তোমার ছায়া পর্ব-০৯

0
1634

#তোমার ছায়া (পর্ব ৯)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

বোঁচা মিঞা হাতে একটা সু-দর্শন ছেলের ছবি হাতে নিয়ে অন্য হাতে চায়ের কাপে চুমুক দিলো। পাশেই বসে আছে ফারদিন ও তার বাবা।
বোঁচা মিঞা এক টানে চা টা শেষ করে ছবির দিকে তাকিয়ে ফারদিনের বাবাকে বললো,
– এমন ছেলে হাতে পাওয়াটাও ভাগ্যের ব্যাপার। তাকিয়ে দেখেন, একেবারে হিরের টুকরো। তাছারা পূর্ব থেকেই বংশেরও নাম ডাক অনেক। ফারহা মাকে একেবারে রাণীর মতো রাখবে তারা। ফারহা কলেজ থেকে আসার সময় নাকি ছেলে তাকে দেখেছিলো। তাই আপনার কাছে বার বার পাঠাচ্ছে আমাকে। ওদের একটাই কথা, ওরা শুধু ফারহা মাকেই চায় আর কিছু না। তাছারা এমন সম্মন্ধ ও আর পাবেন না।
এর মাঝেই ফারদিন বললো,
– আর পাবো না মানে কি? আমাদের ফারু দেখতে খারাপ নাকি আমাদের ফ্যামিলি খুব দুর্বল? যে এতোই ছোট মনে করছেন আমাকে।

বোঁচা মিঞা দাত কেলিয়ে বললো,
– আরে আরে রেগে যাচ্ছে কেন বাবা? আমি এভাবে বলিনি। বলেছি ছেলে দেখতে শুনতে ভালো, ফ্যামিলি ভালো, জবও ভালো। তাহলে প্রব্লেমটা কি? একটা মেয়েকে সুখে রাখতে হলে আর কি লাগে বলো।
ফারহার বাবা এবার থামিয়ে বললো,
– আচ্ছা আমি বুঝেছি আপনার কথাটা। ছেলে ও তার ফ্যামিলি সম্পর্কে খোজ খবর নিয়েছি আমি। আর মেইন কথাটা হচ্ছে ফারহা এখনো পড়াশুনা করছে।
কথা শেষ হওয়ার আগেই বোঁচা মিঞা বললো,
– আরো ওসব নিয়ে ভাববেন না। বিয়ের পর ওখান থেকেই পড়াশুনা করাবে তারা।
– হ্যা তা ঠিক আছে, তবে আপাতত ইন্টার টা শেষ হোক। এই সময় টা একটু অপেক্ষা করতে বলুন।
– আচ্ছা তাহলে তাই হোক,,,,,
– আচ্ছা আপনি বসুন, আসছি আমি। একটা ফোন এসেছে।
বলেই ফোনটা রিসিভ করে এক পাশে চলে গেলো ফারদিনের বাবা। ফারদিন বোঁচা মিঞার পেশে গিয়ে বললো,
– আচ্ছা আপনার নামটা কে রেখেছে বলুন তো। বোঁচা আবার কারো নাম হয় নাকি?
লোকটা হো হো করে হেসে বললো,
– অনেক কাহিনি আছে বাবা। আমার জন্মের আগে নাকি আমার চার টা ভাই/বোন মা/রা গেছে। যার কারণে আমি জন্ম নেওয়ার পর আমার নাম রাখা হয় বোঁচা। যেন আমার কিছু না হয়। এর পর আমার ছোট ভাইয়ের নাম রাখা হয় পঁচা।
– তো এসব নাম রাখলে কি হয়?
– জানিনা আমি, ছোট বেলায় দাদির কাছে শুনেছিলাম।
– ওহ্ আচ্ছা।

কলেজ ও কোচিং শেষ করে বাসায় ফিরতে ফিরতে বিকেল হয়ে গেলো ফারহার। এসে একটা লোক ও বাবা আর ভাইকে দেখে কিছুক্ষন থমকে দাড়ালো। এর পর সালাম দিয়ে ভেতরে চলে গেল সে।

সন্ধার পর ফারদিনের কাছে গিয়ে ফারহা বললো,
– লোকটা কে ভাইয়া?
– কোন লোকটা?
– ওই যে বিকেলে এসেছিলো?
– ওহ্ ঘটক, তোর জন্য বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলো। কেন মা কিছু বলেনি তোকে?
– কই না তো? আমাকে না জানিয়েই তোমরা আমার বিয়ের কথা বার্তা বলছো?
– আরে না, কে বললো তোকে?
– তা তো দেখতেই পারছি। মেয়ে বলে কি আমার নিজের মন মতো মত দেওয়ার কোনো অধিকার নেই?
– আছে তো, আর আমরাতো বলিনি তোর অমতে কিছু হবে। কয়দিন দরে এক জায়গা তেকে বার বার প্রস্তাব পাঠাচ্ছে তাই বাসায় ডেকে বিস্তারিত জানলো বাবা। ছেলে নাকি আর্মি অফিসার। বাবারও হয়তো পছন্দ হয়েছে ছেলে। তবে এখন কিছু বলেনি। আগে তোর এক্সাম শেষ হোক এর পর সব কিছু বিবেচনা করে কথা এগিয়ে নিবে।
– বাহ্, সময় ও ঠিক করে ফেলেছে সবাই? আর আমাকে একটি বার জানালেও না তোমরা?
ফারহা ুত্তেজিত হয়ে যাচ্ছে দেখে ফারদিন বললো,
– আরে পাগলি বোন আমার, তুই বিষয়টা যেমন ভাবছিস, বিষয়টা আসলে তেমন না। আমরা বলতাম তোকে। এখন যাস্ট প্রস্তাব এসেছে, বেশি কিছু না। তাই এতোটা সিরিয়াসলি নিই নি।
– এক্সামের পর কথা বার্তা আগাবে বলছে, আর তুমি বলছো সিরিয়াস না?
– আরে আবারও ভুল বুঝছিস তুই।

আর কিছু না বলে মায়ের রুমের দিকে গেলো ফারহা।
– তোমরা আমাকে না জানিয়ে আমার বিয়ের কথা বলছো কেন মা?
মেয়েকে পাশে বসিয়ে হাসি মুখে বললো,
– কই বিয়ের কথা বলছি? যাস্ট প্রস্তাব এসেছে।
– আমি এখন বিয়ে করতে চাইনা মা।
– আরে ধুর পাগলি। প্রস্তাব আসলেই বিয়ে হয়ে যায় নাকি?
– আমি এতো কিছু যানি না। আমি বিয়ে করবো না মানে না।
– আচ্ছা তুই চিরকুমারি থাকিস। এবার শান্ত হ।আর বাড়ির সামনে বড়ই গাছ থাকলে লোকে ঢিল মারবে এটাই স্বাভাবিক।
,
,
ফাইনালি টুরে যাওয়ার সেই কাঙ্খিত সময়টা চলে এলো। এই একটা টুর যে ফারহার জীবনটা এমন এলোমেলো করে দিবে তা হয়তো তার চিন্তারও বাইরে ছিলো। নাহলে কি মানুষ বিপদ যেনেও ওই রাস্তায় এগিয়ে যায়? সে নিজেও যেত না। বাট আমরা তো আর ভবিষ্যতে কি হবে তা তো কেউ বলতে পারি না।
সেই টুরে যাওয়ার পর একটা এক্সিডেন্টই তার জীবনকে এলো মেলো করে দিয়েছে।
সন্ধার পর বাসে রওনা দিবে সবাই। পাঁচটা বাস ঠিক করা হয়েছে। সারা রাত গাড়িতে থেকে পর দিন চট্টগ্রাম পৌছাবে তারা। তারপর দুই দিন ব্যাপি এই টুরে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াবে।

সন্ধায় বেগে কিছু কাপর চোপর ও প্রয়োজনিয় টাকা পয়সা নিয়ে কলেজ মাঠের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে গেলো। ফারহা ও ব্যাগে জামা ও নিজের প্রয়োজনিয় জিনিস পত্র নিয়ে নিলো।
তার পর মা বাবার থেকে বিদায় নিয়ে ভাইয়ার সাথে বেড়িয়ে পরলো কলেজ মাঠের উদ্দেশ্যে।

ওখানে গিয়ে দেখে প্রায় সবাই চলে এসেছে। আর আধা ঘন্টা পর রওনা দিবে। আবরারের সাথে কিছুক্ষন কথা বলে ফারহার থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো ফারদিন।
ফারহা একটু হেসে বান্ধবিদের কাছে চলে গেলো।
– হেই কখন এলি তোরা?
– অনেক্ষন আগেই এসেছি তোর মতো অলস নই আমরা। আর আধা ঘন্টা লেট করলে আর যাওয়াই হতো না তোর।
– আমি অলস হতে যাবো কেন? আমি সময় মতোই এসেছি। তোদের মতো আগে এসে আজাইরা সময় নষ্ট করি না।

কিছুক্ষন পর স্যার ও টিম লিডার রা এক এক করে সবাইকে গারিতে উঠতে বললো। জিনিসপত্র নিয়ে এক এক করে যার যার সিটে গিয়ে বসলো সবাই। বাসের সামনের দুই তিন সিট পরে বসলো ফারহা ও আয়রিন। আর বাসের সামনের সিটে বসলো আবরার। উঠার পর আয়রিনকে বলে গেলো, কোনো সমস্যা হলে বলবি, আমি এইতো সামনেই আছি।

রাতে আধা ঘন্টা ব্রেক নিয়ে ডিনার করে নিলো সবাই। এর পর আবার গন্তব্যের দিকে ছুটলো সবাই।
ফেনী এসে মহিপাল বাস থামলো তখন রাত প্রায় ১ টা। মহিপাল নামলে দেখে চার দিকে রোড। ফারহা চার পাশে তাকাচ্ছে। আয়রিন বললো,
– এটা হলো, সোনাগাজির রোড, এটা চট্টগ্রামের রোড। এটা ঢাকার রোড যেখান দিয়ে আমরা এসেছি।
এক এক করে সব দিন দেখাচ্ছে।
ফারহা হাই তুলতে তুলতে বললো,
– তুই আগে ফেনী এসেছিলি?
– হুম, সোনাগাজিতে আমার এক রিলেটিভ আছে।
ফারহা চার দিকে তাকিয়ে বললো,
– আচ্ছা আয়রিন, এখানে পশ্চিম কোন দিকে?
পাশে আবরার এসে দাড়াতেই হো হো করে হেসে ফেললো,
– এতটুকু আসতেই উত্তর দক্ষিন হারাই ফেললে?
ফারহা কিছু না বলে লজ্জা মাখা চেহারা নিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো। কি বা বলবে সে? নতুন কোথাও গেলে যে সে সত্যিই উত্তর দক্ষিন সঠিক ভাবে খুজে পায় না।

নিজেদের প্রয়োজন শেষ হলে চট্টগ্রামের রোডে ছুটলো গাড়ি।
রাত তখন গভির এতোক্ষন হইহুল্লা করে এখন প্রায় সবাই নিশ্চুপ। বাস চলছে নিরিবিলি। হয়তো সবাই ঘুমিয়ে আছে, অথবা কেউ ঘুমানোর ট্রাই করছে। আবরারের ঘুম আসছে না। নিরিবিলি জায়গা ছারা কখনো ঘুম আসে না তার। পেছন ফিরতেই দেখে ফারহা ঘুমাচ্ছে বেঘোর হয়ে। ঘুমন্ত ফারহা আজ যেন অদ্ভুত মায়ার অধিকারি হয়েছে।
কিছুক্ষন এক দৃষ্টিতে চেয়ে থেকে পুনরায় সামনের দিকে তাকিয়ে থাকে আবরার। নিজেকে মনে মনে সাষাতে থাকে।
– কার দিকে তাকিয়েছিলি বোকা মন, সেও তো বোন লাগে বোন।

To be continue…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে