#তোমায়_ছোঁয়ার_ইচ্ছে
#পর্ব_১১
#সুমাইয়া মনি
‘সোহানা আমি চাই না আমার জন্য মামা মামির মাঝে কোনো প্রকার ঝামেলা সৃষ্টি হোক। দূর থেকে তাদের সাহায্য করতে চাই। এটাই উত্তম।’
‘মামি তোকে বিয়েতে নিমন্ত্রণ করবে। তুই যাবি?’
ইসানা চুপ থাকে। বাড়িতে ফিরে সোহানা ফোনে ইসানাকে পুরো ঘটনা জানায়। ইসানা নিরুত্তর হয়ে রয় মিনিট কয়েক। সোহানা খুশি মুডে বলল,
‘আরে বিয়েতে আমরা দু’জনেই যাব। খুব মজা করব দেখিস।’
কিছুক্ষণের জন্য ইসানার ঠোঁটে মুচকি হাসি ফুটে উঠে। পরক্ষণে আবার মিলিয়ে যায়। সোহানা সিরিয়াস মুড নিয়ে বলল,
‘ভালো কথা। কাল আব্বু তোকে কি বলেছে বললি না তো?’
‘তেমন কিছু বলেনি। ঐ তোর বিষয় খবরা-খবর নিচ্ছিলো।’
‘যেমন?’
‘এই পড়াশোনা করছিস কি-না, প্রেম-ট্রেম চক্করে আসিস নাকি এসব।’
‘মুরাদের বিষয় কিছু বলেছে?’
‘নাহ! কেন? তুই কাল তাকে বলিস নি সব।’
‘বলেছি। প্রথম ঘটনা থেকেই সব বলেছি। জানসই তো আমি মিথ্যা কথা সাজিয়ে বলতে পারি না। বলতে গেলেই ধরা পড়ে যাব। এজন্য সব বলে দিয়েছি।’
‘একদম ঠিক করেছিস।’
‘আব্বু আমাকে তেমন বকাবকি করেনি। বলেছে নিজের ক্যারিয়ারে ফোকাস করতে।’
‘ঠিকিই বলেছে।’
‘তাই তো করছি। আজকের পর থেকে মুরাদের সঙ্গে কোনো কথা বলব না। বেটার সাহস কত্তবড় আমার আব্বুকে..। ছিঃ বলতেই ঘৃ’ণা লাগছে।’
‘সে না জেনে বলেছে। সব দোষ রাদের।’
‘মানে?’
‘কাল তোর সঙ্গে কথা বলার সময় সে দরজার বাহিরেই ছিল। সব শুনে নিয়েছে।’
‘কীভাবে বুঝলি?’
‘আমি তাকে রান্না ঘরে ফ্রিজের পিছনে লুকিয়ে থাকাকালীন পা দেখেছিলাম।’
‘ওরে হা’রা’মি। তো এই পা’দের বাচ্চাই অন্য পা’দকে বলেছে।’ চোয়াল শক্ত বানিয়ে বলল সোহানা।
‘কী রাদ, মুরাদ থেকে শেষে পা’দ…’ বলেই হেসে দেয় ইসানা।
‘তো আর বলবে কী ওদের? দু’টোই এক পানির মাছ।’
‘হেসে নেই..’ খিলখিল করে হাসছে ইসানা।
ইসানার হাসি শুনে সোহানাও হাসে। হেসে বলে,
‘শোন পা’দ এক হলো রা’দ, পাদ দুই হলো মুরাদ। মনে থাকে যেন।’
‘আবার ওয়ান, টু পা’দ…।’ বলে পুনরায় হাসতে আরম্ভ করল।
দু’বান্ধবীর হাসাহাসির পর্ব শেষ করে আরো কিছুক্ষণ কথা বলে। তারপর ফোন রেখে দেয়। ইসানা পুরোনো স্মৃতিগুলো ভাবছে। হঠাৎ বাহির থেকে রাদের ডাক আসে। ইসানা ভাবনা থেকে বের হয়ে বাহিরে এলো।
রাদ টাইসনকে কোলে নিয়ে পায়ের ওপর পা উঠিয়ে সোফায় বসে ছিল। ইসানা রাদের নিকটে এসে বলল,
‘কিছু বলবেন স্যার?’
‘আজকাল পা’দ নিয়ে বেশ চর্চা হচ্ছে দেখছি।’ গম্ভীর গলায় টাইসনের পানে তাকিয়ে বলল রাদ।
ইসানা থমথম হয়ে তাকায়। হতবাক হয়ে যায় কয়েক মিনিটের জন্য। পরক্ষণে কপালে ভাঁজ ফেলে বলে,
‘অন্যের পার্সোনাল কথা শোনা ঠিক না।’
রাদ তির্যক দৃষ্টি ফেলে বলল,
‘এটা আমার বাড়ি..’
‘তাই বলে কি সব কথা কান পেতে শুনতে হবে।’ গমগম আওয়াজে বলল।
‘শুনুন! আপনাদের ফোনালাপ শোনার কোনো ইচ্ছে নেই আমার৷ রুমের পাশ থেকে যাওয়ার সময় আপনাদের কথপোকথন কানে এসে লাগে বিটক ভাবে। আর আপনি চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে কথা বলেন এটা কি জানেন?’
‘আমি আস্তেধীরে কথা বলতে পারি না।’
‘জোরে জোরে কথা বলে অন্যকে শোনাতে পারেন, কথা ধরলেই দোষ। কী অদ্ভুত!’
‘স্যরি!’
‘জরিমানা দিন তিন হাজার এক্ষুনি।’
‘কেন?’
‘এ বাড়িতে জোরে জোরে কথা বলা একদমই নিষেধ।’
‘এখন আমার কাছে টাকা নেই। পরে দিবো।’ কোমলভাবে বলল।
রাদ কপার কোঁচকায়। বলে,
‘কালই না আপনাকে টাকা দেওয়া হয়েছে।’
‘হিসাব দিতে ইচ্ছুক নই!’
‘লাগবে না। কেটে রাখা হবে বেতন থেকে।’
ইসানা চলে যাওয়া ধরলে রাদ ক্ষিপ্র গতিতে বলল,
‘যেতে বলেছি?’
ইসানা চোখমুখ ঘুচে কিছু না বলে ফিরে তাকায়। রাদ গুরুগম্ভীর কণ্ঠে বলল,
‘কফি খাব।’ শুনে ইসানা আবার চলে যেতে নিলে রাদ পুনরায় বলল,
‘আমি কী এখন চলে যেতে বলেছি?’
ইসানা রাগের চোটে চোখ বন্ধ করে নেয়। স্বাভাবিক হয়ে ফিরে তাকায়। রাদ ফের বলল,
‘টাইসনের জন্য খাবার নিয়ে আসুন।’
ইসানা দৃষ্টি নত রেখে দাঁড়িয়ে রয় পরবর্তী আদেশের জন্য। রাদ ইসানার আদলে তাকিয়ে ভারী কণ্ঠে বলল,
‘দাঁড়িয়ে থাকতে বলেছি?’
ইসানা রেগেমেগে হনহনিয়ে প্রস্থান করল। রাদ টাইসনের মাথায় হাত বুলিয়ে স্মিত হাসে। পা’দ নিয়ে চর্চার ফল ভোগ করতে হচ্ছে তাকে। সে জানে এটা তাদের নাম নিয়েই বলা হয়েছিল তখন। তাই ইসানাকে একটু রাগিয়েছে।
__
পরের দিন মুরাদ ইসানাকে নিয়ে ক্যান্টিনে এসেছে কফি খাওয়ার জন্য। মুরাদ মূলত সোহানার বিষয়ে আলোচনা করার জন্যই এসেছে।
‘আপনার হাতের ব্যথা কমেছে?’
‘এত তাড়াতাড়ি কি সারবে। একটু তো সময় লাগবেই।’
ইসানা মৃদু হাসে। মুরাদ বলে,
‘সোহানা মনে হয় আপনাকে সব বলেছে।’
‘আমি সব জানি।’
‘আসলে, আমার উচিত হয়নি। সত্যি বলতে আমি জানতাম না ওনি তার আব্বু।’
‘হ্যাঁ! বুঝতে পেরেছি। এতে আপনার কোনো দোষ নেই ভাইয়া।’
‘একদম! কিন্তু সোহানা আমাকে ভুল বুঝেছে।’
‘হুম।’
‘প্লিজ! তাকে একটু বোঝান আপু। আমি সত্যি জানতাম না।’
‘আপনি কি সোহানাকে পছন্দ করেন?’
‘ভালোবেসে ফেলেছি আপু। শুনতে খারাপ শোনা গেলেও এটাই সত্যি!’
‘বয়সের পার্থক্যটা… ‘
‘সেটা মেটার না। আমরা জানি ভালোবাসা বয়স দেখে হয় না আপু। আমি জানতাম না সোহানা আমার বড়ো। জেনেও ভালোবাসা বিন্দু মাত্র কমেনি। আমি তাকে বড়ো হিসাবেই না হয় ভালোবাসলাম। সবার চেয়ে আলাদাভাবে। ভুল হবে কী আপু?’
‘নাহ ভাই। তবে আমাদের সমাজের লোকচক্ষে এটা অনুচিত, অস্বাভাবিক!’
‘বিয়ের পর আমি সমাজ নিয়ে থাকব না। তাকে নিয়ে থাকব। বড়ো বলে বউ হিসাবে আমি ও আমার পরিবার যদি তাকে স্বীকৃতি দেয় সমস্যা কী? অন্যের কথায় আমাদের কিচ্ছু যায় আসবে না আপু।’
মুরাদের কথা শুনে ইসানার বেশ ভালো লাগে। আনমনে হাসি ফুটে উঠে তার ঠোঁটে। ফোনের স্ক্রিন একবার ক্লিক করে বলল,
‘আমি আঙ্কেলের সঙ্গে কথা বলে আপনাকে জানাব।’
‘বেশ উপকার হবে আপু। আপনি তার সঙ্গে কথা বলুন।’
‘আচ্ছা!’ দু’জনের মাঝে আরো কিছুক্ষণ কথা হয়। মুরাদের মজার মজার কথা শুনে ইসানা খিলখিল করে হেসে উঠে। বেশকিছুক্ষণ বাক্যবিনিময় হয় তাদের মাঝে।
.
অপরপ্রান্তে রাদ চেয়ারে বসে ক্যান্টিনে তাদের বাক্যবিনিময় দেখে কপাল কুঁচকে ফেলে। ভেতরে ভেতরে ক্ষোভ জাগ্রত হচ্ছে। ইসানার সঙ্গে মুরাদের হাসিখুশি মুখে কথা বলা সে কিছুতেই সহ্য করতে পারছে না। অজান্তেই তার পরাণে জ্বলন অনুভব করছে। আচমকা লিসার আগমনে রাদ স্বাভাবিক হয়ে ক্যান্টিনের দৃশ্য পরিবর্তন করে ফেলে।
‘রাদ চলো ঘুরতে যাই।’
‘আমার কাজ আছে। তুমি মুরাদকে সঙ্গে নিয়ে যাও।’ ব্যস্ততা দেখিয়ে বলল রাদ।
‘নাহ! ও আমার সঙ্গে যাবে না। ইসানার সঙ্গে ক্যান্টিনে বসে গল্পগুজব করছে।’
রাদ চোখ গরম করে তাকায়। বলে,
‘ইসানা তোমার বড়ো। তাকে আপু বলে সম্বোধন করো।’
‘তুমি তো তাকে আপু বলো না। আমি কেন বলব?’
‘আমি ওনার স্যার।’
‘তাতে কী? বাসায় থাকাকালীন তুমি তো তার স্যার নও।’
‘ব্যতিক্রম কথাবার্তা আমি লাইক করি না। নেক্সট টাইম নাম ধরে ডাকবে না তার। নাউ আউট!’ লাস্টের কথা নজর সরিয়ে রাগান্বিত স্বরে বলে। লিসা মনঃক্ষুণ্ন করে বেরিয়ে এলো। তার প্রচুর রাগ হচ্ছে। তবে রাদের উপর নয়, ইসানার উপর। তার কারণেই রাদের কাছে কথা শুনতে হয়েছে তাকে।
.
.
.
#চলবে?
#তোমায়_ছোঁয়ার_ইচ্ছে
#পর্ব_১২
#সুমাইয়া_মনি
‘হ্যালো সোহানা..’
‘তুই আস্তে আস্তে কথা বলছিস কেন?’
‘আমার কথা পা আই মিন রাদ সব শুনতে পায় বাহির থেকে। আমি তো জোরে জোরে কথা বলি। এজন্য আস্তে আস্তে কথা বলছি।’
‘আর কি কি বলছে পা’দে বল শুনি।’
‘বাহিরে দেখা হলে বলব। এখন তুই রাখ।’
‘আরে শোন। মুরাদ আমার নাম্বার কোথায় পেলো? তুই দিয়েছিস?’
‘বাহিরে গেলে কথা বলব বলছি না। রাখি!’ কথা এড়িয়ে ফোন কেটে দিলো ইসানা। সরু নিশ্বাস ফেলে বিড়বিড় করে বলল,
‘নাম্বার তো দিলাম আজই। ভালো হয়েছে এড়িয়ে গিয়েছি। নয়তো বকা শুনতে হতো।’ ফোন বিছানায় রেখে বেলকনিতে এলো ইসানা। স্বচ্ছ চাঁদের পানে চেয়ে মৃদু হাসলো। গোলাকৃতি চাঁদ কতদূর অব্দি আলো দিচ্ছে। এ উজ্জ্বল আলোতে হাঁটা চলা করা যায় বিনা আধুনিক যুগের ইলেকট্রনিক লাইটের সাহায্যে। ইশ! চাঁদের মতো যদি কেউ তার জীবনে সুখ, ভালোবাসা দিয়ে উজ্জ্বল আলোর রশ্মি ছড়িয়ে দিতো। কতোই না ভালো হতো। ছোট থেকেই অন্ধকার জীবন অতিবাহিত করেছে। ছোট বেলায় যদি মায়ের বদলে তার মৃত্যু হতো, তবে হয়তো জীবনের ওপর থেকে এত ঝড়ঝাপটা যেতো না৷ ভাবতে ভাবতে চোখের কোণায় নোনাজল এসে ভর করল। শাহাদাত আঙুল দ্বারা মুছে নিলো। হঠাৎ দরজায় করাঘাত হয়। ইসানা চোখ ঠিকঠাক ভাবে মুছে বের হলো। সে জানে এ মুহূর্তে কে দরজায় আওয়াজ করেছে। দরজা খুলে বাহিরে পা রাখার পরপরই টাইসন চিল্লিয়ে উঠে। ইসানা মুখে হাত রেখে পিছিয়ে যায়। টাইসন লেজ জাগিয়ে তুলে রাগে রাদের পায়ের কাছে ঘুরছে। ভুলক্রমে ইসানা না দেখেই টাইসনের লেজে পা রেখেছে। যার দরুন ব্যথায় কুঁকড়ে আছে টাইসন। রাদ টাইসনের ওপর থেকে নজর সরিয়ে ইসানার পানে ক্রোধ চোখে তাকায়।
ইসানা এখনো টাইসনের দিকেই অপরাধী চোখে তাকিয়ে আছে। এতক্ষণ টাইসন ঠিকিই তাকে কামড়ে দিতো। রাদের জন্য আপাতত রক্ষে হয়েছে। ইসানা রাদের উপর নজর পড়ে। রাগি রাগি চোখ দেখে দ্রুত বলল,
‘আমি ইচ্ছে করে দেই নি। জরিমানা নিবেন না প্লিজ স্যার!’
‘টাইসনের ট্রিটমেন্ট করুন এক্ষুণি।’ গমগম স্বরে বলল।
‘যদি কামড় দেয়?’
‘দিবে না। আমি ধরছি ওঁকে। আপনি ওর লেজে ব্যথার স্প্রে দিয়ে দিন।’
‘জি।’ ইসানা দ্রুত ছুটে যায় ফাস্ট এড বক্স আনতে। রাদ টাইসনকে কোলে তুলে সোফায় বসে। ইসানা স্প্রে দিয়ে দেয় আলতো ভাবে। টাইসন ব্যথায় চিৎকার করলে রাদ সামলে নেয়। ব্যথা একটু বেশিই লেগেছে লেজে। দু’জনে এক সঙ্গে লেজে হাত রাখার সময় আঙুল স্পর্শ হয় তাদের। রাদ আড়চোখে তাকালেও ইসানা তাকায় না। রাদের কপাল কুঁচকে আসে কিঞ্চিৎ! মাঝেমধ্যে ইসানাকে দেখে তার কাছে অদ্ভুত লাগে। সে ভাবে তার মধ্যে অনুভূতির ছিঁড়ে ফোটাও নেই। আছে শুধু দায়িত্বপালনের ভূমিকা।
ইসানা বক্স হাতে চলে যেতে নিলে রাদ না তাকিয়ে বলল,
‘আজকে টাইসনকে আপনার কাছে রাখবেন। রাতে ওর যত্ন নিবেন।’
ইসানা দৃষ্টি নত রেখে রাজি হয়ে সম্মতি জানায়। টাইসনকে আপাতত সঙ্গে নিয়ে রাদ রুমে ফিলে। ইসানা রুমের দিকে পা বাড়াতেই মনে পড়ে রাদ কেন তাকে ডেকেছিল। রাদের দরজার নিকটে এসে নক করলে রাদ দরজা খুলে।
‘বলুন?’
‘কেন ডেকেছিলেন তখন?’
রাদ মনে করার চেষ্টা করে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে। তারপর ইসানার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘এখন মনে পড়ছে না। পরে বলব।’
ইসানা শুনে চলে যায়। রাদ দরজা ভিড়িয়ে দেয়।
_
‘আপনি আমাকে জ্বালাতন করছেন কেন? বিরক্তিতে বার বার কল কেটে দিচ্ছি বুঝতে পারছেন না?’
‘কথা না শুনে কল কেটে দিলে এমনই হবে মিস।’
সোহানা রাগে চোখ বন্ধ করে ফেলে। তারপর স্বাভাবিক হয়ে বলে,
‘ওকে, কি বলবেন বলেন।’
‘এত তাড়া কিসের মিস? বয়ফ্রেন্ড অপেক্ষা করছে হোয়াটসঅ্যাপে?’
‘আজাইরা কথা না বলে যেটা বলতে চান, সেটা বলুন।’
‘কাল দশটায় আমার সঙ্গে দেখা করবেন মিস।’
‘কোথায়?’
‘আরএফসি গার্ডেনে।’
‘পারব না।’
‘আপনার বাসার নিচে আছি। রাজি না হলে সোজা বাসার ভেতরে প্রবেশ করব মিস।’
‘কী?’ বিস্মিত হয়ে।
‘জানালা দিয়ে উঁকি দিন মিস।’
সোহানা জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখে সত্যি সত্যি মুরাদ গাড়ির সঙ্গে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাকে দেখা মাত্রই হাত জাগিয়ে ‘হ্যালো’ জানায়। সোহানা সরে যায়। ঘনঘন নিশ্বাস নিয়ে বলল,
‘আমি আসব দেখা করতে। আপনি চলে যান এখান থেকে আপাতত।’
‘কথা দিতে হবে আমায় মিস।’
‘দিলাম।’
‘প্রমিজ?’
‘হ্যাঁ! প্রমিজ। ওকে বাই, দেখা হবে আগামীকাল মিস।’
মুচকি হাসি দিয়ে কল কেটে গাড়ি টান দিয়ে চলে গেল মুরাদ । জানালা দিয়ে সেটি দেখে সোহানা স্বস্থির নিশ্বাস নেয়। একটুর জন্য বেঁচেছে।
মনে মনে কার ওপর রাগ হবে বুঝে উঠতে পারছে না। কে তার এমন সর্ব’নাশ করল? নাম্বার, বাড়ির এড্রেস মুরাদকে কোন শুভাকাঙ্ক্ষী দিয়েছে তাকে খুব প্রয়োজন এই মুহূর্তে!
.
সকালে রাদ ইসানা এক সঙ্গে ফ্যাক্টরিতে আসে। চোখ ভেঙে ঘুম আসছে ইসানার। সারারাত টাইসন ও রাদের জন্য ঠিকঠাক ভাবে ঘুমাতে পারে নি। এক, দু ঘন্টা অতিবাহিত হতেই রাদ এসে টাইসনের খবরা-খবর নিচ্ছে। তার ওপর লাইট জ্বালানো ছিল সারারাত। যার ফলে ঘুমের ঘার্তি দেখা দিয়েছে। হাই তুলতেই ল্যান্ড লাইনে কল আসে। কল রাদ দিয়ে কফি বানানোর বার্তা পেশ করে। ইসানা কফি বানিয়ে রাদের কেবিনে প্রবেশ করে। রাদ ইসানার শুকনো মুখশ্রী দেখে বুঝতে অসুবিধা হয় না তার। মুখ খুলে কিছু বলার পূর্বেই লিসা তড়িঘড়িতে ভেতরে প্রবেশ করে। হাতে ছিল মাঝারি আকারের একটি টিফিন বাটি। ডেস্কের ওপরে রেখে মুচকি হেসে রাদের উদ্দেশ্যে বলল,
‘আজকের হালুয়া একদম পারফেক্ট হয়েছে রাদ। খেয়ে দেখো।’
‘তুমি টেস্ট করেছো?’ ভ্রু কিঞ্চিৎ বাঁকিয়ে জিজ্ঞেস করল রাদ।
‘চেয়েছিলাম। কিন্তু আমি চাই তুমি আগে টেস্ট করো। প্লিজ!’ অনুরোধ স্বরে বলল লিসা।
রাদ খেতে চাইছে না। লিসার মনরক্ষার্থে খেতে হবে তাকে। লিসা দু’টি চামিচ নিয়ে এসেছে। রাদের দিকে একটি তাক করে ধরেছে। রাদ সেটি নিয়ে বাটির ঢাকনা সরিয়ে মুখে দিলো। মুখ নাড়াচাড়া করার ভঙ্গি দেখে লিসা চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করল,
‘ঠিক আছে তো রাদ?’
সেকেন্ড কয়েক চুপ থেকে রাদ উত্তর দিলো,
‘চমৎকার!’
‘সত্যি?’ খুশিতে লাফিয়ে উঠল লিসা।
‘হুম।’
‘উফ! যাক আমার রান্না স্বার্থক হয়েছে। তুমি খাও আমি আন্টিকে ধন্যবাদ দিয়ে আসি। তিনিই আমাকে সাহায্য করেছে হালুয়া বানাতে।’ দ্বিতীয় চামিচটি ডেস্কে রেখে লিসা বেরিয়ে গেল। রাদ অপর চামিচটি হালুয়ার পাশে রেখে বাটিটি ইসানার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
‘ট্রাই করুন।’
‘আপনার জন্য এনেছ…’
‘খা’ন বলছি।’ গুরুগম্ভীর কণ্ঠে শুধালো রাদ।
ইসানা রাদের নির্দেশ যথারীতি পালন করে এক চামিচ মুখে দিলো। তৎক্ষনাৎ রাদের দিকে তাকিয়ে চামিচ আগের স্থানে রেখে দিলো। রাদ ইসানার পানে তাকান অবস্থায় চেয়ারে হেলান দিলো। সে ইসানার মুখ থেকে লিসার বানানো হালুয়ার প্রশংসা শুনতে চায়। সেজন্য সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে।
ইসানা নজর নত করে মিনমিন কণ্ঠে বলল,
‘অতিরিক্ত চিনি হয়েছে।’
‘আপনি তো জানেন আমি সুগার লাইক করি খুব কম।’
‘তবে তাকে মিথ্যে কেন বললেন?’
রাদ ঘাড় হালকা কাত করে ইসানার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘খুশি করতে না পারলেও, কষ্ট দিয়ে কথা বলা অনুচিত। তাই মিথ্যে তারিফ করলাম। আপনার তরিকা অবলম্বন করলাম। অবশ্য এতে লিসা খুশি হয়েছে।’
ইসানা চোখ তুলে রাদের চোখের দিকে তাকায়। পরস্পর দৃষ্টিবিনিময় হয় সেকেন্ড কয়েক।
ইসানা বিনাবাক্যে কেবিন ত্যাগ করল। কেবিনে এসে থুতনিতে ঠেস দিয়ে হাত রেখে রাদের বলা কথাটি পুনরাবৃত্তিতে আওড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।
কয়েকদিন যাবত রাদের আচার-আচরণে পরিবর্তন লক্ষ্য করছে। হঠাৎ রাদের পরিবর্তন তাকে ভাবিয়ে তুলছে।
–
সোহানা দ্রুত পায়ে মুরাদের কাছাকাছি এসে তেজি কণ্ঠে বলল,
‘বলুন কেন আসতে বলেছেন?’
মুরাদ সানগ্লাস খুলে উঠে দাঁড়ায়। টেবিলের ওপর থেকে গোলাপের বুকে হাতে নিয়ে মৃদু হেসে বলল,
‘আপনার জন্য মিস!’
সোহানা রাগী মুডে বুকেটি হাতে তুলে নেয়। পুনরায় বলে,
‘এবার বলুন।’
‘আমাকে এড়িয়ে চলছেন কেন মিস?’
‘আপনি আমার কোনো রিলেটিভ না। সের্ফ অচেনা একজন পার্সন।’
‘প্রিয় পার্সন হতে চাই আপনার মিস।’
‘মাথায় সমস্যা হয়েছে বাড়ির সবাই জানে? দেখুন, আপনি আমার বয়সে ছোট। আপনি বলে সম্বোধন করছি সম্মান করে। সে-ই মান রাখার চেষ্টা করুন।’
‘আপনি থেকে তোমার তুমি হতে চাই মিস।’
‘অসম্ভব!’ ঝাড়ি দিয়ে বলল সোহানা।
মুরাদ সোহানার কাছে এগিয়ে গিয়ে গালে হাত রাখতে গিয়েও সরিয়ে নেয়। নরম কণ্ঠে বলল,
‘আমি আপনার প্রেমে পড়েছি মিস। এর থেকে আমাকে কেবল আপনিই উদ্ধার করতে পারবেন।’ এতটুকু বলে থেমে সোহানার কানের কাছে মুখ এগিয়ে নেয়। ফিসফিস করে বলে,
‘আমাকে ভালোবাসুন মিস। আমি আপনার হৃদয় দখল করতে চাই। তীব্রভাবে ভালোবাসতে চাই আপনাকে।’
সোহানার সর্বাঙ্গে যেন কেউ আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। বুকের মধ্যে থাকা যন্ত্রটা দ্রুতগতিতে টিমটিম করছে। এ কোন অনুভূতিতে হাতড়াচ্ছেন তিনি। হাতের মুঠোয় বুকেটি খামচে ধরে। ঠোঁট ঈষৎ নড়াচড়া করছে। কিন্তু বাক্যগুলো ভেতর থেকে বের হচ্ছে না কিছুতেই। মুরাদ দুরত্বে চলে আসে। স্বাভাবিক স্বরে বলে,
‘আশা করি আপনি আমাকে বাঁচাবেন মিস।’ মৃদু হাসি প্রধান করে মুরাদ রেস্টুরেন্ট ত্যাগ করে। সোহানার ঘুরে তাকায়। মুরাদের যাওয়ার দিকে চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে আছে। দৃষ্টির বাহিরে যেতেই সোহানা আশেপাশে তাকায়। পুরো রেস্টুরেন্টটি খালি ছিল। কোনো কাস্টোমার ছিল না সেখানে। তবে কি মুরাদ তার জন্য পুরো রেস্টুরেন্টটি কিছুক্ষণের জন্য ভাড়া নিয়েছে?
.
.
.
.
#চলবে?
কার্টেসী ছাড়া কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ।