#তোমায় আমি দেখেছিলেম বলে
মৌলী আখন্দ
পর্ব-২
রাইয়ান বাইক চালিয়ে দিল শহরের অপর প্রান্তের পরিত্যক্ত ব্রিজের দিকে। এই ব্রিজটা এখন আর কেউ ব্যবহার করে না।
একটা নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছে বাইকের স্টার্ট বন্ধ করে নামল সে। এই জায়গাটা এলিনা আর রাইয়ানের নিজস্ব, কারণ এখানকার স্ট্রীট ল্যাম্প আর সিসি ক্যামেরাগুলো নষ্ট। ওই পাশ থেকে ভেসে আসা গাঁজার গন্ধ উপেক্ষা করা অন্যদের কাছে কঠিন মনে হলেও তাদের দুজনের কাছে তেমন কঠিন কিছু নয়।
অন্ধকারে হেঁটে এসে ব্রিজের একটা ভাঙা জায়গায় পা ঝুলিয়ে বসল এলিনা। নিচে নিঃশব্দে বয়ে যাচ্ছে নদীর কালো পানি।
এই জায়গাটা তারা দুজন প্রথমে খুঁজে বের করেছিল নিজেদের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যের জন্য। তখনো রাইয়ানের রোজগার কম ছিল।
সাবলেট থাকত রুমমেটদের সাথে। সেই ফ্ল্যাটে এলিনাকে নিয়ে ওঠা সম্ভব ছিল না।
এই অন্ধকার ব্রিজে বসে এলিনার ঘাড়ে প্রথম চুমু খেয়েছিল রাইয়ান। সে কথা মনে পড়ে শরীরে শিহরণ বয়ে গেল তার।
রাইয়ান ততক্ষণে এসে বসেছে তার পাশে, এলিনার আঙুলগুলো তুলে নিয়েছে নিজের মুঠোয়। বুঝি বা এলিনার শিহরণ টের পেল সেও।
তরল গলায় হাসল রাইয়ান। মুঠিতে ধরা এলিনার হাতটা তুলে নিয়ে চুমু খেল আলতো করে।
“ম্যারি মি”, আচমকাই বলে বসল রাইয়ান। “প্লিজ!”
ভেতরে ভেতরে ভীষণ ঘাবড়ে গেলেও স্মার্ট হতে চেষ্টা করল এলিনা।
“এইভাবে কেউ প্রপোজ করে? এই অন্ধকারে? উইদাউট এনি রিং?”
পকেট থেকে ম্যাজিশিয়ানের মত একটা রিং বের করে আনল রাইয়ান। ফিসফিস করে বলল, “প্লিজ!”
স্থির দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে রইল এলিনা। না, দ্বিধা করার মত আসলে তেমন কিছু নেই।
অনাথাশ্রমে বড় হওয়া এলিনার আসলে তেমন কোনো পিছু টান নেই। গার্লস হোস্টেল থেকে নিজের সংসারে এসে উঠতে পারলে ভালোই হয় ওর জন্য হয়ত।
আর রাইয়ানের পরিবার থাকে অন্য শহরে, এলিনাকে তারা দেখে পছন্দই করেছে। দীর্ঘদিনের সঙ্গী, সোলমেট, বেড পার্টনার, তবুও এলিনা কেন যেন ভয় পাচ্ছিল এই মুহূর্তটার কথা ভেবে, যখন রাইয়ান তাকে চেয়ে বসবে পুরোপুরিভাবে, আর সে পারবে না বাধা দিতে।
হাতটা সরাতে পারল না এলিনা, অনামিকায় ঢুকে যাচ্ছে রিং। মৃদু স্বরে বলছে রাইয়ান, “আমি ঠিক জানি না এলি তোমার ভয়টা কীসের! তবে তুমি নিশ্চিত থাকতে পারো আমার পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে তোমাকে কখনো কোনো কষ্ট না দেওয়ার, একটা ভালো পরিবার দেওয়ার।“
এলিনাও মৃদু স্বরে বলল, “এখনই কেন? আর কয়টা দিন সময় নেওয়া যেত না?”
“এলিনা, মাই শাইনিং লাইট, আমি প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে তোমার চেহারা দেখতে চাই!”
দীর্ঘশ্বাস ফেলল এলিনা। ঠিক এই ভয়টাই করছিল সে।
গেল তার নিজস্ব সময়, তার ক্যারিয়ার! সম্পূর্ণ মনের বিরুদ্ধে বলল এলিনা, “ঠিক আছে, আংকেল আন্টিকে বলে দেখ তবে। কিন্তু এখন সাদামাটা বিয়ে করতে চাই। অফিসে একটা বড় ক্রাইসিস চলছে। এই ক্রাইসিস মোমেন্টে বিয়ের প্রোগ্রাম করতে পারব না। আমার অনেক দিনের ইচ্ছে ছিল বসদের আর কলিগদের সবাইকে দাওয়াত করি। এখন প্রোগ্রাম করতে গেলে সেটা পসিবল হবে না। ইদটা যাক। এই প্রোডাক্টটার শিপমেন্ট হোক।“
“ওঃ কাম অন, প্রোগ্রাম করতে কে চাইছে? চল আমরা নিজেরাই বিয়ে করে ফেলি আপাতত। আমি শুধু চাই তুমি আমার সাথে থাকবে। অফিস থেকে ফিরে এসে এক সাথে মুখোমুখি বসে চা খাব দুজনে!”
গাঢ় হয়ে এল রাইয়ানের গলার স্বর, অন্ধকারে ওর ঠোঁট জোড়া খুঁজে ফিরছে এলিনার দুই ঠোঁট। ঠোঁটে ঠোঁট মেলালেও রাইয়ানের আবেগে পুরোপুরি ভেসে যেতে পারল না এলিনা। কেমন একটা চাপা দুশ্চিন্তা ভর করেই রইল তার মধ্যে।
চলবে,,