রণয়াসক্ত পূর্ণিমাপ্রণয়াসক্ত পূর্ণিমা পর্ব-২৫+২৬

প্রণয়াসক্ত পূর্ণিমা পর্ব-২৫+২৬

#প্রণয়াসক্ত_পূর্ণিমা
#Writer_Mahfuza_Akter
পর্ব-২৫

সৌহার্দ্য হসপিটাল থেকে ফিরেছে বেশ কিছুক্ষণ আগে। কিন্তু তরী এখনো ফেরেনি। মেয়েটাকে দুই বার কল করেছে সে। তরী জানিয়েছে, সে জ্যামে আটকে আছে। ফিরতে দেরী হবে। সৌহার্দ্য ভেবে নিয়েছে, তরীকে আর এভাবে একা ছেড়ে দেওয়া যাবে না। চিন্তায় মাথা খারাপ হয়ে যাওয়ার যোগাড় ওর!

তরীর কথা ভাবতে ভাবতেই সৌহার্দ্য নিজের ডায়েরিটা খুললো। পৃষ্ঠা উল্টাতে উল্টাতে মাঝামাঝি যেতেই সৌহার্দ্যের চোখ আটকে গেল। বেশ লম্বা একটা চুল ঠিক ডায়েরির মাঝে অবস্থান করছে। চুলটাকে হাতে নিয়ে ভালো করে পরখ করে সৌহার্দ্য মোটামুটি নিশ্চিত হলো যে, এটা তরীর-ই চুল! সৌহার্দ্য মনে মনে হাসলো। বিরবির করে বললো,

“আমার পার্সোনাল ডায়েরিও ঘাটাঘাটি করা শুরু করেছো তুমি, চাঁদ? তুমি কি জানো না? এই ডায়েরিটার মতো ডায়েরির মালিকেরও পুরোটা জুড়ে শুধু তুমিই আছো! কবে যে তোমাকে বুঝিয়ে উঠতে পারবো!”

সৌহার্দ্য কিছু লিখলো না আর আজকে। লাইটারটা হাতে নিয়ে বারান্দায় চলে গেল।

তরী ঘরে ঢুকলো প্রায় আরো আধাঘন্টা পর। ক্লান্ত শরীর নিয়ে বসে পড়লো এসেই। টেবিল থেকে পানিভর্তি গ্লাসটা নিয়ে পানি খেতেই সৌহার্দ্যের কথা মনে পড়লো। সৌহার্দ্যের তো আরো আগেই চলে আসার কথা! এখানে তার কোনো সাড়াশব্দ নেই কেন? বারান্দা থেকে সিগারেটের বিদঘুটে গন্ধটা তরীর নাকে এসে লাগতেই নাকমুখ কুঁচকালো সে। সৌহার্দ্য যে এখানে কেন নেই, সেটা বোঝা হয়ে গেছে তার!

নাক দিয়ে বি*ষা*ক্ত ধোঁয়া গুলো বের করে পুনরায় সিগারেটটা ঠোঁটের মাঝে চেপে ধরার আগেই সেটা কেউ হুট করে সৌহার্দ্যের হাত থেকে টেনে নিজের দখলে নিয়ে নিলো। আকস্মিক ঘটনায় হতভম্ব হয়ে পাশে তাকালো সৌহার্দ্য। তরীর রাগী দৃষ্টি দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো,

“কী হয়েছে? সিগারেটটা নিয়ে নিলে যে?”

“তো কী করবো? একজন ডাক্তার যে কখনো এসব খেতে পারে, সেটা আপনাকে না দেখলে জানতেই পারতাম না। আশ্চর্য!! এটাতে কী এমন আছে যে এটা ছাড়তেই পারছেন না?”

বলেই সেটা দূরে ছুঁড়ে ফেলে দিলো। সৌহার্দ্য মলিন চোখে তাকিয়ে বললো,

‘ বি*ষ দিয়ে বি*ষ দূর করার মানে বোঝো? যখন মানুষের ভেতরটা বি*ষা*ক্ত*তায় ভরে যায়, তখন সেটা দূর করার সবচেয়ে সহজলভ্য উপকরণ হলো নিকোটিন। এই বি*ষা*ক্ত নিকোটিন মাঝে মাঝে অমৃতের মতো মনে হয়। বুঝলে?”

তরী ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে ক্রোধান্বিত কন্ঠে বললো, “না, বুঝিনি। বোঝার চেষ্টাও করিনি, আর না আমার বোঝার কোনো ইচ্ছে আছে! আই হেইট স্মোকিং। সুতরাং, এরপর থেকে এটা আর ঠোঁটে স্পর্শ করাবেন না।”

“আরেহ্! এটা কি হুট করে ছেড়ে দেওয়া যায় নাকি? কত বছরের অভ্যাস এটা আমার, জানো? সেই কলেজ লাইফ থেকে! একটু সময় তো লাগবেই! কিন্তু কথা দিচ্ছি ছেড়ে দেবো।”

তরী চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। দীর্ঘশ্বাস ফেলে চলে এলো ঘরের ভেতরে। সৌহার্দ্যের এই বা*জে অভ্যাসের মূল কারণ তো সে নিজেই! তার অনুপস্থিতির দ’হ’ন সহ্য করার জন্যই তো সৌহার্দ্য এটাকে সঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করেছে। সৌহার্দ্যের সাথে সবকিছু খুলে বলতে ইচ্ছে করে তরীর। কিন্তু সেটা সম্ভব হয় না। সৌহার্দ্য ওকে এখনো সামনাসামনি নিজে থেকে ‘চাঁদ’ বলে একবারও সম্বোধন করেনি। সৌহার্দ্যের মনের ভেতর কী চলছে, বুঝতে পারছে না সে। কেন সৌহার্দ্য সবটা জেনে, বুঝে, আভাসে-ইঙ্গিতে বুঝিয়েও সরাসরি সবকিছু প্রকাশ করছে না? তার মুখে ‘চাঁদ’ ডাকটা শোনার জন্য তরীর মন যে কী পরিমাণ অস্থির হয়ে আছে, সেটা সৌহার্দ্যকে কী করে বোঝাবে সে?

চাপা বিরক্তি ও হাহা*কার নিয়ে তরী ফ্রেশ হয়ে ড্রয়িং রুমে গেল। মিস্টার রায়হান ও দাদীর সঙ্গে আড্ডা দিলো অনেকক্ষণ। দাদী মজার ছলে বললেন,

“কী রে, নাতবৌ! তোর আমার আমার নাতির মধ্যে সব ঠিকঠাক চলতেছে তো?”

তরী ভ্রু কুঁচকে তাকালো। বললো, “ঠিকঠাক মানে? বেঠিক থাকবে কেন? ”

“ঠিকঠাক চলুক, এটাই তো চাই! তোদের মইধ্যে তো প্রেম বিনিময় হয়েই গেল সেইদিন! তাহলে আর আমার ছেলে আর বউমাটারে অপেক্ষা করাইতেছিস ক্যান? ওরা যে বুড়ো হইয়া গেছে! পরে আরো দেরী হইলে নাতি-নাতনি সামলানোর সামর্থ্য-ই থাকবে না। তখন….”

মিস্টার রায়হান দাদীকে থামিয়ে দিয়ে বললেন,

“আহ্! মা, থামো তো! মেয়েটা এখন ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে। ওকে পড়াশোনায় মন দিতে দাও। আমরা আর সৌহার্দ্য, কেউই চাই না তরীর পথচলায় বাধা দিতে। আর সৌহার্দ্য একজন ডাক্তার। এতো অবুঝ নয় ও। তাই এসব নিয়ে আর ঘেঁটো না।”

তরী এই ধরনের আলোচনায় প্রচন্ড অপ্রস্তুত হয়ে গেল। আশে পাশে তাকাতেই হঠাৎ কলিং বেলের শব্দে খানিকটা কেঁপে উঠল সে। রান্নাঘর থেকে সুজাতা বললেন,

“এতো রাতে কে এসেছে? বউমা, দরজাটা একটু খুলে দেখ তো কে এলো?”

তরী তাড়াতাড়ি করে উঠে দাঁড়ালো। দ্রুত পা চালিয়ে মেইনডোরের কাছাকাছি গিয়ে দরজা খুলতেই মিস্টার আফনাদকে দেখতে পেল সে। খুশি মনে মুখে হাসি ফোটাতেই পাশে মোহনাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে সেই হাসি গায়েব হয়ে গেল। অবাকতায় ছেয়ে গেল পুরো মুখশ্রী। ল মোহনা আজ এই সময়ে এখানে কেন? উনি তো তরীকে পছন্দ করেন না! তাহলে আজ দেখা করতে এসেছেন যে! ভাবনাগুলো তরীর মস্তিষ্কে দলা পাকিয়ে যাচ্ছে বারবার।

তরা ভাবনায় বিভোর হওয়ার মাঝেই গালে কারো স্পর্শ অনুভব করলো। মোহনা ওর গালে হাত রেখেছেন, টলমলে দৃষ্টি তাক করে রেখেছেন তরীর মায়াবী মুখটাতে৷ তরী অবাক হয়ে বললো,

“কাঁদছো কেন, মা? কী হয়েছে?”

তরীর মুখে এ জীবনে প্রথম মা ডাক শুনে মোহনা ওকে জড়িয়ে ধরলেন। চোখের পানিগুলো নির্দ্বিধায় ঝরতে দিয়ে বললেন,

“এই মা ডাকটা আগে শুনলে তোকে আমি দূরে ঠেলে রাখতে পারতাম না কোনো দিন। তোর সাথে যে আচরণ করেছি, তার কোনো ক্ষমা হয়না। তোর মুখে মা ডাক শোনার যোগ্য বলে মনে হচ্ছে না নিজেকে।”

“এসব কী বলছো তুমি, মা? আমি তো তোমার সংসারে বোঝা ছিলাম। তোমার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে এমনই করতো। সমাজে এমনটাই হয়ে এসেছে। তবে সত্যিটা কী জানো? হোক সে নিজের সন্তান, বা সৎ, অথবা পালিত! সবাই কিন্তু র*ক্ত-মাং*সে তৈরি মানুষ। সবাইকে মন থেকে ভালোবাসতে না পারলেও ঘৃণা করা উচিত নয়।”

মোহনা চোখ মুছে বললেন, “আমি বুঝতে পারিনি তখন। কিন্তু কীভাবে যেন আজ আমার মন বদলে গেছে! তোর জায়গায় নিজের সন্তান বসিয়ে আমি অনুভব করেছি নিজের কৃতকর্ম কতটা অন্যায় ছিল! আজ আমি কিছু চাই না। শুধু বাকিটা জীবন তোর ভালো মা হয়ে থাকতে চাই।”

তরী মোহনাকে জড়িয়ে ধরে বললো,

“ঠিক আছে। আজ থেকে তুমি আমার ভালো মা।”

মিস্টার আফনাদ তরীকে ও মোহনাকে বুকে আগলে নিয়ে বললেন, “আজ আমি অনেক খুশি। আমার মেয়ে আজ মা পেয়েছে।”

দূর থেকে তরীর হাস্যোজ্জ্বল মুখটা সবাই লক্ষ্য করলো। সৌহার্দ্যের মুখে প্রসন্নের হাসির রেশ ফুটে উঠলো। মনে মনে বললো,

“তুমি তো সবাইকে পেয়ে যাচ্ছো, চাঁদ! তোমাকে যে আমি নিজের করে পেয়েও পেতে পারছি না! কবে হবে তুমি আমার একান্ত নিজের প্রিয়দর্শিনী? আরো অপেক্ষার প্রহর বাকি!”

৩৬.
“কী রে! সেই কখন থেকে খেয়াল করছি! একা একাই মিট মিট করে হাসছিস। কী হয়েছে আজ তোর?”

মধুর ডাকে তরী হকচকিয়ে গেল। চকিত চোখে তাকাতেই মধু ভ্রু নাচিয়ে বললো,

“কী? তোকে আমি চিনি না ভেবেছিস? তোর হাবভাব সব মুখস্থ আমার। বই সামনে নিয়ে বসে আছিস। কিন্তু মনযোগ কোথায় তোর?”

তরী আশেপাশে তাকালো। লাইব্রেরিতে সবাই বই পড়ায় ব্যস্ত। তরী ফিসফিস করে খুশি মনে বললো,

“আজকে আমি অনেক খুশি। শুধু হাসতে ইচ্ছে করছে এজন্য!”

মধু ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো, “এতো খুশির কারণ তো বললি না আমায়! আচ্ছা, চল। আর পড়াশোনা করে কাজ নেই। তোর মনে এতো আনন্দ কেন আজকে, সেটাই শুনি না-হয় এখন!”

তরী আর মধু লাইব্রেরি থেকে বের হলো। বিকেল হওয়ায় চারপাশে গুঞ্জন আর রমরমা পরিবেশের আমেজ। তরীও হাঁটতে হাঁটতে তার মায়ের কথা সবকিছু বললো মধুকে। মধু শুনে হাসলো। বললো,

“এজন্য এতো খুশি তুই? আসলে খুশি হওয়ারই কথা! মা জিনিসটা বোধহয় আল্লাহ পৃথিবীতে সবচেয়ে ভিন্ন ভাবে বানিয়ে পাঠিয়েছে, জানিস? পৃথিবীর কোনোকিছুর সাথে এটার তুলনা হয় না”

“তোমার মায়ের সাথে তোমার কথা হয় না?”

তরীর প্রশ্ন শুনে মধুর পা থেমে গেল। মলিন হেসে বললো,

“মা ভালোই আছে। খারাপ থাকার কোনো কারণ নেই। আচ্ছা, চল আজকে তোকে ফুচকা খাওয়াই! আমার প্রচুর খিদে পেয়েছে।”

তরীর দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলতে বলতেই সামনে কারো সাথে ধাক্কা লাগলো মধুর। মধু পড়ে যেতে নিলেও নিজেকে সামলে নিলো। রাগী কন্ঠে বললো,

” আব্বে… কোন কানার বাচ্….”

প্রহরের মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠতেই মধুর মুখ ক্ষণিকের জন্য বন্ধ হয়ে গেল। কিন্তু মুহুর্তেই আগের চেয়ে দ্বিগুণ রেগে সে প্রহরের দিকে আঙুল তাক করে বললো,

“তুই? তোকে কী বলেছিলাম আমি? বারণ করেছিলাম না আমার সামনে অপ্রয়োজনে আসতে? যত্তসব!”

প্রহর কিছু বলবে, তার আগেই সৌহার্দ্য সেখানে হন্তদন্ত হয়ে উপস্থিত হলো। তরীর বাহু ধরে ক্লান্তি নিয়ে বললো,

“আমি বলেছিলাম না, চারটার পর তোমায় নিতে আসবো? এতো বার কল দিচ্ছি, ফোন ধরছো না কেন তুমি? খুঁজতে খুঁজতে ঘাম ঝরিয়ে ছেড়েছো আমার!”

বলেই সৌহার্দ্য পকেট থেকে রুমাল বের করে মুখ মোছার জন্য হাত তুললো। সামনে তাকাতেই ওর চোখ দুটো স্থির হয়ে গেল। বিস্ময়ে নির্বাক, হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো শুধু মধুর দিকে। মুহূর্ত গড়ালো। সৌহার্দ্যের মুখ থেকে অস্ফুটস্বরে বের হলো,

“মধু! তুই? এখানে… এতো বছর পর!”

মধুর চোখের পানি গুলো বাধ মানলো না আর। তার খুব করে ইচ্ছে করলো সৌহার্দ্যের বুকে ঝাপিয়ে পড়তে, খুব করে কাঁদতে, নাক টেনে টেনে মনে জমে থাকা অভিযোগ গুলো জানাতে। বলতে ইচ্ছে হলো,

“তোদের ছাড়া আমি ভালো নেই, ভাইয়া! তোদের আমি অনেক মিস করি!!”

কিন্তু মানুষ চাইলে সবকিছু করতে পারেনা, আর না পারে কিছু বলতে। কোনো একটা বাধা মধুকে আটকে দিলো। অশ্রুপূর্ণ চোখে প্রহর, তরী আর সৌহার্দ্যের মুখ একবার অবলোকন করলো সে। পরমুহূর্তেই তড়িৎ গতিতে পা ঘুরিয়ে চলে গেল সে। তরীর কী করা উচিত, সে বুঝে উঠতে পারলো না!

-চলবে….

#প্রণয়াসক্ত_পূর্ণিমা
#Writer_Mahfuza_Akter
পর্ব-২৬

কুয়াশার চাদরে পুরো শহর আবৃত। সাথে গা হিম করে তোলা শীতল হাওয়ায় বার বার গায়ের লোম দাঁড়িয়ে উঠছে তরীর। গায়ের চাদরটা ভালো করে জড়িয়ে নিয়ে মধুর দিকে তাকালো সে। মেয়েটা কেমন নীরব, নির্বিকার হয়ে বসে আছে। মধুর এমন অনুভূতিহীন, নিষ্প্রাণ রূপ দেখেনি কখনো কেউ।

মধু তখন সৌহার্দ্য আর প্রহরের সামনে থেকে চলে যাওয়ার পর তরীও মধুর পিছু ছুটে গিয়েছিল। কিন্তু মধু ততক্ষণে স্কুটার নিয়ে গেইট দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। তরী পিছু ডাকলেও শোনেনি সে তখন। তরীও ভাগ্যবশত একটা সিএনজি পেয়ে সেটায় উঠে গিয়েছিল মধুকে ফলো করার জন্য। কিন্তু তরীকে অবাক করে দিয়ে মধু নিজের হোস্টেলেই ফিরে এসেছিল। হোস্টেলের পার্কিং এরিয়ায় মধুর স্কুটার দেখে তরী হোস্টেলে প্রবেশ করলো। কিন্তু মধুর রুমের সামনে তালা ঝোলানো দেখে তরী অবাক হয়! পরমুহূর্তেই মধুর বলা একটা কথা মনে পড়ে তরীর,

” জানিস? আমার মন খারাপ হয় না কখনো। মন খারাপ করবো কার জন্য? আমার যে কেউই নেই! কিন্তু মাঝে মাঝে নিজের জীবনের শূন্যতাগুলো প্রচন্ড ভাবে অনুভব করি আমি। সেই শূন্যতাকে শূন্য হাওয়ায় মিলিয়ে দেওয়ার জন্য নীরবতা খুঁজি তখন। এজন্যই আমার হোস্টেলের ছাদ, খোলা মাঠ আর অন্ধকার ঘর আমার খুব পছন্দ!”

তরী তড়িঘড়ি করে ছাদে উঠতেই দেখলো, মধু ছাদের এক কোণায় পা ঝুলিয়ে বসে আকাশের দিকে অপলক তাকিয়ে আছে। তরী নীরবে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। মধুকে এই মুহুর্তে ওর ঠিক কী বলা উচিত, বুঝে উঠতে পারছে না সে!

“পিছু পিছু ছুটে চলে এলি যে! কী ভেবেছিলি? আমি আবার হারিয়ে যাবো?”

মধু ব্যাঙ্গাত্মক হাসলো যেন! তরী অবাক হলো মধুর কথা শুনে। মেয়েটা এখনো ঘাড় ঘুরিয়ে পর দিকে তাকায়নি, তবুও ওর আগমন বুঝে গেল! মধু আবার বললো,

” অতীত মানুষের পিছু ছাড়ে না। পালিয়ে আর হারিয়ে গিয়ে মানুষ শান্তি খোঁজে। আমিও খুজছিলাম! কিন্তু আমি ভুলেই গিয়েছিলাম যে, আমার আমিকে নিজের মধ্যেই হারিয়ে ফেলেছি আমি!”

তরী গিয়ে মধুর পাশে বসলো। কয়েক মিনিটের নীরবতা মন দিয়ে অনুভব করলো দুজন। তরী হঠাৎই মুখ খুললো। খুবই ম্লান গলায় বললো,

“অতীতকে তো একটা সুযোগ দিতেই পারিস!”

তরী মুখে ‘তুই’ সম্বোধন শুনে একটুও অবাক হলো না মধু। ছোটবেলায় একে অপরের খেলার সঙ্গী ছিল তারা। তরী ওর সাথে এভাবেই কথা বলতো। তাই মধু নির্বিকার ভঙ্গিতে অতি স্বাভাবিক কন্ঠে বললো,

“তুই আমাকে প্রথম দেখায়-ই চিনতে পেরেছিলি, তাই না? তোর যদি ছোটবেলার সব কথা মনে থেকে থাকে, তাহলে আমাকে চিনে ফেলা অস্বাভাবিক কিছু না!”

“প্রথম দেখে বুঝিনি। নাম শুনে সাথে সাথে চিনে ফেলতে পারিনি। সৌহার্দ্যের বাড়িতে প্রবেশ করার পর আমার চোখ দুটো তোকে অনেক খুঁজেছিল। কিন্তু তোর দেখা না পেয়ে অবাক হয়েছিলাম। অনুমান করেছিলাম, তুই ঐ বাড়িতে থাকিস না। তোকে দ্বিতীয় বার দেখে হুট করেই তোর নামটার সাথে লিংক খুঁজে পাই, তখন চিনতে পেরেছিলাম। কিন্তু আমি কাউকে কিছু জিজ্ঞেসও করতে পারিনি। এমনি প্রহরের সন্দেহের কবলে পড়ে মুখ খুলতে হয়েছে আমায়। সন্দেহের মাত্রা বাড়াতে চাইনি আর। তবে কৌতুহলটা নিজের মধ্যে চেপে রেখেছি আজও। তোর সাথে মিশেছি এতো দিন! তোর কথাগুলো আমাকে নাড়া দিত। মনে হতো, বেশ জটিল কোনো ঘটনা তোর জীবনে ঘটেছে।”

তরীর দৃষ্টিতে কৌতূহল স্পষ্ট। মধু তরীর প্রতিক্রিয়ার বিপরীতে শুকনো হাসি দিলো শুধু। মুহুর্তের পর মুহূর্ত গড়ালো। মধুর নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছে তরী। অপেক্ষা করছে মধু কখন মুখ খুলবে!

অন্যদিকে,
প্রহরের দৃষ্টি নামানো। অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে নসে আছে সে। সৌহার্দ্য তার ঠিক সামনে মুখোমুখি বসে আছে। প্রহরের পিছু পিছু ওর পার্সোনাল কেবিনে নিজেই এসেছে সৌহার্দ্য। রাগে তার মস্তিষ্ক ট*গ*ব*গ করছে। আর এই সম্পূর্ণ রাগটা প্রহরের ওপরই! অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে প্রহরের দিকে।

“এই দুই হাত দিয়ে তোকে একদিন বুকে আগলে নিয়েছিলাম। ক’লি’জা’র একটা অংশ ছিলি তুই! তোর জায়গায় অন্য কেউ হলে তাকে যে আমি কী করতাম, তুই কল্পনাও করতে পারবি না! মধুর খোঁজ তুই জানতি? অথচ আমাকে একবারও বলিস নি? কী চাস তুই, আমাকে বল তো? তুই জানিস, মধুকে আমরা পাগলের খুঁজেছি?”

সৌহার্দ্যের কথার বিপরীতে প্রহর চোখ তুলে তাকালো। ওর ঘর্মাক্ত কপাল থেকে ফোঁটায় ফোঁটায় ঘাম ঝরছে। সৌহার্দ্যের এমন উদগ্রীব অবস্থা দেখেও প্রহর স্বাভাবিক। এক বাক্যে বললো,

“যে নিজে থেকে হারিয়ে যায়, তাকে খুঁজে পাওয়া যায় না!”

হুট করেই চেঁচিয়ে উঠলো সৌহার্দ্য। প্রহরের ঠিক মুখ বরাবর আঙুল তুললো। ফুঁ*সে উঠে বললো,

“তোর জন্য হারিয়ে ফেলেছি আমি আমার বোনকে! শুধুমাত্র তোর জন্য! তোর কারণে আমার বোন নিজের পরিবার থেকে দূরে সরে গেছে। নিজেকে আড়াল করেছে ও নিজের পুরো চেনা দুনিয়া থেকে। আজকের এই মধুর সাথে দুই বছর আগের মধুর আকাশ-পাতাল তফাৎ! একটা মানুষ ভেতর থেকে কতটা নিঃশেষ হয়ে গেলে নিজেকে তার চেনা পৃথিবী থেকে লুকিয়ে রাখে ভাবতে পারিস তুই?”

প্রহর অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো। সে জানে, সবটাই তার দোষ! কিন্তু তার নিজেরও যে অন্য কোনো উপায় ছিল না! সেটা বুঝিয়ে বলার সময় এখনই। অনেক ভেবেছে সে। অনেক চেষ্টা করেছে নিজের সাথে নিজেকে মানিয়ে নেয়ার। কিন্তু সবাই তার দিকে শুধু আঙুল-ই তুলছে। কেউ তার অসহায়ত্ব বুঝতে চাইছে না! কেউ জানতেও চায় না তার এমন কাজের পেছনের কারণ! সবার চোখে আজ সে প্রতারক!! সুতরাং তাকে এবার মুখ খুলতেই হবে।

৩৭.
অরুণী ওর বাবার সামনে গালে হাত দিয়ে বসে আছে। এই কয়েক দিনে চিন্তা করতে করতে আরমান সাহেবের চোখ দুটো কোটরে ঢুকেই গেছে একদম। দেখে বোঝা-ই যাচ্ছে, বহুদিন যাবৎ চোখের দুই পাতা একত্রিত করেন না তিনি। চিন্তা, ভীতি, অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু তাড়া করে বেড়াচ্ছে তার মস্তিষ্ক জুড়ে। আরমান সাহেবের ভীতিটা-ই আসলে সত্যি- এটা জানতে পারলে তিনি ঠিক কী রকম প্রতিক্রিয়া দেখাবেন, সেটাই ভাবছে অরুণী।

আরমান সাহেব অরুণীর দিকে তাকালেন। চোখের চারপাশে পড়া গাঢ় কালচে দাগটা ওর শুভ্র মুখটায় অতি স্পষ্টভাবে ধরা পড়ছে। তার মেয়েটা আর স্বাভাবিক নেই! তিনিই ওকে অস্বাভাবিক তৈরি করেছেন যদিও! এটার প্রয়োজনীয়তা ছিল অবশ্যই।

আরমান সাহেব সকল ভাবনা কিছু সময়ের জন্য মাথা থেকে দূরে সরালেন। অরুণীর এগিয়ে দেওয়া বড় খামটা হাতে নিয়ে সেটা খুললেন। বেশ কয়েকটা কাগজসহ তরীর দুটো ছবিও বেরিয়ে এলো। ছবি দুটো আড়াল থেকে তোলা হয়েছে, কিন্তু তরীর মুখ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। আরমান সাহেব ছবি দুটো হাতে নিলেন। ছবিটায় চোখ রাখতেই তার দৃষ্টি স্থির হয়ে গেল। হাতটার অনবরত কম্পন অরুণীর চোখ এড়ালো না। সে অদ্ভুত হাসি দিয়ে বললো,

“কী হলো, বাবা? অবাক হলে? নাকি ভয় পেয়েছো? এভাবে কাঁপছ কেন?”

আরমান সাহেব মেয়ের মুখের দিকে তাকালেন। বিস্ময় ঘেরা দৃষ্টি বজায় রেখে থেমে থেমে বললেন,

“এটা… এটা কীভাবে সম্ভব? এই মেয়েটা সৌহার্দ্যের বউ কীভাবে? তুই নিশ্চিত যে, সৌহার্দ্য ওকেই বিয়ে করেছে?”

“হ্যাঁ, এটাই সেই মেয়ে! অবাক হয়েছো দেখে?”

“কিন্তু এটা কীভাবে সম্ভব? একটা মানুষের সাথে আরেকটা মানুষের এতো মিল কীভাবে থাকতে পারে? এটা কাকতালীয় হওয়া কি আদৌ সম্ভব?”

“কাকতালীয় কিছু নয়! পেপার্স গুলো দেখো ভালো করে। তাহলেই সবটা তোমার কাছে ক্লিয়ার হয়ে যাবে।”

অরুণীর মুখে হাসি, আর আরমান সাহেবের মুখে ভয়। অরুণীর এতো আনন্দের কারণটা আরমান সাহেব বুঝে উঠতে পারছেন না। তিনি কাগজগুলোর দিকে তাকালেন। এগুলো তরীর অফিশিয়াল কাগজপত্র! তরীর বিভিন্ন পরীক্ষার সার্টিফিকেট গুলো এখানে একত্রিত করা হয়েছে। সেদিন অরুণীকে দেখে তরীর সেন্সলেস হয়ে যাওয়াটা অরুণীর মনে সন্দেহ সৃষ্টি করে। সেই সন্দেহ আরমান সাহেবকে জানানোর পর তিনি সিদ্ধান্ত নেন তরীর ব্যাপারে সব তথ্য সংগ্রহ করার। এরপর অরুণী-ই এতোদিনে বহু চেষ্টা চালিয়ে সঠিক কাগজপত্র সংগ্রহ করে আরমান সাহেবের সামনে নিয়ে এসেছে।

তরীর ছবিসহ একটা কাগজের ওপর আরমান সাহেবের চোখ আটকে গেল। ছবিটার পাশে স্পষ্ট ভাবে লিখা আছে “অরিত্রী সেহরীশ”। আরমান সাহেবের মাথা ভনভন করে উঠলো যেন। এই মেয়েটার মুখ একদম তার স্ত্রী মালিহার মতো! ওর নাম জেনে আরমান সাহেব নিশ্চিত হয়ে গেছেন, এটাই তার ছোট মেয়ে। তার মেয়ে আজও পৃথিবীর মাটিতে জী*বিত আছে। সে এখনো মারা যায়নি!

অরুণী নিজের বাবার মাথায় হাত রাখলো। বললো, “অরুণী সেহরীশ-এর বোন অরিত্রী সেহরীশ! মেয়েটা বেঁচে আছে, বাবা! ও সবসময়-ই জিতে এসেছে। আজও সবার অজান্তেই ও জিতে গেল। আমার জীবন থেকে সবকিছু কেড়ে নিয়ে নিজেকে পরিপূর্ণ করে ফেললো মেয়েটা। আচ্ছা, ও কি আমাকে নিঃস্ব করার জন্যই পৃথিবীতে এসেছে?”

অরুণী আবারও হাসলো। আজ সেই হাসি দেখে আরমান সাহেব চিন্তিত হলেন না। অরুণীর অস্বাভাবিক আচরণ তাকে ভাবাচ্ছে না! যেই আশংঙ্কা তাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছিল, সেটা যে আজ সত্যি হয়ে গেল। এখন অরুণী-ই হতে পারে তার একমাত্র অ*স্ত্র!

আরমান সাহেব রহস্যময় হাসি দিলেন। তরীর ছবিটা মুখের সামনে তুলে ধরলেন। তার হাসি আরও গাঢ় হলো। কিন্তু সেই হাসি বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। সব কাগজের নিচে একটা কালো কাগজের প্রান্তভাগ দেখে অবাক হলেন আরমান সাহেব। ভ্রু কুঁচকে সেই কাগজটা নিজের হাতে নিলেন। কাগজের লেখাটা পড়ে কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম দেখা দিলো আরমান সাহেবের। সেখানে লেখা আছে,

“আমার অজান্তেই আমার ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেওয়া সম্ভব নয়, মিস্টার আরমান। আমি চেয়েছি বলেই আপনি জানতে পারলেন আমার আসল পরিচয়! কিন্তু জেনে অনেক বড় ভুল করে ফেললেন। নিজের আয়ুকে আরও কমিয়ে আনলেন। সেদিনটা আমি ভুলিনি যেদিন আমার মায়ের র*ক্তে নিজের হাত ভি’জি’য়ে আপনি পৈ*শা*চি*ক হাসি হেসেছিলেন। সেদিন আপনার মেয়েকে আপনি নিজে ক*ব*র দিয়েছিলেন ঠিকই! আর সেখানে মৃত্যু ঘটেছিল সেই ভীতু অরিত্রীর। কিন্তু সেখান থেকেই জন্ম নিয়েছে আজকের প্র*তি*শো*ধ কাম্য তরী। সে আজও বেঁচে আছে তার মায়ের কষ্ট দূর করার জন্য। আপনার অপরাধের শেষ নেই। আপনি আমার মাকে পু*ড়ি*য়ে দিয়েছিলেন! সেই দ*হ*নে আজও আমার মা ছ*ট*ফ*ট করছে। আমি সেটা দেখতে পাই। সেই মায়ের ভেতরে জ্ব*ল*তে থাকা আগুন আপনার র*ক্ত দিয়ে নেভাবো আমি!

~তরী”

-চলবে….

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ