Monday, October 6, 2025







নিষ্প্রভ প্রণয় পর্ব-০৮

#নিষ্প্রভ_প্রণয়
#পর্ব_০৮
লেখনীতেঃ একান্তিকা নাথ

মধ্যেরাতে হঠাৎ ই নীরের তার স্বরে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসল কানে।সেতু চোখ মেলে চাইল সঙ্গে সঙ্গে।কিয়ৎক্ষন কোন জায়গায় আছে তা বুঝার চেষ্টা করল।পরমুহুর্তেই বুঝতে পারল বেলকনির চেয়ারটায় হেলান দিয়েই ঘুম লেগে গেছিল চোখে।সামনের দিকে মাথা ঝুঁকে থাকায় ঘাড়ও ব্যাথা করছে কিছুটা।সেতু উঠে দাঁড়াল।শাড়ির আঁচল ঠিক করে বেলকনি পার হতেই নীরকে নিষাদের কোলে দেখল।দুই হাতে নীরকে নিয়ে হালকা দোল দিচ্ছিল নিষাদ।যাতে কান্না থামে।সেতু এগিয়ে গেল।নিষাদের দিকে নীরকে কোলে নেওয়ার উদ্দেশ্যে হাত বাড়িয়েই অপরাধী গলায় বলে উঠল,

” দুঃখিত।ওর কান্নার আওয়াজে আপনার ঘুম ভেঙ্গে গেছে না?আমার একদমই খেয়াল ছিল না।”

নিষাদ কপালে ঝুকে আসা অগোছাল ঝাকড়ানো চুলগুলো পেঁছনে ঠেলল এক হাতে।মাথা তুলে তাকিয়েই নীরকে সেতুর কোলে দিল।ভ্রুঁ কুঁচকে বলল,

” এসব বলে কি বুঝাতে চাইছো?আমি নীরকে আপন করতে পারছি না?”

সেতু বোকা বোকা চোখে তাকাল।যা বলতে চাইল তার ঠিক উল্টো অর্থটাই বের করল নিষাদ।ঠোঁট চেপে নীরের গায়ে হাত বুলিয়েই বলে উঠল,

” আমার মনে আপনাকে আর নীরকে নিয়ে সংকোচ নেই নিষাদ।আমার কথায় এমন কোন উদ্দেশ্য ছিল না।”

নিষাদ সরু চাহনীতে তাকাল।বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়েই বলল,

” ও বোধহয় ঘুমের মধ্যে তোমায় খুঁজছিল।হাত দিয়ে ঘুমের ঘোরে এপাশ ওপাশ হাতড়ে দেখছিল।তোমায় না পেয়েই কান্না জুড়ে দিয়েছে হয়তো।”

সেতু নীরের কান্না থামিয়েই শান্ত চাহনীতে তাকাল।নীরের এমন অভ্যেস আছে।ঘুমের মধ্যেই হাত দিয়ে হাতড়ে সেতুর মুখ ছুঁয়ে দেয় কখনো কখনো।আবার কখনো কখনো ঝাপটে জড়িয়ে ধরে।কিন্তু ঘুমের মধ্যে হাত দিয়ে হাতড়ে সেতুর উপস্থিতি যদি টের না পায়,সঙ্গে সঙ্গেই চোখমুখ কুঁচকে কান্না জুড়ে দেয়।এখনও তাই হলো।সেতু ছোট শ্বাস ফেলে পুনরায় নীরকে বিছানায় শোয়াল।হাত দিয়ে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতেই মৃদু গলায় বলল,

” আপনি জেগে ছিলেন?কি করে বুঝলেন ও ঘুমের ঘোরে কাউকে খুঁজছে?”

নিষাদের স্পষ্ট উত্তর,

” ঘুম নামেনি চোখে।”

” কেন?”

” জানা নেই।”

নিষাদের ছোট উত্তর।তারপর আর কিছু বলল না সেতু।নিষাদ পা বাড়াল অন্যত্র।কিয়ৎক্ষন কাঁটতেই ওয়াশরুম থেকে মুখচোখে জল দিয়ে আসল।মাথার চুলও হালকা ভিজল।নিষাদ চুলগুলো ঝাড়া দিয়েই প্রশ্ন ছুড়ল,

” তোমার কি অসুবিধা হচ্ছে সেতু?”

সেতু মাথা তুলে তাকাল নিষাদের দিকে।প্রশ্নসমেত দৃষ্টি ছুড়ে বলল,

” মানে?”

” আমার সাথে একঘরে সমস্যা হচ্ছে?মানিয়ে নিতে পারবে?”

সেতু এবার বুঝল নিষাদের কথার অর্থ।শান্ত চোখে তাকিয়ে বলল,

” হঠাৎ এমন প্রশ্ন?”

” মনে হলো তোমার থেকে এই উত্তরটা জানা উচিত।আমি এতটাও কাপুরুষ নই যে কোন মেয়ের মতামত না নিয়ে তার অসুবিধা হচ্ছে দেখেও তার সাথে দিনরাত একঘরে কাঁটাব। ”

” মতামত না নিয়ে বিয়ে তো করে নিলেন।সে বেলায় কাপুরুষতা-বীরপুরুষতা কোথায় ছিল?”

নিষাদের চাহনী এবার শক্ত হলো।মুখ টানটান হলো মুহুর্তেই।চোয়াল কঠিন করেই উত্তর দিল,

” বিয়ে স্বচ্ছ বিষয়।তোমার প্রিয় কোন জিনিস হারিয়ে গেলে কি করবে?পুনরায় ফিরে পাওয়ার চেষ্টা চালাবে?ধরো হারিয়ে যাওয়া সেই জিনিসটাই তুমি কোথাও না কোথাও পড়ে থাকতে দেখলে। কুড়িয়ে নিবে না?না নিলেও শোনো, তোমার কুড়িয়ে নেওয়া উচিত।সে জিনিসটা তোমার কাছে না থাকতে চাইলেও তোমার উচিত কুড়িয়ে নেওয়া।নিজের প্রিয় জিনিসদের ক্ষেত্রে একটু স্বার্থপর তো হতেই হয়।তাই না?তবে তাই বলে প্রিয় জিনিসরা কোথায় ঠিক থাকবে কোথায় ঠিক থাকবে না তা যে ভাবব না এমন তো নয়।ধরো প্রিয় বই জলে চুবিয়ে রাখলাম, পরদিন দেখলাম বইটা নষ্ট হয়ে গেল।তা তো মেনে নেওয়া যায় না।”

সেতুর গলা আটকে আসল।শব্দরা ঠোঁট জুড়ে বের হতে চাইল না।তবুও কোনরকম ঠোঁট ফাঁক করে আওড়াল,

” আমি আপনার প্রিয় জিনিস?”

নিষাদ নির্বিকারভাবে তাকাল।বলল,

” সেটা আমিও জানি,তুমিও জানো।আর জানো বলেই অবহেলায় ভরপুর করে রাখতে আমায়।ভুলে গিয়েছো?সময় পেরিয়েছে, ভুলতেই পারো।তবে আমাদের জীবনে কিছু প্রিয় জিনিস থাকে সেতু।দিন যাক, বছর যাক, যুগ যাক সে জিনিসগুলো আগের মতোই প্রিয় থাকে।অনেকদিন রেখে দিলে একটা জিনিসে যেমন ময়লা জমে, শেওলা জম্মে, তেমনই সেই প্রিয় জিনিসটা ঘিরেও রাগ, ঘৃণা শতসহস্র ভিন্ন অনুভূতি জম্মে।তবুও দিনশেষে তারা প্রিয়দেরই তালিকায় থাকে।”

নিষাদের এতগুলো কথা শুনে থম মে’রে রইল সেতু।বলার মতো কিছু খুঁজেও পেল না অবশ্য।নিষাদ পুনরায় শুধাল,

” একঘরে আমার সাথে মানিয়ে নিতে না চাইলে বলো।অন্যত্র ব্যবস্থা করে নিব আমি।”

সেতু ছোট করেই শুধাল,

” মানিয়ে নিতে পারব।”

” জোর করছি না তোমায়।পারবে আর চাইবে শব্দ দুটোয় ভিন্নতা আছে।সমস্যা থাকলে বলে ফেলো।আমি অন্য রুমে মানিয়ে নিব।”

” আপনার ঘর। আপনি ছেড়ে যাবেন কেন?”

নিষাদ পাশ থেকে তোয়ালে নিল। মুখ মুঁছে বলল,

” যন্ত্রনায়!বুকে বড্ড যন্ত্রনা হচ্ছে তাই।”

সেতু বুঝল না।দৃষ্টি ক্ষীণ করে দ্রুত গলায় বলল,

” ঘরে ঔষুধ আছে?নীরুকে ডাকব একবার? কল দিব ওকে?”

নিষাদ চোখ টানটান করে ভ্রুঁ উঁচিয়ে চাইল। ফোঁস করে শ্বাস ছেড়েই বলল,

” তোমাকে আমার সহ্য হচ্ছে না।আর না তো তোমার এসব বানোয়াট, মিথ্যে যত্ন দেখানো সহ্য হচ্ছে।এতগুলো দিন যখন বুকে ব্যাথা নিয়ে বেঁচে আছি, ভবিষ্যৎ এ ও বেঁচে থাকতে পারব।তোমার এই ঔষুধ আছে, নীরুকে ডাকব,এসব বলাতে দুদিনেই বুকে ব্যাথা সেরে যাবে না।এসব যত্নের মিথ্যে প্রলেপ আমাকে দেখিও না সেতু।”

সেতু আর কিছু বলতে পারল না।যেটা বলে সেটাই বানোয়াট, মিথ্যে। তার থেকে চুপ থাকা ভালো।যে বুঝার নয় তাকে জোর করে বুঝানোর দায় তো তার নেই।পরমুহুর্তেই মনটা তিক্ততায় ভরে উঠল।মন খারাপের সমুদ্রে ডুব দিয়েই মনে হলো, নিষাদ এভাবে না বললেও পারত।এতটা ভুল না বুঝলেও তো পারে।কখনো সখনো কি তাকে ঠিকঠাক মতো বুঝা যায় না?সেতু ভাবল।ভাবনার মাঝেই নিষাদের মৃদু স্বর কানে এল,

” মানিয়ে নিতে পারবে বলেছো যখন এসব নাটক ফাটক একদম করবে না বলে দিলাম।কি বুঝাতে চাইছো তুমি? আমি পাষাণ, জঘন্য আর অতি খারাপ একজন মানুষ?তোমাকে রুম থেকে তাড়িয়ে বেলকনিতে দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে ঘুমোতে দিয়েছি?”

” মানে?”

নিষাদ গম্ভীরে সুরেই শুধাল,

” নীর কতক্ষন পর আবার ঘুম থেকে উঠে কান্না করবে।তার থেকে বরং ওর পাশে ঘুমিয়ে যাও।”

সেতু বিনিময়ে কিছু বলতে পারল না।তার আগেই নিষাদ পা বাড়িয়ে বেলকনিতে চলে গেল।সেতু একনজর সেদিক পানে তাকিয়েই নীরকে জড়িয়ে শুয়ে পড়ল।সারাদিনের ক্লান্তিতে চোখ ঘুমে নিভু নিভু হয়ে এল মুহুর্তেই।ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দিয়েই চোখজোড়া বুঝে নিল।নিষাদ গভীর দৃষ্টিতে দেখে যাচ্ছে তা।সুন্দর, স্নিগ্ধ মুখে মায়ারা ভীড় জমিয়েছে।যে মায়ার শিকলে সে বার বার বাঁধা পড়েছে।যে মায়ারা তাকে কঠিন হতে দেয় না।যে মায়ারা তাকে ভালোবাসার অনুভূতিতে পোড়ায়।মেয়েটা কি কিছুই বুঝে না?

.

রাত তিনটে!নীরু এপাশ ওপাশ করল বারংবার।চোখে ঘুম নামছে না।অনেকক্ষন ধরে ঘড়ির কাঁটার দিকে তাকিয়েই মাথায় হঠাৎ দুষ্টু বুদ্ধি চাপল।দ্রুত বিছানায় উল্টে থাকা মোবাইলটা হাতে নিয়েই কাঙ্ক্ষিত চেনা নাম্বারটায় কল লাগাল।একবার,দুইবার, তিনবার!পরপর একুইশ বার কল দিল সে।ওপাশ থেকে কেউ কল রিসিভড করল না।কিন্তু বাইশ বারের সময় গিয়েই ভাগ্য খুলে গেল।ওপাশ থেকে কল রিসভড করল কেউ।ঘুমুঘুমু কন্ঠে শুধাল,

” কি হয়েছে?”

নীরু দাঁত কেলিয়ে হাসল।গলা ঝেড়ে বলল,

” হবে টা কি?হওয়ার মতো কিছু তো আজ পর্যন্ত করলে না।”

” মানে? ”

নীরু অভিযোগের সুরেই বলল,

“নাহ প্রেম করছো, না বিয়ে করছো, না তো সংসার করছো।তাহলে কিছু হবে কোথায় থেকে? এমনি এমনিই?”

ওপাশের মানুষটা রেগে গেল এবার।দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

” বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে নীরু।আমি তোর থেকে অনেক বড়।আমি আর নিষাদ যখন ক্রিকেট খেলতাম তখন তোর নাক দিয়ে সর্দি ঝরত।ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কান্না করতি।আর সে তুইই এভাবে আমার সাথে ফ্লার্ট করছিস?তোর ভাইকে জানাব?”

” আমি তো চাইছি জানাও।প্লিজ জানাও।বিয়েটা এবার দিয়ে দিক তোমার সঙ্গে।এভাবে একা একা আর কতদিন বলো?”

” থা’প্পড় দিয়ে গাল লাল করে দিব বেয়াদব।কাল থেকে আমায় দাদা বলে ডাকবি।”

নীরু ঠোঁট বাঁকাল।বলল,

” গরুর বন্ধু গাঁধা!তোমার সাথে গাঁধা ছাড়া আর কিছুই যায় না।বুঝলে রঙ্গন গাঁধা?”

রঙ্গন তেঁতে উঠল।বিরক্তির সুরে বলল,

” আমি ঘুমাব। দ্বিতীয়বার কল দিবি তো কাল সকালে তোর বাড়িতে গিয়ে আঁ’ছাড় মা’রব তোকে।”

কথাটা বলেই কল কাঁটল রঙ্গন।নীরু চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে থাকল। সে রঙ্গনের ধমকে ভয় পায় নাকি?পায় না।পরমুহর্তেই আবারও লাগাতার কল দিল।পরপর পনেরোবার কল দেওয়ার পর রঙ্গন আবারও কল তুলল।রাগী স্বরে বলল,

” নীরুর বাচ্চা নীরু!কি শুরু করে দিয়েছিস?এত রাতে মানুষ ঘুমায়। ঘুমের মধ্যে বিরক্ত করবি না বলে দিলাম।”

নীরুর মুখে দাঁত কেলানো হাসি।দ্রুত গলায় বলল,

” খবদ্দার কল কাঁটবে না বলে দিলাম। এতরাতে মানুষ ঘুমায় তা আমিও মানি।কিন্তু তুমি তো মানুষ না।তুমি তো গাঁধা!তাই না?”

ওপাশ থেকে রঙ্গন পুনরায় তেঁতে উঠল।এই রাতদুপুরেও কন্ঠে রাগ ঝেড়ে আওয়াজ জোরে করে বলে উঠল,

” গাঁধা বলবি তো চ’ড় মে’রে গাল লাল করে দিব।তোর কত বছরের বড় আমি? সম্মান দিয়ে কথা বলবি বলে দিলাম।”

নীরু হেসে উঠল।

” সম্মান?তোমার সাথে সম্মান শব্দটা গেলে, সম্মান শব্দটারই সম্মান থাকবে না।”

” কল কাঁট তাহলে।”

নীরু কল কাঁটল না।গলার কন্ঠ ঠান্ডা করেই বলল,

” নিজের একমাত্র কলিজার বন্ধুর বিয়েতে আসলে না কেন?ভেবেছিলাম আসবে।কিন্তু আসলে না।খুঁজেছি অনেক তোমায়।”

রঙ্গন বিরক্তির সুরে বলল,

“গেলেই তো ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকতি।তোর চক্ষুলজ্জ্বা বলতে কিছু আছে?কানের কাছে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে সারাক্ষন বলে বেড়াতি, ভালোবাসি। আমি এসবে বিরক্ত হই।”

” তো?তুমি বিরক্ত হলে আমার কি করার আছে?আমার কাছে তো তোমাকে বিরক্ত করতে খুউব ভালো লাগে।আর আমার যা ভাল্লাগে তা আমি সবসময় করি।”

” করবি না।এরপর থেকে করলে ক’ষে চ’ড় মারব।”

নীরু অপমানে মুখ লাল করে বসে রইল।তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলল,

” মে’রে দেখাও।”

” সামনাসামনি আয় আগে।তোকে মে’রে হাত পা ভে’ঙ্গে মাটির নিচে সমাধি দিয়ে না আসলে আমার নাম বদলে নেব।”

নীরু হালকা হাসল।যে হাসিতে আনন্দরা নেই।নরম গলায় বলল,

” সবসময় আমিই তোমার সামনে যাই।তুমি তো আর আসো না।তাই না?আচ্ছা রাখি।”

“আসতে তো কেউ বলে না।না আসলেই তো হয়ে যায়।”

নীরু আঘাত পেল।কিন্তু বুঝাল না। খিলখিলিয়ে হেসে উঠে বলল,

” পাখি ফুরুৎ হয়ে গেলে তখন বুঝবে ভালোবাসা কাহাকে বলে।তোমার প্রাণপ্রিয় বন্ধু পাখি ফুরুৎ হয়ে যাওয়ার পর দ্বিতীয়বার পাখিকে খাঁচায় বন্দি করতে সক্ষম হয়েছে।কিন্তু তোমার বেলায় যে তেমনটা হবে এমন কোন নিশ্চায়তা আছে?হতে পারে তুমি তখন দিনরাত আহাজারি করছো নীরুপাখির জন্য।দিনশেষে পাখি ফুরুৎ!”

রঙ্গন বিচ্ছিরি গলায় বলল,

” কথার কি ধাঁচ!”

” কেন?তোমার দিয়াপাখির বেলায় পাখি বলো না বুঝি?”

” বাড়াবাড়ি হচ্ছে নীরু।”

নীরুর কন্ঠ হঠাৎ ই থেমে গেল।গলা দিয়ে আর কিছু বের হলো না।রঙ্গন আবারও বলল,

” তুই আর কল করবি না।আমার জন্য দিয়া যথেষ্ট।”

নীরু স্বাভাবিক হলো।দুষ্টুমিভরা গলায় বলল,

“আহা!বর অতিবেশি সুন্দর হলে ওরকম দুয়েকটা সতীন থাকতেই পারে।নো প্রবলেম,রিল্যাক্স!আমি ঝে’টিয়ে সতীনকে বিদায় করতে পারব।তাই অতো বেশি চিন্তা নেই।”

রঙ্গন এবার রাগে ঠোঁটে ঠোঁট চাপল। জোরে জোরে শ্বাস ফেলেই বলল,

” তুই আর কোন কথা বলবি না। কল রাখ।”

নীরু কষ্ট পেল। পরমুহুর্তেই ঠোঁট চওড়া করে খিলখিলিয়ে হাসল।চোখের দৃষ্টি সরু করে বলল,

” রিল্যাক্স গাঁধা!জাস্ট মজা করছিলাম।সিরিয়াসলি বলিনি কিন্তু।তোমার দিয়াকে সতীন টতীন বানানোর ইচ্ছা আমার নেই।আর না তো তোমার মতো গাঁধাকে বর বানানোর ইচ্ছা আছে।”

কথাটা বলেই কল রাখল নীরু।চোখজোড়া টলমল করল। বুকের ভেতর এক তিক্ত অনুভূতি নড়চড় করে উঠল।রঙ্গন কি আসলেই কখনো ভালোবাসবে না তাকে?এত বেহায়াপনা, এত ভালোবাসা সব কি তবে বৃথা?রঙ্গন কি শুধু তার ভালোবাসা দিয়াতেই আটকে রাখবে?কখনো কি নীরুর ভাগেও এইটুকু ভালোবাসা জুড়বে না তার তরফ থেকে?

.

সকাল হলো।ভোরে ভোরেই ঘুম ভাঙ্গল সেতুর।চোখ মেলে একই খাটে তিনজনের উপস্থিতি টের পেয়ে চোখের দৃষ্টি সরু হলো।নীরের পাশেই গুঁটিশুঁটি মেরে ঘুমন্ত নিষাদ।কখন ঘুমিয়েছে জানে না সে। তবে ঘুমন্ত অবস্থায় নিষাদের মুখে একরাশ মায়া তাকে তাকিয়ে থাকতে বাধ্য করল।টানটান মুখ, খোঁচা দাঁড়ি আর বন্ধ চোখের পাতা।দেখতে অমায়িক লাগছে।সেতুর ইচ্ছে করল কেবল তাকিয়ে থাকতে।যেমনটা তার কিশোরী বয়সে তাকিয়ে থাকত।একরাশ মুগ্ধতা আর মোহ নিয়ে আড়াল হতেই তাকিয়ে দেখত নিষাদকে। নিষাদ অবশ্য সেই দৃষ্টি কখনো টের পায়নি।আজও সেভাবই লুকিয়ে চুরিয়ে নিষাদের দিকে ঘন্টার পর ঘন্টা তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে হলো তার।আচ্ছা, ঘন্টার পর ঘন্টা এই মানুষটার মুখের দিকে তাকালে কোন বিশেষ ক্ষতি হবে কি?মস্তিষ্ক তৎক্ষনাৎ সায় দিল।অতি সহজ উত্তরে জানান দিল,

” হ্যাঁ সেতু!খুব সাংঘাতিক ক্ষতি হবে।যে ক্ষতির ভয়ে পিঁছিয়ে ছিলি এতদিন সেই ক্ষতির তলানিতেই ডুবে যাবি।নিঃশ্বাসরুদ্ধ হয়ে মা’রা যাবি।”

#চলবে…

[কেমন হয়েছে?ভুলত্রুটি ক্ষমাস্বরূপ দেখার অনুরোধ রইল।কোথাও ভুল থাকলে জানাবেন।]

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ