Monday, October 6, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"তোমায় ছোঁয়ার ইচ্ছেতোমায় ছোঁয়ার ইচ্ছে পর্ব-২৯+৩০

তোমায় ছোঁয়ার ইচ্ছে পর্ব-২৯+৩০

#তোমায়_ছোঁয়ার_ইচ্ছে
#পর্ব_২৯
#সুমাইয়া_মনি

‘বয়স হয়েছে ঠিকিই, কিন্তু বিবেক বুদ্ধির অভাব ছিল। লোভে পড়ে নিজের আত্মসম্মান বোধ বিসর্জন দিয়েছি। টাকার নেশায় অন্ধ ছিলাম। অন্যায় করেছি আমি। শাস্তিযোগ্য! সত্যি আল্লাহ ছাড় দেয়, কিন্তু ছেড়ে দেয় না। আমাকে ক্ষমা করে দিও ইসানা। তোমাকে গুরুতর ভাবে আঘাত করেছি আমি। মায়ের হয়ে আমি ক্ষমা চাচ্ছি। তিনিও তার কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত! নতুন জীবন সুন্দর ও সাচ্ছন্দ্য ভাবে কাটুক। শুভ কামনা তোমাদের জন্য।’ বলতে বলতে ইভান ফুলের বুফেটি ইসানার নিকট এগিয়ে দেয়। ইসানা বুফে হাতে তুলে নেয় ঠিকিই কিন্তু মুখে কিছু বলল না। ইভান স্টেজ থেকে নামতে উদ্যত হতেই পিছন থেকে নিচু কণ্ঠে ইসানা শুধালো,
‘খেয়ে যাবেন।’
ইভান ইসানার পানে চেয়ে মৃদু হাসি প্রধান করে চলে গেল। ইসানা দৃষ্টি নিবদ্ধ করল ফুলের বুফের ওপর। নিমিষেই অনুভব করে তার জীবনের পীড়াদায়ক চার বছরের দুঃখগুলো মুছে গেছে। থাকে না কোনো প্রকার আক্ষেপ। ইভানের মাফ চাওয়াতে ইসানার অন্তর ব্যাপক খুশি হয়। তবে সেটা কারো সামনে প্রকাশিত করল না। রাদ রক্তচোখে ইভানের কথাগুলো শ্রবণ করেছে। ইসানা ইভানকে শেষে এতটুকু কথা বলাতে রাদের অন্তরে জ্বলন সৃষ্টি হয়। ইসানার দৃষ্টি বুফের ওপর নিবদ্ধ দেখে রাগ ক্ষণে ক্ষণে বৃদ্ধি পাচ্ছে রাদের। আপাতত সবার সামনে নিজেকে স্বাভাবিক রাখা ছাড়া উপায় নেই।

আশেপাশেই ফটোগ্রাফার সহ মিডিয়ার লোকদের দেখা যাচ্ছে। তারা ছবি ও ভিডিও ধারণ করতে ব্যস্ত। কিছুক্ষণ বাদে বিয়ে পড়ানো হয়। ওই সময় স্তব্ধ হয়ে ছিল ইসানা। বিশ মিনিট যাবত চুপ ছিল কবুল বলার সময়। পরিশেষে তাকে কবুল বলতে হয়। সে আজ পুরোপুরি অন্য কারো। নতুন জীবনের সূচনা তাদের হলো। চারজোড়া নতুন কপোত-কপোতীর ফটোশুট হচ্ছে। হৈ-হুল্লোড়ের পর বিদায়ের পালা। সোহানার বাবা-মা বুক পাথরে রুপান্তরিত করে মেয়েকে বিদায় জানায়।
কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন সুরভী খাতুন ও ইসানা। ইমোশনাল দৃশ্যের মধ্য দিয়ে সময় অতিবাহিত হয়। গাড়িতে চড়ে তারা নিজের নতুন নিড়ে যাচ্ছেন। সেন্টার থেকে বাড়ি পৌঁছাতে আধাঘন্টা সময় লাগে।
গাড়ি থেকে নামার পর রেহানা আনসারী ইসানাকে রাদের রুমটিতে নিয়ে আসে। রাদ ও মুরাদ একত্রে বাহিরে বেরিয়েছে বন্ধুদের সঙ্গে। রেহানা আনসারী বের হয়ে যায়। তিনি রেস্ট নিচ্ছের পাশের রুমে। ইসানা বিছানার ওপর বসে চাদরের ওপর হাত রেখে পুরো রুমটিতে নজর বুলায়। হরেক রকমের ফুল দিয়ে সাজানো বাসর ঘরে বসে আছে। এটা তার জীবনে দ্বিতীয় বাসর। জীবন কতোই না বিচিত্রময়। একদিন বিনা পারমিশনে এই রুমে প্রবেশের ফলে জরিমানা দিতে হয়েছে। আর আজ এ বাড়ির মালকিন সে নিজেও। রয়েছে তার সমান অধিকার। বড়ো নিশ্বাস ছাড়লো। শ্বাশুড়ির দেওয়া সিল্কের শাড়ি পড়ে নেয় বিয়ের লেহেঙ্গা পরিবর্তন করে। চেহারার মেকআপ ধুয়েমুছে পরিষ্কার করে ফ্রেশ হয়ে বের হবার পর রাদের সঙ্গে চোখাচোখি হয়। ঘড়িতে তখন দুইটা ছুঁই ছুঁই।
অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল সন্ধ্যার পর। শেষ হতে হতে রাত গড়িয়েছে। ইসানা নজর সরিয়ে নেয়। টাওয়াল বিছানার ওপর রেখে সোহানাকে টেক্সট দেয়। পিছন থেকে রাদ ইসানার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করে,
‘বিয়ের রীতি অনুযায়ী নামাজ পড়তে হয়। আপনি জানেন কিছু?’
ইসানা চোখ না তুলেই ফোনে টাইপিং করে রাদের ফোনে টেক্সট পাঠায়।
‘শোকরানা নামাজ বলে। এক সঙ্গে পড়তে হয়।’
রাদ ফোনের টেক্সটটি পড়ে কপাল কুঁচকে ফেলে। সামনাসামনি অথচ টেক্সট করে বলার লজিক মাথায় ঢুকছে না তার। ইসানা ফোন রেখে জায়নামাজ বিছায়। রাদ দ্রুত ওজু করে অপর জায়নামাজ বিছিয়ে একত্রে নামাজ পড়তে দাঁড়ায়। নামাজ শেষে রাদ দাঁড়াতেই ইসানা রাদের পা ছুঁয়ে সালাম করে বিছানার এ প্রান্তে এসে দাঁড়াল। ফোন হাতে নিয়ে রাদকে আবার টেক্সট করে।
‘কে খাটে বা সোফায় ঘুমাবে?’
রাদ ফোনের টোন শুনে হাতে নিয়ে টেক্সট দেখে ভ্রু কুঁচকে উৎকণ্ঠে কিছু একটা বলতে উদ্যত হয়েও থেমে স্বাভাবিক হয়ে বলল,
‘আমি সোফায় ঘুমাচ্ছি।’
কথাটা শোনা মাত্রই ইসানা খাটের ওপর উঠে কম্বল জড়িয়ে শুয়ে পড়লো। এদিকে রাদ যে সবিস্ময় হয়ে দাঁয়িছে আছে এতে তার ভাবান্তর নেই। রাদ সরু নিশ্বাস ফেলে আলমারি থেকে কম্বল সোফায় রেখে বেলকনির দিকে এগোয়। সেকেন্ড কয়েক পরই মুরাদের কল আসলো। পীক করল সে,
‘বল।’
‘শা’লা’র বাসর ঘরের মা-বাবা।’ তীব্র রাগ নিয়ে গালি দিলো মুরাদ।
‘কেন?’
‘বাসর রাত নাকি কাল রাত হয়। এই বলে আমার দাদী ও সোহানার নানি রুম থেকে ঠেলে বের করে দিলো। এখন বারান্দায় আছি।’
‘সেইম!’
‘তোকে কে বলল আন্টি?’
‘অন্যটা হয়েছে আমার সঙ্গে।’
‘কী?’
‘সানা আমার সঙ্গে কথা বলছে না। যদিও বলছে টেক্সটের মাধ্যমে।’
‘চমৎকার!’
‘চমৎকারের কি দেখলি?’ মেকি রাগ নিয়ে বলল রাদ।
‘তোর, আমার কপাল এক। তাই চমৎকার না বলে পারলাম না দোস্ত।’
‘শুয়ে পড়।’
‘হ্যাঁ! যাচ্ছি।’
‘আমিও গেলাম।’
ফোন রেখে রাদ রুমে এসে দেখে ইসানা গভীর ঘুমে কাতর। তার চোখও জ্বলছে ঘুমের কারণে। সোফায় বসে কম্বল জড়িয়ে নিজেও ঘুমিয়ে যায়।
সকালে চুড়ির ঝনঝন শব্দে ঘুম ভাঙে। ইসানা দরজা খুলে বেরিয়ে যায় বাহিরে। রাদ উঠে বসে। ইসানার চুড়ির শব্দ দারুণ ছিল। ভেবে মৃদু হাসি প্রতিফলিত হয় ঠোঁটে। কিছুক্ষণ বসে থেকে ফ্রেশ হয়ে বের হয়। ডাইনিং টেবিলে আগে থেকেই রেহানা ও ইসানা বসেছিল। রাদ এগিয়ে এসে প্রথম চেয়ার টেনে বসল।
একে অপরের সঙ্গে বাক্যবিনিময় বিহীন নাস্তা করছে তারা।
রেহানা হঠাৎ রাদকে সরাসরি প্রশ্ন করল,
‘রাদ তুমি হানিমুনে যাওয়ার পরিকল্পনা করে থাকলে ক্যান্সেল করে দেও। আগে নিজেদের মধ্যকার বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্ক তৈরী করো। তারপর হানিমুনে যাবে।’
রাদ দৃষ্টি নত রেখে খাবার খাচ্ছে। মামনির কথার পিঠে কথা সে বলতে চাইছে না। তবে মুখ খুলে এতটুকু বলল,
‘আমাকে একা না বলে তাকেও বলে দেও।’
‘সেটা তোমাকে বলতে হবে না।’
নিরব হয়ে পড়ে চারদিন। রেহানা পুনরায় বলল,
‘বিকেলে আমার ক’জন গেস্ট আসবে। তুমি বাড়িতে থেকো।’
‘মহিলা নাকি পুরুষ!’
‘মহিলা।’
‘থাকবো।’
‘ফ্যাক্টরিতে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।’
‘তিন ঘন্টার জন্য হলেও যেতে হবে। আজ অন্য ফ্যাক্টরি থেকে কাপড় ডেলিভারি করা হবে।’
‘তাহলে যেও।’
‘ওনি যাবেন?’ ইসানার পানে আড়চোখে চেয়ে প্রশ্ন করলেন রাদ।
‘নাহ! ও তোমার পি.এ নয় এখন। তুমি একা যাও।’
‘তাহলে কী নতুন পি.এ নেওয়ার ব্যবস্থা করব?’
‘অবশ্যই!’
সম্মতি জানিয়ে আরো দু’টো পাউরুটি খেয়ে রাদ উঠে যায়। ড্রেসআপ চেঞ্জ করে ফ্যাক্টরির উদ্দেশ্যে বের হয়। এই প্রথম ইসানাকে রেখে একা ফ্যাক্টরিতে যাচ্ছে। তবে এটা ভেবে তার শান্তি অনুভব হয় সে তার বউ!
নতুন দু’জন সার্ভেন্ট দিয়ে সারা ঘরের পর্দা পরিবর্তন করায় রেহানা আনসারী। এখন থেকে ইসানার কাজ রাদের যত্নআত্তি রাখা ও রান্না করা। বাকি কাজের জন্য নতুন সার্ভেন্ট নিয়োগ দিয়েছেন তিনি। ইসানা রাদের আলমারি এক পাশ খালি করে। এ পাশে তার এবং নিজের কাপড়চোপড় গুছিয়ে রাখে। শেষে ছোট্ট চিরকুটে এই বিষয়টি উল্লেখ করেও দেয়। রাদের প্রত্যেকটি জিনিসের পাশাপাশি নিজের জিনিসগুলো এডজাস্ট করেছে।
রাদ দুপুরের দিকে বাড়ি ফিরে রুমের এরূপ পরিবর্তন দেখে রাগ হবার বদলে বিস্মিত হয়। টাওয়াল হাতে দাঁড়িয়ে শার্টের বোতাম খোলার সময়ে ইসানা রুমে প্রবেশ করে। রাদ মৃদু হেসে ইসানার উদ্দেশ্যে বলল,
‘থ্যাংক’স! এত দ্রুত এ বাড়ির ও রুমের নতুন সদস্য হয়ে উঠার জন্য।’
বিনা জবাবে ইসানা রুম প্রস্থান করে। নাকের ডগায় তার কিঞ্চিৎ রাগ ফুটে উঠে। সে ভেবেছিল সব কিছু এডজাস্ট করার ফলে রাদ ভীষণ রাগ হবে। তবে হলো সব উল্টো! বরঞ্চ খুশি হয়েছে। খাওয়া শেষে রাদ ল্যাপটপ নিয়ে বসল।
গলার আওয়াজ উঁচু করে ইসানাকে কফি বানানোর বার্তাটি জানালো। শ্বশুড়ির রুম থেকে বেরিয়ে রাদকে কফি বানিয়ে দিয়ে ফের তার রুমে এলো।
দুপুরের দিকে পাঁচজন মহিলা এলো। অতিথিদের সামনে রাদ ও ইসানা একত্রে বসেছে। ছেলের বউকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে আলাপনে ব্যস্ত হন তারা। ইসানাকে তারা উপহার সরূপ দামী শাড়ি ও গহনা দেয়। ছয়টার দিকে তারা চলে যায়। ইসানা তাদের দেওয়া গহনা আলমারিতে রাখছিল। ঠিক সেই সময়ে রাদ রুমে প্রবেশ করে জিজ্ঞেস করল,
‘কাল আমরা নন্দন পার্কে যাচ্ছি।’
ইসানা ফোন হাতে তুলে টাইপিং করে লিখলো,
‘আমি যাচ্ছি না।’
রাদ ফোন চেক করে কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,
‘কারণ?’
ইসানা পুনরায় লিখলো,
‘ইচ্ছে নেই।’
‘মামনি কি বলেছে সকালে নিশ্চয় আপনি শুনেছেন?’
‘হ্যাঁ! আমি ব’য়’রা নই!’
এমন ত্যাড়া বার্তা দেখে রাদ মেকি রাগ নিয়ে বলল,
‘মুখে কথা বললে কী হবে?’
‘ফোঁসকা পড়বে।’
ফের ত্যাড়া জবাব দেখে রাদ ক্ষোভিত চোখে তাকালো। বলল,
‘সরাসরি কথা বলুন। টেক্সট বন্ধ করে।’
‘পারব না।’
‘মামনি, মামনি? এখানে এসো।’ চিল্লিয়ে ডাকলো রেহানা আনসারীকে রাদ। তিনি ছেলের ডাক শুনে এগিয়ে এলো রুমে।
‘কী হয়েছে?’ প্রশ্নটি করতে করতে তাদের কাছাকাছি আসলো।
রাদ ইসানার পানে সরু চোখে তাকিয়ে বলল,
‘কাল রাত থেকে ওনি আমার সঙ্গে কথা বলছেন না। প্রশ্ন করলেই টেক্সটের মাধ্যমে জবাব দিচ্ছে। তার মুখে কি সমস্যা, জিজ্ঞেস করো?’
রেহানা ছেলের বিচার সরূপ বাক্যগুলো শুনে ইসানার পানে তাকায়। শান্ত স্বাভাবিক দৃষ্টি দেখে পরক্ষণে ছেলের পানে চেয়ে বলল,
‘কথা টেক্সটে বলুব বা মুখে একটা হলেই হলো। তোমার যদি মন চায় তাহলে তুমিও টেক্সট দিয়ে প্রশ্ন করো।’
মায়ের এরূপ আদেশ বার্তা কথা শুনে রাদ হতবাক! বলল,
‘কী বলছো তুমি মামনি?’
‘দেখো, তোমাদের মধ্যকার খুটিনাটি ঝগড়া’বিবাদ আমাকে না বললে ভালো হয়। আমি তোমাদের মাঝে আসতে চাই না ব্যস! ফের আমাকে ডাকবে না।’ বলেই তিনি চলে গেলেন।
ইসানার হাসতে ইচ্ছে করছে রাদের আদলের রিয়াকশন দেখে। কিন্তু এ মুহূর্তে নিজেকে স্বাভাবিক রেখে সে-ও রুম ত্যাগ করল। রাদ আহাম্মক হয়ে তখনো দাঁড়িয়ে আছে। মাথার ওপর থেকে যাওয়ার ন্যায় ঘটনাটি ঘটেছে পুরোটা।
.
.
.
#চলবে?

#তোমায়_ছোঁয়ার_ইচ্ছে
#পর্ব_৩০
#সুমাইয়া_মনি

ওষ্ঠদ্বয় হাত রেখে মিটমিটিয়ে হাসছে রাদ। কেবিনে আপাতত রম্যময় পরিবেশ তৈরির উপক্রম। মুরাদ রাদের হাসির মুখশ্রী দেখে রাগে ফোঁস ফোঁস করছে। শুধু কিছু বলতে পারছে না।
মূলত মুরাদের দ্বিতীয় বারের সুযোগও হাতছাড়া হয়েছে। বিয়ের রীতি অনুযায়ী পর’দিন নতুন বউ প্রথম নাইওরে বাবার বাড়ি যায় এবং সে-ই বাড়িতে বাসর ঘর সাজানো হয়। আর সেটা বিয়ের দ্বিতীয় বাসর বলে গন্য করা হয়। সে-ই রাতও মুরাদ তার বা’স’না পূরণ করতে পারেনি। সাত-আট দিনে পারবে কি-না সন্দেহ। কেননা সোহানার পি’রি’য়’ড হয়েছে। শ্বশুর বাড়ি থেকে ডিরেক্ট ফ্যাক্টরিতে হাজির সে। মুরাদের চেহারার রং সাদামাটা দেখে রাদ অনুমান করে কিছু একটা হয়েছে নিশ্চিত। জিজ্ঞেস করায় মুরাদ বিষয়টি উল্লেখ করে। তার করুন দশা দেখে রাদ হাসে। মুরাদ এবার ক্ষিপ্ত হয়ে বলল,
‘হাসি বন্ধ কর শা’লা।’
রাদ লাস্ট এক গাল হেসে হাত সরিয়ে স্বাভাবিক ভাবে বলল,
‘ওকে। বাট তুই নিজে আমাকে জ্ঞান দিয়েছিস। বিয়ে করার পর সানা একান্তই আমার। একদিন পর হলেও সে আমরাই হবে। এই-সেই কত কিছু…। তাহলে তুই এটা মেনে নিচ্ছিস না কেন?’
‘সবই ঠিক আছে। কিন্তু..’ বলতে বলতে মুরাদ হতাশ জড়িত নিশ্বাস নিলো।
‘এসব ভুলে চিল কর। শ্বশুর বাড়ি যাহ!’
‘হ্যাঁ! যাচ্ছি।’
‘হুম।’
‘তোদের মাঝে সব ঠিকঠাক হয়েছে?’
‘নাহ! তবে খুব শীঘ্রই ঠিক হবে আশা করা যায়।’
‘কথা বলে মুখে?’
‘উঁহু!’ চোয়াল উঁচু করে জবাব দিলো রাদ।
‘আমি গেলাম।’
‘আচ্ছা।’
মুরাদ চলে গেল। রাদ ফোন হাতে নিয়ে ইসানাকে টেক্সট দিলো।
‘আমি আসছি আপনি রেডি থাকবেন।’
অপর প্রান্ত থেকে ইসানার রিপ্লাই এলো,
‘যাব না।’
রাদ কিছুটা ক্ষোভ নিয়ে মামনিকে কল দিতে উদ্যত হতেই থেমে যায়। কাল বলেছিল তাদের ছোটখাটো বিষয়ে তাকে না টানতে। এটা ভেবে রাদ আরো ক্ষোভিত হয়।
.
তার পরদিন রাদ ও ইসানা মামাবাড়ি যায়। দুপুর ও রাতে খেয়েদেয়ে বাড়িতে ফিরে আসে। রেহানা আনসারী দুপুরের পর সিলেটে রওয়ানা হয়। বাড়িতে আপাতত তিনজন রয়েছে। রাদ, ইসানা ও টাইসন। বেশিরভাগ সময় টাইসন ইসানার সঙ্গেই থাকে। এতে অবশ্য রাদেরই সুবিধা হচ্ছে। ইসানার বলা বাক্যগুলো অনায়াসে শুনে নিচ্ছে।
রাতে রাদ বালিশ নিয়ে বিছানায় ঘুমাতে আসলে ইসানা রেগে তাকে টেক্সট করে,
‘সোফায় ঘুমাতে কী সমস্যা?’
ফোনের টোন শুনে বুঝতে পারে ইসানা টেক্সট পাঠিয়েছে। রাদ ফোনের বার্তা এড়িয়ে কাঠিন্য স্বরে বলল,
‘যা বলার মুখে বলুন। আমি টেক্সট দেখব না।’
ইসানা ক্ষিপ্র হয়ে পুনরায় টেক্সট পাঠায়। রাদ এড়িয়ে ফের বলল,
‘মুখে বলুন মুখে!’
ইসানা চোখ পাকিয়ে তাকায়। ফোন হাতে বাহিরের দিকে হাঁটা ধরলে রাদ পথরোধ করে দাঁড়িয়ে বলে,
‘আপনি এ রুমেই ঘুমাবেন। পাশের রুমে ঘুমাতে পারবেন না।’
ইসানা টেক্সট লিখে রাদের সামনে তুলে ধরে। রাদ সেটি পড়ে নেয়।
‘আপনার কথা মতো সব হবে না।’
‘হতেই হবে।’
ইসানা ফের লিখে ধরল।
‘আমি বাধ্য নই।’
‘ফোর্স করব।’
‘ওই যোগ্যতাই আছে আপনার।’
‘সব যোগ্যতা আছে। সুযোগ দিয়ে দেখতে পারেন।’ কথাটা বলে রাদ মৃদু হাসলো। ইসানা বিব্রতবোধ করল। বিরক্ত হয়ে বালিশ নিয়ে সোফায় শুয়ে পড়লো। রাদ ইসানার নিকট এগিয়ে বলল,
‘কোলে তুলে বিছানায় সোয়ানোর পূর্বে আগের স্থানে গিয়ে শুয়ে পড়ুন। আমিই সোফায় ঘুমাচ্ছি।’
ইসানা রাগী নিশ্বাস টেনে বিছানায় তড়াক করে শুয়ে যায়। রাদ নিরাশাজনক দৃষ্টিতে তাকিয়ে সোফায় বসল। কীভাবে যে ইসানার মুখ খোলাবে। জানা নেই তার। আপাতত সে ইসানাকে রাগাতে চাইছে না। তার কথামতো চলবে। দেখবে শেষ অব্ধি কি হয়।
সকালে সোহানা মুরাদের জন্য চা নিয়ে পাশে বসে ডাকছে।
‘উঠছো না কেন? চা নিয়ে এসেছি খাও।’
মুরাদ কিছুটা অভিমানী স্বরে জবাব দিলো,
‘আমার উপোষ চলছে।’
‘কিসের উপোষ?’ জানতে চাইলো সোহানা।
‘বুঝবে না তুমি।’ রাশভারী কণ্ঠে বলল।
‘ও, বুঝেছি।’
‘বুঝলে যাও এখান থেকে। আমাকে ডিস্টার্ব কোরো না। ঘুমাতে দেও।’
‘আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি ঘুমাও।’ মুখ টিপে হেসে প্রস্থান করল।
.
হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার উপক্রম ইসানার। মুরাদের করুণ দশার কথা শুনে নিজেকে আঁটকে রাখতে পারছে না। বলতে বলতে সোহানা নিজেও হেসে ফেলে।
রাদ বাহিরে বসে পেপার পড়ছিল। ইসানার কথপোকথন স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে। ভীষণ ক্ষোভ হয়। তার সঙ্গে বাদে সবার সঙ্গেই কথা বলছে। এটা কোনো কথা? আজ সে ফ্যাক্টরিতে যাবে না। ইসানার মুখ থেকে যেভাবেই হোক কথা শুনবেই।
কথপোকথন সেরে ইসানা রান্নার জন্য কিচেনে আসে। সার্ভেন্টরা তাকে সাহায্য করছে আর ইসানা রান্না করছে।
মিনিট কয়েক পর রাদ রান্নাঘরে প্রবেশ করে। ওঁকে দেখে সার্ভেন্ট’রা বের হয়ে যায়। ইসানা রাদের আগমন টের পেয়ে মুখশ্রী গম্ভীর করে ফেলে। তার কাছাকাছি এগিয়ে এসে আপেলে কামড় বসিয়ে বলল,
‘কী রান্না করছেন?’
ইসানা পাশ থেকে ফোন নিতে গেলেই রাদ সেটা আগেভাগে নিসে প্যান্টের পকেটে পুরে নেয়। ইসানা ক্ষোভিত নজর ফেলে দৃষ্টি সরিয়ে ফেলে। রাদ বাঁকা হেসে পাশের ফাঁকা স্থানে বসে। পুনরায় বলল,
‘বলবেন না সানা?’
ইসানা কড়াইটি তুলে রাদের সামনে ধরে। যাতে রাদ দেখতে পায় কি রান্না হচ্ছে। রাদ ভাবলেশহীন স্বরে বলল,
‘দেখেছি।’
ইসানা সরিয়ে নেয় কড়াই।
‘আর কী কী রান্না হবে?’
ইসানা জবাব দেয় না। রাদ বার বার একই প্রশ্ন করে বিরক্ত করছে তাকে। তবুও মুখ খুলছে না সে।
‘শাস্তির মেয়াদ কতোদিন থাকবে। এটা অন্তত বলুন?’
ইসানা রাদের সামনে হাত পেতে ফোন চায়। রাদ নজর সরিয়ে আপেলে বের কামড় বসিয়ে বলল,
‘দিবো না।’
ইসানা এবার রেগে যায়। পাশ থেকে ছুরি হাতে নিয়ে নিজের গলার বরাবর ধরে। রাদ আহাম্মক হয়ে তড়িঘড়ি বলল,
‘ওয়েট দিচ্ছি!’ বলতে বলতে ফোন এগিয়ে দেয়।
ছোঁ মেরে ফোনটি নিয়ে টাইপিং করে সব কথার জবাব একে একে দিতে আরম্ভ করে। রাদ ফোন ওপেন করে সব উত্তর গুলো পড়ে। ইসানা লাস্টে লিখে,
‘গেট আউট!’
রাদ চোয়াল কিছুটা শক্ত করে ইসানার চোখের পানে তাকায়। তার এই পরিকল্পনা জলে গেলো। সময় বিলম্ব না করে জায়গা ত্যাগ করে। ইসানা বিড়বিড় করে বলল,
‘আসছে আমাকে কথা বলাতে হুহ্!’

হঠাৎ ইসানা সহ বাড়িঘর কেঁপে উঠে। হাত থেকে খুন্তি পড়ে যেতে নিলে সামলে নেয় সে। চুলার আঁচ কমিয়ে বাহিরের এসে রাদের দরজার পানে তাকায়। ফুল ভলিউমে সাইন্ড বক্সে গান ছেড়েছে। একে তো ইংলিশ গান হচ্ছে, তার ওপর ভলিউম ফুল! বিকট আওয়াজে বাড়িঘর কাঁপছে মনে হচ্ছে।
ইসানা সার্ভেন্টকে রান্নাঘরে থাকতে বলে রুমের দিকে অগ্রসর হয়। গান ছেড়ে রাদ কানে ব্লুটুথ লাগিয়ে ল্যাপটপে কাজ করছে। সে রাগে বিড়বিড়িয়ে ‘বা’ট’পা’র’ উচ্চারণ করে এগিয়ে এসে ছোঁ মেরে ব্লুটুথ খুলে ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকায়। রাদ দাঁড়িয়ে মাথা হালকা কাত করে বলল,
‘হোয়াট?’
ইসানা ডানে – বাঁয়ে তাকিয়ে সুইচ খুঁজতে আরম্ভ করে। এক পর্যায়ে দেখতে পেয়ে ফ্লাক খুলে ফেলে। তারপর টাইপিং করে লিখে,
‘ফের যদি বক্স ছেড়েছেন আমি সত্যি সত্যি চলে যাব।’
রাদ টেক্সট পড়ে উদ্যত হয় বক্স ছাড়তে। পুনরায় সেই গানটি প্লে করে ইসানা কানে কানে বলে,
‘যান। আপনি তো বলেছেনই রুম থেকে চলে যাবেন।’
ইসানা রাগে চোখ জোড়া হালকা বন্ধ করে নেয়। মেলে চোয়াল শক্ত করে টাইপিং করে,
‘বাড়ি ছেড়ে চলে যাব বলেছি।’
‘কথা ঘোরানো কেউ আপনার কাছ থেকে শিখুক!’ সাউন্ডের কারণে চিল্লিয়ে বলল রাদ।
ইসানা রাগে নাকের পাটা ফুলিয়ে রাখে। রাদ আগ্রহ নিয়ে বলল,
‘বলুন বলুন কথা বলুন সানা।’
ইসানা নজর সরিয়ে রুম ত্যাগ করল। রাদ হেসে ফেলে।
সানার সঙ্গে করা দুষ্টুমিষ্টি খুনসুটি বেশ আনন্দ দিচ্ছে তাকে।
.
.
.
.
#চলবে?

কার্টেসী ছাড়া কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ।

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ