তোমায় ছোঁয়ার ইচ্ছে পর্ব-৩৫+৩৬

2
2940

#তোমায়_ছোঁয়ার_ইচ্ছে
#পর্ব_৩৫
#সুমাইয়া_মনি

মৃদু রৌদ্দে দাঁড়িয়ে চকলেট খাচ্ছে ইসানা। এটি সে-ই চকলেট। যেটি যাওয়ার আগের দিন ওঁকে দিয়েছিল রাদ।
চকলেটটি খাওয়ার সময়কালীন কয়েকটি ছবি তুলে নেয়।
আরো বেশ কিছুক্ষণ ছাদে সময় অতিবাহিত করে। একটু পরেই মাগরিবের আজানের ধ্বনি শোনা গেল। টাইসনকে সঙ্গে নিয়ে ইসানা নিচে এলো। নামাজ পড়ার পর মামা-মামী ও শ্বাশড়ি মায়ের সঙ্গে কথা বলল। এখন রাদের সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে করছে। তার এ সুপ্ত ইচ্ছেকে মূল্যায়ন করল না। রাদ যদি নিজ থেকে কল দেয় তাহলে আজ সত্যি সত্যি কথা বলবে। এটা সে ভেবে রাখে। কিন্তু এমনটি হয় না। রাদ টেক্সট দেয় তাকে। চ্যাটিং এর মাধ্যমেই কথা হয় তাদের। ইসানা অনেকটা ফ্রী ভাবে কথা বলে এবং এ-ও জানতে পারে কাল সকালের ফ্লাইটে বাংলাদেশে ফিরছে সে। রাদের সঙ্গে চ্যাটিং শেষে সোহানার সঙ্গে কথা শুরু হয় তার।
‘সব ঠিকঠাক হলো কি?’
‘নাহ! আশা করছি হবে খুব শীঘ্রই।’
‘রাদকে এখন আর ইগনোর করে চলিস না। মুরাদের কাছে এ তিনদিনের কথা শুনলাম সব।’
‘রাদ মুরাদকে বলে দিয়েছে?’ কিঞ্চিৎ অবাক হয়ে জানতে চাইলো।
‘কী বলেছে? কিছু কি হয়েছে?’
‘শোন তাহলে।’
‘বল?’
ইসানা সংক্ষিপ্ত আকারে এ দু’দিনের কথা সম্পূর্ণ জানায়। সোহানা হেসে ফেলে। বলে,
‘টাইসন বাহবা পাওয়ার উপযুক্ত!’
‘হপ!’
‘যাইহোক, রাদ ফিরে আসলে নিজেদের মাঝে দূরত্ব ঘুচিয়ে নিস। অনেক তো শোধ নিলি। এবার তোর রাদকে সময় দেওয়া উচিত।’
‘ভাবছি আমি।’
‘ভাবনা বাস্তবে রুপান্তরিত করিস।’
‘আই ডু ইট!’
‘বাই।’
‘হুম।’ দু’জনে ফোন রেখে দেয়। ইসানা মনোযোগ দিয়ে রাদের কথা ভাবে। একটু আগে রেহানা আনসারী নিজের ছেলের ভুলকে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখতে বলেছেন। আগের ঘটনা ভুলে নতুনে সব ঠিকঠাক করার কথা জানিয়েছেন। সুরভী খাতুনেরও একই বক্তব্য ছিল। দু’জনার কথা ও সোহানার মন্তব্য শুনে ইসানা নিজেকে বোঝানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।
তার জীবনে অতি আপন বলতে সর্বপ্রথম রাদ ব্যতীত আর কেউ নয়!

রাত আটটার দিকে মিতু ফুড গার্ডেনের পাশে ইভানের জন্য অপেক্ষা করছে। ইভান তাকে নিয়ে বিয়ের কেনাকাটার জন্য বেরোবে। এজন্য তাকে এখানে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। দু পরিবারের সম্মতি আছে বিধায় বিয়ে আরো দু দিন এগিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিয়ে হবে বুধবার। আজ সোমবার। হাতে মাত্র একদিন সময় রয়েছে। অপেক্ষা করতে করতে হাঁপিয়ে উঠে মিতু। দূর থেকে ধূসর রঙের শার্ট পরিধান ইভানকে এগিয়ে আসতে দেখে বুকের মাঝে অদ্ভুত অনুভূত সৃষ্টি হয়। নজর সরিয়ে নেয় সে। সেকেন্ড কয়েক পরপরই ইভান তার নিকটে এসে দাঁড়ায়। অতি দূর হেঁটে এসেছে। সে নিজে হলে মিনিট অতিবাহিত হতো। তার আসতে সেকেন্ড কয়েক লেগেছে। মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় দুরন্ত পায়ে কমই হাঁটতে পারে। তাকে দেখে বুঝতে পারলো সে। মিতু চোখ তুলে তাকাতেই ইভান মুচকি হাসি প্রদান করে বলল,
‘স্যরি! অনেকক্ষণ অপেক্ষা করিয়েছি। আপনি গার্ডেনের ভেতরে বসে অপেক্ষা করতে পারতেন।’
ইভানের ঠোঁটের মুচকি হাসিটুকু দেখে মিতুর ক্লাম্তি ঘুচে যায়। মৃদু হেসে বলে,
‘সমস্যা নেই। চলুন।’
ইভান রিকশা ডেকে পাশাপাশি চড়ে বসে। তাদের নিয়ে আসা হয় নিউমার্কেটের সামনে। সেখান থেকেই কেনাকাটা হবে বিয়ের যাবতীয় যায়-জিনিস। ইভানের বিয়ের জন্য ম্যানেজার সালামি হিসাবে পঞ্চানো হাজার টাকা দেয়। তার সঙ্গে স্যালারিও বিশ হাজার দিয়ে দেওয়া হয়। এজন্য ইভান তার বিয়ের খরচাপাতি খেয়ালখুশি মতন করতে পারবে। প্রথমে মিতুকে নিয়ে একটি শাড়ির শপে ঢুকল। দু’জনার পছন্দমতো সেখান থেকে দুটো শাড়ি নিলো। ইভানের জোরাজুরিতে দু’টো সুতি শাড়িও বাছাই করতে হয় তাকে। শাড়ির দোকান থেকে জুয়েলারি শপে আসে। মিতুর জন্য কানের দুল আনতে বলেছে ইভানের মা। এজন্য দু’জোড়া স্বর্ণের দুল কিনে।
শাড়ির জন্য ব্লাউজ পিস কিনতে ব্লাউজের দোকানে মিতুকে নিয়ে ঢুকে৷ সুতোর কাজ করা কয়েকটি লাল, ব্লু রঙের ব্লাউজ কিনে। মিতু কিছুটা অপ্রস্তুত হয় যখন দোকানের কর্মচারী তাকে তার সাইজ জিজ্ঞেস করে। ইভানও বিষয়টি লক্ষ্য করে। সে কর্মচারীকে ব্লাউজগুলো সেখানে রেখে অপরপাশে গিয়ে দাঁড়াতে বলে। সে তাই করে। মিতু নিজের সাইজ অনুযায়ী চারটি ব্লাউজ সংগ্রহ করে। সেগুলোর পেমেন্ট দিয়ে ইভান মিতুকে নিয়ে বেরিয়ে আসে। বাদ বাকি কেনাকাটার পর বেশ রাত করে বাড়িতে ফিরে আসে তারা।
__
রাত পোহালেই রাদের আগমন হবে সকালে। নিজেকে তার সামনে কীভাবে স্বাভাবিক ভাবে উপস্থাপন করবে ভেবেই সে চিন্তিত হয়ে পড়ে। তার ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটে রাদের মেসেজ দেখে।
‘ঘুমিয়েছেন?’
‘নাহ!’
‘কী করছেন?’
‘কিছু না। আপনি?’
‘শুয়ে আছি।’
‘টাইসন কোথায়?’
‘ওর বিছানায়।’
‘সকালে দেখা হচ্ছে আপনাদের সাথে।’
‘ফ্লাইট কখন?’
‘রাত তিনটায়।’
‘এতক্ষণ জেগে থাকবেন?’
‘হ্যাঁ! উপায় নেই যে আর।’
ইসানা চুপ হয়ে রয়। রাদ লিখে,
‘ফিরে আসার পরও কী আমার সাথে কথা বলবেন না?’
ইসানা রাদের এই টেক্সট দেখে জবাব দেয় না। ফোন পাশে রেখে ঘুমানোর চেষ্টা করে। রিপ্লাই না পেয়ে রাদ ক্লেশময় ছোট নিশ্বাস ফেলে। তাদের মধ্যকার মনকষাকষি আর কতদিন যাবত চলবে অজানা তার।

পরদিন রাদ বাংলাদেশে ফিরে আসে। ইসানার জন্য চকলেট গন্ধরাজ ও গোলাপ ফুল মিশ্রিত বুফে নিয়ে আসে। ইসানা স্বাভাবিক ভাবে নেয় ঠিকিই কিন্তু রাদের পানে তাকায় না এবং মুখে কিছু বলেও না। ইসানা চলে যাওয়ার সময় রাদ বিরস মুখে বলল,
‘চললেট গুলো টাইসনকে না দিলে খুশি হবো।’
ইসানা মাথা দুলিয়ে ‘হ্যাঁ!’ সম্মতি জানায়। এতে ম্লান হাসে রাদ। আছরের পর ইভান তাদের বাড়িতে আসে। এড্রেস ফ্যাক্টরির এক কর্মচারীর থেকে নিয়েছিল। তাকে দেখে রাদ আন্দাজ করে বসে বিয়ের দাওয়াতের বিষয়টি। সে নিশ্চিত নিমন্ত্রণ করতে এসেছে। ইসানা চা-নাস্তা আনতে যায় ইভানের জন্য। এ ফাঁকে সুকৌশলে রাদ ইভানের সঙ্গে কথা বলার মাধ্যমে বিয়ের বিষয়টি জেনে নেয়। ভাবলেশহীন কণ্ঠে বলল রাদ,
‘বিয়ের দাওয়াত না দিলেও হতো।’
ইভান মৃদু হেসে বলল,
‘মা ইসানাকে দেখতে চেয়েছে। হয়তো কখনো ইসানা আমাদের বাড়িতে যাবে না৷ আমার বিয়ের অছিলায় যদি যায় তাহলে মায়ের ইচ্ছেটি পূরণ হতো।’
রাদ কিছু বলতে নিলে তখন ইসানা নাস্তা নিয়ে হাজির হয়। রাদ থেমে যায়। ইভানের হাতে চায়ের কাপ তুলে দিয়ে রাদের পাশাপাশি বসে। জিজ্ঞেস করে,
‘আন্টি কেমন আছে?’
‘ভালো আছে।’
‘কার্ড ছাপাতে পারিনি। ঘরোয়া ভাবে বিয়ে হচ্ছে। তাই তোমাকে ও তোমার হাসবেন্ডকে নিমন্ত্রণ করতে আসলাম।’
‘কবে বিয়ে?’ ইসানা জানতে চাইলো।
‘পরশু।’
‘ওহ!’
তাদের দু’জনার মাঝে আরো কথা হয়। রাদ নিরব শ্রোতার মতো শুনে। সে কিছুটা ক্ষোভিত হয় ইসানাকে স্বাভাবিক ভাবে ইভানের সঙ্গে কথা বলাতে দেখে। তবে সেটি বুঝতে দেয় না। ফোন ঘাঁটার বাহানা করছে সে। পরিশেষে ইভান যাওয়ার জন্য উদ্যোত হয়। এবং অকপটে জিজ্ঞেস করে,
‘ইসানা যাবে তো বিয়েতে?’
সেকেন্ড কয়েক চুপ থেকে ইসানা মৃদু হাসি প্রদান করে বলল,
‘ইনশাআল্লাহ! যাব।’
ইভান ম্লান হেয়ে চলে যায়। রয়ে যায় ইসানা ও রাদ। ইসানা সার্ভেন্টকে ডেকে চা নাস্তার ট্রেটি নিয়ে যেতে বলে রুমের দিকে এগোয়। রাদ তাকে পিছন থেকে ডেকে থামায়। বলে,
‘বিয়েতে যাওয়াটা কী খুব জরুরী?’
ইসানা প্রথম আঁখিযুগল বন্ধ করে নেয়। পরপরই খুলে সরু নিশ্বাস ফেলে ঘুরে তাকিয়ে বলে,
‘অতীতের ক্ষোভ মনে পুষে রাখতে চাই না। মুছে ফেলাই শ্রেয়।’
রাদ উঠে দাঁড়িয়ে গমগমে আওয়াজে বলল,
‘তাহলে আমার প্রতি কেন ক্ষোভ জমিয়ে রেখেছেন? স্বামী হিসাবে মেনে নিয়ে মুছে ফেলছেন না কেন আগের ঘটনা?’
ইসানা রাদের উৎসুক চাহনিতে চোখ রেখে বলল,
‘ক্ষোভ জমে থাকলে আপনার প্রশ্নের উত্তর টেক্সটে আসতো। সময়ের সাথে সাথে আমি আপনাকে স্বামী হিসাবে গ্রহণ করবো। সেই দিনের অপেক্ষায় থাকবেন নিশ্চয়।’ কথাগুলো চটপট গলায় বলে ত্যাগ করল ড্রইংরুম। রাদ নিজেকে ধাতস্থ করে। ইসানার সঙ্গে উঁচু স্বরে কথা বলতে না চাইতেও হয়ে যায়। কপালে আঙুল বুলিয়ে নিজের ক্ষোভকে নিয়ন্ত্রণ আনার চেষ্টা করে।
.
.
.
.
#চলবে?

#তোমায়_ছোঁয়ার_ইচ্ছে
#পর্ব_৩৬
#সুমাইয়া_মনি

সকালে নরমালি হাঁচি-কাশি হলেও। এখন রাদের সর্দি দ্বিগুণ ভেড়েছে। হালকা জ্বর জ্বর অনুভব হচ্ছে শরীরের ভেতরে। ইসানা গরম দুধ ও স্যুপ বানিয়ে নিয়ে এসেছে। তাকে খেতে দিয়ে মেডিসিনের বক্সে ঔষধ নাড়াচাড়া করছে। সেখান থেকে আপাতত সর্দির ঔষধ বের করে পাশে রাখল। স্যুপ খাওয়ার পর তাকে সেবন করতে বলবে। বাংলাদেশের তুলনায় আমেরিকায় শীতের প্রভাব তীব্র। ফ্লাইট সকালে হবার ফলে শীতল বাতাসের কারণে সর্দি হয়েছে। ইসানা রাদের নিকট এসে ঔষধের পাতা বিছানার ওপর রেখে বলল,
‘খাওয়া শেষে এটি খেয়ে নিবেন।’
‘আপনি কোথায় যাবেন?’
‘এশারের নামায পড়তে যাব।’
‘একেবারে নাপাও দিয়ে দিন। কারণ আমি আর কিছু খাব না। ঔষধ খেয়েই ঘুমবো।’
‘তাহলে স্যুপ আরেক বাটি খেতে হবে।’
রাদ কুর্নিশ করে তাকায়। ইসানা রাদের চাহনি ভ্রূক্ষেপ না করে রুম থেকে বেরিয়ে রান্নাঘরের দিকে এগোয়। এক বাটি গলা পর্যন্ত ভরপুর দিয়েছে। আরেক বাটি এমন হবে এটি তার বুঝতে বাকি থাকে না। খাওয়ার ইচ্ছে নেই বললেই চলে। মুখে তেতো ভাব অনুভব করছে। ইসানা আরেক বাটি নিয়ে ফিরে আসে। পাশের টেবিলে রেখে ঔষধের বাক্স বিছানার ওপর রেখে পাশের রুমে চলে যায় নামায কায়েম করতে। রাদ চামিচে উঠিয়ে খাওয়ার চেয়ে একেবারে টান দিয়ে খেয়ে ফেলে। পরের বাটিও এভাবেই শেষ করল। পরিশেষে দুধ খেয়ে ঔষধ খায়। গায়ে কম্বল জড়িয়ে বালিশে মাথা রেখে ঘুমানোর চেষ্টা করে। বেশকিছুক্ষণ পর ইসানা রুমে এসে দেখে রাদ নিদ্রায় বিভোর। ইসানা আহার সেরে ঘুমাতে আসল। ঘড়ির পানে তাকিয়ে দেখে এগারোটা ছুঁই ছুঁই। নজর সরিয়ে বিছানার ওপর ফেলে। রাদ বিছানায় ঘুমিয়েছে। সোফায় ঘুমাতে হবে তাকে। এটা ভেবে সে রাদের পাশের ফাঁকা স্থানে তাকায়। আর কিছু না ভেবেই রাদের অপর প্রান্তে এসে রাদের গায়ের একই কম্বল গায়ে টেনে বালিশে মাথা রাখল। ঘাড় ঘুরিয়ে রাদের ঘুমন্ত মুখশ্রীতে একবার দৃষ্টিপাত করল। খুব কাছ থেকে রাদের ঘুমন্ত মুখশ্রী দেখে অন্যরকম প্রশান্তি অনুভব হয় হৃদয়ে। আর্ট করা ভ্রু, মৃদু গোলাপি ঠোঁট জোড়া ও বন্ধ থাকা আঁখি ক্রমশে তার ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করছে। পিটপিট করে নজর সরিয়ে পর পরই আবার তাকায়। সে ক’দিন আগে রাদের অবর্তমানে ফাঁকা স্থানে হাত বুলিয়েছিল। আজ সে-ই স্থান পরিপূর্ণ! তার হৃদয়ে দোলা দিয়ে উঠে। কম্বলে মুখ লুকিয়ে ম্লান হাসে। পরমুহূর্তে টেবিল লাইট অফ করে দেয়।
সকাল বেলায় ইসানার নাকে মিষ্টি একটা সুভাষ এসে বারবারই লাগছে। চোখ খুলতে গিয়েও সুভাষের তীব্র গন্ধে মেলতে পারছে না। সুভাষটি কিছুটা নেশালো। আচমকা তার খটকা লাগে মনে এটি অতি আপন কাছের কারো পারফিউমের সুভাষ। দ্রুত চোখ মেলে দেখে রাদের বাহুডোরে আবদ্ধ আছে সে। লজ্জায় শরীরের ভেতরে প্রচণ্ড গরম অনুভব করে। ঈষৎ দুলে ওঠে সর্বাঙ্গ। রাদের শরীর বেশ গরম। সে কলেজে পড়াকালীন বান্ধবীদের মুখে শুনেছে ছেলেদের শরীরের তাপমাত্রা মেয়েদের শরীরের চেয়ে বেশি গরম হয়ে থাকে। তাহলে কি রাদের শরীরের তাপমাত্রা এজন্যই গরম, নাকি জ্বরের প্রভাবের ফলে গরম হয়ে আছে? তড়িঘড়ি করে সরে যেতে নিলে রাদ ঘুম জড়িত কণ্ঠে বলল,
‘প্লিজ সানা আরেকটু থাকো। বেটার ফিল হচ্ছে।’
বলতে বলতে রাদ আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
ইসানা রাদকে সরাতে পারলো না। চুপটি করে সেভাবেই রাদের বাহুডোরে বন্দী হয়ে রইলো। মিনিট কয়েক পর রাদের ফোন বেজে উঠলো। পাতলা হয়ে এলো তার ঘুম। চোখ মেলে ইসানাকে নিজের আষ্টেপৃষ্ঠে জড়ানো দেখে মুচকি হাসে।
ইসানা রাদের ঠোঁটে মুচকি হাসি দেখে নজর সরিয়ে নেয়। সরে যেতে চাইলে রাদ ছাড়ে না। মৃদুভাবে কপালে চুমু এঁকে দেয়। কোমল স্বরে বলে,
‘তোমায় ছোঁয়ার ইচ্ছে আমার প্রথম দাপ পূর্ণ হলো সানা।’
ইসানা লজ্জায় সেভাবে থাকতে পারে না। হাত সরিয়ে বাহুডোর থেকে নিজেকে মুক্ত করে উঠে যায়। রাদ উঠে বসে ঠোঁটের হাসি চড়া করে ফোন হাতে তুলে নেয়। মুরাদের কল পেয়ে ব্যাক করলো।
‘বল?’
‘আসবি কখন?’
‘একটু পরেই আসছি।’
‘জলদি!’
‘হুম, রাখ।’ ফোন রেখে রাদ ফ্রেশ হতে যায়। আগের থেকে সে এখন সুস্থ অনুভব করছে। সর্দি-কাশি কমেছে। নাস্তা খাওয়ার সময়ে ইসানা লজ্জায় রাদের পানে তাকাচ্ছিল না। নজর সরিয়ে রেখে খাবার সার্ভ করে খেয়েছিল। রাদ রেডি হয়ে এসেছিল। খাওয়া শেষে চলে যাওয়ার সময় ফিরে এসে ইসানার কানের কাছে ঝুঁকে ফিসফিস করে বলে,
‘আজ সকালটা আমার জীবনের বেস্ট মুহূর্তের একটি অধ্যায় হিসাবে গন্য। ধন্যবাদ!’
বলে চলে যায় রাদ। রাদের কাছে আসা ইসানার হৃদয়ে তোলপাড় ঝড় তুলেছে। ওর স্পর্শ জাদুর মতো তার অস্তিত্বকে ছুঁয়ে দিয়েছে। লজ্জা ও অনুভূত তাকে ঘিরে রেখেছে। নড়াচড়া করতেই শরীর ভারী অনুভব হচ্ছে। এ অনুভূতি তার অজানা! ক্ষণে ক্ষণে যেন নতুন অনুভূতির অধ্যায় প্রকাশ পাচ্ছে সে।
.
‘মা চিতয় পিঠা কেন বানাচ্ছ? তুমি তো জানোই আমরা দু-ভাই বোন এই পিঠা পছন্দ করি না।’ শালিনী কপাট কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল।
তিনি বললেন,
‘এই পিঠা ইসানার পছন্দের। ওর জন্য বানাচ্ছি।’
‘নতুন বউয়ের জন্য পিঠা বানানো রেখে প্রাক্তন বউয়ের জন্য পিঠা বানাচ্ছ। এ তোমার কেমন বি’চা’র?’
‘কে বলেছে নতুন বউয়ের জন্য পিঠা বানাবো না। ওর জন্য তিন-চার রকমের পিঠা বানানো হবে। এই পিঠাটা বার্তি বানাচ্ছি শুধু মাত্র ইসানার জন্য।’
শালিনীর চোখ-মুখ রাগে ঘুচে এলো। বলল,
‘তোমার অহেতুক আদিখ্যেতা আমার ভালো লাগে না। ওর জন্য পিঠা বানানোর কোনো প্রয়োজন ছিল না। আসবে কি আসবে না সেটাও তো তুমি শিওর জানো না।’
‘আমার মন বলছে আসবে। ইসানার মন তোর মতো পাথর না। নিজের অহংকার বিসর্জন দে এবার। অনেক তো হলো।’
‘মা তুমি তো দেখছি ইসানার ভক্ত হয়ে গেছো?’ রাগী কণ্ঠে শুধালো।
তিনি আর কিছু বললেন না। এ মুহূর্তে নিজের মেয়ের সঙ্গে তর্কে না জড়ানোই শ্রেয় বলে মনে করেন। নয়তো লোক ভর্তি আত্মীয়দের সামনে সিনক্রিয়েট করে বসবে। বাকি বাজার করে ইভান বাড়ি ফিরে। তিনি শালিনীকে চিতয় পিঠা দিতে বলে ইভানকে। শালিনী মুখ ভার করে পিঠা নিয়ে ছোট ভাইয়ের নিকট এগিয়ে যায়। ইভান চিতয় পিঠা দেখে সরস নয়নে তাকায়৷ তারপর এক পিস হাতে তুলে খেতে আরম্ভ করে। শালিনী কিছুটা বিরক্ত হলো ইভানকে খেতে দেখে।
__
মিটিং শেষে রাদ নিজের কেবিনে এসে বসলো। পিছু পিছু মুরাদও এলো। নতুন কাপড়ের সেম্পল নিয়ে বেশকিছুক্ষণ কথা হয়। তারপর সে-সব রেখে নিজেদের বিষয়ে আলাপন জুড়ে।
‘হানিমুনে যাওয়াটা জরুরী রাদ।’
‘কয়েক মাস পরে গেলে ভালো হয়।’
‘নাহ! আম্মু-আব্বু নাতি-নাতনির জন্য পাগল করে ফেলছে।’
‘এতে হানিমুনে যাওয়ার কি দরকার। তুই তো বাড়িতেই ডাউনলোড দিতে পারিস।’ মুচকি হেসে বলল।
‘শা’লা ফাজলামো রাখ। সোহানাকে নিয়ে ঘুরতে যেতে চাই। তোদের ছাড়া একা যেতে ইচ্ছে করছে না।’
‘আগে সানাকে রাজি করাতে হবে।’
‘বাসায় গিয়ে বলিস।’
‘ওকে।’
‘আর শোন, তুইও আমার মতো ডাউনলোড দেওয়ার চেষ্টা করবি।’ মুরাদ এটি বলে হেসে ফেলে। রাদও হেসে দেয়।
.
আটটার দিকে রাদ বাড়ি ফিরে। ইসানা রাদের জন্য নিজ থেকেই কফি বানিয়ে টেবিলের ওপর রেখে ড্রইংরুমে চলে আসে। টাইসনও সেখানে ছিল। দু’জনে একত্রে বসে কার্টুন দেখছে। রাদ ফ্রেশ হয়ে তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। ইসানার মনোযোগ ছিল টিভির ওপর। রাদ এক পলকে ইসানাকে দেখে তারপর টিভির পানে তাকিয়ে বলে,
‘শুনুন একটা কথা ছিল?’
‘কথাটা নিশ্চয় হানিমুনে যাওয়া নিয়ে?’ টিভির পানে তাকিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করে ইসানা।
রাদের কপালে কিঞ্চিৎ ভাজ দেখা যায়। সে ইসানার পানে সবিস্ময় হয়ে তাকিয়ে বলল,
‘আপনি জানলেন কীভাবে?’
‘সোহানা জানিয়েছে মুরাদ ভাইয়া নাকি যাওয়ার জন্য ফোর্স করছে ওঁকে।’
‘ও! এখন আপনার মতামত কী?’
‘বাড়িতে থেকে প্রতিদিন নিরামিষ খাবার খেয়ে যদি বেড়াতে গিয়েও নিরামিষই খেতে হয়, তাহলে তো সেখানে গিয়ে লাভ নেই।’ রাদকে এক পলক দেখে নিয়ে কথাটি বলল। সপ্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাদ। ইসানার কথা আগামাথা বুঝে উঠতে পারছে না। এখানে নিরামিষ খাবারের আইটেম কোথা থেকে আসলো বুঝছে না। সে বলল,
‘বুঝিয়ে বলুন।’
‘বুঝে নিন।’ বলে ইসানা রুমে এলো। রাদ ফ্লোরের পানে চেয়ে কথাটা মিলনোর চেষ্টা করছে। ইসানা রুম থেকে উঁকি দিয়ে রাদকে ভাবুক দৃষ্টিতে দেখে একটা টেক্সট পাঠালো। লিখা ছিল,
‘আমাদের মধ্যকার সম্পর্ক ঠিক না হলে হানিমুনে গিয়ে লাভ নেই।’
টেক্সট দেখে রাদ এবার ইসানার কথার মানে বুঝতে পারে। ম্লান হাসে সে। ইসানা কথাটা ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বলেছে। তাই তার বুঝতে অসুবিধা হয়েছে। রাদ তৎক্ষনাৎ রুমে আসে। ইসানা শুঁখনো কাপড়চোপড় ভাজ করে আলমারিতে রাখছিল। রাদ মৃদু শব্দের ব্যবহার করে গেট লাগায়। ইসানা পিছনে ঘুরে রাদকে গেট লাগাতে দেখে আ’ত’ঙ্কে চটজলদি আগের ন্যায় ঘুরে দাঁড়ায়। রাদ ইসানার পিঠের পানে চেয়ে শার্টের উপরের বোতাম খুলে এগিয়ে আসে। ইসানা থাইগ্লাসের আয়নার মাধ্যমে রাদকে এগিয়ে আসতে দেখে ভীত হয়ে যায়। বরাবর ওড়না ঠিকঠাক করতে থাকে। রাদ একদম ইসানার পিঠের কাছাকাছি এসে দাঁড়ায় ঈষৎ কেঁপে উঠে সরে দাঁড়ালো ইসানা। রাদ পুনরায় ইসানার পিঠের দিকে এগিয়ে কানের কাছে ঝুঁকে বলল,
‘আমরা চাইলে সম্পর্কের মধ্যকার দূরত্ব ঘুচিয়ে ফেলতে পারি, চলুন?’
ইসানা ঘুরতেই রাদের উ’ন্মু’ক্ত খো’লা বুকের পানে নজর পড়ে। দ্রুত নজর নিচু করে বলল,
‘বাঁ’ধা দেবো না।’
‘আপনার অনিচ্ছাকৃত ভাবে অধিকার ফলাবো না।’
‘একদিন অপেক্ষা করুন।’ স্বাভাবিক ভাবে বলল ইসানা।
‘হোয়াই?’
‘আমি নামায পড়ছি না চারদিন হলো?’
রাদ কপাল কুঞ্চন করে বলে,
‘কাল যে বললেন নামায পড়তে যাচ্ছেন এশারের।’
‘মিথ্যা বলেছি। যাতে আপনি সোফায় না ঘুমিয়ে বিছানায় ঘুমান এজন্য। দুঃখিত!’ কিছুটা অ’প’রা’ধী কণ্ঠে শুধালো। রাদ মুচকি হাসে। বলে,
‘নেক্সট টাইম সিক্রেট রাখবেন না। কাল আমি আপনার জন্য অপেক্ষা করব। আই হোপ আপনি আমাকে আমার পুরো অধিকার দিয়ে মন থেকে মেনে নিবেন।’
ইসানা হ্যাঁ! নাহ! কিছু বলছে না। সে নিরুত্তর। লজ্জায় তার শরীর যেন কাঁপছে। এত শীতের মধ্যেও সে ঘামছে। বুকে ক্রমাগত ধুকপুক শব্দ বেড়ে চলেছে। রাদ শার্টের বোতাম লাগিয়ে ফের বলল,
‘উত্তর দিতে হবে না। তৈরী থাকবেন।’ পুরো বাক্য শেষ করে রাদ রুম ত্যাগ করল। ইসানা ওড়নার দ্বারা ঘাড়ের ঘাম মুছে বিছানায় বসল। নিজেকে ধাতস্থ করার যথেষ্ট চেষ্টা করছে।
এমন নয় যে সে রাদকে ঘৃ’ণা করে। সে-ও পছন্দ করে। নেই তার ওপর কোনো প্রকার রাগ-ক্ষোভ। তবে কী রাদের মতো সে নিজেও তাকে ভালোবাসে?
.
.
.
#চলবে?

কার্টেসী ছাড়া কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ।

2 মন্তব্য

  1. ধেৎ ফালতু লেখিকা …একটা…
    …একটা ছেলের স্বভাব মেয়ে টাইপের করে ফেলেছেন….
    হুদাই ইসানা রাদের উপর প্রতিশোধ নেয়াটা পুরাই ফালতু লেগেছে…
    কিসের রাদের অম্যজায়গাগুলোতে মেজাজ দেখানো উচিৎ ছিলো….
    গল্পটা মাঝেরদিকে এসে আর‌ভালো লাগেনি…😈😈😈😈😈‌‌

  2. গল্পটা maybe শুধু মেয়ে রিডার্সদের জন্যি বানিয়েছেন লেখিকা…..
    উনি ছেলেদের সম্পর্কে কোনো জ্ঞান রাখেননা….🙄😞😞😞.
    গল্পটা পড়ে খুব-ই আশাহত হয়েছি…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে