নিষ্প্রভ প্রণয় পর্ব-১৭+১৮

0
817

#নিষ্প্রভ_প্রণয়
#পর্ব_১৭
লেখনীতেঃএকান্তিকা নাথ

নিষাদ আজ তাড়াতাড়িই বাড়ি ফিরল।কাল বাদে পরশু রঙ্গনের আশির্বাদের অনুষ্ঠান।তাড়াতাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যটা মূলত বোনের মন ভালো রাখা।উঁকি দিয়ে একবার নীরুর ঘরে তাকিয়েই নিজের ঘরে গেল।ঘর্মাক্ত শার্ট বিছানার উপর ছুড়ে রেখেই জামাকাপড় নিয়ে দ্রুত ওয়াশরুমে গেল।টানা আধঘন্টা স্নান সেরে বের হলো সতেজ মনে।রুমে সেতুকে দেখল না অবশ্য। পা বাড়িয়ে বেলকনিতে যেতেই দেখা মিলল সেতু আর নীরের।নীর হাত পা মেলে ফ্লোরে বসে আছে। সামনে তার খেলনা গাড়ি।হাত দিয়ে বারবার সেই খেলনা গাড়িটাকে ঠেলে দিচ্ছিল।একটু দূর যেতেই আবারও হাত দিয়ে তার কাছে টেনে আনছে গাড়িটাকে।নিষাদ মৃদু হাসল।হাঁটু গেড়ে ফ্লোরে বসে পড়েই নীরের গালে হাত রাখল। ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল,

” চলো ব্রো, তুমি আর আমি আজ গাড়ি চালাব একসাথে।”

নীর খুশি হলো। হাত দিয়ে ঝাপটে নিষাদের কোলে উঠল।আড়চোখে তা পর্যবেক্ষন করে হালকা হাসল সেতু।নিষাদ ব্যস্ততা দেখিয়ে নীরকে কোলে নিয়ে উঠে দাঁড়াল।সেতুকে উদ্দেশ্য করে বলল,

” বাইরে যাব।যাবে তুমি?”

সেতু চোখ ঘুরিয়ে তাকাল এবার।বলল,

” সন্ধ্যা হয়ে গেছে। এখন বাইরে গিয়ে কি হবে?”

নিষাদ ফোঁস করে শ্বাস ছাড়ল।বলে উঠল,

” আমার মাথা হবে।”

” এভাবে বলছেন কেন?”

নিষাদ ক্লান্ত চাহনীতে চাইল।গলা ঝেড়ে আবারও বলল,

” নীরু সহ বাইরে ঘুরতে যাব।ওর মন ভালো হবে ঘুরলে।সন্ধ্যা তো মাত্রই নেমেছে।যেতে চাইলে যেতে পারো।আর নীর গেলে নীরুর ও মন বেশ ভালো থাকবে।কিন্তু হঠাৎ মা মা করে কান্না জুড়ে দিলে?”

সেতু মাথা নাড়াল।নরম গলায় শুধাল,

” আচ্ছা।নীরুকে বলে আসি?”

নিষাদ বলল,

” আমি যাচ্ছি বলতে।”

সেতু আবারও হালকা মাথা নাড়াল।আর কিছু বলল না।নিষাদ নীরকে কোলে নিয়েই পা বাড়াল নীরুর ঘরে।দরজা থেকে দেখে মনে হলো নীরু বেশ মন দিয়ে পড়ছে।তবে মুখে আওয়াজ নেই।সেই ছোটবেলা থেকে হাজার বকাঝকা করেও তাকে আওয়াজ করে পড়ানো হয়ে উঠল না।নিষাদ পা বাড়িয়ে গিয়ে নীরুর পেঁছনে দাঁড়াল।এতক্ষনকার ভাবনা মুহুর্তেই ভুল প্রমাণ হলো।নীরু মন দিয়ে পড়ছে না।হাতের কলমটা দিয়ে বইয়ের উপর আঁকাআঁকি করছি।নিষাদ ভ্রু কুঁচকাল।কিসব বিচ্ছিরি অঙ্কন! মুহুর্তেই হাত দিয়ে নীরুর মাথায় চাটি মারল।নীরু সঙ্গে সঙ্গে ঘাড় ঘুরিয়ে চাইল।নিষাদকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখেই ঝাঝালো গলায় বলল,

” তুমি আমার পড়ার টাইমে পারমিশন না নিয়ে এসেছো কেন?আমার পড়ার ডিস্ট্রার্ব হবে না?আমি খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ছি দেখতে পাচ্ছো না তুমি?”

নিষাদ আওয়াজ তুলে হেসে উঠল।নীরকে পাশে চেয়ারে বসিয়ে হাত দিয়ে নীরুর সামনে থেকে বইটা ছিনিয়ে নিল।বইয়ের পাতায় কলমের কালিতে আঁকা বিচ্ছিরি অঙ্কন গুলো দেখতে দেখতে বলল,

” এইসব?এইসব তোর পড়ালেখা?ছিঃ ছিঃ নীরু!নিলুর বইও তোর থেকে সুন্দর থাকে।তোর বই দেখে তো মনে হচ্ছে কোন এক বিখ্যাত পেইন্টারের হাতে পরে বইটার জীবন ত্যানাত্যানা হয়ে গেছে।পারমিশন নিয়ে আসলে তোর এসব বিখ্যাত চিত্রকর্ম দেখার সুযোগ হতো আমার?”

নীরু ভ্রু উঁচু করে তাকাল।বলল,

” অপমান করবে না একদম।আমার মতো বিখ্যাত পেইন্টার কোথাও খুঁজে পাবে না।আমি মা’রা গেলে আমার মতো আর্টিস্টের অভাবে পৃথিবী খা খা করবে দেখে নিও।সবাই তখন এই বিখ্যাত চিত্রকর্মের জন্য আপসোস করতে করতেই মরে যাবে।”

নিষাদ এবার আবারও হেসে উঠল।নীরের দিকে তাকিয়েই শুধাল,

” নীর?এই বিখ্যাত পেইন্টারের থেকে ভুলেও কিন্তু আঁকাআঁকি শিখতে যাবে না।তাহলে কিন্তু বিখ্যাত হওয়ার আগেই কুখ্যাত হয়ে যাবে!শত হোক সে খুব বিখ্যাত পেইন্টার বলে কথা!”

নীরু নাক ফুলাল।রাগে দুঃখে ফোঁসফাঁস করে শ্বাস ছাড়ল।নিষাদের হাত থেকে তার বইটা এক মুহুর্তেই ছিনিয়ে নিয়ে বলল,

” সরো এখান থেকে।কি মনে করছো?সুনাম করছো নাকি বদনাম করছো বুঝতে পারছি না আমি? এতটাই নির্বোধ আমি?”

” তুই নির্বোধ হবি কেন নীরু।তুই হলি পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ট বুদ্ধিমতী মহিলা।”

” মহিলা বলবে না একদম।না করলাম বিয়ে, না করলাম সংসার, না গেলাম শ্বশুড়বাড়ি তার আগেই মহিলা বলবে কেন?”

নিষাদ হাসল। বলল,

” আচ্ছা বলব না।তোকে বিয়ে দেওয়ার পর মহিলা বলব।ঠিকাছে?”

নীরু গাল ফুলিয়ে রাখল।মুখ ভার করে জবাব দিল,

” না, ঠিক নেই।আমি এসব বিয়ে টিয়ে করব না। তাই মহিলা ফহিলা ডাকার চিন্তাভাবনা বাদ দাও।”

” আচ্ছা বাদ দিলাম।”

নীরু সরু চোখে তাকাল। কিছু বলল না আর।নীরের নরম হাতটা নিজের হাতে নিয়ে নাড়াচ্ছিল। নীরও তা উপভোগ করছিল।নিষাদ আবারও বলল,

” নীরু?ফুসকা খাবি?”

নীরুর চোখ চকচক করল।ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে সন্দেহী কন্ঠে বলল,

” হঠাৎ নিজ থেকে এই কথা বলছো?সূর্য কোনদিকে উঠল গরু?ঝেড়ে কাশো, কাহিনী কি বলো।”

নিষাদ হালকা হেসে বলল,

” কাহিনী কিছুই না।খাবি কিনা বল।ফুসকা, চটপটি সব খাওয়াব।শপিংও করতে পারিস চাইলে। বল, যাবি?”

নীরুর দৃষ্টি আরো সন্দেহভরা হলো।বলল,

” কি ব্যাপার?আজ বেতন পেয়েছো নাকি?পকেট কি আজ চকচক করছে টাকার গরমে?”

নিষাদ মুখ কালো করল।কপাল চাপডে বলল,

” এইজন্য বলে কারো উপকার করতে নেই। ভালো একটা অফার দিচ্ছি।চুপচাপ লুফে নিবি তা না তুই আমায় সন্দেহ করছিস?এই তুই আমার বোন?সবথেকে বড় কথা হলো নীরও যাবে। এবার বল, যাবি?”

নীরু কিয়ৎক্ষন চুপ থাকল।নিষাদকে হতাশ করে দিয়ে উত্তর দিল,

” না, আজ যেতে ইচ্ছে করছে না।”

” কেন?”

” সামনে পরীক্ষা।পড়তে হবে আমায়।”

নিষাদ এবার ক্ষেপে গেল।বলল,

” দেখলাম তো তোর পড়ার নমুনা। ভালো করে ভেবে দেখ, ফ্রিতে শপিং, ফুসকা, যা ইচ্ছে তাই নিতে পারবি।লাভটা কার হবে? তোর।তাই দেরি না করে তৈরি হয়ে নে নীরু।”

নীরু ভাবল।কিয়ৎক্ষন ভেবেই ঝংকার তুলে হেসে উঠল।বলল,

” তবে আজ তোমার পকেট ফাঁকা গরু!”

.

তখন রাত দশটা।নীরুর ঘোরাঘুরির শেষ হলো না৷নিষাদ ক্লান্ত হলো।অসহায় চোখে তাকিয়ে বলল,

” আর কত?শপিং করতে করতে তো পকেট খালি করে দিলি। ”

সেতু হাসল। নীরুর দিকে তাকিয়ে হাসির রেখা আরো চওড়া হলো।নীরু ও দাঁত কেলানো হাসি উপহার দিল।চাহনী সরু করে বলল,

” তো?আমি বলেছিলাম আসতে? তুমিই তো ঠেলেঠুলে নিয়ে আসলে।সে বেলায় কিছু হলো না?”

” ভুল হয়েছে!তোকে আর জীবনেও এভাবে বলে বলে আনা যাবে না।”

নীরুর হাসি চওড়া হলো।কোলে থাকা নীরকে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বলল,

” এনো না।আমি কি আসার জন্য কান্না করব নাকি?”

নিষাদ ক্লান্ত কন্ঠে বলল,

” তবে এবার চল বাড়ি।”

নীরু মাথা নাড়াল কেবল।পায়ের গতি একই রাখল।মাঝেমাঝে কোলে থাকা নীরের সাথে এক আধটা কথা বলল।হেঁটে শপিং মল থেকে বেরিয়ে গিয়ে গাড়িতে উঠে বসেই শ্বাস টানল।সেতু আর নিষাদও উঠল।মুহুর্তেই ঝুম বৃষ্টি নামল। নীরুর চোখ চকচক করে উঠল।বৃষ্টিতে ভেজার লোভ সামলাতে না পেরেই কোলের নীরকে পাশে বসাল।নিষাদের উদ্দেশ্যে বলে উঠল,

” আর দশ মিনিট গরু।আমি বৃষ্টিতে একটু ভিজেই চলে আসছি। কেমন?”

নীরু জিজ্ঞেস করল ঠিক।কিন্তু উত্তরের অপেক্ষা করল না।দ্রুত নেমে গেল গাড়ি ছেড়ে।বাইরে বর্ষার ঝুম বৃষ্টির সাথে জড়ো হাওয়া।নীরু উপভোগ করল তা।গাড়ি থেকে বেশ কিছুটা দূর হেঁটে হেঁটে গিয়েই হাতজোড়া দুইদিকে মেলে দিল।পরনের ওড়না সমেত গোল জামাটা ততক্ষনে ভিজে চুপসে মিলে গেল শরীরের সাথে।নীরু চোখজোড়া বন্ধ করল।বৃষ্টির দাপটে ঠান্ডা অনুভব হলো।মিহি পাতলা ঠোঁট কেঁপে কেঁপে উঠল।মিনিট পাঁচ এভাবে কাঁটতেই কানে এল কারো চাপা কন্ঠ,

” কি আশ্চর্য!তুই এই রাতের বেলায় এখানে এভাবে বৃষ্টিতে ভিজে আছিস কেন নীরু?”

নীরু সঙ্গে সঙ্গে চোখ মেলে তাকাল।পরিচিত কন্ঠের কথা শুনে সন্দেহ হলো।তবুও চোখের সামনে যে ঐ মানুষটাই তা বিশ্বাস করল। রঙ্গনের এক হাতে বেশ অনেকগুলো শপিংব্যাগ।অন্য হাতে ছাতা।নীরু চমৎকার হাসল।শুধাল,

” বিয়ের শপিং করতে আসলে বুঝি?তোমার হবু বউও এসেছে?দেখা করিয়ে দাও তো।”

রঙ্গনের চাহনী মলিন হলো মুহুর্তে।মনে মনে নীরুর হাসিটা সহ্য হলো না।মলিন চাহনী ফেলে নীরুকে আপাদমস্তক খেয়াল করল। নীরুর ভেজা মুখে কিয়ৎক্ষন তাকিয়ে রইল।চিকন মিহি ঠোঁটের কম্পন করে উঠা চোখে পড়তেই দৃষ্টি সরাল দ্রুত।বলল,

” না, ও আসে নি।পরিবারের সাথে এসেছি।বিয়ের শপিং এখনও হয়নি,আশীর্বাদের জন্যই।”

নীরু মাথা নাড়াল।ডাগর চোখজোড়া দিয়ে রঙ্গনের পিঁছন দিকে তাকিয়ে বলল,

” আশীর্বাদ পরশু,আজ শপিং?যায় হোক,তোমার পরিবারের কাউকে তো দেখছি না গাঁধা।কোথায় তারা?”

রঙ্গন চাপা রাগ রেখে বলল,

” গাঁধা বললে ঠা’স করে চ’ড় দেব।তোর বড় হই আমি।”

নীরু ভ্রু জোড়া কুঁচকাল।চোখের দৃষ্টিতে সন্দেহ এঁকে বলল,

” তুমি? এইটুকু একটা ছেলে।দেখলেই তো লাগে দুইদিন আগে দুনিয়াতে এসেছো।তুমি আমার থেকে বড়?হাসালে বাচ্চা ছেলে।”

” বয়সে তোর থেকে গুণে গুণে সাড়ে আটবছরের বড় আমি।”

নীরু খিলিখিলিয়ে হেসে চঞ্চলতা সমেত বলল,

” বয়স ডাজন্ট ম্যাটার।তোমাকে দেখলে বাচ্চা বাচ্চা লাগে এটাই ম্যাটার।যাকগে,তোমার বিয়ের ডেইট ফিক্সড হয়নি এখনো?”

রঙ্গন হতাশ হলো।চেয়েছিল নীরু হাসিখুশি থাকুক।সুখী হোক।কিন্তু তাকে ছাড়াও এতটা সুখী? এতটা হাসিখুশি থাকবে?কেন থাকবে? উহ!বুকের ভিতর চিনচিনে ব্যাথা হলো।ঠোঁট গোল করে শ্বাস টেনে বলল,

” হয়েছে।আশীর্বাদের সপ্তাহখানেক পর।”

নীরু হাসল।চঞ্চল গলায় শুধাল,

” ইনভাইট করবে কিন্তু বিয়ের কার্ড দিয়ে। আমি কিন্তু বেশ আরাম করে তোমার বিয়ে খাব।বুঝলে? ”

” হু,তোদের বাড়িতে গিয়ে বিয়ের কার্ড দিয়ে আসব।”

” মনে রেখো কিন্তু।ভুলে গেলে কিন্তু মে’রে তোমার হাত পা ভে’ঙ্গে দিব।”

এই কথার বিনিময়ে রঙ্গনের হয়তো রাগ করা উচিত ছিল।নয়তো আওয়াজ তুলে হেসে উঠা উচিত ছিল।কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে রঙ্গন রাগল না।রঙ্গন হাসলও না।গম্ভীর স্বরে বলল,

“দেখা যাবে তা।এখানে এইরাতে? বৃষ্টিতে ওভাবে ভিজে চুপসে আছিস যে?”

নীরু আওয়াজ তুলে হাসল আবারও।হাত নেড়ে বৃষ্টির পানি ছুঁতে ছুঁতেই বলে উঠল,

” উহ!বৃষ্টি মানে ভালোবাসা গাঁধা।ভালোবাসারা যতোটা সংস্পর্শে থাকে ততোই ভালোবাসা বাড়ে।আমি তোমাদের মতো অতোটা যান্ত্রিক নই।যান্ত্রিক মনে ভালোবাসারা খুব বেশি সংস্পর্ষে থাকলেও ছুঁয়ে যেতে পারে না।আমার মন হলো সহজ, সরল, উদার।এমন মনে খুব অল্প ভালোবাসারাও জায়গা করে নেয়।বুঝলে?”

” বুঝলাম,ছাতা আনিস নি?”

নীরু রসিকতা করে বলল,

” কেন না আনলে বুঝি তোমার ছাতাখানা দিয়ে দিবে আমায়? নাকি সিনেমার হিরোর মাথার উপর ছাতা ধরবে?”

” তুই যে ইচ্ছে করেই ভিজছিস জানি আমি।তাই এই দুটোর কোনটাই করব না।বাড়ি যাবি না নাকি এখানেই বৃষ্টিতে ভিজতে থাকবি?”

” কি আশ্চর্য!তোমার কি মনে হচ্ছে আমি সারারাত রাস্তায় পড়ে থেকে গড়াগড়ি খাব?আমার বাড়িঘর নেই? ”

রঙ্গন হতাশ হয়ে বলল,

” তা কখন বললাম?”

” বলেছো বলেছো।যায় হোক, গেলাম আমি।”

কথাটা বলে আবারও পিঁছু ঘুরে পা বাড়াল নীরু।বৃষ্টিতে ভেজার শখটা পুরোপুরি পূরণ হলো না ঠিক।অনিচ্ছাস্বত্তেও ভেজা শরীরে গিয়ে উঠে বসল গাড়ির কোণে।গাড়ির জানালা দিয়ে হাত বাড়িয়ে দিয়ে নিষাদকে বলল,

” চলো। বাড়ি যাব। ”

.

তখন বেশ রাত।নিষাদের চোখে ঘুম ধরা দিল না।তার পাশেই নীর আর সেতু ঘুমের সাগরে ডুবে আছে।নিষাদ গহীন চাহনীতে তাকাল সেতুর মুখে।রুমের হালকা আলোয় বেশ ক্লান্ত দেখাল ঘুমন্ত সেতুকে।মুখচ্ছবিতে কি ভীষণ ভয়ংকর মায়া।যে মায়ায় একবার ডুব দিলেই নিশ্চিত মৃ’ত্যু!নিষাদ আর দৃষ্টি সরাতে পারল না।অপলক ভাবে তাকিয়ে থেকে হাত এগিয়ে সেতুর কপালে আসা ছোট ছোট চুলগুলো কানে গুঁজে দিল।সঙ্গে সঙ্গে সেতু নড়চড় করল।চোখ মেলে ঘুমুঘুমু দৃষ্টিতে তাকাতেই জেগে থাকা নিষাদকে চোখে পড়ল।নিজের দিকে তাকিয়ে আছে দেখেই সঙ্গে সঙ্গেই ঘুমুঘুমু ভাব ছুটে গেল।অস্বস্তিতে লজ্জ্বায় আড়ষ্ট হলো।জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলল,

” ঘুমাননি? ”

নিষাদ নির্বিকার তাকিয়ে থেকে উত্তর দিল,

” না।”

সেতু আরো জড়োসড়ো হলো।বলল,

” এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?”

নিষাদ হালকা হাসল।উত্তর দিল,

” ভালো লাগছে তাকিয়ে থাকতে।তাই।”

সেতু কিছু বলতে পারল না।দ্রুত উঠে বসল।বেলকনির দিকে পা বাড়িয়ে চলে গেল।কিয়ৎক্ষন পর বেলকনিকে নিষাদও পা রাখল।আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল,

” আজ আকাশে উজ্জ্বল চাঁদ।চন্দ্রবিলাস করবে সেতু?”

সেতু তাকাল।অস্ফুট স্বরে বলল,

” হ্ হু?”

নিষাদ কিছু না বলে ফ্লোরে লেপ্টে বসে গেল। দেওয়ালে হেলান দিয়ে বলল,

” আমার পাশে একটু বসবে সেতু?”

সেতু এবার চোখ নামিয়ে ফ্লোরে বসে থাকা নিষাদের দিকে তাকাল।মাথা নাড়িয়ে হাঁটু গেড়ে কিছুটা দূরত্ব রেখে পাশেই বসল।নিষাদ কিঞ্চিৎ রাগ দেখাল।চাপাস্বরে অল্প রাগ ঝেড়ে বলল,

” উহ,এটা পাশে বসা হলো?”

” তো?”

নিষাদ ফোঁস করে শ্বাস ছেড়ে বলল,

” পাশাপাশি বসলে শরীরে শরীর ছুঁয়ে যায়। তোমার বাহু আমার বাহুতে স্পর্শ হতো।হয়েছে?”

সেতু না বুঝার ভান করে বলল,

” ক্ কি?”

” আমার শরীর ঘেষে পাশে বসো। বসে কাঁধে মাথা রাখো।”

সেতু শুনল না সেই কথা।দূরত্বও কমাল না।নিষাদ বাধ্য হয়েই সেতুর পাশে এগিয়ে বসল।সেতুর আর তার বসার মাঝে এইটুকুও দূরত্ব না রেখে হঠাৎই সেতুর মাথাটা চেপে তার কাঁধে রাখল।সেতু অবাক হলো।আর নিষাদ বিজয়ী হাসি হাসল।ঝুঁকে সেতুর কানে ফিসফিসিয়ে বলল,

” এই বার ঠিক আছে।এভাবে বসে থেকে চাঁদ দেখো,আকাশ দেখো, পারলে আমাকেও দেখো। আমি কিছু মনে করব না।”

সেতুর কপোল জোড় রক্তিম বর্ণ ধারণ করল।শীতল রক্তরা উষ্ণ অনুভব হলো।চুপচাপ সেভাবেই কাঁধে মাথা রেখে স্থির রইল।নিষাদ মৃদু আওয়াজ তুলে বলল,

” ভালোবাসি মেয়ে।”

সেতু মৃদু হাসল। বলল,

” এই পরিবারের মানুষগুলো এত ভালোবাসতে পারে কেন নিষাদ?আপনারা সবাই মানুষকে এতটা ভালোবাসা কি করে দিতে পারেন?”

নিষাদ উৎসাহ নিয়ে প্রশ্ন ছুড়ল,

” কে কে?”

সেতু উত্তর দিল,

” নীরু, মা আর..”

নিষাদের উৎসাহ দ্বিগুণ হলো।বলল,

” আর?”

” আপনি।”

নিষাদ খুশি হলো।মনে মনে হাসল।বলল,

” ভালোবেসে কি লাভ?তুমি যে ভালোবাসলে না। ”

” ভালোবাসা পেলেই যে ভালোবাসতে হবে নিয়ম আছে নাকি?নেই তো।”

নিষাদের কন্ঠ হঠাৎ ই উদাস হলো।বলল,

” মানে?তুমি ভালোবাসো না আমায় সেতু?সংসারটা শুধু দায়িত্বের দায়ে পড়ে করছো?”

সেতু ছোট্ট শ্বাস ফেলে বলতে লাগল,

” এই পৃথিবীতে সবথেকে সহজ বোধ হয় মেয়েদের মনে জায়গা করে নেওয়া নিষাদ।মেয়েরা মায়ার প্রেমে পড়ে, যত্নের প্রেমে পড়ে, ভালোবাসার প্রেমে পড়ে।মেয়ে মন বড্ড স্বচ্ছ। আবার বড্ড জটিলও।একটা মেয়ে মন যতোই কঠিন থাকুক না কেন, মায়া-ভালোবাসায় তার মন সর্বদা আটকাবে।নরম হবে।সেই মায়া ভালোবাসাকে মাধ্যম করে আপনি বেশ দাপট নিয়েই তার মনে জায়গা করে নিতে পারবেন। কোনদিন প্রেম করবে না বলা মেয়েটাকেও আপনি ধীরে ধীরে মায়া, মমতা, যত্ন, ভালোবাসা দিয়ে প্রেমের দিকে ঝুঁকতে বাধ্য করতে পারবেন।যেমনটা, আমিও ঝুঁকে গিয়েছি।”

নিষাদ সবটাই বুঝল। তবুও না বুঝার ভান করে বলল,

” তুমিও ঝুঁকে গিয়েছো মানে?কিসে ঝুঁকে গিয়েছো?”

সেতু অস্ফুট স্বর তুলে বলল,

” আপনাতে। ”

” ভালোবাসো আমায়?”

সেতু চুপ রইল।উত্তর দিতে পারল না।নিষাদ হাসল ঠোঁট চওড়া করে।সেতুর ফর্সা কপালে পুরু ঠোঁট ছুঁয়ে দিল মুহুর্তেই।ফিসফিসিয়ে বলল,

” চাঁদটা সুন্দর।আকাশটা সুন্দর।তুমিও সুন্দর।সবকিছুই আজ বড্ড সুন্দর লাগছে সেতু। ”

#চলবে….

#নিষ্প্রভ_প্রণয়
#পর্ব_১৮
লেখনীতেঃএকান্তিকা নাথ

বৃষ্টিতে ভেজার ফল রাতে রাতেই টের পেল নীরু।শরীর জ্বরে কাবু হয়ে আছে।জ্বরের উত্তাপে উত্তপ্ত বোধ হলো সর্বাঙ্গ।মাথা ভার অনুভব হলো।গলা ব্যাথায় গলা দিয়ে শব্দ বের হতে কষ্ট হলো ভীষণ। চোখজোড়াও সেই সাথে তাল মিলিয়ে জ্বলছে।কি যন্ত্রনা!ঘুমানোতো দূর চোখজোড়া বন্ধ করতেও পারছে না।নীরু মোবাইল হাতে নিল।আজকাল রাত হলে রঙ্গনকে কল দেওয়া হয় না।অনেক কষ্টে এই অভ্যাসটা তাকে ছাড়তে হচ্ছে।তবুও মাঝেমাঝে টলমলে আবেগ হৃদয়ে টইটুম্বুর হয়ে বার্তা পাঠায়, “একবার, একবার, একবার কল কর নীরু।”সেই টলমলে আবেগকে দামাচাপা দিয়ে চলতে হয় তাকে আজকাল।নীরু মোবাইলে রঙ্গনের নাম্বার খুঁজে পেল না।খুঁজে পাওয়ার কথাও নয়।সেই তো সব মুঁছে দিয়েছে।খাট থেকে উঠে বসেই ঘড়িতে চোখ বুলাল।মাঝরাত!ধুপধাপ পা ফেলে রুম ছেড়ে বেরিয়ে এসে মায়ের ঘরের দিকে পা বাড়াল সে।মায়ের ঘরের দরজা হালকা ভিড়িয়ে রাখা।নীরু দরজা ঠেলে মায়ের ঘরে গেল।ঘুমন্ত মায়ের হাত ধরে কিয়ৎক্ষন চেয়ে থাকল।গলার অবস্থা খারাপ হওয়া স্বত্ত্বেও অস্ফুট স্বরে বলল,

” মা?শুনছো?এই মা?”

নীরুর মা সঙ্গে সঙ্গে না জাগলেও কিছুটা সময় পর ঘুমুঘুমু চোখে তাকাল।নীরুর উষ্ণ ছোঁয়া বুঝে উঠেই উঠে বসল।বলল,

” জ্বর নেমেছে?এইজন্যই বলি বৃষ্টিতে ভিজতে যাস না।কথা শুনিস আমার?”

নীরু মৃদু হাসল। বলল,

” আমার কি ভীষণ মাথা ব্যাথা করছে মা।একটু মাথাটা টিপে দিবে?তুমি কি উঠে বসবে?তোমার কোলে মাথা রেখে একটু ঘুমাই?”

নীরুর মা উঠে বসল।বলল,

” হ্যাঁ, আমার তো আর কাজকর্ম নেই।বৃষ্টিতে ভিজে এসে এখন রাতদুপুরে আমাকেই ঘুম পাড়ানোর দায়িত্ব নিতে হবে!”

নীরু মায়ের কোলে মাথা রেখে গুঁটিশুটি মেরে শুয়ে পড়ল।ঠোঁট উল্টে বলল,

” উহ!একটামাত্রই তো ছোট মেয়ে তোমার।ছোট মেয়ে হিসেবে এইটুকু আবদারও করতে পারবো না আমি?”

নীরুর মা কিছু বলল না।চুপচাপ মেয়ের মাথায় হাত বুলাল।নীরু আবারও বলল,

” মা?তুমি কি আজকাল আর আমায় বুঝতে পারো না?নাকি বুঝেও বুঝো না মা?আমার সুখ দুঃখ কোনকিছুই কি আজকাল তোমার দরজায় আর কড়া নাড়ে না মা?”

নীরুর মা এবারও চুপ রইল।বেশ কিছুক্ষন পর কি বুঝে বলল,

” জানিস নীরু?একটা মেয়ে যখন প্রেমে পড়ে তখন তার আচরণে নতুন কিছু ধর্ম প্রকাশ পায়।মনমেজাজ ফুরফুরে থাকে।প্রেমের অনুভূতিতে কখনো কখনো মুখে লাজুকভাব ফুটে উঠে।কখনো বা আনমনে হাসে।আরো হরেক রকম বিচিত্র আচরণের সংযোগ ঘটে এই প্রেমানুভূতির কারণে।আর সেই বিচিত্র আচরণ গুলো সর্বপ্রথম কে খেয়াল করে জানিস? মেয়েটার সবচেয়ে কাছের বন্ধু!মেয়েটার মা।মেয়েটাকে সেই ছোটবেলা থেকে হাতে করে মানুষ করে তার মা।মেয়েটার প্রথম বন্ধু হয় তার মা।মেয়েটার প্রথম খেলার সঙ্গী হয় তার মা।মেয়েটার সারাদিনের সব ঘটনা চুপচাপ শুনেও তার মা।সেই মা বুঝি মেয়েটাকে বুঝবে না?বুঝে,সব বুঝে!মেয়েটার লাজুক মুখ, অন্যমনস্ক হয়ে হাসতে থাকা, ফুরফুরে মেজাজে ঘুরে বেড়ানো দেখে একমুহুর্তেই বুঝে যায় তার মেয়ে প্রেমে পড়েছে।”

নীরু হালকা হাসল।বলল,

” তুমিও বুঝলে নাকি?”

” বুঝলাম।আমিও বুঝলাম আমার ছোট মেয়েটা প্রেমে পড়েছে।অন্যসব মায়ের মতো হয়তো চাইলে বাঁধা দিতে পারতাম।কিন্তু আমি বাঁধা দিলাম না। কেন দিলাম না তাও জানি না।তবে মনে হয়েছিল, এটা প্রেমের বয়স!এই বয়সে প্রেম এসে দরজায় কড়া নাড়বে এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।”

নীরু আপসোসের সুরেই বলল,

” বাঁধা দিলেই বোধহয় ভালো হতো মা।তুমি কেন অন্য মায়েদের মতো হলে না? তাহলে আমায় বাঁধা দিতে, অনুভূতিটা এতদূর আসতেই পারত না।”

নীরুর মা মৃদু হাসল। ঝুঁকে নীরুর কপালে চুমু দিলেন।বললেন,

” আমি সবসময় ভাবতাম নিষাদ, নিলি আর নীরু এই তিনজনের মধ্যে নীরু মেয়েটাই সবচেয়ে ছোট, সবচেয়ে চঞ্চল, সবচেয়ে অবুঝ।কিন্তু আমি ভুল ছিলাম নীরু।নিলি আর নিষাদ একটু থেকে একটুতেই রাগ প্রকাশ করতে পারে, কষ্ট প্রকাশ করতে পারে,ঘৃণা প্রকাশ করতে পারে।কিন্তু তুই ওদের থেকে একদম ভিন্ন।আমাকে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে সেদিন রঙ্গনের সামনে কি সুন্দর হেসেখেলে সবটা মেনে নিলি।আমি সেদিন বুঝলাম, আমাদের ছোট নীরুটা অনেক বড় হয়ে গিয়েছে।অনেকটা! ”

” উহ!আমাকে বড় বানাবে না একদম।আমি ছোটই আছি মা!”

” জানিস নীরু?রঙ্গন ছেলেটাকে আমি ভালো চোখে দেখতাম। পছন্দও করতাম। নিষাদের সাথে যখন থেকে ওর বন্ধুত্ব?তখন থেকেই আমি ছেলেটাকে অনেক ভালোবাসতাম।নিষাদের মতো করেই।কিন্তু আশ্চর্যজনক বিষয় আমি ঐদিনের পর রঙ্গনকে আর পছন্দ করতে পারছি না।রঙ্গনের প্রতি আমার ভালোবাসাও আসছে না।বোধহয় প্রত্যেক মায়েরাই স্বার্থপর!আমিও স্বার্থপর!আমার সন্তানের সুখটাই আমার কাছে সবার আগে।আমার এখন রঙ্গন ছেলেটাকে বিরক্তিকর লাগে।মনে হয় ছেলেটা দোষী!আমার মেয়েটা এইটুকু জায়গাও করে উঠতে পারল না ছেলেটার মনে? আমার মেয়ের এত ভালোবাসার বিনিময়ে ছেলেটা কি এইটুকু ভালোবাসাও দিতে পারত না?”

নীরু মায়ের কথা শুনে অবাক হলো না।মা সবসময়ই সবকিছুর আগে তাদের সুখকে বেঁছে নিয়েছে।সে মা সন্তানের সুখের কথা ভেবে রঙ্গনকেই দোষী ভাববে এটা যেন স্বাভাবিক মনে হলো তার।পাশ ফিরে চোখ বন্ধ করে বলল,

” উহ মা,এই পৃথিবীতে সবার তো সবার থেকে ভালোবাসা পাওয়া হয়ে উঠে না। একজনকে আমি ভালোবাসলাম, সেও যে আমায় ভালোবাসবে এমন কোন নিয়ম তো নেই কোথাও।কিংবা আমার মনে একজনের জায়গা আছে, তার মনেও আমার জন্য জায়গা থাকবে এমনও তো কোন নিয়ম নেই।ভালোবাসলেই যে ভালোবাসা পাব এমন কি কোন চুক্তি আছে?নেই।যদি এমন কোন নিয়ম অথবা চুক্তি থাকতই তবে পৃথিবীতে সবাই হতো চরিত্রহীন।এক নারীতে কিংবা এক পুরুষে আসক্ত পুরুষ তখন বিলুপ্ত হতো।ধরো তোমার আর বাবার প্রণয়ের পরও বাবাকে অন্য কোন নারী যদি ভালোবাসত, বাবারও কি উচিত হতো সে মহিলাকে একইভাবে ভালোবাসা?তাহলে যে বাবার চরিত্র শুদ্ধ হতো না।বাবার হৃদয়ে তখন শুধু তুমিই না, যারা যারা আমার বাবাকে প্রেমিকরূপে দেখত তারা সবাই বসবাস করত।ঠিক হতো কি?”

নীরুর মা বোধ হয় কল্পনাতেও তেমনটা ভাবতে পারলেন না।দ্রুত স্পষ্টকন্ঠে বলল,

” না!ঠিক হতো না।”

নীরু হাসল।ভালোবাসার মানুষটার ভালোবাসা পেলে বোধহয় তারও এমন বিশ্বাস থাকত।যে বিশ্বাস নিয়ে কেউ এইটুকু নড়চড় করে প্রশ্ন ছুড়লে সেও বোধহয় আৎকে উঠত।এভাবেই স্পষ্ট কন্ঠে জবাব দিতে মরিয়া হয়ে উঠত।কিন্তু তার যে জবাব দেওয়ার মতো কোন কিছু নেই।একেবারে কিছুই না!সে শূণ্য!

.

সেতু বেশিক্ষন জেঁগে থাকতে পারল না।নিষাদের কাঁধে যেভাবে মাথাটা রাখা ছিল সেইভাবেই ঘুমে নিভুনিভু হয়ে আসল চোখজোড়া।কিছুক্ষনের মধ্যে ঘুমে তলিয়েও গেল।নিষাদ হতাশ হয়ে চাইল সেতুর দিকে।চন্দ্রবিলাশ?চন্দ্রবিলাশের চন্দ্রটাই রইল আকাশে। কিন্তু বিলাশ আর করা হলো না।নিষাদ হাত দিয়ে ডাকল সেতুকে।মৃদু স্বরে অভিমান ফলিয়ে বলল,

” সেতু?যাও, উঠে গিয়ে বিছানায় ঘুমাও।”

সেতু চোখ খুলল না।এখনও ঘুমে তলিয়ে আছে।নিষাদ আবারও হতাশ হলো।এইবার সেতুর মাথাটা নিজের কাঁধ থেকে সরিয়ে দিয়ে দূরত্ব রেখে বসল। সেতু সঙ্গে সঙ্গে ঘুমুঘুমু চোখে তাকাল।মাথাটা ঘুমে হেলে যেতে লাগলেও সোজা করল।সবটা বুঝে উঠে নিষাদের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল,

” কি হলো?”

নিষাদ বাইরের আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল।সেতুর দিকে একবারও ফিরে চাইল না।গমগমে সুরে বলল,

” কি হবে? কিছু হয়নি।যাও ঘুমাও।”

” মানে?”

নিষাদ শান্তস্বরেই ক্ষোভ মিশিয়ে বলল,

” কিছু না।যাও।”

সেতু ঘুমে নিভুনিভু চোখ মেলে ধরে রাখতে পারছে না।তবুও জোর করে মেলে রাখল।মৃদু আওয়াজ তুলে বলল,

” কি করেছি না বললে বুঝব কি করে?”

নিষাদ এবার উঠে দাঁড়াল।বলল,

” বললাম তো কিছু করোনি।ঘুমাও গিয়ে।এখানে এভাবে ঘুমালে পরে ঘাড়ব্যাথা হবে।”

সেতু কিয়ৎক্ষন ভাবল।কিছু বুঝে উঠেই অপরাধীর মতো বলে উঠল,

” আমার তো আপনার মতো না ঘুমানোর অভ্যাস নেই নিষাদ!সেই সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত ঘোরাঘুরি করে শরীর ভেঙ্গে আসছে। ঘুম আসবে না?আমি চেষ্টা করেছি জেগে থাকার, কিন্তু ব্যর্থ হচ্ছি।দোষটা আমার?আপনি কিন্তু শুধু শুধুই রাগ করলেন।”

নিষাদের এতক্ষনকার স্বল্প অভিমান আর রাগ মুহুর্তেই উবে গেল।মুখে হালকা হাসি ফুটল।ভ্রু উঁচিয়ে সেতুর দিকে না তাকিয়েই বলল,

” রাগ করব কেন?রাগ কি সবার উপর করা যায় নাকি?তুমি আমার প্রেমিকা হলে নাহয় কথা ছিল!প্রেম করতাম, রাগ করতাম, অভিমান করতাম।”

সেতু নিঃশব্দে হাসল।ঘুমুঘুমু চোখের ঘুম ছুটিয়ে সেও উঠে দাঁড়াল।বেলকনির গ্রিলে হাত রেখে বলল,

” আমি আপনার প্রেমিকা না হলেও, আপনি বোধহয় আমার প্রেমিক।”

নিষাদ অবাক হওয়ার ভান করল।সেতুর দিকে তাকিয়ে বলল,

” কী?ছিঃ ছিঃ!আমার বউ আছে,বাচ্চা আছে।এভাবে প্রেমিক উপাধি দিবে না দয়া করে! ”

” তাহলে বিনা কারণে রাগ টাগ করে ঘুম থেকে উঠিয়ে দিচ্ছেন কেন,হুহ?”

” রাগ করলেই বা কি?তুমি কি রাগ ভাঙ্গাবে আমার?”

সেতু কিয়ৎক্ষন চুপ থাকল।মৃদু আওয়াজ তুলে বলল,

” আপনার রাগ ভাঙ্গানোর উপায় তো জানা নেই।জানা থাকলে চেষ্টা করতাম।”

নিষাদ যেন সুযোগ পেল।মুখে চমৎকার বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে রেখে সেতুর দিকে ঝুঁকল।কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল,

” জানিয়ে দিই?”

” কি?”

” কিভাবে রাগ ভাঙ্গাবে?জানাব?”

সেতু সন্দেহী চোখে চাইল।নিষাদের মুখের বাঁকা হাসি দেখেই বুঝার চেষ্টা করল কিছু।কিয়ৎক্ষন চুপ থাকতেই নিষাদ আবারও ফিসফিসিয়ে বলল,

” তুমি যদি চাও তোমার ঠোঁটের চুম্বন দিয়ে রাগ ভাঙ্গাতে পারো।আমি কিছু মনে করব না।”

সেতু চোখ বড়বড় করল।মনে মনে যেন এমনকিছুই আন্দাজ করে উঠেছিল।জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলল,

” না, পারব না রাগ ভাঙ্গাতে।আপনি চাঁদ দেখুন, আমি গেলাম ঘুমোতে।”

কথাটা বলে সেতু দু পা বাড়াতেই হাতে টান পরল।নিষাদ সেভাবেই হাত চেপে ধরে সেতুর দিকে না তাকিয়ে মৃদু আওয়াজ তুলে বলল,

” চাঁদ সামনে না থাকলে চাঁদ দেখব কি করে?আশ্চর্য!”

সেতু হতাশ হলো।নিষাদ এবারে ঘাড় ঘুরিয়ে একনজর তাকাল। বলল,

” তুমি ডাহা মিথ্যেবাদী সেতু!একটু আগে বললে আমি বোধহয় তোমার প্রেমিক!তোমার সেই কথার সাথে কাজের যে কিচ্ছু মিল নেই!কি ভীষণ মিথ্যেবাদী তুমি!”

সেতু করুণ চোখে চাইল নিষাদের দিকে।নিষাদ আবারও বলল,

” এভাবে তাকাবে না একদম!আমি অতো উদার নই।”

সেতু শান্তস্বরে প্রশ্ন ছুড়ল,

” তো?কিভাবে তাকাব?”

নিষাদ অতি খুশি হয়ে উত্তর দিল,

” প্রেম প্রেম নজরে তাকাবে।ভালোবাসা-বাসির নজরে তাকাবে।”

সেতু নিষাদের অতি খুশি হয়ে দেওয়া উত্তরকে পাত্তা দিল না।বেশ কিছুক্ষন চুপ থেকেই ক্লান্ত গলায় বলল,

” আমার দিকে ঝুঁকে দাঁড়ান।”

” কেন?কি করবে তুমি? ”

সেতু ঠোঁটে ঠোঁট চাপল।বলল,

” যেটা বলছি করুন।”

নিষাদ এবার কিছু বলল না।ঠোঁট চওড়া করে হাসল।সেতুর সামনে ঝুঁকে দাঁড়াতেই সেতু বলল,

” এবার চোখ বন্ধ করুন দয়া করে।”

নিষাদ ফের প্রশ্ন ছুড়ল,

” কেন?”

” বলছি তাই।”

নিষাদ বাধ্য হয়ে চোখ বুঝল।সেতু আরেকটু এগিয়ে গেলো।কিয়ৎক্ষন চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে চাঁদের আলোয় নিষাদের মুখখানি দেখল।তার পরপরই নির্লজ্জ্বের মতো এক দুঃসাহসী কাজ করে বসল।নিজের মিহি ঠোঁট জোড়া নিষাদের চওড়া কপালে ছুঁয়ে দিল।তারপর আর এক মুহুর্তও সেখানে দাঁড়ানোর সাহস হলো না।লজ্জ্বায় কান গরম হলো।কপোল জোড় লালাভ বর্ণ ধারণ করল।বুকের ভেতর এমন অনুভব হলো যেন হাতুড়ে ফেটানোর শব্দ হচ্ছে।দ্রুত ধুপধাপ পা ফেলে সেই স্থান থেকে পালিয়ে গেল।নিষাদ চোখ খুলল তার ক্ষনিক পর।চোখের সামনে কাঙ্খিত মানুষটাকে না দেখলেও মুখে ফুটল বিস্তর হাসি।

.

তখন সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত।নিষাদ বালিশে মাথা দিয়ে শুঁয়ে আছে।পেটের উপর ছোট নীর বসা।তার নরম হাত মুখের ভেতর।পরনের জামাটায় জায়গায় জায়গায় তরকারির দাগ।সেই তরকারির দাগ সমেত জামাটা সে কিছুতেই খুলবে না। খুলবে না মানে খুলবে না।সেতু অনেকক্ষন চেষ্টা করে অবশেষে হার মানল।নিষাদ হালকা হাসল সেই চিত্রবিচিত্র জামা পরিহিত নীরকে দেখে।পেটের উপর বসেই নীর হুটহাট বসা থেকে লাফ মেরে উঠে আবারও বসে পড়ছে।বার কয়েক পেটের উপর লাফ মারতেই নিষাদ ঠোঁট চাপল। দুই হাত দিয়ে নীরকে পেটের উপর থেকে নিয়ে উপর করে ধরল।দাঁত কেলিয়ে বলল,

” পেটের সব নাড়িনক্ষত্র ভর্তা হয়ে যাচ্ছে বাপ।লাফ মারিস না। সুন্দর করে বসে থাক। ”

নীর ভড়কে গেল।কিছু না বুঝেই বোধ হয় আলতো গলায় বলল,

” বা্ বা্ বা্ বা্ ”

নিষাদ আবারও হাসল।মৃদু গলায় বলল,

” তোমার সারা জামায় এমন তরকারি লাগিয়ে দিয়েছে কে ব্রো?তোমার বউ?হিসেব মতো তুমি তো বিয়ে করোনি তাহলে কি তুমি?এমন তরকারি ফরকারি লাগিয়ে ঘুরলে তো মেয়েরা তোমায় পছন্দ করবে না বাপ!”

নীর সাই দিল না এবার।উৎসুক চোখে তাকিয়ে রইল।নিষাদ আবারও আগের মতো পেটের উপর বসিয়ে দিল নীরকে।সেই মুহুর্তেই নীরু আসল।চোখ মুখ শুকনো দেখালেও মুখে হাসি বিদ্যমান।চুল এলোমেলো।জ্বরে জুবুথুবু শরীরটা নিয়ে এসেই বলল,

” তুমি ওকে কি বললে?প্রথমে ব্রো পরে বাপ?কি সম্বোধন!আর কিছু কি বাকি রেখেছো সম্বোধনের?”

কথাটা বলেই নীরু হাসিতে ফেঁটে পড়ল।নিষাদ মুখ কালো করল।জবাবে বলল,

” তোর মতো বিখ্যাত পেইন্টার অতোসব বুঝবে না।আমি একদিকে ওর বাপ,অন্যদিকে ওর বন্ধু!বুঝলি?সেতুকে অনেক আগে বলেছিলাম, নীর আমার থেকে একজন বন্ধুর মতোই ভালোবাসা পাবে, একজন বাবার মতোই আদর পাবে আর একজন শিক্ষকের মতোই শিক্ষা পাবে।তো?বাপ হয়ে ছেলেকে বাপ ডাকছি।বন্ধু হয়ে বন্ধুকে ব্রো, ভাই আরো হরেক রকম নামে ডাকব।তোর কি?দুই বন্ধুর মাঝে নাক গলাবি না নীরু।বন্ধুদের ভালোবাসা মানে আলাদা মানের ভালোবাসা!”

নীরু আবারও খিলখিলিয়ে হাসল।বলল,

” যে আলাদা মানের ভালোবাসা, তা তো দেখলামই।গাঁধাও তো তোমার নাকি কলিজার টুকরো বন্ধু। সেই বন্ধুর বিয়ে ঠিক হলো, অথচ তুমি ইনভাইট করার সময় জানতে পেরে যেন আকাশ থেকে পড়লে এমন ভাব করলে।নির্ঘাত গরু বেচারাকে গাঁধা তার বিয়ের কথা আগে জানায়নি। তাই না?”

নীরু কথাটা মজা করে বললেও নিষাদের মুখ চুপসে গেল।সত্যিই রঙ্গনের এরূপ ব্যবহার সে আশা করে নি।কিংবা হয়তো নীরু ওকে ভালোবাসে এইটা নিষাদও জানে দেখে বলেনি আগে।কে জানে!তবে সেইদিনের পর রঙ্গনের সাথে আর যোগাযোগ করেনি নিষাদ।কেন করেনি জানা নেই।তবে এইটুকু জানে, তার মন টানছে না।রঙ্গন কল দিলেও নিষাদ কল উঠায়নি।অদ্ভুতভাবে টের পেল তাদের বন্ধুত্ব আর আগের মতো নেই।বিস্তর দূরত্ব দুই বন্ধুর মাঝে।কবে, কখন, কোন ক্ষনে এই দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে তা যেন কেউই বুঝে উঠল না। কি সুন্দর বিনা বিজ্ঞপ্তিতে কয়েকদিনেই দুইজন বন্ধু আলাদা হয়ে গেল।অথচ কেউই জানে না এই আলাদা হওয়ার কথা!নিষাদ আনমনে তা ভাবল।নীরু কিয়ৎক্ষন নিষাদের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারল মজা করতে গিয়ে ভুল প্রসঙ্গে কথা বলে ফেলেছে সে। কথা ঘুরানোর জন্যই আবারো বলে উঠল তড়িঘড়ি করে,

” তোমরা এখনো নীরের ড্রেস চেঞ্জ করাতে পারোনি?সেই দুপুরেই খাওয়ার সময় জামার এই অবস্থা করল। এখন তো রাত হলো!”

নিষাদ হতাশার সুরে বলল,

” পারলাম না রে, পারলাম না ড্রেস চেঞ্জ করাতে!তোর জ্বর ছেড়েছে?”

নীরু পা বাড়িয়ে নীরকে কোলে তুলল।তারপর আরাম করে বসে নীরের গায়ের জামাটা খুলল।নীর বিশেষ প্রতিক্রিয়া দেখাল না এইবার।চুপচাপ বসে নীরুর দিকে তাকিয়ে রইল।নীরুও তাকিয়ে হাসল।তারপর আবারও আগের মতো নিষাদের পেটের উপর বসিয়ে দিল।কপাল চাপডে নিষাদের আগের কথাটাকে অনুসরন করে বলল,

“ছাড়ল না রে, ছাড়ল না আমায় জ্বর।মাথাটা আমার ভোতা হয়ে আছে এই জ্বর বাবাজীর কারণে!সব তোমার দোষ গরু।তুমি যদি আমায় লোভ না দেখাতে তাহলে তো আমিও বাইরে যেতাম না।বৃষ্টিতেও ভিজতাম না।”

নিষাদ গলা ঝেড়ে বলল,

” আমার দোষ?দোষ তো তোর।তোকে কি আমি একবারও বৃষ্টিতে ভিজতে বলছিলাম?বেয়াদব মেয়ে!”

নীরু ও রাগল।ঝাঝালো গলায় কিছু বলতে নিবে ঠিক তখনই সেতু আসল হাতে ঔষুধ নিয়ে।নীরুর দিকে তা এক হাতে এগিয়ে দিয়ে অন্য হাত রাখল নীরুর কপালে।শান্তস্বরে বলল,

” জ্বরে শরীর পুড়ে যাচ্ছে নীরু।তুমি বিকালের ঔষুধ না খেয়ে এখনও দৌড়ে বেড়াচ্ছো?মা শুনলে কিন্তু মার দিবে।”

নীরু মুখ কুঁচকাল।বলল,

” মারলে মারুক সেতু দি।আমার আর এই দিন দুনিয়া ভালো লাগছে না বুঝলে।চিৎফটাং হয়ে ম’রে যেতে ইচ্ছে করছে।”

সেতু প্রশ্ন করল,

” কেন?”

” আমার গলা ব্যাথা করছে, চিৎকার করে কথা বলতে পারছি না।আমার চিৎকার করে কথা বলতে না পারলে শান্তি লাগে না।সবসময় ফুরফুরে থাকা এই মাথাটা তখন থেকে ঝিমঝিম করতেছে!বলো, বাঁচার ইচ্ছে কি করে থাকবে?”

সেতু হালকা হাসল।পাশ থেকে পানি নিয়ে নীরুর দিকে ঔষুধ সমেত এগিয়ে দিয়ে বলল,

” ঔষুধটা খাও তাড়াতাড়ি।দেখবে চট করে গলা ব্যাথা, মাথা ব্যাথা সব উধাও!তারপর একটা ঘুম দিবে।ঘুম থেকে উঠে দেখবে সব ফুরফুরে!”

নীরু হালকা হেসে বাধ্য মেয়ের মতো ঔষুধ খেয়ে নিল।তারপর ধুপধাপ পা ফেলে ঘুমানোর উদ্দেশ্যে রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেল।সেতু আরেকটু এগিয়ে নীরকে কোলে তুলল।আরেকটা জামা নিয়ে নীরকে পরাতে গিয়েই অস্ফুট স্বরে বলে উঠল,” আহ!”
নিষাদ সন্দেহী চোখে তাকাল।দ্রুত প্রশ্ন ছুড়ল,

” তোমার হাত কাঁ’টল কিভাবে?”

সেতুর টনক নড়ল।কাঁটা হাতটা নীরু কিংবা শ্বাশুড়ী কারোরই নজরে পড়ে নি এতক্ষন।কিংবা পরলেও জিজ্ঞেস করে নি কেউ।তাই এর জন্য জবাব ও দিতে হয়নি।সেতু পাশ ফিরে নিষাদের দিকে তাকাতেই দেখল নিষাদ কাঁ’টা হাতের দিকেই তাকিয়ে আছে।সে বিকালেই কেঁটে গিয়েছিল হাতটা।নীরের সাথে নীরু আর নিষাদের সম্পর্কটার বেশ ভালো পরিণতি হলেও নিষাদের মা কিংবা বড়বোনের সাথে এখনও তেমন কোন পরিণতি চোখে পড়েনি।নীরু অসুস্থ হওয়ায় আজ বিকালে রান্না করার সময় নীরকে আর নীরুর কাছে রাখার জন্য বলতে পারল না সেতু।শ্বাশুড়িকেও আগ বাড়িয়ে বলা গেল না সংকোচে।নীরকে নিয়েই তড়িঘড়ি করে রান্না ঘরে তরকারি কাঁটতে গিয়ে হাত কেঁটে গেছে বেশ খানিকটা।রক্ত ও বের হয়েছে বেশ।পরে অবশ্য ঔষুধ লাগানোতে ঠিক হয়েছে।সেতু হালকা মাথা নাড়িয়ে বলল,

” রান্না করেছেন কখনো?রান্না করতে গেলে হাত কাঁটে এমন।”

” হাত কাঁ’টে সেটা আমিও জানি।দেখে মনে হচ্ছে তোমার হাতটা বেশিই কেঁটেছে।”

সেতু মৃদু আওয়াজে বলল,

” ঔষুধ লাগিয়ে নিয়েছি তো।সেরে যাবে।”

” না,ঔষুধ লাগানো হয়নি।আমি ঔষুধ লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছি।বসো।”

সেতু নাকোচ করল সেই প্রস্তাব।বলল,

” হবে না কেন ঔষুধ লাগানো?আমার ঔষুধ লাগানো, ব্যান্ডেজ করা,ঔষুধ খাওয়া সবকিছুরই অভ্যাস আছে নিষাদ।যাদের যত্ন করার কেউ থাকে না তারা সবসময়ই তাদের নিজেদের যত্ন করতে পারে।মা মা’রা যাওয়ার পর থেকেই আমার সেই অভ্যাস আছে।তাই এই অভ্যাসটার পরিবর্তন না করলেই খুশি হবো।আজ আপনি যত্ন দেখালেন, কাল না দেখালে?তাই নিজের যত্ন নিজেকেই সবসময় করতে হয় বুঝলেন?”

নিষাদ তাকিয়ে থাকল সেতুর দিকে।বলল,

” আমি তোমার যত্ন সবসময় করব না এমন মনে হলো কেন?”

” জানি না।আমি এত ভালোবাসা, এত সুখ, এত যত্ন মেনে নিতে পারি না।ভয় হয় আমার অতি সুখে।”

নিষাদ ঠোট গোল করে ফোঁস করে শ্বাস ছাড়ল।কিছু বলল না আর।শুধু তাকিয়ে রইল।

#চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে