#তোমায়_ছোঁয়ার_ইচ্ছে
#পর্ব_৫
#সুমাইয়া মনি
টিকটিক করে ঘড়ির কাঁটা জানান দিচ্ছে রাত বারোটা পয়ত্রিশ মিনিট বেজে গেছে। ভুবন জুড়ে নেমে এসেছে নীরবতা। ঘরের ভেতরে ইসানা মাথা নত রেখে দাঁড়িয়ে আছে। রাদ দু’হাত বগলদাবা করে গম্ভীর আদলে ইসানাকে পর্যবেক্ষণ করছে। পাশেই রয়েছে টাইসন। তার নজরও ইসানার ওপর। ইসানা রাদের গম্ভীর ভাবমূর্তিতে ভীতিগ্রস্ত। যেন এক মুহূর্তেই ঝড় প্রবাহিত হবে। ইসানা এগারটা নাগাদ চুপিচুপি সোহানার বাড়িতে আসে। প্রথমে তো সোহানা রাগ করে ছিল। কিন্তু পরক্ষণে ইসানা সোহানার রাগ ভাঙতে সক্ষম হয়। এ-ও জানায় রাদ তাকে যেতে নিষেধ করেছে। দু বান্ধবীর খুনসুটি চলে প্রায় এক ঘন্টা। তারপরই ইসানা বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হয়। আসার সময় ভাগ্যক্রমে সেদিনের মতো টেক্সি পেয়েছিল। যাওয়ার সময় নজরে রিকশাও দেখা যাচ্ছে না। সে পড়ে যায় মহা বিপদে। শেষে সোহানার সাইকেল চালিয়েই বাড়ি ফিরতে হয়। বাড়ি ফিরতে চল্লিশ মিনিট গেলে গেছে। চুপিচুপি বাড়িতে প্রবেশ করার সময়ই রাদ ও টাইসনের দেখা মিলে। ড্রইংরমে বসে তারা অপেক্ষা করছিল ইসানার জন্য। রাদকে দেখে ইসানার পরান উড়ে যাওয়ার উপক্রম। রাদ উঠে এসে ইসানার নিকটে দাঁড়ায়।
আপাতত কারো মুখে বাক্য নেই। ইসানা ছেলেদের পোষাক পরিধান করে বেড়িয়েছিল। প্যান্ট, সাদা শার্ট, মাথায় কালো রঙের ক্যাপ। বেশ কিছুক্ষণ নীরবতা পালন করার পর রাদ পকেটে হাত পুরে ইসানা সামনে পায়চারী করতে করতে বলল,
‘ভাগ্যিস! টাইসন আপনার রুমের সামনে দাঁড়িয়ে চিল্লাচিল্লি করছিল। নয়তো জানতেই পারতাম না আপনি বাড়িতে নেই। নিশ্চয় বান্ধবীর বাড়ি থেকে ফিরেছেন?’
ইসানা দ্রুত মাথা জাঁকাল। তারপর টাইসনের দিকে চোখ রাঙিয়ে এক নজর তাকিয়ে স্বাভাবিক করে ফেলে।
‘যাওয়াটা এতই জরুরী ছিল?’
ইসানা পুনরায় মাথা দুলায়৷
‘সাইকেলটি আপনার?’
ইসানা ডানে-বামে মাথা দুলায়। যার উত্তর না!
‘নয় হাজার জরিমানা হলো।’
‘কিন্তু…’
‘কোনো কথা হবে না।’ গম্ভীর কণ্ঠে শুধালো রাদ। তারপর টাইসনকে নিয়ে রুমে ফিরল। ইসানা ভেতরে ভেতরে টাইসনের জন্য ক্ষোভিত। রুমে এসে সোহানাকে বিষয়টি খুলে বলল।
‘চি*পা মা*ই*র দে কু*ত্তা*ডা*রে।’
‘কীভাবে?’
‘আস্তে করে রুমে নিয়ে আসবি। খাবার দিবি। আদর করার ছ*লে পিঠে হাত বুলিয়ে কি*ল, ঘু*ষি, টিমটি পাচার করবি।’ হাতের তর্জনী দ্বারা অভিনয় করে বলল সোহানা।
‘পরে যদি কামড় দেয়। তখন তো আমার পে*টে কু*ত্তা*র বা*চ্চা হবে।’
‘আরে নাহ! পালিত কু*ত্তা দের আগে থেকেই ইনজেকশন দেওয়া থাকে। তবে রাদের কু*ত্তা কি ইনজেকশন দেওয়া?’
‘আমি কি জানি।’
‘থাক তয়! চি*পা মা*ই*র দেওয়া কাম নাই।’
‘তাহলে?’
‘ঘুমাতে দে। সকালে আইডিয়া দিবো নে।’
‘আচ্ছা রাখছি।’
__
রাদ ঘুম থেকে জাগার আগেই ইসানা নাস্তা তৈরি করে টেবিলে সাজান শেষ। হয়রান হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই টাইসনের গলা শুনতে পেয়ে উঠে বসে। চোখমুখ ঘুচে আসে নিমিষেই। বাহিরে এসে শুধু টাইসনকে দেখতে পায়। রাদ তখন রুমেই ছিল। ক্ষিপ্র চোখে তাকিয়ে রয়। এই মুহূর্তে মন চাইছে এখনি লেজে পা’রা দিয়ে শিক্ষা দিতে। কিন্তু সে এটি করতে পারে না। কিছুক্ষণ বাদে রাদ আসে। খাবার খেতে আরম্ভ করলে চেহারায় তৃপ্তি ভাব ফুঁটে উঠে। ইসানা বুঝতে পেরে অগোচরে স্বস্থির নিশ্বাস ছাড়ে। তারা এক সঙ্গে অফিসে পৌঁছায়। আজ বাহিরের দেশ থেকে দু’জন বায়ার আসবে। তাদের সঙ্গে রাদের মিটিং। তাই অফিসে পৌঁছে মিটিং রুমে প্রবেশ করে। মুরাদও কিছুক্ষণ বাদে অফিসে উপস্থিত হয়। তিন ঘন্টা বাদে মিটিং শেষ হয়। বায়ারদের বিদায় দিয়ে রাদ মুরাদকে নিয়ে কেবিনে ফিরে। মুরাদ কাল রাতে সোহানার সঙ্গে দেখা হওয়ার ঘটনা খুলে বলে। রাদও খুব এনজয় করে বিষয়টি।
তাদের হাসাহাসির মাঝে ইসানা কফি নিয়ে হাজির হয়। রাদ স্বাভাবিক হয়ে বসে। দু’জনকে কফি দিয়ে ইসানা বেরিয়ে যায়।
‘কফি কিন্তু ওনি ভালো বানায় কি বলিস?’
‘ইয়াহ!’ রাদ জবাব দেয়।
‘তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।’
‘কী?’
‘লিসা আসছে আজ।’ বলতে বলতে মুচকি হাসে মুরাদ।
রাদ কিঞ্চিৎ বিরক্ত বোধ নিয়ে বলল,
‘কেন?’
‘আন্টি তাকে সিনিয়র অপারেটর হিসাবে নিয়োগ দিয়েছেন।’
‘মামনি আমাকে না বলে… ‘ লাস্টেরটুকু বলে না রাদ।
‘তিনি ভালো মনে করেছেন। আর এমনিতেও লিসা খুব ভালোভাবে তার দায়িত্ব পালন করবে। সঙ্গে তোরটাও।’ বলে ফিক করে হেসে দেয়।
রাদ রেগে একটি কলম নিক্ষেপ করে মুরাদের বাহুতে। মুরাদ তবুও হাসে। ইতিমধ্যে সেখানে লিসার আগমন ঘটে। মুরাদ হাত তুলে ‘হাই’ বললে লিসা খুশি হয়ে এগিয়ে এসে জোরপূর্বক জড়িয়ে ধরে। মুরাদ বিষয়টি স্বাভাবিক ভাবে নেয়। তারপর রাদের দিকে এগিয়ে যায়। রাদ বসা অবস্থায় আলিঙ্গন করে বসতে বলে। লিসা সম্পর্কে রাদের চাচাতো বোন হয়। রাদকে লিসা পছন্দ করে অনেক আগে থেকে৷ লিসাকে রাদ একদমই পছন্দ করে না। তার মামনির এই একটি কর্ম অপছন্দের তালিকায় পড়েছে। লিসাকে সিনিয়র অপারেটর বানাতে ঘোর আপত্তি তার।
‘আমি প্রচুর হ্যাপি রাদ। তোমার কোম্পানির অপারেটর বলে কথা।’ লিসা বিমোহিত কণ্ঠে শুধালো।
মুরাদ না চাইতেও লোক দেখানো হাসি প্রধান করে। রাদ গাম্ভীর্য বজায় রেখে লিসার কথা শুনেছে। লিসা ফের বলল,
‘এবার দেখবে কোম্পানি কোথা থেকে কোথায় নিয়ে দাঁড় করাই।’
‘চাঁদের দেশে ট্রান্সফার করবে নাকি?’ মুরাদ মজার ছলে বলে।
‘নো ইয়ার! টপে উঠাবার কথা বলেছি।’
‘ওহ!’
‘রাদ চলো বাহির থেকে ঘুরে আসি।’
রাদ পাশে রাখা ফাইল গুলো সামনে এনে দেখার ভাব করে বলল,
‘আমার কাজ আছে। তুমি বরং মুরাদকে নিয়ে যাও।’
মুরাদ লিসার অগোচরে ঠোঁট কামড়ে রাদকে শাসায়। লিসা তাকাতেই মুখশ্রী পরিবর্তন করে ফেলে হাসি ঝুলায় ঠোঁটে। লিসা মুরাদের হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে থাকে। বাজে ভাবে ফেঁসেছে সে। রাদ বুঝতে পেরে স্মিত হাসে। মুরাদ প্রতিজ্ঞা বদ্ধ হয়, এর উসুল নিবে। তারা চলে যেতেই রাদ রেহানা আনসারীকে কল দিলেন। মামনির সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারলেন তিনি তার সিদ্ধান্তে অটল। লিসাই সিনিয়র অপারেটর হিসাবে থাকবেন।
__
একঘন্টা পর…
লিসার বকবকানি শুনে মুরাদের অবস্থা করুন। ফুড গার্ডেন রেস্টুরেন্টে এসেছে তারা কফি খেতে। আধাঘন্টা যাবত লিসার বাচালতা চলছে। বিরক্তিকর কথাবার্তা শুনে মুরাদের মন চাইছে নিজের গলা নিজেরই চেপে ধরতে। শুধু পারছে না মানবতার খাতিরে কিচ্ছুটি করতে। আলরেডি তিন মগ কফি বিনাশ করেছে লিসা। অথচ মুরাদ এক কাপ নিয়ে ঝুলে আছে। পুনরায় লিসা কফি অর্ডার করার সময় কাল রাতের সেই মেয়েটিকে নজরে পড়ে তার। সোহানা ক্যাশ কাউন্টে বসে ছিল। এই রেস্টুরেন্টে চাকরি নিয়েছে। মুরাদের মাথায় বুদ্ধির দক্ষতা নাড়া দিয়ে উঠে। লিসার বকবকানি পুনরায় আরম্ভ করার পূর্বেই মুরাদ সোহানে দেখিয়ে বলল,
‘দেখো লিসা ঐ মেয়েটি আমার গার্লফ্রেন্ড। এতক্ষণে এসেছে কাজে। কতক্ষণ ধরে অপেক্ষা করতেছি। তুমি বোসো আমি আসছি লিসা।’
লিসা কিছুটা আহাম্মক হয়ে গেছে। মুরাদ নিজ রক্ষার্থে সোহানার নিকট এসে সরস বাক্যে সোহানাকে ডাকলো,
‘হ্যালো মিস!’
সোহানা চমকিত হয়ে চোখ তুলে তাকায়। কপাল কুঁচকে মুরাদকে দেখছে। মুরাদ পুনরায় বলল,
‘কথা বলছেন না কেন মিস?’
‘আপনি এখানে কেন?’
‘কফি খেতে এসেছি।’
‘তো কফি পান করুন। আমাকে ডিস্টার্ব করবেন না।’
‘আপনাকে ডিস্টার্ব না করলে আমি আপাতত মা*রা যাব মিস।’
‘মানে?’ বিস্ময়কর কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে সোহানা।
‘আসলে….’
‘তোমার গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে আমাকে পরিচয় করাবে না মুরাদ?’ বাকিটুকু বলার আগেই লিসা পিছন থেকে এসে বলল মুরাদকে। সোহানা ভেবাচ্যাকা খেয়ে তাকিয়ে রয়েছে। মুখ খুলে বলার পূর্বেই মুরাদ সোহানার গলায় ঝুলান আইডি কার্ড থেকে সোহানার নামটি পড়ে নিয়ে বলল,
‘এই হলো সোহানা। আমার এক পিস গার্লফ্রেন্ড। আর ও হচ্ছে লিসা। কাল রাতে আমাদের মধ্যে একটু কথা-কাটাকাটি হয়েছে এই জন্য রেগে আছে সোহানা।’
‘মানে কী?’ থতমত খেয়ে বলল সোহানা।
‘তুমি মানিকে মাগে হিতে গানটির কথা বলছো না? হ্যাঁ! গানটি শুনেছি আমি। খুব পছন্দ হয়েছে আমার। এবার প্লিজ রেগে থেকো না। নাম্বার ব্লক লিস্টে রেখো না। এই কার্ডের নিচের নাম্বারটি আমার কল দিও না না মিস কল দিও প্লিজ সেহানা!’ বলতে বলতে পকেট থেকে একটি ভিজিটিং কার্ড সোহানার নিকট এগিয়ে দেয় মুরাদ। লিসাকে টেনে নিয়ে যেতে যেতে উত্তেজিত হয়ে ফের মুরাদ বল,
‘মিস কল দিও জানু। আমি অপেক্ষা করব।’ রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে গেল তারা।
সোহানা নির্বোধ দৃষ্টিতে তাদের যাওয়া দেখেছে। তার কার্ডটি হাতে উঠিয়ে নিয়ে মুরাদের নাম জানতে পারে। তবে মুরাদের বলা আবল-তাবল বাক্যগুলো মাথায় ঢুকছে না। না আগামাথা বুঝেছে কিছু!
.
.
.
.
#চলবে?
#তোমায়_ছোঁয়ার_ইচ্ছে
#পর্ব_৬
#সুমাইয়া মনি
দু’টি ভ’য়া’ব’হ বি’প’দে’র হাত থেকে র’ক্ষে পেয়েছে মুরাদ।
নয়তো ভুগে ম’র’তে হতো তাকে। কিন্তু সে মনে মনে অপরাধ বোধ অনুভব করছে। তাকে মিথ্যা গার্লফ্রেন্ড বানানো ঠিক হয়নি। ফ্যাক্টরিতে পৌঁছে রাদকে বিষয়টি জানায় লিসা। আহাম্মকের মতো শুধু শুনেছে রাদ। লিসা বাহিরে যাওয়ার পর। মুরাদ পুরো বিষয়টি রাদকে জানায়।
‘গিল্টি ফিল করছিস?’
‘সঙ্গে অপরাধ বোধ কাজ করছে।’
‘কল দিয়েছে সোহানা?’
‘এখনো দেয়নি।’
‘ওয়েট কর।’
‘সব দোষ তোর।’
‘স্যরি!’ মৃদু হেসে বলল রাদ।
‘একদমই হাসবি না।’
রাদ তবুও হাসে। বাহিরে লিসা সবার সঙ্গে পরিচিত হয়ে নেয়। কিন্তু ইসানার সঙ্গে কথা বলে না। আগ বাড়িয়ে কথা বলতে এলেও লিসা গম্ভীর মুখশ্রী নিয়ে চলে যায়। কিছুক্ষণ বাদে যখন লিসা রাদের কেবিনে আসে রাদের মাধ্যমে জানতে পারে ইসানা ওর পি.এ। লিসা রাদকে আরো জিজ্ঞেস করে,
‘ওনি কোথায় থাকে?’
‘আমার বাড়িতে।’
‘হোয়াট?’
‘মামনি তাকে আমার পি.এ হিসাবে নিয়োগ দিয়েছেন।’
‘বাড়িতে থাকার মানে কি?’
‘তিনি আমার সার্ভেন্টও।’
‘ওহ! তাকে আপনি বলে সম্বোধন করছো যে?’
‘তিনি আমার এক-দেড় বছরের বড়ো।’
‘আচ্ছা!’ লিসা মনে মনে খুশি হয় বিষয়টি জেনে। যেটুকু মনে সংশয় ছিল ইসানাকে নিয়ে, সেটুকু কেটে গেছে লিসার।
_
‘হেই আপনি আমাকে গার্লফ্রেন্ড বলে সম্বোধন করলেন কেন? আমি তো আপনার গার্লফ্রেন্ড নই।’ ফোনে এক প্রকার চিল্লিয়ে বলল সোহানা।
‘বাঁচার জন্য মিস।’
‘স্পষ্ট করে বলুন।’
‘আমার সঙ্গে যে মেয়েটি ছিল। ওর বকবকানি থেকে রক্ষে পাওয়ার জন্য এই পদ্ধতি অবলম্বন করেছি মিস।’
‘হাইরে লজিক। মিথ্যা বলবেন না একদম।’
‘সত্যি বলছি মিস। পুরো বিষয়টির জন্য আমি দুঃখিত!’
‘দুঃখিত মাই ফুট!’
‘দেখা করুন আমার সঙ্গে মিস। ফুড গার্ডেনে আসবো?’
‘এবার বুঝি বউ বলে সম্বোধন করার বাকি আছে?’ মেকি রাগ নিয়ে বলল।
‘বললে খুশি হবেন কী?’ মুচকি হেসে বলল।
‘সেট-আপ! আপনি একটা অভদ্র লোক।’
‘দেখা করে ভদ্রতা শিখিয়ে দিন মিস।’
সোহানা রেগে চুপ করে রয়। কান থেকে ধোঁয়া বের হবার উপক্রম হয়েছে তার।
‘বেশি রাগ হচ্ছে মিস?’
‘আসুন আপনি!’
‘আসছি মিস।’
সোহানা কান থেকে ফোন সরিয়ে খট করে কেটে দেয়। রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে আছে তার। অন্যপ্রান্তে মুরাদ হাসে। সোহানাকে রাগান্বিত দেখতে তার বেশ লাগে।
__
রাতে…
ঘড়িতে সাতটা বাজে। রাদ ইসানাকে আগেভাগে বাড়ি যেতে বলেছে। লিসা ও মুরাদ আজ তার বাড়িতেই ডিনার করবে। এজন্য তাকে বাড়িতে ফিরে রান্না করতে হবে। টাইসনকে খাবার দিয়ে রান্নাবান্নার বাদ বাকি সরঞ্জাম গুছিয়ে নেয়। আরম্ভ করে তার রান্নাবান্নার কাজ। এদিকে সোহানা এখনো অপেক্ষা করছে মুরাদের জন্য। কাউন্টারে বসে বার বার গেটের দিকে উঁকি দিচ্ছে। অবশ্য সে চাইছে না এটি করতে। তবুও বারংবার চোখ সেদিকে চলে যাচ্ছে। আধাঘন্টা বাদে মুরাদ রেস্টুরেন্টে পৌঁছায়। আপাতত কাস্টোমার দের ভীড় একটু কম। ম্যানেজারকে বলে সোহানা ছুটি নিয়ে নে। মুরাদকে উপেক্ষা করে বাহিরে এসে দাঁড়ায়। মুরাদ ব্যাপারটি কিছুটা বুঝতে পেরে বাহিরে এসে সোহানার নিকট প্রশ্ন রাখে,
‘বাহিরে এলেন যে মিস?’
‘আপনার সঙ্গে ভেতরে বসে কথা বললে সবাই ভাববে আপনি আমার বয়ফ্রেন্ড। এজন্য বাহিরে এসেছি।’
‘গুড! তবে এখানে দাঁড়িয়ে কী আমরা কথা বলব মিস?’
সোহানা সেকেন্ড কয়েক পর জবাবে বলল,
‘সামনে চলুন।’
‘গাড়িতে বসুন।’
‘একদম না।’ বলে সোহানা হাঁটা ধরল। মুরাদ স্মিত হেসে গাড়িতে বসল। সোহানা ফুটপাত দিয়ে হাঁটছে, মুরাদ ওঁকে ফলো করে আস্তেধীরে গাড়ি এগোচ্ছে। রাস্তার শেষ মাথায় এসে সোহানা থামে। মুরাদ নেমে সোহানার কাছে আসে।
তৎক্ষনাৎ সোহানা রাগী কণ্ঠে শুধালো,
‘মিথ্যে কেন বলেছেন?’
‘রাগবেন না মিস! আমি বলছি। এক ঘন্টা যাবত বকবকানি শুনেছি লিসার। শেষে বিরক্ত হয়ে আপনি আমার গার্লফ্রেন্ড বার্তাটি জানিয়ে ওঁকে নিয়ে চলে গেলাম। বিলিভ মি মিস, গাড়িতে বসেও আমার মাথা অর্ধেক শেষ করে দিয়েছে আপনার বিষয়ে প্রশ্ন করে।’
সোহানা সরু চোখে তাকিয়ে বলল,
‘এটা বলার প্রয়োজন ছিল না।’
‘ঐ সিচুয়েশনে মস্তিষ্ক আমার ফাঁকা ছিল। স্যরি মিস।’
‘ইট’স ওকে! কিন্তু, পরেরবার আপনি আমার সামনে আসবেন না। অনুরোধ রইলো।’
‘জি, ধন্যবাদ মিস।’
সোহানা বিনাবাক্যে চলে যেতে নিলে পিছন থেকে মুরাদ বলল,
‘আসুন মিস বাড়ি পৌঁছে দেই!’
সোহানা হাঁটতে হাঁটতে জবাব দিলো,
‘বাড়ি চিনে রাখার ধান্দা!’
মুরাদ ফিক করে হেসে দেয়। বলে,
‘এতোটাও ছ্যাঁচড় মনে করবেন আমাকে মিস!’
সোহানা জবাব দিলো না আর। হেঁটে মুরাদের দৃষ্টিতে বাহিরে চলে গেলো। মুরাদ গাড়ি নিয়ে বাড়ি ফিরল।
.
ডিনারের সময় বকবক করে বাড়ি মাথায় তুলে রেখেছে লিসা। সকলের সঙ্গে টাইসনও বেশ বিরক্ত। শেষে রাদ বিরক্ত হয়ে লিসার উদ্দেশ্য করে বলল,
‘স্টপ লিসা। টাইসন বিরক্ত হলে তোমায় কাঁ*ম*ড় দিবে।’
লিসা ভীতিকর চোখে টাইসনের দিকে একবার তাকিয়ে বলল,
‘রিয়েলি?’
‘ইয়াহ! এজন্য চুপ থাকো। নয়তো কাঁ*মা*ড়…!’ মুরাদ তাল মিলিয়ে বলল।
‘ও মাই গড, চুপ থাকাই বেটার।’
‘ইয়েস!’ রাদ জবাব দিলো।
ইসানা মৃদু হাসে। মুরাদে মনে মনে বলল,
‘আগে যে কেন বললি না বে*টা!’
.
.
.
.
#চলবে?
কার্টেসী ছাড়া কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ।