Monday, October 6, 2025







ধূসর রাঙা মেঘ_২ পর্ব-০৭

#ধূসর_রাঙা_মেঘ_২
#পর্ব_৭
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

এহসান খানের কথা ধূসর মন দিয়ে শুনলো আর বলল,,

“বাবা আমার সে আহামরি সুন্দর না। শ্যামলা তার গায়ের রঙ। কিন্তু চোখ তার মায়াভরা, যে কেউ তার মায়ার পড়বে। সব থেকে বড় কথা তার ব্যক্তিত্ব যা অসম্ভব সুন্দর। তবুও তোমরা তাকে দেখে নিও। তবে হ্যা একটা কথা, তাকে পছন্দ না হলে? তোমরা একটু মানিয়ে নিও আমার দিকে তাকিয়ে। বাকিটা সে তোমাদের মন জয় করে নেবে।

এ কথা শুনে সকলে মনে মনে হাসলো । ধূসর আবার ও বলল,,

“তার কথা যদি এক বাক্যে ব্যাখ্যা করি তাহলে হবে,
‘আমার সে আহামরি সুন্দর না হলেও, তার ব্যক্তিত্ব অসম্ভব সুন্দর।”

তখন এহসান খান বললেন,,

“আচ্ছা ধূসর মানলাম তোমার মেয়েটাকে অনেক পছন্দ। কিন্তু যদি তুমি সেই মেয়ের ব্যাপারে এমন কিছু শুনো যা তোমার জন্য অপ্রিতিকর। তাহলে কি করবে?”

“জানিনা কি করবো? তবে আমি সেই পরিস্থিতিতে নিজেকে ভাবতে চাই না এখন। যখন হবে তখন দেখা যাবে তবে আমি যাই হোক না কেন? সেই নিষ্ঠুর মেয়েটার সাথেই থাকতে চাই। আর আমি জানি মেয়েটা আমার দিকে নিষ্ঠুর হলেও,সে অন্যরকম সত্যতা নিয়ে চলাচল করে।”

নিষ্ঠুর মেয়ে শুনে সবাই অবাক হলো কিন্তু প্রকাশ করলো না। নোলক শুধু বিরবির করে বলল,

“ভাইয়ার কিছু মনে নেই তবুও ভাবিকে নিষ্ঠুর মেয়ে বলা ভুলে নি।”

তারপর জোরে বলল,,

“ভাইয়া তোমার সাথে সে কি করেছে? যে তাকে নিষ্ঠুর বলছো?”

“কি করে নি বল? আমি যাই করি তাতেই সে বাগড়া দেয়। আবার দশদিনের অবরোধ করেছে।

“আমি জানবো কিভাবে? আর কি বললে?

“তোর জানতে হবে না। চুপচাপ খা নাহলে গলায় চা আটকে যাবে। আমি ওপরে গেলাম।”

ধূসর ওপরে যেতেই সবাই হেঁসে উঠল। দিলরুবা খানম বললেন,,

“আমার ছেলের মাথা গেছে বুঝলে এহসান। যাই হয়ে যাক না কেন? তার সেই মেয়েকেই চাই।”

তখন দিশান বলল,,

“নিজের বউকে আবার বিয়ে করার জন্য কেউ এতো ডেস্পারেট হয়। ধূসরকে না দেখলে জানতাম না।যদিও ওর কিছু মনে নেই।

তখন এহসান বলল,,

“ধূসর সবদিক দিয়ে ম্যাচুয়ার হলেও যতো পাগলামি তার মেঘকে নিয়ে। আগের বারের কথা ভুলে গেছো। তাড়াতাড়ি বিয়ে করার জন্য শুধু হাদিস শুনাতো। আর মেঘকে মানানোর জন্য কতো পাগলামি করেছে। কিন্তু দেখো সময়ের সাথে কি হয়েছে এখন।”

তখন রোহিনী বলল,,

“বাবা চিন্তা করবেন না। সব খুব তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে যাবে। আর যারা ঐ ঘটনা ঘটিয়েছিল তাদের কে মেঘ পেয়ে গেলে তাদের শাস্তি দেবে তো।”

তখন দিলরুবা খানম বললেন,

“মেয়েটা কখনো মুখ ফুটে নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারে না।অথচ কাজের মাধ্যমে কতো সুন্দর করে বুঝিয়ে দেয় তার ভালোবাসার গভীরতা। এই যে ধূসর ওকে নিষ্ঠুর মেয়ে বলে কিন্তু ধূসরকে তার থেকে কেউ কোনদিন বেশি ভালোবাসতে পারবে না। ধূসর ওকে চিনতে না পারা ঐ অবস্থার পর মেয়েটাকে কাঁদতে দেখিনি মুখে মুচকি হাঁসি দেখেছি ঐ হাসিতে কতটা যন্ত্রনা ছিল সেটা ঠিকই উপলব্ধি করেছি। ধূসর যখন মেঘকে বলেছিল ‘আপনি কে?’ তখন মেয়েটার পৃথিবী থমকে যেতে দেখেছি তার চোখদুটো স্থির হতে দেখেছি। মনে হচ্ছিল কোন যন্ত্রমানবী। তবুও মেয়েটা হাঁসি মুখে ধূসর কে বলেছিল,
“আমি আপনার অচেনা শুভাকাঙ্ক্ষী!” তখনি ধূসরের প্রচন্ড মাথাব্যাথা শুরু হয় আর বলে “আপনাকে আমি চিনি বোধহয় আপনি আপনি!’ বলতে বলতেই ধূসর অজ্ঞান হয়ে যায়। তখন ডাক্তার বলে মেঘকে দেখেই ধূসরের এই অবস্থা।পুরোনো জিনিস মনে করাতে গেলে ধূসরের মাথায় অনেক চাপ সৃষ্টি হবে যার মাধ্যমে ও ব্রেন স্ট্রোক করতে পারে। এবং মারাও যেতে পারে। তাই যেন মেঘকে ধূসরের থেকে দূরে রাখা হয়। সেদিন মেঘ শুধুমাত্র আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেছিল ‘একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে মা’। হাড়িয়ে গেছিল এই ধূসরের জীবন থেকে। আমি ভেবেছিলাম মেঘ ধূসর কে ছেড়ে দিল বোধহয় নিয়তির কাছে মাথানত করে নিল। সেদিনের কথা ভাবতেই আমার বুক চিরে কান্না আসে। অথচ মেঘ ধূসরের থেকে হারায় নি। নতুন ভাবে তার হাত শক্ত করে ধরেছে যাতে এবার ওর থেকে হারাতে না পারে। আমি সবসময় দোয়া করতাম ধূসর যেন অন্য মেয়ের দিকে আকৃষ্ট না হয়। আমার ভয় ছিল মেঘ যদি ধূসরের ভালোর জন্য ধূসরের সামনে না আসে ওকে ছেড়ে দেয়। কিন্তু কে জানতো ধূসরের নিষ্ঠুর মেয়েটা ধূসরকে নিয়ে স্বার্থপর। তাই তো ফিরে এসেছে মেঘ থেকে কাশফিয়া হয়ে।

সব শুনে রোহিনী বলল,,

“মেঘ সবসময় একটা কথা বলতো, তার জীবনে কিছু ইম্পোর্টেন্ট মানুষ আছে । তাদের কে সে কোনমতেই হারাতে চায় না । সে তার প্রিয়জনদের ক্ষেত্রে খুবই স্বার্থপর।”

তখন এহসান খান বললেন,,

“ধূসর ঠিকই বলেছে তার সে আহামরি সুন্দর না হলেও, তার ব্যক্তিত্ব অসম্ভব সুন্দর। যদিও আমরা সবাই ভেবেছিলাম মেঘের সাথেই ধূসরের ঘরুয়াভাবে আবার বিয়ে করাবো মুনের বিয়ের পর। কিন্তু এখানে কেসটা উল্টো ধূসরই চাইছে মেঘকে বিয়ে করতে। তাহলে আর কোন বাঁধা নেই।”

“ঠিক বলেছো এহসান আর কোন বাধা নেই। ইনশাআল্লাহ আমাদের সুখের দিন ফিরতে চলেছে। ”

________________

“তোমরা কখন যাবে শপিং করতে?”

“কেন মেঘ? তোর কি হুট করে কাজ এসে পরেছে?”

মুনের কথায় মেঘ ওর দিকে তাকিয়ে বলল,,

“না! এমনি জিজ্ঞেস করলাম সকাল দশটা তো বাজে । এখন যাবে না বিকেলে যাবে? তাই জিজ্ঞেস করছি।”

“বিকেলে যাবো তোর দুলাভাইয়ের অফিসে কাজ আছে, বিকেলে শেষ হবে তাই।”

তখন শায়লা বলল,,

“আমি কিন্তু লেহেঙ্গা নিব। যতগুলো বিয়ের দাওয়াত খাইছি লেহেঙ্গা পরতে পারি নাই। তোদের দুলাভাইয়ের জন্য, কিন্তু এইবার তার সাথে এক প্রকার ঝগড়া করছি। অতঃপর সে মানছে। আমার কতোদিনের শখ কারো বিয়েতে লেহেঙ্গা পড়বো।”

তখন জায়মা বলল,,

“এক বাচ্চার মা হয়ে সে নাকি লেহেঙ্গা পরবে?”

“কেন ভাই? সংবিধানের কোথাও লেখা আছে বাচ্চা নেওয়ার পর লেহেঙ্গা পরা যাবে না।”

তখন মেঘ ওদের থামিয়ে বলল,,

“আহ হা আপু তোমরা ঝগড়া করছো কেন? যার যেটা ইচ্ছে সে সেটা পড়বে তবে হ্যা শালীন ভাবে। এখন বলো কোন শপিংমলে যাবে?”

তখন জায়মা বলল,,

“আর বলিস না **** জায়গায় শুভ্রমেঘ লেডিস শোরুমে লেহেঙ্গা কি সুন্দর! তার সাথে মেয়েদের যাবতীয় সব পাওয়া যায়। আমরা যেহেতু শুধুমাত্র মেয়েদের শপিং করবো তাহলে ওটাই বেটার। সব থেকে বড় কথা কাস্টমারদের সাথে তারা কি অমায়িক ব্যবহার করে। বেশ নাম ডাক ও আছে।

মেঘ অস্ফুট স্বরে বলল,,

“শুভ্রমেঘ লেডিস শোরুম!”

“হুম ওটায়!”

“আচ্ছা ঠিক আছে আমি এখন রুমে গেলাম।”

“তুই সবসময় রুমে গেলাম রুমে গেলাম বলোস। রুমে কি তোর জামাই রাইখা আইসোস। বইনগো লগে বইছোস বইনগো লগে গপ্পো শপ্প কর তা না।”

একথা শুনে সবাই হাসলো কিন্তু মেঘের হাঁসি পেল না। তখন শায়লা বলল,,

“নানু এভাবে গ্ৰামের ভাষায় কথা বলতো। গ্ৰামের ভাষাও না অনেক জোস। মেঘ বোস গল্প করি।”

“কি গল্প করবে? তোমরা যা বলবে আমি তা জানি। আর আমার তেমন গল্প নেই যে বলবো । উল্টো এখানে থাকলে অন্যের সমালোচনা শুনতে হবে মেয়েমানুষ মানেই কথার কারখানা। এ সেটা করেছে ওর সেটা হয়েছে ওমুকের সেটা ভালো না, এর খপ্পরে যে পরে।
সে না চাইতেও জড়িয়ে পড়ে। কয়েকজন মেয়েমানুষ যেখানে সেখানেই গীবত এর কারখানা। এটা সবাই না চাইতেও করে ফেলে। যেটা আমি অপছন্দ করি। তবে আমি সেটা বলছি না যে মেয়েরা শুধু গীবত করে। তারা অনেক কিছু আলোচনাও করে যা একে অপরের জন্য উপকারী। তবে এই সবকিছু আমাদের নিজেদের ওপর ডিপেন্ড করে। তাই আগে থাকতেই নিজের প্রতি নিজের কন্ট্রোল রাখা উচিৎ। গীবত দেখলে এটাকে ইগনোর করা উচিৎ।”

সব শুনে জায়মা বলল,,

“তুই একদম ঠিক বলেছিস। গীবত এমন একটা জিনিস যা মানুষ না চাইতেও করে ফেলে।‌ তবে সত্যি বলতে আমাদের গল্প নিজেদের মধ্যে শুরু করলেও গল্পে গল্পে সেটা কোথা থেকে কোথায় ঘুরে আসতো কে জানে সেখানে অনেকের গিবত করে ফেলতাম। আল্লাহুম্মাগফিরলী। আসতাগফিরুল্লাহ।”

“তবে জানো কি? একত্রিত হওয়ার পর অর্থ্যাৎ মনে করো কোথাও গিয়ে বসলে কয়েকজন মানুষ বসে কথা বললে।কোথাও কোন বাড়তি কথা হয়ে গেছে অপ্রয়োজনীয় কথা হয়ে গেছে। সেই ভুলত্রুটি মিটিয়ে দেওয়ার জন্য রাসুল (সা) একটা দোয়া শিখিয়ে দিয়ে গেছেন। সেখান থেকে উঠার করার আগে তুমি যদি সেই দোয়া টা পড়ে উঠো তাহলে ইনশাআল্লাহ আশা করা যায় আল্লাহ তায়ালা তোমার ঐ বৈঠকে বসা সকল গুনাহ মাফ করবে। দোয়াটা হলো ,,

‘সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা আশহাদু আন্ লা ইলাহা ইল্লা আনতা আসতাগফিরুকা ওয়া আতু’বু ইলাইক্।

অর্থঃ ‘হে আল্লাহ! সমস্ত অসম্পূর্নতা থেকে আপনি বহু দূরে (আপনি পবিত্র) এবং আমি আপনার প্রশংসা করছি। আমি স্বাক্ষ্য দিচ্ছি আপনি ছাড়া আর কোন ইবাদতযোগ্য ইলাহ নেই। আমি আপনার ক্ষমা প্রার্থণা করছি এবং আপনার নিকটই প্রত্যাবর্তন করি।’

এটা আমাদের মেয়েদের বেশি প্রয়োজন। তাই সবার শিখে রাখা উচিত এবং সবাইকে শিখিয়ে দেওয়া উচিৎ। যাতে আমরা গীবতের গুনাহ থেকে পানাহ পেতে পারি।

“শুকরিয়া মেঘ সবকিছুর জন্য!

মেঘ হেঁসে ওখান থেকে চলে গেল। বাকিরাও আর একসাথে না থেকে ড্রয়িংরুম থেকে, নিজেদের রুমে চলে গেল।

বিকেল বেলা সবাই মিলে শোরুমে গেল। জায়মা, শায়লা, মুন, মেঘ আর শিফা এসেছে মেঘের গাড়ি করে। মেঘ কালো বোরকা হিজাব নিকাব সাথে ক্যাপ পড়েছে এটার মানে ওরা কেউ জানে না। আজকাল মেঘের ব্যাপারে ওরা প্রশ্নও করে না। মেঘকে ওর মতো ছেড়ে দেয়।সবাইকে ভেতরে ঢুকতে বলে মেঘ গাড়ি পার্ক করে এলো। সবার শেষে মেঘ ঢুকলো। মেঘের জন্য ওরা গেটে দাঁড়িয়ে ছিল ও আসতেই সকলে একসাথে ভেতরে ঢুকলো। ভেতরে ঢুকেই দেখে দুজন মেয়ে ঝগড়া করছে তা দেখে মেঘ হাসে। আর সবাইকে কিনতে বলে ওদের রেখে একফাকে সেদিকে গিয়ে দেখে একজন বলল,

“তুই কি শোরুমের মালিক নাকি যে তোর কথা শুনবো।”

তা শুনে আরেকজন বলল,,

“আমি শোরুমের মালিক না হলাম। আমার বান্ধবী তো মালিক। তাই আমি যা বলবো তাই হবে।”

“তোর বান্ধবী কিন্তু আমার মনে হয় কেউ না। একদম বাড়াবাড়ি করবি না জাবিন।”

তখন মেঘ পেছনে গিয়ে বলল,,

“বাহ মালিকের অগোচরে তাহলে এইসব করেন আপনারা। আপনারা শোরুমের মালিক না হলেও আমি এই শোরুমের মালিক। আর আমার শোরুমে এসে আপনারা এভাবে ঝগড়া করছেন ।এভাবে শোরুমের দেখাশোনা করেন। এভাবে যদি আপনারাই ঝগড়া করেন তাহলে কাষ্টমারদের সাথে কেমন ব্যবহার করেন আল্লাহ মালুম।”

হুট করে কারো কথায় দু’জনেই মেঘের দিকে তাকায়। তারপর জাবিন নামক মেয়েটা বলে,,

‘যে মেঘকে আগে জড়িয়ে ধরতে পারবে। তার কথা শোনা হবে।

মেয়েটা বলতে দেরি দু’জনের দৌড় দিতে দেরি হয় নি। দু’জনে একসাথে মেঘকে জরিয়ে ধরে তা দেখে মেঘ বলল,,

“আহ হা আস্তে আস্তে কি করছিস? জাবিন নীলি আমাকে তো পুরো কিমা বানিয়ে দিলি।”

তখন জাবিন বলল,,

“কেমন আছিস তুই?”

“আগে ছাড় তারপর বলছি আমি ভর্তা হয়ে যাবো।”

দু’জনে ছেড়ে দিল তখন মেঘ বলল,,

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো তোদের কি খবর?

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো!”

“আর নীলিমা ম্যাডাম আপনি এক বাচ্চার মা হয়ে কিভাবে জাবিনের সাথে ঝগড়া করছেন?”

“আমি কিছু করিনি জাবিন আগে শুরু করছে?”

” নীল কোথায়?”

“ও তো বাড়িতে ওর দাদার সাথে রয়েছে।”

“আচ্ছা বেশ তো কি চলছিল তোদের মাঝে?”

“আরে একটা লেহেঙ্গা ঝুলানো হবে এখানে, আমি বলছি ডার্ক রেড কালারের কিন্তু জাবিন বলছে হোয়াইট কালারের তাই নিয়ে ঝগড়া।”

“তুই জানিস মেঘ হোয়াইট মানে সাদা তোর ভাষায় শুভ্র রঙের লেহেঙ্গা টা কি সুন্দর।”

তখন নীলি হেঁসে বলল,,

“মায়ের কাছে খালার গল্প করা হচ্ছে বিষয়টা তেমন হলো না। আরে ভাই মেঘই তো সব পছন্দ করে আনছে।”

“হ ওটা আমি জানি আমি শুধু আমার পছন্দের টা জানাইলাম।”

তখন মেঘ হেঁসে বলল,,

“তোর যদি খুব পছন্দ হয় তাহলে নিয়ে নে ওটা।”

“আমার যেদিন বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা হইবো সেদিন কইতে হবে না দোস্ত নিয়ে যাবো।”

“ইশান ভাইয়া কে বল তাড়াতাড়ি ঘরে উঠাতে তাহলেই তো হলো।”

“আর ইশান ওতো এখন ব্যস্ত তবে বলেছে তাড়াতাড়িই ঘরে নেবে।”

তখন নীলিমা বলল,,

‘তাহলে আমরাও তোর বিয়ে খাইতে পারি আর কি! কিন্তু মেঘ তুই তো ফ্যামিলির সাথে এসেছিস তারা কই?”

“ওদের শপিং করতে বলেছি। এখন তোরা দুজনে মিলে আমার জন্য একটা সিম্পল শুভ্র রঙের গ্ৰাউন বের কর।”

তখন জাবিন বলল,,

“ঐ লেহেঙ্গা টা নে না। অনেক সুন্দর গ্ৰাউন তো কতোই পড়িস।”

“লেহেঙ্গা টা নিতে পারি যদি তুই টাকা দিস!”

“আমি গরিব মানুষ আমি এত দামি লেহেঙ্গা কেমনে কিনা দিমু দোস্ত।”

“তাহলে তোর মাইনে থেকে কেটে রাখবো?”

নীলির কথা শুনে জাবিন বলল,,

“নাইলে আমি মইরা যামু। আমার খাওন জুটবো না বাড়িতে।”

“ঐ ড্রামাবাজ অফ যা আগে ভাবতাম খালি হির ড্রামা করে এখন দেখি জাবিন ও কম যায় না।”

তখন জাবিন দাঁত কেলিয়ে বলল,,

“মেঘ দোস্ত তোর তো টাকার অভাব নাই। তুই কিনে নে যাহ তোর জন্য দশ পার্সেন্ট ছাড় দিমু।”

এ কথা শুনে মেঘ হাসলো আর বলল,,

“কপালগুনে বান্ধবীগুলা পাইছি নিজের শোরুমে নিজেরেই দশ পার্সেন্ট ছাড় দিয়ে লেহেঙ্গা নেওয়ার অফার দিচ্ছে।”

তখন নীলিমা বলল,,

“তো কি হইছে পার্সোনাল ইজ পার্সোনাল, প্রফেশনাল ইজ প্রফেশনাল। তুই আমাদের বান্ধবী হতে পারিস। কিন্তু আজ আইছোস কাস্টমার হিসেবে। আমরা এই শোরুমের ম্যানেজার তাই শোরুমের লাভ ক্ষতি আমাদের দেখতে হবে। তাই ব্যাপারটা প্রফেশনাল হিসেবে নিলাম।”

“ধন্য নারী আপনারা তাহলে ঠিক আছে। আমার ওতো টাকা নাই, তাই আমাকে সিম্পল গ্ৰাউন দেখান আমার ওতো দামি লেহেঙ্গা লাগবে না।”

‘বোনের বিয়েতে একটু সাজবি না তাই বলে।”

“বেশি কথা না বলে যা বলেছি তাই কর! বেশি কথা বললে চাকরি নট করে দেব তোদের দুজনের।”

“করে তো দেখা! তোর শোরুমে আমি আগুন ধরিয়ে দেব । নীল আমার থেকে বেশি তোকে আদর করে ওকে গিয়ে বলবো তো তোর কথা। আর হ্যা মাকেও বলব তোমাদের আদরের বউমা আমাদের সাথে এগুলো করে।”

তখন মেঘ হেসে বলল,,

“আমার বান্ধবী সবগুলোই ড্রামাবাজ। সত্যি বলতে আমার লেহেঙ্গা এখন দরকার নেই। কিন্তু কথা দিচ্ছি আমার বিয়েতে অবশ্যই লেহেঙ্গা পড়বো। আর জাবিন আমার বিয়েতে তোদের চারজনকেও লেহেঙ্গা পড়াবো এখন থেকেই দেখে রাখ।”

জাবিন হেঁসে বলল,,

“ততদিনে কতো সুন্দর সুন্দর লেহেঙ্গা আসবে এখন দেখে আমি লস খেতে চাই না।”

মেঘ আর নীলিমা হাসলো। তখন মুন ওদের কাছে এসে বলল,,

“এই মেঘ কাদের সাথে কথা বলছিস? জায়মা আপুরা তোকে ডাকছে। বিয়ের জন্য কোনটা নেবে বুঝতে পারছে না। তোর চয়েজ তো বেস্ট তাই খুঁজছে।”

“ভাইয়ারা এসে পরেছে?”

“না আর পাঁচ মিনিট লাগবে।”

“ওহ আচ্ছা ওরা হলো আমার বান্ধবী!”

“ওহ আচ্ছা।”

মুন ওদের সাথে কুশল বিনিময় করলো। তারপর মেঘকে নিয়ে যেতে ধরলো। তখন মেঘ নীলিমাদের ওখানে এগিয়ে গিয়ে বলল,,

“৩২৪ নাম্বার গ্ৰাউন কোড ওটা বের করে রাখ আমি যাওয়ার সময় নিয়ে যাবো। আর হ্যা শুভ্র রঙের হিজাব নিকাব ও বের করিস। আর হ্যা ওটার মতো অন্য রঙের আরো চার টা গ্ৰাউন রেখে দিস। আপুর বিয়েতে তোরা চারজন পরবি। আমার কথার যেন নড়চড় না হয় তাহলে চাকরি নট করে দেব।

দু’জনেই হেসে বলল,,

“ঠিক আছে।”

তারপর মুনের সাথে চলে গেল। তখন জাবিন বলল,,

“এই মেয়েটাও না সবকিছু সামলায় কি করে?”

“ওর একটা আলাদা ক্ষমতা আছে চল দেখি আমার বান্ধবী কি চয়েজ করলো।”

নীলিমা আর জাবিন মেঘের বলা গ্ৰাউনটা বের করলো হালকা কাজ করা সিম্পল শুভ্র রঙের গ্ৰাউন। দেখতে অবশ্য অনেক সুন্দর। নীলি বলল,,

“মেঘের চয়েজ অলওয়েজ বেস্ট। আমার তো চোখেই পরেনি এটাতে। আমি টেনশন করছিলাম অনুষ্ঠানে কি পরবো। মেঘ সহজ করে দিল।”

________________

“মুজাহিদ ও হলো মেঘ আমার ছোট বোন!’

“আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া!”

মুনের হাজবেন্ড মুজাহিদ একটু হেঁসে বলল,,

“ওয়ালাইকুমুস সালাম আপু! কেমন আছো?’

“জি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আপনি?”

‘আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। এটাই আমাদের প্রথম দেখা বোধহয়।”

“হুম আচ্ছা তো অনেকটা সময় পার হয়ে গেছে এবার শপিং শুরু করুন।”

বলেই মেঘ জায়মার কাছে চলে গেল। মুজাহিদ আসতেই মুহাজিদ বলল মেঘের সাথে পরিচিত হবে। কারন এতদিন শুধু নামই শুনে গেছে দেখেনি। মেঘ যেতেই মুজাহিদ বলল,,

“তোমার বোনের কি আমাকে পছন্দ হয় নি। কথাই বললো না।”

মুন হেঁসে বলল,,

“তেমন ব্যাপারনা ও একরমই। কারো সাথে বেশি কথা বলে না। অহেতুক মজাও করবে না।”

“তার মানে একটা নিরামিষ শালি কপালে জুটল।”

মুন হাসলো কিছু বললো না অতঃপর সবাই শপিং এ মনোযোগী হলো। মেঘ যেতেই সেল্সম্যান সালাম দিয়ে বলল,,

“আপু কোনটা দেখাবো?”

মেঘ হেঁসে মুন আর জায়মাদের দিকে ইশারা করে বলল,,

“বিয়ের জন্য একটা ব্রাইডাল লেহেঙ্গা ওনার জন্য!আর বাকি সিম্পল এর ভেতরে গর্জিয়াস লেহেঙ্গা দেখাও এদের তিনজনের জন্য।”

“আচ্ছা তা কোন কালারের সেটা বলো?”

“মুন আপু কোন কালার নেবে?”

তখন জায়মা বলল,,

“মেঘ তুই এদের চিনিস?”

“হুম চিনি তো! পাখি ওখানে কি কর এখানে এসে লেহেঙ্গা বের করতে সাহায্য করো।”

একটু দূরে থাকা বোরকা হিজাব নিকাব মাথায় সাদা রঙের ক্যাপ পড়িহিতা একটা মেয়েকে দেখে মেঘ উক্ত কথা বলল । মেয়েটা হেসে এগিয়ে এসে বলল,,

“বাড়ি থেকে কল দিয়েছিল আপু তাই কথা বলছিলাম।!”

“ওহ আচ্ছা পড়াশোনা কেমন চলছে।”

“অল আলহামদুলিল্লাহ!”

“হুম যাও এখন ওকে সাহায্য করো।”

পাখি নামক মেয়েটা চলে গেল। তারপর সবাই মিলে সবার লেহেঙ্গা সিলেক্ট করে অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনলো। দুই ঘন্টা ঘুরে ফিরে অতঃপর শপিং শেষ হলো। মেঘরা বিল দিতে গেলে তাদের বিশ পার্সেন্ট ছাড় দেওয়া হলো আর মেঘের গ্ৰাউনটার টাকা নেওয়া হলো না। তা দেখে একটা কাস্টমার ওদের পাশ থেকে বলল,,

“এখানে তো কোন ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। তাহলে ওনাদের বিশ পার্সেন্ট ছাড় দিলেন কেন? আমাদের ও তাহলে দিতে হবে।”

তখন জাবিন হেঁসে বলল,,

“ওনাদের ছাড় দেওয়া হয়েছে এই জন্যই যে ওনারা মালিক পক্ষের পরিবার। এটা যার শোরুম তার পরিবার এরা।”

এ কথা শুনে সবাই অবাক হলো তখন মুন বলল,,

“মালিক পক্ষের মানে? কে এই শোরুমের মালিক?”

তখন নীলি হেসে বলল,,

“মুন আপু এটা আপনার বোন কাশফিয়া আয়মান মেঘ এর শোরুম।”

মেঘ দুই হাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে ছিল। সবাই অবাক চোখে মেঘকে দেখলো। সবাই কিছু বলবেতার আগে মেঘ বলল,,

“হুম এটা আমার শোরুম। এখন এটা নিয়ে কোন কথা নয় বাড়িতে চলো। আর জাবিন নীলি তোরা সময় মতো পৌঁছে যাস। আর হ্যা দেরি যেন না হয় নাহলে একটারও হাড্ডি আস্ত রাখবো না।”

মেঘ চলে গেল ওর পেছনে সবাই চলে গেল। মেঘ বাড়ি এসে দেখলো বিয়ের ডেকোরেশনের কাজ শুরু হয়ে গেছে। সকলে আশেপাশে দেখতে লাগলো মেঘ গাড়ি পার্ক করে গাড়ি থেকে নেমে কয়েক পা এগুতেই কেউ একজন মেঘকে টেনে নিয়ে জরিয়ে ধরলো।হুট করে এমন হওয়ায় মেঘ চমকে উঠলো।

~চলবে,,

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ