#তোমায় আমি দেখেছিলেম বলে
মৌলী আখন্দ
পর্ব-১১
এলিনাকে বিশ্রাম দিতে গিয়ে রাইয়ান এখন বাজারের দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়ে নিয়েছে স্বেচ্ছায়, এতদিন ওটা এলিনার ডিপার্টমেন্ট ছিল। বাজার করতে গিয়েই আজ দেরি হয়ে গেল তার।
দরজা খুলে ঢুকেই বরফের মত জমে গেল রাইয়ান।
এলিনার পরনে নতুন লটের একটা মসলিন শাড়ি!
বাজারের ব্যাগ ছুঁড়ে ফেলে ছুটে এসে ওর গা থেকে শাড়িটা টেনে খুলে ফেলার চেষ্টা করতে লাগল রাইয়ান। আর প্রাণপণে চেঁচাতে লাগল, “খোলো এটা! কখন পরেছ? কতক্ষণ আগে!”
হিস্টিরিয়াগ্রস্ত রোগীর মত চিৎকার করছিল রাইয়ান। এলিনা শুধু নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে কিছুটা দূরে সরে গিয়ে শীতল কণ্ঠে বলল, “কেন? এবোর্শন হয়ে যাবে তাই!”
পাথর হয়ে গেল রাইয়ান। এলিনার চোখে চকচক করছে জলের বিন্দু।
“এলি, প্লিজ, শান্ত হও, আই ক্যান এক্সপ্লেইন!”
“কে তুমি? কেন এসেছ আমার লাইফে!”
“আমি, আমি রাইয়ান!”
“লিকুইড নাইট্রোজেনে কী মিশিয়েছ তুমি? কেন মিশিয়েছ!”
পুরোপুরি ভেঙে পড়ল রাইয়ানের প্রতিরোধ। এলিনা তো সবটাই জেনে গেছে!
“তুমি লিকুইড নাইট্রোজেনে নিহিলিন বিষ মেশাওনি?”
নিহিলিন এক ধরণের উদ্বায়ী টক্সিন (কাল্পনিক), পরনের কাপড়ে যার উপস্থিতি থাকলে মানব ত্বকের সংস্পর্শে আসার পর যেটা ধীরে ধীরে কাপড় থেকে শ্বাসবায়ুর সাথে মিশে শরীরে প্রবেশ করে তীব্র মাথাব্যাথা, অবসাদ, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, শরীরের কিছু অংশ সাময়িক কিংবা পাকাপাকিভাবে অবশ হয়ে যাওয়া ছাড়াও অন্তঃসত্ত্বা নারীর জরায়ুর সময়ের আগেই সংকোচন সৃষ্টি করে এবর্শন বা প্রিম্যাচিওর ডেলিভারি করতে পারে এই নিহিলিন।
রাইয়ান দুই হাত তুলে শান্ত করার চেষ্টা করল এলিনাকে। ইশারায় বোঝাতে লাগল কী যেন।
“এলি, এসব কথা পরে হবে! আগে শাড়িটা খোলো প্লিজ!”
“ডোন্ট ওরি। তোমাদের ষড়যন্ত্র সফল হয়নি। তুমি যেদিন আমার ল্যাপটপে পেন ড্রাইভ ঢুকিয়েছ সেদিনই আমার সন্দেহ হয়েছিল। লিকুইড নাইট্রোজেনে নিহিলিন ডিজলভ করার প্ল্যান আমি সবটাই জেনেছি রাইয়ান! তুমি এখন শুধু আমাকে বল তুমি কার জন্য কাজ করছ?”
“তুমি এসব জানলে কীভাবে?”
ধীর পায়ে এগিয়ে এসে রাইয়ানের হাতের ব্রেসলেটে রাখল এলিনা। খুব ধীরে, প্রতিটা শব্দ আলাদা আলাদাভাবে উচ্চারণ করে বলল, “তোমার ব্রেসলেটটা আমি বদলে দিয়েছিলাম, রাইয়ান। এটা তোমার ব্রেসলেটটা নয়। এটা অবিকল একই রকম দেখতে আরেকটা ব্রেসলেট। এটার ভেতর একটা বাগ ঢোকানো ছিল। তোমার সব কথাই আমি শুনতে পাচ্ছিলাম। প্রতিটা স্টেপ আমার জানা ছিল, রাইয়ান। শুধু জানতে পারিনি তুমি কাদের জন্য কাজ করছ। তুমি এই গেমটা আমার সাথে কেন খেললে?“
এলিনার চোখের ওপরে চকচক করছে জলের স্বচ্ছ পর্দা। রাইয়ান মরিয়া হয়ে বলল, “এলি, আর একটা কথাও নয়!”
“কেন এমন করলে আমার সাথে? আমি তো তোমাকে বিশ্বাস করেছিলাম! তোমার ব্যাকগ্রাউণ্ড চেক না করে তোমাকে ভালোবেসেই কি আমি ভুল করেছিলাম?”
এলিনার মুখের ওপরে হাত চাপা দিল রাইয়ান। “এলি চলো আমরা আমাদের সেই জায়গাটায় যাই! যাবে? প্লিজ!”
“কেন? আবার কী প্ল্যান করছ তুমি? ধাক্কা দিয়ে আমাকে পানিতে ফেলে দেবে? মেরে ফেলবে আমাকে?”
রাইয়ান জোরে জোরে বলল, “তোমাকে মেরে ফেললেও নিশ্চয়ই তোমার অফিসের সবাই এসব জানে, তাই না?”
অবাক হলো এলিনা। এসব কাকে শুনিয়ে বলছে রাইয়ান?
চোখের ইশারায় কী যেন বোঝাতে চাইল রাইয়ান। রাইয়ানের চোখে এমনই কাতরতা ছিল যে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে কী ভেবে যেন রাজি হয়ে গেল এলিনা।
চলবে,,