দেয়ালের ওপাশে কে পর্ব-০৩

0
660

#দেয়ালের_ওপাশে_কে?
পর্ব-৩
লেখা: Zannatul Eva

এত বছর পরে হঠাৎ করে নিজের প্রাক্তনকে দেখে সাবা অনেকটা ঘাবড়ে গেলেও আদনানের সামনে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করলো। আদনান উপরতলায় আসতে আসতে সাইমন শপিং মলের লোকজনদের ভীরে মিলিয়ে গেল। সাবা কৌতুহল স্বরে আদনানকে জিজ্ঞেস করলো, কে ফোন করেছিলো?

আদনান হেসে বলল, আমার এক পেশেন্ট। বুঝতেই পারছো ডক্টর মানুষ কোথাও এসেও শান্তি নেই। অবশ্য আমার এসবে অভ্যস্ত গয়ে গিয়েছে। তবে তুমি আমার এই প্রফেশনের সাথে কতটা মানিয়ে নিতে পারবে সেটাই এখন চিন্তার ব্যাপার। তোমাকে এত টেনস লাগছে কেন? আর ইউ ওকে সাবা?

সাবা নিজেকে স্বাভাবিক রাখার ব্যর্থ চেষ্টা করলেও তার চোখেমুখে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট ভেসে উঠলো। আদনান বলল, তুমি কী ভেবেছিলে? কেউ আবার আমাকে কল করে থ্রেট করছে! আই মিন মে*রে ফেলার হুমকি দিচ্ছে? ডোন্ট ওরি এরকম কিছুই আর হবে না। যে এমন করেছে, সে যখন আমাদের বিয়ে পাকা হওয়ার খবর পাবে তখন নিজে থেকেই সরে যাবে। এত ভয় পেলে চলে? আচ্ছা শোনো, কাল মায়ের জন্মদিন। তাই মায়ের জন্য একটা শাড়ি কিনবো ভেবেছি। তুমি একটু আমাকে শাড়ি চুজ করতে হেল্প করো। করবে তো?

সাবা হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়িয়ে আদনানের সাথে সাথে হাটঁতে লাগলো। এদিক সেদিক তাকিয়ে সাইমনকে খুঁজলো। কিন্তু ওকে আর কোথাও দেখতে পেলো না।

আদনান বলল, বাই দ্যা ওয়ে তোমাকে হঠাৎ করে তুমি করে বলায় মাইন্ড করোনি তো? আসলে তুমি আমার চেয়ে বয়সে অনেকটা ছোট আর নিজের হবু বউকে আপনি করে বলতে কেমন যেন লাগছিলো। তুমিও চাইলে আমাকে তুমি করে বলতে পারো। অবশ্য না বললেও আপাতত কোনো সমস্যা নেই। তুমি যেটায় কমফোর্টেবল সেটাই বলো।

সাবা মৃদু স্বরে বলল, ইট’স ওকে। আমি কিছু মনে করিনি। আর আমার একটু মানুষের সাথে সহজ হতে সময় লাগে। প্লিজ ডোন্ট মাইন্ট।

আরে ইট’স টোটালি ওকে হ্যাঁ! এত চাপ নেয়ার কিছু হয়নি। ইউ টেক ইউর টাইম।

কয়েকটা শাড়ি দেখার পর অবশেষে সাবা আদনানের মায়ের জন্য একটা শাড়ি পছন্দ করে দিলো।

এবার বলো তো তোমার কোন শাড়িটা পছন্দ হয়েছে?

সাবা নিচু স্বরে বলল, আমার মানে?

তোমার মানে তোমার। তুমি নিজের জন্য একটা পছন্দ করো। একটা নয় অবশ্য যতটা ইচ্ছে।

সাবা ইতস্তত হয়ে বলল, আমার লাগবে না।

আদনান অনেক রিকুয়েস্ট করার পর সাবা নিজের জন্য একটা জাম রঙের শাড়ি পছন্দ করলো। শপিং মল থেকে বেরোনোর সময় সাবা বলল, কেন শুধু শুধু আমার জন্য খরচ করলেন? আমার খুবই অস্বস্তি হচ্ছে।

আদনান মৃদু স্বরে বলল, অস্বস্তি কেন হচ্ছে? তোমাকে তো অন্য কেউ কিছু দেয়নি। যে দিয়েছে সে তোমার হবু স্বামী। তাহলে সমস্যা কোথায়! সো তুমি যদি খুশি মনে আমার উপহারটা এক্সেপ্ট করো তাহলে আমার ভালো লাগবে।

সাবা আর কোনো কথা বলল না৷ শপিং মল থেকে কপিশপে পৌঁছে দুজনেই কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকার পর আদনান বলল, তুমি বোধহয় আমাকে কিছু একটা বলতে চাইছো। এম আই রাইট?

সাবা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, দেখুন আমার মনে হয় আপনার এই বিয়েটা করা একদম ঠিক হবে না। আপনি আমার সম্পর্কে বিস্তারিত না জেনেই হয়তো সামনে এগিয়েছেন। কিন্তু আমি আপনাকে অামার সম্পর্কে অনেক কিছু জানাতে চাই।

আদনান মনোযোগ সহকারে সাবার কথা শুনতে লাগলো।

এর আগেও আমার জন্য অনেক বিয়ের সম্বোন্ধ এসেছিলো। সেগুলোর মধ্যে অনেক সম্বোন্ধ বিয়ে পর্যন্ত যেতে যেতেও পরে ভেঙ্গে গিয়েছে। কেন ভেঙ্গেছিলো তার কারণ আমরা জানিনা। হয়তো তাদেরকেও আপনার মতো থ্রেট করা হয়েছিলো।

আদনান বলল, তো? এসব জেনে আমি কী করবো! একই ঘটনা যখন আমার সাথে ঘটেছে আর আমি যখন সেই চ্যালেঞ্জটা এক্সেপ্ট করেই নিয়েছি তাহলে আর সমস্যা কোথায়?

সাবা বলল, তারা সাহস দেখিয়ে বিয়ে পর্যন্ত এগোতে চায়নি৷ আর আপনি সাহস করে আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছেন। এখানেই তো আসল সমস্যা। আপনাকে এতটা সাহস না দেখালেও চলবে। আমি চাইনা আমার জন্য কারো জীবন ঝুঁকির মুখে পড়ুক। আর তাছাড়া আমার আরও একটা অতীত রয়েছে। যেটা সম্পর্কে আপনি কিছুই জানেন না। আমি একটা ছেলেকে ভালোবাসতাম। ওর নাম সাইমন। ওর সাথে আমার অনেক বছর আগে ব্রেকআপ হয়ে যায়। তবে সেই ব্রেকআপের কারণও আমি আজ পর্যন্ত জানতে পারিনি। এরপর যে-ই আমার জীবনে আসতে চেয়েছে, পরবর্তীতে দেখা গেছে কোনো এক অজানা কারণে তারা আমার কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলতো। এই ঘটনা গুলো আমার কাছে বেশ অস্বাভাবিক মনে হয়েছে। আমার জীবনে হয়তো এমন কেউ আছে যে আড়াল থেকে সবসময় আমার উপরে নজর রাখছে।

সবটা শোনার পর আদনান বলল, কিন্তু তুমি এই ভয়টাকে কতদিন জিইয়ে রাখবে সাবা? যে বা যারা তোমার সাথে এসব খেলা খেলছে তাদের মুখের উপর জবাব দেয়ার জন্য হলেও তোমাকে এই বিয়েটা করতে হবে। তাকে বোঝাতে হবে যে, ভয় দেখিয়ে কারো জীবন থামিয়ে রাখা যায় না। আমি তোমার পাশে আছি। তাহলে তোমার কিসের ভয়?

সাবা কাপা স্বরে বলল, আমার ভয় তো নিজেকে নিয়ে নয়। আপনাকে নিয়েই।

আদনান সাবার হাতে হাত রেখে বলল, ডু ইউ ট্রাস্ট মি সাবা? আমার উপর তোমার ভরসা নেই? আমি জানি তুমি আমাকে সেভাবে চেনোনা৷ তোমার কাছে আমি এখনো ততটা পরিচিত নই যে, তুমি আমার উপর দুম করেই ভরসা করে ফেলবে। কিন্তু তুমি বিশ্বাস করো একবার বিয়েটা হয়ে গেলে তারপর সব ঠিক হয়ে যাবে।

সাবা অস্থির স্বরে বলল, আপনি কেন বুঝতে পারছেন না আপনি এই ব্যাপারটাকে যতটা ইজিলি নিচ্ছে ব্যাপারটা তত ইজি নয়৷ আমি চাইনা আপনার কোনো ক্ষতি হোক। আপনি ভালো ছেলে, নামকরা ডাক্তার। চাইলে আমার থেকেও বেটার কাউকে আপনার জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়ে যাবেন।

আদনান সাবার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, হ্যাঁ আমি জানি আমি চাইলেই বেটার কাউকে পেতে পারি। কিন্তু আমি তোমাকে তো পাবো না।

আদনানের কথাবার্তা, তার সুন্দর ব্যক্তিত্বের প্রতি কিছুটা হলেও সাবা দুর্বল হয়ে পড়েছে। কিছুক্ষণের জন্য হলেও তার মনে হচ্ছে, এরকম একটা মানুষকেই তো আমি আমার জীবনে চেয়েছিলাম। যে শত বিপদ এলেও কখনো আমার হাত ছেড়ে দেবে না। খুব খারাপ সময়েও ভালোবেসে পাশে থাকবে। এসবের কিছুই তো আমি সাইমনের মধ্যে পাইনি। মাঝপথে কী এক কারণে আমায় ছেড়ে চলে গিয়েছিলো। কখনো জানতেও চায়নি আমি কেমন আছি। সেইসব দিন গুলো কিভাবে কাটিয়েছি তা কেবল আমিই জানি৷ যখন চলেই গিয়েছিলো তবে আজ আবার এত গুলো বছর পর কেন আমার সামনে এলো? তবে কি সাইমনই সেই অজানা লোক? যে আদনানকে ফোন করে মে*রে ফেলার হুমকি দিয়েছে। এত বছর বাদে আবার যখন আমার সামনে এসেছে তখন কেন জানিনা আঙুলটা বারবার ওর দিকেই যাচ্ছে। ও-ই কি সে? নাকি ওর সাথে দেখা হওয়াটা শুধুই কোয়েনসিডেন্স?

হঠাৎ আদনানের ফোন বেজে ওঠায় সাবার ঘোর কাটলো। আদনান ফোন রিসিভ করে বলল, ইয়েস স্পিকিং। কে বলছেন?

ওপাশ থেকে কী বলল সাবা সেটা শুনতে না পেলেও হঠাৎ করে আদনানের চোখমুখ বদলে যেতে দেখে সাবা ভীষণ ভয় পেয়ে গেল।

আদনান বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, হু আর ইউ? কী চান আপনি? কেন আমাকে ফোন করে বিরক্ত করছেন! লিসেন, আমি সাবাকেই বিয়ে করবো। আপনার যা করার আপনি করতে পারেন।

একথা বলেই আদনান ফোন কেটে দিলো। সাবা অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করলো, এটা নিশ্চয়ই সাইমন ছিল তাই না? আমি সিউর এটা সাইমনই।

কিন্তু সাবাকে অবাক করে দিয়ে আদনান বলল, যিনি ফোন করেছেন তিনি একজন মহিলা এবং সেদিন যিনি ফোন করে আমাকে মে*রে ফেলার হুমকি দিয়েছিলেন তিনিও একজন মহিলাই ছিলেন। আমি সিউর আজও উনিই ফোন করেছিলেন।

সাবা প্রচন্ড অবাক হয়ে বলল, মহিলা? কিন্তু কে এই মহিলা?

চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে