তোমার ছায়া পর্ব-০৭

0
1811

#তোমার ছায়া (পর্ব ৭)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

সন্ধায় সোফায় বসে বসে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে টিভি দেখায় ব্যাস্ত ফারহা। অনেক কষ্টে আজ কলেজের সিচুয়েশন টা ম্যানেজ করেছে। একেবারে হাতে পায়ে ধরার মতো যা তা অবস্থা হলো আজ। আগামি দুইদিন কলেজ আর কোচিং-এর কাছে দিয়েও যাবেনা বলে প্রতিজ্ঞা করে বসে আছে সে। অল্পের জন্য মান ইজ্জত টা বেচে গেলো আজ।
নাহলে জুনিয়র ছেলের সাথে এসব কেলেঙ্কারি, মান ইজ্জত যেইটুকু আছে ওটাও হারাতে হতো আজ সবার সামনে।

মা একটু আগে নাস্তা দিয়ে বলে গেলো,
– তারাতারি খেয়ে পড়তে যা।
মায়েদের কথা গুলো খুব কোঠোর ভাবে বললেও, সন্তানের কাছে তা খুবই মিষ্টি শাসন। তাই হয়তো মায়ের বকাঝকা গুলো সন্তানরা এক কান দিয়ে নিয়ে অন্য কান দিয়ে বের করে দেয়।
ফারহাও তার ব্যাতিক্রম নয়। মায়ের কড়া করে বলে যাওয়া কথাটা কানে না নিয়ে টিভির দিকে তাকিয়ে আছে সে।

একটু পর ঘরে ফারদিন আসে। সন্ধার পর ফারহাকে টিভির সামনে দেখে কোমরে দুই হাত দিয়ে কিছুক্ষন দাড়িয়ে থাকে সেখানে। এর পর মা সামনে আসতেই বলে,
– তোমার মেয়ের তো দেখি দিন দিন খুব উন্নতি হচ্ছে মা।
মা চায়ের কাপ ও নাস্তার প্লেট টা নিতে নিতে বলে,
– সে তো অনেক আগে থেকেই। এই বাড়িতে কি এখন আমার কথার কোনো মুল্য আছে? কিছু বললে তা তো কথা বলেই মনে হয় না কারো।
ফারদিন বললো,
– আমি বাড়ির কথা বলছি না, কলেজের কথা বলছি। খুব ভালো সুনাম’ই শুনছি তোমার মেয়েকে নিয়ে। ইন’শা আল্লাহ্ আমাদের ফারহা খুব শিগ্রই’ই সফলতার উচ্চ শিকড়ে পৌছে যাবে।

ফারদিনের মুখে এটা শুনেই জ্বিবে ছোট্ট করে কামড় কাটে ফারহা। আবরার স্যার এসব কথা ভাইয়াকে বলতে গেলো কেন? কতো রিকুয়েষ্ট করে বেচে এসেছে যেন বাড়িতে কেউ এসব না শুনে। কিন্তু স্যার এটা করলো কি? ভাইয়াকে বলেই দিলো? তাহলে এতো রিকুয়েষ্ট সবই বৃথা গেলো?
তখনই ফারদিন আবার বলে,
– আজ আবরারের সাথে দেখা হওয়ার পর বললো, দিন দিন ফারহার লেখা-পড়ার অবনতি ঘটছে। পড়া শুনায় কোনো মন নেই। কোচিং-এর পড়া তো দিতে পারেই না, হোম ওয়ার্ক পর্যন্ত কমপ্লিট করে না।
ফারদিনের কথায় এবার একটু স্বস্থির নিশ্বাস ফেলে সে। যাক, তাহলে কিছু বলেনি।

ফারদিন টিভি অফ করে দিয়ে বললো,
– যা সোজা গিয়ে পড়তে বস। নাহলে এক্সামের পর ডিম গুলো বিক্রি করার জন্যও একটা দোকান খুলে বসতে হবে।
ফারহা হেসে বললো,
– গুড আইডিয়া, তবে দোকান খেলার কি দরকার? ওগুলো আমরা পাইকারি দরে বেচে দিবো।
ফারদিন নিরাশ হওয়ার ভঙ্গিতে আবারও কোমরে দুই হাত রেখে ফারহার দিকে তাকায়।
,
,
আজ সন্ধার পর চলে যাচ্ছে মাহিন। সকালে আয়রিনদের বাসায় খবর এসেছে সন্ধায় মাহিন বেড়িয়ে যাবে। আয়রিনকে নিয়ে ওই বাড়ি যেতে। ফোন দিয়ে মাহিনের মা এ কথাটা বললো। আর মাহিনের বাবা নাকি ব্যাস্ত তাই আগে বলতে পারেনি। আর মাহিনকে বলেছিলো আয়রিনকে নিয়ে যেতে বাট মাহিন আসেনি।

সোফায় বিষণ্ন মনে বসে আছি আয়রিন। এমন সময় আবরার তার পাশে এসে বসে। আয়রিনের দিকে চেয়ে বলে, তোর ফোন টা দে তো।
আয়রিন একটু অবাক হলো। তবুও প্রশ্ন না করে ফোন টা বাড়িয়ে দেয়। আবরার ফোনটা কিছুক্ষন দেখে আয়রিনকে বললো,
– তোর আর মাহিনের মাঝে কি কোনো ঝামেলা হয়েছে?
আবরার যেন কিছু বুঝতে না পারে, তাই আয়রিন একটু অবাক হওয়ার ভঙ্গিতে বললো,
– কই না তো। সব ঠিকঠাকই তো আছে।
আবরার ফোনটা দিয়ে বললো,
– তোর কল লিষ্টে মাহিনের নম্বারের কল টা ছিলো আজ থেকে ৬ দিন আগের। তাও শুধু একটা কল।
আয়রিন একটু থতমত খেয়ে মিথ্যা সাজানোর চেষ্টা করে বললো,
– আরে কথা হয়তো প্রতিদিন। ও খুব ভালো। আমি নাম্বার গুলো এমনি ডিলিট করে দিই। তাই কল লিষ্টে নেই। আর তুমি হটাৎ এসব বলছো কেন ভাইয়া? ওহ্ হ্যা বুঝছি, সে আমাকে এখানে রেখে গেছে আর শেষ দিনও নিয়ে যেতে আসেনি তাইতো? তাহলে শুনো কাহিনি, তোমাদের জন্য খুব খারাপ লাগছিলো তামার। তাই তাকে বললাম, তোমাদের কাছে চলে আসবো। সে তো আমাকে আসতেই দিচ্ছিলো না। কিন্তু তোমাদের জন্য আমার কান্না পাচ্ছিলো দেখে পরে রাজি হলো। আর প্রতিদিনই আমাকে নিতে আসবে বলেতো, কিন্তু আমিই আরেক দিন আরেক দিন বলে তাকে মানা করছিলাম। তাই গত কাল বললাম, আজকে তোমাদের সাথেই যাবো।

এক নাগারে কথা গুলো বলে গেলো আয়রিন। যেন আবরার কোনো পাল্টা প্রশ্ন করতে না পারে। হয়তো খুব বুদ্ধি খাটিয়েই মিথ্যেটা সাজিয়েছে সে।
আবরার আর কিছু না বলে কিছুক্ষ তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে সেখান থেকে চুপচাপ চলে গেলো। তারপর চোখ বন্ধ করে একটা দির্ঘশ্বাস নিলো আয়রিন।

দুপুরের আগেই ওই বাড়িতে পৌছে যায় তারা। দুপুরে খাওয়া শেষে আয়রিনের বাবা আর অন্যান্য আত্মিয়রা সোফায় বসে কথা বলছে। আর আয়রিন আছে মহিলাদের কাছে। বাড়িতে কয়েকজন অতিথি আসায় বিয়ে বাড়ির মতো মনে হচ্ছে আজও।

বিকেলের পর আয়রিন ও মাহিনকে একসাথে আলাদা করে দিলো একটা রুমে। নিজেদের মাঝে কিছু কথা বলার জন্য।
আয়রিন চুপচাপ মাহিনের পেছন গিয়ে দাড়িয়ে মাথা নিচু করে বললো,
– আজও কথা বলবেন না আমার সাথে?
– কি বলবেন বলুন। (মাহিনের কন্ঠে বিরক্তিকর ছাপ)
আয়রিন আবারও নির্লজ্জের মতো বললো,
– আমাদের এখানে কেন আলাদা করে দিয়েছে সবাই?
মাহিন আবারও সোজাসুজি ভাবে বললো,
– সে টা আপনিই জানেন, ওরা বললো আর কেন আপনি ঢুকে পরেছেন?
আয়রিনের এমটু মন খারাপ হলেও চুপচাপ রইলো। কারণ সে চায় না যাওয়ার মুহুর্তে কারো মুড নষ্ট করতে। তবুও মাথায় একটা প্রশ্ন সব সময় তাকে খুব ভাবায়। যেটার উত্তর মাহিন চলে গেলে আর জানা হবে না। তাই বলেই দিলো,
– সত্যি করে বলেন তো আপনি আসলে কি চান?
মাহিন আবারও বললো,
– আামর চাওয়া’টা না ভেবে এটা ভাবেন যে আপনার মন কি চায়? আর আমি কি চাই তা সময় হলেই বুঝতে পারবেন।

সন্ধার পর সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো মাহিন। আয়রিনের সাথে আর কথা বলেনি।
রাতে আয়রিন তার বাবাকে গিয়ে বললো,
– আমি এখানে থাকবো না বাবা। আমার ভালো লাগছে না। আমি তোমাদের কাছেই থাকবো। প্রয়োজনে সে ফিরে এলে তখন এই বাড়িতে চলে আসবো।

অবশেষে মাহিনির ফ্যামিলিও মেনে নিলো এটা। আয়রিনের বাবা যখন তাদের বললো,
– ছোট মেয়ে, সংসার কি তাও জানেনা ঠিক ভাবে৷ তার উপর হাসবেন্ট চলে গেছে ছয় মাসের জন্য বাইরে। নতুন নতুন এখানে এবাবে থাকতে ভালো লাগবে না তার। আর আয়রিনের পরিক্ষাটাও শেষ হোক, আর মাহিনও দেশে ফিরে আসুক, তখনই না হয় একেবারে চলে আসবে। এই সময় টা আপাতত বাবা মায়ের সাথেই থাকুক।
,
,
কেটে গেলো কয়েকদিন। প্রতি বছরই কলেজ থেকে ফাইনাল ইয়ারের স্টুডেন্টদের নিয়ে এক দুই দিনের জন্য টুরে যাওয়া হয়। ঠিক এবারও যাবে সবাইকে নিয়ে। এতে এক্সামের আগে মাইন্ড ফ্রেশ হবে একটু হলেও। আর ঘুরাঘিরা করলে মন এমনিতেই ভালো থাকে।

ফাইনাল ইয়ারের টোটাল স্টুডেন্ড আছে ৫৪৩ জন। এর মাঝে হয়তো অনেকে যাবে আবার অনেকে যাবে না। তাই কয়েকদিন আগে থেকেই লিষ্ট করা শুরু হয়েছে।

আজ ক্লাসে আবরার স্যার টুরের কথা বলে গেলো। আর লিষ্ট করার দায়িত্ব দিলো ফাহাদ কে। ছেলেটা পলিটিক্স করে। নানান জায়গায় মিছিল মিটিংএ সে ই পোলাপানদের একসাথে করে। তাি আবরার স্যার টিম মেনেজমেন্ট এর দায়িত্মটা তাকেই দিলো। কারণ ছেলেটার মোটামুটি হলেও টিম ম্যানেজ করার অভিজ্ঞতা আছে। আর মেয়েদের মাঝে দিলো একজন কে। আবরার স্যার ছেলে মেয়েদের মাঝে ভাগ ভাগ করে টিম লিডার বানিয়ে দিয়ে গিয়েছি। আর সকল স্টুডেন্টের দায়িত্ব আবরার নিজেই নিয়েছে। কারণ সে নিজেও স্টুডেন্ট থাকা কালিন ও বন্ধুদের নিয়ে টুরে যাওয়ার সমন নিজেই সব ম্যানেজ করতো।

ছুটির পর কোচিং শেষ করে বাসার দিকে রওনা দিলো ফারহা, আয়রিন ও সাথি। বাকি দুজন ফারহাকে বুঝাতে ব্যাস্ত। কারণ ফারহার ধারণা তার ফ্যামিলি কখনোই তাকে কোথাও একা যেতে দিবে না। তাই পাশ থেকে আয়রিন বললো,
– প্রয়োজনে আমিই ফারদিন ভাইয়া আর আঙ্কেল কে বুঝিয়ে বলবো। দেখবি তারা না করবে না।
হুট করে ফারহা বললো,
– না, তুই ভাইয়ার সামনে একধম যাবি না। কক্ষনো যাবি না। কোনো দিন যাবি না।

ফারহার কথায় অবাক হয়ে গেলো আয়রিন ও সাথি দুজনই। আয়রিন অবাক ভঙ্গিতে বললো,
– কেন যাবো না।
ফারহা আর কিছু না বলে শান্ত ভাবে বললো,
– নাহ্, কিছু না।

To be continue….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে