Sunday, October 5, 2025







তোমায় ছোঁয়ার ইচ্ছে পর্ব-৭+৮

#তোমায়_ছোঁয়ার_ইচ্ছে
#পর্ব_৭
#সুমাইয়া মনি

সকালে খাবার খাওয়ার সময় লিসা চুপ ছিল টাইসের জন্য।
যদি কাঁ’ম’ড় দেয় এই ভ’য়ে। রাদ লিসাকে চুপচাপ খেতে দেখে অগোচরে বাঁকা হাসে। এরপর নিরবচ্ছিন্ন করে বলে,
‘পাশের এপার্টমেন্টে তোমার থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আশা করছি তোমার কোনো অসুবিধা হবে না লিসা।’
‘আমি এখানে থাকলে কী বেশি অসুবিধা হতো রাদ?’
‘ইউ নো, আমি একা থাকতে পছন্দ করি। শুধু মামনির জন্য..’ বাকি অংশটুকু বলার আগে থেমে যায় রাদ। লিসা বুঝতে পারে ইসানার বিষয়টি। ইসানা রাদের কথাটি বুঝতে পারে। মনঃক্ষুণ্ন হলেও নিজের ভেতরে দমিয়ে ফেলে। লিসা টাইসনকে দেখিয়ে বলল,
‘রাদ টাইসনকে ভেতরে পাঠাও না প্লিজ! কথা বলতে না পারলে দম বন্ধ হয়ে মা’রা যাব আমি।’
রাদ না তাকিয়ে বলল,
‘অভ্যাস করো লিসা। আমি ভাবছি টাইসনকে তোমার ফ্ল্যাটে রাখব ক’দিনের জন্য। বেশি কথা বলার রোগ চলে যাবে।’
‘হোয়াট? তুমি রোগ বলছো এটি?’
‘একা একা কথা বলা বা নিজে নিজে কথা বলা মানসিক রোগ সিজোফ্রেনিয়া বা মুড ডিসওর্ডারের লক্ষণ। ওই রোগীরা অনবরত একা একা কথা বলতে থাকে। তাদের কথাগুলোর মধ্যে তেমন একটা সামঞ্জস্যতা নেই।’
‘হেই আমি মানসিক রোগী নই! আমি তো শুধু তোমাদের সঙ্গে বেশি কথা বলি।’
‘এটা মানসিক রোগের মধ্যেই পড়ে। উদাহরণ সরূপ, তুমি নিজের মতো কথা বলছো। কেউ নাই বা শুনুক কথা চালিয়ে যাচ্ছো। সে যে তোমার ওপর বিরক্ত বোধ করছে। এতে তোমার ভ্রুক্ষেপ নেই। তার মানে হলো, তুমি কথা বলছো। সে তোমার কথা শুনছে না এবং কিছু বলছে না। সো, এটা নিজে নিজে কথা বলা। এক সময় মানসিক রোগীতে পরিনত হবে। আগে থেকে তোমাকে সাবধান করলাম।’ শেষেরটুকু বলে রাদ কোট হাতে বেরিয়ে যায়। লিসা থুতনিতে হাত রেখে ভাবে রাদ আসলে কি বলে গেলো? কারণ তার মস্তিষ্কে এসব বার্তা প্রবেশ করতে অক্ষম।
‘রাদ আমিও আসছি ওয়েট!’ চিল্লিয়ে বলে লিসা তার পার্স নিয়ে বের হয়। ইসানা টাইসনের কাছে ঝুঁকে হেসে বলল,
‘যাক, তোকে দিয়ে একটি কাজ তো হয়েছে টাইসন।’ ইসানার কথা শুনে টাইসন লেজ গুটিয়ে চলে যায়। বিরক্ত হয় ইসানা৷ মাঝেমধ্যে টাইসনের আচরণ ঠিক রাদের মতোই রূপ নেয়। হতেই হবে, রাদের টাইসন বলে কথা!
__
ফুড গার্ডেনে আজ পার্টির আয়োজন করা হয়েছে মাহাতাবুর কোম্পানি থেকে। ডেকোরেশনের কাজ সম্পূর্ণ সোহানার ওপর। সকাল থেকে লেগেছে এখন বেলা বাজে দুইটা। খাওয়ার ফুরসতও মিলেনি তার। চারটায় সম্পূর্ণ কাজ শেষ করে খেতে বসে দুপুরের খাবার। রাতে তাকেও পার্টিতে উপস্থিত থাকতে হবে। ম্যানেজারের নির্দেশে। তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মোট কতজন আসবে পার্টিতে তার লিস্ট করতে হবে। খাবার খেয়ে বাসায় এসে বিশ্রাম নিয়ে সন্ধ্যার দিকে রেস্টুরেন্টে আসে। নিমন্ত্রণ করা লোকজন ইতিমধ্যে আসতে শুরু করেছে। সোহানার কাজ আরম্ভ হয়।

ইসানা রাদের কাছ থেকে আধাঘন্টার সময় চেয়ে সোহানার সাইকেল নিয়ে বের হয়েছে ওর সঙ্গে দেখা করতে। কল দিয়েও সাড়া না পেয়ে সোহানার বাড়িতে এসেছে সে। কিন্তু তালা ঝুলানো দেখে হতাশ হয়। দরজার সামনে সাইকেল তালাবদ্ধ করে চলে আসে অফিসে। আজ রাদ সহ বাকি কিছু স্টাফদের পার্টিতে যেতে হবে। রাদ, মুরাদ, লিসা নিজেদের পোশাক পরিবর্তন করলেও ইসানা অফিশিয়াল কোট, প্যান্টে রয়েছে। বিষয়টি রাদ স্বাভাবিক ভাবে নিলেও মুরাদ লক্ষ্য করে। এবং রাদকে জানালে সে তেমন পাত্তা দেয় না। মুরাদ এ বিষয়ে লিসার কাছে সাহায্য চাইলে লিসা আপত্তি করে না। কেননা বড়ো হবার সুবাদে ইসানার প্রতি এখন রাত ক্ষোভ নেই। সে নিজের একটি ড্রেস ইসানাকে পড়ার জন্য দেয়। পোশাক পরিবর্তনের জন্য রাদের অনুমতি নিতে চাইলে মুরাদ মানা করে। এতে করে তাকে এক প্রকার বাধ্য হয়ে পড়তে হয়। লম্বা কালো রঙের গাউনটি ছিল ফুল হাতার। প্রথমে বিব্রতবোধ করলেও পরক্ষণে নিজেকে মানিয়ে নেয়। লিসা ইসানার চেয়ে একটু খাটো ছিল। তাই গাউনটি ফিটফাট হলেও একটু শট হয়েছে ইসানার। মেকআপ বিহীন পাশে সিঁথি কে’টে চুলগুলো ছেড়ে বক্ষের সামনে এনে রাখে। ব্যাগ থেকে লাল রঙের লিপস্টিক হালকা ভাবে ঠোঁটে দেয়। নিজেকে আয়নায় দেখে প্রচণ্ড আফসোস হয় তার। বিয়ে পর আর সাজা হয়নি। নিজেকে হালকা সাজসজ্জায় দেখে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। মুরাদের তাড়াহুড়ায় বের হয় সে। রাদ অনেকক্ষণ যাবত মাইক্রোতে বসে অপেক্ষা করছে। গাড়ির দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করার সময় দু একটা রাগী বাক্য বলে রাদ। যখন ইসানার ওপর নজর এলো তখন কিছুটা থমকালো। তাকে আজ ভীষণ সুন্দর লাগছে। কালো রঙের গাউনটি খুব মানিয়েছে তাকে। ইসানা একদম পিছনের সিটে একা বসেছে। গাড়ি চলা থেকে শুরু করে, নামা অব্দি লিসার কথা চালু ছিল। রাদ, মুরাদ বিরক্ত হলেও ইসানাকে লিসার সব কথা শুনতে হয়। মানবতার খাতিরে ইসানা টুকটাক কথা বলেছিল।
রেস্টুরেন্টের নাম দেখে ইসানা খুশি হয়। সোহানার সাথে তার দেখা হবে। ভেতরে প্রবেশ করে রাদের সঙ্গে কিছুক্ষণ থেকে সোহানাকে খুঁজতে আসে। পেয়ে যায় কাউন্টারের পাশে। সোহানা লিস্ট করা বাদ দিয়ে কথায় মগ্ন হয়ে পড়ে।
এক সঙ্গে বসে জুস খাবার সময় মুরাদ উপস্থিত হয়।
‘হাই মিস!’
সোহানা বিনাবাক্য মুখ ঘুরিয়ে নেয়। এরূপ আচরণে মুরাদ ইসানাকে জিজ্ঞেস করল,
‘আপনার বান্ধবীর ঘাড়ে মেবি সমস্যা হয়েছে, ঘুরে গেলো যে?
‘একদম নাহ!’ এক প্রকার চেঁচিয়ে বলল সোহানা।
‘তাহলে কী অটোমেটিক বাঁ দিয়ে ঘুরে গিয়েছে মিস?’
‘কি বলতে চাইছেন?’
‘উত্তর দেওয়াটা ভদ্রতার ব্যাপার-স্যাপার।’
‘হাই বলেছেন, হ্যালে বললাম। হয়েছে?’ হাত তুলে বলল সোহানা।
‘হ্যান্ডশেক বাকি আছে।’ হাত বাড়িয়ে বলল মুরাদ।
‘নো থ্যাংকস।’
‘সম….’
‘বাব্বা! এসেই গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে গল্প জুড়ে দিলে মুরাদ।’ লিসা বাক্যটি বলতে বলতে পাশের চেয়ারে বসল।
সোহানা দাঁড়িয়ে গিয়ে বলল,
‘আমি মোটেও তার গার্লফ্রেন্ড নই! ওনি সেদিন মিথ্যে কথা বলেছেন।’
‘থাক! থামো। আর ধামাচাপা দিতে হবে না। বুঝি বুঝি।’
‘ঠেঙ্গা বুঝেন। নেক্সট টাইম আপনি আমার সাথে কথা বলতে আসবেন না মি.মুরাদ।’ মুরাদের উদ্দেশ্যে কথাটা বলে সোহানা চলে গেল। হেঁটে যেতে যেতে বিড়বিড় করে আরো বলল,
‘সেদিন গার্লফ্রেন্ড বানিয়েছে, কখন আবার বউ বানিয়ে ফেলে। আল্লাহ জানে।’
ইসানা ওঠে সোহানার দিকে এগিয়ে যায়। লিসার বকবকানি শুরু হবার আগেই মুরাদ ফোনের বাহানা দিয়ে চলে যাওয়া ধরে। লিসা মুরাদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘হেই মুরাদ ঠেঙ্গা মানে কি বলো না..। ধ্যাত! সবাই আমাকে ইগনোর করে।’
সোহানা একটু আড়ালে এসে নিজে নিজে একা বাক্যবিনিময় করছে। ইসানা কাছে এসে দাঁড়াতেই সোহানা বলল,
‘আমার সঙ্গে কেন এমন হলো ইসা।’
‘ভালোবাসা মুল বিষয় সোহানা।’
‘না না! সম্ভব না।’
‘আগেভাগে কিছু না বলাই ভালো।’
‘তোকে ধন্যবাদ। আগে থেকে জানানোর জন্য। এখন জড়িয়ে ধর। মনটা খারাপ রে!’
ইসানা মৃদু হেসে সোহানাকে জড়িয়ে ধরল। তৎক্ষনাৎ সোহানা বলল,
‘বাই দ্যা ওয়ে, আজ তোকে সুন্দর লাগছে।’
‘থ্যাংক’স! ড্রেস লিসার।’
‘বকবকানির?’
‘হুম।’ হেসে জবাব দেয় ইসানা।
‘তোর এই লুকে যে কেউ পটে যাবে।’
‘বাদ দে। তোর সঙ্গে সিক্রেট কথা আছে।’
‘রেস্টুরেন্টের ভেতরে কামরা আছে সেখানে যাই।’
‘চল।’

বেশকিছুক্ষণ যাবত রাদ ইসানাকে দেখতে পাচ্ছে না। লিসা, মুরাদকে দেখতে পেলেও ইসানা সেখানে ছিল না। রাদ ইসানাকে কল দিতে গিয়ে দেয় না। রেস্টুরেন্টের ভেতরে প্রবেশ করে। পার্টি হচ্ছে বাহিরের ছাদে। প্রথম কামরাটি উপেক্ষা করে রাদ পরের কামরায় নক করে প্রবেশ করে। কারো সাড়া মিলে না। সেটি ছিল ফাঁকা। বের হতে যাবে এমন সময় ওয়াশরুম থেকে ইসানার কণ্ঠ শুনতে পায়। সে বাহিরের দিকে হাত তাক করে না তাকিয়ে বলছে,
‘সোহানা বিছানার ওপরে রাখা প্যাকেটটি দে আমাকে। নিতে ভুলে গিয়েছিলাম।’
রাদ বুঝতে পারে রুমে তার বান্ধবী সোহানা ছিল। সে আগে থেকেই মুরাদের মাধ্যমে জানতে পেরেছে এখানে সোহানা কাজ করে।
‘তাড়াতাড়ি দে!’
রাদ পুরো রুমে একবার নজর বুলায়। কাউকে না দেখতে পেয়ে সে প্যাকেটটি হাতে নিয়ে ভেতরে উঁকি দিয়ে দেখে দ্রুত ইসানার হাতে দিকে এগিয়ে দেয়। অজ্ঞাত ইসানা প্যাকেটটি নিয়ে লক করে দেয় দরজা। রাদ রুম থেকে বেরিয়ে যায়৷ ইসানা মিনিট কয়েক বাদে বেরিয়ে আসে। তখনই সোহানা প্রবেশ করে।
‘কোথায় গিয়েছিলি?’
‘তুই ওয়াশরুমে যাওয়ার পরপরই তো স্যারের ডাক পড়লো। যেতে হলো।’
ইসানা কপাল কোঁচকায়। বলে,
‘আবার এসেছিলি?’
‘নাহ! আমি এখন এলাম। কেন বলতো?’
‘তাহলে প্যাকেট কে দিলো?’
‘প্যাকেট?’
‘হ্যাঁ! আমি ওয়াশরুমের ভেতর থেকে তোর কাছে সে’নো’রা’র প্যাকেট চাইলাম। আর তুই দিলি!’
‘আমি তো দেই নি।’ গদগদ কণ্ঠে বলল সোহানা।
‘তাহলে কে দিলো?’ বিস্ময়কর কণ্ঠে শুধালো ইসানা।।
‘ওয়েট! আমি রাদকে বাহিরে যেতে দেখেছি। মানে রেস্টুরেন্টের বাহিরে।’
‘সে এসেছিল এই রুমে?’ হতবিহ্বল হয়ে বলল।
‘কি জানি!’ দু কাঁধ ঝাঁকাল সোহানা।
‘সর্বনাশ! কি করে ফেললাম আমি।’
‘যদি সে দিয়েও থাকে, তাতে কি এমন হলো?’
‘দিয়েছে তাতে সমস্যা নেই। ভেতরের জিনিসটি দেখেছে.. ইশ!’ কপাল চাপড়াতে লাগলো ইসানা।
‘আজকাল এসব ন্যাচারাল। লজ্জার কিছু নেই।’
‘তবুও!’
‘বাদ দে, বাহিরে চল।’
ইসানা মুখে কিছু না বলে সোহানার সঙ্গে রুম প্রস্থান করে। পার্টিতে থাকাকালীন ইসানা লজ্জায় রাদের সঙ্গে কথা বলেনি এবং-কি তাকায়ও নি। এগারোটা নাগাদ তারা বাড়িতে ফিরে। ইসানা টাইসনকে খাবার দিয়ে রুমে যাবার পর আর বের হয়নি। রাদ তাকে ডাকে নি। কফি নিজে বানিয়ে নিয়েছে। তবে ইসানার বানানো কফির মতো হয়নি।
.
.
.
.
#চলবে?

#তোমায়_ছোঁয়ার_ইচ্ছে
#পর্ব_৮
#সুমাইয়া মনি

সকালে রাদ খাবার খাওয়ার সময় লক্ষ্য করে ইসানা বার বার কোনো অজুহাতে পেটে হাত রাখছে। রাদ বিষয়টি বুঝে ফেলে। নীবরে খাবার খেয়ে যাওয়ার সময় বলল,
‘আজ আপনাকে ফ্যাক্টরিতে আসতে হবে না। বাসায় থাকুন।’
এতটুকু বলে রাদ প্রস্থান করে। ইসানা অবাক হয় না। বরঞ্চ সে কিছুটা স্বস্থি পায়। সকাল থেকে পেট ব্যথায় ভুগছে। মেডিসিন নেই। কিনতে হলে বাহিরে যেতে হবে। রাদ পারমিশন ছাড়া বাহিরে যেতে নিষেধ করেছে। যদিও না বলে যেতে পারে। তবেই জরিমানা! এজন্য সে ব্যথাকে কাবু করে সকালের ব্রেকফাস্ট বানিয়েছে। কষ্ট হলেও কিছু করার ছিল না। সে আসার পরপরই সব সার্ভেন্টদের রাদ বরখাস্ত করেছে। এখন তাকেই সব কাজ করতে হচ্ছে একা। এত বড়ো অ্যাপার্টমেন্ট সামলানো চারটে খানে কথা নয়। তবুও সে যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। ইসানা ঠের বুঝতে পারে রাদ একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি। সব দিকে তার নজর আছে। কাল রাতের জন্য নিশ্চয় আজ তাকে ছুটি দিয়েছে। কিছুটা লজ্জা অনুভব করে ইসানা।
.
চেয়ার দুলিয়ে হাতে কলম নাড়াচাড়া করতে করতে রাদ ইসানাকে নিয়ে ভাবছে। অবশ্য তার ভাবনা এতটাও গুরুতর নয়। তাকে তাড়ানোর জন্য কম ব্যবস্থা করেনি সে। বাকি সার্ভেন্টদের অধিক টাকা দিয়ে বের করে দিয়েছে। টাইসনকে দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়েছে। এবং-কি ইচ্ছে করে প্রতিদিন নতুন কাপড়গুলো ধোঁয়ার জন্য রেখেছে। ফ্যাক্টরিতে নানাভাবে তাকে দিয়ে ফাইল আদান-প্রদান করিয়েছে।
এক দিক থেকেও তাকে টর্চার কম করেনি রাদ।
তবুও সে মুখ ফুটে কিছু বলার চেষ্টাও করেনি। রাগও দেখায়নি। কী এমন দুর্বলতা তার? যার কারণে সে মুখ বুঁজে সব সহ্য করছে। বড্ড ভাবনার বিষয়!
‘ভাবছিস কিছু?’ মুরাদ স্বচ্ছ কাঁচের দরজা ঠেলে ভেতরে আসতে আসতে বলল কথাটা।
রাদ ঝুঁকে কলম রেখে বলল,
‘হুম।’
চেয়ার টেনে বসতে বসতে পুনরায় মুরাদ প্রশ্ন করল,
‘ভাবনা-টি বলার মতো কী?’
‘আমি ইসানাকে নিয়ে ভাবছি।’
মুরাদ এক ভ্রু উঁচু করে বলল,
‘প্রেমে পড়লি নাকি তার?’
রাদ ক্রুদ্ধ দৃষ্টি ফেলে কলম ছুঁড়ে দেয় মুরাদের উদ্দেশ্যে। মুরাদ হেসে কেস ধরে বলল,
‘ফান ছিল। বল কেন ভাবছিস তার কথা?’
রাদ ফের হেলান দিয়ে বসল। বলল,
‘তাকে এ ক’দিন প্রচুর টর্চার করেছি তাড়ানোর জন্য। কিন্তু…’
‘তুই হেরে গেছিস, তাই তো?’ রাদের অবশিষ্ট কথা কেড়ে নিয়ে বলল মুরাদ।
‘হ্যাঁ!’
‘আগেই বলেছি তিনি পরিশ্রমী মেয়ে। এবং যথেষ্ট ম্যাচিউর। আন্টি কিন্তু এমনিতেই তাকে নিয়োগ দেয় নি তাকে।’
‘মানলান। কিন্তু এক সঙ্গে থাকাটা আমার কাছে ইর্রিটেটেড!’
‘মানিয়ে নিলে ইর্রিটেটেড মনে হবে না। আর তোরা তো এক রুমে থাকছিস না। আলাদাভাবে থাকছিস।’
‘তবুও!’
‘কিচ্ছু করার নেই। আমি এ বিষয়ে কোনো সাহায্য করতে পারব না। তবে আরেকটা আইডিয়া আছে।’
‘কী?’
‘বলি?’
‘ভঙ্গিমা না করে বলে ফেল।’
মুরাদ উঠে দাঁড়িয়ে গলার টাই ঠিকঠাক করতে করতে হাসিমুখে বলল,
‘লিসাকে বিয়ে করে নে। তাহলে তিনি চলে যাবে।’
রাদ রাগান্বিত হয়ে মুরাদকে মারতে উদ্যত হতেই সে হেসে পালিয়ে যায়৷ এটা মূলত রাদকে রাগাতেই বলেছে মুরাদ।
রাদ কপাল কুঁচকে শাহাদাত আঙুল দ্বারা নাক ঘষে পাশে ফিরতেই মুরাদ দরজার কাছে উঁকি দিয়ে হেসে হেসে বলে,
‘আজ তো ওনি নেই। কফি কী লিসার মাধ্যমে পাঠাবো রাদ?’
‘সেট-আপ!’ ধমকের গলায় বলল।
মুরাদ রাদের ধমকে মুচকি হাসি প্রধান করে দরজা ভিড়িয়ে চলে যায়৷ তার আজ কফি খাওয়া হবে না। কারণ ইসানার মতো পারফেক্ট কফি এখানের কেউ বানাতে পারে না।
__
রাতে মুরাদ রাদের সঙ্গে ওর বাড়িতে আসে। আজ তাদের একটি নতুন কাপড়ের বিষয়ে আলোচনা করবে। লিসাকেও আসতে বলা হয়েছে। ডিনার সেরে লিসা রাদের জন্য সুজির হালুয়া বানিয়ে এনেছে। রাদের হালুয়া পছন্দ। ওর মন জয় করার জন্য লিসার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। কথা হচ্ছে গেস্টরুমে। সেখানে ইসানাও ছিল। কাজ শেষে লিসা হালুয়ার বাটিটা রাদকে দেয়। রাদ সন্দিহান দৃষ্টিতে হাতে নেয়। যে মেয়ে কি-না পেজায় কাটতে পারে না, সে করেছে হালুয়া রান্না। সাংঘাতিক ব্যাপার-স্যাপার!
লিসা ইসানাকে পানি আনতে পাঠায়। ইসানা পানির জগ নিয়ে ফিরার সময় টাইসন আচমকা পায়ের কাছে আসার ফলে হাত থেকে গ্লাস পড়ে ভেঙে যায়। লিসা গ্লাস ভাঙার আওয়াজ শুনে রুম থেকে বাহিরে আসে। ইতিমধ্যে রাদ হালুয়া চামচে তুলে মুখে দেবার আগে মুরাদ কেঁড়ে নিজের মুখে পুরে নেয়। তৎক্ষনাৎ থুঃথুঃ দিয়ে পাশের ছোট্ট ডাস্টবিনে ফেলে দেয়। চোখমুখ কুঁচকে বলে,
‘ছিঃ! এটা হালুয়া। লবন দিয়ে তেঁতো করে ফেলেছে।’
রাদ কপাল কুঁচকেই ফিক করে হেসে দেয়। হেসে হেসেই বলল,
‘ভাগ্যিস! কেঁড়ে নিয়েছিলি। থ্যাংক’স!’
‘থ্যাংক’স তাই না?’ মুরাদ রেগেমেগে এগিয়ে এসে চামচে হালুয়া তুলে রাদকে জোর করতে থাকে খাওয়ানোর জন্য। রাদ হাসি নিয়ন্ত্রণে এনে মুরাদের দু হাত ধরে ফেলে। মুরাদ জোর করে খাওয়াতে চাইছে। রাদ হাত ধরে সরাতে চাইছে। তাদের জোরাজোরির এক পর্যায় মুরাদ কার্পেটের দরুন পা পিচলে রাদের গায়ের ওপর পড়ে যায়। হালুয়া সহ চামিচ পড়ে যায় বিছানার ওপর। এরিমধ্য লিসা ও ইসানা রুমে উপস্থিত হয়। মুরাদ ছিল রাদের বুকের ওপর। দৃশ্যটি ছিল নায়ক-নায়িকাদের রোমান্টিক মুহূর্তের মতো। তারা হতবিহ্বল হয়ে তাকায়। ওদের দেখে সময় বিলম্ব না করে রাদ মুরাদকে ধাক্কা দিয়ে সরানোর আগেই নিজ থেকে সরে যায় সে৷ ইতস্তত বোধ করে নিজেদের স্বাভাবিক করছে তারা। লিসা চোখ পিটপিট করে ইসানার দিকে তাকায়। ইসানা লিসার দৃষ্টি দেখে চোখ নামিয়ে নেয়। লিসা কপাল কোঁচকায়। বলে,
‘কী চলছে তোমাদের মধ্যে?’
‘মিস্টেক! তার আগে বলো, এটা হালুয়া নাকি নলুয়া? বলি নুন দিনে কী পড়ে গিয়েছিলি?’ মুরাদ বলল।
‘কেন?’ রাগী কণ্ঠে জানতে চাইলো লিসা।
‘লবন দিয়ে তেঁতো করে ফেলেছো।’
‘মিথ্যে কথা বলবে মুরাদ।’
‘খেয়ে দেখো। মিথ্যা নাকি সত্যি বুঝে যাবে।’ বলতে বলতে বাটি হাতে এগিয়ে এলো মুরাদ।
রাগী ভঙ্গিমা নিয়ে লিসা এক চামচ মুখে তুলতেই চেহারার রং পরিবর্তন হয়ে যায়। মুখ চেপে গি’লে ইসানার হাত থেকে পানির জগ থেকে পানি পান করে নেয়। বড়ো নিশ্বাস ফেলে বলল,
‘মিস্টেক হয়েছে।’
‘নিশ্চয় চিনির বদলে লবন দিয়েছো?’ গম্ভীর কণ্ঠে বলতে বলতে এগিয়ে এলো রাদ।
অপরাধী দৃষ্টিতে ‘হ্যাঁ’ সূচক মাথা দুলায় লিসা। রাদ ফের বলল,
‘আমি টেস্ট করার আগে মুরাদ খেয়েছে। আমাকে জোর করে খাওয়াতে গিয়ে…’ বাকিটুকু বলে না রাদ।
তারা দু’জন বুঝে নেয়। রাদ আবার রাশভারী কণ্ঠে বলে,
‘তোমার দ্বারা রান্না সম্ভব না লিসা। নেক্সট টাইম ট্রাই কোরো না।’
‘এবার তো লবন দিয়েছে। পরের বার সুজির বদলে আটা দিবে।’
লিসা অপমান বোধ করে। মুখ মলিন করে রুম ত্যাগ করল। ফিরে আসে বাড়িতে। আপাতত রুমে রাদ, মুরা, ইসানা উপস্থিত ছিল। ইসানা নৈঃশব্দ বেরিয়ে যেতে নিলে থেমে গিয়ে বলল,
‘মিথ্যে তারিফ করলে ক্ষতি হতো না। অন্তত তার মুখশ্রী মলিনতাহীন থাকতো। কাউকে খুশি করতে না পারলেও, কষ্ট দিয়ে কথা বলা অনুচিত।’এতটুকু বাক্য পাঠ করে চলে গেল।
মুরাদের মনে অনুশোচনা বোধ কড়া নেড়ে উঠে। তার একদমই উচিত হয়নি এভাবে বলা। রাদের কাছেও বিষয়টি দুঃখজনক লাগে। তবে কেউ কাউকে প্রকাশিত করল না। চাপিয়ে রাখল বক্ষে।
.
.
.
#চলবে?

কার্টেসী ছাড়া কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ।

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ