তোমার ছায়া পর্ব-০৮

0
1622

#তোমার ছায়া (পর্ব ৮)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

আয়রিন ও সাথি দুজনই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ফারহার দিকে। কথা বার্তা একটু অদ্ভুত হলে অবাক হওয়াটাই স্বাভাবিক। হয়তো এই অদ্ভুত কথার কারণ টা জানতে ফারহার দিকে তাকিয়ে আছে দুজন।
ওদের এমন আগ্রহ দেখেও আর কথা বাড়ালো না ফারহা। চুপচাপ সামনের দিকে পা বাড়ায় সে।

বাসায় এসে শাওয়ার নিয়ে খেয়ে বিছানায় লম্বা হয়ে শুয়ে পরলো ফারহা। চোখ লেগে এসেছে তাই বিকেল টা শুয়েই কাটিয়ে দিলো। সন্ধা হতেই মা এসে ডেকে দেয়।
কড়া গলায় বলে,
– উঠে নামাজ পড়ে, তারপর পড়তে বস। নামাজ নাই কিছু নাই, বিয়ের জন্য আসলে পাত্র পক্ষ যখন জিজ্ঞেস করবে মেয়ে নামাজ কালামপড়ে কি না, তখন কি উত্তর দিবো?
ফারহা দুই হাত মেয়ে হাই তুলতে তুলতে বললো,
– মেয়ে নামাজি এই কথাটা পাত্র পক্ষকে বলার জন্য নামাজ পড়লে কি তা কবুল হবে মা?

তার মা আর কিছু বললো না, হয়তো নিজের কথার বোকামি বুঝতে পেরেছে। যাওয়ার সময় বললো,
– যা বলছি তাই কর, নামাজ শেষ কর কর। আমি নাস্তা বানিয়ে দিলে খেয়ে পড়তে বসবি। আমি চলে যাওয়ার পর আবার বিছানার সাথে লেগে থাকিস না।

সন্ধার পর থেকে ফারহা পড়ার ফাকে বার বার উকি দিয়ে দেখছে ফারদিন বাসায় ফিরেছে কি না। কারণ বাবা মাকে টুরের কথা বললে তারা হয়তো রাজি হবে না। তাই ভাইয়াকে দিয়ে কোনো ভাবে একটু ম্যানেজ করার বুদ্ধিটাই বেছে নিলো সে।

কিছুক্ষন পর ফারদিন বাসায় আসলো। ফারহা ভাবে নিচ্ছে ফারদিনের কাছে গিয়ে কিভাবে কথা গুলো শুরু করবে। যাই হোক আগে ভাইয়াকে রাজি করাতে পারলেই সে বাবা মাকে রাজি করিয়ে নিবে।

কিছুক্ষন পর ফারহা উঠতে যাবে তখনই ফারদিন একটা প্লেটে কিছু সিপ্স ভাজা নিয়ে তার পাশে এসে একটা চেয়ার টেনে বসলো। মাষ্টারের মতো ফারহার বইটা টেনে নিয়ে বললো,
– আজ দেখি তোর পড়ালেখার দৌড় কতটুকু? ক্লাস আর কোচিংয়ের পড়া কতটুকু থাকে আর তুই কতটুকু কমপ্লিট করিস। ক্লাসের সব পড়া কমপ্লিট করে আমার কাছে পড়া দিয়ে তারপর ঘুমাতে যাবি আজকে।
ফারহা প্লেট থেকে সিপ্স নিয়ে খেতে খেতে বললো,
– ভাইয়া, একটা কথা ছিলো।
ফারদিন বই উল্টে দেখতে দেখতে বললো,
– হুম বল।
– তোমাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে কে, জানো?
– হুম জানি, মা।
ফারহা নাক কুচকে বললো,
– আরে ধুর। মায়ের চেয়েও বেশি আমি ভালোবাসি। অতএব তোমাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে তোমার বোন।
ফারদিন ভ্রু-কুচকে আড় চোখে তাকিয়ে বলে,
– এতো ভঙিতা না করে, মতলব টা কি তা বলে ফেল।
– তার মানে তুমি বলতে চাইছো, আমি শুধু মতলব খুজে তোমাকে এসব বলি? ওহ্ আচ্ছা, তুমি বলতে চাইছো, আমি তোমাকে ভালোবাসি না?
ফারদিন তাকে থামিয়ে দিয়ে বললো,
– হয়েছে থাম, আমি কি তা বলেছি নাকি? আমি বলছি, তুই হয়তো কিছু একটা বলতে চাস, ওটা বলে দে।
এবার ফারহা একটু হেসে বললো,
– কলেজ থেকে টুরে যাবে চট্টগ্রাম। বাকি ফ্রেন্ডরাও যাবে।
ফারদিন শান্ত ভাবে বললো,
– হুম জানি, তারপর?
ফারহা সোজা হয়ে বসে বললো,
– আমিও যাবো, প্লিজ তুমি মা বাবাকে ম্যানেজ করে দাও।
ফারদিন আবারও বললো,
– হুম এটাও জানতাম, তারপর?
ফারহা একটু রাগি চোখে তাকিয়ে বললো,
– কি তারপর তারপর করছো। তুমি কি আমার কথা শুনতে পারছো?
ফারদিন বইয়ের পৃষ্টা আরেকটা উল্টে বললো,
– হুম শুনছি, তারপর,,,,
– ধুর।
,
,
খাওয়ার সময় ফারদিন গিয়ে টেবিল টেনে বসলো। চার দিকে তাকিয়ে ফারহাকেও ডাক দিলো খাওয়ার জন্য।
ফারহা হোমওয়ার্ক কমপ্লিট করতে করতে বললো,
– তোমরা শুরু করো, আমি আসছি, আর একটু।

ফারদিন খাবার বেরে নেয়। তথন পাশ তেকে তার মা তার বাবাকে বলে,
– হুম, কি যেন বলছিলে, ছেলে কি করে?
বাবা খেতে খেতে বলে,
– ছেলে আর্মি অফিসার। দুই ভাই দুটুই একেবারে ফ্রিন্সের মতো। ছোট টা ইংল্যান্ড গেলো পড়াশোনার জন্য। ফ্যামিলিরও অনেক নাম ডাক আছে। তারা কিছু চায় না, শুধু ফারহাকে চায়। আরো বললো, আমাদের কিছুই করতে হবে না। আমাদের এখানেও কোনো খরচা করতে হবে না। যা যা প্রয়োজন হবে, ওগুলোও সব তারাই দিবে।
ফারহার মা ডেব ডেব করে তাকিয়ে বললো,
– তুমি কি বললে?
ফারহার বাবা খেতে খেতে বললো,
– এখনো কিছু বলিনি। শুধু বলেছি, তোমাদের ও ফারহার মতামত নিয়ে তারপর জানাবো।
ফারহার মা বললো,
– আমাদের মতামত নেওয়ার কি আছে? সম্মন্ধ যেহেতু খারাপ না, তাহলে তুমি কথা বলেই সব এগিয়ে রাখো।
এর মাঝে ফারদিন বললো,
– এটা কি বলছো মা? বিয়েটা ফারহা করবে, আমরা না। তাই তার মতামত নেওয়াটা সবচেয়ে বেশি জরুরি। আর বাবা তো ঠিক কাজটাই করেছে। পরে জানাবে বলেছে।

তখনই ফারহাও এসে চেয়ার টেনে বসে বললো,
– কি আলোচনা করছো ভাইয়া?
ফারদিন বোনের দিকে চেয়ে বললো,
– তোর কথাই বলছি। কি যেন টুরের কথা বলেছিলি তখন? ওটাই বলছিলাম।

মাকে বিষয়টা খাওয়ার আগেই বলেছিলো ফারদিন, তাই মা বললো,
– মেয়ে মানুষ ফ্যামিলি ছারা বন্ধুদের সাথে এতদুর যাওয়ার কোনো দরকার নেই। তুই সাথে গেলেও একটা কথা ছিলো। একা একা কোথাও যাওয়ার দরকার নেই ফারু’র।
ফারদিন বললো,
– একা যাচ্ছে না মা। আর সাথে তো আবরার ও থাকছে। আমি আবরারকে সব বুঝিয়ে বলবো ফারহাকে চোখে চোখে রাখতে।
,
,
কলেজ গেট পেরিয়ে ভেতরে আসতেই দুর থেকে একটা ছেলে আপু আপু বলে দৌড়ে আসলো। ফারহা পেছন ফিরে দেখে ওই দিনের ওই আবরার নামের ছেলেটা।
দৌড়ে এসে বললো,
– কেমন আছেন আপু? ওই দিনের পর দুই তিন দিন আপনাকে কলেজে দেখলাম না। কালকে নাকি এসেছিলেন, তাও কখন চলে গেলেন দেখিনি। আসলে আপু সরি, আমি জানতাম না এমন একটা ঘটনা ঘটে যাবে।

কেউ নিজের ভুল স্বীকার করলে তাকে ক্ষমা করে দেওয়াটাই উত্তম। তাই ফারহাও বললো,
– আচ্ছা ঠিক আছে, আর কারো সাথে এমনটা করবে না।
ছেলেটা বললো,
– তবে আপু আমি সত্যিই আপনাকে ভালোবাসি। গত দুই তিন দিন আপনাকে না দেখে সত্যিই আমি ঘুমাতে পারিনি রাতে। খুব ব্যাথা করেছিলো বুকের বা’পাশ টায়। ফার্মেসিতে গেলাম, তারা বললো এই ব্যাথার ঔষধ তাদের কাছে নেই। বিশ্বাস করেন আপু, এখন আপনাকে দেখে ব্যাথাটা একেবারে চলে গেছে।

ফারহা কোমরে দুই হাত রেখে রাগি দৃষ্টিতে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছে। হিজাব পড়ায় হয়তো রাগটা প্রকাশ পাচ্ছে না। তবুও রেগে আছে তা চোখ দেখলেই বোঝা যাচ্ছে। মায়াবি চোখ দুটু রাগি লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে। বলে কি এই ছেলে?

টুরের জন্য জন প্রতি ১ হাজার করে। তাই ফারহা ফারদিনের থেকে টাকা নিয়েই কলেজে এসেছে জমা দেওয়ার জন্য। মেয়েদের টিম লিডার সর্মির কাছে টাকা জমা দিতে গেলে সে বলে, আয়রিন আর ফারহা’র টাকা অলরেডি আবরার স্যার দিয়ে দিয়েছে।

——

– আপনি নাহয় আয়রিনের টাকা দিয়েছেন বোন হিসেবে। তাই বলে আমার টা দিতে গেলেন কেন?
আবরারের সামনে দাড়িয়ে কথাটা বললো ফারহা। আবরার সোজাসুজি ভাবে বললো,
– কারণ তুমিও তো আয়রিনের মতো আমার আরেকটা বোন তাই।
ফারহা আবারও বললো,
– দরকার নাই আমার এতো ভাইয়ের। ভাইয়ের বন্ধু হলেই কি ভাই হয় নাকি? ভাই হলে ওই দিন কিভাবে চিঠি গুলো প্রেন্সিপাল স্যারের কাছে দিয়েছিলেন? আমি না হয় একটু আবেগি হয়ে গিয়েছিলাম, তাই কিছু না ভেবে সোজা আপনার কাছে গিয়ে না বুঝে এসব বলে ফেলেছিলাম। ব্যাপার টা আপনি আমাকে বুঝিয়ে বললেই পারতেন। অফিস রুমে নিয়ে এভাবে অপমান করার প্রয়োজন ছিলো না। আর এখন আসছেন ভাই সাজতে। লাগবেনা আমার এতো ভাই। আপনি আমার কেউ না। স্যার মানে শুধুই স্যার।

এক নিশ্বাসে কথা গুলো বলে, কয়েকটা শ্বাস নিলো ফারহা।
আবরার এক দৃষ্টিতে ফারহার দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা আজ এতো কথা বলছে কেন? অল্পতেই এতো অভিমান কেন তার? চুপচাপ দাড়িয়ে ফারহা কে বোঝার চেষ্টা করছে সে।

পাশ থেকে আয়রিন ফারহা’র হাত ধেরে টেনে একপাশে নিয়ে গিয়ে বললো,
– কি করছিস এগুলো। একটানা তো বলেই গেলি, কার সামনে বলেছিস তা মাথায় আছে তো? বিয়ের আগে যদি এতো কথা শুনাতে থাকিস, তাহলে তো বিয়েই করবে না তোকে।
ফারহা বললো,
– আমার এতো খারাপ দিন আসে নাই, তোর ভাইয়ের মতো একটা খ’চ্চরকে বিয়ে করবো।

আয়রিন নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে থেকে, হটাৎ করেই হেসে দিলো। যেন এতোক্ষন হাসি গুলো পেটের ভেতর আটকে ছিলো তার।

To be continue,,,,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে