#তোমায়_ছোঁয়ার_ইচ্ছে
#পর্ব_৩১
#সুমাইয়া_মনি
‘বৈরাগী হয়ে গেলি নাকি মুরাদ? কল দিচ্ছি ধরছিস না যে।’ রাদ হেসে জিজ্ঞেস করল ফোনের অপর প্রান্তে থাকা মুরাদকে।
‘হয় নি। হবো ভাবছি।’ শুঁখনো মুখে উত্তর দিলো।
‘হয়ে যাহ! আমি তোকে তিন তারা কিনে দিবো।’ ফিক করে হেসে দিলো কথাটি বলতে বলতে।
‘চুপ কর। গরম তেলে পানি ছিঁটাবি না।’ ঝাড়ি দিয়ে বলল।
‘এছাড়া আর করতেই বা কি পারি বল।’
‘ডুবে মা’রা যাহ।’
‘বিধবা করতে চাই না সানাকে। এখন কাজের কথায় আসি শোন। পরশু আমেরিকায় যেতে হবে আমাদের।’
‘তো যাহ!’
‘আমার সঙ্গে তুইও যাচ্ছিস।’ বলে মিটমিটিয়ে আসলো রাদ।
‘আর কোনো রাশিফারা আছে? সেটাও বলে দে। জীবনটা আমার ভা’ঙা ঢোল হয়ে গেল।’ করুণ কণ্ঠে বলল মুরাদ।
রাদ এক গাল হেসে বলল,
‘চলে আসবো তিনদিনের মধ্যেই। যাবি না?’
‘না করেছি নাকি।’
‘তাহলে যাচ্ছি আমরা।’
‘হয়।’ অতি কষ্টে ছোট করে জবাব দিলো।
‘রাখলাম।’ বলে ফোন রেখে দিলো রাদ।
বেলকনি থেকে রুমে এসে দেখে ইসানা ঘুমানোর জন্য বিছানা ঠিকঠাক করছে। পাশে দাঁড়িয়ে বলল,
‘পরশু আমেরিকায় যাচ্ছি। এর আগে কি মুখে কথা বলবেন না আমার সঙ্গে সানা?’
ইসানা লিখলো,
‘নাহ!’
টেক্সট দেখে রাদ সরু নিশ্বাস ফেলল। বলল,
‘আপনার মর্জি। আমি আর ফোর্স করব না আপনাকে।’
‘থ্যাঙ্কিউ।’ টেক্সটটি পড়ে রাদ বাঁকিয়ে তাকায় ইসানার পানে।
এ জন্মেরশোধ ঠিকিই উসুল করে নিবে সে। সেটা বুঝতে অসুবিধা হলো না রাদের। সোফায় চিৎ হয়ে শুয়ে ইসানার পানে তাকায়। ইসানা টেবিল লাইট অফ করে গায়ে কম্বল জড়িয়ে নেয়। রুমটি পুরোপুরি অন্ধকার হয়নি। ডিমলাইটের আলোয় আবছা আবছা দেখা যাচ্ছে চারদিক। রাদ কিছুক্ষণ ফোন ঘাটাঘাটি করে নিদ্রায় তলিয়ে যায়।
.
ব্রেকফাস্ট বানিয়ে টাইসনকে দিয়ে রাদের নিদ্রা ভঙ্গন করায়। তারপর একত্রে খেয়ে নেয়। আজও রাদ ফ্যাক্টরিতে যাবে না। আমেরিকায় যাবে বিধায় আজকের দিনটি ইসানার সঙ্গেই বাড়িতে কাঁটাবে বলে ভাবে। ইসানা এঁটো থালাগুলো নিয়ে চলে যাওয়া ধরলে রাদ থামিয়ে সার্ভেন্টদের হুকুম করে। টাইসনকে সঙ্গে নিয়ে ইসানা রুমে আসল। রাদও ইতিমধ্যে পৌঁছালো। ইসানার উদ্দেশ্যে বলল,
‘সানা শুনুন, আমার ব্যাগ গুছিয়ে রাখবেন।’
টেক্সট করল,
‘বলেন কী কী গুছাবো।’
‘আলমারিতে আছে সব। দু পিছ করে শার্ট-প্যান্ট, টি-শার্ট, আ’ন্ডা’র’ও’য়্যা’র…..’ বাকিটা বলার পুর্বে ইসানা হাত জাগিয়ে থামায়। লিখে বলল,
‘গুছিয়ে রাখব।’
রাদ স্মিত হাসলো। ইসানা টাইসনকে পাশে রেখে রাদকে ইগনোর করে শ্বাশুড়ির সঙ্গে কথা বলতে লাগলো। কিছুটা জ্বলন হতে শুরু করে তার হৃদয়ে। এড়িয়ে বাহিরে বের হয়।
__
ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছে মুরাদ। সোহানা পিছন থেকে এসে বিছানায় বসে। ব্যঙ্গ করে বলল,
‘আজ-কাল দেখছি আমাকে কেউ একজন এভয়ড করে চলছে।’
মুরাদ গুরুগম্ভীর কণ্ঠে বলল,
‘কেউ একজন কেন। সরাসরিই বলো আমি তোমাকে এভয়ড করে চলছি।’
‘যাক, তাহলে বুঝতে পেরেছো। কাল নাকি আমেরিকায় যাচ্ছো? কাপড়চোপড় গুছিয়ে দিবো?’
‘লাগবে না। আমিই গুছিয়ে নিবো।’ কোমল স্বরে বলে রুম থেকে বের হতে চাইলে পিছন থেকে জ্যাকেট খামচে ধরে কাছে টেনে পিছন থেকেই মুরাদকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে।
হাসিমুখে নরম স্বরে বলে,
‘আমার মি. অভিমান করেছে। মিসের দায়িত্ব তার অভিমান ভাঙানো। তা বলুন আপনার অভিমান কী করলে ভাঙবে?’
মুরাদ মৃদু হাসে। স্বাভাবিক ভঙিতে ফিরে সোহানাকে কাছে টেনে বলে,
‘ভালোবাসা চাই তার।’
‘পাবেন। বাট..’
‘সবুরে মেওয়া ফুটে।’
‘বুঝেছেন তাহলে।’ বলে হেসে দেয়। মুরাদও হাসে।
‘বাহিরে যাচ্ছি। তোমার কিছু লাগবে?’
‘উহু!’
‘ওকে।’ বলতে বলতে কপালে চুমু দিয়ে বেরিয়ে এলো বাহিরে।
.
লিসা ইসানার সঙ্গে দেখা করার জন্য এসেছে। সঙ্গে কিছু চকলেট ও মিষ্টি নিয়ে। ওদের বিয়েতে লিসা ছিল না। পর’দিনই চলে গেছে বাড়িতে। আজ বাড়ি থেকে সরাসরি ইসানা ও রাদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছে। দুর্ভাগ্য বশত রাদ ছিল না। ইসানা বাসায় একা ছিল। চা-নাস্তা খাওয়ার পর গল্পগুজব করছে তারা।
‘আমি আপনাকে আপু বলেই ডাকব। ভাবি বলতে পারব না। আপনি কি এতে রাগ করবেন?’
‘না। তুমি বলতে পারো আপু।’
কৃত্রিম হেসে লিসা বলল,
‘আমেরিকায় থাকতে আমি জানতে পারি রাদ আপনাকে ভালোবাসে। এটা মুরাদের কাছে জানার পর আমার ভীষণ রাগ হয়েছিল। আমি প্রচণ্ড রেগে আপনার কাছে যেতে চাইলাম। মুরাদ আমাকে আঁটকায়। আপনার সম্পর্কে সব বলে। প্রথমে আপনার অতীতের কথা জানতে পারি। তারপর জানতে পারি আন্টি নাকি আগে থেকে আপনার সঙ্গে রাদের বিয়ের কথা বলে রেখেছে। আমি আপনার অতীত জেনে নিজেকে আপনার স্থানে দাঁড় করিয়ে দেখলাম। কতোই না কষ্ট করেছেন আপনি। রাদের ভালোবাসার সুখটুকু কেঁড়ে নিতে চাইনি। তাই দূরে সরে গিয়েছি। ভাগ্যগুণে আপনি রাদকে পেয়েছেন আপু। ওঁকে তো আপনি চিনেনই। জানি বিয়েটা জেদের বশে করেছিল আগে। সেটা আপনাকে পাওয়ার জন্যই করেছে। মন থেকে রাদকে মাফ করে দিবেন আপু। তবে হয়তো রাদকে না পাওয়ার আফসোস কখনোই ঘুচবে না আমার।’ মলিন স্বরে কথাটা বলে চুপ হয়ে যায় লিসা। ইসানা লিসার মনস্তাপ বুঝতে পারে। নিরবে নিঃশব্দে সরু নিশ্বাস ছাড়ে। লিসা চটজলদি বলে,
‘এনিওয়ে, অনেক কথা বললাম। এখন উঠি। ভালো থাকবেন আপনারা। আর দেখা হবে না।’
‘কেন?’
‘আমি আমেরিকায় চলে যাচ্ছি। সেখানে আমার নতুন জব হয়েছে।’
‘হঠাৎ কেন?’
‘নিজেকে নতুন ভাবে গড়ে তুলতে। এখন যে-ই আফসোসটা হচ্ছে। সেটা হয়তো কয়েক বছর পর নাও থাকতে পারে। এই আশায়।’
‘তুমি জীবনে ভালো জীবন সঙ্গী পাবে, ইনশাআল্লাহ!’
‘দোয়া করবেন আপু।’
‘অবশ্যই!’
লিসা বিদায় নিলো। ইসানার মনে রাদকে নিয়ে ভাবনাচিন্তা উদয় হলো। পরিশেষে সেগুলো পাশে ফেলে রান্নার কাজে মনযোগ দিলো।
দুপুরে ফিরার সময় রাদ একটি গোলাপ ও চকলেট নিয়ে ড্রেসিং টেবিলের ওপর রেখে একটা টেক্সট করে শাওয়ার নিতে গেল। ইসানা রুমে এসে ফোন চেক করে টেক্সট দেখে ড্রেসিং টেবিলের পানে তাকায়। গোলাপটি ভালো করে লক্ষ্য করে সুভাষ নিয়ে জায়গা মতো রেখে দেয়। এরকম সেইম মিল্ক চকলেট ইসানার কাছে ছিল। আলমারির ঢয়ার খুলে এটি সেখানে রেখে আগের চকলেটটি বের করে টাইসনকে খাওয়াতে থাকে। রাদ শাওয়ার শেষে বাথ রোব জড়িয়ে চুল মুছতে মুছতে বের হয়। টাইসনকে চকলেট খাওয়াতে দেখে ভীষণ ক্ষোভ হয়। দু কদম এগিয়ে এসে তেজি কণ্ঠে বলল,
‘ওটা আপনার জন্য এনেছি।’
ভ্রূক্ষেপ নেই ইসানার। রাদের কথায় গুরুত্ব দেয় না দেখে টাওয়াল বিছানায় ছুড়ে শার্ট-প্যান্ট আলমারি থেকে বের করে অন্যরুমের দিকে এগোয়। ইসানার রাদের যাওয়ার পানে চেয়ে মুচকি হাসে। ওঁকে কিঞ্চিৎ রাগাতেই তার এই কর্মসূচি। বিড়বিড় করে বলে,
‘আমি এতটাও বোকা নই যে আপনার দেওয়া চকলেট টাইসনকে খাওয়াবো। কারো দেওয়া তিল পরিমাণ বস্তুও আমার কাছে মহামূল্যবান। আর আপনি তো আমার….।’ থেমে গিয়ে বড়ো নিশ্বাস নিলো। গোলাপটি কাঁচের গ্লাসে পানি দ্বারা ডুবিয়ে রাখলো। অর্ধ চকলেটটি টাইসনের মুখে পুরে ড্রইংরুমের দিকে এগোয়।
.
.
.
#চলবে?
#তোমায়_ছোঁয়ার_ইচ্ছে
#পর্ব_৩২
#সুমাইয়া_মনি
পুরোবাড়ি নিরব ফাঁকা লাগছে রাদ চলে যাওয়ার পর। ইসানা বিষয়টি অনুভব করে অস্বস্তি বোধ করে। যাওয়ার সময়েও মুখে কোনো বাক্য বলেনি। আগের ন্যায় টেক্সটের মাধ্যমে বার্তা প্রদান করেছেন। রাদ মনঃক্ষুণ্ন করে বেড়িয়ে গিয়েছে। তবে সে আশাবাদী ফিরে আসার পর ঠিকিই কথা বলবে।
ইসানা রুমে ফিরে দেয়ালে টাঙানো ছবিটির ওপর লক্ষ্য করে।
যাওয়ার সময় এই ছবিটি দেয়ালে টাঙিয়ে দিয়ে গেছে। এবং বলে গেছে, ‘তার কথা মনে পড়লে ছবির পানে চেয়ে বাক্যবিনিময় করতে।’
বিনাবাক্যে শুনেছে রাদের কথা। আগ্রহ দেখিয়ে কিছু বলেনি।
স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ছবিটি দেখে। রাজকীয় নরম আসনে বসে ঘাড় মৃদু কাত করে চিত্রটি তোলা হয়েছে। চেহারায় শোভনীয় সুদর্শন ভাব স্পষ্ট!
হাস্যমুখ বিহীন গম্ভীর ভাব তার আদলে। বেশ চমৎকার মনোমুগ্ধকর হয়েছে চিত্রটি। কিছু একটা ভেবে ইসানা নজর সরিয়ে ফেলে। টেক্সট করে জিজ্ঞেস করে আমেরিকায় পৌঁছেছে কি-না। উত্তর আসে ওপর প্রান্ত থেকে।
‘হ্যাঁ!’
ইসানা জবাবে কিছু লিখে না। ফোন রেখে দিবে এমতাবস্থায় ফোনের টোন শুনে দ্রুত নজর ফেলে।
‘টেক কেয়ার সানা।’
ইসানার বুকে অদ্ভুত অনুভূতির উগ্রতা আবিষ্কার করে। বদনখানায় মলিন ভাবে কিছু একটা স্পর্শ করল। দ্রুত ফোন রেখে বিছানার চট করে বসে যায়। এদিক-ওদিক আঁখিযুগল ছোটাছুটি করে নিজেকে ধাতস্থ করার প্রচেষ্টা চালায়।
_
পিকাপ দ্বারা কাপড় ডেলিভারি করতে বেরিয়েছে ইভান। ফ্যাক্টরির সঙ্গে ডেলিভারির দায়িত্ব এখন তার কাঁধে। মেইন রাস্তা থেকে সরু গলিতে ঢুকতেই গাড়ির গতি বাড়িয়ে দেয়।
তৎক্ষনাৎ একটি মেয়ে সামনে চলে আসায় জোরে ব্রেক কষে। মেয়েটি নিজের রক্ষার্থে ভীতু হয়ে দু হাত সামনে তুলে আদল ঢেকে ফেলে। ইভান ড্রাইভারকে দু চারটে কঁড়া কথা শুনিয়ে গাড়ি থেকে নেমে আসে। মেয়েটি নিজেকে সুস্থ সবলা দেখে পুরুষালী কণ্ঠ শুনে তার পানে তাকায়। ইভান এগিয়ে এসে ভদ্রতাসূচক ভাবে জিজ্ঞেস করে,
‘আপনি ঠিক আছেন?’
মেয়েটি মৃদুস্বরে বলল,
‘হ্যাঁ!’
‘স্যরি! আসলে তাড়াহুড়োয় ছিলাম তো। তাই দ্রুত গাড়ি ছুড়াচ্ছিল। আপনি কোথায় যাবেন বলুন। আপনাকে পৌঁছে দিচ্ছি আসুন।’
‘লাগবে না। আমি যেতে পারব।’
‘না, আপনি আসুন। না হলে বুঝবো আপনি স্যরি এক্সেপ্ট করেননি।’
‘করেছি। আপনারা যেতে পারেন।’
‘আপনি আসুন প্লিজ।’
ইভানের ভদ্রতাসূচক আবদারে মেয়েটি পিকাপে চড়তে রাজি হয়। সামনের সিটে ড্রাইভার সহ তারা তিনজন উঠে বসে। তিনজনই হ্যাংলা-পাতলা হওয়ায় বসতে অসুবিধা হয় না।
গাড়ি চলাকালীন পরিচয় হয় তাদের। মেয়েটির নাম মিতু।
পরিবারের বড়ো মেয়ে। তিনবোন। ভাই নেই। বাবার অকালে মৃ’ত্যু’তে সংসারের হাল নিজেকে ধরতো হয়। অনার্স প্রথম অব্ধি পড়া হয়। তারপরই সমাপ্ত। এখন দু বোনের পড়াশোনা ও সংসারের জন্য টিউশনি করিয়ে উপার্জন করতে হয় তাকে। সেখান থেকেই ফিরছিল। পথিমধ্যে অঘটনের হাত থেকে রক্ষে হলো। পরিচয় পর্বের মাধ্যমে বাড়ির কাছে চলে আসে। গাড়ি থেকে নেমে ইভানকে বিদায় জানায়। তারা এগোয় তাদের গন্তব্যে। দু পাশে দেয়াল ও উপরে চাল দিয়ে নির্মিত দু’টি রুমে ভাড়া থাকে তারা। এই এড়িয়ায় প্রাই চালাঘর দেখা যায়। বিল্ডিং রয়েছে পাশের গলিতে।
‘এ রাস্তায় পিকাপ আসলো কোথায় থেকে মিতু?’
‘আজ একটুর জন্য রক্ষে হলো মা।’
‘কী হয়েছে?’ অবাক হয়ে জানতে চাইলেন।
মাকে ঘটনাটি বললেন। তিনি বিচলিত হয়ে বললেন,
‘কোথাও লেগেছে তোর?’
‘নাহ! তবে ইভান লোকটা ভালো ছিল। আচার-আচরণ যথেষ্ট মার্জিত।’
‘কোথায় থাকে? কি করে?’
ইভাবের আলাপের খই ফুটে মিতুর মুখে। বোনরাও পাশ থেকে শুনছে।
__
‘কি করছো সোনা।’ বাক্যটি সম্পূর্ণ করে বালিশে ঠেস দিয়ে বসল মুরাদ।
‘খেয়ে বসলাম। তুমি খেয়েছো?’
‘নাহ! খেতে যাব।’
‘এখনো যাও নি। দ্রুত যাও। রাদ ভাইয়া কোথায়?’
‘কাছেই রয়েছে।’ রাদের পানে এক পলক চেয়ে বলল।
‘তাকে নিয়ে খেতে যাও। পরে কথা বলি।’
‘ওঁকে বেবি।’ বলতে বলতে ফোন রেখে দিলো।
মুরাদ সোজা হয়ে বসে রাদের উদ্দেশ্যে বলল,
‘যাবি নাকি আরো কাজ করবি?’
‘যাব।’ ল্যাপটপের পানে চেয়ে জবাব দিলো রাদ।
‘চল। খিদে পেয়েছে।’
‘সোহানা আপু তোকে তুমি করে বলে?’
‘হ্যাঁ!’
রাদ ল্যাপটপ বন্ধ করে মুরাদের নিকট নজর তাক করে বলল,
‘আমি যে তুমি বলা অধিকার কবে পাব।’ বলার শেষে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল৷
‘পাবি একদিন। আর শোন, সোহানা আপু বলবি না। ভাবি বল।’
‘তাহলে তো আমি তার দ্বিতীয় বর হয়ে যাই।’
‘কীভাবে?’ ভ্রু কুঞ্চন করে জানতে চাইলো৷
‘শব্দটা এমন হয় দে-বর। মানে দ্বিতীয় বর। বুঝাছে পেরছি?’
‘আপু বলেই ডাকিস।’ ভ্রুক্ষেপহীন নজরে বলল।
‘জ্বালা হচ্ছে শুনে।’
সরু চোখে দেখে রাদকে মুরাদ। সে হাসে। বলে,
‘বোন নেই আমার। তোর তো একটি বোন আছে। সোহানা আপুকে আমি বড়ো বোন বানিয়েছি অনেক আগেই।’
‘তাহলে তুই আমার শা’লা।’ হেসে বলল।
‘বলতে পারিস।’
‘ওয়েট সোনাকে বলি।’
‘খেতে যাব এখন। পরে বলে নিস।’
‘তবে চল।’
__
মিটিং শেষে রাদ ও মুরাদ রোহান ফ্যাক্টরি থেকে বের হয়। গাড়ি অব্দি পৌঁছে দিয়ে যায় কোম্পানির মালিক রোহান।
গাড়ি ছুটে হোটেলের উদ্দেশ্যে। তখন ঘড়িতে নয়টার কাছাকাছি। তারা এখন লস এঞ্জেলেস অবস্থান করছে।
বাংলাদেশে তখন সাতটা বেজে দশ মিনিট।
দু-তিন ঘন্টা সময় পার্থক্য কেবল। হোটেলে ফিরে রাদ ইসানাকে কল দেয়। ইসানা ফোন রেখে টেক্সট করে।
‘বলুন?’
‘কি করছেন?’
‘কিছু না।’
‘টাইসন কোথায়?’
‘ট্যাবে কার্টুন দেখছে।’
বার্তাটি দেখে ইসানা সৌজন্যতা বজায় রেখে লিখে,
‘খেয়েছেন?’
‘এগারোটায় খাব।’
ইসানা চুপ হয়ে যায়। রাদ লিখে,
‘কতদিন চলবে এই শাস্তির মেয়াদ বললেন না যে?’
রিপ্লাই আসে না ইসানার। রাদ পুনরায় লিখে,
‘জানতে চাই?’
এবারও চুপ থাকে ইসানা। রাদ মেকি রাগ নিয়ে লিখল,
‘উত্তর দিচ্ছেন না যে? জোরপূর্বক অধিকার দেখালে তখন কিন্তু সহ্য করতে পারবেন না।’
এবার ইসানা লিখে,
‘জোরপূর্বক বিয়েটি যখন মেনে নিয়েছি এ আর নতুন কি! আপনি আপনার অধিকার নিতে পারবেন। কিন্তু জোর করে মন পাবেন না।’
রাদ বার্তাটি পড়ে পরবর্তীতে কিছু লিখে না। চুপ করে রয়।
ইসানার মনে সেই ঘটনার প্রভাব এখনো রয়েছে সেটা আজ পুরোপুরি নিশ্চিত হয় রাদ। বিষয়টি তার কাছে দুঃখজনক লাগে। ফোনটি পাশে রেখে বেলকনির দিকে এগোয়।
মুরাদ রাদের মনঃক্ষুণ্নতা দেখে ফোন তুলে টেক্সট চেক করে। তাদের চ্যাটিং দেখে নিজের কাছেও খারাপ লাগে। বন্ধুর নিকটে যেয়ে তাকে বোঝায়৷ সম্পর্ক সুন্দর ভাবে তৈরী করার জন্য আরো সময় দিতে বলে। ধৈর্যহারা যেন না হয়।
.
.
.
#চলবে?
কার্টেসী ছাড়া কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ।